রেড রোজ ২ পর্ব ২৮
ফারহানা নিঝুম
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, মানুষজনের ভিড় জমেছে রাস্তা ঘাটে। কেউ চলেছে বাড়ির পথে,কেউ এমনি হাঁটতে বের হয়েছে,কেউ বা অফিস থেকে ফিরেছে।
“ব্রো প্লিজ চল আমরা যাই, অনেক দিন হলো এন’জ’য় করি না।”
কিছুক্ষণ আগেই ঐশ্বর্যের ক্লোজ ফ্রেন্ড হ্যারি কল করেছে। সবাই কে বলেছে ওর পার্টিতে আসতে। একটা বড়সড় পার্টি থ্রু করেছে সে, কিন্তু ঐশ্বর্যের ইচ্ছে নেই । এদিকে জিসান আর কেয় চেপে ধরেছে যাবে বলে।
কেয়া অসহায় ফেইস নিয়ে বললো।
“প্লিজ ইয়ার রিক চল না যাই!”
ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“ওকে ওকে যাবো।”
উৎসা তখনই ভেতরে এলো। হাতে তার নুডুলস এর বাটি,সবে কলেজ থেকে ফিরেছে একটু আগে।খিদে পেয়েছে তার , কিন্তু এত গুলো মানুষের সামনে খেতে কেমন জানো লাগছে?
“মিস বাংলাদেশী কাম।”
উৎসা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো, ঐশ্বর্য ওর ট্রি শার্ট টেনে পাশে বসিয়ে দিল। উৎসা আড় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে, অস’ভ্য রিক চৌধুরী সবসময় অস’ভ্যতামো করে।
“কিউট গার্ল তুমিও যাবে তো!”
উৎসা এক চামচ নুডুলস মুখে তুলে বললো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“কোথায়?”
জিসান বলে উঠে।
“আমরা আজ বিকেলে পার্টিতে যাচ্ছি। আমাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড অনেক দিন পর একটা পার্টি থ্রু করেছে তাই।”
উৎসার মুখটা মূহুর্তে মলিন হয়ে গেল।
“আমি ওখানে গিয়ে কী করব বলো তো ভাইয়া আপু? আমি কী ওখানে কাউকে চিনি?
উৎসা আড় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে, মুখটা মূহুর্তে চুপসে গেল। ঐশ্বর্য কেমন ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। উৎসা আর কিছু বললো না,তবে আরো এক চামচ নুডুলস মুখে তুলতে যাবে, তখনই ঐশ্বর্য হাত টেনে নিজের মুখে নিয়ে নিল। উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, কেয়া মিটিমিটি হেসে বললো।
“হাউ কিউট!”
উৎসা ভিমড়ি খেল, জিসান শব্দ করে হেসে উঠলো। উৎসা বাটি নিয়ে পাশে কমফোর্ট জোনে চলে গেল।
সময়টা খুব বিরক্তিকর ভাবেই পাড় করছে রুদ্র।কেয়া কে মিস করছে, একটু বেশি মিস করছে সে।
পড়ন্ত বিকেল,পাখিরা ফিরছে নিজেদের নীড়ে।আকাশ কিছুটা রঙ পাল্টেছে হয়তো, ওই যে সাদার মধ্যে কিছুটা লালচে আভা ছড়িয়ে আছে! সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছে রুদ্র,সবে এসে সোফায় বসলো।নিকি ভাই কে ক্লান্ত দেখে ঠান্ডা পানি এনে দিলো।
মিহিও খাবার টেবিলে দিয়ে দিয়েছে। রুদ্রর কাছাকাছি এসে বলে।
“ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো।
রুদ্র মিহি কে পাশে বসতে বলে,মিহি পাশে বসলো।
“কিছু বলবে ভাইয়া?”
রুদ্র শান্ত কন্ঠে বোঝানোর ন্যায় বলে উঠলো।
“দেখ মিহি যা হয়েছে তা ভুলে যা।আমরা চাই তুই নিজের জীবন টা আবার নতুন করে শুরু কর।”
নিকিও এসে ওদের পাশে বসলো।
“হ্যা মিহি এটাই করা উচিত।যে তোকে নিয়ে ভাবে না তার কথা নিয়ে তাকে নিয়ে কেনো ভাববি?”
মিহি মলিন হাসলো, রুদ্র ফের বললো।
“তোর ভালোর জন্য আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মিহি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,ঠিক সেই মূহূর্তে দুতলা থেকে নিচে নেমে এলো আফসানা। ওদের কথোপকথন শুনে দাঁড়িয়ে গেল।
“কী সিদ্ধান্ত ভাইয়া?”
রুদ্র শব্দ বিহিন হাসলো।
“আমরা ভেবেছি কাল থেকে তুই আমাদের সঙ্গে অফিসে যাবি। এখন থেকে তুই নিকি আর আমি, আমরা তিনজন মিলে অফিসের কাজ সামলাব।”
মিহি অবাক নয়নে তাকালো।
“কী বলছো ভাইয়া? আমি কী পারবো?”
নিকি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
“কেন পারবি না?আমরা দেখিয়ে দেব!”
আফসানা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে চেঁচিয়ে উঠলো।
“রুদ্র!”
রুদ্র উঠে দাঁড়ালো, হঠাৎ আফসানার রাগের কারণ বুঝতে পারলো না কেউই!
আফসানা অ’গ্নি চোখে তাকায় মিহির দিকে। হিসহিসিয়ে বলল।
“ও অফিস জয়েন করবে মানে?কী হচ্ছে এসব?”
নিকি বিরক্ত নিয়ে বললো।
“কী হয়েছে মা তাতে?মিহি যেহেতু বসেই থাকে তাহলে আমাদের সঙ্গে অফিসে গেলে কী হবে?”
আফসানা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠেন।
“অনেক কিছুই হবে, আমি চাই না এই মেয়ে অফিসে যাক।”
রুদ্র নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে।
“দেখো মা প্লিজ তুমি দয়া করে একটু থামো।ও অফিসে গেলে তোমার কী প্রবলেম? আমি তো ওইটাই বুঝতে পারছি না!”
“একদম চুপ রুদ্র, আমি বলেছি তাই যাবে না।দুই বোন মিলে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।”
নিকি কিছু বলতে গিয়েও পারলো না, মিহি থাকে থামিয়ে দিল।
“আমি যাবো না অফিসে, নিকি, ভাইয়া প্লিজ তোমরা জোর করো না।”
রুদ্র বেশ কড়া ভাবেই বললো।
“আমি যখন বলেছি তুই যাবি তার মানে যাবি। কথাটা মনে থাকে যেনো।”
রুদ্র হনহনিয়ে উপরের দিকে যেতে লাগলো, আফসানা চেঁচিয়ে উঠলো।
“রুদ্র! রুদ্র দাঁড়া।”
রুদ্র থামলো না, চলে গেল নিজের রুমে। রুমে এসে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়েছে, ক্লান্ত শরীর টা এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। লম্বা নিঃশ্বাস টেনে ফোন তুলে নিল,এই মূহুর্তে ভীষণ ভাবে ইচ্ছে করছে কেয়ার সঙ্গে কথা বলতে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ,ফটাফট নিকির নাম্বারে কল করলো রুদ্র।
হোম থেকে বেরিয়েছে কেয়া, আপাতত গন্তব্য ঐশ্বর্যের বাড়ি। আজকে তো ওদের পার্টি আছে ,কেয়া একে বারে রেডি হয়েই বেরিয়েছে। ওয়ের্স্টান ড্রেসে বেশ মানিয়েছে, হালকা মেকআপ,হাতে মিনি পার্স।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠল,কেয়া অচেনা নাম্বার দেখে ভ্রু যোগল মৃদু কুঁচকে নিল। রিং হতে হতে কে টে গেল।
রুদ্র থামলো না, আবার কল করলো। কেয়া রিসিভ করে।
“হ্যালো হো ইজ সেয়িং?”
“হাই মিস সিনিয়র!”
কেয়া থমকে গেল,ফোন কান থেকে নামিয়ে নাম্বার টা দেখে নিল।
“মিস্টার হ্যান্ডসাম?”
“হুঁ হুঁ।”
“হঠাৎ কল করলেন যে?”
রুদ্র উঠে বসলো বিছানায়, লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলে।
“স্যরি কেয়া, আমি তোমাকে অনেক হার্ট করেছি আই নো।”
কেয়া মেকি রাগ দেখিয়ে বললো।
“কিসের স্যরি?লিসেন আমি স্যরি এক্সেপ্ট করছি না।”
রুদ্র চিন্তিত হলো।
“তাহলে কী করব?”
কেয়া মিটিমিটি হাসলো,তবে তা বুঝতে দিল না রুদ্র কে।
“আপনি জার্মানি চলে আসুন, এরপর স্যরি এক্সেপ্ট করব।”
রুদ্র বেশ অবাক হলো।
“সিরিয়াসলি?”
“অফকোর্স, আপনার কী মনে হয় সিরিয়াস মুডে মজা করছি?”
রুদ্র কিছু বললো না।কেয়া বলে উঠে।
“ভেবে দেখুন লাস্ট চান্স, ওকে বাই।”
কেয়া ফোন রেখে দিল। রুদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
নেভি ব্লু কালারের ওয়ের্স্টান ড্রেসে সেজেছে উৎসা।এই প্রথম এরকম ড্রেস পড়েছে সে,তাও আবার ঐশ্বর্যের জোরাজুরির জন্য।
একটি স্লিম ফিটেড ব্লেজার পরেছে, যা উৎসার ব্যক্তিত্বকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। ক্লাসিক কালো, ব্লেজারের নিচে একটি সাদা টপ। তার জিন্স একেবারে ট্রেন্ডি স্টাইলের, যা কনফিডেন্স ফুটিয়ে তোলেছে, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে উৎসা কে। পায়ে হিল এবং একটি কালো ফিতে বাধা।
চুল ভীষণ মসৃণ স্ট্রেইট করা এবং হালকা বাদামি কার্ল করা, যা কাঁধ ছাড়িয়ে নিচে আলতো করে পড়েছে। মেকআপ হালকা কিন্তু নিখুঁত, ঠোঁটে ন্যু’ড লিপস্টিকের টাচ। চোখে স্মোকি আই মেকআপ এবং কানে ছোট হুপ ইয়ারিংস।
উৎসার ভঙ্গিমা স্বাভাবিক, নিজেকে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় পরখ করে নিল।বেশ লাগছে তাকে, ঠোঁট জোড়া বিস্তির্ণ হয়ে আছে।
ডোরের কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য,উৎসা পিছন ঘুরে চমকে গেল।
“আপনি দাঁড়িয়ে?”
পরণে ফিটেড হেলনি ট্রি শার্ট ,ফেডেড জিন্স।পায়ে হোয়াইট স্নিকোর্স ,ডান হাতে একটি ব্র্যান্ডের ওয়াচ। ঐশ্বর্যের সিল্কি চুল গুলো ছড়িয়ে আছে,বেশ দারুণ লাগছে তাকে।মুখ জুড়ে চাপ দাড়ি , উৎসা ঐশ্বর্য কে দেখে কিছুটা চমকালো।লোকটা দারুণ সুদর্শন।
“মে আই?”
ঐশ্বর্যের কথার মানে বুঝতে পারলো না উৎসা,চোখ উঁচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো, ঐশ্বর্য ধীর গতিতে এগিয়ে এসে আকস্মিক উৎসা কে চেপে ধরে নিজের বুকে। উৎসা বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী ছাড়ুন বলছি।”
“ওয়েট।”
ঐশ্বর্যের কথায় বিরক্ত লাগছে তার, ঐশ্বর্য খুব সুন্দর ভাবে উৎসার চিবুক মুখে পুরে নিল। উৎসা স্তম্ভ হয়ে গেল,ব্যথা পাচ্ছে। কিন্তু তাতে ঐশ্বর্যের কী এসে যায়? ঐশ্বর্য চিবুকে অনেক গুলো চুমু খেল।
“উফ্ রোজ আই ফিল সামথিং সামথিং।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
“ফাজিল লোক আমি আপনাকে!”
“আই….
উৎসা থেমে গেল,সে হয়তো ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড শুনতে চাইছে। অথচ ঐশ্বর্য বললো না।
“বেইবি কাম।”
উৎসা গঢগঢ করে বেরিয়ে গেল। ঐশ্বর্য ডোর লক করে বের হয়।
গাড়ি চলেছে আপন গতিতে, উৎসা বাইরের দিকে তাকাচ্ছে। রাতের এই বার্লিন শহর অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।
ঐশ্বর্য ড্রাইভ করতে করতে আড় চোখে তাকাচ্ছে উৎসার দিকে। মেয়েটা কে দারুণ লাগছে, উফ্ তার রোজ এতটা কিউট কেন? ঐশ্বর্য প্রেমে পড়ে, হ্যা সে নিজের কাছে স্বীকার করছে। ঐশ্বর্য উৎসার প্রেমে পড়েছে, সেই ছোট বেলায়। কিন্তু তা তো রোজের কাছে এগ্রি করা যাবে না!
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো, আচমকা চোখে পড়ল ঐশ্বর্যের সেই সন্দিহান হাসি।
রেড রোজ ২ পর্ব ২৭
“আপনি হাসছেন কেন?”
“তোমাকে দেখে!”
উৎসা চমকিত হয়,তাকে কী এতটা বাজে লাগছে?যে অস’ভ্য রিক চৌধুরী হাসছে?
উৎসার প্রচুর কান্না পেলো ,তার মোটেও উচিত হয়নি এই লোকটার কথা মতো এরকম ড্রেস পড়া!