কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ২

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ২
মিসরাতুল রহমান চৈতী

সকালের আলো জানালার পর্দা ভেদ করে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। বাতাসে হালকা ঠান্ডা, জানালার বাইরে পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। তবুও ঘরটার ভেতর একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
চৈতী ধীরে ধীরে চোখ খুলল। কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায় আছে। মাথাটা ভারী লাগছে, চোখ দুটো ফুলে আছে কান্নার কারণে।

তারপর হঠাৎ করেই সব মনে পড়ে গেল!
সে চট করে উঠে বসলো। চারপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে দেখল— বিলাসবহুল শোবার ঘর, দামি পর্দা, কারুকাজ করা কাঠের আসবাব, আর একপাশে বিশাল একটা আয়না। এ যেন কোনো রাজপ্রাসাদ!
কিন্তু চৈতীর জন্য এই প্রাসাদ একটা খাঁচার চেয়ে কম কিছু না।
সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার গায়ে রাতের পাতলা একটা সাদা শাড়ি, যা হয়তো এই বাড়ির কোনো কাজের লোক পরিয়ে দিয়েছে। তার নিজের পোশাক কোথায়, সেটাই জানে না।
একটু কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার হ্যান্ডেল ধরল। খুলে দেখার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারল— লক করা।
তার বুক ধক করে উঠল। তাহলে কি সে সত্যিই বন্দি?
“আমি এখান থেকে বের হবোই!”
সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, তারপর জানালার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু জানালার গ্রীল এতটাই শক্ত যে, বাইরে বেরোনোর কোনো উপায় নেই।
তার ঠিক সেই মুহূর্তেই দরজার বাইরে কারও পায়ের আওয়াজ পেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

টক… টক… টক…
একজন পুরুষের ভারী পায়ের শব্দ।
চৈতীর নিঃশ্বাস আটকে গেল।
দরজার লক খুলে গেল ক্লিক শব্দ করে, আর মুহূর্তের মধ্যেই দরজাটা খুলে গেল।
দরজার ফ্রেমে দাঁড়িয়ে আছে রাতুল আহাম্মেদ।
তার হাতে এক কাপ চা, পরনে ঢিলেঢালা সাদা পায়জামা আর সিল্কের শার্ট। চোখে ঠান্ডা দৃষ্টি, মুখে অদ্ভুত এক অভিব্যক্তি।
চৈতী একদম দেয়ালের কাছে সরে গেল।
রাতুল ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে দরজাটা নিজের পেছনে টেনে বন্ধ করল।
—”কেমন ঘুম হলো?”
চৈতী কোনো উত্তর দিল না।
রাতুল সামনে এগিয়ে এসে হাতে থাকা চায়ের কাপটা টেবিলে রাখল।

—”একটা কথা জেনে রাখো, এই দরজাটা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে, যদি তুমি পালানোর চিন্তা না করো।”
চৈতী এবার মুখ তুলে তাকাল।
—”আমাকে ছেড়ে দিন…”
রাতুল একগাল হেসে বলল, “ছাড়তে তো আনিনি, চৈতী!”
চৈতীর চোখে পানি চলে এল।
রাতুল এবার একটু গম্ভীর হলো।
—”তোমার কান্না দেখতে আমার ভালো লাগে না। বরং নরমভাবে বলছি, সকালে উঠে একটা গোসল করে নাও। ব্রেকফাস্ট রেডি আছে।”
চৈতী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
রাতুল একটু ঝুঁকে তার কানে ফিসফিস করে বলল,
—”আর যদি গোসল না করো, তাহলে কিন্তু আমাকেই তোমাকে গোসল করাতে হবে…”
চৈতীর সারা শরীর কেঁপে উঠল।

রাতুল একটা মুচকি হাসি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল, তারপর দরজা খুলে বাইরে চলে গেল।
চৈতী শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার ভিতরটা এখন প্রচণ্ড ভয়ে জমে গেছে।
চৈতী বিছানায় ভয়ে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। একটু পরে আবার আসলো রাতুল চৈতী কে এইভাবে বসে থাকতে দেখে গম্ভীর কন্ঠে বললো,, কি ব্যাপার এখনো শাওয়ার নিতে যাওনি কেন না কি তুমি চাইছো আমি নিজে তোমাকে গোসল করিয়ে দেই
চৈতী ওর চোখের দিকে না তাকিয়ে বললো আমার তো কোন জামা নেই পড়বো কি?
রাতুল কিছুক্ষণ চুপচাপ চৈতীর দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর তার ঠোঁটে একটা একটানা হাসি ফুটে উঠল, কিন্তু সেটা কোনো সুখী হাসি ছিল না, বরং কিছুটা ঠাণ্ডা এবং কর্কশ।
— “জামা? রাইট সমস্যা নেই ব্যবস্থা করছি বলে আলমারি খুলে ওর একটা শার্ট আর থ্রি কোর্য়াটার প্যান্ট দিয়ে বলে গো ফার্স্ট।

চৈতী ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে লক করল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখল— বিধ্বস্ত চেহারা, ক্লান্ত চোখ, শুকিয়ে আসা ঠোঁট। ওর মাথার ভেতর হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
পানির কল ছেড়ে দিল চৈতী। একটু ঠান্ডা পানি মুখে দিয়ে কিছুটা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল। তারপরে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করল।
যত দ্রুত সম্ভব ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল। শার্টটা ওর জন্য অনেক বড়, আর থ্রি-কোয়ার্টারটা প্রায় গোড়ালি পর্যন্ত নেমে এসেছে।
রাতুল খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে, হাতে একটা সিগারেট। ধোঁয়ার কুণ্ডলী ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। চৈতীকে দেখে ঠোঁটের কোণে একপাশে হালকা হাসি ফুটে উঠল।

— “তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলে, গুড! কিন্তু পোশাকটা তো বেশ বড় হয়ে গেছে তোমার জন্য।”
চৈতী কিছু বলল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
রাতুল সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে চাপা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর ধীরে ধীরে চৈতীর দিকে এগিয়ে এল। ওর ধুকপুকানি বেড়ে গেল, মনে হচ্ছিল এক মুহূর্তেই দম বন্ধ হয়ে যাবে।
গম্ভীর কন্ঠে বললো,, বসো বেডের উপর একটু পর ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসবে সার্ভমেন্ট।”
চৈতী এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকল, তারপর ধীরে ধীরে বিছানার এক কোণে বসে পড়ল। তার ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছিল। রাতুলের এই অদ্ভুত আচরণ, ঠান্ডা দৃষ্টি—সবকিছু যেন কোনো গভীর রহস্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ নীরবতা। ঘরের পরিবেশটা থমথমে হয়ে আছে।
একটু পর দরজায় একটা মৃদু টোকা পড়ল।

— “স্যার, ব্রেকফাস্ট রেডি।”
রাতুল ধীর পায়ে দরজার দিকে গেল, তারপর খুলে দিল। দুইজন সার্ভেন্ট একটা ছোট টেবিলে নাস্তার ট্রে রেখে দিলো। গরম পরোটা, ডাল, ডিমভাজি আর এক গ্লাস কমলার জুস।
— “খাওয়ার চেষ্টা করো, চৈতী। তুমি দুর্বল হয়ে পড়লে কিন্তু আমার কোনো লাভ নেই।”
চৈতী একবার খাবারের দিকে তাকাল, তারপর চুপচাপ মুখ ফিরিয়ে নিলো।
রাতুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
— “না খেলে কিন্তু জোর করতে হবে। আমি সেটা পছন্দ করব না, কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করছো।”
চৈতী ভয়ে কাপা কাপা হাতে একটু খাবার তুলে নিয়ে মুখে দিলো।
রাতুলও বসে খাবার খেতে খেতে বললো,, যা যা বলবো তার ঠিক ঠিক উওর দিবা..?
চৈতী এক পলক রাতুলের দিকে তাকালো।
তাকাতেই রাতুল জিজ্ঞেস করলো,, “তুমাকে তো ভদ্র পরিবারের মেয়েই মনে হচ্ছে তাহলে ওইরকম একটা জায়গায় পৌঁছালে কি করে?”,

চৈতীর শরীরটা কেঁপে উঠল। এই প্রশ্নের জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। হাতের লোকমাটা মাঝপথে থেমে গেল।
রাতুল চোখ সরু করে তার প্রতিটি অভিব্যক্তি খেয়াল করছিল।
— “কী হলো? উত্তর দাও। তুমি ওইরকম একটা জায়গায় কী করছিলে?”
চৈতী মুখ নিচু করে ফেলল। তার কণ্ঠ কাঁপছিল, কিন্তু সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল।
— “আমি…আমি নিজেও জানি না। বাবা-মা নেই চাচা-চাচীর কাছে মানুষ ক্লাস টেইনে পড়ি। চাচা-চাচীর অভাবের সংসার। আমাদের গ্রামের এক খালা বলেছিলো গ্রাম নিয়ে এসে শহরে কাজ দিবে আর তাতে বেশ টাকা পাবো। চাচী রাজি হয়ে ওই খালার সাথে আমাকে পাঠায়। মাঝ রাস্তায় একটু পানি দেয় খাওয়ার জন্য আমিও সেইটা খেয়ে নেই। পরে যখন উঠি দেখি ওখানে আমি”।

রাতুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিল। চৈতীর কণ্ঠ কাঁপছিল, চোখে ভয় আর বিভ্রান্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল।
— “মানে, তোমাকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে “।
চৈতী মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বলল,
— “হয়তো… আমি জানি না। তবে যখন জ্ঞান ফিরল, তখন নিজেকে ওই ভয়ংকর জায়গায় পেয়েছিলাম। চারপাশে অপরিচিত লোক, আমি পালানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু…”
সে থেমে গেল। মনে পড়তেই শরীর কেঁপে উঠল।
রাতুল এবার গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
— “তারপর?”
চৈতী মুখে হাত দিয়ে নিজের ভীত শ্বাসগুলো সামলানোর চেষ্টা করল।

— “একজন লোক আমাকে ধরে রেখেছিল। আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম, তারা আমাকে কোথায় এনেছে। কিন্তু তারা কিছু বলছিল না। শুধু হাসছিল। আমি চিৎকার করেছিলাম, কাঁদছিলাম, কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি…”
তার কণ্ঠ ক্রমেই ফেটে যাচ্ছিল।
রাতুলের মুখ কঠিন হয়ে গেল।
— “তারপর আমি সেখানে গিয়ে তোমাকে বের করে এনেছি। ঠিক?”
চৈতী মাথা নাড়ল।
রাতুল এবার ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল।
রাতুল এবার ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল তারপর বললো ওঁকে ফাইন! ভুলে যাও সব কিছু।
চৈতী অবাক হয়ে রাতুলের দিকে তাকাল। তবে চৈতী কিছু বলল না। তার মন ভয়ে জমে যাচ্ছিল।
রাতুল এবার চেয়ারে বসে এক হাত দিয়ে কপাল টিপল, যেন কোনো কঠিন ভাবনার মধ্যে আছে।
— “তোমার চাচা-চাচী কি জানত, কোথায় পাঠাচ্ছে তোমাকে?”
চৈতী ধীরে মাথা নাড়ল।

— “না, আমি নিশ্চিত ওরা জানত না। যদি জানত, তাহলে কখনো আমাকে পাঠাত না।”
রাতুল হেসে ফেলল, কিন্তু সেই হাসিতে তাচ্ছিল্য ঝরছিল।
— “সবাই সবসময় সরলভাবে বিশ্বাস করে না। কেউ কেউ স্বার্থপর হয়।”
চৈতী চুপচাপ বসে রইল। তারপর প্রশ্নের বান রাতুলের দিকে ছুঁড়ে মেরে জিজ্ঞেস করলো,, আপনি ওই রকম একটা জায়গাতে কি করছিলেন?
রাতুল একটু হাসলো তারপর বললো,,, নেতা মানুষ তো চরিত্রের একটু-আধটু দোষ আছে। তবে আজকের পর ওই জায়গাতে আর যাবো না।
চৈতী আবার জিজ্ঞেস করলো,, কেন?
রাতুলের কন্ঠ এইবার কঠিন সে কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো,, তোমার বয়স কম তুমি বুঝবে না? তোমাকে আমি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি সো বাড়িতে আর ফিরতে পারবে না। আমার খাঁচায়ই বন্দী থাকতে হবে। তোমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবো সমস্যা নেই।
চৈতী এক মুহূর্ত চুপ থাকল। রাতুলের কথা তার ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মতো একটা অস্বস্তি সৃষ্টি করল।
রাতুল এবার এক পা এগিয়ে গিয়ে ধীর গলায় বলল,

— “তুমি একদিন বুঝবে, এই খাঁচাই তোমার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বাইদা ওয়ে আমি এখন বের হচ্ছি এই রুমেই থাকো রুম থেকে বের হবে না। নিচে কাজের লোক আছে কিছু লাগলে ডেকে নিয়। আর পালানোর চেষ্টা করো বাড়িতে কিন্তু বর্ডিগার্ডে ভর্তি তুমি কিন্তু যেই সেই বাড়িতে আসোনি এসেছো এমপির বাড়িতে”।
রাতুল রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে চৈতীর দিকে একটুও সাড়া না দিয়ে চলে গেল। তার পেছনে দরজা একেবারে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল।
চৈতী একটু থেমে সারা ঘরটা আবার একবার দেখে নিল। তার ভেতর এখন ভয় আর বিভ্রান্তির এক জগত গড়ে উঠছিল।
সে ধীরে ধীরে বিছানায় গা টা এলিয়ে দিলো। ওর ভবিষ্য কিছু জানা নেই। শহরে কতটুকুই বা চেনে যাবেই বা কোথায় এতক্ষণে বুঝে গেছে এইখান থেকে বের হওয়া ওর মতো মেয়ের পক্ষে কখনো সম্ভব না।

রাতুল একটা প্রেস কনফারেন্স এ এসেছে। তবে তার মনটা পরে আছে বাসায়। মাথায় খেলা করছে চিন্তার মেলা চৈতী কি করছে না করছে এইসব নিয়ে ভাবছে?
প্রেস কনফারেন্স শেষে রাতুল আবারো নিজের ঠান্ডা ও আত্মবিশ্বাসী অবস্থায় ফিরে গেল। সাংবাদিকদের প্রশ্নগুলো একে একে আসছিল, তবে তার মুখে কোনো অস্বস্তি ছিল না। একেবারে শান্ত, যেন এসব প্রশ্ন তার কাছে কোনো সমস্যা নয়।
এক সাংবাদিক সরাসরি বলল,
— “স্যার, আপনার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে, যা গত সপ্তাহে শোরগোল সৃষ্টি করেছিল। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?”
রাতুল সিগারেটের ধোঁয়া এক লম্বা শ্বাসের মতো ছাড়ল, তারপর একটি ঠাণ্ডা হাসি দিল।
— “এটা পুরোপুরি গুজব। আমি জানি, মিডিয়া কখনো কখনো অতিরিক্ত আগ্রহ দেখায়, কিন্তু আমি পরিষ্কার বলছি— এসব কিছুই সত্য নয়। আমি সব সময় সঠিকভাবে কাজ করেছি এবং তা করেই যাবো।”
এবার আরেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করল,
— “কিন্তু স্যার, কিছু লোক দাবি করছে যে আপনার ব্যবসা বা ব্যক্তিগত জীবনে কিছু অস্বচ্ছতা রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?”

রাতুল কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল, তবে তার চোখে আগের মতো ঠান্ডা দৃষ্টি বজায় ছিল।
— “অস্বচ্ছতা? আমি জানি, আমি সবকিছুই খোলামেলা ও সঠিকভাবে করি। মিডিয়া কখনো কখনো ব্যক্তিগত জীবনের দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়, কিন্তু আমি তাদেরকে বলবো, তারা নিজেদের কাজেই থাকুক।”
এবার এক সাংবাদিক সরাসরি প্রশ্ন করল,
— “আপনি কি সত্যিই কারো সঙ্গে এমন কিছু করেছেন, যা আপনার বিরুদ্ধে গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে? এই অভিযোগের কি কোনো সত্যতা রয়েছে?”
এই প্রশ্নে রাতুল এক মুহূর্তের জন্য কিছুটা থেমে গেল। তারপর ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,
— “এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো ভিত্তিহীন। মিডিয়া কখনো কখনো কল্পনার সীমানা অতিক্রম করে।”

সাংবাদিকরা একে একে বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও, রাতুল একে একে সবকিছু উপেক্ষা করল, যেন তার ওপর এসব কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে না।
সে শেষ পর্যন্ত বলল,
— “এতটুকুই। আমি চাই, আজকের পর আর এসব প্রশ্ন না করা হোক। আমি আমার পথ অনুসরণ করবো, এবং আপনি সবাই আপনার কাজ করেন।”
এ কথার পর, ঘরে নীরবতা বিরাজ করল।
রাতুল সিগারেটের শেষ টানটি নিয়ে, ঘর থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিল।
গম্ভীর কন্ঠে সে বলল,
— “আশা করি, আর কোনো প্রশ্ন নেই। আমি এখন উঠছি।”
তারপর, কোনো রকমের দৃষ্টি না দিয়ে, সে তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে সঙ্গে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।
গাড়িতে বসে, রাতুল তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে নির্দেশ দিল,

— “ভালো করে খবর নি তো , আসিফ। আমার পিছনে কারা কারা লোক লাগিয়েছে,??
অ্যাসিস্ট্যান্ট কিছুটা চিন্তিত দৃষ্টিতে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “ঠিক আছে, স্যার। আমি দ্রুত খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট করব।”
ভেরী গুড। আর ওই সমস্যাটা তোরা মিটিয়ে নিস আমি এখন বাসায় যাবো। আর একটা কথা কাকপক্ষীও যেন টের না পায় চৈতী নামক মেয়েটি আমার কাছে আছে। আমি চাই না ওকে এইসবে জড়াতে।
রাতুলের নির্দেশে, অ্যাসিস্ট্যান্ট একটু নরম ভাবে বলল,
— “অবশ্যই, স্যার। সবকিছু আমি যত্ন করে দেখবো। আর চৈতীর ব্যাপারে, চিন্তা করবেন না, আমরা তার নাম বা অবস্থান কিছুতেই ফাঁস হতে দেবো না।”
রাতুল একটু মাথা নেড়ে তার অ্যাসিস্ট্যান্টের কথায় সায় দিল।
গাড়ি যখন রাতুলের বাড়ির দিকে এগিয়ে চলছিল, তার মনে আরও কিছু প্রশ্ন ছিল— গুঞ্জনগুলি কোথা থেকে আসছে, কীভাবে সবকিছু সামলানো যাবে। কিন্তু এখন তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল, চৈতীর নিরাপত্তা এবং এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা।

গাড়িটি ধীরে ধীরে থেমে গেল রাতুলের বাড়ির সামনে, যেখানে তার গেট উন্মুক্ত ছিল। গেটের পাশ দিয়ে কয়েকটি লম্বা লাইটের ঝলকানি ছিল, তবে বাড়ির ভিতর গভীর নীরবতা। গাড়ি থামতেই, রাতুল তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে সংকেত দিল, চলে যেতে।
অ্যাসিস্ট্যান্ট মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। রাতুল একা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বাড়ির দিকে তাকাল। হালকা শীতল বাতাস তার মুখে এসে লাগছিল, কিন্তু তার মনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা এবং চিন্তা গোপন ছিল।
সে বাড়ির দিকে পা বাড়াল। গেট পার হয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে দেখল, যে তাকে দেখে নীরবে মাথা নীচু করে স্যালুট করল। রাতুল কোনো কিছু না বলে চুপচাপ ভিতরে চলে গেল।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ১

বাড়ির ভেতর ঢুকে,সে সোজা নিজের রুমে গেলো নিজের রুমে গিয়ে দেখলো চৈতী ঘুমিয়ে আছে৷ একটা দীর্ঘ শ্বাঃস ফেলে সে লম্বা শাওয়ার নিতে গেলো।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩