রাজবধূ পর্ব ৩০

রাজবধূ পর্ব ৩০
রেহানা পুতুল

নিমিষেই রাজের মুখ অপমানে থমথমে হয়ে উঠলো। ভয়াল রূপ ধারণ করলো সে। যেন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। এক গর্জনেই সব তছনছ করে দিবে।
সে হেঁড়ে গলায় ডেকে উঠলো,
“শিখা… বেরিয়ে এসো বলছি।”
শিখা নিঃশব্দ পায়ে রুম থেকে বের হলো। মুখশ্রী ফ্যাকাসে মৃত মৎসের ন্যায়। দৃষ্টি করুণ! অসহায়! উদভ্রান্ত!
” কাকার আংটি তোমার কাছে?”
গমগমে স্বরে জিজ্ঞেস করলো রাজ।
শিখা নিরুত্তর! দৃষ্টি অবনত!

“চুপ করে থাকলেই সমস্যার সমাধান হবে না। জবাব দাও বলছি।”
মৃদু ধমকে ফের জিজ্ঞেস করলো রাজ।
শিখার মেলানো ঠোঁট ফাঁক এবার। ক্লান্ত স্বরে বলল,
“হ আমার কাছে উনার আংটি।”
“যাক চোর হইলেও সৎ আছে৷ বোঝা গেলো।”
বলল রাজের সেজো ভাবি।
রাজ হুংকার দিয়ে উঠলো। বলল,
“কারো একটি কথাও শুনতে চাই না। যা বলার আমি বলব। যেহেতু শিখা আমার স্ত্রী।”
তৎক্ষনাৎ সারা ঘরে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করলো। সবাই বোবামুখে দৃষ্টি বিনিময় করতে লাগলো। রাজ শিখার মুখপানে বিক্ষুব্ধ দৃষ্টি তাক করলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তাহলে দিলে না কেন কাকাকে? রেখে দিলে কেন?”
“আমি বিয়ার ঝামেলা শ্যাষ হওনের লাইগা অপেক্ষা করতাছিলাম। ঘর ভরা মানুষ দেইখা নিরব ছিলাম।”
“আমাকে ত বলতে পারতে, কাকার হারানো আংটি তুমি পেয়েছো?”
“একটু আগেতো ফুলবানুরে দিয়া আপনারে ডাকাইলাম এই জন্যই। আপনিতো কইলেন পরে আইবেন।”
শিখার এই বাক্য শুনে খায়রুল তালুকদার জানে পানি পায়। ভাগ্যিস! রাজ পরে আসলো। এই বান্দর মেয়ে বলার আগেই সে কাহিনীর বাঁক বদল করে দিতে পেরেছে।
“বুঝলাম। তো এখন বলো?”
পিতৃতুল্য চাচা স্বশুরের নোংরামির কথা কিভাবে ঘরভর্তি এতগুলো মানুষের সামনে সে বলবে। এটা অসম্ভব! সে নিদারুণ স্বরে রাজকে ডাকলো।

“আপনে একটু এইদিকে আসেন না।”
রাজ পা বাড়ালে তার পিতা বলল,
“রাজ থাম তুই। আংটির কথা কইতে আড়ালে যাইতে হইবো ক্যান?”
“সেইটাই। বানায়া বুনায়া কিছু একটা কই আমার পোলারে ভুলাইবার চেষ্টা করবো আর কি।”
গলায় তেজ ঢেলে বলল সুফিয়া বিবি।
খায়রুল তালুকদার মনে মনে ফোঁড়ন কেটে বলল,
“ক রাজরে। এখন কোন লাভ হইব না।”
রাজ তার মা বাবার কথাকে কিছুটা অগ্রাহ্য করলো। বেশী দূরে গেল না। তাদের চোখ বরাবর ঘরের ভিতরেই খানিক দূরে এসে দাঁড়ালো। শিখা গুটিগুটি পায়ে রাজের কাছে এসে দাঁড়ালো।
“হ্যাঁ বলো।”
ঠান্ডা মাথায় জানতে চাইলো রাজ।

শিখা অশ্রুসজল চোখে নিচু কন্ঠে সেই রাতের ঘটনা সব খুলে বলল রাজকে। এবং কেন এর আগে বলেনি রাজকে, তাও গুছিয়ে ব্যাখ্যা করলো রাজের কাছে। রাজ বিশ্বাস করলো শিখাকে। বরং শিখার কাছে সে কতটা ছোট হয়ে গেলো তা ভেবেই তার নিজের গলায় তলোয়ার চালাতে ইচ্ছে করছে। সে শিখাকে বলল,
“মন খারাপ কর না। এই পৃথিবীর সবাই তোমাকে ভুল বুঝলেও রাজ তোমাকে কখনোই ভুল বুঝবে না। কক্ষো না। আসো সবার সামনে।”
রাজের কথা শুনে শিখা যেন এক পাহাড় শক্তি পেলো মনে। জোরে একটা দীর্ঘস্বাস ছাড়লো সে। রাজ লম্বা লম্বা পায়ে গিয়ে ঘরের মাঝখানের খোলা অংশে একটি বেতের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। তার চাহনি দানবীয়! মুখাবয়ব রক্তিম! কপাল ও ঘাড়ের র*গগুলো দৃশ্যমান।
সে ডলিকে আদেশ দিয়ে বলল,

” সেজো ভাবি যাও,মতির মা, বাদশা,জোছনা,বরকত,ফুলবানুকে ডেকো আনো এখানে। চাচী ও নানুকেও ডেকে আনো। এই জুবায়ের উঠে যাবি না। বোস।”
ডলি দেবরের আদেশ পেয়ে সবাইকে ডেকে আনলো। জুবায়েরও উপস্থিত আছে। যেহেতু আদুরীর স্বশুর বাড়ি যেতে হয়েছে। তাই আজ সে মার্কেটে যায়নি। তালুকদার পরিবারের প্রতিটি সদস্য উপস্থিত রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে একেকজন একেকভাবে বসে আছে। তাদের গৃহকর্মীরাও পাশাপাশি বসে আছে মেঝেতে। শিখা দাঁড়িয়ে আছে নির্লিপ্ত চাহনিতে।
“শিখা তুমিও বসো।”

দরাজ কন্ঠে আদেশ দিলো রাজ। শিখা রুমের দরজায় দুই হাঁটু ভাঁজ করে নিরীহ ভঙ্গিতে বসে রইলো।
রাজ খায়রুল তালুকদারের দিকে চেয়ে রুক্ষ স্বরে বলল,
“কাকা,বাবা আর আপনাকে আমি ভিন্ন চোখে দেখি না। কিন্তু এখন না বলেও পারছি না। শিখা আপনার আংটি চুরি করেনি। বরং আপনি চুরি করতে গিয়ে শিখার হাতে ধরা পড়েছেন। শিখা লজ্জায় এটা কাউকে বলতে পারেনি। কারণ সে আপনাকে শ্রদ্ধা করে।”
রাজের কথা শেষ হতে দেরী। তালুকদার ক্ষেপে যেতে দেরী করল না। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বড় ভাই,ভাবির দিকে চেয়ে কর্কশ স্বরে বলল,
” দেখলেন মিয়াভাই,কি ধড়িবাজ আর পল্টিবাজ মাইয়া? কিভাবে সত্যরে মিথ্যা বানাইতে পারে? আমার এই বয়সে এত বড় অপবাদ দিলো সে? এটা বিশ্বাসযোইগ্য কথা? আপনারা সকলেই বলেন? নিজেরে সাধু বানাইলো ক্যামনে এই মাইয়া?”

“আপনে ঠিকই কইছেন,বউর মা আদুরীরে আংটি দিলো। এইদিকে সে আপনের আংটি নিয়া সেইটা পোষাইলো। আজ পর্যন্ত ঘরের কেউ আপনার চরিত্রের কোন ত্রুটি দেখেনাই। দুইদিনের মাইয়া আপনার নামে বদনাম রটাইলো।”
ভ্রুকুটি করে বলল সুফিয়া। সবার মাঝে গুঞ্জন শুরু হলো। নানামুখী মুখরোচক কথা শুরু হলো।
রাজ অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলল,
“হাউকাউ করে লাভ নেই। সমস্যা হয়েছে। সমাধানে আসতে হবে। কাকা বলছে উনার আংটি শিখা নিয়েছে। আর শিখা বলছে নেয়নি। তিনি ধরা পড়েছে। শিখার হাতে উনার আংটি চলে গিয়েছে। যেহেতু বিষয় টি কাকা ও শিখার মাঝে সংঘটিত এবং বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন। আমরা কেউই নিজ চোখে দেখিনি। তাই আপাতত আমরা পরিবারের সদস্যদের ভোট নিবো। তারপর বিবেচনা হবে কি করা যায়।”

“হ্যাঁ তাই কর। এইটাই ভালো।”
টনটনে গলায় বলল খায়রুল তালুকদার।
হারিছা বিবি শরীর খারাপের ছুতোয় উঠে গেলো। কারণ জামাইয়ের বিপক্ষে সে বলতে পারবে না। শিখার পক্ষ নিলেও বিপদ। রাজ তাকে থামাল না। যেহেতু বয়স্কা মানুষ উনি।
রাজ একজন একজন করে জিজ্ঞেস করলো,
“শিখার কথা সত্যি না কাকার কথা সত্যি? দুজনের কে মিথ্যাবাদী?”
” তোর চাচার কথাই হাচা। বিবেক দিয়া চিন্তা করো। নিজের নির্দোষ প্রমাণের লাইগা বাপের বয়েসী মানুষের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলল তোর বউ। কাণ্ডজ্ঞানের মাথা খাইস না। লোভ সামলাইতে পারেনাই। ভাবছে বিয়া বাড়ি, অন্যদের দিকে দোষ যাইবো।”

“মা থামেন। অনেক বলছেন।”
সুফিয়া থামলো।
“আমিও মার লগে চাচার কথা বিশ্বাস করছি। চাচার কোন বাজে দিক কখনো দেখিনি।”
বলল খালেদ।
“আমিও কাকার পক্ষে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য রাজ। শিখা আংটি লুকিয়ে রাখছে। এবং শিখার অবস্থানে এটা বিশ্বাসযোগ্য। ”
বলল আসলাম।
“কাকার কথাই সত্যি।”
বলল রানী।
“হুম কাকার কথাই সত্যি।”
বলল সুমনা।
“আমিও কাকার কথা বিশ্বাস করছি।”
বলল ডলি।

“আমার ভাই মিছা কথা কইবো ক্যান? কও রাজ।”
বলল রাজের একমাত্র ফুফু জাহানারা।
“ফুলবানু তুই বল?”
“আমি ভাবির কথা মানছি ভাইজান।”
“আমিও ভাবির পক্ষে।” বলল জোছনা।
“আমিও ভাবির কথা বিশ্বাস করছি।”
বলল বরকত।
“শিখা আমারে আংটি নিয়া দেখাইলো। কইলাম এইটা তোমার চাচাশ্বশুরের আংটি। দিয়া দিও। সে চুপ মাইরা রইলো। আমার চুল পাকছে। সেই যদি লুকায়া রাখাতো তাইলে আমারে দেখাইলো ক্যান? এইটা একবার চিন্তা করেন সবাই? আমার গোরে সেও যাইব না। আপনারাও যাইবেন না। আর কোন নিমক হারামি করিনাই। হক কথা কইছি। এই মাইয়া ম্যালা ভালা। ফুলের মতন।”

বলল মতির মা জামিলা।
রাজ ও শিখা আপ্লুত চোখে মতির মায়ের মুখপানে চায়।
“বাদশা চুপ কেন তুই? তোর মত জানা?”
বলল রাজ।
“আমি চাচার কথা বিশ্বাস করছি ভাই।”
চোখ নামিয়ে মরাকন্ঠে জবাব দিলো রাজ।
বাদশার ধূর্ততা তালুকদার ধরতে পারেনি। উল্টো মনে জোর পেলো বাদশার পক্ষ পেয়ে। যাক তাহলে বাদশা সেদিন আমাকে তার বাড়িতে দেখে সন্দেহ করেনি। জুলফা বুঝিয়ে নিতে পারছে। কিন্তু জুলফা মিষ্টি খেল না কেন? এটাই ত বুঝতে পারলাম না। জানতে পারলাম না।
রাজের নির্দেশে পেয়ে গৃহকর্মীরা যার যার স্থানে চলে গেলো।
“বাবা আপনি কি বলেন?”

জয়নুল তালুকদার থতমত গলায় টেনে টেনে বললেন,
“বাবারে উপরওয়ালা দেখছে। আমি কারে অবিশ্বাস করমু? কেউ আমার ভাই। কেউ আমার কন্যার মতো। আমি দোটানায় আছি বাবা।”
রাজ আর কিছু বলে পিতাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিল না। দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো জুবায়ের ও তার মা আমেনার দিকে।
“চাচী আপনিত উনার জীবনসঙ্গী। আপনার মতটা আমি জানতে চাই। দয়া করে বলেন?”
আমেনা বেগম খানিক চুপ রইলেন। এরপর নিস্তেজ হলেও স্পষ্ট উচ্চারণে বললেন,
“আমি বউয়ের কথা বিশ্বাস করছি।”
তালুকদার উঠে গিয়ে আমেনাকে কষে লাথি দিলো। আমেনা মাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। জুবায়ের মাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। রক্তচক্ষু নিয়ে পিতাকে বলল,
“আপনার এতবড় আস্পর্ধা! এক সন্তানের সামনে তার মাকে নির্যাতন করলেন। আর কখনো আমার মায়ের শরীরে যেন আপনার হাত না উঠে।”

“তোর মায়েরে আমি তালাক দিলাম। এত বছর আমার খাইয়া,আমার পইরা আইজ ওই ফকিরনীর মাইয়ার লগে জোট বাঁধছে। এক তালাক, দুই তালাক,তিন তালাক।”
“এভাবে তালাক কার্যকর হয়না। এটা হাস্যকর।ভুয়া।”
বলল রাজ।
ছোট তালুকদার তর্জন গর্জন করে উঠে দাঁড়ালো। আজ ওই মাইয়ারে আমি মাইরাই ফালামু, বলে সে শিখার দিকে তেড়ে আসলো। শিখা ভয়ে কেঁপে উঠলো। রাজ সারাঘর কাঁপিয়ে বজ্রকন্ঠে চিৎকার করে উঠলো।
“শিখার শরীরে কারো এতটুকু আঁচড় পড়লে আমি রক্তগঙ্গা বইয়ে দিবো। আমি নওশাদ তালুকদার। আমার পাওয়ার সম্পর্কে আপনারা পুরোটা না জানলে কিছুটা হলেও অবগত রয়েছেন।”

জয়নুল তালুকদার ও বাদশা বাহুশক্তি অপচয় করে খায়রুল তালুকদারকে থামালো। ঘরের সিচুয়েশন উত্তপ্ত। সবার চাহনি ভীতসন্ত্রস্ত! এলোমেলো। রাজ জুবায়েরকে বলল,
“জুবায়ের সবাই বাদ। চাচীও না হয় চাচার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলো। কিন্তু তুই? কোন সন্তান তার বাবা সম্পর্কে মিথ্যা বলে না। আজ আমার বিশ্বাস পূর্ণ হবে তোর একটি বাক্যের উপরেই। কারণ সবাই উনার পর হতে পারে। তুই উনার জন্ম দেওয়া সন্তান। তুই বল।”
জুবায়ের ম্লান মুখে বলল,

“আমি শিখার কথা বিশ্বাস করেছি। শিখা আংটি পেয়ে রেখে দেওয়ার মতো মেয়ে নয়।”
মুহূর্তেই রাজের মুখের উদ্বিগ্নতা দূর হয়ে গেলো। বুক হতে যেন বিশাল পাথর নামলো। সে ও শিখা জুবায়েরের মুখে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকালো।
“তোকে আমি ত্যাজ্যপুত্র করলাম। তোর মুখ আর আমি দেখতে চাইনা। বাইর হইয়া যা আমার ঘর থেইকা। দুই কানাকড়ির একটা মাইয়ার লাইগা নিজের বাপরে অবিশ্বাস করলি! হারামী কোথাকার! নেমক হারাম! জানোয়ার! এই মাইয়ার পরিচয় জানস? একটা ধর্ষিতার মাইয়া সে৷”
“আপনি কিভাবে জানেন এটা? তাহলে আপনিই করছেন কাজটা? যে মেয়ের বয়েসী কারো গায়ে হাত দিতে পারে,সে এটা করতেই পারে!”

তখন যেন আমেনার মুখে বোল ফুটলো। সে ধরা গলায় গাঢ় অভিযোগ তুলে সবার সামনেই বলে ফেলল,
“আইজ আর হারানোর কিচ্ছু নাই। কত সাধ আছিলো আমার একটা মেয়ে হইবো। কিন্তু হইল না। ক্যান? হের জন্যই। কোন বেডির লগে আকাম করতে গিয়া ধরা খাইছে। আর সেখানে কেউ তারে ওইখানে আঘাত করছে। আর উনি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হইয়া পড়ে!”
তালুকদার আবারো আমেনাকে লাথি মারলো। বলল,
“তুই দেখছত মা* গী। আমি কই কি করলাম?”

“ক্যান ডাক্তার ত এইটাই কইলো। তাইলে এরমানে কি আমি বুঝি না? যাইয়া দেখতে হইবো? ছেলে জন্ম দিলেন। আর পারলেন না ক্যান বাচ্চা পয়দা দিতে? আমি বুঝি না? আলগা ঘুমান ক্যান? আমি বুড়া হইছি?”
কাঁদতে কাঁদতে বলল আমেনা। রাজ গিয়ে আমেনাকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে লাগলো।
রাতের আঁধারে কিছু নির্মম নির্জলা সত্যি আবিষ্কার হয়ে গেলো। রাজ বলল,
“এ দেখি কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে অজগর সাপ বেরিয়ে এলো।”
শিখা বিষ্ফোরিত চোখে চেয়ে রইলো মাটির দিকে। এসব কি শুনছে সে এই ঘরে? জুবায়ের নিষ্প্রাণ চোখে বেরিয়ে গেলো নিজের রুমের দিকে। একটু পর ফিরে এলো। কাঁধে একটি ব্যাগ।
রাজকে ধরা গলায় বলল,

“রাজ আমার মা ও নানুকে তোর কাছে আমানত রেখে গেলাম। আমি চলে যাচ্ছি এই বাড়ি ছেড়ে। এই তালুকদার বাড়ির হাওয়া এখন আমার কাছে বিষাক্ত! দূষিত!”
সবাই নির্বাক হয়ে গেলো। এবং জুবায়েরকে অনুরোধ করলো না যাওয়ার জন্য। আমেনা হাউমাউ করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আটকানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। জুবায়ের ভারি ভারি পা ফেলে তালুকদার বাড়ির পাঙ্গন ত্যাগ করলো। রাজের কথাও রাখল না জুবায়ের।
রাজ খায়রুল তালুকদারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলল,

“আপনাকে শাস্তি দেওয়া আর আমার বাবাকে শাস্তি দেওয়া একইকথা। আপনার সমস্ত কৃতকর্মের আল্লাহ আপনাকে উপযুক্ত শাস্তি দিবে। আমি তার উপরেই ছেড়ে দিলাম। যতকিছুই হোক,আপনি ভুলেও সত্যি স্বীকার করবেন না। তাই সেই বৃথা চেষ্টা আর করলাম না। তবে আমি শিখার কথা,চাচীর কথা,জুবায়েরের কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছি। আশাকরি অন্যদের মাথায় এতটুকু মগজ থাকলে আমার মতো তারাও বিশ্বাস করবে!”
রাজ শিখাকে নিয়ে শিখার রুমে চলে গেলো। শিখা পাগলের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। রাজ শিখার মাথাকে আলগোছে বুকে টেনে নিয়ে শান্তনা দিতে রইলো।

রাজবধূ পর্ব ২৯ (২)

তার পরেরদিন গিয়ে বাদশা নূরীকে সময় ও স্থান জানিয়ে দিলো। এবং একটা ঠিকানা দিয়ে আসলো যাওয়ার জন্য।
সেদিন সময় রাত সাড়ে দশটা। বাদশা তালুকদারকে ডাক দেয়,
“চাচা আপনার লগে বাজারের দুইজন মানুষ দেখা করতে চায়। কি জানি তাদের বিপদ খুব।”
তালুকদার বিশ্বাস করে বাদশার কথা। ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের দিকে যায়। বাদশা মনে মনে বলে,
“আজই তোরে পরপারে পাঠাচ্ছি। তুই একটা নরপিশাচ! খেলা হইবো তোর গদিতেই। কঠিন খেলা হইব আজ তোর সঙ্গে আমার।”

রাজবধূ পর্ব ৩০ (২)