মন ফাগুন পর্ব ২১

মন ফাগুন পর্ব ২১
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া

হানিয়া শিকদার খাবার খেয়ে নেয় নিচে খাবার টেবিলে নিহান খেতে বসে মিহি তাকে খাবার বেড়ে দেয়। মিহি খাবার বেড়ে দিচ্ছে দেখে সারা বলে –
“- মিহি তুমি নিহান ভাইকে খাবার দাও আমি বরং উপরে গিয়ে দেখে আসি বড় মামির খুব লাগবে কি না। তুমি থাকো মিহি নিচে “।
মিহি কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় সারা উপরে যেতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। হানিয়া বেগমের খাওয়া প্রায় শেষ তবে ওনার শরীর যেনো কেমন লাগছে অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে তার শরীর ঘামছে আর খাওয়া দাওয়া করার মতো শক্তি ওনার শরীরে নাই। কোনো এমন হঠাৎ করে শরীর খারাপ হচ্ছে এইর কোনো কারণ বুঝতে পারছে না হানিয়া বেগম। সারা দরজার কাছে গিয়ে বলে –

“- বড় মামি তোমার কি কিছু লাগছে? তরকারি ভাত বা অন্য কিছু?
সারা কথাটা বলে রুমে ঢুকে যায় কিন্তু হানিয়া শিকদারকে দেখে সে একটা চিৎকার করে। কারণ হানিয়া বেগম বেডে অজ্ঞান হয়ে গেছে আর ওনার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে যেটা দেখে সারা বড় মামি বলে চিৎকার করে ওনার কাছে যায়। সারা বলে –
“- বড় মামি কি হয়েছে তোমার? কথা বলো বড় মামি আর এই রক্ত কি করে আসছে তোমার মুখ থেকে? নিহান মিহি কোথায় তোমরা তাড়াতাড়ি আসো নিহান”।
নিহানের খাওয়া শেষ হয়ে যায় তাই সে হাত ধুয়ে ফেলে কবে হঠাৎ করে উপর থেকে সারার চিৎকার শুনে অবাক হয়ে যায়। নিহান বলে –
“- কি হয়েছে সারা ভাবী এইরকম করে ডাকছে কোনো আমাদের নাম ধরে। উপরে কি হয়েছে মা ঠিক আছে তো “।
“- হুম সত্যি তো সারা ভাবী এইরকম করে ডাকছে কোনো চলুন উপরে যায়। কি হয়েছে দেখতে হবে তাড়াতাড়ি চলুন “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিহান মিহি আর জাকিয়া বেগম তাড়াতাড়ি করে উপরে উঠে যায় কি হয়েছে সেটা দেখতে। কিন্তু হানিয়া বেগমের রুমে ঢুকে নিহানের পা অবশ হয়ে যায় নিজের মাকে এইরকম করে দেখে। মিহি নিজে ও বুঝতে পারে না সে কি করবে নিহান দৌড়ে গিয়ে বিছানায় বসে তার মায়ের মাথাটা কোলে নিয়ে বলে –
“- মম কি হয়েছে তোমার মম কথা বলো? মুখে রক্ত কোনো তোমার মম? সারা ভাবী মমের কি হয়েছে ?
“- সেটা বুঝতে পারছি না নিহান বড় মামির কোনো কিছু লাগবে কি না সেটা দেখতে উপরে আসি। কিন্তু এসে দেখি মামি এইরকম করে বিছানায় পড়ে রয়েছে আর মুখে রক্ত পড়ে তোমাদের ডাক দিলাম। মনে হচ্ছে মামি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে মামিকে “।

নিহান নিজের মায়ের এমন অবস্থা দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না কিন্তু মিহি বুঝতে পারে এখন যা পরিস্থিতি রয়েছে তাকে সব করতে হবে। ততক্ষণ নূহা এসে পড়ে রুমে সবার কান্না করার শব্দ শুনে রুম থেকে দৌড়ে চলে আসে। মিহি নূহার থেকে নাম্বার নিয়ে নিহানদের ফ্যামিলি ডক্টরকে কল করে –
“- হ্যালো ডক্টর আমি মিহি বলছি নিহানের ওয়াইফ আসলে মায়ের শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। কি হয়েছে জানি না তবে মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে আর অজ্ঞান হয়ে গেছে “।
ডক্টর কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায় এইসব কি করে হয়ে গেলো তবে সে বলে –

“- এইসব কি বলছো মিহি কি করে হয়েছে ওনার সাথে এইরকম আচ্ছা ওনাকে মনে হয় হাসপাতালে নিতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি আর নিহান ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আয়োজন করো “।
মিহি একবার হানিয়া বেগমের দিকে দেখে এরপর ওনার কাছে যায় সে এখনো ফোন কাটে নাই। মিহি গিয়ে হানিয়া বেগমের শরীর টার্চ করে দেখে আসতে আসতে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসলে হাত পা কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে একদম নীল। মিহি একটা ঢুক গিলে এরপর বলে –
“- ডক্টর মায়ের অবস্থা খুব একটা ভালো না যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ওনাকে কেউ বিষ দিয়েছে। তাই হাত-পা নীল হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে যেতে যেতে পুরো শরীরে বিষ ছড়িয়ে যেতে পারে। তখন কিন্তু মাকে বাঁচানো যাবে না “।
মিহির কথা শুনে ডক্টর নিজে ও ভয় পেয়ে যায় কারণ মিহি যা বলছে তাতে হানিয়া বেগমের জন্য প্রতেকটা মূহুর্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন যদি দেরি হয় তাহলে সমস্যা অনেক হবে শুধু সমস্যা না হয়তো হানিয়া বেগমকে আর বাঁচানো যাবে না। ডক্টর বলে –

“- মিহি তুমি আগে হানিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসো মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আর শোন নিহানকে বলো নিজেকে শান্ত রাখতে আমি হাসপাতালে নার্সদের বলছি রেডি থাকতে তাড়াতাড়ি করো মিহি আমাদের হাতে সময় নাই “।
মিহি নূহাকে ইশারা দিয়ে বলে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে আর কতগুলো লোক নিয়ে আসতে। খুব তাড়াতাড়ি কিছু লোক আসে আর হানিয়া বেগমকে তুলে গাড়িতে নিয়ে যায় নিহান কি করবে সে বুঝতে পারে না। মিহি নিহানের হাত ধরে বলে –
“- নিহান শান্ত হয়ে যান মায়ের এইরকম অবস্থায় কোনো ছেলে শান্ত থাকতে পারে না কিন্তু আপনাকে থাকতে হবে। মাকে এখন হাসপাতালে না নিয়ে গেলে বাচাঁনো যাবে না তাই নিহান শান্ত হয়ে যান নিজেকে সামলান। মাকে নিয়ে হাসপাতালে যান সেখানে ডক্টর রয়েছে ওনাকে সুস্থ করবে ”

মিহির কথা শুনে নিহানের মনে একটু জোড় পায় বুঝতে পারে তাকে এখন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। তবে কোনো জানি মিহির কথা শুনে মনে হচ্ছে নিহানকে একা যেতে বলছে ও যাবে না নিহান বলে –
“- মিহি আপনি এইরকম করে কোনো বলছেন আপনি কি হাসপাতালে যাবেন না? চলুন হাসপাতালে এখানে কি করবেন আপনি?
মিহি এই কথা শুনে নিজের মুখ গম্ভীর করে ফেলে সে সত্যি এখন হাসপাতালে যাবে না কারণ তার অন্য কাজ রয়েছে। মিহি বলে –
“- না নিহান আমি হাসপাতালে যাবো না বাসায় থাকবো এখানে কিছু কাজ আছে আমার। শুধু এইটুকু জেনে রাখবেন এই মিহি সবসময় আপনার পাশে থাকবে আমি একটু পর চলে আসবো। তবে মায়ের এইরকম অবস্থা কি করে হলো সেটা জানা আমার জন্য জরুরি “।

নিহান বুঝতে পারে মিহি হয়তো কিছু রহস্য সমাধান করবে তাই ওকে কিছু বলে না। হানিয়া বেগমকে নিয়ে নিহান আর বাড়ির সবাই মিলে হাসপাতালে চলে যায়। মিহি হানিয়া বেগমের রুমে রয়েছে সে সব মনে করতে থাকে সারা ভাবীর কথা অনুসারে হানিয়া আগে সুস্থ ছিলো। তাহলে হঠাৎ করে অসুস্থ কি করে হয়ে যেতে পারে ।
মিহি কথাটা ভেবে নিচে নেমে আসে সেখানে থাকা একটা কাজের লোককে ডাক দিয়ে বলে –
“- আচ্ছা সকালে মায়ের রুমে খাবার নিয়ে কে গিয়েছিলো? কোথায় সে?
“- ম্যাম ওই যে ও খাবার নিয়ে গেছে “।

মিহি সেই কাজের মেয়ের কাছে যায় মনে হচ্ছে সে একটু ভয় পেয়ে রয়েছে। মিহি তাকে বলে-
“- তাহলে তুমি সেই কাজের মেয়ে যাকে সারা ভাবী মায়ের খাবার দিয়ে উপরে পাঠিয়ে ছিলো। মা খাবার খাওয়ার আগে একদম সুস্থ ছিলো তাহলে খাবার খেয়ে এইরকম অসুস্থ হয়ে গেলো কোনো? খাবারে কি মিশিয়ে দিয়েছো তুমি? মায়ের খাবারে বিষ আসলো কোথা থেকে?
“- ম্যাম কি বলছেন সারা মেডাম আমাকে খাবার দিয়েছে সেটা নিয়ে আমি বড় মেডামকে দিয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না আমি সত্যি বলছি ম্যাডাম “।
মিহি অনেক ভাবে সেই কাজের মহিলার থেকে কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু সে এক কথায় বলে যে সে সত্যি কিছু জানে না। মিহি বুঝতে পারে মনে হয় সে সত্যি কথা বলেছে মিহি বলে –

“- আচ্ছা তুমি যখন খাবার নিয়ে যাচ্ছিলে তখন কি কেউ তোমার থেকে খাবার কেড়ে নিয়েছে? বা কাউকে তোমার আশেপাশে ঘুরুঘুর করতে দেখেছো? কোথা ও কি খাবার রেখে চলে এসেছেন?
“- ম্যাডাম কোথাও খাবার রেখে চলে যায়নি কিন্তু আমি যখন খাবার দিতে যায়। তখন আমার মায়ের কল আসে তাই খাবার টেবিলে রেখে কথা বলি পড়ে এসে আবার খাবার নিয়ে যায় এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না “।
“- হুম বুঝতে পারছি এইবার কি করতে হবে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। অপরাধী যেই হোক না কোনো ধরাতো সে মিহির হাতে পরবেই “।
অন্যদিকে নিহান নূহা সারা সবাই মিলে হানিয়া শিকদারকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডক্টর তাকে তাড়াতাড়ি কেবিনে নিয়ে যায় নিহান বলে –

মন ফাগুন পর্ব ২০

“- ডক্টর মায়ের অবস্থা কেমন মা কি সুস্থ হয়ে যাবে। বলন না ডক্টর “।
“- দেখো নিহান তোমার মায়ের অবস্থা ভালো না যা দেখা যাচ্ছে ওনাকে বাঁচানো সম্ভব না। আমি হতাশ করতে চাই না কিন্তু মনে হচ্ছে হানিয়া শিকদারের মৃত্যু হতে পারে “।

মন ফাগুন পর্ব ২২