অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৩

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৩
ইয়াসমিন খন্দকার

আবরাজ সুস্থ হয়ে নিজের এপার্টমেন্টে ফিরেছে। নিঝুম মাথা নিচু করে আবরাজের রুমে প্রবেশ করে। আবরাজ নিঝুমকে আসতে দেখে বলে,”তুমি কি কিছু বলবে?”
নিঝুম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”জ্বি, আমি আসলে..আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।”
“ক্ষমা! কিন্তু কিসের জন্য?”
“আপনাকে ভুল বোঝার জন্য। আমার একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য আপনার জীবনে আজ এত বড় বিপদ ডেকে এনেছে।”
“মানে?”

“আমি জানতাম, চিংড়ি মাছে আপনার এলার্জি। তবুও আমি আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য চিংড়ি মাছ খেতে দিয়েছিলাম। কারণ আমার মনে সন্দেহ জন্ম নিয়েছিল যে আপনি হয়তো স্মৃতি হারান নি এমনি নাটক করছেন আর তাই..”
আবরাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আর সেজন্যই তুমি এমন একটা ফন্দি আটলে? আচ্ছা, তোমার কেন মনে হলো আমি স্মৃতি হারাই নি।”
“আসলে..”
“দেখো, নিঝুম। আমি তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। আমি জানি না, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা আগে কেমন ছিল। তবে যতটুকু আন্দাজ করতে পারছি খুব একটা ভালো হয়তো ছিল না। এজন্যই তুমি আমাকে সবসময় এমন সন্দেহের চোখে দেখো হয়তোবা। কিন্তু আমি সত্যি বলছি,আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রীর মতো হোক।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিঝুম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”সেটা আপনি এখন বলছেন কারণ আপনার আগের কোন স্মৃতি নেই। কিন্তু আপনার আগের স্মৃতি ফিরে এলেই নিশ্চয়ই আপনি আবার আমার সাথে আগের মতো ব্যবহার করবেন। আবার আমায় বলবেন যে..এই সম্পর্ক রাখতে চান না।”
“আর যদি আমি স্মৃতি ফেরার পরেও এমনটা না বলি?”
“মানে?”
“মানে যদি আমি স্মৃতি ফেরার পরেও তোমাকে নিজের করে চাই তবে তুমি থাকবে তো আমার পাশে?”
“কি বলছেন এটা আপনি?”
আবরাজের মন চাইল এখনই নিঝুমকে সব সত্যটা বলে দিতে। তবে সে কিছু একটা ভেবে থেমে গেল। অতঃপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”আমার একটু বিশ্রাম দরকার। তুমি একটু আমায় একা থাকতে দাও।”
নিঝুম আর এক মুহুর্ত বাক্যব্যয় না করে বাইরে আসে। অতঃপর কিচেনে গিয়ে রান্না বসিয়ে দেয়।

ম্যাক্স ও এলিনা এসেছে আবরাজের সাথে দেখা করতে। আবরাজ তাদের দুজনকে দেখে বিছানায় শোয়া থেকে আড়মোড়া ভেঙে বসে। ম্যাক্স এসেই আবরাজকে বলে,”কাজটা কি তুমি ঠিক করলে আবরাজ? চিংড়ি খেলে তোমার বড় কোন ক্ষতি হতে পারে এটা জেনেও কেন চিংড়ি খেতে গেলে? যদি বড় কোন বিপদ হয়ে যেত?”
আবরাজ বলে,”এটা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। আমি যদি চিংড়ি মাছটা না খেতাম তাহলে নিঝুম সন্দেহ করত আমার উপর। আর এমনটা হলে আমি ওর চোখে খারাপ হয়ে যেতাম। আমি চাই না, নিঝুম আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখুক।”

এলিনাও নিজের রাগ ঝেড়ে বলে,”আমিও তো সেটাই বলছি। কাজটা কিন্তু একদম ঠিক হয়নি। আর আমার মনে হয় তোমার এবার এই মিথ্যা অভিনয় ত্যাগ করা উচিৎ। আর কতদিন এভাবে অভিনয় চালিয়ে যাবে? যে উদ্দ্যেশ্যে অভিনয় করছিলে সেটা তো পূরণ হয়েছে। এখন তো আর নিঝুমের প্রতি তোমার কোন সন্দেহ নেই। তাইনা? আর তোমার কয়েক দিনের ব্যবহার দেখে যা মনে হচ্ছে তুমি নিঝুমকে অন্য চোখে দেখতেও শুরু করেছ। তাহলে আর কিসের লুকোচুরি? এবার সব সত্যটা নিঝুমকে বলে দাও।”
আবরাজ বলে,”হুম, বলব। তবে একটু সময় বুঝে। আমি তাড়াহুড়ো কোন কিছু করতে চাইছি না। আমি চাই৷ আমার আর নিঝুমের সম্পর্কটা আরো স্বাভাবিক হোক।”

ম্যাক্স বলে,”তোমার এই স্মৃতি নষ্টের অভিনয় আর বেশিদিন করার দরকার নেই। এবার এর অবসান ঘটাও।”
এমন সময় নিঝুম ম্যাক্স ও এলিনার জন্য কফি নিয়ে আসে নিঝুম। দরজায় দাঁড়িয়েই সে ম্যাক্সের বলা কথাটা শুনে নেয়। আগের পরের আর কোন কথাই সে শোনে না। এই একটি কথার ভিত্তিতে সে মনে করে তার সাথে এতদিন ধরে সবাই প্রতারণা করেছে। রাগে-ক্ষোভে নিঝুম কাপতে থাকে। তার হাত থেকে কফির মগ পড়ে যায়। সেই শব্দে সবাই দরজার দিকে তাকাতেই চরম অবাক হয়। আবরাজ বলে ওঠে,”নিঝুম তুমি?”
নিঝুম এগিয়ে এসে বলে,”হ্যাঁ, আমি। বড্ড ভুল সময় চলে এলাম তাইনা? আপনাদের এত দিনের সাজানো নাটক এক নিমেষেই শেষ হয়ে গেল।”

এলিনা বলল,”নিঝুম, লিসেন টু মি। তুমি ভুল ভাবছ। লেট আস এক্সপ্লেইন।”
নিঝুম বলে ওঠে,”প্লিজ..আর কোন এক্সকিউজ দিতে হবে না আপনাদের। আমি আপনাকে বড্ড বিশ্বাস করেছিলাম এলিনা। তবে আপনিও যে মিস্টার আবরাজের এই জঘন্য পরিকল্পনার সঙ্গী হবেন আমার তা জানা ছিল না। আসলে ভুলটা আমারই। আপনাদের কাউকে বিশ্বাস করাই আমার উচিৎ হয়নি।”
আবরাজ এবার উঠে এসে নিঝুমের কাধে হাত রেখে বলে,”নিঝুম, আমার কথাটা শোন। আমি এই মিথ্যা অভিনয় করেছি তার পেছনে অনেক বড় একটা উদ্দ্যেশ্য ছিল।”
নিঝুম আবরাজের হাত নিজের কাধ থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে বলে,”ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি। এতদিন ধরে আপনার অনেক অভিনয় দেখেছি আর নয়। আপনি কি বুঝবেন, আমার মানসিক অবস্থা? অন্যের ইমোশন নিয়ে খেলা তো আপনার কাছে কিছুই না।”

বলেই নিঝুমের চোখ দিয়ে অজান্তে অশ্রু ঝড়তে থাকে। নিঝুম সেটা মুছে নিয়ে বলে,”আপনারা সবাই মিলে আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। এত গুলো দিন ধরে আমায় বোকার স্বর্গে রেখেছেন৷ আমিই..আমিই নির্বোধ আমি আপনাদের এই চাল বুঝতে পারি নি। এত দিন ধরে নিঃস্বার্থ ধরে আপনার সেবা করে গেছি। ভেবেছি আপনি এক অসহায় মানুষ কিন্তু আপনি.?”
ম্যাক্স বলে,”তুমি নিজেই সবকিছু বুঝে নিচ্ছ নিঝুম আমাদেরও অন্তত কিছু বলার সুযোগ দাও।”
নিঝুম বলে,”আমার আর কিছু বলার বা শোনার ইচ্ছা নেই আপনাদের থেকে। আপনাদের দেখে জাস্ট আমার ঘৃণা আসছে। আর কিছু না। আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকব না।”
আবরাজের বুক কেপে ওঠে। সে নিঝুমের সামনে এসে বলে,”কোথায় যাবে তুমি?”
“যেখানে দু চোখ যায় সেখানে যাব। কিন্তু আপনাদের মতো প্রতারকের সাথে এক মুহুর্ত আর থাকব না।”
আবরাজ নিঝুমকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,”আমার কথা না শুনে এক পাও নড়বে না। আমাকে সবটা বোঝাতে দাও।”

“কি বোঝাবেন আর আমায়? আমি কি কচি খোকা? আমি আপনাদের উদ্দ্যেশ্য বুঝে গেছি। আপনি আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন তাই না? এজন্যই আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছিলেন। ভেবেছিলেন এভাবে নাটক করে আমাকে নিজের প্রেমে ফেলবেন তারপর নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেবেন।”
“তুমি ভুল..”
“ভুল না আমি ঠিকই ভাবছি। এবার আপনিও শুনে রাখুন, আপনার এই উদ্দ্যেশ্য পূরণ হতে দিব না আমি। আপনি আমায় কি নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেবেন? আমি আজ নিজেই আপনার জীবন থেকে সরে যাব। নিজের পথ আমি নিজে বেছে নেব।”
বলেই আবরাজকে দূরে ঠেলে সে ঘর থেকে বেরোনোর চেষ্টা করে। নিঝুম বলে,”আমায় যেতে দিন। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”

আবরাজ ইশারা করে ম্যাক্স ও এলিনাকে বেরিয়ে যেতে বলে। তারা বেরিয়ে যেতেই আবরাজ ঘরের দরজা লাগিয়ে বলে,”আমি তোমার উপর জোর করতে চাইনি কিন্তু তোমায় ধরে রাখার জন্য এবার আমায় এটা করতেই হবে..”
বলেই আবরাজ নিজের শার্ট খুলতে শুরু করে। নিঝুম ভয় পেয়ে বলে,”কি করছেন এটা?”
“তোমাকে নিজের কাছে ধরে রাখার ব্যবস্থাম”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২২

“প্লিজ..এটা করবেন না।”
আবরাজ নিঝুমের অনুনয় শুনল না। জোর করে তাকে বিছানায় ফেলে দিল। অতঃপর তার উপর নিজের পুরুষত্ব দেখালো। নিঝুমের চিৎকারে ঘরে এক লোমহর্ষক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো।

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৪