অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৮

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৮
ইয়াসমিন খন্দকার

আফিফা কনে সাজে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়েছে৷ তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তার নির্ঝর ভাইয়া। নির্ঝর আফিফাকে দেখেই অপলক তাকিয়ে থাকে তার দিকে। যেন কনে সাজে আফিফার সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে৷ আফিফা ও নির্ঝর–এই দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়৷ নির্ঝর আফিফার উদ্দ্যেশ্যে হালকা হেসে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ।”
আফিফা হালকা হেসে মাথা নামায়। এদিকে কাজি সাহেব বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দেন। চারিদিকের সবাই উপস্থিত ছিল নবদম্পতির বিয়ের সাক্ষী হতে।

আরিশা অনেক খুঁজে তারপর আফিফার ফোনটা তার বিছানার নিচে পেয়ে বলল,”উফ, আপ্পিও না! পড়াশোনা ছাড়া আর কোথাও মনযোগ নেই। ফোনটা বিছানার নিচে ফেলে রেখেছিল।”
বলেই সে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই থেমে যায়। না, ঐ দৃশ্য সে নিজের চোখে দেখতে পারবে না। নির্ঝরকে সে ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছিল। যেই ভালোবাসা অনেক বেশি অপ্রতুল। সে পারবে না নিজের চোখের সামনে নির্ঝরকে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে। তাই আরিশা এখানেই বসে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। আর নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে থাকে। এমন সময় হঠাত করে ঘরের নাইট নিভে যেতেই আরিশা চমকে ওঠে। বিড়বিড় করে বলে,”লাইটটা হঠাৎ কিভাবে বন্ধ হলো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সে কোন রকমে ফোনের লাইটটা জ্বালিয়ে উঠে দাঁড়াতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কেউ এসে আরিশার মুখ চেপে ধরল। আরিশা উম, উম কর‍তে লাগল কিন্তু তার মুখ থেকে কোন শব্দ বের হলো না। আরিশা কিছু সময় ধরে ধস্তাধস্তি করতে থাকে এরইমধ্যে তার নামে একটা রুমাল ধরে কেউ একজন। সাথে সাথেই আরিশা নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর আরিশার আর কিছু মনে নেই।

জাঈদ শেখ কাজি অফিসে বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে। আর অপেক্ষা করছে মন্টুর আসার৷ কিছুক্ষণ আগেই সে মন্টুকে পাঠিয়েছে আফিফাকে তুলে নিয়ে আসার জন্য। আজ সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে আফিফাকে সে বিয়ে করবে৷ সোজা পথে না হলে এভাবে বাকা পথে হলেও বিয়েটা করবে৷ এদিকে তার সামনেই একজন কাজি সাহেব বসে আছেন। তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন,”এভাবে আর কত সময় বসে থাকব? আপনার কনে কোথায়?”
জাঈদ বলে,”আহ, আর একটু অপেক্ষা করুন। আপনাকে দ্বিগুণ টাকা দিলেই হলো তো নাকি!”
কাজি বলেন,”টাকার ব্যাপার নয়। এভাবে বিয়েটা দেওয়া নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত। পরে কোন কেইসে ফেঁসে যাব নাতো?”

“আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমার বাবা কে জানেন তো? কিচ্ছু হবে না আপনার। আপনি শুধু আমার বিয়েটা পড়িয়ে দিন।”
জাঈদ শেখ কাজির সাথেই কথা বলছিল এমন সময় মন্টু এসে বলে,”স্যার, আপনার কাজ হয়ে গেছে।”
জাঈদ খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,”নিয়ে এসেছিস ওকে!”
“হ্যাঁ, স্যার। আপনি যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেভাবেই ভাবির রুমে ঢুকে তাকে একদম তুলে নিয়ে এসেছি। এই দেখুন।”

মন্টু আরিশাকে একটি বোরকায় আবৃত করে এনেছিল। আরিশার মুখ থেকে নেকাবটা সরাতেই জাঈদ বিস্ফোরিত চোখে তাকায়। রেগেমেগে বলে,”এটা কাকে নিয়ে এসেছিস তুই? এটা তো আফিফা নয়!”
মন্টু নিজেও আরিশাকে দেখে চমকে গিয়ে বলে,”আরে তাই তো! এটা তো ভাবি নয় কিন্তু আমি তো ভাবির রুম থেকেই একে তুলে এনেছি।”
জাঈদ মন্টুর কলার চেপে ধরে বলে,”তোকে তো আমি দেখে নেব..তোকে আমি কি করতে পাঠিয়েছিলাম আর তুই এটা কি করলি? একটা কাজও ঠিকভাবে করতে পারিস না, ইডিয়েট কোথাকার!”
জাঈদের দুজন বন্ধুও এসেছিল। তাদেরই একজন যার নাম সাগর সে বলে ওঠে,”এখন কি করবি বল? এতক্ষণে তো আফিফার বিয়ে হয়ে যাবার কথা।”
জাঈদের আরেক বন্ধু মুন্নাও বলে,”হ্যাঁ, সেটাই তো। তাহলে কি তোর উদ্দ্যেশ্য ব্যর্থ থেকে যাবে। আর এই মেয়েটাকে নিয়েই বা এখন কি করবি।”

কাজি সাহেব বলে ওঠেন,”তাহলে কি এই বিয়েটা হবে না? আমি চলে যাব?”
জাঈদ রাগে ফেটে পড়ছিল৷ আরিশার দিকে তাকিয়ে তার রাগ আরোও বাড়ছিল। সে একটা ফুলদানি তুলে নিয়ে সেটা মাটিতে আছড়ে ফেলে বলে,”এক পাও নড়বেন না এখান থেকে। আমি আজকেই বিয়ে করবো। আফিফাকে নয় তো ঠিক আছে ওর এই বোনকেই বিয়ে করব আমি। আফিফা আমাকে প্রত্যাখ্যান করে যতটা কষ্ট দিয়েছে ওর বোনকে বিয়ে করে তার থেকেও দ্বিগুণ কষ্ট দেব আমি!”
সাগর বলে,”এটা তুই কি বলছিস জাঈদ?”
“তুই যা শুনেছিস আমি তাই বলছি। এই মন্টু তুই এর মুখে পানি ছিটিয়ে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা কর। আর কাজি সাহেব আপনি নতুন করে একটা কাবিননামা লিখুন, সব ঠিক থাকবে শুধু পাত্রীর যায়গায় আফিফা খানের বদলে আরিশা খান লিখুন।”

কাজি সাহেব সম্মতি জানিয়ে বলেন,”ঠিক আছে।”
এরইমধ্যে মন্টু আরিশার মুখে পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরায়। আর জ্ঞান ফিরে পেতেই আরিশা মন্টুকে দেখে বলে ওঠে,”কে আপনি? কি করছেন এখানে? আর আমি কোথায়?”
তখনই জাঈদ শেখ আরিশার সামনে এসে বলে,”তুমি এখন কাজি অফিসে। একটু পরই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে। তোমার বোনকে তো আমি পেলাম না তাই তোমাকে বিয়ে করে এর শোধ তুলব।”
আরিশা রাগী কন্ঠে বলে,”আপনার মতো একজন ক্রিমিনালকে আমি বিয়ে করবো সেটা আপনি ভাবলেন কি করে! আপনার সাহস কি করে হলো আমায় তুলে নিয়ে আসার। আমি আপনার নামে পুলিশ কেইস করব।”
জাঈদ ভীষণ রেগে আরিশাকে চেপে ধরে তার মাথায় বন্দুক তাক করে বলে,”চুপচাপ বিয়েটা করে নে নাহলে গু**লি করে তোর খুলি উড়িয়ে দেব।”
আরিশা এবার ভীষণ ভয় পেয়ে কান্না করতে থাকে।
এরইমধ্যে কাজি সাহেব তার দিকে কাবিননামা বাড়িয়ে দেয়। জাঈদ নিজে সেখানে সই করে আরিশাকেও বাধ্য করে সই করতে। আরিশা সই করতে চাইছিল না। কিন্তু জাঈদ একপ্রকার জোর করে তার হাত ধরে সই করায়। অতঃপর আরিশার মাথায় বন্দুক ঠেকে ধরে বলে,”এক্ষুনি কবুল বল..আমি ১ থেকে ১০ গুনব তার মধ্যে যদি কবুল না বলিস তো..১…২…৩…৪..৫..৬…৭..৮..৯ আর..”
আরিশা ভয়ে কাপতে কাপতে বলে,”কবুল।”

“আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”
আফিফার কণ্ঠে কবুল কন্ঠ শুনেই নির্ঝরের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সবাই খুশি হয়ে একে অপরকে মিষ্টি বিতরণ করতে থাকে। নির্ঝর আফিফার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,”অবশেষে সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরা দুজন এক হতে পারলাম।”
আফিফা স্মিত হেসে বলে,”ঠিক বলেছেন। আপনাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমি অনেক খুশি নির্ঝর ভাইয়া।”
নির্ঝর হালকা হেসে বলে,”এখন আর এসব আপনি-আজ্ঞে চলবে না। আর আমাকে ভাইয়া ডেকো না…নিজের সন্তানের মামা বানাবে চাও নাকি?”
আফিফা হেসে ফেলে। এরইমধ্যে ছবি বেগম এগিয়ে এসে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে বলে,”তোমরা অনেক সুখী হও, এই দোয়া করি।”

নিঝুম, আবরাজ, আবির, আনিকা খানও এগিয়ে এসে আফিফা ও নির্ঝরকে দোয়া করে। আদৃতাও এককোনায় মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে এত সবার ভীড়ে নিজের বোন আরিশাকে না দেখে আফিফা বলে ওঠে,”আচ্ছা বোনু কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখছি না।”
আনিকা খানও বলেন,”তাই তো, আরিশাকে তো অনেকক্ষণ থেকে কোথাও দেখছি না।”
আবির খান,”আরে দেখো আশেপাশে কোথাও হয়তো আছে। ও তো মজা করতে ভীষণ ভালোবাসে। সারাদিন যেভাবে বাড়িটা মাতিয়ে রাখে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৭

ছবি বেগম,”তাই হবে হয় তো। আফিফা দিদিভাই, তুমি এখন যাও নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। এখন থেকে তো নির্ঝর দাদুভাইয়ের রুমটাই তোমার রুম।”
আফিফা লজ্জা পেয়ে যায় ছবি বেগমের কথা শুনে। তার এই লজ্জা আরো বাড়ানোর জন্যই যেন নির্ঝর তার কানে কানে বলে,”আজ রাতে তোমাকে আমি নিজের সাথে মিশিয়ে নেব। শুধু আমার ঘর নয়, আমার দেহমন জুড়েও তোমার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৯