তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩২
আমেনা আক্তার
আব্রাহামের শক্ত হাতের থাপ্পড় আয়নার গালে পরতেই ও অবাক হয়ে তাকায় আব্রাহামের দিকে।আয়না তবুও নিজেকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে।কারণ আব্রাহাম এখন রেগে আছে।আর আব্রাহাম মনে করছে আয়না বোধহয় ওর ভাবিকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়েছে।তাই আয়না আব্রাহাম কে সত্য কথা যেই না বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আয়নার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো।
তোমাকে এতদিন আমি কিছু বলিনি, কারণ আমি মনে করেছি তোমার বয়স কম। তুমি যা করছো তা কেবল তোমার আবেগের বশে করছে।তাই তোমাকে সব সবয় আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুমি আজ কি করেছ তুমি। তোমাকে যে এতটা বেশি ভালোবাসা দিয়েছে তার সাথে এটা কি করে করতে পারলে তুমি? তার ও তার বাচ্চার এত বড় ক্ষতি করার আগে কি তোমার একটুও বুক কাঁপেনি। জবাব দাও আমার কথার,জবাব দাও।
আব্রাহাম শেষের কথাটি এত জোড়ে চিল্লায়ে বলে যে আয়নার অন্তত আত্মা যেনো কেঁপে উঠলো।আয়না কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
প্লি… প্লিজ আমার কথা শুনো.
আয়নার কথা সম্পূর্ণ হতে না দিয়ে আব্রাহাম নিজের ঝাঁজালো কন্ঠে বলল।
কি শুনবো আমি তোমার কথা আসলে আমি বুঝতে পেরেছি তুমি এই সকল কিছু কেনো করেছে
আব্রাহামের কথায় আয়না অবাক হয়ে তাকায় ওর দিকে। এবং অবাক হয়েই আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করলো।
কেনো করেছি,
টাকার জন্য করেছ,এই সকল কিছু তুমি টাকার জন্য করেছ। তুমি যেই দেখেছ তোমার ভাইয়ের বন্ধু এত বড়লোক সেই তুমি বেহায়ার মতো হাত ধুয়ে আমার পিছনে লেগে গেছো।আমি যত যাই বলি তোমার টার্গেট ছিল আমাকে বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে রানী হয়ে পায়ের ওপর পা তুলে জীবন যাপন করা। আমাকে বিয়ে করলে তো তোমার টাকা পয়সার অভাব থাকবে না এবং তোমার জীবনে আর কেনো কষ্ট থাকবে না।যেই তোমার মনে হয়েছে এই সকল কিছুর মাঝে ভাবি তোমার পথের কাঁটা হতে পারে সেই তাকে নিজের পথ থেকে সরানোর জন্য তুমি এই সব করেছ তাই তো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আয়না এতক্ষণ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলেও আব্রাহামের কথা শুনে আর নিজেকে ও শান্ত রাখতে পারছে না। একদিক দিয়ে আব্রাহাম ওকে কথা শুনাচ্ছে ওকে লোভী বলে আখ্যায়িত করছে আরেকদিকে দিয়ে আয়নার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আব্রাহামের দিকে।ও এইটা ভেবে পাচ্ছে না আব্রাহামের প্রতি ওর এত দিনের ভালোবাসা এত দিনের পাগলামো কিভাবে আব্রাহাম সেইগুলো কে লোভের নাম দিয়ে দিয়েছে।ও নিজের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছে এ কাকে ভালোবেসেছে ও আসলে ওই ভুল করেছে নিজের ইস্ট্যটাস দেখে ভালোবাসা উচিত ছিল।ভালোবাসার আগে ভাবা উচিত ছিল আব্রাহামের সাথে ওর যায়না।
আরাহামের আয়াতকে বকার মাঝেই সেখানে শেহের এসে উপস্থিত হলো এবং আব্রাহাম কে বললো।
ডাক্তার দ্রুত ঔষধ গুলো আনতে বলেছে,
শেহেরের কথা শুনে আব্রাহাম আয়নাকে বলল।
আমি যেনো আমার ও আমার পরিবারের ত্রিসীমানায় আর তোমাকে না দেখি।
আব্রাহামের কথা শুনে আয়না ব্যথিত গলায় বলল।
আর দেখবে না,
আয়নার কথাতে কি যেনো ছিল, আয়নার কথাটি আব্রাহামের বুকে গিয়ে লাগলো। আব্রাহামের মাঝে খারাপ লাগার সৃষ্টি হলেও ও এই খারাপ লাগাকে পাত্তা না দিয়ে চলে যায় ঔষধ আনতে।
আব্রাহামের পিছন পিছন শেহের ঐ চলে যায়।
এভাবে কেটে যায় একটি সপ্তাহ আয়না নিজের বাড়িতে এসে কিছুই বলেনি ওই দিন।এমন ভাবে সবার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছে যেনো কিছুই হয়নি। কিন্তু আয়না ভিতর থেকে কতটা আঘাত প্রাপ্ত ছিল তা শুধু আয়নায় যানে।আব্রাহাম রাজ কে বলেনি এই সকল ঘটনা সম্পর্কে।রাজ শুধু জানে মেহের হঠাৎ করে পরে গিয়েছে। কিন্তু আব্রাহামের বন্ধুরা কিছু জানে না। আব্রাহাম এখনো খুব টেনশনে আছে তাই তারা আব্রাহাম কে এই ব্যাপারে আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
মেহের কে যেই দিন হসপিটালে আনা হয়েছে সেই দিনই ওর ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করলেও ও ঙ্গান ফিরেনি পুরো দুদিন। দুদিন পর মেহেরের হুস ঠিকই ফিরেছে কিন্তু এ কদিন ও কথা বলতে পারেনি।এক কথায় বলতে গেলে ওর জবান পুরোপুরিভাবে বন্ধ ছিল।আজ মেহের সবার সাথে কথা বলতে পারছে।
মেহেরের সাথে সকলের কথা হয়ে যাওয়ার পর কেবিনে প্রবেশ করে আব্রাহাম ও তার বন্ধুরা। মেহের ওদেরকে দেখে একটি হাসি উপহার দেয়। কিন্তু ভালোভাবে চোখ ঘুড়িয়ে যখন দেখলো আয়না আসেনি তার মুখ থেকে হাসি গায়েব হয়ে যায়। মেহের রাজকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আয়না কোথায় ওকে নিয়ে আসো নি সাথে করে।
মেহেরের কথার জবাবে রাজ বলল।
ওর কিছুদিন পর থেকে পরীক্ষা আরম্ভ হবে।তাই ও নিজের রুম থেকেও বের হয় না।আর মাও ওকে কোথাও যেতে দেয় না। কিন্তু আপনার কথা ও আমাকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে।
রাজের কথায় মেহের বলল।
ও আমার এত বড় উপকার করলো, এখন আমি ও আমার বাচ্চা আয়নার জন্যই এখনো শ্বাস নিতে পারছি।আয়না না থাকলে আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম না।
মেহেরের কথা শুনে আব্রাহাম বলল।
ভাবি কি বলছো আয়না তোমাকে বাঁচিয়েছে।ও তোমাকে কিভাবে বাচালো।
আব্রাহামের কথা শুনে মেহের ওকে সকল ঘটনা খুলে বলল। সকল কিছু শুনে আব্রাহামের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ও বুঝতে পারছে যে ও কত বড় ভুল করেছে। আব্রাহামের ফ্যাকাশে চেহারা আর কেউ লক্ষ্য না করলেও হৃদিতা ঠিকই লক্ষ্য করেছে। কিন্তু ও এখন কিছু জিজ্ঞেস করলো না আব্রাহাম কে।
সকলে কেবিন থেকে বের হতেই হৃদিতা রাজের উদ্দেশ্যে বলল।
আমার ভালো লাগছে না, আমার জন্য কফি নিয়ে আসবি?
হৃদিতার কথা শুনে রাজ বলল।
তোর আবার ভালো লাগে কবে সারাদিন একটা না একটা কিছু খেতেই থাকিস
রাজের কথায় হৃদিতা হাত বের করে হাসে।আর ও একটি হাসি দিয়ে সবার জন্য কফি আনতে চলে যায়।।রাজ যেতেই হৃদিতা আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলল।
কি হয়েছে তোর,ভাবি আয়নার কথা বলার পর থেকে দেখছি তোর চেহারার রং বদলে গিয়েছে।
হৃদিতার কথায় সকলে ব্লু কুঁচকে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম হৃদিতার কথা শুনে দু হাত দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরে একটি চেয়ারে বসে পরে বলল।
আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,আমি না বুঝে আয়নার উপর ভাবির এই অবস্থার দোষ চাপিয়ে দিয়েছি।আর রাগের মাথায় ওকে অনেক কথা শুনিয়েছি।ও আমার জন্যই হয়তো ভাবির সাথে দেখা করতে হসপিটালে আসেনি।
আব্রাহামের কথা শুনে নূর অনেক রেগে যায় এবং আব্রাহাম কে বলল।
তুই সবসময় আয়নাকে কষ্ট দিস, মেয়েটি তোকে কতটা ভালোবাসে তুই ওকে এত কথা বলার পরেও ও তোকে ভালোবাসে বলে তোর কাছে ফিরে আসে। কিন্তু তুই মেয়েটিকে প্রতিবারের মতো এইবার ও কষ্ট দিয়েছিস তার উপর ওর উপর মিথ্যা দোষ চাপিয়ে দিয়েছিস।
আমার ভুল হয়ে গেছে,আমি ভাবির অবস্থা দেখে অনেক রেগে গিয়েছিলাম তাই আমি সত্য জানার চেষ্টা না করেই ওকে বকেছি ওকে কাঁদিয়েছি।আমি মাফ চাইতে চায় ওর কাছে।
আব্রাহামের কথা শুনে রুদ্র বলল।
যা করেছিস তা চলে গিয়েছে, তোর সত্যিই আয়নার কাছে মাফ চাওয়া উচিত।রাজ বলল কাল নাকি আয়না ওর কলেজে যাবে এডমিড কার্ড উঠাতে তখন তুই ওর কলেজে গিয়ে ওর থেকে মাফ চেয়ে নিস।
কেটে গিয়েছে আরও একটি দিন আব্রাহাম সকাল হওয়ার অপেক্ষায় করছিল কাল থেকে।ওর ভিতরের অপরাধ বোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে যেই পর্যন্ত ও আয়না থেকে মাফ না চেয়ে নিবে ও আয়না ওকে যেই পর্যন্ত মাফ না করবে সেই পর্যন্ত যেনো শান্তি মিলবে না ওর।
আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার কলেজের সামনে। আয়নার কলেজে থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করছে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও আব্রাহাম দেখতে পেলো আয়না কলেজ থেকে বের হয়ে আসছে। আব্রাহাম সময় ব্যয় না করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আয়না আব্রাহামের দিকে খুব স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে। তখন আব্রাহাম আয়নাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,
আয়নাও খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।
হুম বলো,
আই এম সরি,আমি তোমার কথা না শুনে তোমাকে অনেক কথা শুনিয়েছি। আমার আগে তোমার কথা শোনা উচিত ছিল।
আয়না আব্রাহামের কথা শুনে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।
আমার কাছে মাফ চাওয়ার প্রয়োজন নেই, তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও হয়তো এইরকম কিছুই করতো। ওইরকম পরিস্থিতিতে কারো মাথা ঠিক থাকে না তোমনি তোমার ও ঠিক ছিল না। কিন্তু আমি তোমার কাছে মাফ চাইতে চায় আই এম সরি।
আয়নার কথায় আব্রাহামের অপরাধ বোধ কিছুটা কমে আসলো। কিন্তু আয়নার সরি বলার কারণ বুঝতে না পেরে বলল।
তুমি সরি বলছো কেনো?
আমার ভুল তাই আমি সরি বলছি,আমি তোমাকে এতদিন অনেক বিরক্ত করেছি। তুমি বারবার আমাকে বলেছ তুমি আমাকে ভালোবাসো না তবুও আমি তোমার কথা না শুনে তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি। বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।এই সকল কিছুর জন্য সরি। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তাই তোমাকে আজকের পর থেকে আমি আর ডিস্টার্ব করব না।আর না আজকের পর থেকে বলবো ভালোবাসি।
আয়না নিজের কথা রেখেছে ওইদিনের পর থেকে আয়না আব্রাহামের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা ফিরে তাকায় ওনি। আব্রাহাম তো এইটাই চেয়েছিল আয়না যেনো ওকে ডিস্টার্ব না করে। কিন্তু আব্রাহামের এখন খারাপ লাগছে।ও বুঝতে পেরেছে আয়না ওইদিন ওর কথাতে ভিশন আঘাত পেয়েছে। আব্রাহাম আরো অনেকবার আয়নার কাছে মাফ চেয়েছে কিন্তু আয়নার উত্তর ছিল একই।আব্রাহাম এখন আয়নার ফোনের জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু আয়না তাকে ফোন দেয় না।এর মধ্যে আয়নার পরীক্ষা আজকেই শেষ একটি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে আয়না কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।ওর একটি পরীক্ষা ও ভালো হয়নি। কিভাবেই বা ভালো হবে ওর যে নিজেকে সামলাতেই হিমসিম খাচ্ছে।ও কাওকে না দেখালেও ওর ভিতরটা ও তো জ্বলে যাচ্ছে।ওই ঘটনার পর আয়না কিছুতেই নিজের পড়াশোনায় মন বসাতে পারেনি। কিন্তু এখন আয়না ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। আব্রাহাম থেকে নিজেকে দূর করা কষ্টকর হলেও আয়না সেটি করে দেখিয়েছে। এবং নিজেকে ওয়াদা করেছে যে ওর আত্মসম্মানে আঘাত করেছে যে ওর ভালোবাসাকে এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে।যে ওকে লোভী বলে আখ্যায়িত করেছে সেই ব্যাক্তির দিকে কখনো ফিরেও তাকাবে না।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩১
আয়না নিজের কথা ঠিকই রেখেছে, আব্রাহামের দিকে আয়না আর ফিরেও তাকায় নি। কিন্তু আয়না যতই আব্রাহাম থেকে দূরে সরে গেছে ততই আব্রাহাম বুঝেছে আয়না তার জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।আয়নার জন্য তার মনে থাকা অনুভূতি সম্পর্কে অবগত হয়েছে। কিন্তু সেই অনুভূতি সম্পর্কে অবগত তখনই হয়েছে আব্রাহাম যখন আয়না ওর থেকে বহু দূর চলে গিয়েছে। আব্রাহাম অনেকভাবে আয়নার কাছে মাফ চেয়েছে। কিন্তু নিজের জায়গায় অনড়।আর কেনো দিন আয়না আব্রাহামদের বাড়িতে যায়নি। এখন আয়নার জন্য আব্রাহাম জ্বলছে খুব করে জ্বলছে। আব্রাহাম শুধু আয়নার কাছে একটি সুযোগ চায় কিন্তু সেই সুযোগটুকু আয়না তাকে দিচ্ছে না।