নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩২
ঝিলিক মল্লিক
জীবন আর সময়, যেন নদীর স্রোত—চলতেই থাকে, থামার নাম নেই। প্রতিটি মুহূর্তে সময় আমাদের হাত ফসকে যায়, রেখে যায় স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা। আমরা যখন পুরোনো দিনের গল্পে মগ্ন হই, তখন সময় সামনে এগিয়ে আমাদের অপেক্ষা করে না। জীবনও তাই, কাঁচের গ্লাসের মতো—ভঙ্গুর, কিন্তু মূল্যবান। যা আজ আছে, তা কাল নাও থাকতে পারে। সময় আর জীবনের এই ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি আমাদের শেখায় প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে, ভালোবাসতে, আর জীবনের ক্ষুদ্র সুখগুলোকে লালন করতে। কারণ, একবার সময় পার হয়ে গেলে; তাকে আর ফেরানো সম্ভব হয় না।
রিদির জীবনে সুখের সময়টা বোধহয় এখনো এসে উপস্থিত হয়নি। সুখ যেন ওর চিরশত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ জীবনের চলতি পথে বারবার বাঁধা সৃষ্টি করে চলেছে৷ প্রতিনিয়ত নিরলস পরিশ্রম করে যেতে হচ্ছে ওকে। কষ্ট পেতে হচ্ছে। থেমে থাকার কোনো উপায় নেই। জীবন ওকে থামতে দেয়নি। বসন্তের দখিনা হাওয়ায় ভেসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে এসে বলছে যেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“রিদি, এগিয়ে চলো। থেমো না। তোমার এখনো অনেকটা পথ চলা বাকি। নিজেকে ভাসিয়ে দিও না অথৈ জলে।”
রিদি সেই মোতাবেক এগিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যহ সকাল-বিকাল দু’টো অ্যাডমিশন কোচিং করে সন্ধ্যা হতে রাত নয়টা পর্যন্ত টানা বই নিয়ে বসে থাকা, পড়তে পড়তে মাথা ব্যাথা বাড়ানো — এ যেন নিত্যদিনকার রুটিন!
আরবিনের সাথে ক্যান্টনমেন্টে আসার প্রায় মাসখানেক হয়ে গেছে। এইতো সেদিন শাশুড়ী আর ননদ তানহা এক সপ্তাহ এখানে বেড়ানোর পরে ঢাকা ফিরে গিয়েছে। তারপর আবার রিদির সেই নিরানন্দময় জীবন শুরু। এরইমধ্যে রিদিকে এখানকার আরো একটা ভালো কোচিং-এ ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল আরবিন। রিদি রীতিমতো হাঁপিয়ে ওঠে। তবে আরবিনের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় নেই। আরবিনের এক কথা—
“আমার কষ্ট করে উপার্জন করা টাকায় পড়াশোনা করলে ভালোমতো করো। নাহলে বাদ দাও।”
রিদি পড়াশোনা বাদ দিতে চায় না কোনোভাবেই। আবার আরবিনের কঠোরত্বও মেনে নিতে পারে না। বিয়ের প্রায় অর্ধ-বসন্ত পেরিয়ে গেল। অথচ লোকটার সাথে এখনও ওর ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো না। রিদি মারাত্মক চেষ্টা করেছে। মাঝে আরবিনের সাথে ভালোভাবে আলাপও করতে চেয়েছে। কিন্তু ওদের সম্পর্কে কি যেন একটা ফাঁড়া রয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে রিদির মনে হয়, জোরপূর্বক গলায় কলসি বেঁধে নিয়েছে ও। এখন শুধু নদীতে ঝাঁপ দেওয়া বাকি। এরমধ্যে গত তিনদিন আগে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে, যাতে আরবিন আর রিদির মাঝে আরো বেশি দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে অজান্তেই। ওই অদৃশ্য বাঁধার দেয়াল ভাঙার সাধ্য রিদির নেই। এখন রীতিমতো আরবিনকে ভয় পায় ও। এমনকি ওর সাথে কথা বলতেও। কথা বলতে গেলেই দেখা গেল, এমন কোনো কথা বলে ফেলেছে আরবিন; যাতে রিদির কাঁদতে কাঁদতে পুরোটা রাত কাটে। গত কয়েকদিন এমনভাবেই কেটেছে ওর।
আরবিনের অফিস টাইমের ঠিক নেই। কখনো ভোর ছয়টায় বের হলে ডিউটি শেষ করে বিকাল পাঁচটায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফেরে, আবার কখনোবা ফেরে অনেক রাত করে। রিদি অন্য সব স্ত্রীদের মতো অপেক্ষা করে না সবসময়। মাঝেমধ্যে আরবিন তাড়াতাড়ি ফিরলে সেদিন ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে যায়। তবে দু’জনের কথা হয় না খুব একটা। আরবিন রিদিকে এড়িয়ে যায়। অবশ্য এর জন্য নিজেকেই দোষারোপ করে রিদি। এমনিতেও ওদের সম্পর্কে এতো গোঁজামিল, তারমধ্যে শাশুড়ি আর ননদ চলে যাওয়ার পরে গত সপ্তাহের শুরুতেই রিদি একটা মারাত্মক ভুল করে ফেলেছিল। ও জানে, এই ভুলের কোনো ক্ষমা নেই। প্রায়শ্চিত্ত করেও কাজ হবে না। সেদিন আরবিন খুব কঠোর গলায় অদ্ভুতভাবে শুধু একটা কথা-ই বলেছিল,
“তোমাকে আমি স্বেচ্ছায় নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম।”
আরবিন নিজের কথা ধরে রেখেছে। না নিজের রিদির সংস্পর্শে আসছে, আর না রিদিকে যেতে দেয় ওর কাছে। দু’জনের মধ্যে কেমন যেন একটা অঘোষিত অদৃশ্য দ্বন্দ্ব লেগে রয়েছে ইদানীং।
আজ এখন প্রায় রাত নয়টা বাজে। রিদি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বইপত্র গুছিয়ে বিছানায় যাবে। চোখ বন্ধ করলেই এক ঘুমে সকাল। তারপর আবার নিত্যদিনের কাজ। আরবিন কখন আসবে জানা নেই রিদির। আজকাল ডিউটি তাড়াতাড়ি শেষ হলেও আরবিন কোয়ার্টারে ফেরে না সঙ্গে সঙ্গে। বরং বাইরে আড্ডা দেয়। রিদি এখন ঘুমানোর পরিকল্পনা করছে।
তখনই ফ্ল্যাটের ডোরবেল বেজে উঠলো। রিদি দ্রুত বিছানার পাশ থেকে ওড়না উঠিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো। একটু সময় নিলো৷ ঘরের মধ্যে হাঁটাহাটি করে সময় পার করতে লাগলো। কিছুক্ষণ বরং বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করুক আরবিন। রিদির ওকে অপেক্ষা করাতে খুব ভালো লাগে। ভীষণ শান্তি পায় ও। মনে হয়, সকল কঠোরত্ব আর নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিদান বুঝি এভাবেই দেওয়া যায়!
রিদি শোবার ঘর থেকে বের হলো আরো মিনিট দুয়েক পরে। ড্রয়িংরুম পেরিয়ে তারপর গিয়ে ধীরেসুস্থে দরজার লক খুললো। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন ঝড় উঠলো। আরবিন ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে চিল্লিয়ে উঠলো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে তাঁরস্বরে বললো,
“এতো সময় লাগে দরজা খুলতে? কী করছিলে? কাজটা কী তোমার?”
রিদি কোনো জবাব দিলো না৷ বরং আরবিনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উল্টোপথে হাঁটা ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে হাতে টান পড়লো। আরবিন রিদির হাত টেনে ধরেছে শক্ত করে। ওকে টান মে’রে নিজের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো,
“জবাব না দিয়ে যাচ্ছো কোথায় বেয়াদব? কী করছিলে এতোক্ষণ? আমাকে এসে প্রতিদিন কেন দুই-চার মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?”
আরবিনের কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে রিদি হতচকিত হয়। কি জবাব দেবে, বুঝে উঠতে পারে না। চঞ্চল চোখে এদিক-ওদিক চায়। মাথা নত করে পায়ের দিকে নজর ফেলে রাখে। আরবিন আরো শক্ত করে ওর হাতের কব্জি চেপে ধরে জোরালোভাবে। আরো খানিকটা কঠিন হয়। উত্তপ্ত চোখে চায় রিদির দিকে। রিদি কূল হারায়। দিশেহারা হয়ে পড়ে। ওই চোখের দিকে তাকাতে ভীষণ ভয় পায় ও। নত মুখে ধীরে ধীরে চিকন কন্ঠে জবাব দেয়,
“ওড়না পড়ছিলাম।”
“ঘরে কী পরপুরুষ আসে এই সময়ে? যে ওড়না পরতে হবে! ওহ তোমার তো আবার নাটকের শেষ নেই!”
কথাগুলো অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সুরে বলে আরবিন৷ আবার পুনরায় কঠিন সুরে বলে,
“কাল থেকে যেন এমন নাটক না দেখি। কলিংবেল বাজার পঞ্চাশ সেকেন্ডের মধ্যে এসে দরজা খুলবে। ওড়না পরার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। দরকার হয় নগ্ন থাকলে সেভাবেই আসবে। আমিই তো!”
রিদি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়। লোকটা ওর ধারেকাছে কখনোই আসে না। তবু কথাগুলো এমন বলে, যে রিদির লজ্জায় মাথা ঠুকে মরতে ইচ্ছা হয়। কান গরম হয়ে যায়। এই লোকটা এতো বেশি ঠোঁটকাটা! অথচ, একদা এক সময় কত ভালো মনে করতো। আসলে তখন রিদির চোখে পর্দা ছিল। মতিভ্রম হয়েছিল ওর। এখন অবশ্য চোখ খুলে গেছে। সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় ও! আরবিন রিদির হাত ছেড়ে দূরে সরিয়ে দিলো ওকে৷ তারপর ঘরের দিকে যেতে যেতে বললো,
“আমি এখন ল্যাপটপে কাজ করবো ওঘরে বসে। তুমি আসবেনা। আমার ডিস্টার্ব হবে।”
রিদি জবাব দিলো না ওই কথার। সোফার ওপর বসে মাথা এলিয়ে দিলো।
“আরবিন।”
“হুঁ।”
“জানেন তো সিগারেট শরীরের জন্য ক্ষতিকর, ভেতরটা পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলে। তবু ছাড়তে পারেন না কেন?”
“সে তো তুমিও পোড়াও দহনের অনলে। আমি কী ছাড়তে পেরেছি তোমাকে?”
“আপনার কী মন খারাপ?”
“না, মস্তিষ্ক খারাপ; তোমার জন্য।”
“আমি কী করেছি?”
“সারাক্ষণ যন্ত্রণা দিচ্ছো।”
“এতোটা অসহ্যকর হয়ে গেছি?”
“হুঁ।”
“কী করলে শান্তি পাবেন?”
“দূরে সরে যাও আমার কাছ থেকে।”
রিদি আর একটি বাক্যও বললো না। রাত তখন অনেকটা গভীর। রিদি শোবার ঘরে এসেছিল মাত্র। ভেবেছিল, আরবিন হয়তো অফিসের কাজ করছে। কিন্তু আরবিন ছিল ব্যালকনিতে। ব্যালকনির ফ্লোরে বসে পিঠ ঠেকিয়ে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করে অ্যাশ ট্রে-তে ফেলছে ও। রিদি ওকে দেখলো আরো একবার। অবিশ্বাস্য চাহনিতে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে। পরপরই চলে আসলো সেখান থেকে। ঘরে এসে এই দমবন্ধকর গরমের মধ্যেও একটা কাঁথা টেনে নিজেকে মুড়িয়ে নিলো তাতে। আজ ও কাঁদবে না। মারাত্মক চেষ্টা করবে, না কাঁদার। তবুও কেঁদে ফেললে নিজের গালে দু’টো থাপ্পড় মা’রবে। নিজের কান্নারত মুখশ্রী কোনোভাবেই ওই লোককে দেখাবে না!
আজ মঙ্গলবার। গতরাতে ঘুম ভালো না হওয়ায় আজ সারাদিন-ই চরম অশান্তিতে কেটেছে আরবিনের। অবশ্য এই দোষ ওর নিজের ওপরেই বর্তায়। সারারাত জেগে সিগারেট খেয়েছে। সকালে ক্যান্টনমেন্টে যাওয়ার আগ পর্যন্তও রিদির সাথে একটা কথাও বলেনি আরবিন। অবশ্য রিদির দেখাও পায়নি সেভাবে। পাশের ঘরে ছিল রিদি।
এখন বেলা ফুরিয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। মাত্র ক্যান্টনমেন্ট থেকে কোয়ার্টারে ফিরেছে আরবিন। ফ্ল্যাটের লক খোলার চাবি আজ ওর কাছেই ছিল। বাইরে থেকে লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই আজ কেমন যেন একটু অদ্ভুত অনুভূতি হলো আরবিনের। ফ্ল্যাট নির্জন-নিরব। মনে হচ্ছে, কিছু একটা নিখোঁজ। কিন্তু কি! আরবিন দ্রুত ভেতরের ঘরে গেল। শোবার ঘরে রিদিকে দেখতে না পেয়ে পাশের ঘরে ছুটলো। না সেখানেও নেই। গেল কোথায় ও! আরবিন ব্যালকনি হতে শুরু করে ফ্ল্যাটের প্রতিটা কানাচে খুঁজে দেখলো। রিদি কোথাও নেই।
আরবিন অবাক হতেও ভুলে গেছে। আলমারি খুঁজে দেখলো, রিদির কোনো জিনিসপত্র নেই, লাগেজও সেই। বইপত্রও সব নিখোঁজ।
মুখ ঘেমে গেছে আরবিনের। কপালের শিরা ফুলে উঠেছে। চোয়াল শক্ত করে পকেট হাতড়ে তড়িঘড়িতে ফোনটা বের করলো ও। কললিস্টে ঢুকে সোজা রিদির নাম্বারে কল করলো। একবার, দুইবার, পরপর তিনবার। তৃতীয়বারে কল রিসিভ হলো। আরবিন সঙ্গে সঙ্গে চিন্তিত কন্ঠস্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
“হ্যালো রিদি, কোথায় তুমি?”
“আমি ঢাকা চলে যাচ্ছি আরবিন।”
“হোয়াট?! ঢাকা! ঢাকা কেন? কখন গেলে?”
“সকালে আপনি ক্যান্টনমেন্টে যাওয়ার পরেই রওয়ানা দিয়েছি আমি। এখন ঢাকার প্রায় কাছাকাছিই আছি। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাসায় পৌঁছে যাবো।”
“তুমি একা কেন যাচ্ছো? বেড়াতে যাচ্ছো? আমাকে জানাতে পারতে একবার! আমি পৌঁছে দিতাম।”
“কোনো প্রয়োজন নেই। আমি বেড়াতে যাচ্ছি না। সারাজীবনের জন্য আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার সামান্য প্রয়াস বলতে পারেন। আর এসব দুশ্চিন্তা আর কেয়ার করার নাটক আমাকে দেখাবেন না প্লিজ। একদম সহ্য করতে পারি না।”
“এসব কী ধরনের কথাবার্তা বলছো তুমি? মাথা গেছে নাকি তোমার? পাগলামি কোরো না রিদি। ফিরে আসো এখানে। এখন-ই ব্যাক করো। আমি নিতে আসছি তোমাকে।”
“আমি ফিরবো না আরবিন। কখনোই না। ওসব ভুলে যান। আমাদের আর কখনো দেখা হবে না।”
“কী হয়েছে তোমার? হঠাৎ এসব শুরু করেছো কেন?”
“আপনি আমাকে অর্ধমৃত বানিয়ে ছেড়েছেন। পুরোপুরি মরতে চাইছি না, বেঁচে থাকা খুব জরুরি; তাই আপনার থেকে স্বেচ্ছায় দূরে সরে এসেছি। সাথে আপনাকেও বাঁচিয়ে দিলাম। এবার শান্তিতে থাকুন।”
“ওহহ শিট! রিদি তুমি এখনো ওই সামান্য কথা নিয়ে পড়ে আছো? তোমার কাজকর্মের জন্য কয়েকদিন যাবত আমার মাথা গরম ছিল৷ মেজাজ খারাপ থাকায় ওসব বলে ফেলেছি। তাই বলে এভাবে চলে যাবে?”
“আমার কাছে ওই কথাগুলো সামান্য নয়। কাছের মানুষদের থেকে ওসব কথা শোনার থেকে মরা ভালো। আপনি বুঝবেন কীভাবে? আপনার মন আছে?”
শেষের কথাটা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো রিদি। তারপর আবার স্পষ্ট গলায় বললো,
“ডিভোর্স লেটার কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেবো আমি। সই করে দেবেন।”
“ডিভোর্স লেটার মানে? কীসব বলছো?!”
“আপনাকে মুক্তি দিচ্ছি। এরপর শান্তিতে থাকবেন। আর আমিও। আপনি ডিভোর্স দেওয়ার পরে আমি আবার বিয়ে করবো। কারো জন্য জীবন থেমে থাকে নাকি?”
“রিদি, রিদি স্টপ প্লিজ। আমার কথা শোনো। তুমি এভাবে চলে যাচ্ছো কেন? তাহলে এসেছিলে কেন আমার লাইফে? কেন? প্লিজ ব্যাক করো।”
“আমি ফিরবো না। এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগে না। আপনার ফেসবুক আইডি থেকে পারলে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল করে দিয়েন আবার। যেই সম্পর্কের কোনো অস্তিত্ব নেই, তা পাব্লিক্যালি শো করানোরও কোনো মানে হয় না। আপনার জীবনে সব আছে। সব! আমি না থাকলে আপনার জীবন থেমে থাকবে না। সুতরাং, এসব লোক দেখানো কথাবার্তা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আজকের পর থেকে আমার সাথে আর কখনো কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করবেন না।”
রিদি কল কাটলো। আরবিনকে আর কিছু বলার নূন্যতম সুযোগ দিলো না। আরবিন ফোনটাকে সঙ্গে সঙ্গে আছাড় মারলো ফ্লোরের ওপরে। আছাড়ের জোর এতোটাই প্রবল যে, ফোনটা ভেঙেচুরে গেল। সেদিকে খেয়াল নেই আরবিনেন। খাটের কোনায় পালঙ্কে অনেকটা জোরে একটা ঘুষি মে’রে বিরবির করে বললো,
“ও আমার সাথে গেইম খেলছে! আমার সাথে! ভেবেছে, ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না৷ ওর ভাবনার গুষ্টি কি’লাই! ওকে ফাইন! আমিও দেখিয়ে দেবো, ওকে ছাড়া আমি খুব ভালো আছি, শান্তিতে আছি। দেখি, কতদিন এসব চালাতে পারে!”
বাস তখন ঢাকার রুটে। রিদি কাঁদছে না। ঠোঁট চেপে কান্না আটকে নিয়েছে৷ আর কখনো কাঁদবে না ও। কাঁদার সময় ফুরিয়ে গেছে। রিদির পাশের সিটে একজন মধ্যবয়সী মহিলা বসেছিলেন। এতোক্ষণ কৌতূহলী হয়ে রিদির ফোনে বলা সব কথা শুনছিলেন৷ এবার ওর হাত টেনে ধরে বললেন,
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩১
“কী হয়েছে? তোমার কী মন খারাপ মা?”
রিদি এবার তার দিকে মুখ ফিরিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না চেপে বললো,
“আমরা সবসময় ভুল মানুষকে ভালোবেসে বেহায়া হই কেন? কেন এতো কষ্ট পাই বলতে পারেন?”