তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৪

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৪
আমেনা আক্তার

রুদ্ররাও তাকিয়ে আছে গেইটের দিকে দেখার জন্য কে এসেছে। কিন্তু গার্ডদের জন্য তাদের চেহারা ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না। নূর বিরক্ত হচ্ছে ভ্যাবলার মতো এভাবে কাওকে দেখার জন্য তাকিয়ে থাকতে।ও এইটাই ভেবে পাচ্ছে না কাওকে দেখার জন্য এভাবে কেনো তাকিয়ে থাকতে হবে। নূর বরাবরের মতো বিরক্ত হলো। তাই নূর বিরক্ত হয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
তোরা যদি আর একবার ওইদিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকিস তাহলে সব কয়টার চোখ আমি উপরে ফেলবো।
নূরের কথা শুনে সকলে ওর দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল।

তোর এত সমস্যা কিসে।দেখতে তো দিবি আমাদের কলেজে কাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।
রাজের কথা শুনে নূর দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
যখন ওনারা স্টেজে উঠবে তখন দেখতে পারবি না। এখন এভাবে তাকিয়ে থাকার দরকার কি।
নূরের কথায় রাজ মাথা চুলকায়।তখনি আরশাদ রাজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
দেখ তোর হুর পরী আসছে,
আরশাদের কথা শুনে রাজের সাথে সাথে সকলে ভার্সিটি গেইটের সামনে তাকায়।গেইট দিয়ে সাইরা কে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে।সাইরাও সকলের মতো সারি পরে আসায় ওকেও অনেক সুন্দর লাগছে।রাজ নিজের বুকের উপর এক হাত চেপে ধরে বলল।
এই মেয়ে মনে হয় আজ আমাকে মারার প্ল্যান করে এসেছে দোস্ত।আজ আমি নিজেকে কিভাবে সামলাবো।এই মেয়ের একটু ভেবে চিন্তে এভাবে সেজে আসা উচিত ছিল। কিন্তু না ও আমার কথা একটুও না ভেবে এই কিলার লুকে চলে এসেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাজ কথা গুলো বলে চলে যায় সাইরার কাছে।সাইরা এতক্ষণ রাজকে খেয়াল করে নি।রাজ হঠাৎ এসে সাইরার সামনে দাঁড়ায়। এবং সময় ব্যয় না করে সাইরার দিকে একটু ঝুঁকে কানে কানে বলল।
আমাকে কি তুমি মেরে ফেলতে চাও,
রাজের হঠাৎ সামনে এসে পড়ায় প্রথমে সাইরা কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও রাজের কথা শুনে সাইরা অবাক হয়ে বলল।
আমি কি করেছি,আমি আপনাকে মারতে যাবো কেনো?
কি করেছ মানে ?আমাকে মারার জন্যই তো এমন ভাবে সেজে এসেছ।একটা সত্য কথা বলব।
কি?
তোমাকে এই সারিতে অপরুপ লাগছে,
রাজের কথা শুনে সাইরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।তা দেখে রাজ দুষ্টু হেসে বলল।
এখনো তো তোমাকে লজ্জা দেওয়ার মতো কেনো কথা বলিই নি।এখনি যদি এত লজ্জা পাও তাহলে যখন আমাদের বিয়ের পর বা..

আর কিছু বলার আগেই সাইরা রাজের মুখে ওর হাত চেপে ধরল। এবং সাথে সাথে আবার হাত সরিয়ে ও ফেললো।তা দেখে রাজ মুচকি হেসে সাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল।
তোমার ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে এই প্রথম ছুঁয়েছ।এই ছোঁয়া আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমার স্মৃতির পাতায় এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সাইরা রাজের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।আর এদিকে রাজ গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চলে যায় বন্ধুদের কাছে।

রাজ, রুদ্র, আব্রাহাম ও আরশাদ বসে আছে স্টেজের সামনের চেয়ারে। প্রধান অতিথি তাদের জন্য বরাদ্দ ভার্সিটির অফিস রুমে আরাম করছে। অনুষ্ঠান শুরু হতেই প্রধান অতিথি স্টেজে এসে তাদের বরাদ্দকৃত চেয়ারে এসে বসলো। রুদ্র ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।আর নূর এখনো স্টেজের আসে পাশেও আসে নি।ওকে যখন ডাকা হবে তখন ও এসে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করবে।
এর মধ্যে একজন শিক্ষক এসে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধান অতিথির নাম বলে। এবং সাইরা ও নূরকে ফুল দিয়ে তাদের বরণ করতে বললেন। নূর স্টেজের পিছনে থাকায় ও হৃদিতার সাথে কথায় ব্যস্ত থাকায় ভালোভাবে শিক্ষকের বলা নামটি শুনলো না। কিন্তু রুদ্র ঠিকই শিক্ষকের বলা নামটি শুনে চমকে উঠলো। এবং স্টেজের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো। আফজাল চৌধুরী ও আদিত্য চৌধুরী বসে আছে। রুদ্র কিছু বলা বা করার আগেই নূর ও হৃদিতা ফুল নিয়ে স্টেজে উঠে গিয়েছে।

হৃদিতা ফুলের তোড়া নিয়ে আফজাল চৌধুরীর হাতে হাসি মুখে তুলে দিলো। নূর ও আদিত্য কে ফুল তুলে দেওয়ার জন্য আদিত্যর দিকে তাকাতেই ওর হাত দুটো থেমে গেল। নূর তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে আসলে তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে ও রাগে ফুঁসছে। এবং কিছু সময়ের ব্যবধানে নূরের হাতে থাকা ফুলের তোড়া নূর ছুড়ে মারে স্টেজের বাইরে। এবং রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।
আমি কোনো গুন্ডাকে হাতে নিজের হাত দিয়ে ফুল তুলে দিতে পারবো না।
কথাটি বলেই নূর গটগট করে স্টেজ থেকে নেমে গেল। এদিকে সকলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল নূরের দিকে কেউ জানেনা নূরের এই ব্যবহারের কারন। আদিত্যর পাশে বসে থাকা আফজাল চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলের ভাবমূর্তি বোঝার চেষ্টা করছে।উনি প্রচুর অবাক হয়েছে নূরকে প্রথম দেখে। আফজাল চৌধুরী প্রথম দেখেই নূরকে চিনে ফেলেছেন। কিন্তু এখন আফজাল চৌধুরীর চিন্তা হচ্ছে ওনার ছেলে যেই ঘাড় ত্যাড়া এবং এক রোখা টাইপের এখন কি করবে আল্লাহ জানে। নূর সবার সামনে আদিত্য কে অপমান করে গিয়েছে।যেই ছেলের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলে কথা বললেও ওর লোকের অস্তিত্ব বিলীন করে ফেলে।সেই ছেলেকে এই মেয়ে কিভাবে সবার সামনে অপমান করেছে।

কিন্তু আদিত্য চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে আছে ।ওর চেহারা দেখে কারো বুঝার উপায় নেই ওর মনে কি চলছে।এর মধ্যে প্রিন্সিপাল স্যার এসে আফজাল চৌধুরী ও আদিত্যর কাছে এসে মাফ চাইছে নূরের ব্যবহারের জন্যে। আদিত্য নিজের হাত দিয়ে ইশারা করে প্রিন্সিপাল কে মাফ চাইতে না করে দেয়। প্রিন্সিপালের মনের ভয় এখনো কাটেনি। ওনার শরীর এখনো কাঁপছে। কিন্তু ওনার কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে।
নূর স্টেজ থেকে সোজা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে আসে।ও না চাইতেও কেনো বারবার ওর দেখা এই লোকটির সাথে হয়ে যায় আল্লাহ জানে। নূরের পিছু পিছু এসেছে নূরের বন্ধুরাও। আব্রাহাম এসে নূরকে বলল।
কি হয়েছে তোর তুই, আদিত্য চৌধুরী কে কেনো এভাবে সবার সামনে অপমান করে চলে এসেছিস। তুই চিনিস উনাকে উনি কতটা…

আব্রাহাম আর কিছু বলার আগে রুদ্র আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
কি বলছিস দোস্ত,আদিত্য চৌধুরীর ওর স্বামী হয়।তাই ওর অধিকার আছে নিজের স্বামীকে এমন একটু আধটু অপমান করার।এত প্যারা নিচ্ছিস কেনো।ওর স্বামী নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে জানলে আরো খুশিতে লাফাবে ওকে কিছু বলবে না।
রুদ্রের কথা শুনে,সকলে হা করে নূরের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে আরশাদ নূরকে বলল।
কি আদিত্য চৌধুরী তোর হঠাৎ করে হওয়া স্বামী।
নূর আরশাদের কথার কেনো উত্তর না দিয়ে সোজা রুদ্রের সামনে এসে দাড়ালো। কেউ বুঝতে পারছে না নূর কি করতে চাইছে। নূর হঠাৎ নিজের দু হাতের আঙ্গুলের মুঠোয় রুদ্রের চুল আঁকড়ে ধরলো এবং জোড়ে জোড়ে টানতে টানতে বলল।
তোকে কতবার বলেছি না,এই গুন্ডাকে আমার স্বামী বলবি না। তবুও বারবার আমার কানের সামনে স্বামী স্বামী করে চিল্লাতে থাকিস।

নূরের চুল ধরে টানায় রুদ্র কিছুটা ব্যাথা পায় এবং নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
ছাড় কি করেছিস আমার এত সুন্দর সিল্কি চুল নষ্ট করে ফেলছিস।
নূর কিছু বলার আগেই পিয়ন এসে নূরকে বলল।
আপনাকে স্যার দ্বিতীয় তলার অফিস রুমে ডাকছে,
পিয়ন কথাটি বলেই চলে যায়।সকলে বুঝে গেছে নূরকে স্যার কেনো ডেকে পাঠিয়েছে।তাই আরশাদ নূরকে বলল।
স্যার প্রিন্সিপাল রুমে না ডেকে অফিস রুমে কেনো ডেকেছে।তাও আবার দ্বিতীয় তলার অফিস রুমে।চল আমরাও তর সাথে যাবো।

আরশাদের কথায় সকলে সম্মতি প্রকাশ করলেও নূর বলল।
তার কেনো দরকার নেই,আমি নিজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো তোরা এখানে দারা।
কথাটি বলেই নূর চলে যায় অফিস রুমের উদ্দেশ্যে।
নূর অফিস রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি চাইলো।তখনি অনেক গম্ভীর গলায় কেউ বলে উঠলো।
ভিতরে আসো,

নূর ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো কাউচের উপর পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে আদিত্য। আদিত্য কে দেখে নূরের শান্ত হওয়া রাগ যেনো আবার মাথা চারা দিতে চাইছে। তবুও নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।
প্রিন্সিপাল স্যার কোথায় আমি ওনার সাথে দেখা করতে এসেছি।
আদিত্য বলল।
প্রিন্সিপাল কে দিয়ে কি করবে।
স্যার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে ,তাই আমি এখানে এসেছি। স্যার যখন এখানে নেই তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
কথাটি বলেই নূর দরজার কাছে গিয়ে দেখতে পেলো দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। নূর বেশ অবাক হলো দরজা বন্ধ দেখে এবং ভাবতে লাগলো দরজাটি বন্ধ করলো কে। নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্যের নামই ওর মাথায় এলো ও যখন পিছন ফিরলো তখন…

নূর চলে যেতেই হঠাৎ রুদ্রের নাম ধরে কেউ ডেকে উঠলো।
রুদ্র,
ডাক শুনে সকলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো একটি মেয়ে রুদ্রের দিকে ছুটে আসছে।সেই মেয়েকে রুদ্র খুব ভালোভাবে চিনে শুধু রুদ্র কেনো ওর বন্ধুরাও এই মেয়েকে খুব ভালোভাবে চিনে। মেয়েটিকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে আব্রাহাম ওর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলল।
ও কখনো রুদ্রকে এত তাড়াতাড়ি ছাড়বে না।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৩

মেয়েটি দৌড়ে এসে সোজা রুদ্র কে জাপটে ধরে। কিন্তু একি রুদ্রের এত শক্ত বাহু মেয়েটির এত নরম কেনো মনে হচ্ছে।আর হাইটেও রুদ্রকে খাটো খাটো মনে হচ্ছে।মেয়েটি কিছু বুঝে উঠার আগেই। মেয়েটি যাকে জাপটে ধরেছিল সে মেয়েটিকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে একটি চর মেরে দিলো। মেয়েটি সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৫