রেড রোজ ২ পর্ব ৩৮

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৮
ফারহানা নিঝুম

কেঁদে কেঁদে অবস্থা খারাপ উৎসার,মিহি প্রচন্ড রকম ব্যথা পেয়েছে। সিঁড়ি থেকে পড়ে পা ভে ঙে গিয়েছে তার,উহু পড়েনি তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এই তো আজ দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে মিহি উপরে গিয়েছিল।
যেতে যেতে আবার থেমে যায়,উৎসা নিচে দাঁড়িয়ে আছে।মিহি বলে উঠে।
“উৎসা চলে আয় উপরে।”
উৎসা মাথা দুলিয়ে বলে উঠে।
“তুমি যাও আপু আমি আসছি।”
তখনই উৎসা দেখলো মিহির ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আফসানা । আকস্মিক উৎসার চোখের সামনে মিহি কে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আফসানা। আঁ’তকে উঠে উৎসা।

“আপুউ..
মিহি হুঁ মিড় খেয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল, ফলস্বরূপ মাথায় এবং পায়ে একটু বেশী ব্যথা পায়।
বিছানায় শুয়ে আছে মিহি তার জ্ঞান ফিরেননি এখনো। ডক্টর এসে দেখে গিয়েছে,আপাতত মিহির কয়েক মাস বেড রেস্টের প্রয়োজন হবে।পায়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে,মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
“বিছানার এক কোণে বসে আছে উৎসা, আজকে সে আফসানা কে ছাড়বে না।
ঐশ্বর্য আর রুদ্র অনেকবার উৎসা কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু উৎসা শুনেনি,তার উপর জিজ্ঞেস করেছে কী করে পড়ে গেল মিহি? সেটাও বলেনি উৎসা।
তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে আফসানার রুমে গেল, রুমে প্রবেশ করেই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এই তুই এটা কী করছিস?”
আকস্মিক আ’ক্রম’ণে টাল সামলাতে পারলো না আফসানা,সোফার উপর পড়ে গেল। উৎসা রিতিমত ওনার গলা চেপে ধরেছে।
“তোমাকে নিষেধ করেছিলাম আমার বোনের দিকে চোখ তুলে না তাকাতেই কিন্তু তুমি? তোমার সাহস হলো কী করে?”
আফসানা ব্যাথায় ক’কি’য়ে উঠলো।
“ছাড় আমাকে!তোর সাহস..
“সাহসের এখনও কিছুই দেখোনি তুমি! আমি তোমাকে আজ শেষ করে ফেলব।”
আফসানা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল উৎসা কে। চিৎকার করে বলে উঠে।
“আজকে তো শুধু এটুকু করেছি পরের বার তোর বোন কে মে রেই ফেলব।যদি না তুই এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাস!”

উৎসা থমকে দাঁড়ায়।
“মানে? কী বলতে চাইছো তুমি?”
আফসানা হাত ঝেড়ে বলে উঠে।
“তুই এই বাড়ি ছেড়ে সব কিছু ছেড়ে চলে যাবি। কারণ আমি যতটুকু বুঝলাম তোর থাকাতে আমার সমস্যা হবে। একে তো ঐশ্বর্যের মাথা চিবিয়ে খেয়েছিস এখন নিশ্চয়ই এই বাড়িতে দ খল করে বসবি।তাই যদি নিজের বোন কে বাঁচাতে চাস তাহলে চলে যা এখান থেকে। না হলে আমি কিন্তু তোর বোন কে…
“না তুমি এমন করতে পারো না মামী।”
আফসানা বাঁকা হাসলো।

“আমি কী পারি আর কী পারি না তুই তো নিশ্চয়ই দেখেছিস আজ? এখন তুই ভেবে দেখ কী করবি?তোর কাছে শুধু আজকের রাতটা আছে।চলে যা এখান থেকে না আমি তোকে…
উৎসা কড়া চোখে তাকাল আফসানার পানে।
“ঠিক আছে যাব চলে আমি, কিন্তু তোমাকে আমি ছাড়ব না।আর আমার অনুপস্থিতিতে যদি আমার বোনের….
“আমার তোর বোন কে নিয়ে প্রবলেম নেই,আপাতত তুই বিদায় হ।”
উৎসা তাকিয়ে রইল ক্ষণকাল। অতঃপর বেরিয়ে এলো,চোখ দুটো তার ঝাপসা হয়ে আসছে।। সামনের দিক তাকাতেই নিঃশ্বাস আটকে আসার উপক্রম হলো।
ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে আছে, আকস্মিক উৎসা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে। হয়তো এই প্রথম উৎসা নিজ থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।

“হেই রোজ হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে হাত রাখলো, অন্য হাতে গলা জড়িয়ে আছে। কাঁধের কাছের শার্ট ভিজে যাচ্ছে চোখের পানিতে।
“আই মিসড ইউ।”
ঐশ্বর্য অল্প হাসলো, অতঃপর বলিষ্ঠ হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে উৎসার।
“আই মিসড ইউ টু বেইবি।”
ঐশ্বর্য কন্ট্রোললেস হলো,পাশের করিডোরে‌ টেনে নিয়ে গেল উৎসা কে। চেপে ধরে অধরে অধর,হাত চলে যায় চুলের ভাঁজে। ঐশ্বর্য আ’শ্লে’ষে চুষে নিল প্রেম সুধা।

ভোর হলো প্রকৃতির এক শান্ত ও রহস্যময় মুহূর্ত। রাতের আঁধার ভেদ করে আলোর আগমন ঘটে উদয় হয় ভোর। সূর্যের প্রথম কিরণ ধীরে ধীরে আকাশকে রাঙিয়ে তোলেছে ,যেন এক শিল্পীর তুলির আঁচড়ে সৃষ্টি হচ্ছে নিত্যনতুন রঙের মেলবন্ধন। ঠান্ডা বাতাস শরীরে এক ধরনের সজীবতা এনে দেয়, আর পাখির কিচিরমিচির শব্দ জানান দেয় নতুন দিনের সূচনা। ভোরে জমে থাকা শিশিরবিন্দু ঘাসের উপর মুক্তার মতো ঝলমল করে। এই সময় প্রকৃতি থাকে নিস্তব্ধ, অথচ এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক অভাবনীয় প্রশান্তি।এ যে এক অন্য রকম অনূভুতি।
মানুষের ভিড় জমবে কিছুক্ষণের মধ্যে।

এই ভোর সকালে ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল উৎসা,কাল ছিল তার এই বাড়িতে শেষ দিন।আর হয়তো কখনো আসবে না আর আসলেও আদেও কখনও ঐশ্বর্যের সঙ্গে তার দেখা হবে কী না তা নিয়ে সন্দিহান উৎসার।শেষ বারের মত এক নজর দৃষ্টি বোলায় বাড়ির দিকে। চেয়ে রইল ক্ষণকাল অতঃপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল।সবাই উঠার আগেই যেতে হবে তাকে।
মিনিট দশেক পর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যায় উৎসা,উঠে পড়লো বাসে।আপাতত এখন সাড়ে সাতটা বাজে, এখন কেউ উঠবে না ঘুম থেকে।
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই পরিচিত জায়গা ছেড়ে চলে গেল উৎসা।
পুরো বাড়ি জেগে উঠেছে,আজ আফসানা আর কাজের বুয়া মিলে কাজ করছে। আফসানা মহা খুশি, তিনি জানেন এতক্ষণে উৎসা বাড়ি ছেড়ে হাওয়া।সেই আনন্দে কাজ করে চলেছে,নিকি ঘুম থেকে উঠেছে সবে, নিচে এলো।
“উৎসা বনু একটা কড়া কফি দে না তোর হাতের!”
নিকির মাথা ব্যথা করছে,উৎসার হাতের কফি খেলে একদম ঠিক হয়ে যাবে।
নিকির সামনে কফি নিয়ে হাজির হলো আফসানা।

“এই নে তোর কফি।”
আফসানা কে দেখে কিঞ্চিৎ চমকে উঠে নিকি।
“মা তুমি? আমি তো উৎসা কে…
“সেই মহা রাণী এখনো ঘুমাচ্ছে!”
মুখ বাঁকিয়ে বললো আফসানা।নিকি আরেক দফা চমকে উঠে। উৎসা এখনো ঘুমাচ্ছে? এটা বিশ্বাস যোগ্য?
নিকির সন্দিহান দৃষ্টি দেখে আফসানা বলে উঠে।
“হয়তো শরীর খারাপ তাই এখনো ঘুমাচ্ছে।”
নিকা মাথা দোলায়, সত্যি মেয়েটা পড়াশোনা নিয়ে যতটা পরিশ্রম করে তার উপর বাড়িতে অনেক কাজ এগিয়ে দেয়। তাতে শরীর খারাপ হবারই কথা!
সময় চলেছে আপন গতিতে,নিকি অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিল। রুদ্রও প্রায় রেডি,নিকি যাওয়ার আগে এক নজর উৎসা কে দেখে যেতে চাইলো।
হাঁটতে হাঁটতে দুতলায় উৎসার রুমের দিকে গেল, দরজা বন্ধ আছে। আশ্চর্যের ব্যাপার দরজার সামনে গিয়ে কপালে ভাঁজ পড়লো নিকির।

“দরজা বাইরে থেকে বন্ধ!”
বাইরে থেকে দরজা লাগানো,নিকি খুলে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে কেউ নেই। তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্ক জ্ব’লে উঠে তার, দরজা বন্ধ হলে উৎসা কোথায়?
“উৎসা? উৎসা? কোথায় তুই? উৎসা?”
নিকি আশেপাশে কিছুক্ষণ খুঁজে দেখলো,মনে পড়ল ছাদের কথা। হয়তো ছাদে আছে, দ্রুত পায়ে ছাদের উদ্দেশ্যে উঠে গেল নিকি। কিন্তু চমকানোর ব্যাপার সেখানেও নেই উৎসা।এবারে নিকি প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠে,দৌড়াতে দৌড়াতে নিচে গেল।
“ভাইয়া উৎসা কে খুঁজে পাচ্ছি না।”
রুদ্র কিঞ্চিৎ অবাক হলো।
“কী বলছিস? পাওয়া যাচ্ছে না মানে?”
“ভাইয়া ওর রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করা, কোথাও নেই ছাদেও দেখেছি।”
তৎক্ষণাৎ মাত্র জগিং থেকে ফিরেছে ঐশ্বর্য আর জিসান। ঐশ্বর্য কে দেখে এগিয়ে গেল নিকি।
“ভাইয়া উৎসা কে খুঁজে পাচ্ছি না।”
“হোয়াট?”

ঐশ্বর্যের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো,নিকি সবটা খুলে বলে। ঐশ্বর্য ত্বরিতে ছুটে উপরে গেল, সত্যি রুমে কেউ নেই। আকস্মিক ঐশ্বর্য কী একটা ভেবে আলমারি খুলে দেখলো। ভেতরে কিছু নেই, কোনো জামা কাপড় কিচ্ছু না। মূহূর্তে ঐশ্বর্যের মাথায় আ’গু’ন জ্ব’লে উঠে, বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শিট শিট শিট!”
ঐশ্বর্য রুম থেকে বেরিয়ে আফসানার কাছে গেল, তিনি সিঁড়ি বেয়ে নিচেই যাচ্ছিল।
“মিসেস মহিলা উৎসা কোথায়?”
ঐশ্বর্যের প্রশ্ন কপাল কুঁচকে নিল আফসানা, বিরক্তের রেশ টেনে বলে উঠে।
“তোমার কী মনে হয় আমি উৎসার চাকর? সবসময় ওর খবর নিয়ে রাখব?”
ঐশ্বর্য চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে নিল, নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।
“দেখুন আমি জানতে চাই উৎসা কোথায়?”
আফসানা নাহুচ করলো।
“জানি না আমি, বিরক্ত করবে না আমাকে।নিজে গিয়ে খুঁজো। যত্তসব”
ঐশ্বর্য তাচ্ছিল্য করে বলে উঠে।
“যদি ওর না পাওয়ার রিজন আপনি হয়ে থাকেন তাহলে তো আপনি গেলেন!জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”
আফসানা তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ, ঐশ্বর্য নিচের দিকে চলে গেল।

শহর থেকে অনেকটাই দূরে চলে এসেছে উৎসা,এদিকটায় ছোট্ট একটা এলাকা জুড়ে কিছু মানুষের বসবাস। উৎসা বাস স্ট্যান্ডেই বসে আছে, একজন বয়স্ক মহিলা এগিয়ে এলেন।
“কে গো তুমি? এমনে বইসা রইছো কেন?”
উৎসা মুখ তুলে তাকায়,চাপা ছাই রঙা শাড়ি পড়ে আছে বয়স্ক মহিলা।
“না দাদী এমনি বসে আছি।”
মহিলাটি আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না।
“ও মাইয়া তোমার লগে কেউ নাই? এমনে একলা কতক্ষন বইসা থাকবা?”
উৎসা মলিন হাসলো।
“আসলে আমি একাই এসেছি, আমার কেউ নেই। এখানে তেমন কাউকে চিনিও না।”
বয়স্ক মহিলা যেনো চমকে উঠলেন।মুখে হাত চেপে বলে উঠে।

“ও আল্লাহ একলা মাইয়া মানুষ কই থাকবা?চলো আমার লগে।”
উৎসার ভীষণ ইচ্ছে করলো বয়স্ক মানুষটির সঙ্গে যেতে। অতঃপর হাতের ব্যাগটা নিয়ে ওনার পিছু পিছু গেলো, মিনিট দশেক পর ভেতরের এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে আরো একজন ভদ্র মহিলার সঙ্গে দেখা হলো। বয়স্ক মহিলা কিছুক্ষণ কথা বলে উৎসার কাছে এগিয়ে এলো।
“ও মাইয়া শুনো ‌।”
“জ্বি বলুন।”
“তুমি আইজকা থাইকা এই এনার বাড়ির পাশে আরেকটি বাড়ি আছে ওইখানে থাকবার পারবা।তবে ভাড়া দিতে হইবো মাসে মাসে। পারবা তো?”
উৎসা আড় চোখে সেদিক পানে তাকায়,যাক অন্তত থাকার জায়গা পেয়েছে সে।

“জ্বি পারব, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দাদী।”
বয়স্ক মহিলা অল্প হাসলেন।
বাড়ির দিকে গিয়ে উৎসা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লো।আশ পাশে স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা ভাবে, কেমন বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে!তার উপর অন্ধকার ঘর টা। ভেতরে থাকার মতো অনেক গুলো জিনিস আছে,বাড়ির মালিক বলেছে এগুলো পড়েই আছে সে ব্যবহার করতে পারবে।
উৎসা কোনো রকমে অল্প গুছিয়ে নিল ঘর টা,তিনটে রুম। তিনটে রুম বলা যায় না একটা শোয়ার ঘর এটার পাশেই বাথরুম। ভেতরে আরেকটা রান্না ঘর,বাইরে রডের মত বেড়া দেওয়া আছে। উৎসার জন্য ঠিকঠাক,সে এখানে আরামছে থাকতে পারবে।
বিছানা ঝেড়ে সেখানটায় বসলো উৎসা, ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো চাপা দীর্ঘশ্বাস।জানে না তার বোন টা কী করছে? আফসানা বাদে বাকিদের উপর ভরসা আছে তার, নিশ্চয়ই তার বোন কে দেখে রাখবে।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৭

উৎসা কে কোথায় খুঁজে পায়নি কেউ, ঐশ্বর্য সেই কখন থেকে রুমে গিয়ে বসে আছে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ, কাউকে আসতে দেয়নি।
এদিকে মিহি না কিছু করতে পারছে আর না সইতে পারছে।এই অবস্থায় বিছানা থেকে উঠতে পারছে না সে, উৎসার জন্য কেঁদে একাকার অবস্থা তার।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৯