রং পর্ব ১৯
তন্নী তনু
খোলা জানালা,মৃদুমন্দ বাতাস, আকাশে মস্ত বড় চাঁদ আর বিন্দু বিন্দু তারার মেলা। খোলা জানালার গ্রীল এ হাত দিয়ে একদৃষ্টিতে আকাশ দেখছে সিনথিয়া।দমকা হাওয়ায় খোলা চুল উড়ছে। মনের আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা।কেনো এতো অশান্ত লাগে আজকাল। রাফির সাথে প্রেম”টা হয়েছিলো অনেকটা রাফির জোরাজুরিতে। একসময় কথা বলতেও ভালোলাগলতো।স্বপ্নও দেখতো।বিয়ের ইচ্ছেও ছিলো।যেদিন রাফি অন্যত্র বিয়ে করছিলো তার ভিষণ কষ্ট লেগেছিলো।তাহলে আজ হঠাৎ মনটা কি করে পরিবর্তন হলো? ভগ্ন হৃদয়ের শূন্যস্থান জুড়ে হঠাৎ কেউ দখল করে বসেছে। সিনথিয়া মনে মনে ভাবে, সে কি তাহলে রাফি”কে ভালোইবাসেনি কোনোদিন? ওটা কি শুধু অভ্যাস ছিলো? অভ্যাস ই যদি হয় তাহলে কেনো ঐদিন এতো কষ্ট কেনো লাগলো তার!কেনো হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো?আর এখন-ই বা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে কেনো? নিজের প্রশ্নের উত্তর গুলো নিজের কাছেই নেই। তাহলে কি ভালোবাসা রঙ বদলায়? নাকি ক্ষণিকের প্রেমকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করে মানুষ?
সিনথিয়া অনুভব করে আজকাল একটা মানুষের মুখ না দেখলে বড্ড অশান্ত লাগলে। সব শূন্য লাগে।।তার বলা কথা গুলো কানে বাজতে থাকে। তার অনুপস্থিতি-তে তার কথা গুলোই বারবার মাথায় ঘুরপাক খায়। না দেখতে পেলে নিজের চোখ দুটো ঐ মানুষটাকে খুঁজে বেড়ায়। নিজের ভেতরটা পুড়ে পুড়ে ওঠে!কিন্তু কেনো? এটা কি সত্যিই ভালোবাসা। ভালোবাসা আসলে কি? ভালোবাসা মানে “ভালোরাখা”। ভালোবাসা মানে যদি ভালোরাখাই হয় তাহলে সে সত্যিই এইবার ভালোবেসেছে। ঐ আপদমস্তক বিশালআকৃতি চকচকে শরীরের আড়ালে যে আগুনের লার্ভার মতো যন্ত্রণা ইরফাদ বয়ে বেড়ায়। তা জানার পর সিনথিয়ার প্রথমবারের মতো প্রথম কাউকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেগেছিলো। মনে হয়েছিলো আগুনে দগ্ধ হওয়া জায়গাটুকুতে বরফসিক্ত জলের মতো ভিজিয়ে দিতে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বারবার মনে হচ্ছে ঐ লৌহকঠিন মানুষটার সকল যন্ত্রণা একবার আলিঙ্গনে শুষে নেওয়া যেত। তাহলে একবার আলিঙ্গনে সমস্ত যন্ত্রণা স্বচ্ছ জলের ন্যায় শুষে নিত সিনথিয়া।একটা মানুষ বিপরীত মানুষটার ব্যক্তিত্বের প্রতি দূর্বল হতেই পারে। ইরফাদের ব্যক্তিত্ব তার চোখ এড়ায়নি।তবে এতো বড় পরিমাপের মানুষকে নিয়ে এর বাইরে কল্পনা তার আসেনি।কারণ তেলে জলে তো মিশ খায়না।কিন্তু গাড়িতে পাওয়া ডায়েরিটা ভুল করে পড়ে ফেলেছে সে -আর এখন তার পুরো দুনিয়া এলোমেলো লাগছে। ঐ রকম একটা স্ট্রং পারসোনালিটি”র মানুষ!ভেতর থেকে এমন ভাঙচুরা তাকে দেখে আন্দাজও করা যায় না।
যেনো এক স্বাভাবিক মুখের আড়ালে পুরো জগতটাই অন্ধকার হয়ে আছে। জানার পর থেকে মন”টা ব্যকুল হয়ে আছে।ইচ্ছে হচ্ছে যদি আলো নিয়ে তার দরজায় দাড়ানো যেতো।এই প্রথম বারের মতো তার ভিষণ নির্লজ্জ হতে ইচ্ছে করছে সিনথিয়ার। খুব ইচ্ছে করছে ঐ ভাঙাচোরা ব্যকুল হৃদয়ে মাথা রেখে বলতে–“আমি ভালোবাসি”। কেউ না থাকুক আমি আছি। পুরো পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ভালোবাসা সুন্দর তবে মানুষটি যদি সঠিক হয়। ভাঙাচোরা হৃদয়ের গল্পটি শুনলে প্রতিটা মেয়েই একবার আফসোস করবে!” আফসোস করে বলবে,”ইসস! কেনো আমায় ভালোবাসলে না!কেনো?” আফসোসে! আফসোসে পুরো দুনিয়া কেপে উঠছে সিনথিয়ার। ঐ ব্যাথাতুর হৃদয়ের সকল ব্যাথা মুছে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু মানুষটা তো ফিরেও তাকায় না। এই অধিকার কি কোনো দিন সে পাবে? যদি একবার সে অধিকার সে পেতো তাহলে একবার দুনিয়া ভুলিয়ে দিতো সে………….. ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সিনথিয়া। ইসস! আফসোস নিয়ে যেনো তার দুনিয়া ছাড়তে না হয়।
ইভা গম্ভীর হয়ে বসে আছে বিছানার উপর। ডায়েরিটা ছোট্ট শিশুর মতো বুকের মধ্যে ধরে রেখেছে সে। ক্ষণে ক্ষণে বুকের মধ্যে চেপে ধরছে সে। এত এত ভাঙা হৃদয়ের গল্পের জন্ম কেনো এই বাড়ির মানুষকে ঘিরেই, কেনো!! হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা এতো জ্বালায় কেনো? কেনো মানুষ রাতের আধারে জ্বলেপুড়ে মরে। সে তো জানতো ইরফাদ সব ভুলে গেছে। কিন্তু সে দগ্ধ ঘায়ের জ্বালা যে এখনো তাকে পোড়ায়!তাকে দেখে তো আঁচ ও করা যায় না।
_________
শখের দোলনায় বসে আজকাল আর সুখ লাগে না। শখের আর সুখের সবকিছুই এখন কর্পূরের ন্যায় উবে গেছে। দুচোখে শূন্যতা ছাড়া রিমা আর কিছুই দেখতে পায় না। নিজের মধ্যে আরেকটা জীবন নিয়ে শুধু তরপাতে থাকে সে। দিন যায় না রাত শেষ হয় না। এই যদি হয় ভালোবাসা বিশ্বাসের পরিণাম।কেউ ভালো না বাসুক। “রং আর রঙ চিনি আর লবণের মতো। দুটোকে গুলিয়ে ফেললেই হয় ভুল। এক রঙে হয় জীবন রঙিন আর এক “রং” এ হারিয়ে যায় জীবনের রঙ।” তাই রং আর রঙের পার্থক্য আগে বুঝে তবেই জীবন চালনা করা উচিত। জীবনের রঙ খুঁজতে গিয়ে “রং” পথ ধরে হেঁটে জীবনের রঙকে গলা টিপে মেরে ফেলার আগে হাজার বার ভাবা উচিত। “রং” কে রঙ ভেবে ভুল করা মানে- নিজের জীবন নিজের হাতে নষ্ট করা। তাই রঙের খোঁজে গিয়ে “রং” পথটা বেঁছে নিতে নেই।
তিথি বিকেল থেকে শুয়ে আছে। কিছুই ভাল্লাগছে না তার। শুয়ে শুয়ে কল্পনার জগতে বিচরণ করছে সে। কেনো যেনো ঘোর কাটছে না তার। জীবনের সব টানাপোড়েনের মধ্যে শুধু পাগলামি,দুষ্টামি করে নিজের ভেতরে দগ্ধ ঘা শুধু লুকিয়ে রেখেছে। সেই ঘা তে যখন কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে আর মুখ ফিরিয়ে নিতে পারছে না। ভালোবাসাহীন জীবন কি বাঁচে? সবার অতৃপ্ত হৃদয়-ই ভালোবাসা খোঁজে। ভালোবাসা চায়। তার ভিষন ভালোবাসা পাওয়ার লোভ হচ্ছে। ভাবনার মধ্যে মৃদু কেঁপে ওঠে সে। ফোনে শব্দ হয়ে গেলো “টুং” করে। সে ফোন হাতে নেয়। মোবাইলের স্ক্রিনে লেখা,
–টুকি!
শব্দটা শুনে আলতো ছড়িয়ে দেয় পাতার মতো ওষ্টদ্বয়। তারপর আরেকটা শব্দ হয়। শব্দটা যেনো হৃদয়ের মধ্যে ঘন্টার মতো বেজে ওঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে চেক করে তিথি। সেখানে লেখা,
–মিয়াওওও…
তিথির মনটা শুভ্র বকুলের মতো ভিতর থেকে ফুরফুরে হয়ে অদৃশ্য ঘ্রাণ ছড়ায় আর তা কেবল সেই অনুভব করতে পারে।এভাবেও কেউ জায়গা করে নিতে পারে? এভাবেও মন গলানো যায়।তিথি চুপ করে ভাবে। তিথি উত্তরে লিখে,
— আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই…..
–তাই? কখন? কবে? কোথায়?
— লোকেশন জানিয়ে দিবো….
খোলা চুল গুলো হাতখোপা করে নেয় সিনথিয়া।জীবন মনে হয় আফসোস”এর খেলা। আফসোস আর দীর্ঘশ্বাসে কতকাল যে চারদেয়াল ভরে উঠবে সে নিজেও জানে না। অন্ধকার আজকাল ভিষন ভাল্লাগে। মনে হয় অন্ধকারে অনুভব করতে সুবিধা হয় কল্পনার জগতে সহজে বিচরণ করা যায়। ভেজিয়ে রাখা দরজায় শব্দ হয়। সিনথিয়া জানালার গ্রিলে হাত রেখে মুখটা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। তার বাবার গলা,
— সিনথিয়া…. ?
সিনথিয়া এগিয়ে আসে।জিজ্ঞাসা সূচক গলায় বলে,
— এইতো বাবা!
–থানা থেকে কল এসেছে। লাইনে “জাবির স্যার”…
সিনথিয়ার কপালে কিঞ্চিত ভাজ পড়ে। আবার থানা থেকে কল। আর জাবির স্যার তাকে কি বলবে! আবার কোন দুঃসংবাদ না শুনতে হয়। সে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নেয়। কানে ঠেকিয়ে ধরে মুঠোফোন। ঝোড়ো হাওয়ায় মতো উড়ে আসে বরফ শিক্ত গলা,
–কেমন আছো!
সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যায়। সিনথিয়ার বাবা গলা উচিয়ে বলে,
— সিনথির আম্মা…. লাইট ধরো তো….
ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসে না। সিনথিয়ার বাবা বলে,
— কই গেছো?
সিনথিয়ার মায়ের গলা শোনা যায়।
— টেবিলের উপর লাইট আছে। আমি ওয়াশরুমে…..
সিনথিয়ার বাবা রুম থেক বের হয়। ঐদিকের সিনথিয়া অকল্পনীয়, অভাবনীয় প্রিয় মানুষটির বরফ শিক্ত হীম শীতল গলা শুনে নিজেই বরফের মতো জমে যায়। এই মূহুর্তে ইরফাদ তাকে কল দিবে সে তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। ভাবনার জালে ডুব দিয়ে ইরফদাদের কথার উত্তর দিতে ভুলে যায় সে। ওপাশ থেকে আবারও সেই গলা,
— শুনতে পাচ্ছো? সিনথি…….
বুজে আসা গলা থেকে সিনথিয়া ঠেলে কথা বের করে,
–হুম….
— কেমন আছো!
— ভালো…
–আপনি..
— আলহামদুলিল্লাহ্!
সিনথিয়া চুপ করে থাকে। এরপর কি বলবে। গলার স্বর শুনেই শরীর অসাড় হয়ে আসছে। পা ভেঙ্গে আসছে। মানুষটার গলা আর কখনো শোনা যাবে ভুল করেও ভাবেনি।কিন্তু কি কারণে তাকে কল করলো ইরফাদ! ওপাশ থেকে সেই মানুষটি বলে,
— তোমার ফোন এখনো অন করোনি!
এই কথায় হালকা কেঁপে ওঠে সিনথিয়া। ইরফাদ তার নাম্বার রেখেছে? তাকে মনে রেখেছে? তার ফোন নাম্বারে ডায়েল করেছে। যখন পায়নি তখন তার বাবাকে ফোন করেছে। জাবিরকে দিয়ে কল করিয়েছে। এতো কিছু তার জন্য। ভাবতেই এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে তার। সে ধীর গলায় বলে,
— ফোন কিনতে হবে…. তারজন্যে আমার কিছুদিন সময় দরকার।
— কিন্তু এখন তোমার সাথে কানেক্টেড থাকা প্রয়োজন। আই নিড ইউর হেল্প….
সিনথিয়া মনে মনে ভাবে,” কি হেল্প”। এই জন্যে এসপি” তাকে কল দিয়েছে। আর সে কি^ না^ কি ভেবে নিলো। সিনথিয়া বলে,
— কি হেল্প…?
— পরে বলবো… তবে প্রাইভেসি মেইনটেইন করতে হবে। তারজন্যে তোমার আলাদা সিমকার্ড দরকার। সো! যাওয়ার পথে ফোন আর সিমকার্ড তোমাকে দিয়ে যাবো। তুমি নিচে এসে নিয়ে যেও….
–আরে না না কি বলছেন….আমি কাল না হয় বাবাকে বলবো ফোন কিনে দিতে… হয়তো কয়েকটা দিন সময় লাগবে….
— ইটস ভেরি আর্জেন্ট।একটা দিন যাওয়া মানে একদিন পিছিয়ে যাওয়া। আমি তোমাকে সিমকার্ড দিচ্ছি- এটা কেউ না যেনো জানে! ওকে?
–হুম…..
সিনথিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে।চুলগুলো খুলে দেয়। সাজগোজ কোনো দিনও তার পছন্দ না। নিজেকে সাদামাটা রাখাই তার পছন্দ। সেদিনের গারদে আসা পার্সেলে থাকা কুর্তিটা পড়ে সিনথিয়া।এর মধ্যে সিনথিয়ার বাবা আসে,
— কথা হয়েছে?
–হুম বাবা।
–কি বললো!
— এই যে কেসের বিষয়েই কথা। ফোনটা রেখে যাও। আরেকবার কল দিতে পারে।
সিনথিয়ার বাবা চলে যায়। সিনথিয়া ফোনটা হাতে নেয়। আরেকটা কল করে সেই আগের নম্বরে। কিন্তু কল যায় না। তাহলে সে কি করে জানবে ইরফাদ কখন আসবে? সে কি বাসায় আসবে? বাসায় এসে ফোন দিলেতো সবাই জানবে। ঠিক ঐ মূহুর্তে ফোনটা আবার বেজে ওঠে। সিনথিয়া ফোন তোলে,
— আমি একটা কাজে আটকে গেছি। ফ্রি হতে অনেক রাত হবে। আমি যেতে না পারলে শো-রুম থেকে পার্সেল পাঠিয়ে দিবো।
সিনথিয়ার ভেতরে মনের সাথে কথা চলে। পার্সেল পাঠাবে মানে? ইরফাদ আসবে না? সে তো ভাবলো ইরফাদ আসবে! কতো কি ভেবে বসে আছে সে। এখন কি লজ্জা সরম ভুলে বলা যাবে “আপনি ই আসুন।” সিনথিয়া চুপ করে বসে থাকে। ওপাশ থেকে বলে,
— শুনতে পাচ্ছো!
— হুম…..কিন্তু
–কিন্তু কি?
— আপনি আসলে হয় না? মা…নে! আপনি তো বললেন বিষয় টা কাউকে না জানাতে…. পার্সেল আসলে আম্মু-আব্বু বুঝবে… দেরী হলে হোক। কষ্ট করে যদি আপনি-ই…..
–আমি গেলে কিভাবে নিবে?
— জানালা দিয়ে ব্যাগ ফেলবো….অথবা বাইরে আসবো।
— “কেউ দেখবে না?”
— “পুরো দুনিয়া ওলট-পালট করে দিয়ে আমি আসতে পারবো। আমার তো মনে হয় এটাই ভালোবাসা। ভালোবাসলে মানুষ নির্লজ্জ হয়। ভয় ডর ভুলে যায় …এর আগে কখনো এতো সাহস আসেনি। তবে সে আজ সাহস পাচ্ছে। আপনাকে এক পলক দেখার লোভ….. “আমাকে হিতাহিত জ্ঞান ভুলিয়ে দিচ্ছে এসপি সাহেব।”
মনের কথাগুলো মনের গহীনে রেখে সিনথিয়া মুখে বলে,
— চেষ্টা করবো..সবাই ঘুমিয়ে যাক তখন আসুন…
–তাহলে কাল সকালে দেই!
— না না….. আজ ই….
ঘরির কাটা দেড়টা ছুঁইছুঁই। সিনথিয়ার ফোন কেঁপে ওঠে।
–এসেছেন?
–হুম..
–আমি নিচে আসবো?
— “চলে আসো…”
সিনথিয়া নিজের ঘরে ফোনটা রাখে। বাইরে থেকে লক করে নিজের রুম। তারপর অন্ধকার ডাইনিং ড্রয়িং পা টিপে টিপে বের হয়। বাইরে থেকে দরজা লক করে। তারপর খালি পায়ে শব্দ না করে নিচে নামে। বাইরে উঁকি দেয়। আবছা আলোতে একটু দূরে কালো মতন একটি গাড়ি দেখতে পায়। সিনথিয়া পাখির মতো যেনো উড়ে যেতে চায় সেখানে। দৌড়ের তালে পায়ের নিচের পাথরগুলো পায়ের তলায় যেনো ঢুকে ঢুকে পড়ছে। দৌড়ে গিয়ে ইরফাদের পাশের দরজার পাশে দাঁড়ায়। ইরফাদ সাইড দরজা খুলে দেয়। হাত দিয়ে ইশারায় বলে,
–রিল্যাক্স…..
সিনথিয়া থামে। ইরফাদ পার্সেলটি হাত বাড়িয়ে সিনথিয়ার দিকে দেয়। সিনথিয়া দরজা খুলে সোজা সিটের সামনের দিকে খালি জায়গায় হাটু ভাজ করে মাথা ঢেকে বসে। ইরফাদ বিষয় টা বুঝতে না পেরে বলে,
— কি হলো!
সিনথিয়া ফিসফিসিয়ে বলে সেকেন্ড ফ্লোরের চাচ্চু ব্যালকনিতে আসছে। আমার দৌড়ের শব্দ পেয়েছে মনে হয়।
ইরফাদ উকি দিয়ে দেখে। একটা মাঝ বয়সী লোক বেলকুনিতে এসেছে। ইরফাদ গাড়ি পেছন দিকে পিছিয়ে নেয়। তারপর বলে,
–প্রবলেম হবে?
–মনে হয় দেখেনি।
–ফিরবে কি করে?
— জানিনা…
ইরফাদ খেয়াল করে লোকটি নিচে নেমে এসেছে। ইরফাদ গাড়ি ঘুড়ায়।তারপর মোর ঘুড়ে সোজা রাস্তায় চলে যায়। তারপর ইরফাদ বলে,
— উঠে বসো…
সিনথিয়া উঠে বসে। গাড়ির ভেতরে অন্ধকার। আশেপাশের আলো পড়ে মাঝে মাঝে। সিনথিয়া বলে,
— দশটা মিনিট ঘুরে আসা যাবে? মানে দশ মিনিটে চাচ্চু শুয়ে পড়বে হয়তো। তারপর ফিরলে রিস্ক ফ্রি…
ইরফাদ মাথা নাড়ায়। ধীর গতিতে গাড়ি চালায়। নামিয়ে দেয় জানালার সাইড গ্লাস। বাতাসে সিনথিয়ার চুলগুলো উড়তে থাকে। দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হতে থাকে। সিনথিয়া চুলগুলো হাতখোপা করে নেয়। তারপর সিটে এলিয়ে দেয় মাথা। চোখ দুটো বন্ধ করে। গাড়ি ছুটতে থাকে সোজা রাস্তা ধরে। মিনিট দশেক পর ইরফাদ পাশ ফেরে। দুটো বন্ধ চোখ,চুলের খোপা বাধন মুক্ত হয়ে উড়ছে।সিনথিয়া ভেঙেচুড়ে বসে আছে।তবে কি সিনথিয়া ঘুম? ইরফাদ গাড়ি থামায়। তড়িঘড়ি করে ডাকে,
— সিনথিয়া! এই…..
এই মেয়ে…. এই…..
সিনথিয়া যেনো ঘুমে তলিয়ে গেছে।কোনো শব্দ তার কানে যাচ্ছে না। ইরফাদ চিন্তায় পড়ে যায়। এখন যদি ঘুমায় আর বাসায় না ফিরতে পারে ঝামেলা হয়ে যাবে। যেহেতু না বলে নিচে এসেছিলো। যখন দেখবে মেয়েটি নেই।তখন-ই খোঁজাখুঁজি শুরু হবে। কেবলমাত্র এক ঝামেলা থেকে বেরিয়েছে। তারউপর আরেক ঝামেলা হবে এখন। ইরফাদ আরেকবার ডাকে,
— এই মেয়ে…
সিনথিয়ার কোনো নড়চড় নেই। সে ঘুম তো ঘুম। ইরফাদ বোতল থেকে পানি নিয়ে পানির ছিট দেয় সিনথিয়ার চোখ মুখে। ঘুম তো ভাঙেই না। উল্টো গুটিশুটি মেরে ঐটুকু জায়গার মধ্যে শুয়ে পড়ে সিনথিয়া। ইরফাদ সিনথিয়াকে জায়গা দিয়ে সরে বসে। স্ট্রিয়ারিং এর গোল চাক্কায় হাত মুষ্টি করে মৃদু আঘাত করে। মনে মনে বলে,
–ধুরর….
রং পর্ব ১৮
সিনথিয়া মুখ লুকিয়ে ঠোট টিপে হাসে। সুযোগ যখন সিনথিয়া পেয়েছে। এই সুযোগ তো সিনথিয়া ছাড়বেনা। দোতলার চাচ্চুর জানালায় তো সেই ঢিল ছুড়ে এসেছে। যাতে সুযোগটা কাজে লাগে। এই ঘুম তার এখন কিছুতেই ছাড়বে না। ঘুম ছাড়বে সেই পাঁচটায়। এসপি সাহেব,” আপনি গাড়ি চালান।” এই ঘুম ভাঙার ঘুম না। আপনি না পারবেন জাগাতে আর না পারবেন ছুড়ে ফেলে দিতে।