আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩২
অবন্তিকা তৃপ্তি
ধ্রুব জবাবে বড় একটা নিঃশ্বাস নিজের মধ্যে টেনে নিল। হালকা শীতল বাতাস তার চুলের গোছা উড়িয়ে দিচ্ছিল। রাতের অন্ধকারে, ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় তার ধারালো চোখে কিসের এক অদ্ভুত তৃপ্ততা; মুগ্ধিত; তেমনি কণ্ঠটাও একরকম ভারী শোনালো——‘আই ডোন্ট নো! বাট আই অ্যাম ফিলিং লাইক… লাইক অ্যা স্কাই! সামথিং… সাম ফিলিং ইজ জাস্ট কিলিং মি, অদিতি! নিচে এসে একটা টাইট হাগ দিলে মেবি আই উইল ফিল বেটার?”
অদিতি ফোনের ওপাশে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। বুকের ধুকপুক বেড়ে যাচ্ছে! অস্থির তন-মন-রুহ! অধরে হাসি ফুটলো অযথাই! ধ্রুবর এমন স্বরে কথা বলা সে খুব কমই শুনেছে। ওর কণ্ঠের এই অতিরিক্ত ভারী টোন তার হৃদয়ের কোথাও যেন একটা বড়সড় কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে! অদিতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচু গলায় বলল——‘নিচে দারোয়ান আছে!’
ধ্রুব ভ্রু বাঁকালো, চোখ দুটো একটু সংকুচিত করে বললো —-‘সো হোয়াট?’
অদিতি একহাতে ওড়নার কোনা চেপে ধরে শ্বাস ফেলে; অপ্রস্তুত গলায় বলল——-‘যদি যেতে না দেয়?’
বলেই চোখ খিচে ফেলল! ধ্রুব এবার ভ্রু কুঁচকে ফেলল! পরপর ফোন কানে চেপে মাথাটা নামিয়ে নিঃশব্দে হেসে ফেলল! হাসি থামিয়ে; ভ্রু বাকিয়ে কথা বলে কৌতুক করে——-‘তাই? দারোয়ান আছে? দিনদিন চুড়ান্ত লেভেলের দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো, তোফাজ্জল হায়াতের ভদ্র-সভ্য মেয়ে! তুমি কিন্তু এতোও ভোলা নও, অ্যাই নো!’
ধ্রুব সুযোগ পেলেই বাবাকে টেনে আনে! বোঝা যাচ্ছে; ভবিষ্যতে খুব ভালো জামাই সে হবে না। অদিতি ঠোঁট ফুলিয়ে, কপট রাগ দেখিয়ে বলল——-‘মোটেও না! মিথ্যে জানেন আপনি!’
ধ্রুব এবার ভীষণ অবাক হওয়ার ভান করলো; সামান্য চেঁচিয়ে বললো—-‘ও? আচ্ছা?’
তারপর সোজা হয়ে দাড়িয়ে; থেমে থেমে, অদিতিকে লজ্জায় ডুবিয়ে এক্টিং করে বলে গেলো——‘ধ্রুব, ধ্রুব, বিয়ের পর আপনার সব হুডি আমার হয়ে যাবে…!’
তারপর থেমে; ভ্রু কুচকে—-‘এসব কে বলেছিল সেদিন?’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
অদিতি লজ্জায় মুখে ওড়না চেপে ধরেছে! ছিহ্! এসব কথা সেদিন না বললে কে পেটাত অদিতিকে? এখন লজ্জা পাচ্ছে! ধ্রুব ও কত বড় ফাজিল ছেলে; সেটা এখন হারে হারে বুঝছে অদিতি। ও লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেললো। একহাতে মুখের অর্ধেকটা হাত দিয়ে ঢেকে মিনমিন করে বলল——-‘আ…আমি বলিনি এসব!’
ধ্রুব হাসলো! আর লজ্জা দিল না টেলিফোনের অপাশের প্রেমিকাকে। হালকা স্বরে বললো——-‘ওকে, মেনে নিলাম বলোনি! এখন নিচে আসো! আই অ্যাম ওয়েটিং!’
তারপর ধ্রুব আর এক মুহূর্ত দেরি করল না, ফোন কেটে দিল!এখন কল না কাটলে এই মেয়ে কথা ঘুরাতেই থাকবে।
অদিতি ফোনের স্ক্রিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল; ঠোঁটের কোণে হাসি, পেটে বাটারফ্লাই উড়ছে যেন। যা সে থামানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু পারছিল না। লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে নিল ইশ! প্রেমে পড়া কতটা সুন্দর এক অনুভূতি! ইশ;ইশ, ইশ!
ওর মুখ ঢেকে হাসির শব্দ ঘুমন্ত তানিয়ার কানে যেতেই ও কম্বল মাথার উপর থেকে সরিয়ে বলল——-‘প্রেমের জোয়ারে ভাসা আমার রুমমেট। লাইট নিভিয়ে যা, আমি ঘুমাবো!”
অদিতি মুখ থেকে হাত সরিয়ে পেছনে তাকাল। তানিয়া চোখ বন্ধ করে আছে, কিন্তু ঠোঁটের কোণে সেই দুষ্টু হাসিটা ঠিকই লেগে আছে। অদিতি লজ্জা পাওয়া বন্ধ করে মুখ-চোখ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।
আলমারি খুলে একটা নীল রঙা শাল বের করল,মাথায় ওড়না দিয়ে; শাল দিয়ে পুরো গা ঢেকে নিল। একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিল— গালে একটু লালচে আভা ফুটে উঠেছে; লাজুকতা পুরো মুখ-জুড়ে! একটা গভীর শ্বাস নিল, নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। বেরিয়ে যাবে; তার আগে পেছন ফিরে সামনে ব্যাগে কাজল আর লিপস্টিক দেখে। কি মনে করে পিছিয়ে এসে কাজল চোঁহে লাগাল; গোলাপি রঙের লিপস্টিক হালকা করে ঠোটে দিয়ে দিল। আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিয়ে তারপর লাইট নিভিয়ে নিচে নেমে গেল।
দারোয়ান ওকে দেখেই সহাস্যে দরজা খুলে দিল! অদিতি অপ্রস্তুতভাবে তার দিকে তাকাল। পরপর তার পকেট থেকে এক হাজার টাকা উকি দিতেই যা বোঝার বুঝে গেল ও। প্রেম করার জন্যে মন্ত্রীর ছেলে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া করছে আজকাল।
ধ্রুব তখন রাস্তার ধারে একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, নেভি ব্লু হুডি পরে, তার দুই হাতে ছিল দুটো আইসক্রিম কোন। অদিতি ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। ধীর পায়ে একটু ইতস্তত করে প্রেমিকের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। পাশে অদিতির অস্তিত্ব উপলব্ধি করে ফিরে তাকালো ধ্রুব। অদিতি হাতের আইসক্রিমের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো——‘ঠান্ডায় আইসক্রিম খাচ্ছেন? জ্বর উঠবে আবার!’
ধ্রুব একদৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো অদিতির দিকে; জবাব এল ভারি গলার——-‘উঠলে উঠবে। কেয়ার করবে তখন। দায়িত্ব পালন করা এখন ঠেলেই শেখো তোফাজ্জল….”
অদিতি সঙ্গে সঙ্গেই ধ্রুবকে থামিয়ে দিয়ে বলল——-‘আমার বাবার সঙ্গে আপনার কোন জন্মের শ ত্রুতা একটু বলবেন? সবকিছুতে বাবাকে টানতেই হয় আপনার?’
ধ্রুবর চোখ-মুখ বদলে গেল্ক; বড় আফসোস নিয়ে বলল——‘তোমার বাবাই তো আমার সব সমস্যার মূল! তিনি আমাদের মেনে নিলেই আরো এক মাস আগে তুমি আমার বউ হয়ে যেতে! তারপর এই এক মাস আমরা একই রুম শেয়ার করতাম! একই টাওয়াল, একই বারান্দা, এন্ড অভিয়াসলি একই হুডি, এন্ড ফাইনালি একই বেড….”
আবার সেই এক হুডির লজ্জা! অদিতির চোখ বড়বড় হয়ে গেল! ধ্রুবর কথার মাঝখানেই সে দ্রুত বাড়িয়ে বলা ধ্রুবকে থামিয়ে দিয়ে বললো ——‘হয়েছে, বুঝেছি! আর বলা লাগবে না।’
ধ্রুব চোখ টিপে হাসল। এক হাতে আইসক্রিম অদিতির হাতে ধরিয়ে দিল, বলল——‘খাও!’
অদিতি গাল ফুলিয়ে আইসক্রিম ধরল। আইসক্রিম খেতে খেতে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল, এতক্ষণ আইসক্রিম খাওয়া বাদ দিয়ে ধ্রুব কেমন অন্যরকম চোখে তাকিয়ে রয়েছে। অদিতি আইসক্রিম খেতে খেতে বললো——-‘কি দেখেন? আইসক্রিম গলে যাচ্ছে আপনারটা!’
ধ্রুব উত্তরে ঠাণ্ডা গলায় বলল——‘ইউ নো, অদিতি? শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং!’
অদিতি ভ্রু কুঁচকালো——‘মানে?’
ধ্রুব এক মুহূর্তও দেরি করল না। দ্রুত নিজের আইসক্রিম অদিতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওরটা নিজে নিয়ে নিলো! অদিতি হাতে ধ্রুবর আস্ত না খাওয়া আইসক্রিম নিয়ে হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।
ধ্রুব এসবের ধার ধারে না; এক কামড়ে আইসক্রিম খেয়ে চোখ বন্ধ করে একদম তৃপ্তির শ্বাস ফেলল। তারপর চোখ খুলে ভ্রু বাকিয়ে বলল——-‘তোমার আইসক্রিমের ফ্লেভার জোস! একটা লিপস্টিক লিপস্টিক স্মেলও পাচ্ছি!”
অদিতি লজ্জায় মুখ অন্যপাশে সরিয়ে ফেলল! ধ্রুব বুঝতে পেরেছে, অদিতি সেজে এসেছে আজ! লজ্জায় আর তাকালো না ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব স্রেফ লজ্জা দেখল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আইসক্রিম খেতে খেতে অদিতির দৃষ্টি একটা গাজরার দোকানে আটকে গেল! অদিতি চেয়ে রইলো সেখানে।
ধ্রুব চুপচাপ ওর মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ করল। ওর চোখের দৃষ্টি লক্ষ করে পেছনে তাকালো। তারপরই যা বোঝার বুঝে গেল। ডাকলো ও——‘অদিতি?’
অদিতি চোখ সরিয়ে নিল! ধ্রুবর দিকে তাকালে; ধ্রুব ঠান্ডা গলায় স্রেফ বললো———-‘যা পছন্দ হয়; বলতে বলেছিলাম। বলিনি?’
অদিতি তাকিয়ে রইল; ——‘মানে?’
ধ্রুব এবার আইসক্রিমের খোসা রাস্তায় ফেলে অদিতির হাত চেপে ধরলো। টেনে নিয়ে যেতে লাগলো গাজরার দোকানের দিকে। অদিতি বুঝতে পেরে সঙ্গেসঙ্গে বললো ——‘আরে! আমার লাগবে না এসব! আমি তো এমনি এমনি….’
ধ্রুব শুনেনি। ও দোকানদারকে বললো——-‘সব রঙের কি বলে এসবকে…ওহ গাজরা; তিনটা করে দিন।’
অদিতি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল; ——-‘আল্লাহ! এতোগুলো কেন? এখানে তো অন্তত বিশটা হবেই!’
ধ্রুব নির্বিকারভাবে টাকা বের করে দোকানিকে দিলো। গাজরা একটা নিজেই হাতে নিয়ে অদিতির হাত টেনে পড়াতে পড়াতে বললো———‘আমি প্রেমিক হিসেবে মেইবি এক্সপেরিয়েন্সড না, অদিতি। জানি না গার্লফ্রেন্ডকে কীভাবে ট্রিট করতে হয়। এন্ড আমি চাই এই ব্যাপরেগুলোতে ইউ শুড হেল্প মি আউট!’
অদিতি নিঃশব্দে চেয়ে রইলো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব এক হাতে গাজরা নিয়ে অদিতির হাতে পরানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছুতেই কিছু মিলছিল না; এবার ও বিরক্ত হলো ভীষণ; ——-‘কি বা* এটা! কিভাবে পড়ায় এটা?’
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলার সাথেসাথে অদিতি ফিক করে হেসে ফেলল!ধ্রুব শাসালো——‘ডোন্ট লাফ! ডিস্ট্র্যাক্ট হচ্ছি!’
অদিতি এবার হাসতে হাসতে বলল——-‘দিন, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি!’ তারপর ও ধ্রুবকে শিখিয়ে দিল কিভাবে গাজরা পরাতে হয়। ধ্রুব ধীরে ধীরে শিখল, তারপর নিজে থেকে আরেকটা গাজরা নিয়ে অদিতির চুলে পরিয়ে দিল। তারপর ওকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে দেখে উজ্জল কণ্ঠে বলল——-‘পারফেক্ট!’
ধ্রুব-অদিতি রাস্তার এক কিনারা ধরে হাঁটছে! হাঁটার মধ্যেই হঠাৎ করে অদিতির পা মোচড় দিয়ে গেল। ব্যথায় ‘আহ্’ বলে রাস্তাতেই পা চেপে হাঁটু ভেঙে বসে গেলো! মুখ ব্যথাতে নীল হয়ে গেছে রীতিমত। ধ্রুব সাথে সাথে উদ্বিগ্ন হয়ে অদিতির পাশে বসে পরলো——‘আর ইউ অলরাইট? কী হয়েছে তোমার?’
অদিতি বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলছে; ——-‘আমার পা…’
ধ্রুব আর অপেক্ষা করে না; অস্থির হয়ে বলল———‘দেখি আমি! পা মোচকে গেছে মেইবি!’
বলে পায়ের গোড়ালির কাচের পায়জামার দিকে হাত বাড়াতেই অদিতি চমকে সরে গিয়ে বললো——-‘ঠিক আছি আমি! পায়ে হাত দিবেন না।’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেলল! অদিতি অস্বস্থিতে ভুগছে! সেটা দেখে ধ্রুব বলল———‘ওকে, ফাইন! হাঁটতে পারবে? ডক্টরের কাছে যেতে পারবে?’
ধ্রুব অদিতি বলল———‘ আমি ঠিকআছি! আপনি….’
‘যেতে পারবে কি না! হ্যা কি না?’ — ধ্রুব ঠান্ডা গলায় বলল!
অদিতি দমলো; হাল ছেড়ে মিনমিন করে বললো—-‘একটু হেল্প করলেই পারব!’
ধ্রুব অদিতিকে এবার পাজকোলে তুলে নেওয়ার জন্যে দুহাত বাড়াতেই; অদিতি চমকে দ্রুত বলে উঠলো——-‘এভাবে না ; এভাবে না!’
ধ্রুব সরে গিয়ে রেগে তাকাল; অদিতি ওই রাগী চোখ দেখে নিচু গলায় বললো—‘কেউ দেখবে ধ্রুব!’
ধ্রুব অন্যপাশে চেয়ে নিজের রাগের নিঃশ্বাস ছেড়ে সামলানো চেষ্টা করে, অদিতির দিকে তাকাল!
ধ্রুব ঠান্ডা গলায় বলল——‘ফাইন! হাত ধরতে তো প্রবলেম নেই? নাকি এটার জন্যে বিয়ে করা লাগবে! তাহলে চলো কাজী অফিসও সামনেই আছে।’
অদিতি চমকে দ্রুত মাথা নাড়াল; অর্থাৎ হাত ধরতে ওর সমস্যা নেই। ধ্রুব আস্তে করে অদিতির হাত ধরে উঠিয়ে নিল! এক মিনিটের হাঁটা রাস্তা পরেই হসপিটাল আছে একটা। ওটাতেই যাবে ওরা!
‘ওয়েসিস হসপিটাল’
ধ্রুব অদিতিকে চেয়ারে বসিয়ে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গেলো। গম্ভীর; হুডিতে ধ্রুবকে আসতে দেখে রিসিপশনের মেয়েটার আচার-আচরণই যেন বদলে গেলো! চুল ঠিক করে দ্রুত নিজেকে ঠিকঠাক করলো! দূর থেকে এই মেয়ের এমন আচরণ দেখেই মুহূর্তেই ভ্রু কুঁচকে গেলো অদিতির। ও তীক্ষ্ম চোখে মেয়েটাকে দেখে যেতে লাগলো।
অথচ ধ্রুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে রিসিপশনের মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে বলল——‘ডাক্তার অনিরুপ শেখ জয় আছেন আজকে?’
মেয়েটির চোখ হাসে; কণ্ঠে সবটাই মিষ্টি ঢেলে বললো——‘জি, আছেন!’
অদিতির চোখে মেয়েটাকে এই মুহূর্তে চুড়ান্ত বিশ্রী দেখাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাথার সবগুলো চুল টেনে ধরতে। ধ্রুবর সামনে এভাবে নেচে নেচে কথা বলার কি আছে? ধ্রুব কি ভুলেও ওর দিকে তাকাবে নাকি? অদিতি এবার ধ্রুবকে লক্ষ্য করলো!
ধ্রুব নিজের মতো করে গম্ভীর গলায় বলল——‘একটা টিকিট লাগবে।’
মেয়েটি হেসে হেসে বললো——-‘জি! আমি কল করে স্যারকে জানাচ্ছি।’
ধ্রুব টিকিট নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ধ্রুব অদিতির কাছে ফিরে এলো।পেছন থেকে ধ্রুবর ম্যানলি হাঁটা দেখে সেই রিসেপশনের মেয়েটির থুতনি ঝুলে গেলো; গালে হাত দিয়ে বলে ফেলল——‘উফ! হ্যান্ডসাম!’
অদিতির মুখ কুচকে গেল এমন কথায়! ও চোখ রাঙিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। পাশ থেকে অন্য আরেকটা মেয়ে অদিতিকে দেখে; ওই মেয়েকে বলল——-‘বেশি উড়িস না! গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে, তোর দিকে কেমনে তাকিয়ে আছে দেখ।’
অদিতি মেয়েটার দিকে চরমভাবে চোখ রাঙিয়ে তাকাল, তারপর ইচ্ছে করে হাতের গাজরা দেখিয়ে ঝাঁকালো; বোঝাল এই গাজরাটার মালিক হচ্ছে এই ছেলে! সঙ্গে এই হাতের মালিকও! চোখ রাঙাল।
ধ্রুব টিকিট নিয়ে অদিতির সামনে এসে দাড়ালো——‘ফুলগুলো পড়বে তো সব! এভাবে নাড়াচ্ছো কেন?’
অদিতি এক মূহুর্তের জন্য একটু থমকাল, তারপর অস্বস্তিতে গাজরা নাড়ানো থামিয়ে দিল। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে দিলো; ——-‘উঠে আসো!’
অদিতি এক মুহূর্তে ওই মেয়েটার দিকে তাকাল; পরপর ইচ্ছে করে ধ্রুবর হাত শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়াল! ধ্রুব এভাবে; এত গভীর ভাবে হাত ধরাতে কিছুটা অবাক হয়েছে! অদিতির চোখ লক্ষ করে পেছনে তাকাতেই এক মুহূর্তের জন্য ধ্রুব অবাক হলো; পরপর মাথাটা নিচু করে নিঃশব্দে হেসে ফেলল; ——-‘ চলো; যাই?’
ধ্রুব ও অদিতি কেবিনে ঢুকতেই, অনিরুপ মাথা তুলল! অদিতি-ধ্রুব চেয়ারে বসলো! অনিরূপ পুরো ডিটেইলস শুনলো ধ্রুবর থেকে। তারপর অদিতির দিকে চেয়ে বললো——-‘ আপনার পা দেখা লাগবে।পাজামা নীচ থেকে তোলা লাগবে।’
অদিতি এটা শুনে অস্বস্তি নিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো! ধ্রুব ওর অস্থিরতা বুঝে, দীর্ঘ নিঃশ্বাসে ছেড়ে, পরপর উঠে গিয়ে জানালার দিকে ফিরে দাঁড়াল।
অদিতির পা পরীক্ষা শেষে, অনিরুপ ধ্রুবকে ডাকল——-‘আপনি এসে বসতে পারেন!’
অদিতি মাথাটা নামিয়ে রেখেছে। ধ্রুব গিয়ে আগের জায়গায় বসলো! অনিরূপ বললো———‘ প্যাসেন্ট আপনার কে হয়?’
ধ্রুব এক মুহুর্ত দেরি না করে স্বাভাবিক গলায় বলল—-‘বউ!’
প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে অনিরুপের ঠোঁটের কোণে একটু হাসি দি। সে জানে, ধ্রুব মিথ্যা বলছে। অদিতি তখন অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রয়েছে।
অনিরূপ বললো——-‘আমার কাছে মনে হচ্ছে; আপনার স্ত্রীর পায়ের প্রপার ট্রিটমেন্ট দরকার। মিস অদিতি; পায়ে কি ছোটবেলায় ব্যথা পেয়েছিলেন?’
অদিতি মাথা নাড়ল——-‘ ছোটবেলায় গাড়ি এক্সিডেন্টে ওয় ভেঙ্গেছিলো একবার।’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেলল! অনিরূপ বলল——‘ যা আন্দাজ করেছিলাম। ধ্রুব, উনার এক্স-রে করিয়ে রিপোর্ট আমাকে দেখাবেন।’
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে উঠে দাড়ালো। অদিতির হাত ধরে ওকেও উঠে দাড়াতে হেল্প করলো। দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় অদিতি ফিসফিস করে বলল——-‘আমি আপনার বউ?’
ধ্রুব উত্তর দিল না!
অনিরুপ চেয়ারে হেলান দিয়ে পেছন ঘুরে বসে, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে ওর। ওহ; আশার আজ হসপিটাল আসার কথা ছিলো। অনিরুপ কল লাগাল আশাকে। রিং হচ্ছে; ওপাশ থেকে আশা কল রিসিভ হলো না। অনিরুপ আবার কল লাগায়! ওর কলের মধ্যেই কেউ ওর দরজায় টোকা দিল———‘মে আই কাম ইন?’
অনিরুদ্ধ আশাকে কল করতে করতে উত্তর দিল——-‘ইয়াহ, কাম ইন!’
আশা নিজের মোবাইলের দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে হাসল। কিন্তু ভেতরে ঢুকল না, বরং আবার নক করল——‘মে অ্যাই কাম ইন?’
একে তো আশাকে কলে পাচ্ছে না; তারউপর এই মেয়ে বারবার কাম ইন; কাম ইন বলে চেচাচ্ছে! অনিরুপ এবার আরও বিরক্ত হয়ে চেয়ারসমেত পেছন ফিরে তাকানোর আগেই বলল——‘ইয়াহ, কাম ই…’
অনিরূপ থমকে গেলো যেন। তার ওয়ান এন্ড অনলি ওয়াইফ আশা দরজায় খিল তুলে; সেই খিল তোলা দরজায় কোমর বাকিয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে লাগছে অস্থির, এক লাস্যময়ীর মতো, জেম অনিরূপকে দুহাতে নিজের দিকর আকৃষ্ট করে যাচ্ছে। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে। অনিরুপ বিস্ময়ে থমকে গেলো। আশা ওই থমকানো মুখ দেখে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে ভ্রু বাকাল!
এবার যেন অনিরুপের হুট করে গরম লাগতে শুরু করলো! সে আর নিজেকে সামলাতে পারল না, হাত দিয়ে টাইয়ের নট ঢিলে করতে করতে দুষ্টু হেসে বললো———‘উফ! কী হট!’
আশা হাসল! সোজা হয়ে দাড়িয়ে মডেলদের মত করে এগিয়ে আসতে লাগলো অনিরূপের দিকে। টেবিলের সামনে এসে তার দুহাত দিয়ে ঠেসে রাখতেই, অনিরুপ ঢোক গিলে তাকাল। আশা তার চোখে চোখ রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল——-‘ডক্টর সাবের পিপাসা পাচ্ছে বুঝি?’
অনিরু এবার আর আটকে রাখতে পারল না নিজেকে, দ্রুত উঠে দাঁড়ালো! পরপর আশাকে টেনে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে অস্থির গলায় বললো——-‘নিড সাম ড্রিংক! এ্যা হট ড্রিংক!’
বলেই চোখ টিপলো। আশা হাসলো,অনিরূপের বুকে ওর নরম হাত ঠেসে বললো—-— ‘বাসায় ড্রিংক থাকতে, এখানে কেন পরে আছেন? চলুন আমার সাথে।’
অনিরুপ নিঃশব্দ হাসি ফেলল! পরপর ভ্রু উঁচিয়ে——-‘বাসায় ড্রিংক আছে?’
আশা জবাবে বললো———‘ইয়াহ, এক্সপেন্সিভ ওয়ান!’
অনিরুপ যেন আকাশ থেকে পরল; এমনভাবে বললো——-‘আমার আনরোম্যান্টিক বউয়ের আজকের এ কি দশা! সূর্য কোন দিকে উঠছে সেটাই ভাবছি!’
আশা অনিরূপের বুকে চিমটি কেটে চোখ রাঙিয়ে তাকালো! কথা ঘুরিয়ে বলল——‘তুলি’র সঙ্গে কথা হয়েছে, টেস্ট করাবো। আপনি যাবেন আমার সঙ্গে?’
অনিরূপ ঘড়ি দেখে বলল———‘এখন যদি যাই, তাহলে তোমার সঙ্গে একসঙ্গে বাড়ি ফিরতে পারব না! বাট অ্যাই নিড ড্রিংক অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল!’
আশা এবার লাজুক হেসে বললো———তাহলে আমি করিয়ে আসি? একসঙ্গে নাহয় বাসায় ফেরা যাক!’
অনিরুপ হাসল, আশার কপালে চুমু খেয়ে সে ফিসফিস করে বললো——-‘টেস্ট পজিটিভ এলে, আমাকে সবার আগে জানাবেন ম্যাডাম। স্বামী হই কিন্তু আপনার।’
গাইনকোলজিস্ট ড. প্রত্যাশা হোসেন তুলি নিয়ামত চেম্বার করে এই হাসপাতালে। আশা তার কেবিনের দরজায় নক করল——-‘তুলি আসব?’
তুলি রিপোর্ট দেখছিল, মাথা তুলে আশাকে দেখে ও একগাল হেসে বলল——-‘আসো, আসো! ডক্টর সাহেবের বউ।’
আশা হেসে গিয়ে চেয়ারে বসল! তুলি রিপোর্ট একপাশে ঠেলে রেখে পুরো মনোযোগ দিলো আশাকে, বলল———‘কিট দিয়ে পরীক্ষা করেও শিউর হচ্ছো না এখনও! কেন?’
আশা বললো——-‘কিট মাঝে মাঝে ফলস রেজাল্ট দেয়! আমি এবার তাকে আশাহত করতে চাইছি না।’
তুলি হাসলো, চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল— ‘চলো আমার সাথে! টেস্ট করিয়ে নেই!’
টেস্ট করানো শেষ হয়েছে! আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে আশার প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ এসেছে! তুলি রিপোর্ট আবার দেখতে দেখতে হেসে বলল— ‘খুশি এবার? আমি কি তোমার বাচ্চার দাই–মা হব, আগেই হলে রাখলাম!’
আশার চোখ-মুখ হাসছে যেন। অদ্ভুত এক তৃপ্ততা মুহূর্তেই ছড়িয়ে গেছে মুখ শরীর-জুড়ে! ও উত্তর দিল——-‘সে তোমকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাসও করবে না আমার ডেলিভারির ব্যাপারে!’
তুলি মুচকি হাসল——‘অনিরূপ ভাই আসলেই তোমার প্রেম পাগল হয়ে গেছে! শুভ্র স্যার তো প্রায়ই বলে, উনার কথ। কী ছিলেন, আর কী হয়ে গেছে তোমার স্বামী।’’
আশা এ কথায় ভাব দেখিয়ে বলল——-‘এটা হচ্ছে আমার হাতের খেল! বাঁকা কে একদম সোজা করার পন্থা আমার জানা আছে!’
আশা-তুলি দুজনেই হেসে ফেলে! হঠাৎ তুলির ফোন বাজল; শুভ্রর কল দেখে তুলি কল রিসিভ করল! সালাম দিতেই ওপাশ থেকে বলা হলো——‘তোমার শেষ’
তুলি উত্তর দিল—‘ প্রায় শেষ। আশা এসেছিল।’
শুভ্র এটা শুনে হেসে; কৌতুক করে বললো——‘কি ব্যাপার? তাহাদের কি আশা পূর্ণ হচ্ছে?’
তুলি আশার দিকে চেয়ে উত্তর দিল— ‘ইয়াহ! আশা প্রেগন্যান্ট!’
আশা লাউডস্পিকারে দিল! শুভ্র খুশিতে উচ্ছাস নিয়ে হেসে বলল—‘বন্ধু, বাবা হচ্ছে, এটা কি জানে সে? কী ভাবি, জানাব?’
শুভ্র একথা বলতেই; আশা লাজুক হেসে বলল— ‘আমি নিজে তাকে জানাব! ততক্ষণ তড়পাতে থাকুক!’
শুভ্র মেনে নিলো, বলল— ‘বন্ধুর কষ্ট তো আর চোখে দেখা যাচ্ছে না!তবে আপনি যা বলবেন! তুলি, শুনো।’
তুলি আবার ফোন সাইলেন্ট করলো!ফোন কানে লাগাতেই, শুভ্র ফিসফিস করে বলল— ‘আজকে আম্মুকে বলে দিয়েছি; মেয়ে আম্মুর ঘরে ঘুমাবে। তুমি ওকে ভুলেও আনতে যাবে না আজ আমাদের ঘরে!”
শুভ্র যেন শাসালো! তুলি লজ্জায় শেষ! তবুও মিছে রাগ দেখিয়ে বলল——-‘মেয়ে আমাদের ছাড়া কখনও ঘুমায়নি! আপনি সবসময়….”
শুভ্র ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল— ‘অভ্যাস করতে হবে তো! এভাবে কয়দিন আমি উপোস থাকবো? দয়া করো তুলি! ভেবে দেখো; আমার মেয়েরও তো ভাই-বোন দরকার!”
ভাই-বোন! তুলির নিজেরও তো ইচ্ছে ও আবার মা হবে। কিন্তু শুভ্রকে সেটা বুঝতে না দিয়ে তুলি লজ্জা পেয়ে বলল— ‘উহু! আমি আমার মেয়েকে নিয়েই পূর্ণ!’
শুভ্র তারাহুড়ো দেখিয়ে বলল— ‘আমিও পূর্ণ! তবে আমাদের একটা ছেলেও দরকার! যেন আমাদের ঝগড়া হলে; আমাদের দুজনের পক্ষই ভারী থাকে!’
তুলি হাসে! মানুষটা এত উন্মাদ কেন? কই যাবে তুলি একে নিয়ে? শুভ্র আবারও ফিসফিস করে বলল— ‘মনে থাকে যেন! আজকের রাত আমাদের দুজনের হবে শুধু!’
তুলি লাজুক হাসল! কেশে কথা ঘুরিয়ে বলল— ‘আমাকে নিতে আসবেন আপনি? আমার প্রায় প্যাশেন্ট শেষের দিকে!’
শুভ্র ঘড়ি দেখে নিয়ে অবাক হয়ে বললো——-“ও গড! আজকে এতো তাড়াতাড়ি শেষ! রাতটা দীর্ঘ পাবো মনে হচ্ছে! অ্যাই অ্যাম কামিং. ওয়েট ফর মি!’
তুলি হাসে! লজ্জা পেয়ে নিচু গলায় শুধু বলল— ‘আসুন!’
কল কাটল! তুলির রিপোর্ট দেখছে;তার চোখে-মুখে লাজুকতা! আশা ওকে বকা চোখে দেখতেই আছে। তুলি চেয়েও নিজের মুখের রক্তিম আভা সরাতে পারছে না এক-ফোটা! আশা এবার টিপ্পনি কেটে বললো——-‘বাহ! শুভ্র ভাই কল কাটার পর থেকে তার বৌর মুখ থেকে হাসি সরছে না এখন! কি বললেন আপনার জামাই?
তুলি কি বলবে? নিজেও কম যায় নাকি! টিপ্পনি কেটে বলল——-‘আজকের রাতে আপনাদের মুখ থেকেও হাসি সরবে না! সেসব কথা তুলবো এখন?’
আশা হাসে! লজ্জিত ভঙ্গিতে শাড়ির আঁচল ঠিক করে মুখ অন্যপাশে ঘুরিয়ে ফেলে। তুলি সেটা দেখে শব্দ করে হেসে উঠল।
___________
এক্সরের রিপোর্ট হাতে ধ্রুব রাস্তার কিনার ধরে হাঁটছে! পাশেই অদিতি ভিতু ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে ধ্রুবকে দেখছে! হসপিটাল থেকে বের হবার পর থেকেই ধ্রুব ভীষণ নীরব হয়ে আছে! এখন অব্দি একটা কথাও বলেনি। অদিতির ধ্রুবর এসব নিরবতা একটুও সহ্য হচ্ছে না! একপর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে অদিতি দুহাতে ধ্রুবর পেটানো বাম হাতটা টেনে ধরল! ধ্রুব পা থামলো; কিন্তু পেছনে ফিরে অদিতিকে দেখলোও না একবারের জন্যেও! অদিতি ভাঙা গলায় ডাকলো——‘ধ্রুব! এদিকে তাকান না!’
ধ্রুব তাকাল না; অদিতি এবার আরও শক্ত ভঙ্গিতে টেনে ধরল ধ্রুবর হুডির হাতা! এবার ফিরে তাকাল ধ্রুব! স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অদিতিকে দেখতে থাকল! অদিতি ওই চোখ দেখে চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলল ——‘সরি; এটা লুকানোর জন্যে! আমি চাইছিলাম না আপনি অযথা এসব জানেন।তাছাড়া আমি তো এখন ফাইন আছি! এই দেখুন পা-ও নাড়াতে পারছি।’
বলে পা নাড়িয়ে দেখাতে গেলো অদিতি; পরপরই চোখ- মুখ কুচকে ব্যথায় ঠোট চেপে ধরলো! ধ্রুব ভ্রু বাকিয়ে তাকাল; স্বাভাবিক চোখ ওর! অদিতি আস্তে করে পা মাটিতে রাখল; অপ্রস্তুত গলায় বললো ——‘সরি!’
আবার এই সরি! ধ্রুব এবার বিরক্ত হয়ে বলল ——‘আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারি অদিতি! কিন্তু বিয়ে করা ছাড়া কি আমি তোমার ব্যাপারে কিছুই জানতে পারিনা? আমার সেই রাইট নেই? তোমার পা ভালো না; ডক্টর জয় নিজে আমাকে ডেকে বলেছে! তোমার প্রপার ট্রিটমেন্ট দরকার পায়ের! এত ইম্পর্টান্ট কথা তুমি লুকাও কিভাবে আমার থেকে? অ্যানবিলিভেবল!’
অদিতি চুপ হয়ে গেলো; বলার চেষ্টা করলো কিছু ——‘আমি…আমি বলতে চেয়েছি—-‘
হঠাৎ অদিতির কথার মাঝখানে ওদের পাশ থেকে একটা মেয়ে পাশ কেটে চলে গেলো! অদিতির পেছন ফিরে ওই মেয়ের দিকে তাকাল; পেছন পেছন আরেকটা ছেলো বড়বড় পা ফেলে এগুচ্ছে! ছেলেটার চোখে রাগ; জেদ! অদিতি হা হয়ে দেখতে থাকল ছেলে-মেয়ে দুটোকে!
সাইদ গিয়ে সরাদরি হৈমির হাত পেছন থেকে টেনে ধরল! হৈমি রেগে পেছন ফিরে তাকাল! ওর চোখে জল চলে এসেছে রীতিমত! সাইদ হৈমির চোখে পানি দেখে একপ্রকার হতবম্ব হয়ে গেলো। চেঁচিয়ে বললো ——‘গড, হুয়াই আর ইউ ক্রাইং? বাচ্চা কি হবে না নাকি কোনোদিন! ছোট একটা বিষয় নিয়ে এত ত্যাড়ামো ভালো লাগে না আমার হৈমি।’
হৈমি সাইদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দুহাতে চোখ মুছলো ; মাথাটা নিচু করে নাক টেনেটেনে বললো——-‘আমি সব শুনেছি ডক্টর কি বলেছে! বাচ্চা না হলে আপনি ছেড়ে দিবেন আমাকে ; সব জানি আমি! মাইশা ভাবি বলেছে আমাকে!’
সাইদ হতবম্ব! কি ভাবছে হৈমি ওকে নিয়ে? ও কোথাও; ঠিক কোন জায়গায় ভালোবাসার খামতি রেখে দিয়েছে?
সাইদ অন্যদিকে চেয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে আবার চক্ষু লাল করে হৈমির দিকে ফিরল! খিঁচিয়ে খিচিয়ে বলল ——‘ওকে ফাইন! তোর বাচ্চার গুষ্টি কিলাই আমি! আজকে রাতের আদর তুই সারাজীবন মনে রাখবি! যতক্ষণ পর্যন্ত তুই কনসিভ না করছিস; ততক্ষণ অব্দি আমি সাইদের হাত থেকে তোর নিস্তার নেই! লেটস গো!’
বলে আচমকা পাজকোলে তুলে নিল হৈমিকে! হৈমি দুহাতে ভয় পেয়ে সাইদের গলা জড়িয়ে ধরে! ভয়ার্ত চোখে; বড়বড় চোখে সাইদের দিকে চেয়ে দেখে! সাইদের চোখ-মুখে রাগের ফুলকি ঝরছে! হৈমি বুঝতে পারে- সে ভুল মানুষের সঙ্গে পাঙা নিয়েছে! কি হবে এখন! খোদাতালা রহম না করলে আজকে সাইদের হাত থেকে হৈমিকে কেউ বাঁচাতে পারবে না!
হৈমি ভয়ার্ত গলায় বলার চেষ্টা করলো কিছু——-‘আপনি…আমি এসব মিন করিন…’
‘জাস্ট শাট অ্যাপ! আমি তোকে ছেড়ে দিবে জাস্ট বিকজ অফ একটা বেবির জন্যে- এটা বলার আগে তোর ভাবা উচিত ছিলো! নাও অ্যাই হ্যাভ নো আদার অপশনস!’ —- সাইদ হৈমিকে কোলে নিয়ে বড়বড় পা ফেলে গাড়িতে বসিয়ে দিল!
পুরো ব্যাপারটা ধ্রুব-অদিতির নজরে থাকলো! অদিতি ওদের এসব কথা; কোলে তোলা দেখে ঠোট চেপে চুড়ান্ত লজ্জায় অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে নিল! ধ্রুবর এসব দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে কেন যেন। ও দুষ্টু হেসে আড়চোখে অদিতিকে দেখল! তারপর কি মনে করে অদিতির দিকে ঝুঁকে এসে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো———‘কি ব্যাপার তোফাজ্জল হায়াতের ভদ্র কন্যা! কাউকে দেখে আপনার মধ্যেও কিছু-মিছু হচ্ছে নাকি?’
আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩১
ইস!অদিতি লজ্জায় যেন মাটির নিচে ঢুকে যাবে! ও মিছে রাগ দেখিয়ে চোখ রাঙালো ধ্রুবকে!
ধ্রুব ওই তাকানো দেখে ভয় পাওয়ার ভান করে বুকের বা পাশে হাত চেপে মাথাটা হালকা পিছিয়ে নিয়ে আতঙ্কিত গলায় বললো——‘অপস! ই্যয়ুর আইজ ইজ স্ক্যারিং মি! ডোন্ট গিভ মি দিস লুক!’
অদিতি হেসে ফেলল ধ্রুবর বাড়তি অভিনয়-টুকু দেখে!