পারমিতা পর্ব ৩৩
Nabila Ahmed
মিতা কেন দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো তা মিতা জানেনা। শুধু জানে অরিয়নের চোখ দেখে একটা কথাই মাথায় ঘুরছে” আবারও থাপ্পড় মারলে?”।
নিজের স্বমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড় দিতেই দরজার কাছাকাছি চলে আসে মিতা। আর এক পা এগোলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে। কিন্তু মিতার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো যখন পেছন থেকে একজোড়া হাত এসে মিতার কোমর ধরে মিতাকে শূন্যে তুলে নেয়।
–না, না, না, না। ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো।
চেঁচামেচি করতে থাকে মিতা।
মিতার চেঁচামেচি যেন অরিয়নের কানে গেলোই না। ক্ষণিকের মধ্যে কাঁধে তুলে নেয় মিতাকে। হঠাৎ করে মিতাকে এভাবে কাঁধে তুলে নিতেই অবাক হয়ে যায় মিতা। কিছু বুঝে উঠার আগেই অরিয়ন হেটে সোজা চলে যায় বেডের সামনে। ধুপ করে বিছানায় ফেলে অরিয়ন। নরম তোশকে মিতা ব্যাথা পায়নি, তবে এভাবে হঠাৎ করে ফেলে দিবে বলেও প্রস্তুত ছিলো না মিতা। শোয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে বসার আগেই মিতার উপর ঝাপিয়ে পড়ে অরিয়ন।
–কি করছো?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মিতার কথা শুনতেই নিজের এক হাত দিয়ে মিতার দু হাত নিয়ে মাথার উপর বিছানায় চেপে ধরে অরিয়ন।
–পরী.পরী.পরী.আমার বোকা পরী।
মিতার কাছাকাছি নিজের মুখ নিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
মিতার গাল স্পর্শ করার জন্য নিজের ডান হাত এগিয়ে নেয় অরিয়ন। অরিয়নের হাত এগিয়ে আসতে দেখেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে মুখ সরিয়ে নেয়। যতোটা পারে নিজের মুখ বিছানায় গুজে দেওয়ার চেষ্টা করে। অপেক্ষা করে অরিয়নের থাপ্পড়ের। চোখ বন্ধ করে থাকা অপেক্ষা করলেও অরিয়নের হাত মিতার গাল স্পর্শ করলো না। চোখ তুলে অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা।
ভয়ে মিতা মুখ সরিয়ে নিতেই অরিয়নের হাত শূন্যে স্থির হয়ে রইল। কি জন্য মিতা এমন করলো তা বুঝতেও সময় লাগলো না নিজের। মুখের কোণ থেকে হাসিটা সরে যায় অরিয়নের। দাঁতে দাঁত চেপে রইল। নিজের প্রতি হঠাৎ করেই রাগ হচ্ছে অরিয়নের।
মিতা চোখ তুলে অরিয়নের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের হাত বাড়িয়ে হাতে উলটো পাশ দিয়ে মিতার গাল স্পর্শ করে। মিতা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরিয়নের দিকে।
–সেই ভুল আর হবে না, লাভ।
মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে অরিয়ন।
“লাভ? কিসের লাভ?” মনে মনে ভাবে মিতা। মিতা ভালোই জানে এখন মিতার প্রতি অরিয়নের এই মোহ ততোদিন থাকবে যতোদিন না অরিয়ন পুরোপুরি সব মেনে নিয়ে মুভ অন করছে। যখন মিতার প্রতি এই নির্ভরশীলতা কেটে যাবে তখন অরিয়ন ঠিক আগের মতোই আফরিনের পথ চেয়ে থাকবে।
–ভেবেছিস একটা কাঠের দরজা আর অন্য একটা বাড়ি তোকে আমার থেকে দূরে রাখতে পারবে? এতো সহজ? কি ভেবেছিলি? আমি সেদিন চলে গিয়েছিলাম?
কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দেয় অরিয়ন।
মিতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল অরিয়নের দিকে।
–চাবি হাতে সারারাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি।
নিজের হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মিতার নিচের ঠোঁট স্পর্শ করে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় মিতা। “কি বলছে এসব? এতোটা মরিয়া কেন বিহেভ করছে অরিয়ন?” কিছুই যেন মিতার মাথায় ঢুকছে না।
–নেক্সট টাইম আমি ভদ্রতা দেখিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো না, পরী। চাবি থাকুক বা না থাকুক। দরজা ভেঙ্গে হলেও তোর কাছে যাবো।
মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
–নিজের থেকে আমাকে দূরে সরাতে দিবো না আমি।
–কেন?
অরিয়ন কথাটা বলতেই জিজ্ঞেস করে বসে মিতা।
মিতার মনে একটু হলেও আশার আলো জাগছে। এই ভেবে হয়তো এই কয়েক মাসে মিতার প্রতি একটু হলেও ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে অরিয়নের। অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল অরিয়নের দিকে।
–কারণ তুই আমার। কারণ তুই আমার ওয়াইফ। কারণ তুই আমার পরী।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের জবাব শুনে মিতার আশা হতাশায় রুপ নিতেও সময় নিলো না। “কি ভাবছিলি তুই? এতো বছরের ভালোবাসা ভুলে তোকে ভালোবাসবে? আফরিনকে ভুলে যাওয়া এতোই সহজ? তুই শুধুই অবসেশন আর কিছুই না” নিজের মন বলতে থাকে মিতাকে।
ক্ষণিকের মধ্যে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে মিতার ঠোঁটে। চোখের কোণে হালকা করে পানি জমে। নিজেকে শক্ত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় অরিয়নের দিকে।
–হাত ছাড়ো।
কঠোরভাবে বলে মিতা।
–পারলে ছাড়িয়ে নে।
মিতার হাতে আরও প্রেশার দিয়ে বলে অরিয়ন।
–আমাদের দুই বোনকে ইউস করতে খুব ভালো লাগছে তোমার তাই না?
ঘৃণার চোখে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে হাত আরও শক্ত করে ধরে অরিয়ন। চোখে রাগ ফুটে উঠে সাথে সাথে।
–কি বললি?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–যা শুনেছো তাই বলেছি।
সাথে সাথে জবাব দেয় মিতা।
–মুখ সামলে কথা বলবি পরী।
উচ্চস্বরে বলে অরিয়ন।
–ওহ, তাই নাকি? তো মি. অরিয়ন আপনার কেমন লাগছে আমাদের দু বো..
–চুপ, একদম চুপ।
ক্ষণিকেই মধ্যে অন্য হাত দিয়ে মিতার মুখ চেপে ধরে অরিয়ন। মিতা নিজের কথাও শেষ করতে পারেনি।
–আমি সহ্য করছি বলে এই না তুই যা খুশি তাই বলবি।
নিজের মুখ মিতার কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।
–অহ, তুমি ইউস করছো না? আমি আবার ভাবলাম করছো। দেখো না, এই মূহুর্তে আমার জন্য কতোই ডেস্পারেট তুমি। আবার আপুর দিকে তাকালে তোমার চোখে ভালোবাসা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না।
তাচ্ছিল্যের হাসি যেন মিতার মুখ থেকে সরছেই না।
–পরী……
চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।
–কি? সত্যি কথা গায়ে লাগছে? ওহ ওয়েট।
কথাটা বলে একটু থামে মিতা।
–আমার জন্য এতো ডেস্পারেশন কী আমার সাথে রাত কাটানোর জন্য? আমাকে তোমার এতোই ভালো লেগেছে যে ৬ বছরের ভালোবাসাও ভুলতে সম…
–ঠাসসসসসসসসসস…
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই থা*প্পড় মা*রে অরিয়ন।
অরিয়নের হাত মিতার গাল স্পর্শ করতেই মুখ অন্যপাশে ঘুরে যায় মিতার। পরক্ষণেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে মিতার।
–তোমার আফরিন ফিরে এসেছে। কেন তোমরা একে অপরের কাছে ফিরে যাচ্ছো না? কেন আমাকে মুক্তি দিচ্ছ না এসব থেকে? আমি তোমার শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারবো ন…
–পারমিতা….
ভয়ানকভাবে চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।
মিতার চোখ দিয়ে পানি পড়া ক্ষণিকের জন্যও কমছে না। যেখানে দু জনের একসাথে থাকা সম্ভব হবে না সেখানে কেন মিতা মিথ্যে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচবে?
–তুই, তুই আমার সম্পর্কে এরকম ভাবতে পারলি?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–তোর মনে হয় আমি তোর শরীর চাই?
কথাটায় যেন ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ পেলো না।
অরিয়নের প্রশ্ন শুনতেই মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয় মিতা। সময় এসেছে অরিয়নের সত্যটা মেনে নেওয়ার। মেনে নিতে হবে যে, ওর একমাত্র ভালোবাসা শুধুই আফরিন। মেনে নিতে হবে যে, মিতা ভালোবাসা নেই এমন কোনো সম্পর্কে কখনো থাকবে না।
মিতার মুখ ঘুরিয়ে নেওয়াটা যেন থা*প্পড়ের মতো অরিয়নের মুখে পড়লো। এই ঘুরিয়ে নেওয়ার মানে “এমন টাই ভাবে মিতা”।
ঝড়ের গতিতে মিতার থেকে সরে আসে অরিয়ন।
–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া
নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।
–তোর শরীর চাই আমি?
ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে সব কিছু ছুড়ে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।
–আমার সম্পর্কে এমন জঘন্য ভাবিস তুই?
সোফায় লাথি মেরে বলে অরিয়ন।
মিতা নিজের জায়গা থেকে নড়লো না। নিজের হাত দিয়ে চাদর শক্ত করে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো।
–এসব ভেবে আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাস তুই?
দেয়ালে স্বজোরে ঘুসি মেরে বলে অরিয়ন।
–আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাস, দূরে সরে যেতে চাস, দূরে সরে যেতে চাস।
মন্ত্রের মতো কথাটা বলতে বলতে একের পর এক ঘুসি মারতে থাকে অরিয়ন।
হাত থেকে র*ক্ত বের হওয়া শুরু করেছে। তাও থামছে না অরিয়ন। বিছানায় শুয়ে থাকা মিতা চোখ দিয়ে না দেখলেও, ভালোই জানে অরিয়ন এখন কি করছে। নিজের মনকে শক্ত করে শুয়ে রইল মিতা। এখন অরিয়নের এই পাগলামোতে কেয়ার দেখাতে গেলে মিতার জন্য সবটা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। মিতার চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়তে শুরু করেছে বিছানার চাদরে।
–হাহাহাহাহাহাহহাহাহাহাহাহা।
হুট করে হাসতে থাকে অরিয়ন।
হঠাৎ করে এরকম শব্দ করে হাসিতে মুখ ঘুরিয়ে অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা। এমন কেনো করছে বুঝতে পারছে না। একটু আগেও তো রাগান্বিত ছিলো তবে এখন কেন এভাবে হাসছে তা বুঝতে পারছে মিতা।
–হাহাহাহাহাহহহাহাহাহাহাহ।
নিজের র*ক্তাক্ত হাত কোমরে রেখে হাসতে থাকে অরিয়ন। হাসতে হাসতেই মিতার দিকে এগিয়ে যায়।
বিছানায় শুয়ে থাকা মিতা অরিয়নের এগিয়ে আসা দেখছে। অরিয়নের মুখ হাসি। তবে এই হাসির মানে মিতা জানেনা। চেহারা দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা। অরিয়ন বেডের সামনে আসতেই মিতার পা ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসে। কি হচ্ছে মিতা তা ভাবারও সময় পেলো না। বিছানার শেষ দিকে আসতেই হাত ধরে টান দিয়ে বসায় অরিয়ন। হাটু ভেঙ্গে মাটিতে বসে পড়ে নিজেও। মিতার কাছাকাছি যতোটা সম্ভব এসে দু হাত শক্ত করে ধরে রাখে অরিয়ন।
মিতা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
–ঠিক আছে।
বলে অরিয়ন।
এতোক্ষণে মাথায় ঢুকলো মিতার। অরিয়ন অবশেষে সত্যটা মানতে চাচ্ছে ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মিতা। এখন হয়তো সব ভুলে আফরিনের কাছে আবারও ফিরে যাওয়াটা মেনে নিয়েছে বলে মনে করে মিতা। নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই তা আরও শক্ত করে ধরে অরিয়ন। মিতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে অরিয়নের দিকে।
–তোর যদি মনে হয় আমি তোর শরীরের জন্য তোকে চাই তাহলে..
–তাহলে এই সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসা উচিৎ। তাই না?
মুখে একটু হাসি ফুঁটিয়ে বলার চেষ্টা করে মিতা।
মিতার হাসির বিনিময়ে মিষ্টি এক হাসি ফিরিয়ে দেয় অরিয়ন।
–তাহলে তাই।
কথা শেষ করে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনতেই মুখ থেকে হাসি খায়েব হয়ে যায় মিতার। তাই মানে কি? কি বলতে চাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা।
–মানে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–তোর শরীরের জন্য চাই তাই তো? তাহলে তাই। এই জন্য হলেও তোর থেকে যেতে হবে। আমার থেকে দূরে যেতে পারবি না তুই।
মিতার হাতে আলতো করে চুমু খেতে খেতে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় মিতার। নিজের হাত সরানোর চেষ্টা করলেও সফল হয় না।
–তোর ঘৃণা আমি সহ্য করতে পারবো কিন্তু তোর থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। এতে যদি তোর হাত পা বে*ধেও তোকে আটকে রাখতে হয় তাহলে তাই করবো।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন।
–আফরিনের প্রতি আমার অনুভূতির কী হয়েছে আমি জানিনা। তোর জন্য আমার হঠাৎ করে কী হয়েছে তাও আমি জানিনা। তবে মনে রাখ, যদি তোর আমার থেকে দূরে যেতেই হয়,তবে দুজনের একজনের লা*শের উপর দিয়ে যেতে হবে।
কথাটা বলতে বলতে নিজের র*ক্তাক্ত হাত নিজের গায়ে থাকা শার্টে মুছতে থাকে।
পারমিতা পর্ব ৩২
–তুই আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় সুখের সংসার করবি, সেই স্বপ্ন তোর স্বপ্নই থেকে যাবে। তোকে অন্য কারো হওয়া দেখার চাইতে তোর লা*শ দেখা পছন্দ করবো আমি।
কথাটা বলেই মিতার ঠোঁট হুট করেই চুমু খায় অরিয়ন।