রাজবধূ পর্ব ৫৪
রেহানা পুতুল
রাজের হাত থেমে যায় যাদুকরের যাদুর মতো। শিখা যেন তার জীবনে কখনো ম্যাজিক। কখনো চুম্বকের আকর্ষণ শক্তি।
তখন আঙিনায় দু’জন পুলিশসহ কয়েকজন মানুষের পদধ্বনি দেখা গেলো। শিখা,রাজ, তালুকদারসহ সবাই ভীত ও অদ্ভুত চোখে নির্বিকার ভঙ্গিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
নূরী এগিয়ে গিয়ে দাওয়ায় পা রাখলো। ঘরের ভিতরে নজর পড়লো তার। কাঁচের অজস্র গুঁড়ি দেখে বুঝতে পারলো একটু আগে মহাপ্রলয় ঘটেছে এইখানে। যেন যুদ্ব শেষে ধ্বংসাবশেষের উজ্জ্বল চিহ্নগুলো কিছু জানান দিচ্ছে তাকে।
তিনি শিখাকে বললেন,
“চলে আয় মা। আমরা তোরে নিতে আইছি। যেই বাড়িতে আমার মাইয়ার প্রাণ সংশয়। সেই বাড়িতে আর একদিনও থাকা ঠিক নয় তোর।”
রাজ নূরীর কথার সঙ্গে একমত হলো। বলল,
“আম্মা,আপা,দুলাভাই আপনারা ভিতরে আসুন। বসেন। আমিও চাই শিখা ফাইনাল পরিক্ষা পর্যন্ত আপনার কাছে থাকুক। তারপর আমি তাকে আমার কাছে নিয়ে যাবো সারাজীবনের জন্য। কিন্তু পুলিশ কেন?”
“পুলিশ আমি আনছি। কে বিষ দিলো জিজ্ঞাসাবাদ করণের জন্য। শিখার কাউরে সন্দেহ হইলে তারে হাতকড়া পরাইয়া নিয়া যাইবো থানায়।”
জবাবে বলল নূরী।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমরা বসতে আসিনাই আপনাদের বাড়ি। আমার বোনরে নিয়ে যাইতে আসছি। একটা জল্লাদ পরিবারে মরার জন্য পইড়া থাকার কোন মানেই হয় না।”
আঙিনায় দাঁড়িয়ে তেজী স্বরে বলল শিখার বড় বোন আলো। সঙ্গে সঙ্গে আলোর স্বামীও কাঠ কাঠ গলায় বলল,
“হ্যাঁ সেটাই। এই শিখা,তোমার সব গোছায়া নাও। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।”
বরকত ঘরের ভিতর হতে কিছু কাঠের চেয়ার বের করে উঠানে নিয়ে রাখলো। পুলিশ দুজন বসলো পায়ের উপর পা দিয়ে। অন্যরাও বসলো চেয়ার পেতে। তালুকদারও বের হয়ে গিয়ে বসলো তাদের পাশে। রাজের পরিবারের লোকজন ঘরের ভিতর থেকে বের হলো না। তারা প্রত্যেকে আড়ি পেতে শুনতে লাগলো পুলিশ ও বাকিদের আলাপ আলোচনা।
রাজ বরকতকে নির্দেশ দিয়ে বলল,
“জোছনাকে বল সবার জন্য চা বানাতে।”
রাজ পুলিশদেরকে তারমতো করে বুঝিয়ে বলল সব। এবং অনুরোধ করলো চলে যেতো। একজন পুলিশ দুর্বোধ্য হেসে বলল,
“আপনার কথায় ত আমরা চলে যাব না। ভিকটিমকে ডাকুন। তার বক্তব্য শুনি। তরুণী গৃহবধূ নির্যাতনের মামলায় সবাইকে ঢুকিয়ে দিব।”
রাজ শিখাকে ডাকলো। শিখা উঠানে পুলিশদের সামনে এলো।
“আপনার কাউকে ডাউট হয়?”
“নাহ!”
“তাহলে ডাক্তাররা কি মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে?”
“আমি কি তা বলেছি?”
“তাহলে কাউকেই সন্দেহ করছেন না কেন? কিসের ভয়ে? কার ভয়ে? মুখ খুলুন। আমরা আপনার পাশে আছি।”
“আমার কারো উপর কোন অভিযোগ নেই। আর যদি থাকেও সেই বদলা আমি নিতে চাই। অন্যকেউ নয়।”
“আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন?”
“কিসের আইন? আমি কি কাউকে হত্যা করবো নাকি? অন্যায় অবিচারের বদলা নিতে জানলে,না মেরেও ভয়ংকরভাবে নেওয়া যায়। দয়া করে আপনারা আসতে পারুন।”
পুলিশ দুজন উঠে দাঁড়ালো। বিরক্ত গলায় নূরীকে বলল,
“এমন তেজোদীপ্ত, তেজস্বী,আত্মপ্রত্যয়ী,নির্ভীক মেয়ে হলে থানা, পুলিশ, আইন লাগে না অপরাধীর বিচার করতে। আমাদের অযথাই হয়রানি করলেন।”
বরকত ট্রে ভর্তি চা নাস্তা এনে দিলো। খাওয়া শেষে পুলিশ দুজন হনহন পায়ে তালুকদার বাড়ির প্রাঙ্গণ ছাড়লো। ঘরের ভিতর হতে সবাই শিখার কথা শুনলো। তারা একে অপরের দিকে দৃষ্টি বিনিময় করলো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে।
সুফিয়া ফিসফিসিয়ে অস্পষ্ট গলায় মুখ খিঁচিয়ে অন্যদের বলল,
“দেখলি মাইয়ার কথার ধার? কথা না, মনে হয় তলোয়ার চালাইতাছে। আমার মন চাইতাছে রাম দা টা নিয়ে এহনিই এই মাইয়ার ধড় আলগা কইরা ফালাই।”
রাজ শিখাকে ঠান্ডা গলায় আদেশ দিলো সব নিয়ে একবারে চলে যেতে তার মায়ের সাথে।
“আমি যাব না। বাকিটা রাতে বলব আপনাকে।”
চনচনে গলায় বলল শিখা।
রাজ আর বাক্য বিনিময়ে গেল না শিখার সঙ্গে।
নূরী মেয়ের উপর ক্ষুব্ধ হলো। শাসনের মতো করে বলল,
“তুই চইলা আয় কইলাম। জান দিবি নাকি এই জালিমদের ঘরে থাইকা?”
শিখা মা নূরীকে জড়িয়ে ধরলো। নরম গলায় বলল,
“আমি কোথাও যাব না আম্মা। তোমার অশ্রুর বিনিময়ে আল্লাহ তোমার মেয়ের জীবন ভিক্ষা দিয়েছে। তেমনিই আমি বিশ্বাস করি, তোমার দোয়া থাকলে আল্লাহ সব বিপদ থেকে তোমার মেয়েকে হেফাজত করবে। একজন সন্তানের ভালো থাকার জন্য মায়ের দোয়ার বিকল্প কিছুই নেই এই পৃথিবীতে। রাগ করো না আম্মা। তবে পুলিশ নিয়ে আসা তোমার উচিত হয়নি একদম।”
তখন তালুকদার বলে উঠলো শিখার উদ্দেশ্য,
“না বৌমা। উনি ভুল করেন নাই। একজন মায়ের জায়গায় উনি ঠিকই আছে। তার মেয়েরে বিষ দিয়া মাইরা ফালাইতে চাইছে। উনি বইসা থাকবো? সেদিন তুমি মরতে মরতে বাঁইচা গেলা মালিকের ইশারায় ও তোমার মায়ের ডাকে। তার আগে তো তুমি আমাদের কারো ডাকেই সাড়া দাওনি। চোখের পাতা মেলোনি। জ্ঞানহারা ছিলা। জুবায়েরসহ আমরা সবাই তোমারে কত ডাকলাম।”
আলো বোনকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোর জামাইতো চায় তুই এখানে না থাক কলেজের ফাইনাল হওয়া পর্যন্ত। তবুও থাকবি তুই? আজব!”
শিখা বোনের কাঁধে হাত রেখে উত্তপ্ত প্রতিবাদী স্বরে বলল,
“নাহ আপা। তোরা চলে যা। ঘরের পরিবেশ থমথমে। তাই থাকতে বলব না কাউকে। হিংসা, বিভেদ আর বিদ্বেষের বশবতী হয়ে আমার জীবন নিয়ে জুয়া খেলায় কিছু হায়েনারা মেতে উঠেছে। আমি সেই জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করবো। এবং এর শেষ পরিণতি দেখে ছাড়বো। তালুকদার বংশে রাজবধূর পরিচয়কে মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করাই আমার আজকের ব্রত ও অঙ্গীকার!”
রাজ তড়িতেই শিখার দিকে তাকালো। বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে কিছু একটা গোপনে আওড়ে নিলো। যা শিখার অজানা রইলো।
শিখার পরিবারের সবাই ত্যক্তবিরক্ত হয়ে চলে গেলো। রাজ তাদের সঙ্গে গিয়ে বেবিট্যাক্সি ধরিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিলো। বলল,
“আম্মা,আপা,দুলাভাই আপনারা শিখাকে নিয়ে একদম ঘাবড়াবেন না। টেনশন করবেন না। আমি শিখার সঙ্গে ছায়াসঙ্গী হয়ে আমরণ রইবো। বরং শিখা এখন কাকে কি করে বসে। তুফানের মতো কোনদিকে বহে। সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত।”
বরকত,মতির মা,জোছনা, ডলি মিলে ঘরের মেঝে পরিস্কার করে ফেলল। ভাঙ্গাচোরা জিনিসপত্র ফেলে দিলো বাইরে শুকনো সরু খালের মধ্যে। সেদিন দেরি করে বাড়ি ফিরলো জুবায়ের।
আমেনা তাকে বলল,
“আইজকাল তুই কই যাস? কি নিয়া ছুটাছুটি করতাছস? বুঝি না।”
“নতুন ব্যবসা দাঁড় করাবো মা। তাই সেদিকে কিছু কাজ বেড়ে গিয়েছে।”
“কি কস? কবে থাইকা শুরু করবি? কই করবি?”
“আরো কয়েকমাস সময় লাগবে সব ঠিক হতে মা। দোয়া করবেন। আর কই করবো তা এখনো ঠিক হয়নি। হলে সবার আগে আপনিই জানবেন। ”
“ওহ! আইচ্ছা। বিকালে বাড়িতে পুলিশ আইলো। রাজের শাশুড়ী পুলিশ নিয়া আইলো। মা আগুন দেইখাই তার মাইয়াও একটা আগুনের গোলা হইছে। আইজ টের পাইলাম। বাবাগো,মাইয়ার কি ঠনঠনা কথা পুলিশের লগে।”
“এমন না হলে এদের ঘরে টিকে থাকা মুশকিল মা। একদম উচিত কাজ করেছে শিখা।”
রাতে শিখা ঘুমাতে গেলে রাজ শিখার কপালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
“এই আগুনী মেয়ে,রাতে কিছু জানানোর কথা ছিলো আমাকে? এতকিছুর পরেও কেন আমাদের বাড়ি থাকবে? কেন আম্মার সাথে যাওনি? প্রাণের মায়া নেই?”
শিখা প্রলম্ভিত স্বাস ছেড়ে বলল,
“প্রাণের মায়া একটা প্রতঙ্গেরও আছে। বাঁচার সাধ কার না থাকে? প্রতিটি প্রাণীই বাঁচতে চায়।”
“তাহলে গেলেনা কেন? মরার জন্য পড়ে রইবে?”
“একদম না মিস্টার ফড়িং ভাই। আমার জন্য আপনার চোখে যে ভালোবাসা ও যত্ন দেখেছি,সেই ভালোবাসার জোরেই আমি এই বাড়িতে থাকবো। এবং খুব ভালোভাবেই থাকবো। হয়তো সেই সুদিন আনতে আমাকে আরো অনেক নির্যাতন সইতে হবে। আপনার ভালোবাসার কাছে এসব অতি তুচ্ছ। আমি হাসিমুখেই সব বরণ করে নিবো। আপনার মতো সঙ্গী যেই মেয়ের জীবনে আছে,তার মন্দ থাকার,দুঃখে থাকার সুযোগ নেই। আপনি মহান! আপনি আমার শক্তি!”
“দিনে দিনে খুব লজিক্যাল কথাবার্তা শিখে যাচ্ছো। গুড! জুবায়েরের ফোন পেয়ে সমস্ত কাজ ফেলে ছুটে এসেছি। সকালে চলে যেতে চাচ্ছি। তুমি বললে থেকে যাবো। ”
“যেতে দিতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু আপনার কাজের ক্ষতি হবে ভেবে বলছি, যেতে পারেন।”
“যাবো। কিন্তু মনের ভিতর এখন অহর্নিশ একটা ভীতি কাজ করবে তোমার জন্য। যেই গভীরতম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তোমাকে নিয়ে,উফফস! তুমি সাবধানে থেকো। চোখ কান সজাগ রেখো চলো। মতির মা, জুবায়েরকে আগেই বলে রেখেছি তোমার দিকে খেয়াল রাখার জন্য।এনিওয়ে,তোমার রেজাল্ট কেমন হয়েছে প্রথম বর্ষের?”
“রেজাল্ট আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। আপনি দুঃশ্চিন্তা করবেন না। হোঁচট খেতে খেতে একদিন এই আমি শক্তিশালী হয়ে উঠবো বটবৃক্ষের ন্যায়। ভর্তায় কে বিষ মিশিয়েছে সেটা আমিই বের করবই যেকরেই হোক। যেভাবেই হোক। কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলবে এই অগ্নিশিখা ”
“সেটা কিভাবে প্রজাপতি?”
“সেটার আইডিয়া বের করবো আমি। তারপর ফাঁদের জাল ছড়িয়ে দিবো। সেই জালে তারা আটকা পড়বে। ফেঁসে যাবে।”
এভাবে ভারি আলাপচারিতার মাঝে শিখাকে গভীরভাবে স্পর্শ দিতে থাকলো রাজ। শিখা তাতে বাধার দেয়াল তৈরি করল না। রাজকে সুখী করা স্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্বেরই অংশ। দুজনে মেতে উঠলো অনুভূতি তোলপাড় করা অন্তরঙ্গতায়। আবেশে হারায় দুটো দেহ দুটো প্রাণ।
রাজ চলে যায় পরেরদিন সকালে। যাওয়ার আগে বরাবরের মতো সবাইকে অনুরোধ ও হুমকি দিয়ে বলে,
“শিখা যেহেতু আপনাদের সবার কাছে এতই চক্ষুশূল, তাহলে তারসাথে ভালো আচরণ না করেন,অন্তত তার কোনরকম ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। দ্বিতীয়বার শিখাকে কেউ মেরে ফেলার চেষ্টা করলে, কসম খোদার, আমি তাকে জীবিত রাখব না।”
সবাই নিঃশ্চুপ! ভ্রুক্ষেপহীনভাবে অন্যদিকে চেয়ে রইলো। যেন রাজের কথা কারোই কর্ণগোচর হয়নি। রাজ বেরিয়ে গেলো ঘর হতে। চলে গেলো তার গন্তব্যে।
তার পর হতে শিখা সাবধান হয়ে চলাফেরা করে। বিশেষ সজাগ দৃষ্টি রেখেছে সবকিছুতে। ঘরের নিদিষ্ট কিছু মানুষকে করে ফেলল তার নজরবন্দী। সবাই শান্ত স্বাভাবিক তারসাথে। সেও সবার সাথে হাসিমুখেই চলাফেরা করছে। সুযোগ হলেই ঘরের কাজকর্ম করছে।
শিখা একদিন কলেজ হতে আসার সময় দেখলো একটি ধান ক্ষেতের আলে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষের লাঠি নিয়ে মারমুখী কাণ্ড! তখন পথের পাশে শাক তুলছিলো একজন অল্পবয়েসী দরিদ্র গৃহবধূ।
শিখা তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলো। কারণ হিসেবে যেটা তার কানে এলো, তাতে শিখার কান গরম হয়ে গেলো। সে মনে মনে বলল,
“এই অবস্থা তাহলে তালুকদার পরিবারের? এই তালুকদারগিরি? ধিক্কার! আমি এর বিহিত করেই ছাড়বো। কথা বলবো এদের বাড়িতে গিয়ে।”
তারপর আরেকদিন শিখা কলেজে গেলে বইয়ের ভিতর একটা চিরকুট পায়। যাতে আলাদা করে দুটো উদ্বৃতি লিখা ছিলো,
“তুমি আমার জীবনে নেই, কিন্তু হৃদয়ে আছো।”
“মৃত মানুষ হারানোর চেয়ে জীবিত মানুষ হারানোর দুঃখ,বেদনা ভয়াবহ!”
শিখা দেখলো হাতের লিখা সম্পুর্ন নতুন। আগের চিরকুটগুলোর সঙ্গে কোন মিল নেই। শিখা বুঝে নিলো ক্লাসমেট কোন ছেলে দিয়েছে। কয়দিন ধরে ক্লাসের একটা ছেলে তার পিছু নিয়েছে। শিখার তেমন ভাবান্তর হলো না চিরকুটটা নিয়ে। বইয়ের ভিতরে আবার রেখে দিলো।
তার কয়েকদিন পর রাজের নামে একটা চিঠি আসে তার অফিসের ঠিকানায়। রাজ চিঠিটি খুললো। পুরো সাদা পাতার মাঝখানে লাল সাইনপেন দিয়ে বড় বড় অক্ষরে মোটা করে লিখা,
“কেউ হারায় বলেই কেউ পায়। এটাই জগতের নিয়ম।”
……নো বডি।
রাজ হোঁচট খেলো মনে মনে। প্রেরকের নাম ও ঠিকানা তার অচেনা। সে প্রেরকের ঠিকানায় নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু চেষ্টা বৃথা হলো। প্রেরকের সেই ঠিকানা সম্পূর্ণ ভুল। রাজ অবাক হলো। কিন্তু চমকালো না। থমকালো না। কারণ এরচেয়েও বহু জটিল বিষয় ও মানুষ তার ফেইস করতে হয়।
বাড়িতে এক শুক্রবার দুপুরে একজন অচেনা ঘটক এলো। সে ঘরের সিঁড়িতে বসলো। সুফিয়া বিবি হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এসে বিপরীত সিঁড়িতে বসলো। আদুরীর বিয়ে ও তালাকের বিষয়, গোপন করে পাত্র খোঁজা হচ্ছে নতুন করে।
ঘটককে মিষ্টি জর্দা দিয়ে পান দিলো। ঘটকের কথা শুনে জুবায়ের বের হয়ে এলো। সেও বসলো সিঁড়িতে। ঘটক সুফিয়া বিবিকে বলল,
“আমাকে তালুকদার সাহেব বইলা রাখছে আপনাদের বিবাহযোগ্যা কন্যার জন্য সুপাত্র খুঁজতে। এখন এক পাত্রের বাপে কইলো,
তালুকদার ঘরের মাইয়া আবার কি যাচাই বাছাই করুম? অত্যাবশ্যক নহে। মাইয়ারে আমি দেখছি। মাশাল্লাহ। চলনে বলনে যেন ঝর্নার স্রোতধারা।
পাত্র বিদ্যাশ থাকে। দুবাই। আপনাদের আপত্তি না থাকলে তারা আইসা বিয়ার পাকা কথা কইবার চায়।”
সুফিয়া জবাবে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ। আমরা একটু বোঝাপড়া কইরা আপনারে খবর দিমু।”
জুবায়েরও সুফিয়ার সঙ্গে মত প্রকাশ করলো। আদুরীর দ্বিতীয় বিয়ে জরুরি। এভাবে একলা জীবন কতদিন।তারপর তালুকদার পাত্রপক্ষের খোঁজ খবর নিলো। সব পছন্দ হয়েছে। তারপরের শুক্রবার পাত্রপত্র আংটি পরাতে এলো আদুরীকে। শাড়ি পরিহিত হালকা সাজে আদুরীকে তাদের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।
পাত্রের বাবা বিস্মিত হয়ে বললেন,
রাজবধূ পর্ব ৫৩
“একি! আমরাতো এই পাত্রী পছন্দ করিনি। অন্যপাত্রী পছন্দ করেছি। তারকথা বলেছি? তালুকদার সাহেবের কয় কন্যা?”
জুবায়ের বুঝতে পারলো সমস্যা কোথায় হয়েছে। সে উঠে গেলো বসা থেকে।