প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৬

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৬
মারশিয়া জাহান মেঘ

“ওগো শুনছ?”
ফারাবীর এমন ডাক শুনে ফিক করে হেসে ফেলে তোহা। ভেজা চুলে, খয়েরী রংয়ের শাড়িতে নতুন বউয়ের মাঝে যে অসীম সৌন্দর্য ফোটে উঠে, সবটুকু ফোটে উঠেছে তোহার মাঝে। ফারাবী, ড্রেসিংটেবিলের সামনে নিজের ভেজা চুল ঝারতে ঝাড়তে ঠিক করে নিচ্ছিলো, পেছনে তোহাকে হাসতে দেখে বলল,

“হাসছ কেন আমার বউ।”
“হাসব না? ওগো শুনছ বলেছেন যে!”
“ওগো শুনছ বলা বিগ ড্রিম ছিল বিয়ের আগে, বুঝেছ?”
“বুঝলাম। এখন কোথায় যাচ্ছেন শুনি?”
ফারাবী শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে বলল,
“একটু বাইরে যাচ্ছি, একটু সেজেগুজে থেকো, আমার ফ্রেন্ডরা আসবে দেখতে।”
“মেয়ে ফ্রেন্ড নাকি ছেলে ফ্রেন্ড?”
“দুটোই।”
মুহুর্তেই তোহার হাসিমুখ মলিন হয়ে এলো। বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনার অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড?”
ফারাবী গিয়ে জড়িয়ে ধরলো তোহাকে। শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমার বউয়ের কি জেলাস ফিল হচ্ছে?”
“নাতো, এমনিই বললাম।”
“মুখের ওই সুন্দর হাসিটা কোথায় গেল?”
“সবসময় হাসতে হবে?”
“আমার জীবনে থাকলে সবসময় হাসতেই হবে। তুমি বললে ১ টা কেন? হাজারটা মেয়ে ফ্রেন্ড ছাড়তে রাজি তোহা। কারণ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
তোহা হেসে ফারাবীকে জ’ড়ি’য়ে ধরে। তারপর বলল,
“আমিওতো আপনাকে ভালোবাসি।”
“তুমি থাকো, নিচে যাও, মায়ের সাথে গল্প করো। আমি আসছি।”

ফারাবী রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই তোহা হাসলো আপনমনে। ফারাবীকে আজ একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। অফ গ্রিন শার্ট, এ্যাশ কালার প্যান্ট, হাতে কালো ঘড়ি। সব মিলিয়ে পার্ফেক্ট। তোহার হঠাৎ মনে হলো, আভাকে একটা কল করা উচিৎ। সবটা জানানো উচিত। আর তার ভাইকে? লম্বা একটা ধন্যবাদ জানানো উচিৎ। তোহা ফোন হাতে নিতে যাবে, ঠিক তখনি দৃষ্টি যায় দেয়ালের একটা পিকে।
“একি! ফারাবী কোন মেয়েকে জ’ড়ি’য়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে?”
তোহা এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ছবিটার দিকে। ছবিতা হাতে নতেই কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। কি সুন্দরভাবে দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আছে। লারা? নাতো মেয়েটাতো লারাও নয়। লারাকেতো সে চিনে, দেখেছে।

“তোহা…”
পেছনে তাকায় তোহা। শ্বাশুড়ি মাকে দেখে চট করেই ছবিটা রেখে দেয় সে। জোরপূর্বক হেসে বলল,
“জি মা।”
“কাছে এসোতো মা।”
তোহা কাছে যায়। ফারাবীর মা হাত থেকে দুটো মোটা বালা খু’লে পড়িয়ে দেয় তোহার হাতে। তোহা অবাক স্বরে বলল,
“কি করছেন মা?”
“এই বালা জোড়া, আমার শাশুড়ী মা আমায় দিয়েছিলেন। আর আমি দিলাম আমার বউমাকে।”

আভা রান্না করতে করতে চিৎকার করে ডাকলো তাশরীফকে। তাশরীফ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,
“এত চিৎকার করছ কেন বিবিজান?”
নিমিষেই আভার গ’র’ম মেজাজ শীতল হয়ে গেল। এত সুন্দরভাবে কেউ ‘বিবিজান’ বললে কারই বা রাগ থাকে? আভা বুঝতে দিলো না কিছু। ক্ষীণ কন্ঠে বলল,
“শুনুন ডাক্তার সাহেব, আজ আমাদের বাড়ি থেকে মানুষ আসবে। আজ কোনো হসপিটালে যাওয়া চলবে না।”
“আসলে আসুক, আমি এইখানে থেকে কি করব? বাজারতো ফ্রিজে আছেই।”
“বাজার অবধিই শেষ? এই বাড়িতে মানুষ কি শুধু আমিই?”
“আমি কি বলেছি? মানুষ শুধু তুই। আমার পেশেন্টরা হসপিটালে বসে আছে। আমি না গেলে সমস্যা হবে না?”
“তাওতো বলছেন না, আজ একটু জলদি চলে আসব।”
তাশরীফ আভাকে পেছন থেকে জ’ড়ি’য়ে ধরে বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে, আজ একটু জলদি আসব বিবিজান।”
আভা মিনমিনিয়ে হেসে বলল,
“ছাড়ুন না, রান্না করতে দিন।”
“রান্নাতো পরে করলেও হবে। আমিতো আর একটু পর থাকব না। হসপিটালে চলে যাব না?”
“ডাক্তার সাহেব হঠাৎ এত রোমান্টিক হয়ে উঠল যে?”
“বিয়ের আগে ছিলাম দেবদাস, আর এখন রোমান্টিক হাসবেন্ড। তফাৎ আছে না বিবিজান?”
আভা হেসে বলল,
“তা একটু আছে বৈকি। অবশ্যই আছে। কিন্তু, হঠাৎ গম্ভীর থেকে রোমান্টিক, অবাককর না বিষয়টা?”
“ভালোবাসা সব পারে বুঝলেন বিবিজান?”
তাশরীফ গ্যাসটা বন্ধ করে বলল,

“উপরে চলুন আমার সাথে।”
আভা হতবাক হয়ে বলল,
“উপরতলায় কেন?”
“না মানে আমার একটু অন্যরকম পাচ্ছে।”
“অন্যরকম পাচ্ছে মানে? এই কি বলছেন আপনি এসব!”
“উফস চলোতো….”
“কেন, বলবেনতো? রান্নার গ্যাস নিভিয়ে দিলেন কেন? সরুনতো সরুন, আমাকে কাজ করতে দিন। সময় চলে যাচ্ছে। মানুষ আসবে।”
“চলো না….”
“আগে বলুন কেন?”
“খাবার থাকলে, ক্ষিদে পায়, সুন্দর পোশাক দেখলে পড়তে মন চায়। আর আপনাকে দেখলে আমার আদর আদর পায় বিবিজান।”

“কি হয়েছে বলবেতো? এমন করছ কেন আমার সাথে?”
“আপনি ছাড়ুনতো আমাকে। এসব ধরাধরি ভালো লাগছে না আমার।”
“স্বামী স্প’র্শ করলে স্ত্রীদের সৌন্দর্য বেড়ে যায়। জানো তুমি?”
ফারাবীর কথাতে কোমল হলো না তোহা। ভালো কথাও তিক্ত লাগছে তার। ফারাবী আসার পর থেকে তোহা ভালোভাবে কথা বলছে না ছেলেটার সাথে। ফারাবী যতবার কাছে টা’ন’ছে ততোবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে তোহা। ফারাবী এইবার আরও শ’ক্ত করে জ’ড়ি’য়ে ধরলো তোহাকে। বললো,
“কি হয়েছে না বললে, আমি কিভাবে বুঝব তোহা?”
“কিছু না হলে, আমি কিভাবে কিছু বলব?”
“তাহলে এমন ব্যবহার করছ কেন আমার সাথে?”
“আমি এমনই। দেখে বিয়ে করেননি?”
ফারাবী তোহাকে ছেড়ে বিছানায় বসে পড়ল। চোখ-মুখ মলিন করে ফেলেছে সে। কথায় কথায়, ‘দেখে বিয়ে করেননি?’ এই কথাটা কেন বলবে তোহা? ভালোবেসেছে বলেইতো বিয়ে করেছে। এক খোঁ’চা আর কত? তোহা বিছানায় কাঁথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। ফারাবী আর কথা বললো না। সেও চুপচাপ শুয়ে পড়ল পাশে। এই ভরদুপুরে তোহার কি হয়েছে তা সে অনেক ভেবেও বুঝতে পারলো না।
সন্ধ্যাবেলা…..

“ভাবী, কেমন আছেন?”
তোহা ঘুম থেকে উঠে বসতেই দেখতে পেলো একটা সুন্দর হাসির মেয়ে তার রুমে এসে উপস্থিত হলো। সে এই মেয়েটাকে কোথাও দেখেছে। হ্যাঁ, এইটাতো ওই ছবির মেয়েটা! তোহার কথাটি মনে পড়তেই সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“আপনি!…”
“আমি ফারহা, ফারাবী ভাইয়ার ছোট বোন।”
#যারা স্বল্প দামে কাউকে কিছু গিফট অথবা নিজের জন্য কিছু কিনতে চান, তারা আমার পেইজ : রূপঅঙ্গন By Megh ফলো দিয়ে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।

আভা হেসে হেসে কথা বলছিলো সবার সাথে। আজ তার মা, বোন তাদের বাসায় এসেছে৷ কতদিন পর এসেছে! মধ্য দিয়ে বিয়ের রিসেপশন করার কথা হলেও তা আর হয়ে উঠেনি ঝামেলায়। আর আভার মা,বাবা, বোনও আসতে পারেনি এর মধ্যে। এখন আর পাঁচটা স্বামী- স্ত্রীর মতই তাদের সংসার। আভা মাঝে মাঝে স্বস্তি পায় যে, তার আর তাশরীফের মাঝে সবটা ঠিক হয়ে গেছে ভেবে। তার বিশ্বাস ছিল, সবটা ঠিক হবে। কারণ, তাশরীফকে সে চিনতো। আর যাইহোক, এই ছেলেটা কখনো আভাকে কষ্ট পেতে দিবে না। রাত্রি বলল,
“তুই সুখীতো এইখানে আভা?”
“আপু, আমার ভয় হয় এইটা ভেবে, এত সুখ কপালে সইবেতো? এইবার ভাবো, আমি ঠিক কতটা সুখী। একটা মেয়ে, কতটা সুখী হলে এই কথাটা ভাবতে পারে।”
রাত্রি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি আভার ফোনে কল আসে। রাত্রি বলল,

“কে কল দিয়েছে?”
“ডাক্তার সাহেব।”
রাত্রি হেসে বলল,
“কথা বল।”
আভা বারান্দায় গিয়ে কল ধরলো। বলল,
“বলুন…”
“কি করছ বিবিজান?”
“বসে বসে কথা বলছি মা আর আপুর সাথে।”
“খেয়েছে ওরা?”
“হ্যাঁ, খেয়েছে। ১ ঘন্টা হলো আসলো। আপনি কখন আসবেন? আজ কিন্তু জলদি আসার কথা ছিল।”
“তাড়াতাড়িই আসব। তোহাকে কল দিয়েছ?”
“না, অনলাইনে নেই ওহ, আসলেই কল দিব।”

কথাটি বলতেই আভা অন্য কিছু একটা অনুভব করলো। সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“একটু পর কল দিচ্ছি ডাক্তার সাহেব।”
আভা দৌড়ে ওয়াশরুমে গেল। রাত্রি আর, আভার মা মেয়ের পেছন পেছন গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে আভা? শ’রী’র ঠিক আছেতো?”
আভা চোখে -মুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বলল,
“ব’মি পাচ্ছিলো মা।”
আভার মায়ে ঝলমলে হাসি। রাত্রি অবাক হয়ে বলল,
“তুমি হাসছ কেন মা?”
“আরে রাত্রি তুই খালামনি হতে যাচ্ছিস।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৫

রাত্রি খুশিতে জড়িয়ে ধরে বোনকে। আভা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়। সঙ্গে সঙ্গে বারান্দায় গিয়ে কল লাগালো তাশরীফকে। তাশরীফ ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই, এপাশ থেকে আভা বলল,
“আপনি বাবা হতে চলেছেন ডাক্তার সাহেব।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ শেষ পর্ব