রং পর্ব ৩৩
তন্নী তনু
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। খড়ায় ফাটা মাটির মতো আকাশ ফেটে চৌচির। সেখান থেকে দেখা যায় আগুনের ঝলকানি। ঘরের আবছা হওয়া কোণগুলো কিয়ৎক্ষণের জন্য আলোকিত হয়।তিথির চোখে আলো পড়ে ঝপাৎ করে। তিথি নিজের হাত চোখের উপর রাখে। বুকের গহীনে গড়ে তোলা কল্পনার ঘর কেবল শূন্যতায় পূর্ণ। নিজের শূন্য হওয়া হৃদয় খাঁ খাঁ করে নিজের হৃদয়ের সাথে ভালোবাসার মানুষটির হৃদয়ের স্পর্শ পেতে। পুরুষালি সুঠাম লোমশ বুক যেনো চুম্বকের মতো টানে। যেনো ওখানেই নিজের ঠিকানা। শূন্য বালিশে এখন আর ঘুম হয় না। আঙুলের ভাজে আঙুল,পৌষমাসের শীতে তীব্র কনকনে ঠান্ডায় আদুরে বেড়ালের মতো শিশিরের গা ঘেষতে ইচ্ছে করে, ঠান্ডা বরফশিক্ত শরীর শুধু উষ্ণতা খুঁজে বেড়ায়। তবে বেশীর ভাগ সময়-ই কাটে অপেক্ষায়। অনুভূতি রা পথ চেয়ে থাকতে থাকতে চোখের জল হয়ে বেড়িয়ে আসে। ড্রয়িং রুমের ওপাশের রুম টা জুরে যে ঘুমিয়ে থাকে। মাঝ খানের ঐটুকু দূরত্ব ডিঙিয়ে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু অজানা ভয় তার পায়ে শিকল বেঁধে দেয়। “যদি?” এই প্রশ্নটা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে সারাক্ষণ। তিথি তপ্ত শ্বাস ফোস করে ফেলে। কুটুস খেয়াল করে বিষয়টা। বয়স অল্প হলেও কিছু কিছু বিষয় বোঝে সে। কুটুস পাশ ফেরে। তারপর বলে,
— ভাইয়াকে মিস করছো?
অন্তরের কথাটা আচমকাই কুটুসের মুখে শুনে কেঁপে ওঠে তিথি।বুকের মতো সুঁই এর মতো বিঁধতে থাকে এই অনুভূতি টুকু। এই তো কয়েকদিন আগেও তিথি অন্য রকম ছিলো। কতো ছেলেকে নাকানি চুবানি খাওয়াতো। কতো কি করে বেড়াতো। সব এসে নিঃসংকোচে কুটুস কে বলতো। আর আজ সত্যি কথাটাও বাঁধা পাচ্ছে। কুটুস বুঝে ফেলায় নিজেকে অপ্রস্তুত লাগছে। তিথি কথা বলে না। কুটুস বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— ভাইয়া ফিরবে কখন?
— জানিনা।
— আসতে বলো!
–এসে কি হবে?
— দেখা করবে…
— আমার ভয় করে কুটুস পাখি….
— মা একদিন না একদিন জানবেই….
–কি হবে তখন?
— বিয়ের পর কিছু হয় না আর। কোনো একদিন মেনেই নিবে…
— কিন্তু মামি আমাকে সহ্য করতে পারে না…
— মা একটু কঠিন। তবে তোমাকে যে ভালোবাসে না এমন না। মা আমাদেরও এমন ই করে।
— আমার খুব ভয় করে রে!
— কোনো ভয় নেই আপাই। ভাইয়াকে কল দাও। বাসায় আসতে বলো।
— পারবো না আমি। ঘুমা তুই….আমিও ঘুমাই।
বৃষ্টির গতি বাড়ছে। অর্ধখোলা জানালা দিয়ে আসছে হাওয়া। জানালার ফিনফিনে পর্দা গুলো বাতাসের স্পর্শে দুলছে। গরম ভাব টা কেটে গিয়ে ঘরজুড়ে নেমেছে ঠান্ডা ঠান্ডা আবেশ। ফ্যান ঘুরছে ফুল স্পিডে। তিথি কাঁথা মুড়ি দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে আছে।রাতের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘুমের গভীরতা।পূর্ণ অধিকার প্রাপ্ত বরফসিক্ত ভেজা আঙুলের ডগা নেশায় আশক্ত হয়ে পথভ্রান্তের মতো এলোমেলো ঘুরছে তিথির উন্মুক্ত উদরে।নিজের উষ্ণ তপ্ত শরীরের সাথে আরেকটা বরফসিক্ত অস্তিত্ব আলিঙ্গনে যেনো সমস্ত তাপ শুষে নিচ্ছে তার।বুকের গহীনে শুরু হচ্ছে এলোপাথাড়ি ঝড়,সমুদ্রের স্রোত যেনো ফিনকি মেরে উঠছে। বুকের মধ্যে শব্দ হচ্ছে দিরিম দিরিম। তা শিক্ত আঙুলের ডগার দাপটে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। মনে প্রশ্ন জাগছে শিশির কখন এলো? আর সে ই কোথায়? ড্রিম লাইটের মৃদু আলো বলছে সে নিজের ঘরেই। তাহলে কুটুস? হুরমুরিয়ে তাকায় তিথি। বিছানা শূন্য। উদাম উন্মুক্ত উদরের বিবর বিন্দুকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে ঘোরানো শিক্ত আঙুলের ডগা সহ শক্ত পুরুষালী হাত চেপে ধরে তিথি। গলা ধরে আসে।বাতাসের সংস্পর্শে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো জড়িয়ে আসে শ্বাস। একটুকরো নকশি কাঁথার ভেতরে যেনো গ্রীষ্ম-শীতের বিচরণ। বরফশিক্ত ভেজা ভেজা কায়া শুষে নেয় নরম কোমল ছায়ামূর্তির উত্তপ্ত আগুন। ঠান্ডা আবেশে কখনো কেঁপে ওঠে তিথি। কখনো হয় আগুনের মতো উত্তপ্ত। তিথি হাসফাস করতে করতে বলে,
— স্টপ…..
তারপর আবারো জড়ানো গলায় হাঁসফাঁস করতে করতে বলে,
— মামি চলে আসবে…
— ধুরর… কার মধ্যে কি বলিস?
মামির দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়ে এসেছি।
–তবুও…
–পৃথিবী ভুলে যাহ আজ….. যাস্ট ফিল মি……
— প্লিজ স্টপ….
অপরপৃষ্ঠের মানুষটা এই শব্দকে সম্পূর্ণ অগ্রায্য করে ফাঁকা আকাশের মতো একটুকরো নরম তুলতুলে গ্রীবায় সিক্ত ওষ্ঠাধর তারার মতো বিন্দু বিন্দু আকারে বসায়। পৃষ্টের মেরুদন্ডের দুপাশে সিলমোহরের মতো গোল গোল গুটিকয়েক ছাপ ফেলে দেয় গভীর ভাবে । তিথি ডাঙায় আসা মাছের মতো লাফিয়ে ওঠে। হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল নরম পিলোতে চেপে ধরে শিশির। নিজের চোখের উপর দু”জোড়া চোখ জোড়া কিছু একটা বলে। তিথি চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। তপ্ত শ্বাস পড়ছে তিথির চোখে মুখে। শিশিরের ঘন হয়ে আসা পুরুষালি ভরাট গলা,
— তোর সকল কষ্ট আমাকে দিয়ে দে তিথি। আজ পুরো তিথিকেই আমাকে দিয়ে দে………….
তিথি চোখ খোলে না। শ্বাস জড়িয়ে আসছে। পাহাড় সম ভারী অস্তিত্বকে সয়ে নেয় তিথি। বাইরে বৃষ্টির তোপ বাড়ছে। অর্ধ খোলা জানালার বৃষ্টির গুড়ি গুড়ি ফোটা ছিটকে এসে পড়ছে তিথির চোখ মুখে। বৃষ্টির তালে তালে পেখম ছড়াচ্ছে ময়ূর। নৃত্য দিচ্ছে বৃষ্টির ছন্দের তালে। ঘন আধার রাতে দুজন মানুষ প্রেয়ময় বৃষ্টিতে ভিজছে অবিরাম। বৃষ্টির ছন্দে সুখের বর্ষনে মেতেছে দুটো ছায়ামূর্তি।
ইলশে গুড়ি বৃষ্টি ক্রমেই দানা ভারী করছে। ভারী ফোটায় ফোটায় গাড়ির সামনর গ্লাস ঝাপসা হয়ে আসছে। একটা লম্বা দন্ডের মাথায় লাগানো বস্তু বৃত্তাকার গতিতে ওঠা নামা করছে। ঝাপসা হয়ে আসা গ্লাস পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ইরফাদের চোখ দুটো কৃষ্ণচূড়ার মতো টকটকে লাল। ইরফাদের নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ চেকিং পয়েন্ট হিসেবে সিলেক্ট করে নিয়েছে। সর্বশেষ সিনথিয়াকে যে জায়গায় দেখা গিয়েছে সেখানে পৌঁছায় জাবির ও ইরফাদ। বৃষ্টির জন্য রাস্তা রেইনকোট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে দায়িত্ব প্রাপ্তরা। জাবির গাড়িতে বসে গুগল ম্যাপ দেখছে। তনয় আসবে আর কিছুক্ষণ পর। তাকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাবে ইরফাদ।জাবির ট্যাবে চোখ রেখেই বলে,
— স্যার! স্যার গাড়িটা সর্বশেষ কাজলাতে দেখা গেছে। ঐদিকে মেঘনা ব্রিজ মাঝখানে চড় তারপর দাউদকান্দি ব্রিজ। ঐখান থেকে কুমিল্লা বিশ্বরোড,কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট। ঐখান থেকে নোয়াখালি, ফেনির রাস্তা আছে আর আছে চট্টগ্রামের রাস্তা।
–কুমিল্লা বাদ। তারা ঐ রাস্তা হয়ে অন্য কোথাও গিয়েছে। লাইক চট্টগ্রাম….
–আই হোপ তারা চিটাগং এর দিকেই যাবে।বিকজ চিটাগং চরপাড়া ঘাটে শিপে মালামাল আসে। ওরা চাইলেই ঐখান থেকে দেশের বাইরে ইজিলি বের হয়ে যেতে পারবে।
ইরফাদ শক্তচোখে শুধু মাথা ঝাকায়। তনয় আসা মাত্রই দাপিয়ে ছুটায় গাড়ি। জাবির বলে,
— উদ্দেশ্য যাই হোক! আমার মনে হচ্ছে প্রয়োজনে এরা দেশের বাইরেও যাওয়ার রাস্তা করে রেখেছে। মিস সিনথিয়া ইবনা কে গুটি হিসেবে রেখে আবার তাদের স্বার্থে সিনথিয়া ইবনাকেও দেশের বাইরে নিতে পারে।
— প্ল্যান যাই হোক। চিটাগং পৌছানোর আগেই আমাদের সিনথিয়া ইবনাকে রেসকিউ করতে হবে।
— জ্বি স্যার! রেসকিউ হওয়া না অবধি বলা যাচ্ছে না আসলে সিনথিয়া ইবনাকে ঠিক কি কি কাজে ইনভলব করবে!
–ইয়েস! ক্রিমিন্যাল ঠিক কি কারণে কিডন্যাপ করেছে এটা সবার অজানা। তাই তাকে রেসকিউ না করা পর্যন্ত ধরে নিচ্ছি তারও প্রাণ সংকট।
–স্যার! আমি বিভিন্ন স্পটে সার্চ করার জন্যে পুলিশ কে ইনফর্ম করেছি। আশা করি রাস্তা শেষ হবার আগেই সিনথিয়া ইবনাকে আমরা রেসকিউ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
ইরফাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়।
শক্ত হাতে বাঁধনে আটকে যায় সিথনিয়া। তার চেয়ে বেশী বাঁধা পড়ে দূর্বলতায়। একটা মানুষ তাকে ভালোবাসা দেখালো তার সামনে তার বান্ধবীকে বিয়ে করলো। জটলা পাকিয়ে আবার তার সাথে দেখা করতে এলো। তার সামনে থেকে উধাও হলো। আবার তার জন্য জেলে অবধি গেলো। মানুষটা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেলো। আবার এতোকাল পরে ধরাও দিলো। এতো এতো প্রশ্নের ভীর। অন্তর যেনো কাচের মতো চুরচুর করে ভাঙছে। এই লোকটা সেচ্ছায় বাইরে আসতে পারলে কেনো সেদিন গুম হয়েছিলো? যার জন্য জীবনে এতো ঝড়, বৃষ্টি,তান্ডব, তোলপাড় সে মানুষটা বাইরে আসতে পারলে পুলিশের কাছে গেলো না কেনো? বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে আসে তার। নোনা জল ক্রমশ ভারী হয় চোখের পাপড়িতে ঝেপে আসে। গলায় আটকে আসা শব্দগুলো কাঁপা কাঁপা হয়ে বের হয়,
— তুমি এখানে?
রাফি যেনো অন্য জগতের মানুষ। তার দৃষ্টি বলছে- সে “না” সিনথিয়াকে চেনে! “না” কখনো দেখেছে।
বৃষ্টির ভারী ফোটায় ভিজছে সবাই। রাফি শক্ত হাতের মুঠিতে ধরে সিনথিয়ার হাত। টেনে নেতে চায় পেছনে। শক্ত পাথর মূর্তির মতো দাঁড়ায় সিনথিয়া। নড়চড় হয় না যেনো। সমস্ত রাগ শক্তি যেনো হাতে চলে এসেছে। রাফি পেছন ফেরে। তারপর বলে,
— চলুন….
–আমার উত্তর না পেলে আমি এক চুল নড়বো না।
রাফি সিনথিয়ার মুখোমুখি হয়। তারপর বলে,
— কিসের প্রশ্ন কিসের উত্তর?
— আপনি ভুলে গেছেন সব? তাও এতো সহজে?
— সরি! আপনার কথা বুঝতে পারছি না।
গলায় ঝংকার তুলে সিনথিয়া বলে,
— একটা সুন্দর জীবন নষ্ট করে নাটক হচ্ছে এখন?
–আপনি আসুন…
— বললেই যাবো নাকি?
— আপনি চাইলেও পেছনে ফিরে যেতে পারবেন না। সো চলুন।
–আমি যাবোনা।
— যেতে আপনাকে হবেই।
বলেই সিনথিয়ার হাত শক্ত করে ধরে রাফি। মূহুর্তেই হাত ঘুড়িয়ে ফেলে সিনথিয়া। হাত মুচরে ধরে রাফির। চোখে অগ্নিশিখা। রক্তজবার মতো চোখ ফুটে আছে। সিনথিয়া কর্কস কঠিন গলায় বলে,
— দূর্বল ভেবে ভুল কোরোনা। আমি শুধু ভালোবাসা আর মায়ার কাছেই দূর্বল। ভুল মানুষের উপর মায়া কেটে গেছে আমার। প্রয়োজনে হাত উঠবে।
রাফি একটু দমে যায়। সিনথিয়া এখন অন্য রুপে। তাকে এভাবে মানানো যাবে না। রাফি বলে,
— বলো কি জানতে চাও….
— সেদিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?
— হারাইনি। নিজেকে আড়াল করেছিলাম।
–সেই দায় আমার উপর দিলে কেনো?তোমার জন্য আমার জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছে।
— এতে আমার কোনো হাত ছিলো না। সরি ফর দ্যাট….
— সরি বললে সব সমাধান হয়। ফিরিয়ে দিতে পারবে মানসম্মান? আমার যন্ত্রণা আমার কষ্ট?
— সরি!
— আর ইউ ম্যাড…. সরি দিয়ে আমার জীবন আগের মতো হবে?
— এছাড়া কিছু করার নেই।
মাথায় রক্ত উঠে যায় সিনথিয়ার। এরকম রগচোটা একঘেয়েমি আর শক্ত উত্তরে গাঁ জ্বলে উঠে সিনথিয়ার। মনের গহীনে থাকা প্রথম ও শেষ প্রশ্নটি করেই ফেলে সিনথিয়া,
— ভালোবেসে নিজে আমার পায়ের তলে পড়ে থেকে থেকে,মায়ার জন্ম দিয়ে কেনো অন্যকে বিয়ে করলে তুমি?
— কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই। কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না।চলো…
হাত ধরে টেনে পেছন দিকে নিয়ে যায় রাফি। সিনথিয়া পা ফসকে দু”পা গেলেও পাথরের মতো আবারো সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
— ভালোবাসা হলো একান্ত নিজের ব্যাপার। কাউকে কেউ ভালোবাসবে কি না, ভালোবাসা দিবে কি না? এসব একান্তই যার যার ব্যাপার। ভালোবাসা দেওয়া না দেওয়াও একজন মানুষের পারসোনাল ইস্যুর মধ্যে পড়ে। কিন্তু কাউকে ভালোবেসে দিন রাত ভালোবাসি বলে, দূর্বল করে ভালোবাসার জন্ম দিয়ে, মায়া সৃষ্টি করে সেইটা সরি বলে ফিরিয়ে নেয়ার এখতিয়ার কারোর নেই। ভালোবাসা নিয়ে খেলার রাইটস কেউ রাখে না।
আমার প্রশ্ন হলো– ভালোবেসে কেনো ঠকালেন? জোর করে আপনি আমাকে মায়ার জালে জড়িয়ে এতো দুঃখ কেনো দিলেন? কেনো?
ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে মিথ্যা বলে আপনি আমার সামনে অন্যকে বিয়ে করলেন! আমার সামনে তাকে স্পর্শ করলেন! কি অপরাধ ছিলো আমার?
রাফির ভ্রু- এর মাঝে কিঞ্চিৎ ভাজ হয়। বিস্মিত গলায় বলে,
— মানে?
— মানে অনিমা আমার বান্ধবি। আমি বিয়েতে গিয়েছিলাম।
যেনো আকাশ থেকে পড়ে রাফি।এতো কিছু সিনথিয়ার সামনে হয়েছিলো। অথচ সে বুঝতেও পারেনি। রাফি এগিয়ে আসে তারপর বলে,
— তুমি অনেক কিছু জানো না। তাই এমন ভাবছো। একদিন সব ক্লিয়ার হবে। ভালোবেসে সব ভুলিয়ে দিবো আমি।
–কাকে? আপনার বউকে? দিলে দিবেন। ওসব আমাকে বলে কি লাভ?
— তোমাকে পাওয়ার জন্যেই সব করেছিলাম।
— স্পর্শগুলো কি আমাকে পাওয়ার জন্যেই করেছিলেন মিস্টার রাফি?
— সব বলবো। শুধু তুমি চলো…. যখন তুমি সবটা জানবে তোমার এতো অভিযোগ তুমি ভুলে যাবে। ভালোবাসায় তুমি আমাকে আবার আকড়ে ধরতে চাইবে…..
–ভালোবাসা এক পবিত্র অনুভূতি। নোংরা মানুষের সাথে এই শব্দ কখনো যায় নাহ
— সে তুমি যাই বলো। আই নোউ তুমি আমাকে ভালোবাস।
— সিনথিয়া দূর্বল ম্যাটারিয়াল না। এতো সস্তা হয়ে যাইনি যে প্রতারককে ভালোবাসবো।
— তুমি চলো…. সব জানলে ভালোনাবেসে তুমি থাকতে পারবে না।
— যখন আমি ভালোবাসি তখন আমি পাগলের মতোই ভালোবাসি। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমি উম্মাদ। ভালোবাসার মানুষের জন্য আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ের বেহায়া, ইগোহীন মানুষ। ভালোবাসার জন্যে আমি সব বিলিন করে দিতে পারি। সব ছাড়তে পারি। কিন্তু প্রতারকের ক্ষেত্রে আমি পুরোই উল্টা। যতোক্ষণ কেউ আমার ভালোবাসার এড়িয়ার মধ্যে থাকে ততোক্ষণ পর্যন্তই আমার ভালোবাসা।এড়িয়ার বাইরের মানুষের জন্যে আমার ঘৃণাও নেই। যতোক্ষণ পর্যন্ত ভালোবেসেছো আমিও ভালোবেসেছি। যখন ছেড়ে দিয়েছো আমি সেদিন-ই ছেড়ে দিয়েছি। কোনো বিশ্বাসঘাতক,প্রতারকের জায়গা এই মনে নেই। নাউ লিভ…..
রাফি ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। তারপর বলে,
— “অনেক অভিমান জমছে সোনা। চলো সব ভুলিয়ে দিবো।”
বলেই হাত ধরে রাফি। সেকেন্ডের মধ্যে ডান হাত মুষ্টি পাকিয়ে রাফির ঠোঁটের উপর আঘাত করে সিনথিয়া। এক পা পিছিয়ে যায় রাফি। বাকি লোক গুলো তেড়ে আসে। হাত তুলে ইঙ্গিত দেয় রাফি,” থাম।”
রাফি এগিয়ে আসে। তারপর বলে,
— যতো খুশি মারো। তবুও চলো। আই সয়ার সব বলবো। আর তুমি আমাকে ভালোবাসবে।
সিনথিয়া পিছিয়ে যায়। রাফি আরেকবার হাত ধরার জন্য হাত বাড়ায়। সিনথিয়া এগিয়ে আসে। হাতের মুষ্টি শক্ত করে রাফির বুকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে। রাফি হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। ধাক্কা দিয়ে পেছনের দিক ঠেলে দেয়। পেছন থেকে বাহু চেপে ধরে দু”জন। দুজনের বুকেই কনুই গেঁথে দেয় সিনথিয়া। দৌড়ে এগিয়ে আসে সিনথিয়া। এক পায়ের আঙুলে মাটিতে ভর করে সিনথিয়া। অপর পা শূন্য তুলে নিজেও শূন্য ওঠে সিনথিয়া।শক্ত কেডসের আঘাত করে রাফির চোয়ালে। অনেকটা দূরে ছিটকে পড়ে রাফি। সামনের দুজনকেও লাথি মারে সিনথিয়া। আরেকজন ছুটে আসে তার দিকে। সিনথিয়া হাত মুষ্টি করে। এক পা সামনে আরেক পা পেছনের দিকে নেয়। লোকটি এসে হাত বাড়ালেই একহাতে হাত ঠেকায়। অপর হাতে চোয়ালে ঘুষি দেয়। ঠিক ঐ সময়ে কেউ একজন রাফিকে বলে। “একে এভাবে নেওয়া সম্ভব না।”রাফি গাড়ি থেকে স্প্রে আনে। তারপর সবাই মিলে সিনথিয়াকে চেপে ধরে। রাফি পেছন থেকে রুমালে চেপে ধরে সিনথিয়ার নাক মুখ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনথিয়া রাফির কোলের মধ্যে শুয়ে পড়ে। রাফি মনে মনে ভাবে,” তেজ আছে।” তারপর মৃদু হেসে সিনথিয়াকে কোলে তুলে নেয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলে।
–“গাড়ি চেঞ্জ করতে হবে। বাকি রাস্তা মালবাহী ট্রাকে যেতে হবে। ফোন দে……গাড়ি কোথায়?”
সিনথিয়াকে নিয়ে ট্রাকে ওঠে রাফি। সামনে ড্রাইভারসহ আরেক জন। সব প্ল্যান মাফিক হবে। গাড়ি চলে। সামনের দিকটায় বস্তা বস্তা আটা- ময়দা। গাড়ির ভেতরের দিকে বসে আছে রাফি। কোলের উপর সিনথিয়া। ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা আছে। ট্রাক চলছে দুলে দুলে। সামনে চেকিং চলছে। পেছন থেকে সিগন্যাল দেয় একজন।
— রাফি ভাই। চেকিং চলছে। মালবাহী ট্রাক গুলোতে মেশিন দিয়ে চেক দিচ্ছে। আমরা তো নেমে দাঁড়াবো। গাড়িতে শ্বাস নিলেই ধরা পড়ে যাবা।
রাফি চিন্তায় পড়ে যায়। এই মূহুর্তে কি করবে? সিনথিয়ার সেন্স নেই। তার উপর শ্বাস চেপে রাখলে যদি খারাপ কিছু হয়। পেছন থেকে সিগন্যাল দেয়।
— ভাই নামতে হবে আমাদের। নামার সময় সিগন্যাল দিবো। শ্বাস অফ করে থাকবেন।
সময় আসে। সামনে থেকে সিগন্যাল দেয়। শ্বাস অফ করে রাফি। সিনথিয়ার মুখ পলিথিন দিয়ে বেঁধে দেয়। টাইম যাচ্ছে। চেকিং চলে। দম ফুরিয়ে আসে রাফির। সিনথিয়ার অবস্থা কি সেই জানে।
রাফির মাথায় পাহাড়ের ভারি বোঝা। নিজের দম ফুরিয়ে আসছে। মেয়েটা সেন্স নেই। ভালো মন্দ কিছু হলে??
ইরফাদ বিভিন্ন চেকিং পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে চলেছে। একটা গাড়িতেও নববধূ রূপে কাউকে দেখা যায়নি। কোন দিকে যাচ্ছে? কি পরিকল্পনা! সব-ই ধোঁয়াশা। মেয়েটা কেমন আছে কি অবস্থায় আছে। কিচ্ছু জানেনা তারা। শূন্য দৃষ্টিতে সেদিন রাতে দৃশ্য পট ভেসে ওঠে। মেয়েটা ভাঙা হৃদয় নিয়েও তাকে আরেকবার ভালোবাসতে চেয়েছিলো। মায়ার বসেই হয়তো। তার জীবনের গল্প সিনথিয়ার মনে দাগ কেটেছিলো বলেই ঐ ছোট্ট মেয়েটা সেদিন পাগলামি করেছে। মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায়। যদি আর কথা না হয়? যদি আর দেখা না হয়?
এদিকে দম ফুরিয়ে আসে রাফির।সিগনালের অপেক্ষা করে। এতোদূর এসেও যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে সব শেষ। দুজন পুলিশ ট্রাকের পাল্লা খোলে। বস্তাগুলো সাজানো গোছানো দেখে। এদিকে রাফির বুকের মধ্যে দিরিম দিরিম বাজছে। বুকের কোথাও একটা জায়গায় সুঁচ যেনো অনবরত বিদ্ধ হচ্ছে। মেয়েটা যদি মারা যায়। তার নিজের দম ফুরিয়ে আসছে। নাক চেপে ধরেও আর সহ্য করা যাচ্ছে না। রাফি শুয়ে পরে ফ্লোরে। মাথা ব্ল্যাংক। মেয়েটার কিছু হতে পারে। সে চিন্তায় মাথা শূন্য হয়ে যায়। দম ফুরানোর সময়ে সামনে থেকে ঠকঠক আওয়াজ করে। সাথে সাথে খুলে দেয় সিনথিয়ার মুখ। নিজের শ্বাস ছেড়ে সিনথিয়ার বুকের উপর মাথা দেয়। চেক করে হাতের পালস। হাতের উপর আঙুল রেখে অনুভব করে টিপ টিপ করে বয়ে চলা রক্ত। নিজের বুকটা হাপরের মতো উঠানামা করছে। তবুও সস্তির শ্বাস নেয় রাফি।
বদ্ধ অন্ধকার চারদেয়াল। মেঝেতে পিচমোড়া করে হাত বেঁধে রাখা হয়েছে সিনথিয়াকে। বাইরে রাফি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে,
— উফফ! সিনথিয়া তো আসবেই না। আমার ঠোঁট ফাটিয়ে দিয়েছে।বাকিগুলার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
–আমার বোন বলে কথা। দম না থাকলে হয়।
— আপনার সব কথা শুনেছি বিনিময়ে সিনথিয়া শুধু আমার।
— কাজ কর মন দিয়ে। সিনথিয়ার নাম্বার থেকে কল দিতে বল এসপি কে। এসপি যতো দ্রুত ধরা দিবে ততো মঙ্গল।
–রাফি ফোন কাটে। তারপর সোজা সিনথিয়ার রুমে যায়। খুলে দেয় হাতের বাধন। পা বাধা অবস্থায় সিনথিয়াকে মেঝেতে বসায়। তারপর বলে,
— এসপির সাথে কথা বলো।
সিনথিয়া ফোস ফোস করে ওঠে। রাফি শয়তানের মতো হাসে আর বলে,
— যত তাড়াতাড়ি এসপি আসবে ততোই তোমার জন্যে মঙ্গল। এটা বুঝতে পারছো না??
সিনথিয়া সুযোগ বুঝে কথা বের করতে চায়।
— এসপি কে কি দরকার?
— তা তোমার ভাই জানে।
মনে মনে বলে জীবন থাকতে এসপিকে ফোন দিবে না সে। রাফির বাড়িয়ে দেয়া ফোনটা থাবা দিয়ে নেয় সিনথিয়া। তারপর সামনের দেয়ালে ছুড়ে মারে। ফোনের গ্লাস চুরচুর করে ভাঙে। রাফি থ হ য়ে বসে থাকে। এসপি আসলে তো ওর জন্যে ভালো। সিনথিয়া নিজের বাঁচার রাস্তা জেনে বার বার কেনো সিনক্রিয়েট করছে? অন্তর থেকে অশনী সংকেত বেজে ওঠে রাফির।” সামথিং ইজ রং।” রাফি ফোনটা তুলে আনে। তারপর বলে,
— এসপি কে কি তুমি কোনো ভাবে বাঁচাতে চাইছো?
সিনথিয়া চুপচাপ নিস্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। রাফি বলে,– বলো। তুমি কি চাইছো এসপি না আসুক?
তাহলে তো তুমি মুক্তি পাবে না।
সিনথিয়া রেগে বলে,
— না পেলে নাই।
— কিন্তু কেনো?
— সব প্রশ্নের উত্তর হয় না তাই।
— ত্যারামি কোরো না তো…..উত্তর দাও…
— সব প্রশ্নের উত্তর হয় না।
–কিন্তু তোমার চোখে তো আমি অন্য কিছু দেখছি।
— দেখলে দেখেছো তো???
— এতো কথা না…. সিম অন্য ফোনে উঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি কথা বলো।
সিনথিয়া খুকখুক করে কাশি দেয়। তারপর বলে পানি। রাফি ভাঙা ফোনটা নিচে রেখেই পানি আনতে যায়। সেই সুযোগে সুঁই পিন দিয়ে সীমকার্ডটা বের করে সিনথিয়া। যে করেই হোক সীম কার্ড টা ফেলে দিবে। কিন্তু তার পা বাঁধা।জানালা পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব না। ঘরে ফেললে খুঁজে বের করতে পারবে।তাই দাঁতের নিচে ফেলে। দাঁত দিয়ে চাপ দেওয়ার সময় রাফি পানি নিয়ে আসে। সিনথিয়া চুপ চাপ বসে থাকে। পানি এগিয়ে দেয় রাফি। ভাঙা ফোনটায় পিন ইন করায় রাফি। সিমকার্ড নেই।
রাফি সীম খুঁজে না পেয়ে বলে। “সীম কোথায় গেলো?”
সিনথিয়া সাথে সাথে পানি দিয়ে সীমকার্ড গিলে ফেলে। তারপর শব্দ করে হাসে। তারপর বলে,
— খেয়ে ফেলেছি।
সাথে সাথে রাফি শক্ত হাতে সজোড়ে থাপ্পর দেয় সিনথিয়ার গালে। আঙ্গুলের ছাপ পড়ে যায়। রাফির গা রাগে কাঁপে,
— আর কোনো সীমকার্ড নেই নাকি। খেয়ে ফেললেই হলো?
— আমার সীমকার্ড দিয়ে কল আমার জান থাকতে যাবে না। আর অন্য সীম দিয়ে কল দিলে এসপি রেডি হয়েই আসবে।
–ওর প্রতি কিসের টান?
সিনথিয়া মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে হাসে। রাফি রেগে আগুন হয়ে যায়। ধমকের সুরে বলে,
— নিজের জীবনের চেয়ে বেশী টান দেখাচ্ছো?? কিসের টান এতো?
সিনথিয়া গড়াগড়ি খায়। তারপর উঠে বসে। রাফির মুখের দিকে এগিয়ে আসে। চোখে চোখ রেখে ফিসফিসিয়ে বলে,
— ভালোবাসার!
রাফি আরেকটা চড় বসায়। সিনথিয়া খিলখিল করে হাসে। রাফি দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
— তোকে পাওয়ার জন্য আমি কি না কি করলাম আর তুই?
— এখানেই তোমার আর আমার তফাত। তুমি পাওয়ার জন্য আমাকে ভালোবেসেছো। আমাকে পুড়িয়ে আমার দেহ পেতে চাইছো। আর আমি এসপিকে ভালোরাখার জন্যে ভালোবেসেছি। পুরো পৃথিবীকে দেখাতে চাই দূর থেকেও ভালোবাসা যায়।
— দুই দিনে কিসের ভালোবাসা। চরিত্রহীনা….ছলনাময়ী…
সিনথিয়া দাঁতে দাঁত চেপে শব্দ করে,
–শশশশশ!
— দুই দিন পর পর যে নারী অপরকে ভালোবাসতে পারে সে কিসের ভালো মেয়ে। চরিত্রহীনা…..
–ভালোবাসার রঙ বদলায়। ভুল পথে হাঁটতে হাঁটতে কষ্ট পেতে পেতে আমারও ইচ্ছে করেছে একটু সস্তি পাই, শান্তি পাই। ভালো থাকা আমার অধিকার। বিনা কারণে শাস্তি কেনো পাবো? ভুল মানুষকে ভালোবেসে আমি যে ভাবে পুড়েছি,জ্বলেছি। আপনি কি চান আমি সারাজীবন জ্বলি?? কেনো?? আমার অপরাধ কি?
— তুই কোনোদিন আমাকে ভালোবাসিস নি…. তুই প্রতারক…. চরিত্রহীনা…ছলনাময়ী….
— ওরে ওরে “ঠকিয়েও দেখছি আপনি বিচারক, ঠকে গিয়ে আমি প্রতারক।” হাউ ফানি…
— সিনথিয়া ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।
— আমি ভালোবাসি ইরফাদকে। তাকে আমি পেতে চাই না। আমি চাই শুধু সে ভালো থাকুক। আর এটাই আমার ভালোবাসা।
— ওকে একবার ধরতে পারলে পুড়িয়ে মারবো। নয়তো জ্যান্ত কবর দিবো।
— তুই শুধু ফুলের টোকা দিয়ে দেখিস। তোর জান আমি বের করে নিবো।
–তুমি কখনো এমন ছিলে না সিনথিয়া।
–কেমন চাস! আমি তোকে পাওয়ার জন্য হাউমাউ করে কাঁদবো?? প্রতারককে সুযোগ দেয়ার মানে হলো আরেকবার ভুল করা। তার আগেই আমি সে পথ মুছে দিয়েছি। তোর জন্য এই হৃদয়ে কিচ্ছু নেই। কিচ্ছু না….
— আরে তোর জন্য কি না কি করলাম। তোর ভাইয়ের কথায় উঠলাম বসলাম। যা করতে বললো তাই করলাম।
— খুব কষ্ট হচ্ছে?? হাহাহা। এমন ই লেগেছিলো আমার। প্রতারকের দেয়া যন্ত্রণা ফিরিয়ে দেয়া যে কতো মজা। ইসসস সবাই এই স্বাদ গ্রহণ করুক।
–তুমি আমাকে পোড়ানোর জন্য এসব বললে? তার মানে তুমি এসপিকে ভালোবাসোনা?
— ভালোবাসি! জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমি তাকে আগলে রাখবো। পাই বা না পাই তাকে ভালোবেসে যাবো…..
— তাহলে আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা কেনো থাকলো না। কেনো অপেক্ষা করলে না।
–কারণ তুই প্রতারক… আর প্রতারককে ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।
–এটাই তোমার শেষ কথা?
–হুমম…
–তাহলে দেখো কি হয়। এসপিকে কতো দ্রুত ধরে ফেলি। আর দেশের বাইরে পাঠিয়ে গু*ম করে দেই।
সিনথিয়া মেঝেতে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে থাকে। আর বলে, “ভুলেও এদিকে আসবেন না ইরফাদ সাহেব। আমার জান থাকতে আমি আপনাকে কল দিবো না।”
রং পর্ব ৩২
সিনথিয়ার সকল কথা রাফি এ টু জেড নিলয়কে জানায়। সব শুনে নিলয় বলে ফোনে কথা বলতে বল। সিনথিয়া আর নিলয়ের কথোপকথন।
— কি শুনছি?
সিনথিয়া কথা বলে না। নিলয় বলে,
— ইরফাদ কি মেটারিয়াল জানিস?? কতোটুকু জানিস ওর সম্পর্কে। ও তোকে ইউজ করছে ইউজ। ও পারে না এমন কোনো কাজ নেই। ওর জন্যে আমরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। আমার বাবাকে ও মে*রে গুম করে দিয়েছে। বাবার খুনির প্রতি এতো প্রেম!!
আমি সব প্রুভ সহ আসছি। সব দেখে তুই নিজেই ফোন দিবি। নিজেই মা*র্ডা*র করতে চাইবি যেমনটা আমি চাই……