তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩০

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩০
তানিশা সুলতানা

সুইজারল্যান্ড এর ওয়েদার আজকে মারাক্তক রোমান্টিক এবং সুন্দর। এখানকার প্রকৃতি যেনো নিজের রূপ প্রকাশ করতে উদ্ধৃত হয়েছে। সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। শীতের আমেজ কমে এসে একটু গরম গরম ভাব পড়েছে। তার মধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি দারুণ কম্বিনেশন। আদ্রিতা এ্যানিকে সাথে নিয়ে বসে আছে বারান্দায়। এক হাতে এ্যানির গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এবং অপর হাত গালে রেখে গভীর মনোযোগে বৃষ্টি বিলাস করছে।
ছোট ছোট বৃষ্টির ফোঁটা আসমান হতে টুপটাপ করে জমিনে পড়ছে। মৃদু শব্দও হচ্ছে। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ে যেমন ঝমঝম শব্দ হয় তেমন নয়। এই শব্দ অন্য রকম।
আদ্রিতা হাত এগিয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার বৃথা চেষ্টা চালায়। তবে ব্যর্থ হয়। অদ্ভুত ডিজাইনে তৈরি এই বাড়ি খানা থেকে ইচ্ছে করলেই বৃষ্টি ছোঁয়া যায় না। তার জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে রাস্তায় বেরুতে হবে। বিরক্ত হয় আদ্রিতা। মুখ বাঁকায়। বিরবির করে বলে

“যেমন আবরার তাসনিন তেমনই তার বাড়ি।
দুটোই বিরক্তিকর।
দূর পাহাড়ে দু জোড়া কপত কপতী দুই হাত মেখে পরম শান্তিতে বৃষ্টি বিলাস করছে। দেখে বাঙালিই মনে হচ্ছে। কেনোনা মেয়েটি কালো রংয়ের থ্রি পিছ পড়া। সাধারণ সুইজারল্যান্ড এর বাসিন্দারা থ্রি পিছ পড়ে না। ওই দুই চারজন বাঙালি জীবিকা নির্বাহনের জন্য সুইজারল্যান্ড এ পাড়ি জমায় তারাই থ্রি পিছ পড়ে।
কপোত-কপোতীর বৃষ্টি বিলাস করা এবং পাহাড়টা দারুণ সুন্দর তবে আদ্রিতার কলিজা ঠান্ডা করার মতো না।
কেনোনা বাংলাদেশের মতো সবুজে ঘেরা নয় এই পাহাড়। নেই কোনো ঝড়না। চা পাতার বাগানও নেই।
আদ্রিতার মতে পাহাড় মানেই চায়ের বাগান। যদিও চা বাগানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা খুবই কম তার। সেই ছোট বেলায় মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলো একবার। গোটা স্মৃতি ধরে রাখতে অক্ষম তবে শুধু চা পাতা এবং আঁকাবাঁকা পথ টুকুই মনে আছে। আহহহা কি দারুণ ছিলো মায়ের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো।
এ্যানি মিউ মিউ শব্দ করে ওঠে। আদ্রিতা ভাবনার জগত থেকে বের হয়৷ তাকায় এ্যানির পানে। আদুরে ভঙ্গিমায় সুধায়

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কি হয়েছে বাবু?
খিধে পেয়েছে?
এ্যানি জবাব দেয় না বরং আরও একটু গা ঘেসে শয় আদ্রিতার। কোলের ওপর মুখ রেখে পূণরায় চোখ বন্ধ করে।
তখনই সিয়ামের আওয়াজ শুনতে পায় আদ্রিতা। উচ্চস্বরে আতিয়া বেগমকে ডাকছেন
” আন্টি ও আন্টি
কোথায় আপনি?
দেখুন আমি এসেছি।
কিছু খেতে দিন।
বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে আদ্রিতার। অদ্ভুত এক ভাবনায় শরীর কেঁপে ওঠে। মুখশ্রী লাল হয়ে যায় লাজে।
আশ্চর্য ব্যাপার।
মনে মনে বলে

“পাগল আদ্রিতা তুই কেনো গলে যাচ্ছিস ওই বাজে লোকটার ফাঁদে?
কেনো নয়ন জোড়া বন্ধ করলেই তাকে দেখিস? কেনো বিছানায় গা এলিয়ে দিলে লোকটার ছোঁয়া অনুভব করিস? কেনো তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে?
পাগল আদ্রিতা তুই কি ভুলে গিয়েছিস আবরার তাসনিন ব্যাড হয়?
তুই আসিফ আদনানকে ভালোবাসিস?
মনে মনে কথা গুলো আওড়ায় আদ্রিতা। পর মুহুর্তেই আবার মন বলে
” আবরার তাসনিন পাঁচ দিন পরে বাড়িতে ফিরলো একটু দেখে আসা উচিত।
একটা মনের দুরকম ভাববায় বিরক্ত আদ্রিতা এ্যানিকে কোলে নিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ে। ওড়না জামা ঠিকঠাক করে ধীর গতিতে পা চালিয়ে এগিয়ে যায় আবরার তাসনিন এর কক্ষের পানে।

জুরিখ নদীর পূর্ব পাশে বহুল পরিচিত একটা কফিশপ রয়েছে। আয়ুশ নামক এক ভারতীয় পুরুষের উদ্যোগে এই কফিশপে নির্মিত হয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি সকল ধরনের কফি পাওয়া যায়। আবরার এবং আয়ুশ এক সাথেই এসেছিলো সুইজারল্যান্ড এ।
প্রথমবার সুইজারল্যান্ড এর মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ধাক্কা লেগে যায় আয়ুশের সাথে। বয়সে বড় একটু সম্মানো দেখানো প্রয়োজন এসব খেয়াল নেই।
রগচটা আবরার দু ঘা বসিয়ে দিয়েছিলো। সেই থেকে আয়ুশের নজর আবরারের পানে। এরই মধ্যে বহুবার দুজনের ঝামেলা হয়েছে। আয়ুশ আবরারকে হারানোর জন্য বহু ফন্দি এঁটেছিলো। বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে।
এই মুহুর্তে আবরার তাসনিন বসে আছে কফিশপে। তার মুখোমুখি বসে আছে আয়ুশ এবং টনি। গোটা কফিশপ দখল করেছে তাদের বডিগার্ডরা। সকলের হাতে রয়েছে বিশাল বড় সাইজের বন্দুক।
আবরার দুই হাত টেবিলে রাখে। একটু ঝুঁকে বলে

“কেনো ডেকেছো?
টনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।
” তোর ভয় করছে না? আমরা এতোজন রয়েছি। কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলার ক্ষমতা রাখি।
“তো কাটো।
আবরারের স্পষ্ট স্বর। ভরকায় টনি। একটুও ভয় পাচ্ছে না আবরার? এটা মানুষ না কি অন্য কিছু?
আয়ুশ হারে হারে চেনে আবরার তাসনিনকে। তাই হুমকি ধামকি না দিয়ে সোজাসাপ্টা বলে
” টনির ছেলেকে কেনো মেরেছো?
“আবরার তাসনিন কাউকে কৈফিয়ত দেয় না।
” আই নো

বাট তোমার লাইফ রিক্স রয়েছে। কথা বলে মিটিয়ে নাও সবটা।
আবরার নিজ দাঁড়িতে হাত বুলায়। গার্ডদের পানে তাকায় বাঁকা নয়নে। ব্যাসস সকলেই গান তাক করে টনি এবং আয়ুশের পানে। আঁখি পল্লব বড় বড় হয়ে যায় ওদের। ছটফটিয়ে উঠে বলে
“আরেহহ আরেহহ কি করছো?
তোমরা তো আমার গার্ড। আবরার তাসনিন কে শেষ করে দাও।
গার্ডরা যেনো শুনলো না সে কথা। তাদের নয়ন আবরার তাসনিন এর পানে অবদ্ধ। যেনো সে অনুমতি দিলেই টনি এবং আয়ুশের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিবে।
আবরার দাঁড়িয়ে পড়ে। টেবিল হতে নিজের ফোন তুলে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে
” এটা ট্রেলার ছিলো।
আদ্রিতা চৌধুর পানে তাকালে চোখ তুলে কুকুর দিয়ে খাওয়াবো।
মাইন্ড ইট
শেষের কথা খানা দাঁতে দাঁত চেপে বলে আবরার। আয়ুশ বলে ওঠে

“একটা মেয়ের জন্য শত্রু তৈরি করছো? তুমি চাইলে হাজার হাজার মেয়ে
বাকিটা শেষ করার আগে আবরার জবাব দেয়
” একটা মেয়ের জন্য গোটা ধরনী পুষ্পের মতো সাজিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে আবরার তাসনিন। আর
ওই একটা মেয়েকে না পেলে গোটা দুনিয়া জনমানবশূন্য করে ফেলবে এই আবরার তাসনিন। আগুন জ্বালিয়ে দিবো।
বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। পেছন পেছন গার্ড গুলোও বেরিয়ে যায়। টনি বুকে হাত দিয়ে হাঁপাতে থাকে। আয়ুশ শুকনো ঢোক গিলে
“টনি ভাই আমাদের উচিত হবে না ওই মেয়ের পানে তাকানো।
” কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে? কতো সুন্দরী সে?
“জানি না ভাই।
তবে আবরার যেহেতু প্রসেসিভ সেহেতু কিছু তো একটা আছেই। একবার দেখা উচিত।
টনি ভয়ার্তক স্বরে নলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৯

” আমার দেখার শখ নাই।
দেখলেন কিভাবে আমাদের গার্ড দিয়েই আমাদের মাথায় পিস্তল ঠেকালো? জাস্ট দেখতে চেয়েছিলাম।
দেখলে কি করতো?
আবরার তাসনিন সাধারণ নয়। শালা একটা সাইকো। এই শালার সাথে পেরে উঠবো না আমরা।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩১