মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৬

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৬
রায়েনা হায়াত

অফিস শেষে হৃদান বাড়ি ফিরেছে। ক্লান্তি নিয়ে রুমে এসে ব্যাগটা রেখেই সে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মিনিট দুয়েক পরে উঠে টাই খুলতে খুলতে বলে ওঠে,
–‘অবনী, এক গ্লাস পানি দিয়েন।’
পরক্ষণেই তার মনে পরে অবনী তো এ বাড়িতে নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে টাই, ঘড়ি খুলে রাখতেই হানিফা বেগম হাজির হোন। তার হাতে পানির গ্লাস। হৃদান এক পলক তার দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেন, আম্মা? আমিই নিয়ে নিতাম!’
হানিফা বেগমের মুখ গম্ভীর। তিনি গ্লাসটা টেবিলে রেখেই বললেন,
–‘বউমা কোথায়? কবে ফিরবে?’
হৃদান স্বাভাবিক গলাতেই জবাব দেয়,

–‘কিছুদিন থাকবে ওখানে। পরে গিয়ে আমি নিয়ে আসবো।’
–‘যদি ওখানেই থাকার হয় তাহলে বিয়ে করেছে কেনো? সংসার কে সামলাবে?’
হৃদান শান্ত ভাবে মায়ের মুখের দিকে তাকায়। অফিস থেকে এসেই তর্ক বিতর্ক তার মোটেও ভালো লাগে না। তবুও নিজের ধৈর্য দেখিয়ে মুচকি হেসে শান্ত স্বরে বলে,
–‘ক’দিনের জন্যই তো গেছে, আম্মা। তাছাড়া এমনিও বাড়িতে এতো অশান্তি হচ্ছিলো তার থেকে অবনী ওর বাবার বাড়িতে শান্তিতে থাকুক আর আপনিও শান্তিতে থাকেন।’
–‘তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমার জন্য তোর বউ শান্তিতে থাকতে পারে না?’
–‘আমি এমনটা বলিনি, আম্মা।’
–‘তো কি বলতেছিস তুই? ওই মেয়েকে বউ করে আনছি কি বাবার বাড়িতে রেখে আসার জন্য? সংসারের এতো কাজ কে করবে? সংসারটা কে দেখবে?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হৃদান একটুও রাগে না। মাথা ব্যাথা করলেও সে আগের মতো ঠান্ডা ভাবে বলে,
–‘আম্মা! অবনী এই বাড়ির বউ, কাজের লোক তো না। যদি কাজে সমস্যা হয় তাহলে আগের খালাকে বলেন আসতে! আমি তো মানা করি নাই। অবনী বউ হয়ে আসার পর তো আপনিই তাকে বারণ করেছেন আসতে। তাহলে এখন সমস্যা কোথায়?’
হানিফা বেগম অযথা চেচামেচি শুরু করলেন। ছেলে বউয়ের আঁচলের তলায় পরেছে, বউয়ের কথা মতোই চলছে! এধরণের নানান কথা বলতে শুরু করলেন। হৃদান মাথা চেপে বসে থাকে। হানিফা বেগম আঁচলে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করলেন। হৃদান উঠে হানিফা বেগমের হাত ধরে এনে বিছানায় বসায়। এরপর ঠান্ডা গলায় বলে,

–‘আম্মা, আপনি কী চান? আমি অবনীকে একবারে ছেড়ে দেই? এটাই চান?’
হানিফা বেগমের চোখ চকচক করে ওঠে। হৃদান বোঝে তার মা এটাই চায়। তাই নিজ থেকেই বলে,
–‘আমি জানি আপনি কেনো এসব করছেন! আপনার মানা সত্বেও আমি অবনীকে বিয়ে করেছি বলেই আপনার এতো রাগ অবনীর ওপর! আম্মা, ওই মেয়েটা আপনাকে মা মানে। আপনি ওর সাথে যা করতেছেন তা কি ঠিক? আপনি আমার মা আর ও আমার বউ৷ আপনারা দুজন সম্পূর্ণ দুই জায়গায়। কেউ একে অন্যের জায়গা নিতে পারবেন না। এটা সম্ভবও তো নয়। আম্মা, সংসার টা তো আপনারও। এই সংসারের সুখ, শান্তি দেখাটা কি আপনারও দায়িত্ব না? অবনীর ওপর আপনার এতো রাগ যে আপনি ভুলেই গেছেন আপনার ছেলের সুখ আসলে কোথায়! অফিস থেকে ফেরার পর কোনোদিনও তো আপনি এমন করেননি কিন্তু ইদানীং করছেন। আমি আপনার দোষ দিচ্ছি না আম্মা। কিন্তু নিজের ছেলের কথাও কি আপনি ভুলে যাবেন?’
হানিফা বেগম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কিছু বলার চেষ্টা করলে হৃদান থামিয়ে দেয়। হাত দুটো শক্ত করে ধরে অসহায় কন্ঠে বলে,

–‘আপনাদের এই অশান্তির কারণে হয়তো আমি একদিন অবনীকে ছেড়ে দিবো। কিন্তু যেদিন ও আমার জীবন থেকে চলে যাবে সেদিনই আপনার ছেলে বেঁচে থেকেও ম’রে যাবে আম্মা। আপনার কাছে যদি আপনার ছেলের জীবনের চেয়েও জিদটা বড় হয় তাহলে ঠিক আছে! আমি ছেড়ে দিবো অবনীকে।’
হানিফা বেগম ছেলের চোখের দিকে তাকান। ছেলের চোখ বলছে সে যা বলেছে তার সম্পূর্ণই সত্যি। হৃদানের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। যেমনটা কেউ কান্না আটকালে হয় তেমন! হানিফা বেগম হৃদানের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। এরপর কোনো কথা না বলেই সে বেড়িয়ে যায়। হৃদান চোখ বন্ধ করে নেয়। সে জানে তার মা সবকিছুর আগে তার খুশিটাই বেছে নিবে। আর না নিলেও সে কখনো অবনীকে ছাড়তে পারবে না। কেনোই বা ছাড়বে? কোনো দোষ-ই তো অবনীর নেই। কতক্ষণ পর চোখ খুলে পাশ থেকে ফোনটা তুলে নেয়। অবনীর নাম্বারে কল দেয়। দু বার রিং হতেই ওপাশ থেকে অবনী কল রিসিভ করে সালাম দেয়। হৃদান প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ করে নেয়। সালামের জবাব দিয়ে কতক্ষণ চুপ-ই থাকে। অবনী-ই জিজ্ঞাসা করে,

–‘কি হয়েছে? চুপ করে আছেন কেনো? আম্মা কিছু বলেছে?’
হৃদান নিঃশব্দে হাসে। বলে,
–‘বললো আপনাকে ওখানে একেবারে রেখে দিতে।’
অবনীর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। আর কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে। হৃদান নিজ থেকেই আবার বলে,
–‘থাকবেন নাকি চলে আসবেন?’
অবনী জবাব দেয় না। হৃদান দু’বার অবনীর নাম ধরে ডাকার পরও অবনী জবাব দিচ্ছে না দেখে হৃদান একটু বিচলিত হয়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
–‘অবনী, ঠিক আছেন? কথা বলছেন না কেনো?’
–‘ঠিক আছি। আপনি ফ্রেশ হয়েছেন?’
অবনী ঠিক আছে বললেও তার গলা কাঁপছে। হৃদান সটান হয়ে বসে পরে। নিচু স্বরে বলে,
–‘আমি আসবো?’
অবনী এবারও কিছু বলে না। হৃদান হতাশ কন্ঠে বলে,
–‘আজ-ই তো আসলাম। এখন আবার গেলে সবাই বলবে ‘ব্যাটা বউ পাগল’।’
–‘আসতে হবে না। আপনি রেস্ট নেন। রাখছি।’
হৃদানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অবনী কল কেটে দেয়। হৃদান বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবনীর অভিমান হয়েছে। সে ঠিক বুঝছে। থাক! একটু অভিমান না থাকলে সে ভাঙাবে কি?

অবনী আর অন্তি একসাথে শুয়েছে। সারাদিন অবনীর সাথে সময় কাটলেও রাতে আর ঘুম আসে না। অন্তি নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে চা বানায়। রাত বিরাতে তার চায়ের নেশা বরাবরের। চা নিয়ে সরাসরি যায় ব্যালকনিতে। আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে। সেটার দিকে তাকিয়ে নিচে তাকাতেই নজরে পরে তাইমুরকে। ক্লান্ত পায়ে বিল্ডিং এর দিকে যাচ্ছে। বিল্ডিং এর সামনের আলোয় তার মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অন্তি রুমে উঁকি দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত প্রায় ১২ টা বাজে। এতো লেট! তাইমুর বিল্ডিং এর ভেতরে চলে গেলে অন্তি চা পান করতে শুরু করে। গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তাইমুরের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিট পর তাইমুরও হাতে কফির মগ নিয়ে ব্যালকনিতে আসে। অন্তি বোধহয় জানতো সে আসবে। তাইমুর প্রথমেই অন্তির ব্যালকনির দিকে তাকায়। সেখানে অন্তিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়। বিড়বিড় করে বলে,

–‘এই মেয়ে কি রাতে ঘুমায় না নাকি! প্রেমিকের শোকে মনে হয় ঘুমও বিদায় নিয়েছে।’
বিরক্তির শ্বাস নিয়ে কফিতে চুমুক দিতে গেলেই অন্তি বলে ওঠে,
–‘বিড়বিড় করে কী বলেন?’
তাইমুর আজ অন্তিকে এড়িয়ে গেলো না। তবে কফিটুকু গিলে নিয়ে আগের মতো ত্যাড়াভাবে বললো,
–‘আমার বউকে ‘আই লাভ ইউ’ বলেছি। এটাও আপনার শোনা লাগবে?’
–‘আপনি কি সোজা কোনো জবাব দিতে পারেন না?’
–‘না, পারি না।’
অন্তির ইচ্ছে করে হাতের কাপটা তাইমুরের মাথায় মা’রতে। কিন্তু তা পারবে না বলে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকে। তাইমুর কপালে ভাজ ফেলে ভ্রু উঁচিয়ে শুধায়,
–‘কি? ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? মা’রতে মন চায়?’
অন্তি হাসি দেখিয়ে বলে,
–‘জ্বি।’
তাইমুর পাত্তা দেয় না। অন্তি মুখ ভেংচিয়ে অপর পাশে মুখ ফেরায়। তাইমুর কফির সাথেই সিগারেট ফুঁকছে। গন্ধ পেয়ে অন্তি ফিরে তাকায়। নাক মুখ কুঁচকে বলে,
–‘আপনি কি নকল করে ডক্টর হইছেন?’
তাইমুর সিগারেটে মনোযোগ রেখেই বলে,
–‘হ্যাঁ। আপনি জানলেন কিভাবে? আপনিও একই টিমের নাকি?’
অন্তি মনে মনে গালি দেয় তাকে। তাইমুর জানে মনে মনে অন্তি তাকে ধুয়ে দিচ্ছে কিন্তু তাতে সে পাত্তা দেয় না। তাকে যে যন্ত্রণা দিয়েছে তার কাছে এটুকু কিছুই না। তাইমুরের রাগে কপালের রগ ফুলে ওঠে। তন্ময় আর অন্তিকে একসাথে দেখার স্মৃতিটুকু তার দৃশ্যপটে স্পষ্ট হয়। রাগে বড় বড় শ্বাস নিয়ে ঘন ঘন সিগারেট টানতে শুরু করে। বেখেয়ালিতে নিজেই বার বার কাশতে থাকে। অন্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে জোড়ে ডাকে,
–‘তাইমুর ভাই!’
তাইমুরের ধ্যান ভাঙে। হাতে থাকা সিগারেটের অংশ ছোট হয়ে গেছে৷ আর একটু হলে তার হাতে লেগে যেতো। অন্তি ধমকে বলে,

–‘পা’গল নাকি আপনি? এখনই তো শ্বাস আটকে ম’রতেন! ডক্টর হয়েছেন আর এটাও জানেন না সিগারেট কতটুকু ক্ষতিকর মানব শরীরের জন্য?’
তাইমুর পলক না ফেলে অন্তির দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে স্পষ্ট ব্যাথা। অন্তি ভড়কে যায়। থতমত খেয়ে আশে পাশে তাকাতেই তাইমুর নিজ থেকে বলে,
–‘মানব শরীরের জন্য যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর তা অনেক আগেই আমার ভেতরে চলে গেছে। ভেতরটা একদম ন’ষ্ট, বাহিরে যা দেখা যায় সবটুকুই খোলস।’
অন্তি বুঝলো না। এতো ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলা কথা সে বোঝে না। তবে তাইমুরের কন্ঠে থাকা অদ্ভুত সেই বিষাদ সে ঠিকই টের পায়। তাইমুরের চোখের দিকে তাকাতেই মনে হয় ওই চোখে অন্য কিছু আছে। তবে তা বুঝতে না দিয়েই তাইমুর হুট করে ঘুরে চলে যায়। অন্তি তখনও বিমূঢ় হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। তাইমুরকে সে সত্যি বুঝতে পারে না। তাইমুর কি তাকে পছন্দ করে? নাকি অন্য কারো বিরহে তার এই অবস্থা?

শুক্রবার এর দিন। সকাল বেলা অবনী আর অন্তি একসাথে তাইমুরের ফ্ল্যাটে যায়। অবশ্য আসতে চাওয়ার ইচ্ছেটা অবনীর-ই ছিলো। অন্তির নিজেরও আগ্রহ জাগে তাই সেও মানা করেনি। তাইমুরের ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজালেও কেউ দরজা খোলে না। দু বোন একবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার বেল বাজায়। দু মিনিট পর ঘুম ঘুম, এলোমেলো অবস্থায় তাইমুর দরজা খোলে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কেবল ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলছে। দরজার ওপাশে অবনী আর অন্তিকে দেখে তার ঘুম উড়ে যায়। কোনোমতে অবনীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘তোমরা? এই সময়!’
অবনী হেসে বলে,

–‘আসলাম। সমস্যা নাকি?’
তাইমুর জবাব দেওয়ার আগেই অন্তি বলে,
–‘বাসায় কি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসছেন নাকি? যেভাবে চমকালেন!’
তাইমুর দরজা থেকে সরে ভেতরে আসার জায়গা দিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
–‘ওটা তন্ময়ের কাজ। তাইমুর আহসান ওসব করে না।’
অন্তি কটমট করে ওঠে। তাইমুর পাত্তা দেয় না। অবনীকে বসতে বলে সে ফ্রেশ হতে যায়। দু বোন আশে পাশে তাকিয়ে ফ্ল্যাটের অবস্থা দেখে নেয়। সব এলোমেলো হয়ে পরে আছে চারপাশে। অন্তি কপাল কুঁচকে বলে,
–‘এতো এলোমেলো কে থাকে? মুখে তো ঠিকই পরিপাটি কথা নিয়ে ঘোরে তাহলে ফ্ল্যাটের এই অবস্থা কেন?’
–‘তুই গুছিয়ে দে।’
অবনীর কথায় অন্তি তার দিকে তাকায়। অবনী তার দিকে তাকায়নি বরং সে অন্যদিকে দেখছে। অন্তি একটা কুশন তার দিকে ছুড়ে মা’রে। অবনী হেসে বলে,
–‘আমি কিন্তু সত্যিই বলেছি। তাইমুর ভাই একা থাকে দেখেই তার ফ্ল্যাটের এই অবস্থা। তুই একটু গুছিয়ে দিলে সেও গুছিয়ে যাবে।’

–‘ওরকম খা’রুশ লোককে গুছিয়ে দেওয়ার চেয়ে হিমালয় জয় করা বেশি সহজ।’
অবনী শব্দ করে হেসে ওঠে। তাইমুরও ততক্ষণে চলে আসে। তাদের সামনের সোফায় বসে বলে,
–‘তারপর বলো! হঠাৎ কি মনে করে?’
–‘তেমন কোনো কারণ নেই। ভাবলাম এসে ঘুরে যাই। ভাইয়ের বাসায় কি বোন আসতে পারে না?’
–‘অবশ্যই পারে। কি খাবে বলো! চা নাকি কফি?’
অন্তি বিড়বিড়িয়ে বলে,
–‘আপনার মাথা।’
তাইমুর উঠে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
–‘রা’ক্ষসীদের তো মানুষের মাথা-ই খেতে মন চাইবে। স্বাভাবিক।’
অন্তি হা হয়ে তাকায়। অবনী হাসতে শুরু করে। অন্তি তার দিকে গাল ফুলিয়ে তাকায়। অবনী উঠে তাইমুরের পিছু যায়। রান্নাঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাত বগলদাবা করে বলে,

–‘এতোদিন আসেননি কেনো, তাইমুর ভাই? আর হঠাৎ আসলেন কেনো?’
–‘বোনের মতো প্রশ্ন করছো!’
–‘তা জানি না তবে আমি নিজেও আসলে জানতে চাই সেদিন কেনো চলে গেলেন আর আসলেন-ই না কেনো? আর এতোদিন পর কেনো আসলেন?’
তাইমুর উঁকি দিয়ে অন্তির দিকে তাকায়। সে সেখানেই বসে টিভি দেখছে। একের পর এক চ্যানেল পাল্টাচ্ছে। তাইমুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–‘এসেছিলাম।’
অবনী অবাক হয়ে শুধায়,
–‘তাহলে সামনে আসেননি কেনো? আর বাহিরেই বা কবে গেলেন?’
–‘ফাইনাল এক্সাম দিয়েই চলে গেছিলাম। এখানে না থাকলেও সব খবরই আমি জানতাম। তোমার বোনের ডানা তো এতো বড় হয়ে গেছিলো যে সে হয়তো নিজেকে ঈগল পাখি ভাবতে শুরু করেছিলো।’
অবনী হেসে ওঠে। পরক্ষণেই মলিন মুখে বলে,

–‘জানি না ‘ও’ এতো বড় ভুল কিভাবে করলো! আমি একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো এতোকিছু হতো না।’
তাইমুর কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলে,
–‘বাদ দাও! ভাগ্য বোধহয় এটাই চেয়েছিলো।’
এক কাপ অবনীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাকি দুটো নিয়ে অন্তির সামনে যায়। একটা টি টেবিলে রেখে আরেকটাতে নিজে চুমুক দেয়। অন্তি চা নিয়ে মন দিয়ে টিভি দেখতে থাকে৷ অবনী এসে বসলে তাইমুর জিজ্ঞাসা করে,
–‘তোমার হাজবেন্ড আসেনি এখনো?’
–‘না। আসবে হয়তো দু একদিনের মধ্যেই।’
অন্তি ঘাড় ফিরিয়ে তাদের দিকে তাকায়। তাইমুর আর অবনীও তার দিকেই তাকায়। অন্তি হকচকিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে বলে,

–‘আপনি আমার বড় বোনকে ‘তুমি’ বলেন আর আমাকে ‘আপনি’! এটার কোনো লজিক আছে?’
–‘না।’
–‘তাহলে বলেন কেনো?’
–‘আমার ইচ্ছা।’
অন্তি রাগে হাতের রিমোট ছুড়ে মা’রে। তাইমুর বা হাতে ক্যাচ করে নিতেই অবনী ধমক দেয়। অন্তি নিজেও বুঝতে পারেনি সে এরকম করে ফেলবে। লেগে গেলে আসলেই অনেক ব্যাথা পেতো। অন্তি মাথা নিচু করে বলে,
–‘সরি। বুঝতে পারিনি।’
তাইমুর রিমোট তার দিকে এগিয়ে দেয়। মেয়েটা যখন মুখ এমন করে তখন না চাইতেও তার প্রতি মায়া তার বৃদ্ধি পায়। সে মায়াকে এড়াতেই তাইমুর তড়িঘড়ি করে উঠে যায়। অবনী আর অন্তি দুজনেই সেদিকে তাকায়। পেছন থেকে ডাকলে তাইমুর বলে,

–‘আসছি।’
তাইমুর নিজের রুমে এসে আগে ওয়াশরুমে ঢোকে। চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজেকে বুঝ দিতে থাকে। অসহায় কন্ঠে আওড়ায়,
–‘কেনো আবার আসলাম আমি! অন্তি আমার না, ওকে দেখলে আমার এখনো এখানে লাগে।’
বুকের বা’পাশে হাত রাখে সে। ঘন ঘন চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজেকে সামলে নেয়। বাহিরে এসে লম্বা দু’টো শ্বাস নিয়ে আগের মতোই অবনীদের সামনে বসে। অবনী জিজ্ঞাসা করে,
–‘ঠিক আছেন, ভাইয়া?’
তাইমুর মাথা নাড়ালেও অন্তির মনে হয় তাইমুর ঠিক নেই। তবুও নিজে কিছু বলে না। অবনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জিজ্ঞাসা করে,

–‘আজ হসপিটালে যাওয়া নেই?’
–‘এ বেলা নেই। ও বেলা যেতে হতে পারে।’
–‘রান্না কে করে, তাইমুর ভাই?’
–‘খালা আছেন। উনি করে দেন। আজ আসবেন না। অসুস্থ বললেন গতকাল।’
–‘তাহলে আজ কি খাবেন?’
–‘রান্না করতে পারি। সমস্যা নাই।’
পাশ থেকে অন্তি বলে,
–‘আপনি তো দেখা যায় অলরাউন্ডার, তাইমুর ভাই। একদিন রেঁধে খাওয়ান।’
তাইমুর জবাব দেওয়ার আগেই অবনী বলে,

–‘পুরো সপ্তাহ কাজ করে আর রান্না করে খেতে হবে না। আজ আমাদের বাসায় খাবেন।’
তাইমুর মানা করে। কিন্তু অবনীও ছাড়ে না। অবশেষে তাকে মানিয়ে আর কিছুক্ষণ থেকে দু’বোন বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। অবনী আগে চলে গেলে তাইমুর অন্তিকে ডাকে। অন্তি পিছনে ফিরে তাকাতেই সে বলে,
–‘সোমবার তন্ময়ের বিয়ে।’
অন্তি মাথা নাড়ায়। ফিরে চলে যেতে নিলে আবারও বলে,

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৫

–‘ভালোবাসেন ওকে?’
অন্তি তাচ্ছিল্য করে হাসে। না তাকিয়েই জবাব দেয়,
–‘হয়তো ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’।’
অন্তি চলে যায়। তাইমুর বোকার মতো চেয়ে থাকে। এটা কেমন জবাব? এ মেয়ে আগেও পা’গল ছিলো এখনও তা-ই আছে।

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৭