তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৫
আমেনা আক্তার
গাড়ি চলতে তার নিজ গতিতে। নূর, সিরাত ও রুদ্র হসপিটালে যাচ্ছে অচেনা যুবকটিকে নিয়ে যার সাথে কিছুক্ষণ আগেই নূর একটি নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।যার নাম ঠিকানা কিছুই জানেনা নূর। নূরের একদম মন চাইছে না যুবকটিকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা করাতে। কারণ নূর মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এই সকল কিছু এই যুবকটির জন্যই ঘটেছে। কিন্তু তবুও মানুষ বলেও তো একটি কথা আছে।
ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরেই ওদের কে ছেড়ে দিয়েছে গ্রামবাসী। রুদ্র এখনো বসে বসে রাগে গজগজ করছে।ও এখনো নিজের জীবনের হিসেব মিলাতে পারছে না। রুদ্র এটি ভেবে অবাক হচ্ছে এতটুকু সাধারণ ব্যাপারে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান তাদের এইরকম শাস্তি কেনো দিলো। এমন নিচ মানসিকতা মানুষের মাঝে এখনো আছে।তা এই লোকগুলোকে না দেখলে ও জানতে পারতো না।রুদ্রের ভাবনার মাঝে ওর মাথায় হঠাৎ একটি ভাবনা এসে হানা দিলো। রুদ্র নূর ও সিরাত কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আচ্ছা আমাদের পরিচয় পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের NID কার্ড থেকে সংগ্রহ করেছে। কিন্তু এই ছেলেটিকে তো আমরা আগেই চেক করে দেখেছি ওর সাথে কিছুই পাওয়া যায়নি।তাহলে ওই ছেলেটির পরিচয় পঞ্চায়েত প্রধান কোথায় পেলো।আর আমরা তো এমন কেনো ভুল করিনি যার জন্য উনি আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে। আবার পঞ্চায়েত প্রধানের লোকদের কাছে বন্দুক ও ছিল। আমার মনে ইচ্ছে এই সকল কিছুর পিছনে অনেক বব বড় কেনো ষড়যন্ত্র আছে যা আমরা বুঝতে পারছি না।
রুদ্রকে কথা শুনে রুদ্রের সাথে সিরাত ও নূর ও চিন্তিত হয়ে পড়ে। নূর চিন্তিত স্বরে বলল।
পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের সাথে কি ষড়যন্ত্র করতে পারে।উনি তো আমাদের কে ভালোভাবে চিনেন ও না।
নূরের কথার প্রতি উত্তরে সিরাত বলল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
হ্যাঁ উনি আমাদের চিনেন না কিন্তু এই উনাকে খুব ভালোভাবে চিনেন। আমার মনে হয় ইনাকে নিয়ে আমাদের এই গ্রামের হসপিটালে যাওয়া ঠিক হবে না। ওইখানে বড় কেনো ফাঁদ আমাদের চারজনের জন্য অপেক্ষা করছে।
সিরাতের কথার গভীরতা রুদ্র বুঝতে পারছে। রুদ্র ড্রাইভার কে গাড়ি ঘুড়িয়ে নিতে বলেছে রুদ্র। এবং ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আপনি তো এই গ্রামে আগেও এসেছেন আপনি ।কি মেইন রোড ছাড়াও কেনো রাস্তা চিনেন যা দিয়ে সূর্যধারী গ্রামে যাওয়া যাবে।
হ্যা একটু রাস্তা আছে, কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে যেতে সময় লাগতে পারে।
সময় লাগলে সমস্যা নেই আপনি ওই রাস্তা দিয়েই গাড়ি ঘুড়ান।এখন গাড়ি শুধু সূর্যধারী গ্রামে গিয়ে থামবে।তার আগে গাড়ি কোথাও থামাবেন না।
রুদ্রের কথা মতো ড্রাইভার গাড়ি ঘুড়িয়ে সূর্যধারী গ্রামের দিকে নিয়ে যায়।অন্য একটি পথ দিয়ে।
রুদ্র,সিরাত ও নূর বসে আছে হসপিটালের করিডোরের একটি কাঠের তৈরি শক্ত চেয়ারে। রুদ্রের সাথে আনা যুবকটিকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। সকালের আলো এসে উঁকি মারছে হসপিটালের জানালা দিয়ে।সিরাত বিভোর চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে আছে।ওকে এখন স্বাভাবিক দেখালেও সবচেয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে আছে সিরাত।
সিরাতের কোনো ভুল না থাকা সত্ত্বেও আঙ্গুল যে ওর উপর উঠবে এটি বেশ ভালোভাবে জানে সিরাত।সিরাত রেহানা বেগম কে কি উত্তর দিবে এই কথাটি চিন্তা করেই যেনো সিরাতের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রেহানা বেগম সিরাতকে অনেক বিশ্বাস করে একা আসতে দিয়েছে কিন্তু সিরাত মায়ের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারেনি।
সিরাতের ভাবনার মাঝে হসপিটালে হঠাৎ শোরগোল লেগে গেল। পনেরো বিশজন জন ছেলে একসাথে হসপিটালে প্রবেশ করে ও তাদের মধ্যে হসপিটালে প্রবেশ করেন মধ্য বয়স্ক একজন পুরুষ। পুরুষটি ব্যস্ত পায়ে হেঁটে আসছে করিডোরের দিকে। পুরুষটির মুখে গম্ভীরর্যতা স্পষ্টভাবে ফুটে ফুটে উঠেছে। পুরুষটি রুদ্রদের কাছে এসে ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
তোমরা আদিত্যকে কোথায় পেয়েছ।
লোকটির কথা শুনে রুদ্র তাকায় তার দিকে। রুদ্র ঠিক বুঝতে পারেনি কার কথা জিজ্ঞেস করেছে।আর ওর বুঝার কথা ও না কারণ রুদ্র বা নূর, সিরাত ও ছেলেটির নাম জানে না।রুদ্র লোকটিকে পর্যবেক্ষণ করে পাল্টা প্রশ্ন করে।
কে আপনি আর কোন আদিত্যের কথা জিজ্ঞেস করছেন?
রুদ্রের পাল্টা প্রশ্ন লোকটির পছন্দ হলো না।লোকটি রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ধারালো কন্ঠে বলল।
যাকে তোমরা মাঝ রাতে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছ ওর নাম আদিত্যে চোধুরী।আর আমি ওর বাবা আফজাল চৌধুরী।
আফজাল চৌধুরীর কথা শেষ হতেই রুদ্র আবার তাকে প্রশ্ন করে বলল।
আপনি কি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরী?
এত প্রশ্ন আমার পছন্দ না ছেলে আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তুমি শুধু সেই প্রশ্নের উত্তর দাও।আর হ্যা তুমি যখন প্রশ্ন করেছ আমি তার উত্তর দিচ্ছি ।হ্যা আমি রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরী।
আফজাল চৌধুরীর কথা শুনে রুদ্র নূরের দিকে তাকায়।নূর রাজনীতির কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। নূর যেই জিনিসটিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে অবশেষে তাই জুটলো ওর কপালে। রুদ্রের এখন নিজের থেকে বেশি নূরের জন্য কষ্ট লাগছে।আহ বেচারি যেইটা থেকে সব সময় দূরে পালিয়েছে এখন সারাজীবন ওকে তাই বহন করে চলতে হবে। আসলে মানুষ ঠিকই বলে তুমি যেই জিনিসকে বেশি ঘৃণা করবে তাই তোমার জীবনের সাথে জড়িত যাবে।
তুমি এখনো আমার প্রশ্নের জবাব দাওনি।
আফজাল চৌধুরীর কথা শুনে রুদ্র কিছু বলার আগে নূর বলল।
এক তো আমরা আপনাদের সাহায্য করেছি তার উপর আপনি আমাদের সাথে এমন ব্যবহার করছেন। আমাদের ও কেনো আগ্রহ নেই আপনারা কে প্রশ্ন করার বা আপনার সাথে কথা বলার।তাই সোজা উত্তর দিচ্ছি।আপনার ছেলেকে আমরা সূর্যধারী গ্রামের পাশের গ্রামে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় আধমরা পেয়েছি। কিন্তু ওর জন্য আমরা অনেক সাফার করেছি।এখন আপনি আপনার ছেলেকে সামলান আমাদের দায়িত্ব শেষ।
কথাগুলো বলে থামে নূর ওর শরীর কাঁপছে রাগে একতো ওই ছেলের জন্য তাদের এত কিছু সহ্য করতে হয়েছে তার উপর ওই ছেলের বাবা ওদের উপর জোড় দেখাচ্ছে। আলতাফ চৌধুরী তাকিয়ে নূরের আছে নূরের দিকে। নূর রাগে ফুঁসছে। তিনি ভাবতেও পারেননি মেয়েটি এত কঠিন কন্ঠে তার কথার জবাব দিবে। আলতাফ শিকদার নূরের দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বলল।
তোমার কথায় তেজ আছে মেয়ে, সত্যি তোমরা আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছ। এবং ভালো করেছ চাঁদপুর গ্রামের হসপিটালে তোমরা ওকে নিয়ে যাওনি ওইখানে শত্রুরা তোমাদের অপেক্ষায় ছিল বসে ছিল। এইজন্য তোমাদের ধন্যবাদ।আর আমার ব্যবহারের জন্য মাফ চাইছি। আদিত্যের অবস্থা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।
আলতাফ চৌধুরীর কথা শুনে নূর কিছুটা শান্ত হয়। এরপর আলতাফ চৌধুরী কে বলল।
আমাদের দায়িত্ব শেষ আপনার ছেলেকে আপনি সামলান এখন।
কথাটি বলেই নূর হসপিটাল থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো।তার পিছনে যাচ্ছে সিরাত ও রুদ্র।আলতাফ চৌধুরী তাঁদের নাম জিজ্ঞেস করতে চাইছিলেন কিন্তু তার আগেই নূর চলে যায়। আলতাফ চৌধুরী ও এ নিয়ে আর ভাবে না। কারণ উনি চাইলে ওদের পুরো ডিটেইলস বের করতে সময় লাগবে না। কিন্তু এখন আলতাফ চৌধুরীর চিন্তা হচ্ছে নিজের ছেলের জন্য।কার এত বড় সাহস যে আদিত্যের উপর হামলা করেছে।এই বিষয়ে অবশ্য উনার চিন্তা করার কেনো প্রয়োজন নেই। কারণ আদিত্য সুস্থ হওয়ার পর সে নিজেই সকল কিছু বের করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিবে। কিন্তু সেই শাস্তি হবে ভয়াবহ আদিত্য তার শত্রুদের কি হাল করে তা আদিত্যের বাবা বেশ ভালোভাবে জানে।
গাড়ি চলছে ঢাকার উদ্দেশে। গাড়ির আশেপাশ খুব সুন্দর পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। নূর,সিরাত রুদ্র তিনজনের মধ্যে একজনার ধ্যান সেই দিকে নেই তিনজন ডুবে আছে নিজ ভাবনায়। নূর নিজের সদ্য বিয়ে করা স্বামীকে ফেলে এসেছে একেবারের জন্য। এমনিতেই নূর এই বিয়ে মানতে পারছিল না।তার উপর যখন থেকে শুনেছে আদিত্যের বাবা এমপি তখন থেকে যেনো আরো বিতৃষ্ণা লেগে গিয়েছে নূরের আদিত্যের উপর। নূর আর যাই করুক না কেনো ওই লোককে কখনো স্বামী হিসেবে মেনে নিবে না।
গাড়ির নিরবতার মাঝে হঠাৎ রুদ্র সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
তুমি বিয়ের জন্য একবারও না কেনো করোনি?
সিরাত রুদ্রের কথায় ভাব অলসহীন ভাবে উত্তর দিলো।
আমার মন চাইনি তাই?
সিরাতের জবাব শুনে রুদ্রের মাথা জেনো আরো গরম হয়ে গেল। রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
ও তাহলে তোমার আমাকে বিয়ে করার অনেক শখ জেগেছিল তাই তুমি বিয়ের জন্য একবারও না করোনি।
প্রথমত,আমার হাতে যদি কিছু থাকতো আমি তোমাকে বিয়ে করার চেয়ে সারাজীবন কুমারী থাকতে পছন্দ করতাম আর দ্বিতীয়ত আমি যদি ওইখানে গলা ফাটিয়ে চিল্লিয়ে ও বললতাম তবুও ওরা আমার কথা শুনতো না যেমনটা তোমার শুনেনি।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৪
রুদ্র সিরাতের কথা শুনে বলল।
ঢাকা গিয়ে আমি ডিভোর্স পেপার বানাতে দিবো ডিভোর্স পেপার বানানো হয়ে গেলে চুপচাপ সাইন করে দিবে।আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না।
রুদ্রের কথার প্রতি উত্তরে সিরাত কিছু বললো না। এখন শুধু ঢাকা পৌছাবার অপেক্ষা..