রেড রোজ ২ পর্ব ৪০

রেড রোজ ২ পর্ব ৪০
ফারহানা নিঝুম

বন্ধ একটি কক্ষে দুজন মানব মানবী ছাড়া আর কেউ নেই।রুম জুড়ে শুধুই তাদের ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ।
ঐশ্বর্য আলগোছে জড়িয়ে আছে উৎসা কে,উৎসা এই বুঝি কেঁদে দেবে। ঐশ্বর্য এমন কিছু করেছে যা উৎসা সত্যি নিতে পারেনি। ঐশ্বর্য উৎসার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোঁটে তাঁর দুষ্টু হাসি।
“সরুন অস’ভ্য রিক চৌধুরী আমি আপনাকে মে রে ফেলব।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“আমি কী করলাম সুইটহার্ট?”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত চেপে ধরে।
“বেহায়া লোক আপনার অস’ভ্য হাত কোথ…..
“উফ্ বেইবি আমার হাত কন্ট্রোলে থাকছে না তাতে আমার কী দোষ?”
উৎসা ওড়না টেনে গায়ে দিল, বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।
“থাকুন আপনি এখানে! আমি নিচে ঘুমাব।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে ধরে।হিস্কি টুনে বলে উঠে।

❝”দূরে যাওয়ার কথা বললে আজকেই ফার্স্ট নাইট করব গড প্রমিজ খেয়ে ফেলব সুইটহার্ট। আমি ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী ডোন্ট ফরগেট ইট।”❞
উৎসা ভীত নয়নে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে, ঐশ্বর্য পাশে থাকা কম্বল টেনে উৎসা কে জড়িয়ে ধরে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। ঐশ্বর্য ফোন ঘা’টছে,উৎসা তাকিয়ে আছে তার ঘুম আসছে না। উৎসা পাশ ফিরে শোয় তখনই ঐশ্বর্য মাথার নিচে হাত ঢুকিয়ে দেয়।ফোন ধরিয়ে দিল উৎসার হাতে, পাসওয়ার্ড খুলেও দিল। উৎসা ঐশ্বর্যের স্মার্ট আইফোন ঘা’টতে শুরু করে, গ্যালারিতে প্রবেশ করে। চার টা ফো’ল্ডার ন’জরে এলো, একটা ফো’ল্ডারে শুধু ঐশ্বর্যের ছবি। আরেকটা ফো’ল্ডারে ঐশ্বর্য জিসান আর কেয়ার ছবি,তিন নাম্বার ফো’ল্ডার ওপেন করে দেখে নিকি রুদ্র আর বাকিরা । সর্বশেষ ফো’ল্ডার ওপেন করেই চমকে উঠে , শুধু ঐশ্বর্য আর উৎসার ছবি।
উৎসা আনমনে শুধোয়।
“এগুলো কখন তুললেন?”
ঐশ্বর্য কিছু বললো না,উৎসার গলায় মুখ গুঁজে ঘুমানোর ট্রাই করছে। উৎসা ফোন অফ করে রেখে দিল, তারও এখন ভীষণ ভাবে ঘুম পাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সাড়ে আটটা বেজে গেল উৎসার। উঠে দেখলো ঐশ্বর্য নেই, আশেপাশে চোখ বুলাতেই দেখতে পেলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে ঐশ্বর্য।সে হয়তো সবে গোসল করে এসেছে, কিন্তু তার জামা কাপড়? উৎসার মনে পড়ে গেল সেই তুষার ঝড় উঠেছিল সেদিনের কথা। সেদিন ঐশ্বর্য গাড়ি থেকে জ্যাকেট বের করেছিল,তার মানে লোকটা তার সাথে এক্সট্রা ড্রেস রাখে।
“গুড মর্নিং বেইবি।”

ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে উৎসার কপালে অধর ছোঁয়ায়। মৃদু কেঁপে উঠলো উৎসা।
“আপনি চলে যাচ্ছেন? ভালোই হয়েছে। শুনুন সাবধানে যাবেন, গাড়ি আস্তে ড্রাইভ করবেন।”
উৎসা উঠে গিয়ে কিছু শুকনো খাবার ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে দিল।
“এই যে এগুলো রাস্তায় যেতে যেতে খেয়ে নিবেন।”
ঐশ্বর্য লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলে উঠে।
“ও হ্যালো আমি যাচ্ছি না সুইটহার্ট,তাই তোমার এই ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার গুলো সাইডে রাখো।”
উৎসার কপালে ভাঁজ পড়ল।

“মানে? যাচ্ছেন না মানে কী?”
ঐশ্বর্য দু হাত ভাঁজ করে বুকে গুঁজে দাঁড়ালো।
“আমি যদি যাই তাহলে তোমাকে নিয়েই যাব, আদ্যারওয়াইজ আই ওন’ট টু গো।”
উৎসা রেগে তে’ড়ে আসতে গেল তৎক্ষণাৎ কেউ কড়া নাড়ে। উৎসা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই বাড়ির মালিকিন কে দেখতে পেলো।
“আন্টি আপনি?”
ভদ্র মহিলা পিছনে উঁকি দিয়ে ঐশ্বর্য কে দেখতে পেলো।
“কী গোঁ মাইয়া সেদিন না ওই বুড়ি কইলো তুমি একলা! তাইলে এই পোলা কেডা?”
উৎসা পিছন ঘুরে ঐশ্বর্য কে দেখলো, ঐশ্বর্য এগিয়ে এলো ফিসফিসিয়ে বলল।
“হো ইজ সি?আর উনি কী বলছে?”

উৎসা ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে আলতো হাসে।
“উনি আমার হাসব্যান্ড আন্টি, মানে আমার স্বামী।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে উফ্ রেড রোজ স্বী’কার করছে তাহলে সে তার হাসব্যান্ড।
ভদ্র মহিলা মুচকি হাসলো।
“ও আইচ্ছা এইবার বুঝলাম তোমাগো ঝগ’ড়া হইছে,এর লাইগা তুমি এইখানে চইলা আইছো।”
উৎসা নিশ্চুপ, ভদ্র মহিলা আরো কিছুক্ষণ কথা বললো।
“বাইরে বড় গাড়ি খান দাঁড়ায় আছে আমি ভাবলাম কার না কার!তা জামাই বাবা তুমি মাইয়া নিতে আইছো?”
ঐশ্বর্যের ভীষণ সমস্যা হচ্ছে ভদ্র মহিলার কথা গুলো বুঝতে।তার পরেও যতটুকু বুঝল তাতেই বলে উঠে।
“হ্যা।”

ভদ্র মহিলা চলে যেতেই উৎসা দরজা বন্ধ করে দিল। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলে।
“দেখুন ঐশ্বর্য আপনি প্লিজ ফিরে যান, আমি যেতে চাই না ওখানে আর!”
ঐশ্বর্যের চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আসছে, চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য।
“আপনি যত যাই কিছু করুন আমি সত্যি ওখানে আর যাব না।”
ঐশ্বর্য আলগোছে এসে উৎসার গাল চেপে ধরে।
❝”শুকরিয়া আদায় করো এখনও আমার হাত তোমার গালে পড়েনি সুইটহার্ট। না হলে এই নরম তুলতুলে গালে থা’প্প’ড়ের দাগ থাকতো, আর নয়ত আমার দাঁতের।”❞
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
❝”আমি কন্ট্রোলে আছি কন্ট্রোলে থাকতে দাও না হলে তোমার সাথে যা করব তা মোটেও সুখকর হবে না।”❞
ঐশ্বর্য উৎসা কে ছেড়ে বেরিয়ে গেল, উৎসা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে যার জন্য এত দূর চলে এলো সেও পিছন পিছন এসে গেছে।কোথাও শান্তি নেই তার।

পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে আফসানা,মনে তার স’ঙ্ক’ট সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ঐশ্বর্য উৎসা কে নিয়ে চলে আসবে না তো?যদি উৎসা ফিরে আসে তাহলে আফসানা তাকে ছাড়বে না, বড্ড বাড় বেড়েছে উৎসা।
শহীদ সবে রুমে ঢুকেছে, আফসানা কে এমন পায়চারি করতে দেখে শুধোয়।
“কী ব্যাপার আফসানা? কী নিয়ে এত দুশ্চিন্তা?”
আফসানা মুখ ফস্কে বলে উঠে।
“আর বলো না উৎসা ফিরবে আসবে কী না তাই নিয়ে….
মাঝখানে থেমে গেল আফসানা,ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে বসেছেন তিনি। শহীদ সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো।
“এক মিনিট আফসানা তুমি কী বললে? আচ্ছা কোথাও উৎসার চলে যাওয়ার পিছনে তুমি কিছু করোনি তো?”
আফসানা আমতা আমতা করে বলে।
“আমি কী করেছি? আমার ওতো সময় নেই ওদের নিয়ে ভাবার।”
শহীদ গম্ভীর স্বরে বললেন।
“তাই যেনো হয় আশা করি। তুমি যদি এসবে থাকো এটা মোটেও ভালো হবে না।”
শহীদ রিতিমত হুম’কির স্বরে বললো কথাটা

হাতে পায়ে ভীষণ রকম ব্যথা করছে উৎসার, ব্যথার কারণে ভুলেই বসেছে ঐশ্বর্য আছে তার জন্য খাবার বানাতে হবে।এক রাশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রান্না ঘরে গেল উৎসা,আগে বাটি গুলো ধুয়ে তার পর খাবার বানাবে ঠিক করলো। উৎসা বাটি গুলো হাতে নিতেই আরো এক জোড়া হাত এগিয়ে এলো। ঐশ্বর্য উৎসার হাত থেকে বাটি গুলো রেখে ওকে টেনে নিয়ে গেল বেসিনের কাছে। হাত দুটো আলতো করে ধুয়ে দিল, তারপর টাওয়েল দিয়ে মুছিয়ে বাইরে নিয়ে এলো। ঐশ্বর্য অলরেডি খাবার নিয়ে এসেছে এখানকার সবচেয়ে ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে।
“এগুলো কেন আনলেন? আমি তো বানাচ্ছিলাম।”
ঐশ্বর্য প্লেট নিয়ে এলো, উৎসা বিছানায় বসালো।
“লিসেন ইউ আর নট মাই মেইড ওকে? ইউ আর মাই ওয়াইফ সো প্লিজ এসব কাজ করা বন্ধ করো!”
উৎসা ফুস করে উঠলো।
“একশো বার করব।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে এগিয়ে গিয়ে উৎসার থুতনি কা’ম’ড়ে ধরলো। উৎসা ব্যাথায় খিঁচিয়ে চোখ দুটো বুজে নিল।
“নেক্সট টাইম যতবার করবে ততবার বাইট করব।”
উৎসা বেঁকে বসলো, বাজে মানুষ একটা!
“আপনি এমন করেন কেন সবসময়?”
ঐশ্বর্য উৎসার চুলের ভাঁজে হাত ঢুকিয়ে দিল, মুখোমুখি টেনে আনলো উৎসার মুখ।
“তুমি কিছু করো না বলেই এমন করতে হয়।আর কিছু করতেও দাও না!দিস ইজ নট ফেয়ার বেইবি।”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়,এই লোকের সাথে কথা বলা মানে নিজেই বিপ’দে পড়া।লোকটার লাগামহীন কথাবার্তা শুনলে কায়া কেঁপে উঠবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে উৎসা, ঐশ্বর্য তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ।এই মেয়েটা এত ঘুমাতে পারে? উফ্ কোথায় ওর উচিত ছিল ঐশ্বর্যের কাছাকাছি আসা।

কিন্তু তা নয় ঘুমাচ্ছে! ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল, পকেটে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ালো।চোখ তার উৎসার সর্বাঙ্গে বিচরণ করছে। প্রথমে গেল চোখ দুটোর দিকে,চোখের পাপড়ি গুলো কাঁপছে। ঘনঘন নিশ্বাস টানছে উৎসা, ঐশ্বর্যের ঘো’র লেগে আসে।তার সবচেয়ে প্রিয় রেড রোজের মুখটি,ফোলা ফোলা গাল। ঐশ্বর্যের দৃষ্টি বেসামাল হলো,নিচের দিকে অগ্রসর হয়।চোখে পড়ল উৎসার গলার নিচে, সোনালী চেইন টা লেপ্টে আছে। ঐশ্বর্য আরেকটু বেসামাল হলো, নিচের দিকে গেল তার দৃষ্টি। অতঃপর ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো সে,এই মূহুর্তে তার কী করা উচিত? অবশ্যই তার উচিত গিয়ে উৎসার সর্বাঙ্গে চুমু খাওয়া, তাকে কিছুটা য’ন্ত্র’না দেওয়া। অবশ্য ঐশ্বর্য কাল যা করেছে তা খুব একটা কম ছিল না, চুপিচুপি তার হাত স্পর্শ করেছে উৎসার স্পর্শকাতর জায়গা।
ঐশ্বর্য তাকিয়ে আছে সেই আগের ন্যায়,কখন এই মেয়ের ঘুম ভা’ঙবে?

সকাল থেকে অনেক গুলো কল করেছে নিকি ঐশ্বর্য কে। কিন্তু লাইনে পায়নি, এবারে কিছুটা চিন্তা হচ্ছে নিকির। চিন্তিত মুখ দেখে এগিয়ে এলো জিসান।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই অ্যাংরি বার্ড?”
নিকি চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠে।
“ভাইয়া ফোন তুলছে না, সত্যি আমার খুব টেনশন হচ্ছে এবারে!”
জিসান হেসে ফেলল।
“আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার? উফ্ রিকের সাথে আমার অলরেডি কথা হয়েছে।ও মিস বাংলাদেশী কে নিয়েই ফিরবে,আর হ্যাঁ বলেছিল ফোনে চার্জ নেই যখন তখন অফ হতে পারে।”
নিকি চরম পর্যায়ে ক্ষে’পে গেল।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৯

“আমি চিন্তা করছি আর আপনি এখন বলছেন এই কথা?”
জিসান জোরপূর্বক হাসলো, কিছুটা সরে গেল।
“স্যরি ডিয়ার।”
নিকি তে’ড়ে যেতেই জিসান এক ছুটে ছাদে।

রেড রোজ ২ পর্ব ৪১