প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২
মারশিয়া জাহান মেঘ

_এক্সকিউজ মি, ডক্টর ধ্রুব কোথায় আছেন?
_ওইতো সামনে গিয়ে, বাম দিকে একটা কেবিন পড়বে। ওই কেবিনটাই ডক্টরের।
ধীর পায়ে হেঁটে সে সেইদিকে পা বাড়ালো। কাঙ্ক্ষিত সেই কেবিনটা পেয়েও গেল৷ উপরে গুটা গুটা করে লেখা ‘ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী’ সে যখনি ভেতরে যাবে, ঠিক তখনি ডক্টর রেখা বলল,
_এই যে, ডক্টর আজই মাত্র আসলেন। আপাতত উনি কোনো রোগীকে দেখবেন না।
পা জোড়া থেমে গেল তার। আমতা আমতা করে বলল,
_আসলে…
_কোনো আসলে-টাসলে নয়। উনি আজ কোনো রোগী দেখবেন না।

সে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কিছু একটা করলো। তারপর, পাশের বেঞ্চটাতে গিয়ে বসলো। ডক্টর রেখা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা পরখ করলো তাকে। চুলগুলো স্ট্রেইট করা। কোমড়ের নিচ অবধি লম্বা চুল। গায়ের রং উজ্জল ফরসা। হলুদ রংয়ের ড্রেস পরে আছে। কাঁধে ব্যাগ আর এক হাতে, ফাইল। চোখগুলোতে কাজল টানা। ঠোঁ/টে নু’ড কালার লি’প’স্টি’ক। কপালে টিপ। মেয়েটার বোধহয় গ’র’ম লাগছে ভীষণ। চোখ মুখে বিরক্তির ছাপ ভাসমান। সেই সাথে অস্বস্তি ভাবটাও আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধ্রুব বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। তাকে বসে থাকতে দেখে বলল,
_ইউ….
মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো। মলিন হেসে বলল,
_ফারাবী রাজের একমাত্র মেয়ে মাহদিয়া রাজ আঁধারীনি।
_হোয়াট ননসেন্স আঁধারীনি? বাইরে বসে আছিস কেন? ভেতরে আয়।
ডক্টর রেখা বিস্ময় নিয়ে বললেন,
_ভেতরে মানে? আজতো আপনি কোনো রোগী দেখছেন না ডক্টর ধ্রুব।
_সেতো পেশেন্ট নয়।
_তাহলে?
_মাই ফিউচার লাইফ পার্টনার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ধ্রুব’র কথা শুনে অবাক হলো আঁধারীনি। চোখ বড় বড় করে তাকালো ধ্রুব’র দিকে। আঁধারীনির হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল সে। ভেতরে যেতেই আঁধারীনির হাত ছেড়ে বলল,
__এয়ারপোর্ট থেকে আসতে কি ৪ ঘন্টা লাগে?”
মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে আঁধার। মিষ্টি মুখশ্রীর মেয়েটার মন যে খুব একটা ভালো নেই তা যেন বুঝতে পারলো ধ্রুব। বলল,
__আমি কথা কম বলা পছন্দ করি। কিন্তু, কেউ কোনো প্রশ্ন করলে তার জবাব না দেওয়া বেয়াদবি।
___আপনি আমাকে এইভাবে এয়ারপোর্টে একা কিভাবে ফেলে এলেন ধ্রুব ভাই? আপনিতো জানতেন তাই না? আমি বাংলাদেশের কোনো জায়গা ভালো করে চিনি না।

__আমি যখন বলছিলাম, আমার সাথে বস, কি করেছিলি তুই? মনে করিয়ে দিব?
আঁধারীনি চুপসে গেল। সে আর ধ্রুব একসাথেই বাংলাদেশে পা রেখেছিল। আঁধারীনির তুমুল জে’দে তোহা আর ফারাবী বাধ্য হয়েই মেয়েকে ধ্রুবর সাথে পাঠিয়ে দিয়েছিল। ধ্রুব তার পাশে আঁধারীনিকে বসতে বলায়, আধাঁরীনি সোজাসাপ্টা ভাবে ‘না’ করে দিয়েছিল। এরপর আর কি? ধ্রুব একাই চলে এলো আগে-পিছে কিছু না ভেবে।
_এখন চুপ করে আছিস কেন? নিজের দো’ষে অবশ্য সবাই-ই এমন চুপ করে থাকে। চল, বাসায় যেতে হবে। মা কল দিয়েছিল।
আধাঁরীনি মিনমিন করে বলল,

__আমি শুধু যাই বাসায়। মামাকে সব বলে দিব।
__কি? কি বললি তুই?
ধ্রুবের প্রশ্নে থতমত খেলো যেন আধাঁরীনি। আমতা আমতা করে বলল,
__আমি কিছু না বললেও আপনি এমনভাবে প্রশ্ন করেন, যেন আমি সত্যিই কিছু বলেছি।
_ _কিছু বলিসনি বলছিস?
ধ্রুব আঁধারীনির দিকে কিছুটা ঝুঁকে কথাটি বলল। আঁধারীনি জবাব দিলো না। ধ্রুব বলল,
__বাবাকে যেন কিছু না বলতে শুনি। গট ইট?”
আঁধারীনি বাধ্য মেয়ের মত বলল,
__ হুম।

ধ্রুবকে দেখে জ’ড়ি’য়ে ধরে তাশরীফ চৌধুরী। ছেলে হুবহু তার মতোই দেখতে হয়েছে। আভা ছেলেকে দেখে বেশ অবাকই হয়েছে। তাশরীফের চেহারার সাথে কত মিল! সে আশেপাশে, উঁকিঝুঁকি মে’রে বলল,
__আঁধারীনি কোথায় ধ্রুব?
ধ্রুব জবাব দেওয়ার পূর্বেই আঁধারীনি এসে বলল,
___আমি এইখানে মামী।
আঁধারীনিকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল আভা। তাশরীফ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
___তোমার এই অবস্থা কেন আঁধার?
আঁধারীনির হাতে ট্রলি, দুই কাঁধে ব্যাগ। নাজেহাল অবস্থা। আভা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো ছেলের দিকে। ধ্রুবের চোখে মায়ের দৃষ্টি এড়ালো না। কিছু না বলে সে সোজা উপরতলায় চলে গেল। আঁধারীনি কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে বলল,

__এমন অবস্থা হবে না মামা? ধ্রুব ভাই একটা জিনিসও ক্যারি করেনি। সবকিছু আমার উপর দিয়ে নিজে ফ্রিলি এসেছে৷
তাশরীফ ভাগ্নীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
___ওর বিচার করব মা। এখন যাও, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো। তোমার মাকে কল করে জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা আসছ।
__ঠিক আছে মামা।
আভা আঁধারীনিকে নিয়ে, রুমে যায়। আঁধারীনির থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না আভা। কি সুন্দর দেখতে হয়েছে তোহার মেয়ে। একদম ডলের মত দেখতে। আঁধারীনি রুমে গিয়ে বিছানায় বসলো। আভা আঁধারীনির কাপড়-চোপড় নিয়ে আলমারিতে তুলে রাখছিল। আঁধারীনি আভাকে দেখে মনে মনে ভাবলো,
___মা তার মানে ঠিকই বলেছিল। মামী অনেক বেশি সুন্দরী। কি সুন্দর দেখতে! একদম মনে হচ্ছে তার সমবয়সী একটা মানুষ। কি ইয়াং! তার মা বলেছিল, তার মামীর হাসি নাকি অনেক বেশি সুন্দর। সে এখনো দেখেনি। দেখলে হয়তো বুঝতে পারবে।”

____কি দেখছ আঁধার?
___আপনাকে মামী।
হাসলো আভা। আঁধারীনি ভীষণ চমকে উঠল। একটা মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় কিভাবে?
___আমাকে দেখার অনেক সময় আছে। এখন গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ফেলো। আমি নিচে গিয়ে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছি।”
__আচ্ছা মামী।”
আভা যেতেই আঁধারীনির চোখ গেল তার মায়ের ছবিতে। দেয়ালে বড় একটা ছবি তার মায়ের। এইটা বোধহয় তার মায়েরই রুম। মানুষ থাকে না, অথচ কি সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছে রুমটাকে! একটা জিনিসেরও পরিবর্তন হয়নি রুমটাতে। তার মা যেইভাবে রেখে গিয়েছিল, সেভাবেই আছে।
আঁধারীনি দরজা বন্ধ করে, টাওয়াল প্যাঁচিয়ে নিলো। ওয়াশরুমের দরজা ধা’ক্কা দিয়ে খু’ল’তে যাবে এমন সময় বেরিয়ে আসে ধ্রুব। আঁধারীনি

___আ’হহহহহহহহহহ’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। ধ্রুব চে’পে ধরে আঁধারীনির মুখ। সেও চোখ বড় বড় করে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আঁধারীনির দিকে। কারণ সে নিজেও টাওয়াল প্যাঁচিয়ে বে’র হয়েছে। দাঁতে দাঁত চে’পে বলল,
___তুই এই রুমে কি করছিস? জানিস না? আমি শাওয়ার নিচ্ছি এইখানে?
আঁধারীনি চোখ বড় বড় করে ইশারা করলো তার মুখ থেকে হাত সরাতে ধ্রুবকে। ধ্রুব ছেড়ে দিতেই আঁধারীনি জলদি মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়। দুই হাত ঝা’প’টে আছে সে। এমন বা’জে পরিস্থিতিতে কিভাবে যে পড়ল তাই-ই মাথায় আসছে না তার। ধ্রুব চট করে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর, কাপড় চেইঞ করে বে’রিয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,

___এই যা এখন। আমি চলে এসেছি।
ল’জ্জায় আঁধারীনি ম’রে যায় যায় অবস্থা। সে কোনোরকমে ওয়াশরুমে ঢু’কে দরজা একটু খো’লা রেখে বলল,
” আমার মায়ের রুমে আপনি কি করছেন ধ্রুব ভাই? আপনি জানতেন না? আমি এই রুমে আসব।
___হ্যাঁ জানতামতো। আমি জানতাম তুই এই রুমে টাওয়াল প্যাঁচিয়ে আসবি, আর তাই আমি নিজে ওয়াশরুমে বসেছিলাম তাই না? যত্তসব ইডিয়েট।”
কথাগুলো দাঁতে দাঁত চে’পে বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় ধ্রুব। সে তার রুমে গিয়ে দেখে ওয়াশরুমের টিউব কাজ করছে না। তাই এই রুমে এসে পড়েছিল গোসল সেরে ফেলতে।

টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। আঁধারীনির মুখোমুখি চেয়ারে বসেছে ধ্রুব। ল’জ্জা’য় ধ্রুবর দিকে তাকাচ্ছে না সে। ধ্রুব আড়চোখে তাকালো আঁধারীনির দিকে। চুপচাপ বসে খাচ্ছে সে। আভা আঁধারীনির পাতে তরকারি দিতেই আঁধারীনি আপত্তি জানিয়ে বলল,
__আর দিয়েন না মামী, আমি খেতে পারব না।
___এই বয়সে না খেলে কখন খাবে শুনি? তরকারি বেশি করে খাবে। ভাত কম। বুঝেছ?
____বুঝেছি মামী।
তাশরীফ পাশ থেকে খেতে খেতে বলল,

___তুমি যেহেতু এত বুঝো, তাহলে তুমি কেন বিয়ের আগে এত খেতে না হুম? এই বয়সে থাকতেতো তুমি নিজেই আঁধারের মত অনীহা অনীহা ভাব নিয়ে থাকতে। রান্নাটাও ভালোভাবে পারতে না। তোহা আর তুমি মিলে, আমাকে একদমম ঝাল ঝাল শুধু মরিচের গুঁড়ো দিয়ে ভাত খাইয়েছিলে মনে আছে তোমার? আর নাম দিয়েছিলে, কাজের আপার।
মুহুর্তেই হেসে ফেলল আঁধারীনি। তার হাসির শব্দ এত বেশিই ছিল যে, ধ্রুব খাওয়া ছেড়ে কেবল ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল৷ আভাও সেইমভাবে তাকিয়ে আছে আঁধারীনির দিকে। আঁধারীনি সবার দিকে তাকিয়ে হাসি থামিয়ে ফেলল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১

__আসলে…
সঙ্গে সঙ্গে হেসে ফেলল আভা। হাসতে হাসতে বলল,
__আরে আঁধার তুমিতো একদম তোহার মত শব্দ করে হাসো।
ল’জ্জায় মিইয়ে গেল আঁধারীনি। ধ্রুব খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,
___ ফুফুর হাসিতো যাইহোক অনেক সুন্দর। নেওয়া যায়৷ কিন্তু, আঁধারের হাসি শুনলেতো আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ভূমিকম্প চলে এসেছে।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৩