রেড রোজ ২ পর্ব ২৩
ফারহানা নিঝুম
কালো মেঘে ঢেকে যাওয়া আকাশ যেন প্রকৃতির এক অদ্ভুত মূর্ত চিত্র। সারা আকাশ জুড়ে গাঢ় ধূসর ও কালো মেঘের স্তর জমে উঠেছে, সূর্যের আলো যেন সেই মেঘের আবরণে আটকা পড়ে গেছে। বাতাসে একটা ভেজা গন্ধ, যেন বৃষ্টি নামার অপেক্ষায় আছে। মাঝে মাঝে মেঘের ভাঁজ থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, এবং তার সঙ্গে গভীর গর্জন আকাশ জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। নিচে পৃথিবীর সবকিছু যেন আরও নিস্তব্ধ, যেন প্রকৃতি তার শ্বাস ধরে রেখেছে। কালো মেঘে মোড়ানো এই দৃশ্য একদিকে রহস্যময়, আবার অন্যদিকে আবেগপূর্ণ ও শীতল।
ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই, ঐশ্বর্য সবে রুমে এসেছে। এসেই দেখতে পেলো তার বেডে কেউ কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।একে বারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখা , ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে টান দিয়ে কম্বল সরিয়ে দিল। তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে উঠে জিসান।
“ব্রোঅঅঅঅ!”
“হোয়াট?তুই এখানে কি করছিস?”
জিসান যেনো আ’তংকে আছে, কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
“জিসান কী হয়েছে?”
জিসান কাঁপতে কাঁপতে আওড়াল।
“ব্রো ইউ নো হোয়াট আমার রুমে! আমার রুমে ককরোজ!”
শেষের বাক্যটি উচ্চ স্বরে বলল জিসান! ঐশ্বর্য শার্ট খুলে ডিভানের উপর ছু ড়ে ফেলল।
“সো হোয়াট?”
“ব্রো আজকের রাতটা এখানেই থাকি তোর রুমে?”
“নো ওয়ে।”
“প্লিজ প্লিজ! শুধু আজকে!”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“ওকে বাট আমার রুমে আমার বেডে থাকতে হলে অবশ্যই আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে।”
জিসান নাক মুখ ছিটকে বলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ইয়াক ইয়ার তোর ওয়াইফ আছে।”
“তো? গার্লফ্রেন্ড তো নেই।”
জিসান দু পা পিছিয়ে গিয়ে বললো।
“শেইম লেস ম্যান।”
ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে।
“হোয়াট অ্যাভার এমনিতেও আমার বয়েসের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই। তোর থাকলেও থাকতে পারে!”
জিসান প্রতিবাদ করে বলে উঠে।
“এহহ আমি শুদ্ধ পুরুষ বুঝলি।”
“উপ্স ফরগেট ইট।”
জিসান একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, ঐশ্বর্য এক পাশে শুয়ে পড়ল।
“ইয়ার তোর সঙ্গে ইয়ে করার ইন্টারেস্ট নেই শুয়ে পড়।”
“এই তুই আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড?”
“উঃ।”
জিসান কথা বাড়ালো না বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো, এদিকে লাইট অফ করে ঐশ্বর্য আই প্যাড নিয়ে বসলো। জিসান এক নজর উঁকি দিয়ে তম্বা খেয়ে গেল।
“ইয়াক ইয়াক উৎসার কাছে যা!”
ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।
“ঘুমাবি নাকি রুম থেকে বের করে দেব?”
জিসান কথা বাড়ালো না, ঐশ্বর্য যা ইচ্ছে করতে পারে।
“ভাইয়া প্লিজ আমার কথাটা শুনো আমি তো তোমাদের বলতামই!”
কখন থেকে উৎসা রুদ্রর পিছু পিছু ঘুরছে, কিন্তু রুদ্র তার কোনো কথাই শুনতে চাইছে না।কাল রাতের ব্যাপার নিয়ে বেশ রেগেই আছে রুদ্র, উঁহু এমনটা নয় যে উৎসা আর ঐশ্বর্যের বিয়ে নিয়ে তার সমস্যা!সে সত্যি খুব খুশি ওদের বিয়ে নিয়ে। কিন্তু এই ব্যাপারটা লুকিয়েছে কেন?
“সর কথা বলব না!”
“প্লিজ ভাই……
উৎসা কিছু বলবে তার আগেই কেয়ার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হুমড়ি খেয়ে একে অপরের উপর উল্টো পড়লো রুদ্র। কাঁদায় মাখো মাখো অবস্থা দুজনের।
“ও মাই গড ইয়াক ছিহ্!”
কেয়া রিতিমত চিৎকার শুরু করেছে, রুদ্র ত্বরিতে মুখ চেপে ধরে কেয়ার।
“স্টপ।”
উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, রুদ্র কিছুটা ঘাবড়ে গেল।যদি কেউ দেখে তাহলে খারাপ ভাববে । উৎসা দৌড়ে ভেতরে গেল বাকিদের ডাকতে, এদিকে কাঁদায় একই ভাবে শুয়ে আছে কেয়া আর রুদ্র।
“চিৎকার করছো কেন ফ্লার্টিং বা’জ মেয়ে।”
কেয়া বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে রুদ্রর বুকের দিকে। চওড়া বুক স্পষ্ট দৃশ্য মান।কেয়া হা করে তাকিয়ে আছে, এতক্ষণে ব্যাপার টা লক্ষ্য করেছে রুদ্র।আলতো করে কেয়ার নাকে টোকা দিয়ে বললো।
“উফ্ বেহা’য়া নারী চোখ সরাও!”
কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো।
“আপনি আমাকে কাঁদা লাগিয়ে দিয়েছেন!”
কেয়ার বলতে দেরী কিন্তু রুদ্রর ওর গালে গাল ঘষতে দেরী হলো না। মৃদু কেঁপে উঠলো কেয়া ,কী অদ্ভুত এই ছেলে?
“সরুন মিস্টার হ্যান্ডসাম আপনি তো দেখা যাচ্ছে খুব শেইম লেস!”
রুদ্র হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“হ্যা কিছুটা ভাইয়ার মতো হওয়ায় চেষ্টা করছি।”
কেয়া মেকি রাগ দেখিয়ে বললো।
“তো আপনি হয়তো ভুলছেন আমি আপনার সিনিয়র তাও আবার তিন বছরের।”
রুদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল।
“আহ্ কী কষ্ট,তার পরেও বলব সিনিয়র ম্যাডাম কে পছন্দ!”
কেয়া চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো তার দিকে, রুদ্র দুষ্টুমি করে চোখ টিপ লো। তাতে আরো থতমত খেয়ে গেল সে, ছেলেদের সামনে কখনো সে অস্বস্তিতে পড়েনি। কিন্তু এই ছেলে তো পদে পদে তাকে লজ্জা দিচ্ছে!
সদর দরজা দিয়ে দৌড়ে ঢুকতে গিয়ে ঐশ্বর্যের উপর হুমড়ি খেয়ে কিছুটা ঝু কে গেল।
“উফ্ সামলে সুইটহার্ট, এভাবে চলতে থাকলে আমি সামলাতে পারব না।”
উৎসা থমকে গেল এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী সবসময় বাজে কথা বলে।
“ভালো হয়ে যান ভালো হতে পয়সা লাগে না!”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“ইস্,,বাট আমি ভালো হতে কিছু তো অন্তত ডিজার্ভ করি!লাইট ইউ!”
উৎসা কপাল মৃদু কুঁচকে নিলো।
“ক্যারেক্টারলেস মানুষ একটা।”
ঐশ্বর্য আশেপাশে তাকালো, কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না।দু কদম এগিয়ে এসে মুখোমুখি দাঁড়ালো উৎসার।
“রেড রোজ আমার শেইম কিছু নেই ইউ নো না!বাট তোমার একটু বেশি লজ্জা,তাই এই কাজটা আড়ালেই না হয় করলাম!”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথার মানে বুঝতে পারলো না, আকস্মিক ভাবে ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে পিলারের পিছনে চেপে ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেল সে।
“কী করছেন এটা? অস’ভ্য রিক চৌধুরী ছাড়ুন!”
ঐশ্বর্য মুখ নামিয়ে উৎসার ঘাড়ের দিকে ,তার তপ্ত নিঃশ্বাস আঁচ’ড়ে পড়ে উৎসার ঘাড়ে। উৎসা নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, ঐশ্বর্য খুব সূক্ষ্ম ভাবে তার ঘাড়ে অনাঙ্ক্ষিত ভাবে বেরিয়ে আসা ফিতেটা টেনে দিল।তার কাছে মনে হচ্ছে এটা যেনো রাবার যা টেনে দিচ্ছে সে! উৎসা খিঁচিয়ে চোখ বুঁজে নিল।
“মিসড ইউ রোজ ,মিস ইউ সো মাচ।স্পেশালি অ্যাট নাইট।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বাহুতে ধাক্কা দিলো।
“আপনি নিতান্তই ক্যারেক্টারলেস শেইম লেস অ্যান্ড অস’ভ্য রিক চৌধুরী!”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“কী হচ্ছে এখানে?”
পিছন থেকে ভারী কন্ঠে বলে উঠে আফসানা। আফসানা কে দেখে হকচকিয়ে উঠলো উৎসা , ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় আফসানার দিকে। এমন মনে হচ্ছে এই মহিলা কে দেখেও না দেখার ভান করে আছে সে।বেশ আয়েশ করে গলায় ঝুলিয়ে থাকা হেডফোন তুলে কানে গুঁজে দিল।
আফসানা কে পাশ কা’টিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল, এদিকে উৎসা চুপচাপ নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে। আফসানা এসে শক্ত করে টেনে ধরে ওর হাত।
“এটা কী তোর বাড়ি পেয়েছিস? রঙ্গ লী’লা করবি?”
“প্লিজ মামী না জেনে আজেবাজে কথা বলো না!”
আকস্মিক ভাবে উৎসার ফোলা ফোলা গাল দুটো চেপে ধরে আফসানা।
“এই আমি না তোর মুখ ছি ড়ে ফেলব, আমাকে কী তোর কানা মনে হয়? আমি চোখ দেখি না?”
উৎসা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে।
“মামী তুমি ভুল করছো,ছাড়ুন আমায়।”
“না ছাড়লে কী করবি তুই?”
“সুইটহার্ট এক কাপ কফি উইথ আউট সুগার।”
ঐশ্বর্য কে দেখে থেমে গেল আফসানা।এই তো যাচ্ছিল তাহলে আবার আসলো কেন?
ঐশ্বর্য প্রশ্নসোচক দৃষ্টিতে তাকালো আফসানার হাতের দিকে। কিছুটা বিদ্রুপ করে বলে।
“উপ্স কখন যে কার হাত ভে ঙে যায়!গড প্রমিজ কপি আনতে দেরী হলে হাত ভে ঙে দেব।”
ঐশ্বর্যের কথার মানে অন্য কেউ বোঝক আর না বোঝক উৎসা আর আফসানা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। আফসানা তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিল উৎসার গাল , ঐশ্বর্য বড় বড় পা ফেলে উপরে দুতলায় চলে গেল।
“হ্যা ঠিক আছে আমি খুব শীঘ্রই ট্রাই করছি ফিরার!”
এই তো সিরাত কল করেছে কিছু দিনের মধ্যেই ওদের সেমিস্টার শুরু হবে,অথচ উৎসা এখন বাংলাদেশে।
“প্লিজ উৎসা ট্রাই না সিরিয়াসলি ফিরতে হবে। তুই তো জানিস এখানে কত রুলস! সেমিস্টার মিস করা মানে তোমাকে এক বছর লেইটে পরীক্ষা দেওয়া!”
উৎসা মলিন মুখে বলে।
“আমি বুঝতে পারছি কিন্তু কী করব?দু দিন অন্তর সময় লাগবে।”
সিরাত হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললো।
“ওকে তুই ট্রাই কর,আর হ্যা বেনজন একটু পরে ফোন করে অনেক গুলো নোট দেবে ওগুলো সেমিষ্টারের জন্য।”
উৎসা অধর বাঁকিয়ে হাসলো।
“থ্যাংক ইউ সো মাচ সিরাত। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরার চেষ্টা করছি।”
“ওকে,রাখলাম তাহলে।বাই।”
“বাই।”
উৎসা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে ফোন রেখে দরজার কাছে এগিয়ে গেল ,বই খাতা গুলো গুছিয়ে ব্যাগে তুলে রাখে। আবার ফিরে এসে আয়নার সামনে থেকে চিড়ুনি তুলে নিল।চুল গুলো তার খুব শখের , আঁ’চ’ড়াতে হবেই। বাইরে হওয়া বইছে ,এর মধ্যে জানালা খোলা আছে। উফ্ কী প্রশান্তি!
উৎসা গিয়ে খোলা জানালার কাছে দাঁড়ালো,বাতাসে গায়ের ওড়না গিয়ে পড়ল বেডের উপর।
আবেশে চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে ঐশ্বর্য। স্বভাব সুলভ পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে।
“সামথিং ফিলিংস, সামথিং সামথিং।”
ঐশ্বর্য পাগলাটে হচ্ছে, কন্ট্রোল হারাচ্ছে সে। উফ্ এবার সত্যি যদি কিছু হয় তাহলে দোষটা কিন্তু তার নয়।সে তো এমনই কিন্তু উৎসা?সে তো অন্য রকম,উৎসা ঐশ্বর্যের মাথা খারাপ করছে। তাকে বানাচ্ছে পাগলাটে।
“সুইটহার্ট আমি কন্ট্রোললেস হলে কিন্তু কন্ট্রোল হতে তোমাকেই চেপে ধরবো। বুঝে নিও।”
রেড রোজ ২ পর্ব ২২
উৎসা পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে পিছন ফিরে তাকালো।ভড়কে গেল,সাথে চমকে উঠে।
ঐশ্বর্য ঢুলুঢুলু পায়ে এগিয়ে আসছে , চোখ দুটো তার আর’ক্তি’ম হয়ে আছে। অদ্ভুত তার চাহনি ,উৎসা শুকনো ঢোক গিললো।খা মচে ধরলো পরণের জামা , কিছু বলতে চাইলো অধর দুখানি। কিন্তু পারলো না , ঐশ্বর্য বলতে দিলো না।
“ডোন্ট সাউন্ড রেড রোজ।”