খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১৯
আনিকা আয়াত
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে অর্পণ মাঝরাতে বাসায় ফিরল। জামিল শেখ বাদে সবাই তখন গভীর ঘুমে। অর্ণবও মাত্র-ই ঘুমাতে গিয়েছে। প্রায় ঘন্টা খানেক ছাদে স্নিগ্ধার সঙ্গে গল্প করে কাটানোর পর সে ফিরে আসে। এই সামান্য -তেই মেয়েটার ঠান্ডা লেগে যাবে এটা-য় কোনো সন্দেহ নেই। তীব্র শীতে ঠকঠক করে কাঁপছিল! মেয়েটাকে অল্প সময় পরেই রুমে যেতে বলে। অর্ণবের মনে বিস্তৃত ইচ্ছে থাকলেও বেচারা নিরুপমায় হয়ে দমিয়ে রেখেছিল সব। শুধু কিছুক্ষণ নিজের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছিল এই যা! মেয়েটায় লজ্জায় মাথা লুকিয়ে ছিলো তার বুকে। এরকম অনুভূতি দুজনের জীবনে ই প্রথম এলো। কখনও ছেলেদের সাথে না মিশা স্নিগ্ধাও প্রেমের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। ইন্ট্রোভার্ট ছেলে অর্ণবও আজকাল ভেতরে ভেতরে অশান্তি ও হাঁসফাঁসে ভুগছে। সে জানেনা কেনো এমন হচ্ছে। শুধু জানে, মেয়েটার মাঝে আলাদা মায়া আছে, যা তাকে অদৃশ্য ভাবে টানে।
অর্পণ ঝটপট ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল। প্লেট, বাটি সব গুছানো এরমানে খাবার ফ্রিজে। সে নির্বিকার ভাবে হেঁটে ফ্রিজ খুলল। গরুর মাংস-র বাতি হাতে নিয়ে গ্যাসের কাছে যায়। খুন্তি খুঁজার মুহূর্তে হাতের সমস্ত গোছানো জিনিসপত্র সে এলোমেলো করে ফেললো। স্টিলের জিনিসপত্রের শব্দ এই নির্জন রাতে ভয়ংকর শুনা গেলো। আকস্মিক শব্দে বাসার অন্য সদস্য রাও নির্ঘাত ভয়ে ধরফরিয়ে উঠবে ঘুম থেকে। তবুও বে/য়াদব ছেলেটার এসব নিয়ে মাথা ব্যথা হলো না, নির্বিঘ্নে নিজের কাজে ব্যস্ত।
জামিল শেখ হাঁটুর ব্যথায় নিজ কক্ষেই বসে ছিলেন। অর্পণের জিনিসপত্রে ঝড় তুলার শব্দে কৌতুহল বশত বেরিয়ে এলো। নজরে পড়লো, ছেলেটা অসাবধানতা বশত খালি হাতে চুলা থেকে গরম কড়াই নামাচ্ছে। তৎক্ষনাৎ চেঁচিয়ে উঠে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ হাত পুড়ে যাবে অর্পণ! পাশে কাপড় আছে..”
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই কড়াইয়ের গরম সহ্য করতে না পেরে সে হাত থেকে কড়াই ছেড়ে দিল। যার ধরুন গরম কড়াই ঝনঝন শব্দ তুলে ফ্লোরে পড়ে তার পায়ে এসে লাগলো। কড়াইয়ের সমস্ত মাংসের ঝোল ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারপাশে পড়ে রইলো। আকস্মিক ঘটনায় অর্পণ হতভম্ব হয়ে যায়। ত্বরিত দূরে সরলেও রেহাই পেলো না। হাত জ্বলছে, পা পুড়ে যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত চাপল। জামিল শেখ হুড়মুড় করে ছেলেকে ধরে উচ্চস্বরে ডাকতে লাগলো পায়েল কে! অর্পণ চোখ খিঁচে নিয়েছে।
“ বোকা ছেলে। এত বড় হয়েছিস এখনও সাধারণ জ্ঞান মাথায় নেই। গরম কড়াই খালি হাতে কিভাবে ধরতে গেলি? মাথায় বুদ্ধি নয়, গবর আছে। ”
অর্পণ হাতে ফু দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বাবার দিকে চাইলো,
“ কেমন বাপ হয়েছ? শ্বশুর হওয়ার বয়সে তাগড়া ছেলেকে দিয়ে এই মধ্যরাতে খাবার গরম করাও। এখন যদি তোমার ছেলের বউ থাকতো, আজ কি আমি ছ্যাকা খেতাম?”
হকচকিয়ে উঠলেন জামিল শেখ। চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
“ চুপ কর বেয়াদব ছেলে। দ্রুত বাথরুমে চল। পানি দিতে হবে। নয়তো জ্বলবে।”
অর্পণ উঠে দাঁড়াল। বাবার কাঁধে ভর করে দাঁড়াল। জামিল শেখ শক্ত করে ধরলেন। অর্পণ তার সঙ্গে খুঁড়িয়ে যেতে যেতে বলল,
“ ওই চিনুপুঁটি পানি আমার ভেতরের জ্বালা নেভাতে পারবে না। বউ চাই আমার! বউ! শুনতে পেয়েছ? ভালোয় ভালোয় বলছি, বিয়ে করাও। তোমার কি আব্বা ডাক শুনতে ইচ্ছে হয়না?”
খুকখুক করে কেশে উঠলেন জামিল শেখ। জন্ম দিয়েছে এক অসভ্য ছেলে! মুখে লাগাম নেই। অর্পণ ওয়াশরুমে পা ভিজাতেই চিৎকার করে উঠল,
“ ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার বদলে মাঝরাতে কড়াইয়ের ছ্যাঁকা খাওয়াচ্ছ। যে বয়সে বউয়ের ঝাড়ি খাবো, ওই বয়সে ছ্যাঁকা খাচ্ছি। ভুলেও আর কখনও যদি নিজেকে রান্নাঘরে যেতে হয়, তবে সেইদিন এ বাসায় যুদ্ধ চলবে। তছনছ করে ফেলবো সব। যদি বউ-ই না থাকে এত ধন-সম্পদ দিয়ে কি হবে? সম্পদ কি আমায় আব্বা ডাকবে? ”
“ চুপ কর বেয়া/দব ছেলে! তোর জ্বালায় আমি-ই এ বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো। ”
বলেই তিনি ছেলেকে ধরে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে গেলো। অর্পণ কটমট করে তাকায় বাবার দিকে। বিছানায় ধীরে ধীরে বসে বলল,
“দাদা ডাক শুনার ইচ্ছে আছে?”
“ অবশ্যই আছে।”
“ তাহলে দয়া করে বিয়ে করাও। কস-ম ৯ মাস পরেই দাদা ডাক শুনাবো।”
বলেই অর্পণ বাঁকা হেঁসে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। জামিল শেখ রাগত্ব চোখে বেয়াদব ছেলেকে শাসিয়ে ড্রয়ার থেকে বার্নোল ক্রিম নিয়ে এলো। পায়ের পোড়া স্থানে আলতো করে দিয়ে বলল,
“ বেলেহাজ ছেলে! তা মেয়ে কি ঠিক করা আছে? নাকি বিয়েও করে ফেলেছ চুপিসারে? ”
অর্পণের পা তীব্র যন্ত্রণায় জ্বলছে। সে দাঁত খিঁচে ব্যথা সহ্য করে জবাব দিলো,
“ মেয়ে ঠিক করা খুব প্রয়োজন? আজ যদি একটা লাল টুকটুকে বউ থাকতো তাহলে কি মাঝরাতে এত কষ্ট করে আমার পায়ে তোমাকে ক্রিম লাগাতে হত? তোমার পুত্রবধূ-ই মলম লাগিয়ে দিতো। ”
জামিল শেখ আর সহ্য করতে না পেরে, রেগে অর্পণের হাত মুচড়ে দিতেই রুমে প্রবেশ করলো সবাই।। পায়েল শেখ তার স্বামীর চিল্লাচিল্লি তে ভয়ে ধরফর করে উঠে এসেছেন অর্পণের রুমে। অর্ণব ব্যস্তপায়ে হেঁটে ভাইয়ের পায়ের নিকট বসে জিজ্ঞেস করে,
“ কিভাবে হলো?”
“ গরম কড়াই পড়ে গেছে। ” জামিল শেখ মুখ বিকৃতি করে বলল।
“ আশ্চর্য কাউকে ডাকবে না? এই বদ শয়/তান। কখন এসেছিস বাসায়? আম্মুকে ডাকলি না কেনো? সবসময় একা একা পা/কনামী করতে যাস! খুব বাহাদুর হয়ে গেছিস তাই না? মুখে যত ফটর ফটর! অথচ, কাজে কাচকলা। বড় ভাইকে দেখে কিছু শিখ। বেয়া/দব। ”
অর্ণবের চিবিয়ে চিবিয়ে কথায় সা/পের ন্যায় ফোঁসে উঠল অর্পণ। শুয়া থেকে তেড়ে যেতেই পায়ের যন্ত্রণায় চুপসে গেলো। পরক্ষণেই শব্দ করে হেঁসে ফেলে অর্ণব।
পায়েল শেখ ছেলের হাত-পায়ে ফুঁ দিয়ে কান্না করে দেন। ছেলের মাথায় চুমু খেয়ে কান্নামিশ্রিত স্বরে বলল,
“ তুই আমাকে কেনো ডাকলি না? আমি কি উঠে গরম করে দিতাম না? একা এসব করতে কে বলেছে? প্রতিদিন এত রাতে বাড়ি ফিরিস। আমাকে শুধু শুধু টেনশনে ফেলে খুব শান্তি লাগে তাই না? দৈনিক রাত ১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করি আমি। কেনো তুই অবাধ্য হস বল তো! আমি কি তোর মা নই? জানিস কত টেনশন হয় তোর জন্য। ”
এসব আহ্লাদ, আদিখ্যেতা তার নিকট অসহ্য ঠেকছে। সামান্য একটু-ই তো কেটেছে। এখানে কান্না করার কি হয়েছে! যতসব! অর্পণ বিরক্তে নাক – মুখ কুঁচকালো। তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ ম/রা কান্না থামাও মা! অনেক নাটক হয়েছে! এবার দূর হও সবাই। আমি একাই এই সামান্য ক্ষত সামলাতে পারবো।এরকম হাজার ক্ষত আমাকে কাবু করতে পারবে না। ”
তার কথা পাত্তা না দিয়ে অর্ণব কটমট করে তাকাল। এই অসভ্য ছেলেটাকে তার পেটাতে ইচ্ছে করছে। মায়ের কান্না দেখে কষ্ট না পেয়ে উল্টো বলছে, ম/রা কান্না! ভারী অসভ্য তো! আসলেই কি এটা তার জমজ ভাই? নাকি কুঁড়িয়ে পাওয়া ফুটপাতের ছেলে। কি জানি? তার বড্ড সন্দেহ হয় অর্পণকে নিয়ে।
কই আঘাত পেয়েছে, চুপচাপ শুয়ে থাকবে তা না! কেমন ঠাস ঠাস কথা বলছে। মায়ের উপর দিয়ে জবাব। কত সাহস। মন চাইছে, কয়েক ঘা বসিয়ে দিতে। সব বেয়া/দবি শিক্ষা দিতে।
মন খারাপ নিয়ে ঠাই বসে রইলো সকলে। বেশ কিছু সময় জ্বালা কমে আসলে ধীরে ধীরে চলে গেলো বাবা-মা। কারণ আর একটু পড়েই অর্ণবও চলে যাবে। অর্পণ বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। অর্ণব তার পাশে শুয়ে বলল,
“ কাল থেকে অন্তত তাড়াতাড়ি ফিরিস! তুই ছোট নেই! দামড়া ব্যাটা হয়েছিস। ”
চোখের উপর হাত দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিল অর্পণ। ওর কথায় হাত সরিয়ে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ জলদি না ফিরলে কি করবি?”
দাঁতে দাঁত শক্ত করলো অর্ণব। এই ছেলের সঙ্গে ভুলেও তার বনিবনা এবং মত বিনিয়ম হয়না। সে উত্তরে গেলে অর্পণ যায় দক্ষিণে। তাহলে কিভাবে তারা আলোচনায় বসে মিটমাট করবে? দুজনের মতামত-ই যে আকাশ পাতাল তফাৎ। অর্ণবের সহজ কথাও কিভাবে প্যাচিয়ে যাচ্ছে। অথচ অর্ণব শুনেছে, জমজ ভাইয়ের মুখের গড়ন এক হওয়ার মতোই জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, পছন্দ, রুচি সবই একই থাকে। এমন-কি দুজনেই একটা মেয়ে-কেই ভালোবাসে। কিন্তু তাদের যেনো আকাশ পাতাল ফারাক। কেনো এমন হলো? এটা কি স্বাভাবিক! অর্ণব ফোঁস করে নিশ্বাস নিলো। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হঠাৎ সিরিয়াল ভঙ্গিতে বলল,
“ তোর হাড়গোড় ভেঙে লক-আপে ভরবো। বেয়া/দব। ”
“ বা/ল করবি। বলেই বরাবরের মতো বুড়ো আঙুল দেখালো অর্পণ।
“ কুকুর! জাস্ট একবার বাঘে পাই! তোর সব ঝাঁঝ লাল মরিচ ঘঁষে মিটিয়ে দেবো। এসবের শোধ কিভাবে তুলবো, তা খুব ভালো করেই জানি। তোর সুন্দরী বউকে নিয়ে আমি হানিমুনে যাবো শা/লা। বেচারী ধরতেও পারবে না। ”
বলেই মিটি মিটি হেঁসে উঠে। অর্ণবের গা ছাড়া কথায় তেঁতে উঠলো অর্পণ।
“ আমার বউকে নিয়ে একটা বাজে কথা বললে খু/ন করে ফেলবো।”
“ বা/ল করবি। ”
অর্পণকে নকল করে সেও বুড়ো আঙুল দেখালো। মুখে তার বিজয়ী হাঁসি। রাগে ফেটে পড়ল অর্পণ। তেড়ে গিয়ে গলা টিপে বলল,
“ আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস শা/লা। একদম রাগাবি না! নয়তো… খু/ন করবো তোকে! ”
“ তোর বউ মানে আমারও বউ বেবি। উম্মাহ! ”
বলেই অর্ণব গলা টিপে ধরা ওর হাতে চুমু খেলো। অর্পণ রাগে বোম। ঘনঘন হিংস্র ভঙ্গিতে শ্বাস ফেলছে। মুচকি হাঁসলো অর্ণব। ত্বরিত করে, পা উঠিয়ে পাল্টা তেজী অর্পণের পায়ে জোরে লাত্থি মারলো। সদ্য পোড়ে যাওয়া স্থানে লাত্থি লাগায় কলিজা কেঁপে উঠে। বেচারা অর্পণ ব্যথায় চিৎকার করে ছিটকে দূরে সরে যায়। আজ আহত বলে অর্ণব পালিয়ে বাচলো। যদি তার দূর্বলতায় হাত না দিতো তবে দেখে নিতো সে। ফের ঝামেলা করলো না, চুপচাপ পাশ ফিরে শুয়ে রইলো। রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তার। ছেলেটার অসহায় মুখ দেখে ভারী মজা পেলো অর্ণব।
অর্ণব সকাল সকাল চলে যাচ্ছে। ব্যাগ-পত্র গাড়িতে উঠিয়ে পায়েল শেখ কে বিদায় দিলো। তার সঙ্গে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত জামিল শেখ যাবেন। অর্পণের যাওয়ার কথা থাকলেও পায়ের ব্যথায় যাওয়া হলো না। আপাতত সে ঘুমাতে ব্যস্ত। অর্ণব তৃষ্ণা কে আদর করে টাটা জানিয়ে গাড়িতে উঠলো।
“ ভালো রেজাল্ট করা চাই ওকে.”
তৃষ্ণা মাথা দুলায়,
“ তুমিও সাবধানে থেকো ভাইয়া। কল করো।”
অর্ণব মুচকি হেঁসে গাড়ির ডোর লক করে পায়েল শেখকে বলল,
“ যাচ্ছি মা।”
“ আমার বাবা। পৌঁছে কল করবে। কেমন?”
“হ্যাঁ” সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে অর্ণব গাড়িতে উঠে বসলো। হঠাৎ কি মনে হতেই, সামনে দোতলার বারান্দার দিকে তাকায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত কাউকেই দেখা গেলো না। হতাশ হয়ে ফের বোন এবং মায়ের দিকে তাকিয়ে শেষ বারের মতো বিদায় জানালো। গাড়িও স্টার্ট দিলেন জামিল শেখ। অর্ণব মুখে মৃদু হাঁসি নিয়ে কোলের ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করলেন। সেখানে আলতো হাতে ছুঁয়ে ভাবতে লাগলো, ফজরের আজানে সময় মিষ্টির তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তে চুপিচুপি তার নিকট আসার ঘটনা। তখন পায়েল শেখ রুটি ভাজছিল বাকি সবাই ঘুম। সেই সুযোগ-ই কাজে লাগায় মিষ্টি। দ্রুত চো/রোর মতোন বাসায় ঢুকে এক দৌঁড়ে অর্ণবের সামনে দাঁড়ায়। সময় এক বিন্দুও নষ্ট করে না!
হাঁসি হাঁসি মুখে ওড়নার ভেতর থেকে একটি প্যাক করা বক্স হাতে ধরিয়ে দিয়েই ফিসফিস করে বলল,
“ আপু দিয়েছে। পৌঁছে আনবক্স করবেন। আমি যাচ্ছি। টাটা।”
অর্ণব বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়! সে হতভম্ব হয়ে হা করে , পিচ্চি মেয়ের সাহসী কান্ড দেখছে। তাকে কিছু বলতে না দেখে মিষ্টি কপাল কুঁচকাল। অর্ণব স্তব্ধ চোখে বক্সটা হাতে নিয়ে বলল,
“ কি আছে এতে?”
“ জানি না। ”
“ তোমার বোন আসবে না?”
“ ও অলরেডি ঘুম। রাতে এটা আমাকে দিয়ে রেখেছিল। বলেছিলো, ভোরেই আপনার হাতে পৌঁছে দিতে। এখন আমার কাজ শেষ। চলি। সাবধানে যাবেন ভাইয়া। ”
বলেই আগের মতোই দৌঁড়ে পালালো মেয়েটা। অর্ণব বিস্মিত নয়নে বক্সটা নড়াচড়া করে বেশ কিছুক্ষণ দেখলো। এরপর কি মনে হতেই মৃদু হেঁসে ব্যাগে ভরে নেয়। স্নিগ্ধা যেহেতু পৌঁছে আনবক্স করতে বলেছে, তাহলে তাই সই!
জামিল শেখ গাড়ি চালানোর মাঝেই ছেলের দিকে তাকাল। চোখ গেলো, কোলে আগলে রাখা রঙিন বক্সের নিকট। সেদিকে তাকিয়েই আনমনে একা একা হাঁসছে অর্ণব। জামিল শেখ গলা খাঁকড়ি দিলেন। জিজ্ঞেস করে,
“ বক্সে কি আছে বাবা? স্পেশাল কিছু?”
কল্পনার জগত সেখানেই ভাটা পড়লো। চমকে উঠে বলল,
“ কিছু বললে আব্বু?”
“ একজন তো বিয়ের জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে। বড় জনের আগে সেই বিয়ে করবে। তোমার কি খবর.?তুমিও কি বিয়ে সাদি করতে চাও? মেয়ে দেখা আছে? ”
অর্ণব বাবার কথা বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকাল। হাতের বক্সটা চটপট ব্যাগে ঢুকিয়ে বলল,
“ মানে? কি বলছো? ওই বেয়া/দব টা বিয়ে করবে? এসব তোমাকে বলেছে?”
জামিল শেখ হু হু করে হেঁসে উঠে,
“ তা আর বলতে.? কাল রাতে পায়ে ব্যথা পেয়ে সে-কি কান্ড! মনে হচ্ছিল মাথার বুদ্ধি- লজ্জা, সরম সব খুইয়ে বসেছে । নির্লজ্জের মতো আমার সামনে বউ বউ করছিল।”
“ কষে লাগাতার চড় দিতে পারলে না। অসভ্য ছেলে কোথাকার। ”
বলেই অর্ণব চোখ-মুখ শক্ত করে ফেললো। জামিল শেখ শরীর কাঁপিয়ে হাঁসলো। অর্ণব দাঁতে দাঁত শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বিড়বিড় করল,
“ আদবকায়দা পানি দিয়ে গিলে খেয়েছ। ভারী বেয়া/দব হচ্ছে দিনদিন। শেষে কিনা বাবাকেও ছাড়লো না? বেলেহাজের মতো বিয়ে করবো! বিয়ে করবো! বলা শুরু করলো?”
রাগে মনে মনে কয়েকটা গা/লিও শুনিয়ে দিলো অর্পণকে। তার জন্য আজ বাবার সামনে নিজেকে লজ্জায় ম/রতে হচ্ছে। ওসব বিয়ের ব্যাপার স্যাপার বাবা জিজ্ঞেস করলে লজ্জা লাগে না?
সময়টা সকাল ১০ টা! ভার্সিটির ক্যাম্পাসে পৃথার পেছন পেছন তৃধা পা রাখে। তার হৃদয়ে চলছে, ঘূর্ণিঝড়ের আভাস। মনে হচ্ছে এই বুঝি ভয়ংকর দা/নবের ন্যায় রিয়াদ স্যারের সামনে ধরা পড়ল। তখন নিশ্চয়ই বসিয়ে রাখবে না। এতদিন ভার্সিটিতে না আসার ধরুন দেখা গেলো রেগে তাকে জাস্ট টিপে মে/রে ফেললো। বুকের ভেতর টা ডিপ ডিপ করছে। সে পৃথার হাত খামচে একবার সুক্ষ্ম নজরে চারপাশ পরখ করে নেয়। এরপর হালকা ঢোক গিলে বলল,
“ তুই কি স্যার কে দেখতে পাচ্ছিস?”
“ কই? না – তো!”
পৃথা মিটিমিটি হাঁসছে। ভীতু তৃধাকে দেখতে বেশ লাগছে তার। মেয়েটি আশেপাশে বন্ধুদের দেখতে না পেয়ে এগিয়ে গেলো। সরাসরি ক্লাসে ঢুকতেই তৃধা দৌঁড়ে বসে পড়লো পেছনের বেঞ্চে। আকস্মিক তার আগমনে বন্ধুরা সবাই হইচই বাধিয়ে দেয়। এতদিনের কৌতুহল সব এক হয়েছে আজ। সমুদ্র সামনে থেকে দৌঁড়ে তৃধার গা ঘেঁষে বসলো। মেয়েটার নিকট এসে ফিসফিস করে বলল,
“ মিসেস রিয়াদ মাহমুদ। আপনি এতদিন পর এসেছেন? দেখি গালের দাগ সেরেছে কিনা!”
তৃধার লজ্জায় মুচড়ে যায়। সে কাচুমাচু করে বলল,
“ সমুদ্রের বাচ্চা..! বদমা/ইশি বন্ধ কর। ”
“ স্যারের চুমু কেমন ছিল? ঠিকঠাক দিতে পেরেছে? নাকি আমি ট্রাই করবো? ”
বলেই সমুদ্র বদ হাঁসি হেঁসে তৃধার মাথায় টুকা দিল। মুহূর্তেই গগন কাঁপুনি হেঁসে উঠে বাকি রা। তৃধা কটমটিয়ে সমুদ্রের চুল খামচে ধরতেই ছেলেটা টপ করে দূরে সরে যায়।
“ কোন গালে হামি খেয়েছে? ডান গালে নাকি বাম গালে? উম! উমমম!”
বলেই চুমু দেখালো ঠোঁটে। পৃথা মুখে হাত চেপে খিলখিল করে হাঁসছে। তৃধা রাগে কিড়মিড় করে উঠে দাঁড়ায়। চিৎকার করে গর্জন দিতেই ক্লাসে প্রবেশ করলো দাম্ভিক, শক্ত ধাঁচের মানুষ রিয়াদ স্যার। বরাবরের মতোই হাতে বই নিয়ে সটানভাবে হেঁটে ক্লাসে ঢুকে। কিন্তু এ কয়েকদিনে আগের মতো চোখ-মুখ শক্ত, গম্ভীর ভঙ্গি নেই। বরং দুশ্চিন্তা ভর করেছে তার মুখখানায়। তিনি হাঁটা থামিয়ে প্রতিদিন কার ন্যায় সম্পূর্ণ ক্লাসে চোখ বোলালো।
তৃধার ছটফটানি তাকে দেখেই অটোমেটিক থেমে গেছে। সে চো/রের মতো একদম দেয়াল ঘেঁষে শক্ত হয়ে বসে আছে। সমুদ্র সহ বাকিরা ঠোঁট কামড়ে হাঁসছে। তৃধাকে ক্লাসে উপস্থিত দেখে চোখ-মুখ শান্ত হলো রিয়াদ স্যারের। গম্ভীর মুখটা মুহূর্তেই হাস্যজ্জল হয়ে উঠল। মেয়েটা খুব জ্বালিয়েছে এ কয়েকদিন। এবার কোথায় পালাবে.? এতদিনের সব হিসেব মিটাবে আজ। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিবে। ভেবেই বাঁকা হাঁসলো। গলা ঝেড়ে কাঠ কাঠ স্বরে বলল,
“ কাল অনুপস্থিত ছিলেন কে কে? ”
তৃধার বুক ধক করে উঠে। সে তড়িৎ গতিতে আশেপাশে নজর বুলিয়ে দেখল, কেউ দাঁড়ায় নি। তৃধা কাঁদো কাঁদো মুখ করার মাঝেই রিয়াদ স্যার তার সামনে দাঁড়াল। চোয়াল শক্ত করে বলল,
“ স্ট্যান্ড আপ তৃধা! আপনি গত ১০ দিন ক্লাসে আসেন নি। ”
ভয়ে চোখ খিঁচে নিলো তৃধা। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“ স-স্যার..!”
“ স্ট্যান্ড আপ।”
“ উঠছি..! উঠছি!”
বলেই উঠে দাঁড়াল। পৃথা, সমুদ্র হাঁসতে হাঁসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রিয়াদ স্যার বরাবরের মতোই শক্ত গলায় বলল,
“ অনুপস্থিত থাকার জন্য আপনাকে কি শাস্তি দেওয়া যায়? বলুন।”
“ জানিনা। ” বিড়বিড় করে বলল তৃধা।
তৎক্ষনাৎ ক্লাসের সবাই উচ্চশব্দে হেঁসে উঠল। রিয়াদ স্যার হতবুদ্ধি হয়ে উঠে। অপ্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বলল,
“ সম্পূর্ণ ক্লাস দাঁড়িয়ে থাকুক। ”
বলেই চলে গেলেন তিনি। তৃধা রাগে দুঃখে কাঁদো কাঁদো করে পৃথার হাত চিমটাতে থাকলো। পৃথা রেগে যায়,
“ হাত ছাড় বা/ল! ঢং বাদ দে। বিয়ে করার সময় লজ্জা কই যায়? দুদিন পরেই দেখবো স্বামী বলতে পা/গল! ”
“ একটু সামনে তাকিয়ে দেখ স্যার পড়াচ্ছে কম! আমার দিকে বেহায়া নজরে তাকিয়ে আছে বেশী। আমি লজ্জা পাচ্ছি পৃথা। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যায়? স্যারের এই স্বভাব কি ভালো হবে না? নির্লজ্জ কোথাকার! একজন ভার্সিটির অধ্যাপক হয়ে, নিজের ছাত্রীর দিকে দুষ্টু চোখে তাকায়। ”
বলেই তৃধা মাথা নত করে বিড়বিড় করলো। পৃথা এহেম এহেম করে বলল,
“ এসব ভালোবাসা রে ভালোবাসা। লজ্জা পেয়ে কাজ নেই। লজ্জাকে এখন-ই টাটা! বাই বাই বলে দে। উল্টে এনজয় কর! দুদিন পরেই স্যার তোকে টপাস করে চুমু খাবে! জড়িয়ে ধরবে এমন কি তুই ও স্যারের বুকেও ঘুমাবি দোস্ত। কি কপাল! তখন শুধু দুষ্টু চোখে না আরোও অনেক কিছু হবে। বুঝতে পেরেছিস?”
প্রতিটি কথা কানে পৌঁছাতেই লজ্জায় লাল হলো তৃধা। ঠোঁট কামড়ে পৃথার বাহুতে চাপ্পড় মারলো। তৎক্ষনাৎ কানে এলো ধমক,
“ এত কিসের ফুসুরফুসুর ঘুসুরঘুসুর? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।” বলেই স্যার রাগী চোখে তাকাল। তৃধা ধপ করে চুপসে যায়।
শিহাব না চাইতেও এবার হেঁসে ফেললো। আজ শুধু অর্পণ ক্লাসে আসেনি। তাকে ছাড়া শিহাবের বোরিং লাগছে। কি বিরক্ত ক্লাস। কবে শেষ হবে অনার্স?
শ্রাবণের হাতে কয়েকটি আচারের প্যাকেট! সাধারণত এগুলো চৈতীর জন্যই নিয়ে আসা। তার দুলাভাই অফিসের কাজে কক্সবাজার গিয়েছিল। সাথে বেশ অনেকগুলো আচার আনেন। শ্রাবণের মনে পড়ে যায় চৈতীর কথা। এ কয়দিন খুব মিস করেছে তাকে। ফোনে কথা হলেই কি তৃপ্তি মিটে? সে ঝটপট ঢাকা এসেই ভার্সিটি উপস্থিত হয়। ক্লাসে জিনিয়ার সঙ্গে খুশগল্পে মেতেছিল চৈতী। তৎক্ষনাৎ হাতে আচার নিয়ে ক্লাসে ঢুকলো শ্রাবণ। একপ্রকার দৌঁড়ে চৈতীর পাশে বসে মাথায় চা/টি মা/রল। চৈতী চোখ গরম করে বলল,
“ এসেই শুরু হয়ে গেলো? ব্যথা পাই না?”
শ্রাবণ মুখ ভেঙিয়ে হাতের আচারের প্যাকেট চৈতীর কোলে রাখলো। বলল,
“ তুই বলেছিলি কক্সবাজারের আচার খাবি! এই নে..! ইচ্ছে মতো খা।”
“ এ্যাই! এ্যাই শ্রাবণ্ণা! এক লাত্থি-তে বৃন্দাবন পাঠাবো। আমার আচার কই? তুই শুধু চৈতীর জন্য এসেছিস কেনো কু/ত্তা। ”
বলেই জিনিয়া উঠে উত্তম মাধ্যম কিল দেওয়ার জন্য তেড়ে গেলো । শ্রাবণ বোকা বনে যায়। দুহাতে জিনিয়ার হাত আঁকড়ে ধরে তাড়াহুড়ো স্বরে বলল,
“ আরে..!আরেহ! কি করছিস? থাম বলছি। ”
জিনিয়া কটমটিয়ে উঠে দাঁড়ায়। চৈতীর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে মাথায় আঘাত করে বলল,
“ আচার কার জন্য এনেছিস। বল!”
বেচারা আঘাত খেতে খেতেও বলল,
“ আমার চৈত্র মাসের জন্য।”
“ তবে রে..!”
বলেই হিংস্র পায়ে সামনে দাঁড়াল। শ্রাবণ হতবুদ্ধি হয়ে উঠে দৌঁড়াতে শুরু করে। জিনিয়া চিৎকার করে যাচ্ছে,
“ বল। কার জন্য?”
“ চৈত্র মাস! চৈত্র মাস ! চৈত্র মাস! ”
জিনিয়া রাগে ফোঁসে তেড়ে গেলো শ্রাবণের পিছু পিছু। চৈতী একা একা বসে উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে। বেঞ্চ থেকে একটা আচারের প্যাকেট দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে মনের সুখে খাওয়া শুরু করলো। খুশিতে পা নাঁচাতে নাঁচাতে বলল,
“ তোরা ঝামেলা কর। এই সুযোগে খেয়ে নেই। ”
স্নিগ্ধা প্রথম ক্লাস শেষে থার্ড ফ্লোরে উঠে উঁকি দিলো চৈতীর ক্লাস রুমে। মেয়েটা তখন শ্রাবণকে এ কয়েকদিনের সব সাবজেক্টের নোট করে দিচ্ছিল। স্নিগ্ধা উঁকি ঝুঁকি দিয়ে এগিয়ে গেলো। জিনিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বেঞ্চে ঠাস করে চড় মে/রে বলল,
“ পল্টি মুরগীর মতোন ক্লাসে কি করিস? ক্যাম্পাসে চল। আড্ডা দিবো। ”
“ দেখিস না। প্রেমিক পুরুষকে নোট করে দিচ্ছে।”
বলেই জিনিয়া বাম হাত বাড়িয়ে পাশে বসা শ্রাবণের গলা আঁকড়ে ধরলো। চৈতী ঠোঁট টিপে হেঁসে মনোযোগে লিখছে। কিন্তু শ্রাবণের দৃষ্টি শুধুই চৈতীর মুখে। ছেলেটি জিনিয়ার রসিকতায় রেগে গেলো।
“ তুই আমাদের মাঝে কি করছিস? বেরিয়া যা। থার্ড পার্সন মেয়ে! ”
বলেই স্নিগ্ধার দিকে তাকাল। আদেশ সুরে বলল,
“ স্নিগ্ধা..! এই কাবাব মে হাড্ডি কে নিয়ে যা তো। আমাদের একটু একা সময় কাটাতে দে। ”
“ এহহহ। আসছে। ওসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। তোকে ভালোবাসবে চৈতী? এও সম্ভব! ”
স্নিগ্ধা মুখ বাঁকিয়ে বলল। শ্রাবণের গাল ফুলানো দেখে জিনিয়া গা কাঁপিয়ে হেঁসে ওর গাল টেনে দেয়। চৈতীর নোট করা শেষ হলো। সবকিছু গুছিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলল,
“ চল! চল..! নোট শেষ। এবার মাইন্ড ফ্রেশ করি। আর ভাল্লাগছে না। ”
বলেই স্নিগ্ধার হাত ধরে আগে আগে বেরিয়ে গেলো। মুখ গুমরা করে বসে রইলো শ্রাবণ। জিনিয়া ওর কাঁধে চাপ্পড় দিয়ে টানতে টানতে বলল,
“ শা/লা। উঠ বলছি। আর দেবদাস হতে হবে না। মেয়েটা নিশ্চয়ই একদিন তোকে ভালোবাসবে। হতাশ না হয়ে, লেগে থাক। ”
শ্রাবণ উঠে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মনে মনে বলল,
“ সেই দিন অতিশীঘ্র আসুন। চৈত্র মাস শুধু আমার হোক। ”
স্নিগ্ধার হাতে আচারের প্যাকেট দিয়ে মাঠে বসে আরামে চিপস খাচ্ছে চৈতী। স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে বলল,
“ তুই কখনও প্রেমে পরেছিস?”
“ কি? প্রেম?”
বলেই চৈতী চোখ-মুখ বিকৃতি করল। ফের নাক ছিটকে বলল,
“ ওসব আবার কেমনে করে। না ভাই! ওসবে আমি কখনও ছিলাম না। আগামীতেও সম্ভব নয়। যতসব! আজাইরা সময় নষ্ট। প্রেম বলতে কিছু আছে নাকি? সব টাইমপাস!”
“ আমিও কখনও করিনি দোস্ত। এজন্য-ই বুঝতে পারছি না। এটাকে লাভ বলে নাকি অ্যাট্রাকশন? ”
অত্যন্ত দুঃখী স্বরে বলল স্নিগ্ধা। চৈতী চোখ বড় বড় করল।
“ মানে? কাকে তুই ভালোবাসিস। বল স্নিগ্ধা। এত বড় কথা লুকিয়ে গেলি।”
স্নিগ্ধার গা ঝাঁকিয়ে অবাকের সুরে বলল। মেয়েটা হকচকিয়ে উঠে। এসব কি বলে ফেললো সে? দূরে জিনিয়াকে আসতে দেখে চটপট কথা ঘুরালো। বলল,
খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১৮
“ দূর! তেমন কিছু নয়। এমনি একটু ভালো লাগা এই তো।”
“ বলবি না তাই তো? ওকে বলতে হবে না। আমি তোর কে? বন্ধু মনে করলে তো!”
বলেই মুখ গুমরা করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখল চৈতী। স্নিগ্ধা ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বলল,
“ আহা! রাগ করছিস কেনো? আচ্ছা বলবো কিছুদিন পর। ওকে?”
তৎক্ষনাৎ দাঁত কেলিয়ে হাঁসলো চৈতী। কারণ, সে তো মন খারাপের ঢং করছিল। যাতে স্নিগ্ধা গড়গড় করে সব বলে দেয়। এবার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। সে ঘাড় ফিরিয়ে, স্নিগ্ধার গালে টপাস টপাস টিপে দিয়ে গদগদ কণ্ঠে বলল,
“ ওকে। কিন্তু না বললে তোর সঙ্গে আড়ি!”