নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩৮
ঝিলিক মল্লিক
অনেকগুলো দিন দেখতে দেখতেই চলে গেল। চোখের পলকেই। দিন যে এভাবেও কেটে যায়, তা জানা ছিল না রিদির। সংসার বলতে আহামরি কিছু নয় ওর। তেমন ধকল যায় না রিদির ওপর থেকে। বরং বলা চলে, আরবিন-ই রিদিকে স্ট্রেস নিতে দেয় না কখনো। বেশি জোরাজুরি করলে একটা রামধমক দিলেই চুপ হয়ে যায় রিদি।আর কিছু বলার সুযোগ পায় না৷ রান্নাবান্নার দিকটা আরবিন-ই দেখে। এমনকি এই ছোটোখাটো ফ্ল্যাটটা গুছিয়ে রাখার সব দায়িত্ব-ও নিজের কাঁধে নিয়েছে। আগেও সবকিছু আরবিন-ই সামলে নিতো। তবে রিদি বর্তমানে কোনো দায়িত্ব-কর্তব্যে হস্তক্ষেপ করতে চাইলেও আরবিন এগোতে দেয় না। সবসময় কঠোর অনুশাসনের সুরে বলে— “সামনে তোমার অ্যাডমিশন এক্সাম আছে। এ সময়ে কোনো রকমের মাতবরি করবে না। পছন্দ করি না।”
ওই শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বলা কথা শুনে রিদি আর কিছু বলার সাহস পায় না। এমনকি ইদানীং ও নিজেও ভাবতে শিখেছে, এই সামান্য জীবনের গন্তব্য ঠিক কোথায়? শুধুই কি একটা বাচ্চাকাচ্চা রিদির জীবনের গন্তব্য হতে পারে? ওর আব্বা-আম্মা ওকে জীবনের দীর্ঘ আঠারোটা বছর পেলেপুষে মানুষ করেছিলেন শুধুই কী সংসার করানোর জন্য?
রিদি মাঝেমধ্যে বইপত্র সামনে রেখে খুব করে ভাবে এসব। ভাবনাগুলো নিতান্তই অযৌক্তিক নয়। আরবিনও ঠিক এটাই বোঝাতে চায়। কিন্তু রিদি ওর সামনে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে এখন চেষ্টা করে খুব। লোকটা কম পরিশ্রম করে না। ভোরে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ এক্সারসাইজ করে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শরীর ফিট রাখার ব্যাপারে খুব সচেতন তিনি। এতটুকুও ছাড় নেই এ বিষয়ে। রিদিকেও ভোরবেলা টেনে ঘুম থেকে তুলে ছাঁদে নিয়ে ইয়োগা করতে বসিয়ে দেয়। রিদি ঘুম ঘুম চোখে ইয়োগা করতে বসে। মাঝেমধ্যে ঘুমে ঢলে পরতে যায়। তখন আরবিন মাথায় একটা চাটি মে’রে আবারও ইয়োগা করতে বসিয়ে দেয়। এক্সারসাইজ শেষে আরবিন ফ্ল্যাটে ফিরে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। সকালের নাস্তা বানিয়ে আর দুপুরের খাবার রান্না করে রেখে রিদিকে ডেকে ডাইনিং-এ বসিয়ে দু’জনে নাস্তা করে নেয়। তারপর আরবিন তৈরি হয়ে ক্যান্টনমেন্টের জন্য বেরিয়ে যায়। আর রিদি বইখাতা নিয়ে পড়তে বসে। দুপুরে কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে কোচিং-এ যাওয়া, এরপর সন্ধ্যায় ফেরা। রিদি ফেরার কিছুক্ষণ পরেই আরবিন ফিরে অল্প সময় জিরিয়ে রাতের রান্না করে। রিদি গিয়ে রান্নাঘরের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে৷ তবে আরবিনের কড়া নিষেধাজ্ঞা — রিদি কোনোভাবেই রান্নাঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।
রিদি সেই চেষ্টা করেও দেখেনি। আরবিনের অতিরিক্ত মেজাজ আর হুটহাট মাথা গরমের স্বভাব সম্পর্কে ওর চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না বোধহয়।
আজ-ও আরবিন সন্ধ্যার পরপরই ফিরেছে। অনেক সময় গভীর রাতও হয়ে যায়।
রিদি তখন কথা বলছিল ওর আম্মার সাথে। আরবিনের কাছে চাবি ছিল। লক খুলে ও ভেতরে আসার পরেই রিদি ওকে এক পল দেখে ফোনে কথা বলায় মনোযোগী হলো।
“জি আম্মা। হ্যাঁ, উনি মাত্র এসেছেন। রাতের খাবার খেতে এখনো অনেক দেরি৷ আব্বু কই?”
ফোনের ওপাশ থেকে তানিয়া বেগম জবাব দিলেন,
“তোমার আব্বু তো মোড়ের টং-য়ের দোকানে আড্ডা দিতে গেছেন। ফিরবেন বেশ কিছুক্ষণ পরেই।”
“আব্বু কেন ওখানে গিয়ে বসে? তুমি নিষেধ করো না?”
“মাঝেমধ্যে মানুষকে একটু স্পেস দিতে হয় মা। সবসময় নিয়মের মধ্যে বেঁধে রাখা ভালো না। মানুষটার শরীর এমনিতেও ক’দিন যাবত ভালো যাচ্ছিল না। ব্যবসার কাজের প্রেশার পরছে খুব। এখন একটু ব্যবসার চাপ কমিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। শরীরের অবস্থার উন্নতিও হচ্ছে ধীরে ধীরে।”
“তাহলে আব্বুর যা করতে মন চায় করতে দাও৷ কাকিমণির সাথে আমার সকালে কথা হয়েছিল। জামিয়ার রেজাল্ট দেবে তো তিনদিন পরে।”
“হ্যাঁ। মেয়েটা ভালোই দিয়েছে পরীক্ষা। দোয়া করি, যেন ভালো রেজাল্ট করে। তোমার পড়াশোনার কী খবর? এক্সাম কবে?”
“এইতো আম্মা, আর সপ্তাহখানেক পরে।”
“পড়াশোনা করছো তো ঠিকমতো?”
তানিয়া বেগমের কন্ঠস্বর একটু কঠিন শোনালো। রিদি ঢোক গিললো। ভড়কে যাওয়ার মতো বিষয় না হলেও ও ভড়কালো। সামান্য ভয়ও পেল বৈকি। আম্মাকে ও ভীষণ ভয় পায় কারণে-অকারণে। এই মানুষটা মাঝেমধ্যে এমন কঠিন হয়ে যায় যে, ভয় পাওয়ার-ই কথা। রিদি এবার নিজেকে সামলে বললো,
“জি আম্মা। আলহামদুলিল্লাহ প্রিপারেশন ভালো-ই হচ্ছে।”
“মেডিকেল না হোক, কোনো পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাবে তো? কী মনে হয়?”
“ইন শা আল্লাহ।”
রিদি আস্তে করে জবাব দিলো। ফোনের ওপাশ থেকে তানিয়া বেগম আরো নানান কথা বলতে লাগলেন। রিদি সেসব শুনলো না। ওর দৃষ্টি সোফার ওপর মাথা এলিয়ে চোখ বুঁজে বসে থাকা আরবিনের দিকে। রিদি এতোক্ষণ কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় তেমন খেয়াল করেনি। আরবিন ফর্মাল পোশাকেই রয়েছে এখনো। খাকি নীল রঙা প্যান্ট। একটা গাঢ় নীল রঙা শার্ট। বুকের কাছের শার্টের বোতাম দু’টো খোলা। চুলগুলো পরিপাটি ভাবে নেই। কপালের কাছে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। ঠোঁট শুষ্ক। দেখে মনে হয়, বহুকাল পানি পান করা হয় না। হাত-ঘড়িটা এখনো খুলে রাখা হয়নি। অন্যদিন আরবিন কোয়ার্টারে এসে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রান্নাঘরে যায়। আজ তেমনটা ঘটেনি। এজন্যই রিদি চিন্তায় পড়েছে বেশ। খুব কী ক্লান্ত? হয়তো-বা। রিদি কিছুটা আঁচ করতে পারলো। ফোনের ওপাশ থেকে তখনও ওর আম্মা উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। রিদি সেসব শুনলো না। আরবিনের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থেকেই কানে চেপে রাখা ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটার উদ্দেশ্যে বললো,
“আম্মা এখন রাখো তো। তোমার সাথে পরে কথা বলছি।”
রিদি আর কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করলো না। কল কেটে দিয়ে এগিয়ে গেল আরবিনের কাছে। সোফায় ওর পাশ ঘেঁষে বসলো। তারপর আরবিনের হাতের বাহু জড়িয়ে ধরতেই আরবিন চোখ মেলে তাকালো রিদির দিকে। চোখদুটো টকটকে লাল। দৃষ্টি উদভ্রান্ত। জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টি। যেন চোখ দিয়েই জিজ্ঞাসা করছে, কি হয়েছে?
আরবিনের পুরো মুখে কিছুক্ষণ বিচরণ করতে লাগলো রিদির এলোমেলো দৃষ্টি। রিদি এবার আকুল কন্ঠে আরবিনকে জিজ্ঞাসা করলো,
“খু্ব ক্লান্ত?”
আরবিন রিদির প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না। কিছুক্ষণ রিদির মুখখানা দেখলো। তারপর আস্তে-ধীরে বললো,
“একটু জড়িয়ে ধরবে?”
শান্ত কন্ঠস্বর। অথচ রিদির বুকে উত্তাল ঢেউ বয়ে গেল যেন। অশান্ত হলো মন৷ মানুষটা আসলেই খুব ক্লান্ত। রিদির নিজের ওপর রাগ হলো প্রচন্ড। স্ত্রী হিসেবে কোনো দায়িত্বজ্ঞান নেই তার। কখনো স্বামীর খেয়াল রাখতে পারেনি। না, না! নিজেকে পুরোপুরি দোষটা দেওয়া যায় না। এই দোষের ভাগিদার আরবিনও। পড়াশোনার মাঝে সর্বক্ষণ মাথা চেপে ধরে ডুবিয়ে রাখে রিদিকে। রিদির সময় আর হই কখন আরবিনের দিকে ফিরে তাকানোর?
রিদি এবার ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আরবিনের সাথে। দু’হাতে শক্ত করে আরবিনকে জড়িয়ে ধরে। আরবিন আচনক রিদির কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে থাকে সোফার ওপরে। রিদি আরবিনের কপালে হাত রেখে চমকে ওঠে। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক। শরীর খু্ব বেশি উষ্ণ নয়। আবার স্বাভাবিকও বলা যায় না। রিদি আরবিনের মুখের ওপর ঝুঁকে প্রশ্ন করে,
“ফ্রেশ হবেন না?”
“প্রয়োজন নেই এখন।”
“আপনার জ্বর আসছে, না?”
“জানি না।”
“স্বীকার যাচ্ছেন না কেন? অসুখের কথা বলতে দোষ কোথায়?”
“কোনো দোষ নেই। আমার সত্যিই কিছু হয়নি। সামান্য ক্লান্তি ধরেছে — এই-ই যা।”
“ক্লান্তি না। আপনাকে চিনি আমি। জ্বর এসেছে। যেকেউ এই মুহূর্তে আপনার শরীর ছুঁয়ে তা হলফ করে বলে দিতে পারবে। আপনি ফিল করতে পারছেন না?”
“না।”
“ইগোতে লাগছে খুব?”
“কীসের ইগো?”
“বউয়ের কাছে অসুখের কথা বলতে বাঁধায় যেই ইগোর সৃষ্টি হয়, সেই ইগো।”
“আমার কোনো ইগো নেই। আমার কিছু হয়নি।”
“এবার বলেন, আপনার কোনো বউও নেই। বলেন বলেন! চুপ করে আছেন কেন?”
আরবিন তখন জ্বরের ঘোরে নাকি প্রায় ঘুমের ঘোরে রসিকতা করে তা জানা নেই ; হঠাৎ বলে ওঠে,
“আমার আসলেই বউ নেই।”
রিদি এবার আর চুপ করে থাকতে পারে না। এহেন কথা শোনামাত্র রিদি ফিক রেখে হেসে ফেলে৷ বেসামাল হাসি সামলাতে মুখ চেপে ধরে মুচকি হাসতে থাকে। রিদি দেখে, আরবিনের অবস্থা সত্যিই খুব সিরিয়াস। এখন সেবাযত্ন না করলে কোনোভাবেই আগামীকাল সকালের মধ্যে সুস্থ করে তোলা যাবে না। লোকটা আবার কর্মক্ষেত্রে খুব দায়িত্ববান। অসুস্থতার কারণে ছুটির নিয়ম অথোরিটি থেকে দেওয়া থাকলেও এই মহা ধরিবাজ লোকটা অসুস্থতা, ঝড়-ঝাপ্টা কোনোকিছুরই ধার ধারে না। মাঝেমধ্যে রিদি খুব বিস্মিত হয়ে চেয়ে দেখে, একজন মানুষ এতোটা কঠিন আর একরোখা হয় কীভাবে?! রিদি এবার আর সময় নষ্ট করলো না। উঠার জন্য আরবিনের মাথাটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আরবিন তখন প্রায় জ্বরের ঘোরে পরে গেছে। সেই ঘোরের মাঝেই রিদির হাত আঁকড়ে ধরে আধো আধো চোখ মেলে প্রশ্ন করে,
“কোথায় যাচ্ছো?”
“থার্মোমিটার নিয়ে আসি। আরেকটু জলপট্টির ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন। নাপা আছে তো রুমে। একটু কিছু খেয়ে নিয়ে তারপর ওষুধ খাবেন। বুঝেছেন?”
আরবিন এবার অমন অবস্থাতেই কঠিন চোখে তাকায় রিদির দিকে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“গিন্নি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাকে ছাড়ো। রুমে গিয়ে পড়তে বসো।”
“চুপ। একদম চুপ। আর একটা কথাও নয়। আমি এবার গিন্নিই হবো।”
রিদি আরবিনকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে উঠে গেল সোফা থেকে। দ্রুত শোবার ঘরে গিয়ে মেডিসিন বক্স থেকে থার্মোমিটার আর নাপা ট্যাবলেটের প্যাকেটটা নিয়ে দ্রুত-ই ফিরলো ড্রয়িংরুমে। ড্রয়িংরুমের বাতি নেভানো-ই ছিল সব। শোবার ঘরের আলো ঠিকরে আসছিল এখানে। রিদি বৈদ্যুতিক বোর্ডের কাছে গিয়ে লাইটের সুইচ অন করতেই শোফার ওপর থেকে আরবিনের অস্পষ্ট কন্ঠস্বর শোনা গেল।
“আলো জ্বালিয়ো না। মাথা যন্ত্রণা করছে।”
রিদি সঙ্গে সঙ্গে আলো নিভিয়ে দিয়ে সোফার ওপরে গিয়ে বসলো আরবিনের মাথার কাছেই। আগের বারের মতোই ওর মাথাটা টেনে নিজের কোলের ওপর তুলে নিলো৷ রিদি ঝুঁকে আরবিনের শার্টের বোতামগুলো খুলে দিতে লাগলো একটা একটা করে। আরবিন তখন চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। এবার ওর হাত ধরে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে জড়ানো কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“কি করছো?”
“আপনার শার্ট খুলবো। ঘামে ভিজে গেছে। এটা আরো কিছুক্ষণ পরে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। দেখি, হাত সরান।”
আরবিন তবুও হাত সরালো না। ঘোরের মাঝেই বলে উঠলো,
“তুমি আমার জ্বরের ঘোরে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছো নাকি?”
রিদি আশ্চর্য, হতভম্ব হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। আরবিনের মুখের দিকে বিস্মিত নয়নে চেয়ে রইলো। আরবিন তখন হুঁশে নেই। গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে। রিদি আরবিনের এলোমেলো চুলে হাত ডুবিয়ে মুঠো করে খামচে টেনে ধরে বললো,
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩৭
“শালার ব্যাটা, বেত্তামিজ! বউ হই তোর। কাছে আসলেও বা কি? সুযোগ নিলেও বা কি?”
তারপরেই রিদি বিরবির করে নিজমনে বললো,
“ও খোদাতায়ালা, কপাল করে কি একখান স্বামী পেলাম আমি! এই-যে তার জ্বরের ঘোরে, এতো উষ্ণতার মাঝে আমি এক টুকরো বরফের মতো তার ধারেকাছে অবস্থান করছি; তবুও এই লোক নিজেকে কন্ট্রোল করছে কীভাবে! একটু তো বেপরোয়া হোন আরবিন। একটুখানি বেহেড হতে ক্ষতি কী? যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। বাচ্চাকাচ্চা সামলেও আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো।”