প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৯

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৯
মহুয়া আমরিন বিন্দু

নিঝুম রা একে একে গাড়িতে উঠে বসলো,নিঝুম কে স্বাভাবিক দেখে সব ভাই বোনরা মজা নিচ্ছে,সাব্বির তো বলেই বসে–,, ভাই তার মানে তুমিও মনে মনে বিয়ে করতে চাচ্ছিলে বলতে পারছিলো না ছেলেটা আহা, কি লজ্জা কি লজ্জা!
গাড়িতে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠলো সবাই।কিন্তু নিঝুম বেচারা চুপচাপ আছে, তার দাদির বর্ণনা অনুযায়ী মেয়ের ভদ্রতা দেখে না পরে বেহু”শের পরিবর্তে বেহুলা হয়ে যায় কে জানে।

সাহিলদের বাড়িতে বেশ আয়োজন করা হয়েছে,সোহানা রান্না ঘরে গিয়েছিলো তাকে চার চারবার ধম”ক দিয়ে বের করে দিয়েছেন রোজিনা বেগম।পঞ্চম বার না ফেরাতে পেরে কাজে হাত দিতে দিয়েছেন তিনি।রোজিনা বেগম মনে মনে খুশিও হলেন মেয়েটা কাজে বেশ পটু।ছেলের বউ হিসেবে এরকম লক্ষ্মীমন্ত বউ তো তিনি চেয়েছিলেন।তবুও তিনি জে”দ বজায় রাখলেন।
মেহেরিন কে তৈরি করানোর দায়িত্ব টা ও সোহানার কাঁধে দিয়ে দিলেন মেহেরিনের মা। সোহানার ও মেহেরিন কে এ কয়েকদিনে বেশ ভালো লেগেছে।
মেহেরিন কে শাড়ি পড়িয়ে দিলো সোহানা,মিষ্টি কালারের শাড়িতে বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে মেহেরিন কে,সোহানা তো মজা করে বললো–,,আজ দেখবে তোমার হবু বর তোমাকে দেখে বেহু”শ হয়ে পড়ে যাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহেরিনের ঘরে তখন আসলো রৌফ,রৌফ এসে বসলো খাটে পায়ের উপর পা তুলে বললো–,,এমনিতেই পে”ত্নী, তার উপর এরকম করে পে”ত্নী রানী সাজার কি দরকার ছিলো তোমার ছোট বইন?
সোহানা ভুল শুধরানোর মতো করে বললো–,,ভাইয়া ভুল বলছো তুমি,আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ।
মেহেরিন বলে উঠলো–,,তুমি ও বেশ মিষ্টি দেখতে আমাদের ভাইয়া দেখে ঠিক থাকতে পারে তো নাকি?ডাক্তার মানুষ কখন হা’র্ট ফেই”ল না করে বসে!
মেহেরিনের কথা শোনা মাত্ররোই দরজার সামনে জোরে জোরে কেশে উঠে সাহিল।সোহানা সাহিল কে দেখে বেশ লজ্জা পায়।এমনিতেই তাদের দুজনের মধ্যে কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছে না,দুজন দুজন কে দেখলেই কেমন অস্ব”স্তিতে ডুবে যাচ্ছে।

সোহানা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বললো–,,আমার কিছু কাজ আছে।
সোহানা চলে যেতেই হো হো করে হেসে উঠলো রৌফ আর মেহেরিন।
সাহিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,দিন আমারও আসবে বলে দিলাম।আর রৌফ রেডি থাক তোকে চ”ড় মে’রে দেওয়া মহান নারীর আসছে আজকে!
রৌফ থতমত খেয়ে উঠে বসলো, মেহেরিন বলে উঠলো–,,কি খিচুড়ি পাকিয়েছো বড় ভাই বলে ফেলো।
রৌফ বলে উঠলো –,,এই তোরে না দেখতে আসবে,যা তো সাজায় মন দে।বা”জে কথায় কান দিস না।
সাহিল বলে উঠলো–,,দেখবো তো বা”জে কথা নাকি কাজের কথা,ওই মেয়েকে দেখলেই তো তোর পেন্ট ডি”লে হয়ে যায় বুঝিস না মনে করিস।

রৌফ রেগে বললো–,,দেখো ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু।
তখনই নিচ থেকে মানুষ জনের কথার আওয়াজ ভেসে আসলো। সাহিল বলে উঠলো –,,ওই তো এসে গেছে তোদের দুজন কে বাঁশ দেওয়ার মানুষ।
মেহেরিন বললো–,,একটু দেখে আসি দাঁড়াও।
রৌফ বলে উঠলো–,,মান সম্মান টা খাই’স না বইন,আগের বার তো ওনাদের সামনে তুই এতো ভদ্র সেজেছিস, এবার যদি দেখে এভাবে নাচানাচি করছিস তো আর দেখতে হবে না।
মেহেরিন বসে রইলো চুপচাপ, কোন ভদ্রলোক তাকে দেখতে এসেছে একটু দেখতে হবে না।
নিঝুমের পরিবারের সবাই কে খাতির যত্নে ব্যস্ত হলো সবাই।

সোহানাকে অনেকটা কড়াকড়ি ভাবেই বলেছে রোজিনা বেগম।সবার সামনে যাতে এমন কিছু না করে যাতে তাদের অসম্মানিত হতে হয়।আর সুন্দর করে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে যাতে সবার সামনে আসে।
সোহানা গোল্ডেন পাড়ের খয়েরী রঙা একটি শাড়ি পড়েছে সাথে শুধু একটু লিপস্টিক এর থেকে বেশি ওর কাছে বারাবাড়ি যেখানে সাজার কথা মানেই বিলাসিতা মনে হতো এখন কতো কতো জিনিস সে না চাইতেই পাচ্ছে তার পরও এগুলো নিছক অপচয় ছাড়া কিছুই মনে হয় না সোহানার কাছে,তবে যারা সাজতে পছন্দ করে তারা সাজতেই পারে তাতে বিরো’ধিতা করতে যাবে না সোহানা।

সাহিল কথা বলছিলো নিখিলের সাথে,আর বাকিরা তারা তো নামিরা তেই ব্যস্ত, এই বাচ্চা মেয়েটা একাই সবাই কে মাতিয়ে রাখতে পারে, বলা যেতে পারে এই একটা মানুষ পুরো বাড়ির মানুষের প্রাণ।
অন্যদিকে,জেরিন,বৃষ্টি, নেহা,নিশাত গেলো মেহেরিন কে দেখতে,মেহেরিনের সাথে বসে আছে সোহানা।তাদের সবার মধ্যে সহজেই ভাব হয়ে গেলো,মেহেরিন প্রথমে কিছুটা অস্ব’স্তি তে ভুগলো সে সব সময় নিজের পরিবারের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রেখেছে।তাদের পরিবারে মানুষের সংখ্যাও কম এতো গুলো মানুষ কে এক সাথে দেখে কিছুটা ঘা’বড়ে গেছে,সোহানা সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলছে।কিছুক্ষণ পরই নিচ থেকে ডাক পড়লো মেহেরিন কে নিয়ে যাওয়ার।

সোহানার সাথে মেহেরিন আগে আগে আর পেছন পেছন চৌধুরী পরিবারের মেয়েরা।
সাহিল আচমকাই তাকালো উপরের দিকে তার চোখ আটকে গেলো খয়েরী রঙা মেয়েটার দিকে,উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে শাড়িটা কি সুন্দর মানিয়েছে,চোখের পলক পড়তে ভুলে গেলো সাহিলের,এর আগেও মেয়েটা কে দেখেছে,কিন্তু এতোটা সুন্দর লাগেনি হয়তো ওরকম ভাবে তাকানোই হয়নি তার।
মেহেরিন ভাবলো ছেলেটাকে এই ফাঁকে একটু দেখে নেই পরে যদি আর তাকাতে না পারে।
মেহেরিন সবার দিকেই অল্প স্বল্প তাকালো,হঠাৎ করেই চোখ আটকে গেলো চকলেট কালার শার্ট পরিহিত ছেলেটির দিকে,তার কেনো যেনো মনে হলো এটাকে কোথায় যেনো দেখেছে, তার ভাবনার মাঝেই সোফার নিকট চলে আসলো তারা।

সেতারা বেগম এসে মেহেরিন কে ধরে নিজের পাশে বসালো।মেহেরিনের রুপের প্রশংসা করে বললো–,,চাঁদের টুকরা একখান, এই নিঝুম দেখ তো পছন্দ হয়েছে কিনা আমার বোন কে।
নিঝুম এতোক্ষণ ধরে নিচু হয়ে বসে ছিলো,আর ভাবছিলো কোথায় এসে পড়েছি বাবা।এখন আবার তার দাদী টা তার মান সম্মান টা না শেষ করে দেয় সবার সামনে।
নিঝুম তাকাতেই মেহেরিন ও তাকালো দুজনেরই চোখাচোখি হলো,নিঝুম মুচকি হেসে ফেললো।
মেহেরিন ও বুঝলো এই হাসির কারন,তার মানে এই লোক মেহেরিন কে চিনে ফেলেছে,মেহেরিন যেনো বেলুনের মতো চুপসে গেলো,সে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে ফেললো,শাড়ির দু পাশ চেপে ধরে বসে রইলো শুধু। কি লজ্জা জনক একটা পরিস্থিতি, মেহেরিনের চুপসে যাওয়া দেখে নিঝুমের হাসি পেলো কিন্তু এই মুহুর্তে কিছুতেই হাসা যাবে না তা যে দাদি তুলে দিবে এক আছাড়!
নিঝুম কে মুচকি হাসতে দেখে রৌফ তার কানে কানে বললো–,,ভাইয়া সাবধান আমার ভোলাভালা বইন কিন্তু রেগে গেলে এট”ম বো”মা হয়ে যায়।

নিঝুম কিছু বললো না, এ যে কেমন ধা’মাকা সেদিনই বুঝা হয়ে গেছে তার।
এবার আসলো সেই ভয়ান”ক মুহুর্ত,মেহেরিনের কাছে এটা ভয়া’নকই এই ব্যাটার সাথে এখন কথা বলতে গেলে কি না কি বলবে,অসম্ভব কিছুতেই যেতে পারবে না আবার না করতে ও পারবে না,কি একটা অবস্থা!
হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে মন চাইলো ওর।মেহেরিনের এমন অবস্থা দেখে বেশ মজা নিচ্ছে রৌফ।
মেহেরিন তো সোহানা কে চেপে ধরে বললো–,,ভাবী আমার সাথে চলো প্লিজ, আমার না কেমন কেমন জানি লাগছে।সোহানা পড়লো বিপ”দে তার যে শাশুড়ী এমনিতেই তাকে থ্রে”ট দিয়ে রেখেছে এই মেয়ে একদম বারাবাড়ি করবে না, এখন যদি যায় না জানি কি বলে বসে।
মেহেরিন তো মেহেরিনই সোহানা কে টেনে টুনে সাথে নিয়ে গিয়ে হাজির ছাদে তার পরে আসলো রৌফ নিঝুম কে ভিতরে দিয়ে সে কে’টে পড়লো। সোহানা হাতের নখ কাম”ড়াচ্ছে বার বার।
নিঝুম সোহানা কে দেখে হেসে কুশল বিনিময় করলো।

বাকি ভাই বোন সব এসে হাজির ছাদের সিঁড়িতে কান পেতেছে দরজায়।নিখিল সাহিল কে ধাক্কা মে’রে ভিতরো পাঠিয়ে দিয়ে বললো–,,যা শা’লা নিজের বউ গিয়ে নিয়ে আয়।
সাহিল বোকার মতো বলে উঠলো–, আমাকে এসবে কেনো টানছিস?সোহানা উনি আমার কথায় কেনো আসবেন!
সাব্বির বলে উঠলো–,,ভাইয়া এটা কোনো কথা তুমি কি আন”রোমান্টিক গো বউ কে আপনি আজ্ঞে করছো।আমি তো ভাবলাম তোমার বাস’র টাস’র সব হয়ে গেছে এখন হানিমুনে যাবে।
সাব্বিরের পিঠে একটা মারলো মিহির রেগে বললো–,,তোর কি কোনো দিন লজ্জা বলতে কোনো কিছু ভিতরে ইনস্টল হবে না রে।

সাব্বির গর্বের সাথে বললো –,,না।
সাহিল ভাব সাব নিয়ে বললো–,,এই সোহানা, এ,,,এদিকে আসো!
সোহানা যেনো হাফ ছেড়ে বাচঁলো।সে ও দৌড় মে’রে চলে আসলো। ছাদের অপর পাশে সাহিল সোহানা কে নিয়ে চলে গেলো এ পাশ থেকে ওপাশ দেখার কোনো উপায় নেই।
মেহেরিন এবার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে করলো।
নিঝুম যেনো এবার সুযোগ পেয়ে বসলো মুচকি হাসিটা এখনো তার মুখে বিদ্যমান সে বললো–,,আপনিই তাহলে দিদুনের শান্ত শিষ্ট ভদ্র মেয়ে!
মেহেরিন কে যেনো রাজ্যের লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো।চোখ তুলেই তাকাতে পারছে না।
নিঝুম আর কথা বাড়ালো না,সে সেখান থেকে চলে আসলো।সব ভাই বোন রা হতাশ হয়ে বললো–,,নিঝুমের মনে হয় মেয়ে পছন্দ হয়নি।

নিঝুম নেমে গেলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে ছিলো সিঁড়ি তে।মেহেরিন ও কিছু বললো না, তা যাই হোক এই ছেলের মুখোমুখি আর না হলেই ভালো।আর কতো লজ্জা দিবে কে জানে।
মেহেরিন ও দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
অন্য দিকে কারো কোনো কিছু হোক বা না হোক সাহিল আর সোহানার প্রণয়ের শুরুটা হয়তো এখান থেকেই হয়ে গেলো।

বিয়ের ডেইট ঠিক করা নিয়ে কথা হবে এখন,সেতারা বেগম নিঝুম কে চেপে ধরে বললো–,,কিরে মাইয়া কেমন দেখলি।
নিঝুম বললো–,,ভালো।
সেতারা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো–,,শুধুই ভালো?পছন্দ হইছে নি।
নিঝুম কিছু বললো না।
সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,এই মাইয়া আবার তোরে ফিরাইয়া দেয় নাই তো।আমার মান সম্মান কিছু রাখছি না।
নিঝুম এবার বললো–,,পছন্দ হইছে,একবারে তোমার মতোই মেয়ে।দেখতে সহজসরল কিন্তু কর্মকান্ড ডাকা’ত দের মতো।
সেতারা বেগম হেসে বললো–,,জোরে বল হারাম”জাদা।

নিঝুম বললো–,,পারবো না।
সেতারা বেগম নিঝুমের কান চেপে ধরে বললো–,,জোরে বল পছন্দ হয়েছে।
নিঝুম আর সেতারা বেগমের কাহিনি দেখে সবাই হাসছে।
নিঝুম কান ছাড়াতে ছাড়াতে বললো–,,ছাড়ো দিদুন কান ছিড়ে যাবে আমার।বলছি বলছি পছন্দ হয়েছে মেয়ে!
পরে যা হলো বড়দের কথা, এসবে ছোটরা নেই।তবে এটা সবাই জানলো এক সপ্তাহ পর বিয়ে হবে।
মেহেরিনের ঘরে এসে হাজির নামিরা।নামিরা মেহেরিনের গালে চুমু খেয়ে নেহার উদ্দেশ্য বললো–,,মাম্মা নতুন মামনি পছন্দ হয়েছে, মামনি অনেক কিউট!
নেহা নামিরা কে কোলে নিয়ে বললো–,,তাই নাকি।

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৮

হামিদা বেগম, সাহারা বেগম, তাহমিদা বেগম এসে বললো–,,আমাদের মুরব্বির ভোট তো পেয়েই গেছি,আর কোনো সন্দেহ নেই মেহেরিনই হবে আমাদের ছেলের বউ!

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ২০