তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৮

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৮
আমেনা আক্তার

রুদ্র কিছুক্ষণ পায়চারি করে।সিরাতকে নিজের বিছানায় শুতে দেখে। কিন্তু যখন সিরাত ডাক দেওয়ার পর সিরাত ঘুম থেকে উঠছে না।তখন রুদ্র ভাবতে থাকে।সিরাত কম্বল মুড়ো দিয়ে ঘুমিয়েছে ওর কম্বলটি কি টেনে ওকে ঘুম থেকে উঠাবে। রুদ্র কথাটি ভাবতেই নিজেকে নিজে ধিক্কার জানাই। কেমন না কেমন ভাবে সিরাত ঘুমিয়ে আছে এখন যদি রুদ্র ধরে কম্বল টান দেয়। যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যায়।সিরাতের অবাঞ্চিত কেনো যায়গায় রুদ্রের চোখ চলে যায়।যদি সিরাত মনে করে ওর চরিত্র খারাপ তাহলে।এই সকল কথা ভাবতেই রুদ্রের মাথায় আরেকটি চিন্তা উদয় হয়।

আচ্ছা সিরাত ওর সম্পর্কে যা মন চায় ভাবুক না কেনো তাতে ওর কি।ও তো সিরাতকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি।নাহ ওর কিছু আসে যায় না সিরাত যা মন চায় ভাবুক। কথাগুলো ভাবার পরেও কম্বল টান না দিয়ে রুদ্র একটি বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পরে। সোফায় শুয়েও রুদ্র শান্তি পাচ্ছে না। কেননা রুদ্রের এভাবে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। তাই রুদ্রের ঘুম আসছে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নতুন এক সকালের সূচনা ঘটলো।এই সকালটি আজ সিরাতের জন্য অন্য সকল সকাল থেকে আলাদা।আর আলাদা হবেই বা না কেনো।আজ তো সিরাত নিজের শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর রুমে ঘুমাচ্ছে।হোকনা কেনো সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত।সিরাত আজ ঘুম থেকে উঠে নিজেকে নতুন একটি রুমে আবিষ্কার করে। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকার পর যখনি সিরাত বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখনি সিরাতের পাশে চোখ পড়তে ওর চমকে উঠলো।বেডের অপর পাশে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে আছে রুদ্র।সিরাত রুদ্র কে দেখে বেশ অবাক হয়। কারণ রুদ্র সোফায় গিয়ে ঘুমানোর পরেই সিরাত ঘুমিয়েছে।তার আগে সিরাত জাগ্রত ছিল শুধু রুদ্র কি করে ও কোথায় ঘুমায় এটা দেখার জন্য ঘুমানোর নাটক করেছে।যদি সিরাত জাগ্রত থাকতেই রুদ্র বেডে ঘুমাতো তাহলে সিরাত সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়তো। কিন্তু এখন রুদ্র আর ও পুরো রাত এক সাথে এক বিছানায় ঘুমিয়েছে কথাটি ভাবতেই কেমন জানি অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে।যেই সিরাত কেনো পুরুষের সাথে বসতেও পছন্দ করে না সে পুরো একটি রাত কাটিয়ে ফেললো এক বিছানায় একজন পুরুষের সাথে। রুদ্র সিরাতের স্বামী হওয়ার সত্তেও কিছুতেই সিরাতের অস্বস্তি কমছে না।

সিরাত কিছুক্ষণ নিজেকে ধাতস্থ করে বিছানা থেকে উঠে পরে।কাবার্ড খুলে নিজের জামাকাপড় বের করে নেয়।আজ সাওয়ার নেওয়া খুবই জরুরি কাল ওর উপর দিয়ে এত ধকল গিয়েছে কাল আর সাওয়ার নেওয়ার সুযোগ হয়নি।তাই সকালে উঠার পরেই শরীরটা ম্যাচ ম্যাচ করছে।
সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে সিরাত।তখনি চোখ মেলে তাকায় রুদ্র। রুদ্র চোখ মেলতেই সিরাত কে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে। যেভাবে শুয়ে ছিল সেভাবেই শুয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সিরাতের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ হলো। রুদ্র সিরাতকে কখনো হিজাব ছাড়া দেখে নি।সিরাত কখনো হিজাব ছাড়া কোথাও বের হয়না তাই সিরাতের রেশমি লম্বা চুল কোনো ছেলে দেখেছে কিনা তা সন্দেহ।সিরাত কে হিজাব ছাড়া ও এত সুন্দর খোলা চুলে যেনো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রুদ্র বেশ অনেক্ষণ যাবত এভাবে তাকিয়ে আছে কিন্তু সিরাত এতক্ষণ তা খেয়াল না করলেও হঠাৎ সিরাতের চোখ যায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিরাত ব্লু কুঁচকে ওকে জিজ্ঞেস করলো।

এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
রুদ্র আনমনেই সিরাতের দিকে তাকিয়ে বলল।
তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
সিরাত রুদ্রের কথা পাত্তা না দিয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সিরাত এইটা ভালোভাবে জানে রুদ্র এই কথাটি ঘুমের জন্য বলছে।নাহলে সিরাতের গায়ের রংয়ের জন্য সিরাতকে সুন্দর বলা তো দূরের কথা কেউ সিরাতের সাথে সহজে বন্ধুত্ব ও করতো না। রুদ্র যখন বুঝতে পারলো সে কি বলেছে তখন রুদ্র বিছানায় উঠে বসে সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি তোমাকে সুন্দর বলিনি,আমি তো..
রুদ্র ওর কথা শেষ করার আগেই সিরাত তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল।
আমি ভালোভাবেই জানি তুমি আমাকে বলোনি।
কথাটি বলে নিজের মাথায় হিজাব বেঁধে বাহিরে চলে যায় সিরাত।আর রুদ্র এখনো একই জায়গায় বসে আছে।ওর কেনো জানি সিরাতের তাচ্ছিল্যের স্বরে বলা কথাটি খারাপ লাগলো। রুদ্র এতকিছু না ভেবে সাওয়ার নিতে চলে গেল।

রুদ্র সাওয়ার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে। ডাইনিং টেবিলে রুদ্রের জন্য অপেক্ষা করছে। এখানে রুদ্রের সকল বন্ধুরাও আছে।কাল রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারনে হৃদিতা ছাড়া কেউ আর বাড়ি ফিরে নি। হৃদিতা কে আরশাদ রাতে পৌঁছে দিয়েছিল। সকাল হতেই আবার চলে এসেছে ও সকলের সাথে ব্রেকফাস্ট করতে।
রুবেল মির্জা সিরাতকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আজ সকল কিছু তোমার পছন্দে রান্না করা হয়েছে। সাহানারা নিজের হাতে সব কিছু তোমার জন্য রান্না করেছে।
সিরাত রুবেল মির্জার কথা শুনে মুচকি হেসে বলল।
ধন্যবাদ মা,আমার জন্য এতকিছু আয়োজন করার জন্য।
রুদ্রের খুব রাগ লাগছে ওর মনে হচ্ছে ওর বাবা মা ওর ভাগের ভালোবাসা সিরাত কে দিয়ে দিচ্ছে।তাই রুদ্র রাগে আরো খাবার খাচ্ছে।তখনি সাহানারা মির্জা বললেন।
সব কিছু আমি রান্না করলেও রুদ্রের বাবার কথায় সকল কিছু করেছি।উনি আমাকে বলেছে আজ যেনো পছন্দের সকল কিছু রান্না করা হয়।

সাহানারা মির্জার কথা শুনে সিরাত মুচকি হেসে রুবেল মির্জাকে বলল।
আপনাকেও ধন্যবাদ আন্কেল।
সিরাতের কথা শুনে রুবেল মির্জা অসন্তোষ হলেন কেননা তিনি সিরাতের মুখে বাবা ডাক শুনতে চান তাই তিনি বললেন।
তুমি আমাকে আন্কেল ডাকছো কেনো, সাহানারা কে যেমন মা ডেকেছ আমাকেও বাবা ডাকো।আমি তো এখন থেকে তোমার বাবাই হই।

রুবেল মির্জার কথা শুনে সিরাতের হাসি মাখা মুখটা মুহূর্তের মাঝে রাগান্বিত হয়ে গেল।সিরাত কঠোর কন্ঠে বলল।
না আপনি আমার বাবা না,আমি ওই লোককে ও এই বাবা শব্দ দু’টোকেই ঘৃণা করি।কখনো এই শব্দ বা বাবা নামক লোকটির সাথে আমার কেনো ভালো মুহূর্ত জুড়ে নেই যা আছে তা কেবল তিক্ততা।না ওই লোক আমাকে কখনো নিজের মেয়ে মেনেছে আর না কখনো নিজের বাবা হওয়ার অধিকার পালন করেছে।উনি আমাকে দিয়েছে তো শুধু অবহেলা, সকলের সামনে আমার গায়ের রং নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। আমাকে মানুষের সামনে অপমান করেছে তা শুধু এই জন্য আমার গায়ের রং কালো।আমি ওই লোক আর এই শব্দটিকে শুধুই ঘৃণা করি।তাই আমি চাইনা আপনাকে এমন কেনো নামে ডাকতে যার সাথে আমার সম্পর্ক শুধু মাত্র ঘৃণার।

সিরাতের শরীর কাঁপছে সকলে তাকিয়ে আছে সিরাতের দিকে।সিরাতের চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে।সিরাত ওর বাবাকে কতটা ঘৃণা করে তা সিরাতের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আর কেউ না বুঝলেও সাহানারা মির্জা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারছেন সিরাতের এই সকল কথা বলার পিছনে রাগের থেকে কষ্ট বেশি লুকায়িত রয়েছে।তাই তিনি বিলম্ব না করে সিরাতের কাছে গিয়ে সিরাতের মাথা নিজের বুকের সাথে জাপটে ধরে। মমতাময়ী হাত বুলাতে থাকে সিরাতের মাথায়।সিরাত ও কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকে সাহানারা মির্জার করা আদর। রুবেল মির্জা ও বুঝতে পারছেন সিরাতের অতীত হয়তো খুব বেশি ভালো ছিল না। হয়তো মেয়েটার অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাই তো ওর মধ্যে এতটা কঠোরতা এসে হানা দিয়েছে।কেউ আর একটি কথাও বলে না।সিরাত নিজের মতো করে খাবার খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়।সিরাত চলে যেতেই রুবেল মির্জা রুদ্রদের উদ্দেশ্যে করে বলল।
তোরা কি জানিস সিরাত ওর বাবাকে এতটা ঘৃণা করে কেনো?

রুবেল মির্জার কথা শুনে নূর সিরাত সম্পর্কে যা কিছু জানেন তা ওনাদের খুলে বলল। রুবেল মির্জা ও সাহানারা মির্জা কথাগুলো শুনে যেনো উনাদের ও ঘৃণা ধরে গেল শামসুজ্জামানের উপর। সাহানারা মির্জা ক্রোধ নিয়ে বললেন।
মানুষ এত নিচ কিভাবে হতে পারে যে একটি ছেলের জন্য অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নিজের স্ত্রী সন্তান ছেড়ে এই রকম জঘন্য কাজ করতে কিই একবারও উনার বুক কাঁপেনি।তার থেকে বড় কথা একজন মানুষ নিজের মেয়ের গায়ের রংয়ের জন্য মেয়ের সাথে এমন আচরন কিভাবে করতে পারে। উনার তো উচিত ছিল সিরাতকে এই দুনিয়ায় দূষিত কথা থেকে বাঁচিয়ে রাখার ওকে আগলে রাখার। কিন্তু উনি নিজের বাবা হয়েও মেয়েকে প্রতিনিয়ত অনুভব করিয়েছে ও কালো গায়ের রং নিয়ে জম্ম নিয়ে ভুল করেছে। আচ্ছা গায়ের রংয়ের উপর কি কারও হাত থাকে। আমার ভাবতেও কষ্ট লাগছে মেয়েটার উপর দিয়ে এত বছর কি গেছে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৭

সাহানারা মির্জার কথা শুনে রুবেল মির্জা বলল।
ওই জঘন্য লোক বাবা ডাকার যোগ্য না,সিরাত একদম সঠিক যে ওই যোগ্যতা লোককে ঘৃণা করে।ওই লোকের জন্য ওর বাবা নামক শব্দ থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। কিন্তু আমি ওকে দেখাবে বাবারা কেমন হয়।আমি ওকে বাবার ভালোবাসা দিবো আর আমার মেয়ের উপরে কেউ চোখ তুলে তাকালে বা ওর গায়ের রং নিয়ে কেনো বাজে কথা বললে আমি তাঁকে উচিত শিক্ষা দিবো…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৯