পারমিতা পর্ব ৪৪

পারমিতা পর্ব ৪৪
Nabila Ahmed

ভোরের আলো চারিপাশে ফুঁটতে শুরু করেছে। সকাল সকাল এই যানজটপূর্ণ শহর খালি থাকায় সব কিছুতে যেন একটা শান্তির আবহাওয়া বিরাজ করছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ঘুমন্ত অরিয়নের কানে পাখির আওয়াজ যেতেই চোখ খুলে তাকায়। গতকাল রাতে ঘুম ভালো হওয়াতে আজ এতো সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলেও ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে নিজেকে। মিতার কাছ থেকে এই শান্তিটা অরিয়ন আগে থেকেই পেত কিন্তু মিতাকে ভালোবাসার পর তা যে হাজারগুন বেড়ে যাবে তা বুঝতেই পারেনি অরিয়ন।
অরিয়ন মাথা ঘুরিয়ে অন্য পাশে ফিরতেই লক্ষ্য করে মিতা বিছানায় নেই। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে অরিয়ন। মনের মধ্যে কেমন যেন এক অজানা ভয় কাজ করলো, মিতাকে বিছানায় না দেখে। তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নামতেই লক্ষ্য করে ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। পানি পড়ার শব্দ শুনতেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো অরিয়ন।

“কী আজেবাজে ভাবছিলাম” বিরবির করে বলে অরিয়ন।
এতো সকাল সকাল অরিয়নের ইচ্ছে করছে দুজনে ছাদে বসে দু কাপ কফি খাওয়ার। মিতা ওয়াশরুম থেকে আসতে আসতে কফি করার জন্য রান্নাঘরের দিকে যায় অরিয়ন।
এতো সকাল সকাল এই বাড়ির কোনো কাজের লোক এখনো উঠেনি। রান্নাঘর থেকে কফি বানিয়ে দু কাপ দু হাতে নিয়ে একটু পরেই রুমে চলে আসে অরিয়ন। মিতা এখনো ওয়াশরুমে।
–এখন গোসল করে লাভ নেই, একটু পর আবার করতে হবে।
হাসতে হাসতে বলে অরিয়ন।
কফির কাপ টেবিলের উপর রেখে বিছানা থেকে নিজের টি শার্ট তুলে নিয়ে পরে নেয় অরিয়ন। চিরুনি দিয়ে দ্রুত চুল আঁচড়ে নেয়। নিজেকে মিতার সামনে পরিপাটি করে রাখতে খুব ইচ্ছে করে ইদানীং।
চুল আচঁড়ানো শেষ হলে বিছানায় গিয়ে বসে অরিয়ন। কফি বানানোর সময় কমন ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসেছিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–লাভ, তাড়াতাড়ি কর। সকাল হয়ে যাচ্ছে। কফি বানিয়ে এনেছি,একসাথে ছাদে বসে খাবো।
বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে আনলক করতে করতে বলে অরিয়ন।
মিতা গোসল করতে করতে অফিসের মেইল চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অরিয়ন।
–মোটরের সব পানি কী আজ তুই একাই শেষ করে দিবি? কফিটাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বের হ।
মেইল চেক করে মোবাইল হাতে নিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাড়াঁতে দাঁড়াতে বলে অরিয়ন।
ভোরের আলো খুব ভালো করেই উঠেছে। আর একটু পরেই রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে গতকাল রাতের কথা ভাবতেই আলতো করে এক হাসি ফুঁটে অরিয়নের ঠোঁটে। জানালার পাশ থেকে সরে আসবে তখনি চোখ যায় বাড়ির গেইটের দিকে। একটা মেয়ে বড় স্যুটকেস হাতে গেইটের দিকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাচ্ছে। অরিয়নের মাথায় কী ঢুকলো জানেনা, শুধু জানে ক্ষনিকের মধ্যে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে হাজির হয়।

–পরী? পরী?
অনবরত ডাকতে থাকে অরিয়ন।
ভেতর থেকে মিতার কোনো উত্তর আসলো না। দরজা ধাক্কা দিতেই লক্ষ্য করে ওয়াশরুমের দরজা খোলা। তাড়াতাড়ি করে ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় ওয়াশরুমের ট্যাপ ছাড়া। বালতি ভরে পানি পড়ছে ক্রমাগত। অরিয়ন আর অপেক্ষা না করে দৌড়ে চলে যায় জানালার কাছে। গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কালো রঙের গাড়ির কাছাকাছি চলে গেছে মেয়েটি।

–পরীইইইইইইইইইইইই..
কোনো কিছু না ভেবেই চিৎকার করে উঠে অরিয়ন।
অরিয়নের ডাক শুনতেই দাঁড়িয়ে যায় মেয়েটি। ড্রাইভারের হাতে নিজের স্যুটকেস দিয়ে ধীরে ধীরে অরিয়নের দিকে ফিরে তাকায়।
“পরী” অরিয়নের পরী। এতো সকাল সকাল স্যুটকেস হাতে কেন অচেনা এক গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তা অরিয়ন জানেনা। শুধু জানে অরিয়নের মাথা ঘুরাচ্ছে। চোখমুখ, এই পৃথিবী সব অন্ধকার হয়ে আসছে অরিয়নের সামনে। মিতা অরিয়নের দিকে ফিরে তাকিয়ে যেন এক মূহুর্ত অপেক্ষা করলো না তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলতে থাকে।

–নো, নো, নো, নো। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
অরিয়ন আর অপেক্ষা না করে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বিরবির করে কথাগুলো বলেই যাচ্ছে।
–তুই আমার সাথে এমন করতে পারিস না। পারিস না, পরী। প্লিজ প্লিজ প্লিজ, লাভ।
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে অরিয়ন।
বাড়ির কয়েকজন কাজের লোক মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। ড্রয়িং রুম পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সকলেই।
–স্যার, স্যার, কোথায় যাচ্ছেন?
অরিয়নকে পাগলের মতো দৌড়াতে দেখে একজন কাজের লোক বলে।
অরিয়ন যেন কারও কোনো কথাই শুনলো না। নিজের গতিতে দৌড়াতে থাকলো।
–তুই বলেছিলি তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমাকে ছেড়ে যাবি না, পরী। প্লিজ পরী।
দৌড়াতে দৌড়াতে বলে অরিয়ন।

–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া..
চিৎকার করতে করতে গেইটের বাইরে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন।
কালো রঙের গাড়িটা কিছুপথ অতিক্রম করে ফেলেছে। অরিয়নের পক্ষে দৌড়ে ধরা অসম্ভব। গাড়ির নাম্বার প্লেটের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় কোনো কিছুই লেখা নেই। সবটা খালি।
–পরীইইইইইইইইইইইই
চিৎকার করে উঠে অরিয়ন।
গাড়িতে বসে থাকা মিতার চোখদিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। অরিয়নের ডাক শুনতে পেয়েই জানালা দিয়ে মাথা বের করে অরিয়নের দিকে তাকায়। অরিয়ন এক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে বার বার অনুরোধ করছে মিতাকে। এতোটা খারাপ অবস্থায় আর কোনোদিন অরিয়নকে দেখেনি মিতা। তাও নিজের মনকে শক্ত করে বসে থাকে।

–তুমি ঠিক কাজটাই করেছো।
পাশে বসে থাকা কবির রহমান মিতার কাঁধে হাত দিয়ে বলে।
মিতা কবির রহমানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়। গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।
“আই লাভ ইউ সো মাচ, পরী। সো সো মাচ” অরিয়নের কথাটা বার বার কানে ভাসছে মিতার।
–লায়ার।
মনে মনে বিরবির করে বলে মিতা।

গেইটের বাইরে রাস্তায় অরিয়ন কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো জানেনা। শুধু জানে অরিয়নের চোখের সামনে থেকে গাড়িটা অনেক আগেই চলে গেছে। পাথরের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন।
–অরিয়ন?
পেছন থেকে শব্দ আসে হাবিব চৌধুরীর।
–অরিয়ন? কী হয়েছে তোর?
আবারও বলে হাবিব চৌধুরী।
অরিয়ন যেন কারও কথা শুনলোই না। রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে এক নজরে।
–কি হয়েছে তোর?
অরিয়নের কাঁধ ধরে ঝাকি দিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
অরিয়ন ঘুরে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকায়। পাশেই ওয়াহিদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে।
–এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আর দৌড়াচ্ছিলি কী জন্য?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–পরী…
এতো ধীরেই অরিয়নের কন্ঠস্বর আসলো যেন অরিয়ন নিজেই শুনতে পারলো না।
–মিতা? মিতার কী হয়েছে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–চলে গেছে।
বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায় হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী। চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ক্ষণিকেই।
–চলে গেছে মানে? কী সব আজে বাজে বলছিস? মিতা কোথায়?
রাগান্বিত ওয়াহিদ চৌধুরী বলে।
–তোমার মেয়ে নেই, নেই ও। চলে গেছে ও, চলে গেছে। একটা মিথ্যেবাদী তোমার মেয়ে।
ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন। প্রতিটা কথায় ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ পাচ্ছে না। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে অরিয়নের।
কেউ আর কিছু বলার আগেই অরিয়ন বাড়ির দিকে হাটতে থাকে। সরাসরি চলে যায় নিজের রুমে। রুমে ঢুকতেই গতকাল রাতের সবকিছু যেন অরিয়নের চোখে ভাসতে থাকলো। মিতার বার বার অরিয়নকে ভালোবাসি বলা, অরিয়নের বুকে আলতো করে মাথা রাখা।

–সব মিথ্যে ছিলো, সব।
কথাটা বলেই ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা সব ছুরে ফেলে দেয় অরিয়ন।
–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া
ড্রসিং টেবিলের আয়নায় অনবরত ঘুষি মারতে মারতে চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।
পরীকে ঐভাবে যেতে দেখে ঠিকি বুঝতে পেরেছে গতকাল রাতে নিজে থেকে এতো সহজে অরিয়নকে মেনে নেওয়া, নিজেকে অরিয়নের কাছে সপে দেওয়া সবটাই মিথ্যে ছিলো। সবটাই পরীর অভিনয় ছিলো। এই পরী আর ফিরে আসবে না। ফিরে আসার উদ্দেশ্যে পরী কোথাও যায় নি।
অরিয়নের মনে হচ্ছে কেউ পানিতে অরিয়নের মাথাটা চেপে ধরেছে। শ্বাস নিতে প্রতিনিয়ত কষ্ট হচ্ছে অরিয়ন। হাত দিয়ে র*ক্ত বের হচ্ছে সেদিকে যেন খেয়াল নেই অরিয়নের।
–তুই যদি ভাবিস এতো সহজে আমাকে ছেড়ে যাবি তাহলে ভুল ভাবছিস তুই। তোকে আমি কোথাও যেতে দিবো না৷
আবারও আয়নায় ঘুষি মারতে মারতে বলে অরিয়ন।
–তুই আমার, আমার, আমার।
মন্ত্রেরর মতো বলতে থাকে অরিয়ন।

–বাসায় এতোগুলো কাজের লোক থাকতে একটা মেয়ে চুপিচুপি বাসা থেকে বের হয়ে গেল আর তোমরা কেউ জানতেই পারলে না?
ড্রয়িংরুমে সকল কাজের লোকের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলতে থাকে হাবিব চৌধুরী।
–পুলিশ যে কোনো মুহূর্তে চলে আসবে ভাইয়া।
ফোন রেখে হাবিব চৌধুরীর কাছে এসে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে। মায়া চৌধুরী অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। আফরিনের চোখেও পানি,মায়া চৌধুরীকে ধরে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আনিকা চৌধুরীর মুখে টেনশন বা শোকের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে মিতার চলে যাওয়াতে খুশি হয়েছে তিনি।

— কাপড়চোপড় কয়েকটা নিয়ে গেছে। আর মোবাইল গেস্ট রুমেই রাখা ছিলো।
আবরার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে হাবিব চৌধুরীর দিকে মিতার মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলে।
আবরারের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে স্ক্রিন টার্চ করতেই অবাক হয় হাবিব চৌধুরী।
–রিসেট করা। মানে ইচ্ছে করেই রেখে গেছে।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–মিতা নিজের ইচ্ছায় গেছে? কোথায় আর কার সাথে?
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–দেখো কোনো ছেলের সাথে পালিয়েছে নাকি আবার।
ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বলে আনিকা চৌধুরী।
–সাবধানে কথা বলুন আপা।
বলে মায়া চৌধুরী।

–কী সাবধানে বলবো মায়া? তোমরা আমরা ছাড়া আর কেউ আছে আমাদের আত্নীয় যে,তাদের বাড়িতে গিয়েছে? এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়েছে মানে পালিয়েছে। কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো নাকি খোজ নিয়ে দেখো।
বলে আনিকা চৌধুরী।
–আন্টি প্লিজ চুপ করুন। মিতা এমন না তা আপনি নিজেও ভালো করে জানেন।
বলে আফরিন।
আফরিনের কথা শুনে চুপ থাকে আনিকা চৌধুরী। বাকিরা সবাই নিজেদের চিন্তায় ব্যস্ত। মিতার চলে যাওয়ার কারণ কেউ বুঝতে পারছে না।
–আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে কি হলো? গতকাল হঠাৎ করে ডিভোর্স এর কথা বললো আর আজ সকাল বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
বলে চিন্তিত হাবিব চৌধুরী।

–ডিভোর্স?
অবাক হয়ে বলে আফরিন।
–ডিভোর্স? কার ডিভোর্স?
হতবাক হয়ে বলে মায়া চৌধুরী।
–মিতা আর অরিয়নের।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–এসব কখন হলো? আমাদের কেন জানানো হলো না? হঠাৎ করে মিতা ডিভোর্স কেন চাইলো?
সোফা থেকে উঠে গিয়ে ওয়াহিদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।
–আফরিন আর অরিয়নের জন্য।
মাথা নিচু করে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কি?
অবাক হয়ে বলে মায়া চৌধুরী ও আফরিন।
–হ্যাঁ।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–সেটাই যদি কারণ হয় তাহলে বাড়ি ছেড়ে কেন যাবে? বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সাথে কী সম্পর্ক তার?
প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।
–সেটা তো আমি ও বুঝতে পারছি না।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–ভেবে দেখো, আমি যা বললাম তাই হবে।
বলে আনিকা চৌধুরী।
–মিতা আবার কিছু জেনে গেলো না তো?
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–না, না। তেমনটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–তাহলে কী সত্যিই কোনো ছেলে?
বলে হাবিব
–না। মিতা এমনটা কোনোদিন করতেই পারে না। তোমরা কী পাগল হয়ে গেছো? কার সম্পর্কে কথা বলছো একটু ভেবে দেখো।
বলে আবরার।
–স্যার, পুলিশ এসেছে।
বলে শায়লা।
–চল ওয়াহিদ।
হাবিব চৌধুরী বলে।
হাবিব চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী পুলিশের সাথে কথা বলতে চলে যায়।
–কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। এই সুখের সংসারে কার নজর লাগছে আল্লাহ ভালো জানে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মায়া চৌধুরী।

ফ্লোরে বসে আছে অরিয়ন। হাত আর ফ্লোর র*ক্তাক্ত। সব কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরে আছে রুমের মধ্যে। অরিয়নের চোখে র*ক্ত জমাট বেধেছে। এক নজরে তাকিয়ে আছে হাতের মোবাইলের দিকে। মোবাইলের স্ক্রিনে মিতার ছবি ভাসছে। ছবিতে মিতা আইফেল টাওয়ারের ৩য় তলায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। মিতার ঘন লম্বা চুলগুলো বাসাতে উড়ছে। মুখে ফুঁটে আছে মিষ্টি এক হাসি৷ কী ভেবে ছবিটা তুলেছিলো তা অরিয়ন জানেনা। তবে সেই মুহুর্তে মনে হয়েছিলো ছবিটা তুলে রাখা প্রয়োজন। তাই ছবিটা মিতার অজান্তে তুলে রাখে অরিয়ন।
–কার জন্য বা কী কারণে আমাকে ছেড়ে চলে গেলি আমি জানিনা, তবে এতটুকু জানি, কাজটা তুই ভালো করিসনি।
ছবির মিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে অরিয়ন।

পারমিতা পর্ব ৪৩

–নাকি অন্য কারো প্রেমে পড়েছিস তুই, পরী? অন্য কেউ তোকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসবে বলেছে? অন্য কারো সাথে তুই ভালো থাকবি?
নিজের র*ক্তাক্ত আঙ্গুল দিয়ে মিতার ছবিতে স্পর্শ করতে করতে বলে অরিয়ন।
–এর শাস্তি তোকে পেতে হবে। আমাকে মিথ্যে বলার শাস্তি তোকে পেতে হবে, পারমিতা।

পারমিতা পর্ব ৪৫