তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৪
আমেনা আক্তার
লোকটির চিৎকার শুনে গ্রামের অনেক মানুষ হাজির হয় সেখানে। রুদ্র নূরকে দ্রুত যুবকটির নিচ থেকে উঠিয়ে নেই। গ্রামের লোক তাদের দেখে ছিঃ ছিঃ করছে।সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেই রুদ্রের কে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে নিয়ে যাবে ওদের যে শাস্তি দেওয়ার আছে পঞ্চায়েত প্রধান দিবে।রুদ্ররাও কিছু বলে না তারা পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে যেতে রাজি হয়ে যায়। কারণ রুদ্র ও নূর ভেবেছে গ্রামের মানুষ অশিক্ষিত হলেও পঞ্চায়েত প্রধান হয়তো শিক্ষিত হবে।তাই রুদ্র পঞ্চায়েত প্রধানকে বুঝিয়ে বললে হয়তো রুদ্রদের পরিস্থিতি উনি বুঝবেন। এত রাতে গ্রাম ঘুরতে আসলে বিপদ হতে পারে এটি সিরাত খুব ভালোভাবে জানতো।তাই সিরাত তখন ওদের কে এত রাতে বের হতে না করেছিল। কিন্তু রুদ্র ও নূর ওর কেনো কথা শুনে নি।
নূর,সিরাত ও রুদ্র কে নিয়ে আসা হয়েছে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে। পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রামের সকলেই ঘটনাটি বলেছে কিন্তু তার মধ্যে অর্ধেক ছিল বানোয়াট। অবশ্য পঞ্চায়েত প্রধান রুদ্র কেও তাদের পক্ষ নিয়ে বলার পূর্ণ সুযোগ দিয়েছে। রুদ্র পঞ্চায়েত প্রধানকে সব খুলে বলল। রুদ্রের কথা শুনে পঞ্চায়েত গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন।
আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের গ্রামের ও কিছু নিয়ম আছে।এত রাতে আমাদের গ্রামে যুবক যুবতী ঘুড়াফিরা তো দূরের কথা কেউ কারও দিকে তাকানোর সাহস ও করে না। কিন্তু তোমরা অবিবাহিত শহরের ছেলে মেয়েরা আমাদের গ্রামের নিয়ম না মেনে আমাদের অপমান করেছ। তার উপর গ্রামের লোক তোমাদের বাজে অবস্থায় পেয়েছে।তাই তোমাদের শাস্তি পেতে হবে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
পঞ্চায়েত কথা শুনে রুদ্রের মুখে কাঠিন্যতা ফুটে উঠল রুদ্র রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।
শাস্তি, আমরা যখন কেনো দোষ করিনি তখন কেনো কোনো শাস্তি ভোগ করবো। আপনাদের গ্রামের এই সকল ফালতু নিয়ম না আমরা মানবো আর না কেনো প্রকার শাস্তি আমরা ভোগ করবো।তাই এটাই ভালো হবে আপনি আমাদের যেতে দিন।আর ওই লোকটিকে হসপিটালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করুন।
রুদ্রের কথা শুনে হাসলেন পঞ্চায়েত প্রধান তিনি বললেন।
গরম রক্ত এই বয়সে মাথা একটু আধটু গরম থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি এই ভেবো না তোমার এই ত্যজ দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাবো। আমাদের গ্রামের নিয়ম ভঙ্গ করার শাস্তি তোমাদের ভোগ করতেই হবে।আর তোমাদের শাস্তি হলো।
পঞ্চায়েত প্রধান আর কিছু বলার আগে একটু ছেলে এসে পঞ্চায়েতের কানে কানে কিছু বলতেই পঞ্চায়েত নিজ যায়গা থেকে উঠে ওই ঘরে চলে যায় যেখানে আহত যুবকটিকে রাখা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান যুবকটিকে দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
ইনি এখানে কি করছেন,ওই ছেলে মেয়েগুলো এই ছেলেটির কথা বলছিল।ইনাকে দেখে আমার শাস্তি পরিবর্তন করতে হবে। ওদের আমার অন্য শাস্তি দিতে হবে।
পঞ্চায়েতের কথা শুনে তার পাশে থাকা ছেলেটি বলল।
উনাকে দেখার পরেও কি আমাদের ওদের শাস্তি দেওয়া ঠিক হবে। আপনার এই সিদ্ধান্তের ফল পরবর্তীতে ভয়ংকর হতে পারে।এর প্রভাব পুরো গ্রামের উপর পড়তে পারে।
ছেলেটির কথার প্রতি উত্তরে পঞ্চায়েত প্রধান বলল।
আমাদের গ্রামের নিয়ম কেনো একজনের জন্য বদলাতে পারে না।আর ভবিষ্যতের কথা পরে চিন্তা করা যাবে।
কথাটি বলেই পঞ্চায়েত প্রধান ঘর থেকে বের হয়ে আবার নিজস্থানে বসে বলা শুরু করলো।
তোমাদের শাস্তি হলো তোমাদের মধ্যে যেই মেয়েটিকে ওই আহত যুবকটির সাথে দেখা হয়েছে তার সাথে এই মেয়ের বিয়ে হবে।আর এই যুবককে(রুদ্রের দিকে ইশারা করে) পঞ্চায়েত প্রধানের সাথে বেয়াদবি ও যুবতি মেয়েদের নিয়ে এত রাতে রাস্তায় ঘুড়াফেরা করার জন্য তার পাশের মেয়ে (সিরাতের দিকে ইশারা করে)কে বিয়ে করতে হবে।
পঞ্চায়েত প্রধানের কথা শুনে রুদ্র,সিরাত ও নূরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।এই লোকগুলো ছোট একটি কথাকে কথাটা বড় বানিয়ে দিয়েছে। নূর এতক্ষণ চুপ থাকলেও এইবার যেনো ওর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। নূর গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল।
পাগল হয়ে গেছেন আপনারা,আপনারা কি বলছেন বুঝতে পারছেন এতটুকু একটি কথাকে কোথা থেকে আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।একটি মেয়ে ও ছেলেকে রাতে একা দেখা মানেই আপনাদের চোখে তারা খারাপ কিছু করছিল। আপনাদের সকলের মাথার চিকিৎসা করানো উচিৎ।আর আপনাদের এই ফালতু শাস্তি আমরা কিছুতেই মানবো না।এখন যা করার এখানে পুলিশ এসে করবে।
কথাটি বলেই নূর ফোনটি বের করে।ফোন বের করেই গ্রামের এক মহিলা এসে তা কেড়ে নেই নূর থেকে।মহিলাটি কর্কশ গলায় বলল।
এই মেয়ে তোমার দেখতাছি অনেক সাহস আমাগো সামনে দাঁড়াইয়া আমাগোরে পুলিশের ডর দেহাও।আমাগো এই গ্রামে একবার যা পঞ্চায়েত প্রধান সিদ্ধান্ত নেই হেইডা কেনো আইন আদালত বদলাইতে পারে না বুঝছো।তাই বিয়া তোমাগো করতেই হবে।
মহিলাটির কথার প্রতি উত্তরে নূর কিছু বলার আগেই রুদ্র তার সামনে থাকা একটি চেয়ার কে লাথি মেরে ফেলে দেয়। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
আপনাদের সাহস কিভাবে হয় আমাদের সাথে এরুপ আচরণ করার। আপনি জানেন আমি কে আপনাদের সাথে কি করতে পারি। আপনারা চাইলেই আমাদের উপর জোড় করে নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে দিতে পারেন না।
রুদ্রের কথা শেষ হতেই গ্রামের মানুষ সিরাত, নূর ও রুদ্র কে ঘিড়ে ধরে।যেনো তারা পালাতে না পারে। রুদ্রের এখন মন চাইছে সকলকে মেরে উচিত শিক্ষা দিতে। কিন্তু তবুও রুদ্র নিজেকে সংযত করতে চাইছে কারণ তার সাথে সিরাত ও নূর আছে গ্রামের লোক ওদের কেনো ক্ষতি করতে পারে।
পঞ্চায়েত প্রধান নূর ও সিরাত কে একটি রুমে ও রুদ্র কে আলাদা একটি রুমে বন্দি করে দিলো। এবং তাদের মোবাইল ও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।যেনো ওরা কিছু করতে না পারে।
এইসকল কিছুর মাঝে সিরাত ছিল নির্বোধ সে নূর ও রুদ্রের মতো এতটা উত্তেজিত হয়নি।সিরাত ভালো ভাবে জানেন এখন শুধু শুধু রাগ দেখিয়ে লাভ নেই এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। গ্রামের মানুষ কিছুতেই ওদের কথা শুনবে না।তাই যা হচ্ছে চুপচাপ মেনে নেওয়া ছাড়া কেনো উপায় নেই।
কাজী এসেছে বিয়ে পড়াতে,কাজী সর্বপ্রথম রুদ্রের কাছে গিয়েছে বিয়ে পড়ানোর জন্য। কিন্তু রুদ্র কবুল বলা তো দূরের কথা কাজের দিকে এমনভাবে তাকায় রুদ্রের চাওনি দেখে কাজীর অন্তর আত্মা যেনো কেঁপে গেল।কাজী রুদ্রের এরুপ চাওনি দেখে রুদ্র কে আর কিছু না বলে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে এসে নালিশ করলো। পঞ্চায়েত প্রধান কাজীর কথা শুনে গ্রামের লোকদের রুদ্র নূর সিরাত ও ওই যুবকটিকে বাহিরে আনতে বলল।
রুদ্র ও সিরাত কে দুটো কাঠের চেয়ারে বসানো হয়েছে এক সাইডের ও নূর ও যুবকটিকে বসানো হয়েছে এক সাইডে। যুবকটিকে গ্রামের একটি লোক ধরে রেখেছে। যুবকটিকে কিছুটা ঙ্গানে আনা হয়েছে কিন্তু যুবকটি এখনো পুরোপুরি ঙ্গান ফিরে পাইনি।
রুদ্র এখনো ঠাই বসে আছে তার ভিতর কেনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। রুদ্র পণ করেছে আজ কিছুতেই মুখ থেকে কবুল শব্দটি উচ্চারণ করবে না। পঞ্চায়েত প্রধান রুদ্রের কেনো হেলেদুল না দেখে পঞ্চায়েত প্রধান একটি লোককে কিছু ইশারা করলো।ইশারা পেতেই কিছু লোক বন্দুক তাক করে ধরলো নূর ও সিরাতের মাথায়।নূর ও সিরাতের মাথায় বন্দুক ধরতেই চমকে উঠলো নূর,সিরাত ও রুদ্র। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তারা পঞ্চায়েত প্রধানের দিকে ওরা এটা ভাবতেই পারছে না এই লোকগুলো এতটা বিপদজনক।
কাজী আবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।কাজী এইবার বিনা ভয়ে রুদ্রকে বলল।
বলেন বাবা কবুল,
রুদ্র আর কোনো উপায় না পেয়ে তিনবার একসাথে বলে উঠল।
কবুল কবুল কবুল,
এইবার সিরাত কে কবুল বলতে বলা হলো।
সিরাত ও বিনা বাক্য তিনবার কবুল বলে দিলো।সিরাতের কবুল বলতেই নূর কে কবুল বলতে বলা হলো নূর ও বাকি সকলের মাথা এই সময় এতটাই খারাপ যে তারা যুবকটির নাম খেয়াল করলো না। এবং তার সাথে এটিও বুঝতে পারলো না এই যুবকটির পরিচয় পঞ্চায়েত প্রধান জানেন। নূর ও রাগে দুঃখে তিনবার কবুল বলে দিলো।যুবকটিও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কবুল বলতেই নূর ও সে বেঁধে গেল একটি নতুন সম্পর্কে।সিরাত ও রুদ্র যারা সব সময় একজন আরেকজনের সাথে ঝগড়া করতে থাকে। একজন আরেকজনকে খোঁচা মেরে কথা বলে তারা ও এখন স্বামী স্ত্রী।
এই চারজনের জীবন তাদের কোন মোড়ে এসে দাড় করালো। দুজন সম্পূর্ণ অজানা অচেনা ব্যাক্তিকে এক বন্ধনে বেঁধে দিলো।কে এই যুবক যার সাথে অপ্রত্যাশিত ভাবে বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৩
রুদ্র ও সিরাত তারা দুজন তো দুই মেরুর প্রাণী ওরা কি মেনে নিতে পারবে এই বিয়ে।ওরা কিভাবে জানাবে ওদের পরিবারকে এই বিয়ে সম্পর্কে তারা কি কখনো মেনে নিব।
কি ঘটবে ওদের চারজনের জীবনে।কি ঘটতে চলেছে সামনে..