উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ২৩

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ২৩
আফিয়া আফরোজ আহি

দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন নিকটে চলে এসেছে। আর মাত্র হাতে গোনা সাতটা দিন। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে এইচ এস সি পরিক্ষা শুরু। নাওয়া, খাওয়া, ঘুম, গল্প, আড্ডা সব বাদ দিয়ে ডুবে রয়েছি বইয়ের মাঝে। যেন বই ছাড়া এই ইহা জগতে কোনো কিছু নাই। আমাকে দেখে মনে হবে কতই না পড়ুয়া মেয়ে। সত্যি তো এই, পরীক্ষা না এলে আমি বইয়ের আশেপাশেও ঘেসি না। বকে পড়তে বসাতে হয় আমাকে। এই হলো আমার পড়ার নমুনা। সকাল ছয়টা বাজে ঘুম থেকে উঠে সেই যে বই নিয়ে বসি একটানা বারো টা সাড়ে বারোটা অবধি পড়ে উঠি। সকালের নাস্তাটাও ইদানিং আম্মু রুমে দিয়ে যায়। মাঝে মাঝে তো খাইয়ে দিয়ে ও যায়। আমার আম্মাজান খাইয়ে দিতে এসে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার পানে। দেখে মনে হয় এলিয়েন বা ভিন্ন গ্রহের প্রাণী দেখছে। একদিন হুট্ করে জিজ্ঞেস করে বসলাম,

“আম্মু এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?”
আম্মু প্রথমে ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল। সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। অতঃপর আমার সারা মুখে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,
“দেখছি এটা সত্যিই আমার মেয়ে তো! নাকি জিন ভুত ভর করেছে? যেই মেয়েকে ধমকে ছাড়া পড়তে বসানো যায় না সেই মেয়ে কিনা নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়তে বসেছে? তাও আবার কিনা তার পছন্দের আড্ডা ভুলে ভাবা যায়! তাই অবাক হয়ে দেখছি”
থেমে ফের কপালে হাত দিয়ে বলল,
“তোর জ্বর টর আসেনি তো? হতে পারে জ্বরের ঘোরে পড়ছিস”
“আম্মু!”
“আরে মজা করছিলাম। তুই মন দিয়ে পড়। এটা যে আমার ফাঁকিবাজ মেয়ে এতে আমার বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই”
আমার যেই আম্মাজান আমায় কেউ খাইয়ে দিলে তাকে বলতো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এতো বড় ধিঙি মেয়েকে খাইয়ে দিতে হবে কেন? নিজে খেতে পারে না? ওর কি হাত নেই?”
সেই আম্মু এখন প্রতিদিন সকালে আমায় খাইয়ে দিয়ে যায়। পড়া থেকে উঠে গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘন্টা দুয়েক ঘুম দেই। প্রথম প্রথম এই টাইম টাতে পড়তাম। একদিন আদ্র ভাই শক্ত কণ্ঠে বলে দিয়েছে,
“এতো প্রেসার নেওয়ার দরকার নেই। শরীরের রেস্ট প্রয়োজন। তোকে জেলায় প্রথম হতে বলেনি যে এভাবে ঘুম, রেস্ট বাদ দিয়ে পড়তে হবে। খাওয়ার পর পাক্কা দুই ঘন্টা ঘুমাবি তারপর উঠে পড়তে বসবি”

তারপর থেকে দুপুরে একটু ঘুমিয়ে উঠে পড়তে বসি। এক টানা রাত বারো টা অবধি। মাঝে রাতের খাবার খাওয়া আর বিরক্ত লাগলে কিছু সময় ব্রেক। এভাবেই চলছে আমার বিগত এক মাস। যে করেই হোক আমায় ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। আদ্র ভাই মানুষটার পরিশ্রম বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আদ্র ভাই অনেক খাটুনি দিচ্ছেন আমার পিছনে। গত এক মাস উনি এ বাড়িতেই আছেন। দুই এক দিন বাড়ি গিয়ে ফুপ্পির সাথে দেখা করে এসেছেন। মাঝে মাঝে ফুপ্পি এসেছেন। আদ্র ভাইয়ের এক কথা সে আমাকে পরীক্ষার সময় একা ছাড়বে না। অফিস থেকে এসে সোজা আমার রুমে ঢোকে। কোনো রকম ঝট পট ফ্রেশ হয়ে বসে পড়েন আমায় পড়াতে। কোথায় কি ভুল করেছি, কোন জায়গায় সমস্যা হচ্ছে, খুটি নাটি সব বিষয়েই তার নজর রয়েছে। এই মানুষটা সব সময় আমার সব বিষয়ে খেয়াল রাখে। কোথায় কি হলো, আমার কোনো সমস্যা হলো কিনা! অফিসে বসেও তাকে আমার খবর নিতে হবে। পারলে উনি এই কয়েক দিনের জন্য অফিস লাটে তুলে আমার পাশে বসে থাকে। হঠাৎ একদিন কি দরকারে যেন উনার রুমে গিয়েছিলাম। যেয়ে দেখি মিস্টার কলে ফুফাকে বলছে,

“আব্বু আমি এই মাসটা অফিসে আসতে পারবো না”
ফুফা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কেন! কি সমস্যা?”
“তুমি তো জানো সামনে রোদের পরীক্ষা ওর এখন অনেক সমস্যা হতে পারে। পড়তে গিয়ে অনেক জায়গা আটকে যাবে। ওকে বোঝানোর জন্য তো কাউকে না কাউকে চাই মা শুভ ভাই ইদানিং বড্ড ব্যাস্ত তাই আমি ওর পড়ায় হেল্প করবো। তুমি তো জানো এই সময়টা ওর জন্য কতো ইম্পরট্যান্ট। এইচ এস সি’র রেজাল্ট এর ওপর ওর পুরো ক্যারিয়ার ডিপেন্ড করবে। এই কঠিন মুহূর্তে আমি ওকে একা ছাড়তে পারবো না”
ফুফার কপালে হাত। হতাশ কণ্ঠে বলল,
“বাপ্ এই দুনিয়ায় রোদ মা একা পরীক্ষা দিচ্ছে না আরো অনেকেই দিবে। তোকে এতো বেশি চিন্তা করতে হবে না। আমি জানি রোদ অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। তুই বাহানা না করে অফিসে আয়। অফিস শেষে যেয়ে ওকে সময় দিলেই হবে”

“তুমি যাই বলো আমি আসছি না”
“একা আমি এতো কিছু সামলাবো কিভাবে?”
“আমি জানি না। মনে করো এই এক মাস আমি ছুটিতে আছি”
আমি কপালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়েছি। এই লোক বলে কি! এর কি মাথা ঠিক আছে? রোশনি, ঈশিতা আপু বা বাড়ির অন্য কেউ শুনলে এক কথায় আদ্র ভাইকে ট্যাগ ধরিয়ে দিতো। তাও আবার জেন তেন ট্যাগ নয় এক্কেবারে ❝বউ পা*গলা❞ ট্যাগ। আদ্র ভাই কল কেটে দরজার দিকে তাকালে চোখ পড়লো ফ্লোরে বসে থাকা আমার দিকে। হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে এলো কাছে। ফ্লোর থেকে টেনে উঠাতে উঠাতে উৎকণ্ঠা হয়ে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো,
“কিরে কি হয়েছে? শরীর খারাপ করছে? মাথা ঘুরাচ্ছে? নাকি অন্য কিছু? মাথায় হাত কেন? মাথা ব্যথা করছে?”
বলতে বলতে মাথা টিপা করা শুরু করে দিলো।
“রাখো তোমার মাথা ব্যথা। তুমি এতক্ষন কলে ফুফাকে কি বলছিলে?”

আদ্র ভাই বুঝতে না পেরে সুধালো,
“কি বলেছি?”
“তুমি নাকি আগামী এক মাস অফিসে যাবে না?”
“হ্যাঁ বলেছি। তো?”
“পা*গল হয়েছো তুমি? সামান্য পরীক্ষার জন্য তুমি অফিস কামাই করবে?”
“তোর কাছে সামান্য হলেও আমার কাছে না। আমার কাছে সময়টা তোর জন্য খুবই ইম্পরট্যান্ট। তোর ক্যারিয়ার ডিপেন্ড করছে এই পরীক্ষার ওপর”
“আমি কি প্রথম পরীক্ষা দিচ্ছি নাকি? এর আগে কেউ দেয়নি? কোনো বর কে দেখেছো তার বউয়ের পরীক্ষা বলে কাজ বাজ ফেলে ঘরে বসে থাকতে?”
“সবার বউ তো আর রৌদ্রময়ীও না! আর নাতো সবাই আদীব চৌধুরী আদ্র”
“এই বন্ধ করবে তোমার ফাও পেচাল? তুমি রেগুলার অফিস যাবে এটাই ফাইনাল”
“আরে শুনবি তো….”

“কোনো কিছু শুনতে চাই না আমি। তুমি যা শুরু করেছো দুদিন বাদে আমায় শুনতে হবে আমি বউ পা*গল লোকের বউ। লজ্জায় আমার মাথা কাঁটা যাবে”
“এখানে লজ্জার কি আছে আজব! বউ আমার পা*গলামি করলেও আমিই করবো। আমার দশটা না পাঁচটা একটা মাত্র বউ বলে কথা তাকে নিয়ে একটু পা*গলামি তো করতেই হবে। অন্যের বউকে নিয়ে তো আর পা*গলামি করছি না। তাহলে সমস্যা কি?”
“তোমাকে বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি কাল থেকে আগের ন্যায় অফিস যাচ্ছ এটাই ফাইনাল। আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি”

বলে গট গট পায়ে হেঁটে চলে এলাম। এই লোক যা শুরু করেছে দুদিন বাদে লজ্জায় কাউকে মুখ দেখানোর জো থাকবে না। আস্ত এক পা*গল লোক। তবে এটা সত্যি আদ্র ভাই মানুষটাকে না পেলে এই পা*গলামো গুলো না দেখাই রয়ে যেত। এই মানুষটা যে কাউকে পা*গলের মতো এতটা ভালোবাসতে পারে এটাই জানাই হতো না। নিজেকে ভাগ্যবতী ফিল হচ্ছে।

প্রথম পরীক্ষা বাংলা। বই হাতে রুম জুড়ে পায়চারি করছি আর পড়ছি। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। গলা একটু পর পর শুকিয়ে যাচ্ছে। রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি। হাতে গোনা দের ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছি হয়তো। টেনশনে ঘুম আসছিলো না। ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখছি আমি পরীক্ষার হলে বসে আছি। কিছুই পারছি না। বসে বসে কলম চাবাচ্ছি আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। সেই স্বপ্ন দেখে লাফ মেরে উঠে বসে পড়েছি। আচমকা আমার এভাবে ওঠার শব্দে আদ্র ভাইয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। বেচারা নিজেও একটু আগে ঘুমিয়েছে। আদ্র ভাই সোফা থেকে উঠে এসে আকুল কণ্ঠে সুধালো,
“কি হয়েছে? বাজে স্বপ্ন দেখেছিস?”

মাথা নেড়ে সায় জানালাম। বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে পুরো স্বপ্ন খুলে বললাম। আদ্র ভাই আচমকা আমার মাথা উনার বুকে চেপে ধরলো। মাথায় আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“তুই একটু বেশিই ভাবছিস। দেখবি ভালো কিছুই হবে। তোর প্রিপারেশন অনেক ভালো। এখন শুয়ে পর আরেকটু ঘুমা। আমি ডেকে দিবো তখন উঠে পারিস”
কে শোনে কার কথা! আমি ঘুমাতে নারাজ। বড় কথা হলো এখন শুয়ে থাকলেও আমার ঘুম আসবে না। টেনশন হবে প্রচুর। অগত্যা বই নিয়ে বসে পড়েছি। দশটায় পরীক্ষা, সেন্টার কাছে হওয়ায় তেমন কোনো ঝামেলা নেই। নয়টার দিকে বের হলেই হবে। সবে আটটা বাজে। বই হাতে নিয়ে পুরো রুমে পায়চারি করছি আর পড়ছি। সোফায় বসে কোলের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে আদ্র ভাই। কাজ কম আমায় দেখছেন বেশি। এর মাঝে খাবার হাতে রুমে প্রবেশ করলো আম্মু। খাবার ট্রি টেবিলের ওপর রেখে আমায় পড়তে দেখে সুধালো,

“এখনো পড়ছিস? রেডি হবি কখন? এদিকে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি”
পাশ থেকে আদ্র ভাই বলে উঠলো,
“তোমার কাজ থাকলে তুমি যাও মেঝ আম্মু। আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি”
আদ্র ভাইয়ের কথার বিপরীতে কিছু না বলে আম্মু চলে গেল। আদ্র ভাই আমার ডেকে পাশে বসতে বলল। কথা মতো উনার পাশে যেয়ে বসলে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো। আমায় খাইয়ে দেওয়ার ফাঁকে নিজেও খেয়ে নিচ্ছে। খাওয়া শেষে আদ্র ভাই হাত থেকে বই কেড়ে নিলো। ভ্রু কুঁচকে এলো।
“কি সমস্যা? তুমি আমার বই নিয়েছো কেন? বই দেও আমার”
“ব্রেন টাকে একটু রেস্ট দে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে। ঘড়িতে সাড়ে আট টা বাজে। যেয়ে রেডি হয়ে নে। নাহয় দেরি হয়ে যাবে”

আদ্র ভাইয়ের কথা মতো কলেজ ড্রেস নিয়ে ছুটলাম ওয়াশরুমে। একেবারে রেডি হয়ে বের হয়েছি। এখন শুধু চুল বাঁধা বাকি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাধঁতে নিলে আদ্র ভাই আটকে দিলো। নিজের হাতে চিরুনি তুলে নিলো।
“তুমি বিনুনি করতে পারবে?”
“পারবো কিনা দেখে নে”
আদ্র ভাই আলতো হাতে চুল আঁচড়ে বিনুনি করে দিচ্ছে। আর আমি আয়নায় তাকিয়ে মানুষটাকে দেখছি। কতটা মনোযোগ সহকারে একটা একটা করে বিনুনি করছে। ওনার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে কতই না ইম্পরট্যান্ট কাজ করছে। একদম পুরো মনোযোগ দিয়ে করছে যেন এদিক থেকে সেদিক না হয়। এর মাঝে রুমে প্রবেশ করলো ইভা।
“বনু তোর হলো….?”
বলতে গিয়েও আটকে গেল বেচারি। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। এদিকে ইভা যে এসেছে সে খেয়াল কি আদ্র সাহেবের আছে? উনি ওনার মতো নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইভা হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্র ভাই চুল বাধা শেষ হলে টেবিল থেকে আমার পরীক্ষার ফাইল তুলে নিলো। কাল রাতে আমি যখন পড়ছিলাম তখন বসে বসে নিজের হাতেই প্রয়োজনীয় সব কিছু গুছিয়ে ফাইলে রেখেছে। ফাইল হাতে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

“আমি নিচে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি আয়। নাহলে দেরি হয়ে যাবে”
আদ্র ভাই চলে গেল। এগিয়ে গিয়ে ইভার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“কিরে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? মুখ বন্ধ কর নাহলে মশা মাছি ঢুকে যাবে”
ইভা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“ভাই তোর কি কপাল! আদ্র ভাই তোকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে, নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে, এখন দেখছি চুলও বেঁধে দিচ্ছে। আর আমাকে দেখ নিজের টা নিজেরই করতে হচ্ছে। পোড়া কপাল আমার”
“তাহলে বিয়ে করে ফেল”
ইভা ও সাথে তাল মেলালো,

“সত্যি এবার ভাবছি আব্বুকে নিলজ্জের মতো বলে বসবো আব্বু আমায় বিয়ে দেও। এই জীবনে বর ছাড়া আছেটাই বা কি? একটা বরের অভাবে দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছি। নিজের কাজ সব নিজেকেই করতে হচ্ছে”
এগিয়ে গিয়ে ইভার কানে ফিসফিস করে বললাম,
“তবে আদীব চৌধুরী আদ্র কিন্তু এক পিস। ওরকম সেম দুটো পাবি না”
বলে ড্যাং ড্যাং করে নিচে নেমে গেলাম। পিছু পিছু ইভাও এলো। ড্রয়িং রুমে সবার ঢল নেমেছে। আব্বুরা এখনো কেউ অফিসে যায় নি। আমাদের জন্য বসে আছে। একে একে সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। আদ্র ভাই আমাদের দিয়ে আসবে। উনি এক মনে ড্রাইভ করছে। আমি তার পাশে বসে কোলের ওপর বই নিয়ে পড়ছি কম পা দোলাচ্ছি বেশি।

“ভয় করছে?”
মাথা নেড়ে সায় জানালাম। আদ্র ভাই হেসে বলল,
“ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এতো টেনশন করিস না”
এতে কি আর আমার টেনশন কমে? মনে হচ্ছে কেউ বুকের মাঝে হাতুড়ি পেটা করছে। অবশেষে আমরা পৌঁছে গেলাম পরীক্ষার হলের সামনে। আশেপাশে কতো শত স্টুডেন্ট। আদ্র ভাই ইভা আর আমাকে কিছু জ্ঞান দিলো। অতঃপর কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। ইভা হয়তো বিষয়টা বুঝলো তাই একটু এগিয়ে গেল সামনে। ইভা যেতে আদ্র ভাই দুগালে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে বলল,
“ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। প্রশ্ন পাওয়ার পর নিজেকে শান্ত রাখবি কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো নয়। আমি জানি আমার রৌদ্রময়ী পারবে”

কথা শেষ করে ললাটে চুমু এঁকে দিলো। অতঃপর হাত ধরে গেট পর্যন্ত দিয়ে গেল দুজনকে। শেষ বার পিছন ফিরে আদ্র ভাইকে দেখে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। উনি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
টানা তিন ঘন্টা শেষে ফুরফুরে মেজাজে পরীক্ষার হল থেকে বের হচ্ছি। মুখে লেগে আছে প্রানবন্ত হাসি। এতক্ষনে টেনশন কমলো। পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে। প্রায় সব কিছুই কমন পড়েছে। দুই একটা এদিক ওদিক হয়েছে। ইভা আর আমি গল্প করতে করতে বের হচ্ছি। সেন্টারের সামনে গাড়িতে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আদ্র ভাই। আশেপাশে কিছু মেয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে। ইচ্ছে করছে মেয়ে গুলোর চোখ তুলে ফেলি। অন্যের জামাইয়ের দিকে কেন তাকাবে? লুচু মেয়েদের দল। কাছে গেলে আদ্র ভাই চিন্তিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ২২

“পরীক্ষা কেমন হয়েছে? ভালো হয়েছে তো!”
কি হলো জানি না। ফট করে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলাম আদ্র ভাইকে। মুচকি হেসে বললাম,
“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে”

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ২৪