পারমিতা পর্ব ৩৬
Nabila Ahmed
অরিয়ন চোখ খুলতেই সামনে দেখতে পায় মিতাকে। মিতা অরিয়নের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো অরিয়নের হাতের উপর।
–লাভ?
ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে ডাক দেয় অরিয়ন। গলা একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।
অরিয়নের ডাক শুনে মুখের দিকে তাকায় মিতা। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। গালে ৫ আঙ্গুলের ছাপ বসে আছে। চুলগুলো এলোমেলো। অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে আলতো করে একটা হাসি দেয়। সেই হাসি মুখ থেকে সরে যেতেও যেন সময় লাগলো না।
–গালে কী… আহ…গালে কী হয়েছে?
হুট করেই শোয়া থেকে উঠে বসতে নিয়ে কথাটা বলে অরিয়ন। বসতে নিতেই বুকে ব্যাথা অনুভব করে। ফলে নিজের হাত দিয়ে আলতো করে বুকে স্পর্শ করে অরিয়ন।
–কী করছো তুমি? শুয়ে থাকো। তোমার জন্য এখনো বসা ঠিক হবে না।
অরিয়নের বাহু ধরে শুয়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে মিতা।
–সর, কিছু হবে না আমার। আগে বল গালে কে থাপ্পড় মে*রেছে তোকে?
মিতার হাত ধরে নিজের সামনে বসায় অরিয়ন। নিজের ডান হাত দিয়ে মিতার গাল স্পর্শ করতে করতে বলে অরিয়ন।
মিতা কিছু বললো না। চুপ করে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। অরিয়নের মুখে গ্লানির ছাপ। চোখেমুখে মিতার জন্য টেনশন ফুটে উঠেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–কী হয়েছে বল? কে থাপ্পড় মে*রেছে তোকে?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–আনিকা আন্টি।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় মিতা।
মিতার জবাব শুনে গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয় অরিয়ন। হাত বিছানার উপর রাখে। নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে রইল। নিজের মায়ের কথা শুনতেই অরিয়নের এভাবে হাত সরিয়ে নেওয়া দেখে মনে মনে একটু হাসলো মিতা। সবাই শুধু মুখেই ভালোবাসে। নিচের দিকে চোখ যেতেই চোখ বড় বড় হয়ে আসলো মিতার। অরিয়নের হাতের স্যালাইনের পাইপে র*ক্ত উঠে গেছে।
–হাত সোজা করো র…
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায় মিতা।
মিতা ভেবেছিলো অজান্তে হাত ঠিকমতো না রাখার কারণে র*ক্ত উঠে যাচ্ছে কিন্তু মিতার ভুল ভাঙ্গলো যখন চোখ গিয়ে পড়লো অরিয়নের হাতের দিকে। অরিয়ন হাত শক্ত করে মুঠ করে রেখেছে। রাগের রগগুলো বের হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
–হাত খুলো, র*ক্ত উঠে যাচ্ছে।
ঘাবড়ে গিয়ে মিতা অরিয়নের হাত ধরে বলতে থাকে।
মিতার চোখে পানি দেখতে পেয়ে হাত ছেড়ে দেয় অরিয়ন। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু মিতার গালের দাগ যতোবার চোখে পরছে ততোবারই ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে।
–আই এম সো সরি, লাভ।
মিতার গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে অরিয়ন।
–অহনা কে?
প্রশ্ন করে মিতা
মিতার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় অরিয়ন। ধীরে ধীরে মিতার কাছ থেকে সরে আসে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে। মিতা আগে থেকেই অরিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।
–অহনা কে?
আবারও প্রশ্ন করে মিতা।
অরিয়ন নিজের চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিতাই বা এই নাম কোথা থেকে শুনলো?
–এই নাম কোথা থেকে শুনলি তুই?
উলটা প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–অহনা কী তোমার বোন ছিলো?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করে মিতা।
অরিয়নের বুঝতে আর বাকি রইল না,যা ভেবেছিলো তার থেকেও অনেক বেশি কিছু জেনে ফেলেছে মিতা। তাই আর কথা না বাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
–আমার….
কথাটা বলে একটু থাকে মিতা। কথাগুলো যেন আটকে যাচ্ছে মিতার।
–আমার কারণে কী…কী উনি…উনি মারা গেছেন?
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–এমনটা বলিস না, লাভ। এমন কিছুই হয়নি।
তুই…তুই তখন ছোট ছিলি। যা হয়েছে তার সবটাই দুর্ঘটনা।
মিতার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে মিতার হাত ধরে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে বুঝতে আর বাকি রইল না আনিকা চৌধুরী যা বলেছে তা সত্যি।
–কীভাবে? কখন? আমার কিছু মনে নেই কেন?
নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
–লাভ। এখন না। পরে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো ওকে? তোর কোনো দোষ ছিলো না।
মিতার হাত ধরে ডেস্পারেটলি বলতে থাকে অরিয়ন।
–যদি আমার দোষ নাই থাকবে তাহলে কেন আন্টি আমাকে পছন্দ করবে না? বলো?
অরিয়নের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে মিতা।
অরিয়ন কোনো জবাব না দিয়েই মিতার হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।
–বলো কীভাবে অহনা আপু আমার জন্য মা*রা গেলেন?
–পরী!
অনুরোধের সুরে বলে অরিয়ন।
–প্লিজ রিয়ন, প্লিজ। আমি যে আর পারছি না। আমাকে এসব থেকে মুক্তি দেও। কি হয়েছিলো আমাকে বলো।
অরিয়নের হাত ধরে অনুরোধ করে বলে মিতা।
–১৩ বছর আগে….যখন ছোট চাচ্চু আর চাচি এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো…তাদের….তাদের সাথে অহনাও ছিলো। সেদিন….সেদিন ২ জন নয়, ৩ জন মারা গিয়েছিলো।
মাথা নিচু করে বলে অরিয়ন।
–সেটা তো রোড এক্সিডেন্ট ছিলো। তাহলে…তাহলে অহনা আপুর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী হলাম কীভাবে?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিতা।
–অহনা…অহনা আমার থেকে দুই বছরের ছোট ছিল। সব সময় ছোট একটা বোনের আবদার করতো মায়ের কাছে। এরপর আবরার হলো। তাতে সে মন খারাপ করে ছিলো সারাদিন।
কথাগুলো বলতেই অরিয়নের ঠোঁটের কোণে আলতো এক হাসি ফুটে।
–এরপর তোর জন্ম হলো। তাতে সে বিশাল খুশি। সারাদিন আমাদের বাড়ি রেখে তোদের বাড়িতেই পড়ে থাকতো। তোকে লালনপালন করবে তাই।
কথাটা বলে একটু থামে অরিয়ন।
মিতা মনোযোগ দিয়ে সব শুনছে। তার মানে কেউ ছিলো যে মিতাকে সেভাবেই ভালোবাসতো যেভাবে মায়া চৌধুরী ভালোবাসে মিতাকে। নিজের মা-বাবার কিছুই মনে নেই মিতার। আছে শুধু কয়েকটা ছবি, যা দেখে তাদের চেহারা মনে রেখেছে মিতা।
–তোর বয়স তখন ৫। চাচ্চু আর চাচি মিলে ঠিক করেছে ঢাকা যাবেন বেড়াতে। চাচির এক আত্নীয়র বাসায়। অহনা বায়না ধরলো ও যাবে তোদের সাথে। বাবা আর মা অহনাকে না করতে পারেনি। তাই তোদের সাথে অহনাও গিয়েছিলো।
–তারপর?
জিজ্ঞেস করে মিতা।
–৩ দিন ঢাকায় থাকার পর গাড়ি করে ফিরছিলেন সবাই। চাচ্চু ড্রাইভ করছিলো..তুই আর অহনা পিছনে ছিলি। চাচ্চু আর চাচি সামনে….
বাকি কথাগুলো যেন অরিয়নের মুখ দিয়ে আসছে না। আটকে যাচ্ছে বার বার।
মিতা অপেক্ষা করছে। মনটা কেমন যেন আনচান করছে। অনবরত পা নাচিয়ে যাচ্ছে মিতা। কিছু একটা মাথায় ঘুরছে মিতার।
–এরপর?
অধৈর্য্য হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–কিছু একটা নিয়ে বায়না ধরেছিলি তুই। কিসের বায়না তা আমরা জানিনা। পেছনের সিট থেকে হঠাৎ করেই চাচ্চুর গলা জড়িয়ে ধরে কিছু বলছিলি তুই লাফাতে লাফাতে। হঠাৎ করে তোর এরকম করায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে চাচ্চু। কোনো মতেই তোর হাত ছাড়াতে পারছিলো না গলা থেকে। চাচ্চুর গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছিলো, তাই চাচ্চু আর চাচি মিলে তোর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই অপজিট থেকে গাড়ি চলে আসে। যা কেউ-ই লক্ষ্য করেনি। ক্ষণিকেই গাড়ি উলটে গেলো।
মানুষজন আসতে আসতে চাচ্চু আর চাচি স্পট ডেড। কিন্তু অহনা আর তুই বেঁচে ছিলি। উলটে যাওয়া গাড়ি থেকে অহনাকে বের করতে হাত বাড়িয়ে দিলে, আমার ছোট্ট অহনা…
কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অরিয়ন।
–আমার ১৫ বছরের ছোট বোনটি তোকে আগে তাদের হাতে তুলে দেয়। তোকে বের করে অহনার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আগেই গাড়ি ব্লাস্ট হয় সাথে সাথে। আমার ছোট্ট অহনা মারাত্মক ভাবে জখম হয়। শরীরের ৯০% পুড়ে গিয়েছিলো। আমরা খবর পেয়ে পাগললের মতো দৌড়ে হাসপাতালে গেলেও অহনাকে শুধু একবার শেষ জীবিত দেখতে পেয়েছিলাম।
–এক্সিডেন্ট কীভাবে হলো তা তদন্ত করতে গিয়ে গাড়ির ড্যাসক্যামে সব ধরা পড়ে। মা নিজের চোখে সবটা দেখেছিলো। এরপর থেকে…এরপর..
–এরপর থেকে আন্টি আর আমাকে দেখতে পারেনা। আমাকে দেখলেই তার ছোট্ট অহনার কথা মনে পড়ে।
দুঃখের এক হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–আমি শুধু অহনাকে আপুকেই মে*রে ফেলিনি। আমি আমার মা-বাবাকেও মেরে ফেলেছি।
কথাটা বলতেই হাসি ফুটে উঠে মিতার ঠোঁটে। কিন্তু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে মিতা।
— না না। এমন কিছুই না। তুই ছোট তখন পরী। তোর কোনো দোষ নেই।
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে বলে অরিয়ন।
–আমি আসলেই একটা অপয়া, অলক্ষি। যেখানে যাই সবার সুখ কেড়ে নেই।
বিরবির করে বলতে থাকে মিতা।
–এমন কিছুই না পরী। খবরদার এসব কিছু ভাববি না তুই।
রাগ হয়ে বলে অরিয়ন।
–কোথায় যাচ্ছিস?
বেড থেকে উঠে যেতে নিতেই মিতার হাত শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন।
–বাইরে। একটু খোলা বাতাস নিতে।
আনমনে বলে মিতা।
–কোথাও যেতে হবে না। এখানেই থাকবি তুই।
কঠোরভাবে বলে অরিয়ন।
–আমাকে আর আটকাতে পারবে না।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
মিতার এই কথাটা যেন অন্য কিছু বুঝালো। অবাক হয়ে হাত ছেড়ে দেয় অরিয়ন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিতার চোখে কিছু একটা খোজার চেষ্টা করে।
–মানে?
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–মানে আমি বাইরে যাবো।
কথাটা বলেই হাটা শুরু করে মিতা।
–পরী? পরী?
ডাকতে থাকে অরিয়ন।
মিতা যেন কিছুই শুনলো না। নিজের মতো করে হেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
–আরিয়াননননননননন..
চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।
–আরিয়াননননননননন…
আবারও চেঁচিয়ে উঠে।
–কী হয়েছে? কী হয়েছে?
তাড়াতাড়ি করে কেবিনে ঢুকে বলতে থাকে আবরার। চোখমুখে আতংক ফুটে উঠেছে।
–পরী কোথায়?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–এহ?
থতমত খেয়ে বলে আবরার।
–পরী কোথায়?
চিৎকার করে বলে অরিয়ন।
–শান্ত হ ভাইয়া। আছে পরী। বাইরেই আছে।
বলে আবরার।
–সত্যি…সত্যি বলছিস?
বুক চাপ দিয়ে ধরে বলে অরিয়ন। মনে হচ্ছে বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে।
–হ্যাঁ।
বলে অরিয়ন।
–ওকে দেখে রাখিস। কোথাও একা যেতে দিস না।
বিছানায় ধুপ করে শুয়ে পড়ে বলে অরিয়ন।
–তুমি এভাবে পাগলামি না করলেও পারতে, আনিকা।
বলে হাবিব চৌধুরী।
রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেতে এসেছে আনিকা চৌধুরী, হাবিব চৌধুরী ও মায়া চৌধুরী। মায়া চৌধুরী ওয়াশরুমে যেতেই সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
–পাগলামি? কি পাগলামি করেছি?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।
–মিতাকে দোষারোপ করার পাগলামি।
–ওর জন্য আমার অহনা আজ আমাদের মধ্যে নেই। ওর জন্য আমার অরিয়ন আজ মরতে মরতে বেঁচেছে তাও বলছো আমি পাগলামি করছি?
রাগে দাঁত কিরমির করে বলে আনিকা চৌধুরী।
–অহনার ব্যাপারটা শুধুই একটা দুর্ঘটনা ছিলো, আনিকা। ছোট একটা বাচ্চাকে তার জন্য দোষারোপ করতে পারো না তুমি। তুমি নিজের মেয়েকে হারিয়েছো, ও ওর মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে তা কি দেখতে পারছো না?
একটু নরম হয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–এই বাচ্চা যদি ওয়াসিমের গলা জড়িয়ে না ধরতো তাহলে এসব কিছুই হতো না।
রাগান্বিত আনিকা চৌধুরী বলে।
–আনিকা?
একটু উচ্চস্বরে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কী হাবিব? ঠিক আছে। অহনার টপিক না হয় দুর্ঘটনা ছিলো কিন্তু অরিয়নের ব্যাপারটা? সেটা নিয়ে কি বলবে তুমি? তুমি কি অস্বীকার করতে পারবে, আজ অরিয়নের এই অবস্থা শুধুমাত্র ঐ মেয়ের জন্য তা?
ঘৃণার চোখে বলে আনিকা চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরী কিছু বলতে গিয়েও বললো না। চুপ করে রইল। আনিকা যে এখন কথা শুনবার পর্যায়ে নেই তা ভালোই বুঝতে পারছেন তিনি। মায়া চৌধুরী টেবিলের সামনে আসতেই হালকা এক হাসি দেয় হাবিব চৌধুরী। মায়াও বিনিময়ে হাস ফিরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নাস্তার টেবিলে।
হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। যানজট পূর্ণ এই রাস্তাটাও আজ খালি খালি মনে হচ্ছে মিতার। আশেপাশে শতশত এই মানুষের মধ্যে কেউ মিতার আপনজন নয়।
নিজের মা-বাবা আজ বেঁচে নেই শুধু মাত্র মিতার ভুলে। ১৫ বছরের অহনা, যে সবেমাত্র তার জীবনটা দেখতে শুরু করেছিলো সেই এই পৃথিবীতে নেই শুধুমাত্র মিতার ভুলের কারণে। আনিকা চৌধুরী ভালো নেই কারণ তার অহনাকে কেড়ে নিয়েছে মিতা। আফরিন ভালো নেই কারণ তার আফনানকে কেড়ে নিয়েছে মিতা। নিজের থেকে নিজের মা বাবাকে কেড়ে নিয়েছে মিতা। কথাগুলো যেন ক্ষণিকের জন্যও ভুলতে পারছে না মিতা।
–উফ…প্রচন্ড ব্যাথা।
মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতেই নিজের দু হাত দিয়ে চুল টেনে ধরেছে মিতা।
“তুই একটা খু*নি”
“তুই অহনাকে খু*ন করেছিস”
“তোর জন্য তোর মা-বাবা আজ বেঁচে নেই”
“তোর জন্য আফরিন আর অরিয়ন আজ আলাদা”
“তোর জন্য আজ অরিয়ন ম*রতে বসেছিলো”
“তুই একটা খু*নি”
“তুই একটা খু*নি”
“খু*নি খু*নি খু*নি”
কথাগুলো মিতার মাথায় বার বার ঘুরছে। নিজের মন নিজেকেই দোষারোপ করছে।
পারমিতা পর্ব ৩৫
–না, না, না, না। আমি কিছু করিনি, আমি কিছু করিনি।
নিজের চুল শক্ত করে ধরে পাগলের মতো বারবার বলতে থাকে মিতা।
–আমি কিছু করিনি, আমি কিছু করিনি।
কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে মিতা।
–পারমিতা?
পেছন থেকে কেউ মিতার কাধে স্পর্শ করে মিতার পুরো নাম ধরে ডাক দেয়।
অপরিচিত কারো কন্ঠ শুনতেই পেছনের দিকে ফিরে তাকায় মিতা।