তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৪

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৪
আমেনা আক্তার

আরিফ মাথা নিচু করে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
ভাবি ভাই আপনাকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে বলেছে।ভাই আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
নূর আরিফের কথা শুনে শক্ত গলায় জবাবে বলল।
আমি কোথাও যাবো না, এমনিতেও এখন আমার জরুরি কাজ আছে।
সব কাজ আমি সামলে নিবো,আপনি শুধু এখন আমার সাথে ভাইয়ের কাছে চলুন, নাহলে ভাই রাগ করবে।
তোমার ভাই রাগ করলে আমার কি,
নূরের কথা শুনে আরিফ বিরবির করে বলল।
আপনারই তো সব কিছু,
আরিফের বিরবির করে বলা কথা নূর ঠিক ভাবে শুনতে পেলো না।তাই ও আরিফকে জিজ্ঞেস করলো।
কি বললে?

কিছু না ভাবি, প্লিজ আপনি আমাদের সাথে চলুন। নাহলে ভাই আপনাকে অন্য পদ্ধতিতে নিয়ে যাবে।
আরিফের কথা শুনে নূর চোখ মুখ শক্ত করে কিছু বলার আগেই তার সামনে একটি ক্যাব এসে থামে। নূর আরিফকে কিছু না বলে ক্যাবে উঠে পড়লো। ক্যাব চলতে শুরু করলো নূরের বলা গন্তব্যে।নূর কিছুক্ষণ ক্যাবে থাকার পর এটি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছে ওর অনেক ঘুম পাচ্ছে। হঠাৎ এত বেশি ঘুম পাওয়ার কারণ ও বুঝতে পারছে না। নূর নিজের চোখ টেনেও খোলা রাখতে পারছে না। নূর ড্রাইভার কে কিছু বলতে চাইছে। নূর এটা ঠিকই বুঝতে পারছে এই ক্যাবে কোনো সমস্যা আছে। তাই এটিতে উঠার পর থেকেই ওর এত ঘুম পাচ্ছে। নূর ড্রাইভার কে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। কিছুক্ষণের মাঝেই নূর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। নূর ঘুমিয়ে যেতেই ড্রাইভার গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়।গাড়ি এখন চলছে অন্য একটি গন্তব্যে। নূরের সম্পূর্ণ অজানা গন্তব্যে এখন গাড়ি চলছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নূর পিটপিট করে নিজের চোখ মেলে তাকায়। নূর নড়তে চেয়েও যেনো নড়তে পারছে না। নূরের মনে হচ্ছে কেউ ওকে সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে শুয়ে আছে। নূর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছে না। নূর অনেক কষ্টে নিজের চোখ মেলে তাকায়।নূর তাকাতেই আদিত্যর বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে।
নূর চোখ বড় বড় করে আদিত্যর দিকে তাকায়। আদিত্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। নূরের মচড়া মচড়িতে বিরক্ত হয়ে আদিত্য চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল।
সমস্যা কি তোমার? আমার ঘুমে ডিস্টার্ব করছ কেনো?
অসভ্য লোক, তুমি আমাকে ছাড়ো। আবার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
তোমার দম তো আমার সামনেই আসলেই বন্ধ হয়ে আসে। এখন তোমার দমের জন্য কি আমি আমার বউয়ের কাছ থেকে দূরে থাকব। তোমার দম থাক বা না থাক আমার বউকে আমার পাশে চাই।
আমার দম যদি না থাকে তাহলে বউ দিয়ে কি করবে।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো নূর।
নূরের কথা শুনে আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বলল।
দেখতে চাও কি করব,

আদিত্যর চাওনি দেখে নূর একটি ঢোক গিলে বলল।
না না আমি কিছুই দেখতে চাই না, আমাকে ছাড়ো।আমি এখানে কি করছি আমি তো ক্যাবে ছিলাম।
নূরের কথা শুনে আদিত্য ওকে ছেড়ে দিলো এবং বলল।
ওটা আমার পাঠানো ক্যাব ছিল,আমি ভালোভাবে জানতাম তোমার মতো ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে আমার কথা এত সহজে মানবে না। তাই আমি আগের থেকেই সেকেন্ড অপশন রেখেছিলাম।
নূর আদিত্যর কথায় অবাক হয়ে বলল।
তুমি আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছ এখানে।
কিডন্যাপ বা আমার অধিকার তোমার যেইটা মনে করতে হয় করতে পারো। তোমার ইচ্ছা।
লজ্জা করে না তোমার একটি মেয়েকে এভাবে তুলে এনে আবার গর্ব করে বলছ।
না করে না,আমার ভিতরে লজ্জা বলতে কিছু নেই।আর তা যদি হয় নিজের বউয়ের জন্য। তাহলে তোমাকে আমি নির্লজ্জের শেষ সীমানা দেখাতেও রাজি আছি।
আদিত্যর কথার প্রতি উত্তরে নূর কঠোর গলায় বলল।
আমাকে যেতে দাও, আমার জরুরি কাজ আছে।আমি এখন তোমার সাথে সময় কাটাতে পারব না।
ভাইয়ের জন্য ঔষধ আনতে যাবে এই তো, তোমার ভাইয়ের ঔষধ বাড়িতে পৌঁছে গেছে। তুমি এখানে এসেছ ইতিমধ্যে চার ঘন্টা হয়ে গেছে।আর এখন তোমার ভাইয়ের ঔষধের কথা মনে পরছে তোমার।
আদিত্যর কথা শুনে নূরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।এবং নূর অবাক হয়ে বলল।
কি চার ঘন্টা,আমি চার ঘন্টা ধরে এখানে আছি।আর চার ঘন্টা ধরে তোমার সাথে এক বিছানায় শুয়ে ছিলাম।
আদিত্য খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তরে বলল।

হুম,
নূর যেনো ওখানেই পাথর বনে দাঁড়িয়ে রইল।
ডিভানের উপর তোমার জন্য একটি ড্রেস আছে।ওই ড্রেস পরে নিচে আসো।
আদিত্যর কথা শুনে নূর বলল।
আমি তোমার দেওয়া কোনো ড্রেস পরব না।
তুমি যদি না পরতে চাও,তাহলে তোমাকে আমার ড্রেস জোর করে পড়াতে হবে। এখন তুমি যদি চাও আমি তোমাকে ড্রেস চেঞ্জ করতে সাহায্য করি তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। এমনিতেও এই রুম ও এই বাড়িতে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। বউয়ের সাথে রোমান্স করার এটি সঠিক জায়গা ও সঠিক সময়।
আদিত্যর কথা শুনে নূর কিছুটা ভয় পেয়ে গেল কিন্তু ও নিজের ভয় আদিত্যর সামনে প্রকাশ করতে চাই না।তাই নূর অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল ।
তুমি অনেক বেশি অসভ্য, তোমার সাথে আমি কথা বাড়াতে চাই না।আমি ব্যস এখান থেকে বাড়ি যেতে চাই।তাই তোমার আনা ড্রেস আমি পরে নিচ্ছি।
আদিত্য ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে নূর এখন ভয় পাচ্ছে। তাই আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

নূর আর কিছু না ভেবে আদিত্যর আনা ড্রেস হাতে তুলে নেয়। শপিং ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করতেই দেখতে পায় এটা একটি নীল রঙের গাউন।গাউনের মাঝে আবার খুব সুন্দর করে ডিজাইন করা। নূর গাউনটি দেখে আদিত্যের প্রশংসা করতে বাধ্য হলো। কারণ গাউনটি খুবই সুন্দর। নূর চেঞ্জ করে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। নিচে এসেই দেখে আদিত্য পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে। আদিত্য নিজের পোশাক চেন্জ করে রেডি হয়ে বসে আছে। আদিত্য কে যে কেউ দেখলে এখন ক্রাস খেতে বাধ্য। নূর ও আদিত্যর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।নূর যখন বুঝতে পারলো ও বেহায়ার মতো আদিত্যর দিকে তাকিয়ে আছে নূর তখন সাথে সাথে নিজের চোখ সরিয়ে নিল।

তখনি আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি তোমারি স্বামী,তাই তুমি আমাকে সকাল সন্ধ্যা যখন মন চায় চোখ দিয়ে গিলে খেতে পারো।এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং আমি আরো উৎসাহিত হবো। নিজের বউকে আরো বেশি আদর করতে পারব।
আদিত্য কথা শুনে নূর বুঝতে পারে না ও কি বলবে। আদিত্য যে ওকে এভাবে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফেলেছে আর ও বুঝতেই পারেনি। নূর কিছুতেই আদিত্যর কাছে হার মানবে না।তাই নূর বলল।
আমি তোমাকে দেখছিলাম না,
আদিত্য নূরের কথা শুনে নিজের জায়গা থেকে উঠে নূরের একদম কাছে চলে আসল।নূর যখনি আদিত্য থেকে দূরে সরে যেতে চাইল। তখনি আদিত্য নিজের দু হাত দিয়ে নূরকে বন্দি করে ফেললো। নূরের কানের কাছে আদিত্য আস্তে করে বলল।

তোমাকে আমি কখন বলেছি, তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে।আমি তোমাকে বলিনি তুমি নিজে স্বীকার করলে।
আদিত্য নূরের এত কাছে আসায়, নূর নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো।নূর চোখ বন্ধ করতেই অনুভব করে নূর শূন্যে ভাসছে। তখনি নূর চট করে নিজের চোখ খুলে ফেলে এবং দেখে। আদিত্য ওকে কুলে তুলে নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা দিলো।
আমার পা আছে তুমি আমাকে নিচে নামাও।আমি হেঁটে যাবো।
নূরের কথা শুনে আদিত্য ওর দিকে তাকিয়ে বলল।
তোমার পা থাকতে যদি তোমার স্বামী তোমাকে কুলে না নিতে পারে।তাহলে আমি তোমার পা দুটো ভেঙ্গে সারা জীবন কুলে নিয়ে ঘুড়ব। এখন তুমি বলো ভালো পা নিয়ে আমার কুলে ঘুরতে চাও।নাকি ভাঙ্গা পা নিয়ে। আদিত্যর কথায় নূর আর কিছু বলে না।কেননা এই তার ছিঁড়ার কেনো ভরসা নেই সত্যি না নূরের পা ভেঙ্গে ফেলে।

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। রুদ্র তার সকল বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।সকলে নূরকে এখন অনেক মিস করছে। ওদের মধ্যে যদি এক বন্ধু ও না থাকে তাহলে ওরা অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে। রুদ্র যখন ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে তখনি সাইরা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে রুদ্রের কাছে এসে বলে।
দুলাভাই আপনাকে সিরাত আপু ডাকছে,
আড্ডার মাঝে দুলাভাই ডাক শুনে সকলে সাইরার দিকে তাকায়।সাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে লজ্জায়। সাইরা কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও এখন ঠিক কতটা লজ্জা পাচ্ছে। রুদ্রের ও সাইরার মুখে দুলাভাই ডাকটি শুনে কেমন যেনো লাগলো। কারণ এই প্রথম রুদ্র কারও মুখ থেকে দুলাভাই ডাক শুনেছে।
রুদ্র সাইরার উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই রাজ ঠাট্টা করে সাইরার উদ্দেশ্যে বলল।
বিয়াইনের কি শুধু তার দুলাভাইয়ের কথা মনে পরে আমাদের কথা মনে পরে না।আমরাও তো এখানে আছি আমাদের দিকেও এখানে একটু তাকান।আমি যে ব্যাকুল..

রাজ কথাটি শেষ করার আগেই আরশাদ হাত দিয়ে খোঁচা দেয় রাজ কে।রাজ কিছুটা থতমত খেয়ে বলল।
আমি বলতে চাইছি,আমরা সকলে ব্যাকুল হয়ে আছি আপনার সাথে কথা বলার জন্য।
সাইরা রাজের করে শুয়ে অনেক লজ্জা পেয়েছে।তাই সাইরা আর সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায়।
সাইরা চলে যেতেই রুদ্র ও চলে যায় সিরাতের সাথে দেখা করতে।আর রাজ সাইরার লজ্জা মাখা মুখ দেখে মাথা নিচু করে মুচকি হাসে।মাথা উঠিয়ে যখন রাজ সামনে তাকায় তখনি দেখে আয়না ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে।
রাজ আয়নাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল।
তুই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো।
দেখছি,

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৩

কি দেখছিস?
তোমাকে দেখছি, তুমি কিভাবে সিরাত আপুর বোনের দিকে তাকিয়ে ছিলে।তাই দেখছিলাম আবার সিরাত আপুর বোনের চেহারায় কিছু লেগে ছিল নাকি।যে এভাবে হা করে ছিলে ওকে দেখে।
তোর মনে হয় না তুই বেশি ভাবছিস।
একদম না,আমি এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি তুমি সাইরা কে আমার ভাবি বানাতে চাইছো। এখন যদি আমি এই কথা বাসায়..
সাইরার কথা পূর্ণ হওয়ার আগেই রাজ বলল।
কি চাস?
বেশি কিছু না, ব্যস…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৫