অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১১
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশাকে টানতে টানতে নিজের বাড়ির সামনে এসে দাঁড় করায় জাঈদ শেখ। আরিশার হাতে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। তাই সে মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। জাঈদ শেখ নিজের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপে৷ কিছু সময় পর একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দেন৷ মহিলাটি হলো জাঈদের মা জামিলা শেখ। তিনি জাঈদকে এভাবে একটা মেয়ের সাথে দেখে অবাক কন্ঠে বললেন,”কি হয়েছে জাঈদ? এত রাতে কোথা থেকে এলে তুমি? আর এই মেয়েটা কে?”
জাঈদ আরিশার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,”ওকে বাড়িতে ঢুকিয়ে আমার রুমে নিয়ে যাও। ওকে আমি বিয়ে করেছি।”
জাঈদের কথা শুনেই চমকে ওঠেন জামিলা শেখ। তার চোখমুখে হঠাৎ করে অন্ধকার নেমে আসে, অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তিনি তাকালেন জাঈদের দিকে। অতঃপর বেশ ভারিক্কি কন্ঠে বললেন,”এসব কি বলছ তুমি? তুমি এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছ মানে? আমাদের না জানিয়ে তুমি কিভাবে বিয়েটা করলে?”
জাঈদ বিরক্তিতে মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে বলল,”বেশি কথা বলতে ভালো লাগছে না। ওকে ভেতরে নিয়ে যাও তো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জামিলা শেখ এবার রেগে গেলেন। বললেন,”আমার বোনের মেয়ে সন্ধ্যা তোমায় কত ভালোবাসে সেটা ভুলে গেলে নাকি? আর তুমি কিনা কোথা থেকে কোথাকার একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে ফেললে৷ এই বিয়ে আমি মানি না।”
জাঈদ ভীষণ রেগে যেতে থাকে। এরইমধ্যে জাহাঙ্গীর শেখ এসে বলেন,”কি হয়েছে? এত রাতে এত চিৎকার চেচামেচি কিসের ?”
জামিলা শেখ বলেন,”তোমার ছেলের কাণ্ডজ্ঞান দেখে যাও। ও কাকে যেন বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।”
জাহাঙ্গীর শেখ এগিয়ে এসে আরিশার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”ওদের ভেতরে নিয়ে যাও। এমনিতেই সামনে ইলেকশন, আমাকে অনেক ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এখন আর নতুন করে কোন অশান্তি চাই না। ওর মনে হয়েছে ও বিয়ে করেছে। এতে আমার কিছু বলার নেই।”
“তুমি এবারও ছেলেটাকে কিছু বলবে না? মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকাও? ওকে কি দেখে মনে হচ্ছে ও এই বাড়ির যোগ্য? গায়ের রংটাও চাপা আর না তো দেখতে আহামরি সুন্দর। ভালো ঘরের মেয়ে বলেও তো মনে হয়না। আমি তো ভেবে রেখেছিলাম আমার বোনের মেয়ে সন্ধ্যার সাথে জাঈদের বিয়ে দেব। ও দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি সিলেটের এক বনেদী পরিবারের মেয়ে। লন্ডনে বড় হয়েছে। আর তোমার ছেলে এ কাকে বিয়ে করে নিয়ে এলো। এই মেয়েকে আমি কিছুতেই ছেলের বউ হিসেবে মানব না। এই মেয়ে বের হও এখান থেকে।”
বলেই তিনি আরিশার দিকে এগিয়ে যান। এমন সময় জাঈদ আরিশার হাত ধরে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জামিলা শেখ চেচামেচি করে চলেন। তিনি বলেন,”এই মেয়েকে আমি বাড়ি থেকে বের করেই ছাড়ব।”
এমন সময় জাহাঙ্গীর শেখ জামিলা শেখকে শান্ত করতে তাকে সোফায় বসিয়ে বলেন,”এখন আর এ নিয়ে কোন অশান্তি করো না। তোমার কি মনে হয়, আমি যে কাউকে এই শেখ বাড়ির বউ বলে মেনে নেবো? তুমি নিজের ছেলেকে চেনো না? এখন হয়তো জেদের বসে এই বিয়েটা করেছে সাময়িক ফূর্তির জন্য আপাতত ব্যাপারটা নিয়ে বেশি জলঘোলা করো না। আমার উপর ভরসা রাখো, একবার ইলেকশনটা মিটে যাক। এবার আমি অনেক কষ্টে দল থেকে এমপি হওয়ার টিকিট পেয়েছি। একবার এমপি নির্বাচিত হলেই এই মেয়েকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। তারপর সন্ধ্যাকেই এই বাড়ির বউ করে আনব।”
“সত্যি বলছ তো?”
“আমি কি কখনো তোমায় মিথ্যা বলি?”
জামিলা শেখ এবার একটু শান্ত হন।
আরিশা বিছানার এক কোণায় গুটিশুটি মেরে বসে আছে৷ এরইমধ্যে জাঈদ বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। আরিশা তখনো কেঁদে চলেছিল৷ জাঈদ রেগে বিছানায় শুয়ে পড়ে বলে,”আমি ঘুমাবো এখন। তোমার ফ্যাচফ্যাচানি বন্ধ করো। যদি তোমার কান্নার আওয়াজ আর একবার আমার কানে আসে..তাহলে আই সয়ার, আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
আরিশা আর চুপ থাকতে পারল না। প্রতিবাদ জানিয়ে বলল,”কি ভেবেছেন টা কি আপনি? আমি আপনার কেনা পুতুল? আপনি যা বলবেন তাই শুনে চলব আমি? কখনোই না। আপনার মতো একটা বখাটে, মস্তানের কথা আমি শুনবো না।”
জাঈদ রেগে আরিশার কাছে এসে তার মুখ চেপে ধরে বলে,”এই একদম চুপ। আমার মুখের উপর কথা বললে তার ফল ভালো হবেনা।”
আরিশা জাঈদের হাতটা ছিটকে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফ্লোরে বসে পড়ে। অতঃপর বলে ওঠে,”আমাকে স্পর্শ করবেন না,আপনার স্পর্শেও আমার ঘৃণা অনুভব হয়।”
জাঈদ তাচ্ছিল্য করে বলে,”তোমার কি মনে হয়? তোমার মতো মেয়েকে স্পর্শ করার জন্য আমি মরে যাচ্ছি? নিজেকে আয়নায় দেখেছ কখনো? কোথায় তোমার বোন আফিফা আর কোথায় তুমি। উপস, সরি তুমি তো আবার ওর নিজের বোনও না। পালিত সন্তান!”
জাঈদের কথাগুলো আরিশাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। এসব যেন তার কাটা গায়ের উপর নুনের ছিটা ছিল৷ আরিশা জাঈদের কথার জবাবে আর কিছু বলে না৷ শুধু নীরবে অশ্রু ফেলে যায়। জাঈদও আর কথা না বাড়িয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এদিকে আরিশা ফ্লোরেই শুয়ে মনে মনে বলে,”কেন আল্লাহ কেন? আমার জীবনটা এমন এলোমেলো হয়ে গেল কেন? কি অন্যায় করেছিলাম আমি?”
সকালে ঘুম ভাঙতেই আফিফা নিজেকে আবিষ্কার করে নির্ঝরের বুকে মাথা রাখা অবস্থায়। নির্ঝরের ঘুমও ভেঙে যায়। দুজনে একসাথে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। নির্ঝর আফিফাকে বলে,”দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নাও। কাল রাতের পর তো আর কিছু খাও নি।”
আফিফা বলে,”এখন কোন খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না। আপনি প্লিজ, আমাকে বোনুর সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিন। ওর সাথে দেখা করতে না পারলে আমার ভালো লাগবে না।”
নির্ঝর বলে,”আচ্ছা, তুমি এত কিছু ভেবো না। আমি দেখছি কি করা যায়।”
নির্ঝরের কথায় আফিফা কিছুটা স্বস্তি পায়। তার মনটা বড্ড ছটফট করছে আরিশার কথা ভেবে। আফিফা বলতে থাকে,”না জানি আমার বোনুটা এখন কোন অবস্থায় আছে। ঐ শয়তানটা কেমন ব্যবহার করছে ওর সাথে!”
চোখে পানির ঝাপটা পড়তেই আরিশার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই সে নিজের চোখের সামনে জাঈদকে দেখতে পায়। সে হাতে একটা মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আরিশা উঠে বসে বলে,”এসবের মানে কি?”
জাঈদ বলে,”সারাদিন কি পড়ে পড়ে ঘুমাবে নাকি? এখানে এসে কি ঘুমানোর জন্য তোমায় বিয়ে করেছি?”
আরিশা বলে,”আপনাকে কে বলেছিল আমায় বিয়ে করতে? আমার যতক্ষণ ইচ্ছা আমি ঘুমাবো। আপনার কি?”
“এই মেয়ে, বেশি মুখ চালাবে না। আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এসো যাও।”
“পারবো না। আপনার শখ হলে আপনি নিজে বানিয়ে খান। আমি এখন কলেজে যাব।”
“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। বেশি বাড়াবাড়ি না করে আমি যা বলছি তাই করো। কফি বানিয়ে আনো। নাহলে এর ফল ভালো হবে না।”
“এই শুনুন, এসব হুমকি অন্য কাউকে গিয়ে দেবেন। আমি আপনার এসব হুমকিতে মোটেই ভয় পাইনা। দূর হন আমার সামনে থেকে।”
জাঈদ শেখ এবার রাগী চোখে আরিশার দিকে এগোতে থাকে। আরিশাও ঢোক গিলে এক পা, দু পা করে পিছাতে থাকে৷ জাঈদ রক্তিম চোখে বলে,”কি বলছিলে যেন? আমায় ভয় পাও না?”
আরিশা কাপা কাপা কন্ঠে বলে,”না..পাই..পাই না..”
আরিশা পিছোতে পিছোতে একদম দেয়ালের সাথে গিয়ে ধাক্কা খায়। আর পেছানোরও যায়গা নেই। জাঈদ আরিশার কাছে এসে তার গলা চেপে ধরে বলে,”এবার আমি এমন কিছু করব..যাতে আমায় ভয় পেতে তুমি বাধ্য হবে।”
“ছা..ছাড়ুন আমায়..”
“ছাড়বো না। কি করবে?”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১০
আরিশার দুচোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। কিন্তু জাঈদের মনে যেন একটুও দয়া হয় না। সে আরো জোরে আরিশার গলা চেপে ধরে। আরিশার শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়। সে কাশতে থাকে। জাঈদ একটু পর আরিশাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”এক্ষুনি কফি নিয়ে আয় আমার জন্য। নাহলে তোকে মেরেই ফেলব!”