রেড রোজ ২ পর্ব ২২

রেড রোজ ২ পর্ব ২২
ফারহানা নিঝুম

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে বাইরে,ছাতা হাতে এগিয়ে এলো নিকি। রুদ্রও ভেতর থেকে একটি ছাতা নিয়ে মিহি কে নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগে। বারান্দা দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য, জিসান আর কেয়া।নিকি গিয়ে উৎসা কে নিয়ে আসছে , ঐশ্বর্যের কাছাকাছি এসে দাড়াতেই পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরলো সে। এটা বরাবরই অদ্ভুত লাগে উৎসার কাছে!
একে একে সবাই ভেতরে প্রবেশ করে,উৎসাও যেতে নিল। কিন্তু ঐশ্বর্য তার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো, দৃষ্টি তার উৎসার ফোলা ফোলা চোখ দুটোর দিকে। অতঃপর মুখ এগিয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো।
“ওয়েল কাম সুইটহার্ট ,ওয়েল কাম টু মাই ডার্ক রোমান্টিক লাইফ।”
উৎসা ক্ষীণ কেঁপে উঠলো,হা করে নিঃশ্বাস টেনে নিল।এই মূহুর্তে ঐশ্বর্যের ইচ্ছে করলো উৎসা কে চেপে ধরে যা ইচ্ছে তাই করে নিতে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো না ধীরে ধীরে উৎসা কে তার ডার্ক ফিলিংসের সাথে পরিচয় করাবে।

করিডোরের পাশে বড় মাদুর পেতে বসে আছে সবাই। আড্ডা দিতে ম’শগু’ল, সবার জন্য চা নিয়ে এলো।
হলুদ রঙের গোল জামা সাথে চুই সালোয়ার,ওড়না বেশ গুছিয়ে গায়ে জড়ানো।
“এই নাও সবার জন্য চা।”
ঐশ্বর্য এখানে নেই,উৎসা আশেপাশে তাকিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলো।লোকটা থাকলে কেমন অস্বস্তি লাগে !একে একে সবার হাতে চা দিয়ে দিলো।কিচেনে যেতেই কাজের মাসীর সঙ্গে দেখা।
“এই কফি কার?”
গরম ধোঁয়া উড়ানো কফি রাখা, কিন্তু এই সময়ে কফি কে খাবে? উৎসা তো সবাই কে চা দিয়ে এলো!
কাজের মাসী মিনমিনে গলায় বলল।
“এইডা বড় স্যারের উৎসা আপা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উৎসা বুঝলো এটা ঐশ্বর্যের, লোকটা কফি খায় তাও আবার চিনি ছাড়া। এটা জার্মানিতেই লক্ষ্য করেছে সে।
“আপা এইডা আপনে দিয়া আসেন!”
মেয়েটার কথায় ঘাবড়ে গেল উৎসা।
“আমি কেন?তুমিই যাও।”
“না আপা স্যার কইয়া গেছেন আপনারে নিয়া যাইতে কইতে।”
উৎসা বিরক্ত হলো, লোকটা তো বড্ড বেশি চালাক! অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে কফির ট্রে নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো দুতলার দিকে।
অন্ধকার রুমে ডিভানের উপর বসে আছে ঐশ্বর্য।উৎসা আস্তে করে দরজা ধাক্কা দিয়ে বললো।
“কফি নিয়ে এসেছি।”
“হুঁ।”

ঐশ্বর্য যেনো আনমনা হয়ে বললো ,উৎসা ভেতরে ঢুকে চমকে গেল। ঐশ্বর্যের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে , আলগোছে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাকের নিচ ঘষে নিল।
উৎসা তাড়াহুড়ো করে কফি কাপ রাখতে গিয়ে উল্টো পড়লো ঐশ্বর্যের উরুর উপরে। উৎসা চিৎকার করে উঠল।
“স্যরি পড়ে গেছে, উফ্ জ্ব’লে যাবে তো। পানি…
উৎসা উঠতে গিয়ে আটকা পড়ে শক্ত হাতের বাঁধনে। ঐশ্বর্য হাত চেপে আছে তার,কী আশ্চর্য লোকটার উরুরতে গরম কফি পড়েছে! অথচ তার কোনো ভাবান্তর নেই।
“জ্বলে যাবে তো!”
উৎসা রিতিমত কাঁপছে, কিন্তু ঐশ্বর্য তা শোনার প্রয়োজন মনে করছে না। আশ্চর্যজনক ভাবে উৎসা কে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে নিল। উৎসা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইল,কী হলো তা বুঝতে কিছু সেকেন্ড সময় লাগছে তার!

“ক,,, কী করছেন আপনি?”
“হুস,, ডোন্ট সাউন্ড।”
উৎসা থমকে গেল, ঐশ্বর্যের নেশালো জড়ানো কন্ঠে বলা কথায়!
“আপনি ঠিক নেই প্লিজ ছাড়ুন!”
উৎসা উঠতে গিয়েও উঠতে পারলো না। উৎসার কোমড় চেপে ধরেছে ঐশ্বর্য ,উৎসা হাঁসফাঁস করছে।
“বেইবি সামথিং নিডস্ পিচ।”
উৎসা ঐশ্বর্যের ভাবান্তর বোঝার চেষ্টা করলো,তার অ্যাডামস আপেল কেঁপে কেঁপে উঠছে। চোখের পাপড়ি গুলো কেমন ভার হয়ে আছে, তবুও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“তুমি তো আমার ওয়াইফ রেড রোজ। তাহলে আমার সাথে ইন্টিমেট হতে প্রবলেম কোথায়?”
উৎসার নিঃশ্বাস আটকে আসছে এবারে! উৎসা অনুভব করলো ঐশ্বর্যের হাত জোড়া কোমড় স্পর্শ করছে উৎসার।
“না না প্লিজ লিভ মি।”
“আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ সুইটহার্ট।”
ঐশ্বর্য আচমকাই উৎসা কে কোলে তুলে নিলো, এগিয়ে গেল বেডের দিকে। আধশোয়া হয়ে ঝু কে পড়ল উৎসার দিকে।

“ইওর নউজ,ইওর আইস,ইওর লিপস এভরিথিং অ্যাবাউট ইউ ড্রাইভস মি ক্র্যাজি।”
উৎসা লম্বা শ্বাস টেনে অস্ফুট স্বরে বলল।
“আপনার রেস্ট প্রয়োজন।”
“ইয়েস প্রয়োজন তো তবে তবে রেস্ট না তোমাকে রোজ। ব্যাডলি নিড ইউ দিস টাইম।”
উৎসা সরাসরি ঐশ্বর্যের চোখের দিকে তাকালো,লোকটা আরেকটু কাছে এলো। ফলস্বরূপ উৎসার মাথা গিয়ে ঠেকলো বালিশের উপর।
“যখন টায়ার্ড হয়ে যাব তখন রেস্ট করব,ইউ আন্ডেস্ট্যান্ড হোয়াট আই সে?”
সত্যি উৎসা বুঝতে পেরেছে ঐশ্বর্য তাকে বলছে! উৎসা মিইয়ে যাচ্ছে। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে, অন্তঃস্থলে তীব্র য’ন্ত্র’ণা। ঐশ্বর্যের দৃষ্টি উৎসার ঠোঁটের দিকে, সে চোখে হাসলো। আলতো করে ছুঁয়ে বলে উঠে।
“আমি যদি এই মুহূর্তে এখানে বাইট করি তাহলে কী তুমি রাগ করবে? অবশ্য রাগ করলেও আই ডোন্ট কেয়ার সুইটহার্ট, কারণ আমি ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। ঐশ্বর্য মানেই তোমার ভাষ্যমতে দ্যা গ্রেট অ’ভ’দ্র ক্যারেক্টারলেস,শেইম লেস ম্যান!”

“আমি……
“উৎসা শুন!”
আকস্মিক নিকির আগমন হকচকিয়ে উঠলো উৎসা। ঐশ্বর্য তখনো তার দিকে একই ভাবে ঝু কে আছে।
“সরুন প্লিজ!”
“নো ওয়ে।”
“আমি….
উৎসা সম্পুর্ণ কথাটা শেষ করতে পারলো না,তার পূর্বেই খক শব্দ করে দরজা খুলে ভেতরে চলে এলো নিকি। ঐশ্বর্য আর উৎসা কে এরকম ভাবে দেখে নিকি রিতিমত নির্বাক,এই বুঝি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল সে!
উৎসা রিতিমত ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলো, এদিকে নিকি লজ্জায় বেরিয়ে গেল বাইরে। উৎসা অগ্নি চোখে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে, ঐশ্বর্য এখনো ঠোঁট কামড়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে।উৎসার তাকানোতে বলে উঠে।
“মাই মাইন্ড ইস নট ফুল,জাস্ট ওয়েটিং ফর টাইম।”
উৎসা ত্বরিতে সেখান থেকে বেরিয়ে বাইরে গেল,নিকি দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। উৎসা কে দেখে হাত চেপে ধরে।

“আপু শুনো না!”
“আগে রুমে চল তারপর সব শুনবো।”
নিকি রেগে আছে এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে উৎসা।এক প্রকার টানতে টানতে উৎসা কে নিজের রুমে নিয়ে গেল নিকি। ভেতর থেকে দরজা আটকে বুকে হাত গুজে দাঁড়ালো।
“কী এসব? কেনো এসব?আর এভাবে এসব..কেউ দেখলে কী হবে?”
উৎসা লম্বা শ্বাস টেনে আওড়াল।
“আমার কথাটা আগে শুনো!”
“ওটা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।”
“আসলে জার্মানিতে তোমার ভাই আমাকে আবার বিয়ে করেছে।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে আবারও বিয়ে করেছে, কথাটা রিতিমত কানে ঝংকার তুললো নিকির।
“কী?”
“হ্যা।”

উৎসা একে একে নিকি কে সবটা খুলে বলে, ঐশ্বর্য কী ভাবে তাকে বিয়ে করেছে।এই পর্যন্ত তাদের মধ্যে কী কী হয়েছে সবটা। এবং কী উৎসা জার্মানি আসার আগে ওদের মধ্যে যে ঝা মেলা হয়েছে সেটাও ।নিকি নির্বাক, ওদের আবার বিয়ে হয়েছে তাও জার্মানিতে এটা উৎসা এখন বলছে?
“তোদের বিয়ে হয়েছে এই জন্য ভাইয়া এখানে এসেছে!আর তুই এখন বলছিস এটা?”
উৎসা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, তৎক্ষণাৎ নিকি অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো।
“ততুই এখন বলবি না কাউকে বিয়ের কথা! এটা যদি মা জানতে পারে তাহলে কী হবে ভাবতে পারছিস?”
উৎসা নিজেও ভয়ে শেষ,হাত পা রিতিমত কাঁপছে তার।
“বিয়ে?”
আচমকা রুদ্রর কন্ঠস্বর শুনে নিকি,উৎসা দুজনেই ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো। রুদ্র হা করে তাকিয়ে আছে দুজন দিকে।নিকি যেটার ভয় পাচ্ছে সেটাই হলো,ঠিক জেনে গেল রুদ্র।
“ভাইয়া তুমি?”
রুদ্র বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো।
“আমাকে বল বিয়ে টা কার হয়েছে? এবং কার সাথে?”
রুদ্র গরম চোখ করে গুরুগম্ভীর স্বরে বলে উঠে।

স্নিগ্ধ সকাল একটি শান্ত, নির্মল এবং সতেজ অনুভূতির কথা মনে করিয়ে দেয়। সূর্যের কোমল আলো যখন ধীরে ধীরে পৃথিবীকে আলোকিত করে, তখন প্রকৃতির এক অনন্য রূপ ফুটে ওঠে।
গাছের পাতা আর ঘাসে জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো সূর্যের আলোয় যেন ছোট ছোট মুক্তোর মতো ঝিলমিল করে। পাখিরা তাদের মিষ্টি সুরে গান গেয়ে সকালের শান্ত পরিবেশে প্রাণ যোগায়। হালকা ঠান্ডা বাতাস মনকে সতেজ করে দেয়, আর সেই সঙ্গে শ্বাস নেওয়ার সময় প্রকৃতির বিশুদ্ধ ঘ্রাণ যেন আত্মাকে শান্ত করে।
এত কিছুর মধ্যে গায়ে চাদর জড়িয়ে বাইরে বের হয় উৎসা।
স্নিগ্ধ এই সকাল এমন পরিবেশ জীবনের ব্যস্ততা ভুলিয়ে দিয়ে এক নতুন দিনের জন্য মানসিক প্রশান্তি ও উদ্দীপনা এনে দেয়। আহা পরম শান্তি মেলে।

নাস্তার টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছেন আফসানা। উৎসা এগিয়ে এলো।
“আমি হেল্প করে দেই মামী তুমি বসো!”আফসানা কটমট করতে করতে বলে।
“আমার সাথে একদম ভাব দেখাতে আসবি না ‌।”
আফসানার ঝাড়ি শুনে মুখটা চুপসে গেল উৎসার,সে সরেই দাঁড়ালো। আফসানা কোনো দিনই তাকে পছন্দ করে না, এবং কী তার পুরো ফ্যামিলি কে। কলিং বেল বেজে উঠলো,উৎসা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই সুদর্শন সুপুরুষ কে দেখতে পেলো। জগিং স্যুট পরে দাঁড়িয়ে আছে, কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।এই মূহুর্তে ঐশ্বর্য কে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন বলে মনে হচ্ছে। ঐশ্বর্য ওখানেই দাঁড়িয়ে পানির বোতল মুখে তুলে নিল।ঢকঢক করে পানি শেষ করে এবারে সম্পুর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উৎসার দিকে।পরণে হালকা মেরুর রঙের গোল জামা, এখানে আসার পর থেকেই দেখছে উৎসা বেশিভাগ সময় গোল জামা পড়ে।চোখের প্রথম ভাগ হতে শেষ সীমানা পর্যন্ত কাজল টানা, গোলাপী অধর দুটি কেমন অদ্ভুত ঠেকলো ঐশ্বর্যের কাছে। ঐশ্বর্য দু পা এগিয়ে এসে বললো।

“লালেই বেশী মানায়, আফটার অল রেড রোজ বলে কথা!”
উৎসা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো বোধহয়,তবে তা কিয়ৎক্ষণের জন্য। ঐশ্বর্য আবারো বললো।
“উফ্ এই মূহুর্তে কী ইচ্ছে করছে জানো তোমাকে….
উৎসা নিজের কান চেপে ধরে, ঐশ্বর্যের এই লাগামহীন কথাবার্তা সে নিতে পারছে না। ঐশ্বর্য যখন তখন তাকেই এমন সব কথা বলে যা শুনে গায়ের লোম পর্যন্ত কেঁপে উঠে উৎসার।
“আপনার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।
“ইস্ মিস করলে।শুনো!”

রেড রোজ ২ পর্ব ২১

উৎসা ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো, ঐশ্বর্য স্বভাব সুলভ ডান হাত দিয়ে সিল্কি চুল গুলো ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দিল।
“সামথিং নিডস্ সুইটহার্ট।গেট রেডি পর দ্যা নাইট।”
উৎসা দু পা পিছিয়ে গেল। বিড়বিড় করে আওড়াল।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী, একদম অস’ভ্য!”
“উফ্ রোজ ইউ আর ফিনিশ!”

রেড রোজ ২ পর্ব ২৩