অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১২

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১২
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশা দ্রুত কফি বানিয়ে আনে জাঈদের জন্য। জাঈদ আরিশাকে দেখেই বাকা হেসে বলে,”শেষপর্যন্ত আমার জন্য কফি নিয়ে আসতেই হলো। তাহলে শুরুতে এত নাটক করার কি দরকার ছিল?”
আরিশার রাগে মাথা খারাপ হয়ে যায়৷ জাঈদ তার কাছ থেকে কফি নেয়ার জন্য সামনে এগোতেই আরিশা পুরো গরম কফি ঢেলে দেয় জাঈদের হাতে। জাঈদ ব্যথায় আহ করে ওঠে। আরিশা তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,”আমাকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখে থাকবেন ভেবেছেন? সেটা আমি হতে দেব না। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আমিও আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করব। বুঝতে পারলেন?”

জাঈদ রেগে আরিশার দিকে এগোতে নিতেই আরিশা বলে ওঠে,”এই ভুল একদম করবেন না। আমাকে অসহায় বাঙালি নারী ভাববেন না। আমি মোটেই কোন অসহায় নারী না। আমি চাইলে আপনার সাথে ঠিক সেরকম ব্যবহার করতে পারি যেমন ব্যবহার আপনি আমার সাথে করেন।”
“তোমার মনে হয় না, তুমি নিজেকে একটু বেশিইই শক্তিশালী ভাবছ? আমার সাথে পাঙ্গা নেয়ার ফল কিন্তু ভালো হবে না।”
“আমি আপনাকে মোটেই ভয় পাই না, বুঝতে পেরেছেন আপনি? আপনার যা করার আপনি করুন। আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকব। আমি মোটেই আপনাকে ভয় পেয়ে চলবো না।”
বলেই আরিশা বাইরে চলে আসে৷ জাঈদ রাগে কাপতে থাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুপুর বেলা, আরিশা চুপচাপ ঘরের এককোণায় সোফায় বসে ছিল। এমন সময় জাঈদ হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে৷ আরিশা জাঈদকে আসতে দেখেই উঠে দাঁড়ায়। জাঈদ আরিশার কাছে এসে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,”তোমার বোন আফিফা আর দুলাভাই নির্ঝর এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে। ওদের সামনে কোন ভাবেই সব সত্য বলবে না৷ এর ফল কি হবে জানো তো? ভালো মেয়ের মতো, আমার কথা শোনো। ওদের কে গিয়ে তুমি বলো, তুমি আমার সাথে সুখী আছ। ওদের সাথে ফিরতে চাও না।”
আরিশা কোন কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়। ড্রয়িংরুমেই আফিফা ও নির্ঝর বসেছিল। জাঈদের মা জামিলা শেখ তাদেরকে দেখেই বলে ওঠে,”এসেছ অনেক ভালো হয়েছে। এমনিতেও আমি এই বিয়েটা মেনে নেই নি। তোমার বোনকে নিজের সাথে নিয়ে চলে যাও। আমার ছেলের জন্য আমি আরো অনেক ভালো মেয়ে দেখে রেখেছি।”
এমন সময় আরিশা সেখানে উপস্থিত হয়েই আফিফা ও নির্ঝরকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”আপনারা এখানে কেন এসেছেন?”

আরিশাকে আসতে দেখেই আফিফা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি তোকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি বোনু! আমি জানি, এই শয়তানটা নিশ্চয়ই জোর করে তোকে বিয়ে করেছে। জোর করে তোকে এখানে আটকে রাখতে চাইছে, তাইনা? তোকে আর এক মুহুর্ত এখানে থাকতে হবে না। তুই আমাদের সাথে ফিরে চল। একদম একে ভয় পাবি না। আমি আছি তোর পাশে।”
বলেই আফিফা এগিয়ে গিয়ে আরিশার কাধে হাত রাখে। আরিশা সেই হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে,”বাড়ি? কার বাড়ি? আপনাদের বাড়ি? সেখানে আমি কেন ফিরে যাব? আমি তো আপনাদের কেউ না। আমি তো একজন অনাথ, যে আপনাদের বাড়িতে আশ্রিতা ছিলাম এতদিন। আপনারা আমার জন্য যা করেছেন তার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। কিন্তু এখন অন্তত আমায় শান্তিতে সংসার করতে দিন। আমি আর আপনাদের কাছে ফিরতে চাই না।”

“বোনু!”
“হ্যাঁ, ফিরে যান আপনারা। আমার সংসারে দয়া করে কোন অশান্তি সৃষ্টি করবেন না।”
আফিফা আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় জাঈদ বলে ওঠে,”আপনাদের যা শোনার তা শুনেছেন নিশ্চয়ই এখন ভালোয় ভালোয় বেরিয়ে যান এখান থেকে।”
নির্ঝরও রেগে বলে,”আফিফা, চলো এখান থেকে। তোমার বোন যখন এখানেই থাকতে চাইছে ওকে থাকতে দাও। চলো এখন। আমি আর অপমানিত হতে চাই না।”
“নাহ, আমি যাবো না। আরিশাকে নিশ্চয়ই এই শয়তানটা ভয় দেখিয়েছে।”

নির্ঝর৷ আফিফার কোন কথা না শুনে তাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে। আফিফা আর নির্ঝরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আরিশা। আর জামিলা শেখ হতাশ স্বরে বলেন,” আপদ টা বিদায় হলো না!”
আরিশা জাঈদের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমে এসেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে কান্না করতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও আপ্পি! আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি। যদি আমি আজ তোমাদের সাথে ফিরে যেতাম তাহলে নিশ্চয়ই ঐ জাঈদ তোমার আর নির্ঝর ভাইয়ার ক্ষতি করতে চাইত। আমি কিছুতেই সেটা হতে দেব না। প্রয়োজনে আমি কষ্টে থাকব, তবুও সেই কষ্টের আঁচ তোমার উপর পড়তে দেব না। নিজের কষ্টের বিনিময়ে তোমায় সুখী করব আমি। তোমার পরিবার আপন না হয়েও এতদিন আমাকে নিজেদের মেয়ের মতো পালন করেছে। তার বিনিময়ে তোমার জন্য এতটুকু ত্যাগ স্বীকার আমি করতেই পারি!”
বলেই আরিশা নিজের চোখের জল মুছতে থাকে। একটু পরই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে সে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। জাঈদ দ্রুত বেগে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তাকে দেখেই আরিশা ঘৃণার দৃষ্টি দিয়ে সরে আসে। জাঈদ আরিশাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,”বাহ, কি অভিনয়টাই না করলে! তোমার অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ।”
“ছাড়ুন আমায়! আমার ঘৃণা হয় আপনার স্পর্শে।”

“তুমি কি মনে করেছ? নিজেকে ভেবেছ টা কি? রাণী ভিক্টোরিয়া যে তোমায় স্পর্শ করতে আমি উতলা হয়ে থাকব?”
বলেই জাঈদ আরিশাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলে,”তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই। নিজের চেহারাটা একবার ভালো করে আয়নায় দেখে ভাবিও তো তুমি আমার যোগ্য কিনা।”
জাঈদের এই কথা শুনে আরিশা ভালো করে তার দিকে তাকায়। জাঈদকে কখনো সেভাবে খেয়াল করে নি সে। জাঈদ ভীষণ লম্বা, বলিষ্ঠদেহী একজন পুরুষ। গায়ের রঙও উজ্জ্বল ফরসা। এক কথায় তাকে সুদর্শন বলা যায়। সত্যিই হয়তোবা আরিশা তার পাশে কিছুই না। এই জন্যই বোধহয় নির্ঝরও তার বোন আফিফাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। ছোটবেলা থেকেই তো আরিশা এটাই জেনে এসেছে আফিফা সুন্দরী আর সে ততটা নয়। তাই আর এসব নিয়ে খুব একটা আফসোস হয় না। আরিশা নিজের চোখের জল মুছে বলে,”ঠিকই বলেছেন আপনি। আমি আপনার যোগ্য নই। আপনি একটা কাজ করুন। আমায় ছেড়ে দিয়ে নিজের যোগ্য কাউকে বিয়ে করে নিন।।আমি কথা দিচ্ছি, আপনি কিভাবে আমায় বিয়ে করেছিলেন সে ব্যাপারে কাউকে কিছু বলব না, অনেক দূরে চলে যাব সিলেট থেকে। তবুও আমায় মুক্তি দিন।”

জাঈদ বাকা হেসে বলে,”এমনটা যদি ভেবে থাকো যে আমি তোমায় মুক্তি দেব তাহলে তুমি বোকার স্বর্গে বাস করছ। তোমাকে এখানেই থাকতে হবে, আমার সাথেই থাকতে হবে। তোমার বোন আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছে তার শোধ না তোলা পর্যন্ত আমি তোমায় ছাড়ব না।”
–+++-+++++++++++++
নির্ঝর ও আফিফা বাসায় ঢুকতেই ছবি বেগম এগিয়ে এসে বলেন,”কিরে! খুব তো সকাল সকাল ঐ মেয়েটাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে। তা কোথায় সেই মহারাণী?”
নির্ঝর বলে,”ও আমাদের সাথে আসতে চায়নি দাদি।”
ছবি বেগম বলেন,”এই ব্যাপারে তো আমি আগেই বলেছিলাম। শুধু শুধু ঐ অকৃতজ্ঞ মেয়েটার কাছে গিয়ে অপমানিত হবার কি দরকার ছিল তোমাদের?”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১১

আফিফা বলে ওঠে,”আমি জানি, আরিশা মন থেকে ওসব বলে নি। নিশ্চয়ই ঐ জাঈদই কিছু করেছে। আমি আরিশাকে ফিরিয়ে আনবোই।”
নির্ঝর এবার রেগে বলে,”তোমার এই বোন ভক্তি বাদ দাও আফিফা! আমি কিন্তু ভীষণ বিরক্ত। আর ঐ মেয়েটা তো তোমার নিজের বোনও নয়। তবুও কেন একটা বাইরের মেয়ের জন্য এত ভাবছ।”
“নির্ঝর! তুমি এসব বলছ?”
ছবি বেগম বলেন,”একদম ঠিক বলছে নির্ঝর দাদুভাই। আজ থেকে তুমি আর ঐ মেয়ের কোন খোঁজ করবে না। আজ থেকে ও আমাদের সবার কাছে মৃত।”
“দাদি!”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৩