রং পর্ব ৪৮

রং পর্ব ৪৮
তন্নী তনু

অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের দৃশ‍্যপটে ক্রমেই যোগ হচ্ছে আধার আর আধার,বিপদের রাত্রিটা ভিষণ দীর্ঘ আর ভারী হয়। আলোয় উদ্ভাসিত সাদা ধবধবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাসপাতালের করিডোর, তবুও সিনথিয়ার দু”চোখ শুধু অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে সব আলো।বলিষ্ঠ, বলবান,শক্তীধারী শরীরটাকে স্ট্রেচারে নির্জীব, নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে স্বচক্ষে দেখে বুকের মধ‍্যের চিনচিনে ব‍্যাথাটা বাড়ছে ক্রমেই। স্ট্রেচারের পায়ের গোল চাকা সর্বোচ্চ গতিতে ছুটছে, তাল মিলিয়ে ইরফাদের হাত শক্ত করে ধরে ছুটছে সিনথিয়া। ইতিমধ্যে চলে এসেছে জাবির সহ আরোও অনেকেই। দায়িত্বরত নার্স সহ অনেকেই একনাগারে বলে যাচ্ছেন,
–ম‍্যাডাম আপনি স‍্যারের হাত টা ছাড়ুন। আমরা দেখছি।
চার পাঁচজনের গলার স্বর সিনথিয়ার কানে যেনো পৌঁছাচ্ছে না। সে শক্ত হাতে ধরে আছে নির্জীব মেলে রাখা হাতটা। পেছন থেকে জাবির বলেন,

–ম‍্যাডাম! আপনি স্টেবল নন। আপনার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। স‍্যার এর হাতটা ছাড়ুন।
সকলের গলার স্বরকে উপেক্ষা করে স্ট্রেচারের সাথে সমান তালে দৌড়াচ্ছে সিনথিয়া। বুক, পিঠ আর হাত পায়ের ক্ষত থেকে র*ক্ত ঝড়ছে অবিরাম। দূর্বল শরীরে তবুও দাপটের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে সিনথিয়া। টনটনে ব‍্যাথায় অসাঢ় হয়ে আসা হাতটা ছাড়ছেনা ভালোবাসার মানুষটির হাত। সার্জারির রুম দশ হাত দূরে। থামানো হয় স্ট্রেচার। অশ্রুশিক্ত সিনথিয়া থেমে যায়। ঘন আখি পল্লবে লেগে থাকা অশ্রুটুকু টুপ করে পড়ে, হালকা কেঁপে ওঠে থুতনিটা। দায়িত্বরত নার্স বলে ওঠেন,
— ম‍্যাডাম এইবার ছাড়তেই হবে।
সহসাই কেঁপে কেঁপে ওঠে সিনথিয়ার থুতনি,বুকের অদৃশ‍্যমান ভাঙনে হৃদয়ে রক্ত ছলকে ছলকে ওঠে।ছেড়ে দিতে হবে। এমন মুমূর্ষু সময়ে তার একান্ত ব‍্যক্তিগত মানুষকে ছেড়ে দিতে হবে? এই কঠিন মূহুর্তে মানুষটা তার স্পর্শের বাইরে থাকবে। চিকিৎসার নিয়ম গুলো এতো কঠিন কেনো? চোখ ফেটে উপছে পড়া জল গড়িয়ে পড়ে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জাবির বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— ছেড়ে দিন ম‍্যাডাম।
সিনথিয়া দূর্বল নয়নে শেষবারের মতো ইরফাদের নির্জীব জ্ঞানহীন মুখের দিকে তাকায়।কোমল মুখ, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপাল ঢেকে আছে, শুকনো ঠোঁট, আখিপল্লব হালকা খোলা। অঝোরে কাঁপছে সিনথিয়ার ওষ্ঠজোড়া। এই আধার রাত্রিতে একাকী প্রিয় মানুষটির মুমূর্ষু সময়ে ক্ষণকালের জন‍্যে বিদায় দিতে বুকটা ভার হয়ে আসছে। হৃদয়ের রক্তবিন্দুগুলো চোখে শীতল পানি হয়ে টুপটুপ করে ঝড়ছে। কোমল হাতে ইরফাদের কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে শুকনো চুমু খায় সিনথিয়া। অতঃপর ধীর গলায় বলে,
— খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে,সুস্থ হয়ে ফিরে আসো আমার ভালোবাসার মানুষ।তোমার সাথে অনেককটা পথ চলা বাকি।

অতঃপর সিনথিয়ার কোমল হাত এর মধ‍্যে থেকে নির্জীব, নিষ্প্রাণ হাতটা চোখের সামনে থেকে অল্প অল্প করে ছুটে যায়, হৃদয় থেকে আরেকটা হৃদয় যেনো কেও টেনে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। হাঁটু ভাজ করে মেঝেতে বসে সিনথিয়া।মেঝেতে চোখের জলের গোল গোল ফোটা বাড়ে এক দুই তিন এভাবেই। বিধ্বস্ত মেয়েটিকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে জাবির বলে,
— বি স্ট্রং ম‍্যাডাম। উঠুন আপনার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। ব্লাড পড়ছে হাত থেকে এখনো।
ঐ সময়েই লম্বা লম্বা পা ফেলে তড়িঘড়ি করে আসেন রিদুয়ানুর রহমান। পেছন থেকে ছুটে আসছে ইভা, তার কোলে ঘুমন্ত টুম্পা। একছুটে আসে ইভা। জাবির ঘুমন্ত টুম্পাকে কোলে তুলে নেয়। সিনথিয়ার রক্তাক্ত শরীর। ওড়নার নিচে আধছেড়া জামা। ইভা ঝাপটে ধরে সিনথিয়াকে। শূন‍্যে তাকিয়ে থাকা সিনথিয়া চোখ তুলে তাকায়। ইভার আলিঙ্গন থেকে তাকায় রিদুয়ানুর রহমানের দিকে। তারপর ভাঙা গলায় বলে,

–বাবা!
রিদুয়ানুর রহমান সিনথিয়ার বিধ্বস্ত অবস্থায় নিজের মনের অবস্থা চাপা দিয়ে সিনথিয়ার মাথায় হাত রাখেন। তারপর আশ্বস্ত গলায় বলেন,
— সব ঠিক হয়ে যাবে মা। ধৈর্য্য ধরো।
ইভা ছোট বাচ্চার মতো আগলে নেয় সিনথিয়াকে। তারপর চেয়ারে বসায়। দূর্বল সিনথিয়ার চোখের জলে ভাসানো মুখ মুছে দেয় নিজের ওড়নায়। অপরাধবোধে ভুগতে থাকা ইভা সিনথিয়ার কপালের কোণে একটা ছোট্ট চুমু দেয়। তারপর বলে,

–আমার ভুলে তুমি সাফার করছো। কেনো যে তোমাকে নিয়ে যেতে জোর করলাম আমি।
সিনথিয়ার দিন দুনিয়া শূন‍্যে কোনো কথার উত্তর দিতে সক্ষম নয় যেনো। রিদুয়ানুর রহমান নার্স কে ডাকেন। অতঃপর সিনথিয়ার ট্রিটমেন্ট শুরু। সিনথিয়া উন্মাদের মতো বলতে থাকে,
— ও আগে ঠিক হোক। এরপর যা হওয়ার হবে। আমার কিচ্ছু প্রয়োজন নেই। কিচ্ছু না…
ইভা শান্ত কন্ঠে বোঝায়,
— সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়ার জ্ঞান ফিরলে যদি তোমার এই অবস্থা দেখে ভাইয়ার উপর ইফেক্ট পড়বে। তুমি তো ভাইয়াকে কতো ভালোবাসো, ভাইয়ার ভালো চাও। ভাইয়াকে খুশি দেখতে চাও তাইনা। তাহলে তোমাকে সুস্থ হতে হবে।

একাকী নিরালায় নিভৃতে হাসপাতালে রাত্রি যাপন সুভার। কাজের সূত্রে বহুরাত নাইট ডিউটি করেছে সে, তবে আত্মার মানুষগুলো যখন জীবন মৃত‍্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ঐ সময়ে হাসপাতালে কাটানো মূহুর্ত দীর্ঘের চেয়েও দীর্ঘ। এই স্বাদ সেই জানে যে জীবনে উপলব্দি করেছেন। সুভার ভাইয়ের অবস্থা আশঙ্কা জনক। দাঁতে দাঁত পিষে জড়সড় হয়ে বসে আছে সুভা,সব ঠিক হয়ে যাবে এই ছোট্ট বাক‍্যটুকুকে ভরসা করে নিরালায়,একাকী বসে আছে সে।

নিঝুম রাত্রিতে শিশিরের বুকে ওম বিলাসী তিথী ঘুমে আচ্ছন্ন। শিশিরের চোখ লেগে আসছে। ঠিক সে সময়েই মুঠো ফোন কেঁপে ওঠে। ঘুম ছুটে যায় শিশিরের। স্ক্রিনে জাবিরের নম্বর দেখে ফোন রিসিভ করে শিশির,
— বলুন!
— আপনাকে একবার হসপিটালে আসতে হবে। এড্রেস দিচ্ছি।
— কোনো প্রবলেম?
— ইরফাদ স‍্যারের গুলি লেগেছে।
–হোয়াট?
–কখন! কিভাবে?
— ডিটেলস এসে শুনবেন। ব্লাড লাগবে নেগেটিভ।
— ফিফটিন মিনিটস ওয়েট । আমি চলে আসবো।
–ওকে।
ঘুমন্ত তিথিকে জাগানোর ইচ্ছে তার নেই। তবে বাধ‍্য সে। ধীর গলায় তিথিকে ডাকে শিশির,
— তিথি!! তিথি!! ওঠ… ইমারজেন্সি কেস। আমাকে যেতে হবে।
ঢুলুঢুলু আখিপল্লব খুলে একপলক তাকায় তিথি। অতঃপর জড়ানো গলায় বলে,

–ঘুম লাগছে আমার।
— দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে ঘুমা।
— আর তুমি?
— আমাকে যেতে হবে।
–এখন?
–ইমার্জেন্সী, তাড়াতাড়ি ওঠ।
— কি হয়েছে?
–তেমন কিছু না। ওঠ ওঠ….
— এত রাতে যাবে? কি এমন কাজ বলোতো?
— বলা যাবে না।
— আমাকেও না।
— ইরফাদ স‍্যার এর গুলি লেগেছে। যেতে হবে।
–মানে? কিভাবে? কখন? সিনথিয়া!
— যাবি হসপিটালে?
তিথি মাথা ঝাকায়।শিশির তাড়া দেয়,
তাহলে দু”মিনিটে রেডি হ। এই সিচুয়েশনে ফ্রেন্ডের পাশে থাকা দরকার।
— মনের সব বোঝ তুমি?
— মানুষ হয়ে বোঝার ক্ষমতা না রাখলে মানুষ হয়ে কি লাভ?

সিনথিয়ার বাহুতে দু”টো সেলাই, বাকি ক্ষত জায়গাগুলো ড্রেসিং করা হয়েছে । কেবিনের বেডে শুয়ে আছে সিনথিয়া। বুকের মধ‍্যের যন্ত্রণা ধিকিধিকি জ্বলছে। দুশ্চিন্তায় শুকিয়া আসা গলাটা নরম ঢোক গিলে ভিজিয়ে নিচ্ছে সিনথিয়া। ঠিক সে সময়ে কেবিনে ঢোকে তিথি। ইভা একহাতে বুলাচ্ছে সিনথিয়ার এলোকেশী মাথা। তিথি ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। চোখের পলকে বান্ধবী নামক অস্তিত্ব দেখে দূর্বল শরীরে উঠে বসে সিনথিয়া। পরিচয় পর্ব শেষে পাশে বসে তিথি। কখনো কখনো বন্ধু নামক অস্তিত্ব সস্তি দেয়। মুখোমুখি বসে মূহুর্ত্তেই সিনথিয়াকে আলিঙ্গনের চাদরে ঢেকে নেয় তিথি। তারপর বলে,
— সব ঠিক হয়ে যাবে।
দূর্বল সিনথিয়া এই আশায় নিজেকে শক্ত করে। সবটা ঠিক হবে। সব খারাপ তার সাথে হতে পারে না। কিছুক্ষণ নিজেকে বুঝিয়ে শান্ত থাকলেও পরোক্ষণেই দুশ্চিন্তায় হু হু করে ওঠে হৃদয়। হৃদয়ে আন্দোলিত মুমূর্ষু অনুভূতিতে যে রক্তক্ষরণ হৃদয়ে চলছে তা নিবারণ করার সাধ‍্য যে তার নেই। যতোক্ষণ না ইরফাদ চোখ মেলে তাকাবে ততোক্ষণ তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ শুধু বাড়তেই থাকবে।

রাতের শেষ ভাগ, নির্ঘুম রাত্রিতে দু”চোখের পাতা পুড়ছে সিনথিয়ার। আরেকটা ছোট বেডে ছোট্ট টুম্পাকে বুকে জড়িয়ে নিরবে কাঁদছে ইভা। এই মূহুর্তে অশ্রুসজল চোখ কাউকে দেখানোর উপায় নেই। ভেতরে ভাঙতে ভাঙতে নিঃশেষ হয়েও তাকে অন‍্যদের শক্তি যোগাতে হচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময়ে ভাই নামক বটবৃক্ষের ছায়াতলে সে সস্তির শ্বাস টেনেছিলো, তলিয়ে যাওয়া সূর্যের মতো সে তো তলিয়ে যেতো সেই সময়েই। ইরফাদ সে সময় তাকে বন্ধুর আগলে রেখেছে, মন বুঝে চলেছে। ভাই হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের জায়গাধারী মানুষটা আজ নিস্তেজ, নির্জীব। স্বচক্ষে এমন মুমূর্ষু অবস্থা দেখে তার ভেতরটা যে পানিহীন মরুভূমি হয়ে গেছে তা কাউকে বোঝাতে পারছে না। বাবা আর সিনথিয়ার মুখ পানে তাকিয়ে নিরবে সব সয়ে যাচ্ছে ইভা। কিছুক্ষণ পর পর সিনথিয়াকে দেখে আসছে। রিদুয়ানুর রহমান একটু সময় পর পর খোঁজ নিয়ে আসছেন। তবে ডক্টর জানিয়েছেন সকালের আগে কেউ দেখা করতে পারবে না।

নিলচে আলো চুইয়ে পড়া সকাল, হৃদয়ের সাথে পুড়ছে দু”চোখ। অপেক্ষার প্রহর বড় দীর্ঘ। নামাজ শেষে ভালো খবর আসে। নার্স আসেন কেবিনে। তিনি বলেন,
— স‍্যার এর জ্ঞান ফিরেছে অনেক আগেই। এখন একজন দেখা করতে পারবেন। আপনাদের মধ‍্যে প্রথমে কে যাবেন?
জ্ঞান ফিরেছে কথাটুকুই সিনথিয়ার হৃদয়ে নতুন গল্পের সূচনা হয়, হৃদয়ের আনাচকানাচে আধারকে দূরে ঠেলে আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়। সিনথিয়া মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্বরণ করতে করতে উঠে বসে। ইভা উঠে বসে আছে, রিদুয়ানুর রহমান দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি স্বেচ্ছায় বলেন,
— সিনথি তুমিই প্রথমে যাও।
সিনথিয়ার ভেতরটা শূন‍্যতায় শূন‍্যতায় অপূর্ণ, তেষ্টায় তেষ্টায় হৃদয়ের হাহাকার। চোখ দুটো ইরফাদ কে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবুও একজন সন্তান সবচেয়ে প্রিয় তার বাবা মায়ের কাছেই। বাবা মায়ের মতো নিস্বার্থ ভাবে কেউ সন্তানকে আগলে রাখতে পারে না। তাই সন্তানকে প্রথম দেখা বাবার ই প্রাপ‍্য। তার হৃদয়ে যতো রক্ত ক্ষরণ ই হোক তা উপেক্ষা করেই সিনথিয়া বলে,

— বাবা আপনিই প্রথমে যান। পরে আমি যাবো..
রিদুয়ানুর রহমান সিনথিয়ার পাশে বসে।সিনথিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
— এই মূহুর্তে তোমার ওর পাশে থাকা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন মা। তুমি ই যাও।
সিনথিয়া চোখ দুটো অশ্রুতে ভিজে যায়। এমন করে মনের কথা কেউ বুঝে? আদর্শ সন্তানের আদর্শ বাবা। সিনথিয়া উঠে দাঁড়ায়। নার্স বলেন,
— পেসেন্ট এর সামনে কান্নাকাটি , ভেঙ্গে পড়া যাবে না।
সিনথিয়া মাথা নাড়ায়। তারপর ধীর পায়ে প্রবেশ করে ইরফাদের কেবিনে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর নিয়ম ভুলে একছুটে ঐ উষ্ণ বুকে ঝাপিয়ে পড়তে। তবে পৃথিবীর বেশীরভাগ ইচ্ছেই হয় নিষিদ্ধ না হয় অপূরণীয়। সিনথিয়া ধীর পায়ে নিঃশব্দে এগিয়ে যায়। ঢিলেঢালা পোশাকে শুয়ে আছে ইরফাদ। চোখদুটো আধখোলা। দূর্বল চোখে তাকাচ্ছে ইরফাদ। সিনথিয়া দাঁড়ায় পাশেই। অনিশ্চিত, অকল্পনীয় ঘটনার পরবর্তীকালীন দৃশ‍্যে হারিয়ে গেছে তার গলার স্বর, বুকের কাঁপুনি বাড়ছে ক্রমেই। কাঁদতে বারণ করা কথাটি চোখ যে মানছে না। ভালোবাসার মানুষটির মুমূর্ষু অবস্থা নিজ চোখে দেখার অনুভূতি অবর্ণনীয়। বেডের সাইডে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় সিনথিয়া বলে,

— কেমন আছেন?
পরম শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ইরফাদ। ওষ্ঠের কোণে একচিলতে হাসির ঝিলির। দূর্বল হাত বাড়িয়ে দেয় ইরফাদ। কোমল হাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ করে টেনে নেয় বুকে। গলার স্বর নামিয়ে বলে,
— ঠিক আছো তুমি?
সিনথিয়া মাথা নাড়ায়। তারপর বলে,
— বললেন না যে! কেমন আছেন?
— তোমাকে দেখেই শান্ত হয়ে গেছে হৃদয়।
সিনথিয়ার শ্বাসঘন হয়ে আসে। দুঃখ কষ্টের পরে দূরত্বঘুচলে শান্তিরা যেনো ডানা ছড়িয়ে ওড়ে। বুকের মধ‍্যে অশান্তিরা ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে,সুখেরা ডানা মেলে উড়ছে। ফুরফুরে শুভ্র ফুলের ন‍্যায় বুকের ভেতরটা ফুরফুরে হয়ে যাচ্ছে। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
–ভয় পেয়েছিলে?
সিনথিয়া হালকা করে মাথা দোলায়। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
— ভালোবাসো!!!
সিনথিয়া চোখ রাখে বড় বড় মায়াবী চোখজোড়াতে। পাশের চেয়ারটা টেনে বসে কাছে। তারপর বলে,

— জানিনা!!
— তাই!!
–হুম…
ইরফাদ নিজের বেডের সাইডে জায়গা করে দেয়। তারপর বলে,
— এখানে বস!
— এখানেই ঠিক আছি।
— আমি তো ঠিক নেই সিনথি।
— মানে
— এখানে বসো..

রং পর্ব ৪৭

সিনথিয়া ইরফাদের হাতের সাইডে বসে,বেড ফোল্ড করে শরীর এলিয়ে বসে ইরফাদ। দুহাত ছড়িয়ে ভালোবাসার জোড়ারে ভাসাতে ধীর শান্ত গলায় বলে,
— আমার বিষাদগ্রস্থ রক্তিম হৃদয়ে শান্তির নহর হয়ে আলিঙ্গনে জড়িয়ে নাও,শুষে নাও সমস্ত ব‍্যাথা।
— জড়িয়ে ধরবো, ব‍্যাথা লাগবে না?
–ব‍্যাথাটা পিঠে,বুকে জায়গা শূন‍্য পড়ে আছে তো।

রং পর্ব ৪৯