তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৭

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৭
আমেনা আক্তার

আজ মির্জা বাড়িতে হরেক রকমের রান্না হচ্ছে। মির্জা বাড়ি যেনো নতুন করে সেজে উঠেছে।সকল কিছু একবার নয় তিন চারবার করে পরিষ্কার করানো হয়েছে।যেনো কোনো যায়গায় সামান্য পরিমাণও কমতি না থাকে।পুরো বাড়ি চকচক ঝকঝক করছে।সাহানারা মির্জা ব্যস্ত রান্না ঘরে অবশ্য সিরাত ও উনাকে সাহায্য করছে। তবুও যেনো ব্যস্ততা কমতেই চাইছে না সাহানারা মির্জার।সকল কিছু উনি পারফেক্ট ভাবে করতে চাইছেন।তাই সকাল থেকে কাজের লোকগুলো ও বিশ্রাম নিতে পারছে না।আজ রুদ্রের দাদি বেড়াতে আসবে। তার জন্যই সকল আয়োজন।উনি আবার একটু না একটু বেশিই খুঁতখুঁতে স্বভাবের।কোনো কাজে সামান্য পরিমাণও কমতি দেখলে সাহানারা মির্জাকে কথা শুনাতে ছাড়বে না।পারলে দু চারটে কথা বাড়িয়ে শোনাবে।

এইসকল কিছুর মাঝে সিরাত বুঝতে পারছে না একজন মানুষের জন্য এত আয়োজন করার প্রয়োজন কি। শাহানারা মির্জা যেভাবে কাজ করছে মনে হচ্ছে কাজে যদি একটুও ভুল ত্রুটি হয় তাহলে সাহানারা মির্জার শাশুড়ি বোধহয় উনাকে গুলি করে মেরে দিবে।
সিরাত সাহানারা মির্জার কাছে এসে নরম স্বরে বলল।
মা আপনি সকাল থেকে কাজ করছেন এখন একটু বিশ্রাম নিন। বাকি কাজ গুলো আমি দেখে নিচ্ছি।
সিরাতের কথায় সাহানারা মির্জা মুচকি হেসে সিরাতের গালে হাত রেখে বলল।
তুমিও আমার সাথে সকাল থেকে কাজ করছো। তুমি নাহয় এখন বিশ্রাম করো আমার অভ্যেস আছে। এমনিতেও আমার শাশুড়ি এসে যদি দেখে আমি কাজ না করে বিশ্রাম করছি তাহলে বাড়িতে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ফেলবে।
সিরাতের সাহানারা মির্জার কথায় অবাক হয়ে বলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উনি এত বদ,
সিরাতের কথায় সাহানারা মির্জা জিভে কামড় দিয়ে বলল।
কি বললে তুমি, এই কথা ভুলেও আমার শাশুড়ির সামনে বলো না।
সাহানারা মির্জার সিরাত মুচকি হেসে বিরবিরিয়ে বলল।
এটা তো উনি আসলেই দেখা যাবে,

ভাবি কেমন আছেন,
পুরুষালী কন্ঠে ভাবি ডাক শুনে নূর বিরক্ত হয়ে তাকায় সেই দিকে।তিন চারদিন ধরে এই ভাবি ডাক শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে নূর। রাস্তায় বের হতেই এখন কিছু দামড়া দামড়া ছেলেরা ভাবি ভাবি করে ডেকে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। শুধু কি তাই নূর এখন কোথাও গিয়েও শান্তি পায়না।আজ কাল রিক্সা চালাকরা ও নূরের কাছ থেকে টাকা নিতে চায়না। নূরের এই সকল বিষয় খুবই বিরক্ত লাগে।এটি তো খুব সাধারণ বিষয় নূরকে যদি কোনো ছেলে উত্যক্ত করে তাহলে কিছুক্ষণ পর সেই ছেলের নাম ও নিশানাও শহরে পাওয়া যায় না।নূর এটাই বুঝে উঠতে পারছে না।ও ওদের ভাবি হলো কি করে।আর এই সকল কিছু করছেই কে।
অবশ্যয় নূরের এই সকল কিছুর মাঝে এক দুবার আদিত্য কে সন্দেহ হয়েছে কিন্তু আদিত্যের ওই দিনের পর থেকে আর নূরের সাথে দেখা হয়নি।তাই আদিত্যের ব্যাপারটা নূর ভাবছে না। নূরের ভাবনার মাঝে আবার শোনা গেল
ভাবি,

এইবার আর নূর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না।তাই সে ওই ছেলেটির সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
এই আমি তোর কোন কালের ভাবি রে?
ছেলেটি নির্দ্বিধায় উত্তরে বলল।
কোন ইহকাল ও পরকাল,এই দুই কালেরই তো আপনি আমাদের ভাবি।আর হ্যা ভাবি আমাদের ভাই কিন্তু আপনাকে খুব ভালোবাসে।তাই আপনার সকল সুবিধা অসুবিধার খেয়াল আমাদের রাখতে বলেছেন উনি।
ছেলেগুলোর কথা শুনে নূরের খারাপ হওয়া মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল।সে রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
তোদের ভাই কে?
ছেলেটি অবাক হয়ে নূরকে বলল।
ভাবি আপনি আপনার স্বামীর নাম জানেন না।এটা কিন্তু ঠিক না ভাই শুনলে কিন্তু অনেক কষ্ট পাবে।আর আমরা ভাইয়ের কষ্ট একদম সহ্য করতে পারি না। আপনার ও উচিত ভাইকে কষ্ট না দেওয়া।
সেট আপ,যা জিজ্ঞেস করেছি শুধু তার উত্তর চাই,ভাই কে তোমাদের?
নূরের কথা শুনে ছেলেটির মুখ কাচুমাচু করে ফেলল। এবং বলল।
আদিত্য ভাই ,

ও তাহলে ওই শয়তান তোমাদের কে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে না।ও এখন কোথায় আছে? আমি ওর ঠিকানা চাই আমি ওর সাথে দেখা করব।
ভাবি আপনি যদি ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চান তাহলে আপনার একটু অপেক্ষা করতে হবে।আগে ভাইকে ফোন করে ওনার পারমিশন নেওয়া লাগবে তারপর আপনাকে ঠিকানা বলতে পারবো।
সিরাত ছেলেটির কথা শুনে রাগের বশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এবং নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে,যা করার তাড়াতাড়ি করো,
নূরের কথা শেষ হতেই ছেলেটি এক কোণায় যেয়ে আরিফকে ফোন করলো।

আরিফের ফোন বাজতেই তড়িঘড়ি করে আরিফ ফোনটি তার পকেট থেকে বের করে।আজ আদিত্যর একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে ফরেন ক্লাইন্টদের সাথে। মিটিংমে প্রবেশ করার সময় সকলের ফোন বন্ধ রাখতে হয়েছে শুধু আদিত্যের ফোন বাদে এটি বাধ্যতামূলক। কিন্তু আজ আরিফ ভুল বশত ওর ফোন বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।তাই আরিফ ফোনটি কাঁটার আগেই ফোনে দেখা নাম্বরটি দেখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে।
আদিত্যর কানের কাছে গিয়ে কিছু বলতেই আদিত্য আরিফের ফোনটি নিজের হাতে তুলে নিয়ে কানে চেপে ধরে।তখনি মোবাইলের ওপর পাস থেকে ছেলেটি বলল।
ভাই ভাবি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে,উনি আপনার এড্রেস চাইছে।
আদিত্য কথাটি শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে বলর।
ওকে নিয়ে আস,

ফোনটি কাটতেই ছেলেটি বলল।
চলেন ভাবি,আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।
ছেলেটির কথা শুনে নূর গম্ভীর গলায় বলল।
তার কোনো প্রয়োজন নেই, আমার শুধু এড্রেস চাই।
ভাবি ভাই যদি জানতে পারে আপনাকে আমরা একাই পাঠিয়েছি ভাই আমাদের আর আস্ত রাখবে না।
ছেলেটির কথা শুনে নূর ছেলেটির দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায়।তা দেখে ছেলেটি ভয়ে ঢোক গিলে বলল।
ঠিক আছে ভাবি আপনার আমার সাথে যাওয়ার দরকার নেই কিন্তু প্লিজ আপনার জন্য অন্তত আমাকে একটি রিক্সা ঠিক করতে দিন। নাহলে আমার এই শহরে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।
ছেলেটির কথায় নূর কিছু বললো না।তাই ছেলেটি একটি রিক্সা ডেকে দিলো নূর ও সেই রিকশায় উঠে পরে। নূর মনে মনে ভেবে রেখেছে আদিত্য কে গিয়ে কি কি বলবে।আজ আদিত্য কে উচিত শিক্ষা দিয়ে আসবে বলে।মনে মনে শপথ গ্রহণ করলো নূর।

যেই ব্যক্তির জন্য এত আয়োজন সেই ব্যক্তি অর্থাৎ সাহানারা মির্জার শাশুড়ি মা সালেহা মির্জা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছেন এবং ওনার সাথে এসেছেন ওনার ছেলের বউ সাথি। মূলত রুবেল মির্জা সালেহা মির্জাকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলেন। ওনার মায়ের জন্য রুবেল মির্জা আজ অফিস ও কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। রুবেল মির্জা তার মাকে খুব বেশি ভালোবাসে সেই কারনেই সাহানারা মির্জাকে যত যায় বলুক না কেনো ওনার শাশুড়ি আম্মা উনি চুপচাপ সহ্য করেন।
সালেহা মির্জা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই সাহানারা মির্জা ওনাকে জিজ্ঞেস করলেন।
আম্মা কেমন আছেন?
সাহানারা মির্জার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে এমন ভাবে চলে গেলেন যেনো সালেহা মির্জা সাহানারা মির্জার কথা শুনেনি। অতঃপর উনি গিয়ে বসলেন হলরুমে সোফার উপর। সাহানারা মির্জার কথায় জবাব না দেওয়ায় সাহানারা মির্জা একটু কষ্ট পেলেন কিন্তু মুখে তা ব্যক্ত করলেন না। কিন্তু সাহানারা মির্জার চুপসে যাওয়া মুখ আর কেউ না দেখলেও সিরাত ঠিকই দেখেছেন।

সিরাত ভালোভাবে লক্ষ্য করলেন সালেহা মির্জার দিকে। গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন ওনাকে। সালেহা মির্জার মুখের মাঝে দাম্ভিকতার ভাব স্পস্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। ঠিক যেমন রুদ্রের চেহারাতে সব সময় দেখা যায়। এবং সিরাত সালেহা মির্জার মুখ দেখে এটাও খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন সালেহা মির্জা প্রচুর পরিমাণের কঠোর প্রাকৃতিক। কিন্তু ওনি কঠোর খারাপ দিক দিয়ে নাকি ভালো দিক দিয়ে তা বুঝতে হবে সিরাতের।
সিরাতের ভাবনার মাঝে সালেহা মির্জা সিরাতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
কি নাত বউ এনেছিস আমি আসার পর থেকে দেখছি ও একই জায়গায় পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।ওর তো উচিত ছিল আমি আসার সাথে সাথে আমার কিছু প্রয়োজন কিনা জিজ্ঞেস করা।নাত বউ কি তার বাবার বাড়ি থেকে কোনো শিক্ষা দেয়নি যে বড়দের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়।
সালেহা মির্জার কথার সাথে সাথি মির্জা একমত পোষণ করে বলল।
ঠিক বলেছেন আম্মা আজকাল মেয়েদের মাঝে কোনো শিক্ষাই নেই । ওদের বাবা মায়ের মনে হয় বিয়ে দিতে পারলেই ওদের বাবা মা বাঁচে।
বাবার বাড়ির শিক্ষার কথা শুনে সিরাত অনেক রাগ লাগছে তবুও সিরাত নিজেকে শান্ত করে হাসি মুখে সালেহা মির্জার কাছে গিয়ে বলল।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৬

কি হয়েছে বলুনতো দাদি মা আপনাকে আপনি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করার পরেও আপনি কোনো জবাব দেননি তাই আমি ভেবেছি আপনি হয়তো এতটা পথ এসে ভিশন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। তাই মায়ের কথার কোনো জবাব দেননি।তাই আমি আর আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করতে চাইনি।
সালেহা মির্জা সিরাতের খোঁচা মারা কথা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। এবং সেই খোঁচা খুব ভালোভাবে ওনার শরীরেও খুব ভালোভাবে লেগেছে। সালেহা মির্জা কিছু বলবে তখনি…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৮