মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৭

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৭
রায়েনা হায়াত

বিকালে অন্তি আর অবনী ব্যালকনিতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আজ সারাদিন হৃদান অবনীকে কল করেনি। অবনী কয়েকবার কল দিলেও তা হৃদান না রিসিভ করেছে আর না কল ব্যাক করেছে। এ নিয়েই অবনীর মন একটু খারাপ ছিলো। তবে তাইমুর দুপুরে খেয়ে এখানেই ছিলো। আনোয়ার সাহেব ছাঁদে গেছেন আর রেহেনা বেগম পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির কাছে গেছেন। তাইমুর সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছিলো। হসপিটাল থেকে কল আসতেই সে আশে পাশে তাকায়। এরপর পা বাড়ায় অন্তির রুমের দিকে। রুমে উঁকি দিয়ে কারো আভাস না পেয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। ব্যালকনিতে যাওয়ার আগেই জোড় গলায় বলে,

–‘অবনী, আসলাম।’
দু’জনেই ফিরে তাকায়। অন্তি সাথে সাথেই বলে,
–‘আইসেন না।’
তাইমুর তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়। অন্তি দাঁত দেখায়। অবনী তাইমুরকে বলে,
–‘বসেন। চা বা কফি আনবো?’
–‘না। আঙ্কেল ছাঁদে গেছেন হাঁটতে। হসপিটাল থেকে কল আসছিলো। আমার যেতে হবে। তাই তোমাকে বলতে আসলাম।’
তাইমুর কথা শেষ করে নিচে তাকাতেই দেখে হৃদান আর ওর সাথে দুজন আসছে। তাইমুর অনুমান করে নিলো একটা হৃদানের মা আর একটা বোন। তাইমুর নিচের দিকে তাকিয়েই বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–‘তোমার শ্বশুরবাড়ির লোক আসতেছে।’
অবনী আর অন্তি একসাথে দ্রুত তাকায় নিচে। সত্যি সত্যি হৃদানরা আসছে। অন্তি তাইমুরের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান গলায় শুধায়,
–‘আপনি দেখি সবাইকেই চেনেন। গোয়েন্দাগিরি করেন নাকি আমাদের পিছনে?’
তাইমুরের সোজা জবাব,
–‘যাদের ব্রেইন নিচে পরে গেছে তাদের কাছে গোয়েন্দাগিরি মনে হতে পারে। এটা আমার কাছে কমন সেন্স। সেদিন হৃদানকে অবনীর সাথে দেখেছিলাম। অবনীর ফোনের ওয়ালপেপারেও ওদের কাপল পিক দেখেছি। আর হৃদানের সাথে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা আসছেন মানে অবশ্যই তার মা-ই হবে আর একটা অল্প বয়স্ক মেয়ে মানে ওর বোন-ই হবে। নিশ্চয়ই প্রেমিকা নিয়ে শ্বশুরবাড়ি আসবে না!’
অবনী হেঁসে ওঠে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে উঠতে উঠতে অন্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–‘নিচ থেকে ব্রেইন তুলে জায়গামতো রেখে আব্বু-আম্মুকে ডেকে আন।’
অন্তি গাল ফুলিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তাইমুরের দিকে ভ’য়ং’কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখ বাঁকায়। তাইমুর তার দৃষ্টি পাত্তা না দিয়ে পিছে যেতে যেতে বলে,
–‘আপনি আন্টিকে ডেকে আনেন, আমি আঙ্কেলকে ডাকছি।’
অন্তি মাথা নাড়ায়। সে যায় পাশের ফ্ল্যাটে আর তাইমুর যায় ছাঁদের দিকে। অবনী চুলায় চায়ের পানি তুলে দিয়ে মায়ের অপেক্ষা করে। হৃদানরা উপরে আসার আগেই রেহেনা বেগম চলে আসে। তিনি আসার দু মিনিট পরই হৃদানরা আসে। কুশল বিনিময় করে বসতে দিয়ে রেহেনা বেগম বলেন,
–‘আপনি আসবেন জানাননি কেনো বেয়াইন! হৃদান, তুমি তো বলতে বাবা।’
হৃদান কিছু বলার আগেই হানিফা বেগম গম্ভীর গলায় বলে,

–‘ও নিজেও জানতো না। আমিই একটু আগে বলেছি আসার কথা। এতো ব্যস্ত হবেন না। ভাই সাহেব কোথায়?’
–‘ছাঁদে গেছেন একটু। আসছে এক্ষুণি।’
বলতে বলতেই তাইমুর আর আনোয়ার সাহেব চলে আসেন। হৃদান সালাম দেয়। আনোয়ার সাহেবের সোফায় বসলে তাইমুর ভাবে চলে যাবে। অন্তির পাশে গিয়ে অন্তিকে বলার আগেই হানিফা বেগম জিজ্ঞাসা করেন,
–‘ও কে?’
আনোয়ার সাহেব হেসে একবার তাইমুরের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘ও আমার বন্ধুর ছেলে। পাশের বিল্ডিং এই থাকে।’
হানিফা বেগম একটু সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তা দেখে তাইমুরও তার দিকেই তাকিয়ে থাকে। হানিফা বেগম দৃষ্টি সরিয়ে নিলে তাইমুর এবার রেহেনা বেগমকেই বলে,
–‘আন্টি, আমি আসছি। হসপিটাল থেকে কল আসছিলো। যেতে হবে।’
–‘রাতে এখানে খেয়ে যেয়ো। আমি গুছিয়ে রাখবো।’
–‘না না আন্টি। তার দরকার নেই। আমার আজ ফিরতে দেড়ি হতে পারে। বাহির থেকে খেয়ে আসবো। অপেক্ষা করবেন না।’

রেহেনা বেগম কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু তাইমুর তাকে থামিয়ে দিয়ে একবার অন্তির দিকে তাকিয়ে বেড়িয়ে যায়। তার যাওয়ার দিক থেকে চোখ সরাতেই অন্তির নজর পরে নীলার দিকে। নীলাও তাইমুরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভ্রু সামান্য কুঁচকে যায়। নীলা সামনে তাকালে তার ঠোঁটের কোণের হাসি দেখে অন্তির সন্দেহ হয়। অবনী চা আর ফল কেটে নিয়ে এসেছে। সবাইকে দিতেই হানিফা বেগম বলেন,
–‘অবনী, অনেক তো থাকলে। এখন কি যেতে হবে না?’
অবনী মাথা নিচু করে থাকে। আনোয়ার সাহেব ইতস্তত করে বলে,
–‘আর দু’দিন না হয় থাকুক!’
অবনী ভয় পাচ্ছে না জানি উল্টা পাল্টা কিছু বলে বসে! তবে তাকে অবাক করে দিয়ে হানিফা বেগম নরম স্বরে বলে,

–‘মেয়ে তো আপনার এখন একার না ভাই সাহেব। এখন তো ও আমার বাড়িরও মেয়েই। মেয়ে ছাড়া বাড়িটা ফাঁকা লাগতেছে। আজ নিয়ে যাই? এরপর আবার পাঠাবো!’
আনোয়ার সাহেব হাসলেন। রেহেনা বেগমের মুখেও হাসি। তারা নিজেদের মতো কথা বলতে থাকেন। অবনী অবাক হয়ে হানিফা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদান তার দৃষ্টি নিয়ে মজা নিচ্ছে। নীলা অবনীর হাত ধরে অন্তির রুমে টেনে নিয়ে যায়। পিছু পিছু অন্তিও যায়। নীলা খুশি হয়ে বলে,
–‘আসলেই তোমাকে অনেক মিস করেছি, ভাবী। এখন ফটাফট রেডি হও। আর চলো তোমার শ্বশুরবাড়ি।’
অবনী সামান্য হাসে। তারপর নিজের কাপড় গুছিয়ে নেয়। আসার সময় বেশি কিছু আনেনি সে তাই গোছানোরও তেমন কিছু ছিলো না। নীলা আমতা আমতা করে বলে,

–‘ভাবী, তোমাদের বাসায় যে ভাইয়াটা ছিলো উনার নাম কী?’
অবনী ফট করে তার দিকে তাকায়। অন্তিও দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সেভাবেই সে-ই জবাব দেয়,
–‘তাইমুর আহসান।’
নীলা পিছে ফিরে তার দিকে তাকিয়ে সামান্য লজ্জা পায়। দৃষ্টি নত করে পায়ের নখ দিয়ে মেঝেতে খুঁটতে থাকে৷ অন্তি চোখ মুখ কুঁচকায়। নাম শুনেই কে এতো লজ্জা পায়? অন্তির মুখ দেখে অবনী ঠোঁট চেপে হাসে৷ তবে নীলা বা অন্তি কাউকেই কিছু বলে না। অন্তি মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
–‘শুধু নাম শুনেই যেভাবে লজ্জা পাচ্ছো তাতে তো মনে হচ্ছে তোমার নতুন বরের নাম শুনেছো! এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো, নীলা? বর বানানোর ইচ্ছা আছে নাকি?’
নীলা মাথা তুলে অন্তির দিকে তাকায়-ই না লজ্জায়। অন্তি হতাশ চোখে তাকায়। নীলা দুম করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অন্তি কপাল চাপড়ালে অবনী হাসতে শুরু করে। অন্তি এক লাফে বোনের পাশে গিয়ে বিছানায় বসে বলে,

–‘তুই হাসছিস আপা? তোর ননদের মাথার তাঁর কা’টা নাকি? কে এমন অকারণে লজ্জা পায়?’
–‘কেউ কাউকে পছন্দ করলে তার কথা শুনে লজ্জা-ই পায়।’
–‘দু মিনিটে কেউ কাউকে কিভাবে পছন্দ করে? তবে ভালোই হয়েছে। দুই তাঁর কা’টাকে ভালোই মানাবে।’
অবনী হাসছে দেখে অন্তিও হাসতে শুরু করে। পরক্ষণেই অন্তি মন খারাপ করে বলে,
–‘আর ক’টা দিন থেকে যা না, আপা! তোকে ছাড়া অনেক একা লাগে। মনে হয় পৃথিবীর সব ভার আমার ওপর পরেছে। তুই থাকলে শান্তি লাগে।’
–‘তোর ত্যাড়া প্রতিবেশী আছে না! যখনই একা লাগবে তখনই তার সাথে ঝগড়া লাগায় দিবি।’
অন্তি মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। গাল ফুলিয়ে বলে,

–‘ঝগড়া করে কি লাভ? জিততে তো পারবো না।’
সে কথা শুনে অবনী আঁড়চোখে তার দিকে তাকায়। দু দিকে মাথা নাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চুল টেনে বলে,
–‘মন খারাপ করিস না। তাইমুর ভাইকে বলবো তোকেও যেনো একটু জিততে দেয়।’
অন্তি বালিশ ছুড়ে মারে। অবনী শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে রুমে আসে। অন্তি তখনও রুমেই আছে। অবনী শাড়ির আঁচলে পিন লাগিয়ে বলে,
–‘এখনও এখানে বসে আছিস যে!’
–‘তো কোথায় যাবো? একটা দেবর থাকলে নাহয় তার গলায় ঝুলে বসে থাকতাম। সেও তো নেই।’
অবনী শব্দ না করেই হাসতে থাকে৷ চুল বেঁধে চোখে কাজল দিতে দিতে বলে,
–‘দেবর নেই তবে একটা ভাই আছে। রাজি আছিস নাকি বল!’
অন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে,

–‘কে?’
অবনী হাসতে হাসতে জবাব দেয়,
–‘তাইমুর ভাই।’
–‘ছ্যাহ্! ওই ত্যাড়া লোককে বিয়ে করার চেয়ে আজীবন কুমারি থাকি শান্তির।’
বাহির থেকে রেহেনা বেগমের ডাক পরে। অবনী আর অন্তি একসাথেই বাহিরে আসে। রাতটা সবাইকে থেকে যেতে বললেও হানিফা বেগম মানা করেন। অন্যদিন সময় নিয়ে আসবেন বলে অবনীকে বলেন আসতে। অবনী নিজের বাবা-মায়ের দিকে একবার তাকায়। তাদের চোখ মুখ মলিন হয়ে আছে। মেয়েকে আবার বিদায় দেওয়ার মতো মুখ তাদের। অবনীও মলিন মুখে হেঁসে রুম থেকে ব্যাগ নিতে যায়৷ অন্তিও পিছে পিছে আসলে অবনী তাকে জড়িয়ে ধরে। অন্তি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,

–‘তোকে যেতে দিতে মন চাচ্ছে না।’
অবনী বোনকে ছাড়িয়ে মাথায় একটু চুমু দেয়। বোঝানোর মতো করে বলে,
–‘একা ভাববি না নিজেকে কখনো। আমরা সবাই আছি। তন্ময় তোর খারাপ অতীত তাই তুই ওকে যত দ্রুত ভুলে যাবি তত সুখে থাকবি। ঠিক আছে?’
অন্তি মাথা নাড়ায়। অবনী সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে যায়। আনোয়ার সাহেব নিজের রুমের জানালা থেকে মেয়ের যাওয়া দেখেন। মেয়ে দু’টো তার বড্ড আদরের। একটা এখন দুরে চলে গেছে আরেকজনও কবে দুরে চলে যাবে তা তিনি জানেনও না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে বসেন।
.
আজ সোমবার। তন্ময়ের বিয়ে। অন্তি না চাইতেও তার খারাপ লাগছে। নিজেকে এতো বুঝিয়েও লাভ তেমন একটা হয়নি। হাজার হলেও তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তো ছিলো। যেমনই থাকুক ছিলো তো! অন্তি সন্ধ্যার আগের সময়ে বাড়ি না গিয়ে লেকের পাড় বসে আছে। বাড়ি গেলে তার মা মুখ দেখেই বুঝে যাবে মেয়ের মন খারাপ৷ তা এড়াতেই সে এখানে বসে আছে। পানিতে একটার পর একটা ঢিল ছুড়ছে। এর মধ্যেই পিছন থেকে কাশির শব্দ পায়। অন্তির পিছু ফিরে দেখে তাইমুর দাঁড়িয়ে। অন্তির মলিন মুখ দেখে তাইমুর নরম স্বরেই বলে,
–‘ এখানে বসে আছেন কেনো? আঙ্কেল কল করেছিলো, চিন্তা করছে।’
অন্তি নিজের জায়গা থেকে উঠে যায়। ভদ্র মেয়ের মতো উঠে বাড়ির দিকে পা বাড়ালে তাইমুর নিজ থেকেই ইতস্তত করে বলে,
–‘গা..গাড়িতে বসেন। আমিও বাসায়-ই যাচ্ছি।’
অন্তি মাথা নাড়িয়ে চলে যেতে নিলেও আবার ফিরে তাকায়। তাইমুর প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। অন্তি সন্দিহান গলায় শুধায়,
–‘পরে আবার খোঁটা দিবেন না তো?’
তাইমুর দু দিকে মাথা নাড়ায়। অন্তিও ‘ঠিক আছে’ বলে গাড়িতে বসে পরে। তারও হাঁটতে ইচ্ছে করছে না। তাইমুর বড় বড় দু’টো শ্বাস নিয়ে গাড়িতে বসে পরে। সিটবেল্ট বেঁধে অন্তিকেও বলে বেঁধে নিতে। অন্তি বাহিরে তাকিয়ে বলে,

–‘লাগবে না। সামনেই তো। চলেন!’
–‘আপনাকে জিজ্ঞাসা করিনি, বলেছি। আর পাকামো না করে যা বলেছি তা করেন।’
অন্তি কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়। তাইমুর ঈশারায় বোঝায় বেল্ট লাগিয়ে নিতে। অন্তি জিদ করে লাগায় না। তাইমুর কপালে হাত দিয়ে দু আঙুল দিয়ে কপালে ডলতে থাকে। এরপর ঠান্ডা গলায় বলে,
–‘যা বলেছি তা করেন। নাহলে এক্ষুণি তুলে নিয়ে গিয়ে পানিতে চুবিয়ে আনবো। আর আপনি জানেন যে আমি যা বলি তা করিও।’
অন্তি রাগে কটমট করতে করতে সিট বেল্ট লাগায়। বিড়বিড় করে বলে,

–‘কিছু মানুষের জন্য তো শোক পালন করেও শান্তি নেই। অ’ভদ্র লোক।’
তাইমুর ঠোঁট নাড়ানো দেখেও কিছু বলে না। মনে মনে যে তাকেই বকছে তা সে জানে। তাই কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। বিল্ডিং এর সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করাতেই অন্তি নেমে যায়। বিল্ডিং এ ঢোকার আগেই তাইমুর বলে,
–‘১০ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে আসেন। শাড়ি পরবেন।’
অন্তি চট করে ফিরে তাকায়। না বুঝে বলে,
–‘কেনো?’
–‘তন্ময়ের বিয়েতে যাবো।’
অন্তি হা করে তাকায়। যতটুকু সে এগিয়েছিলো ততটুকুই আবার ফিরে আসে। ব্যস্ত গলায় বলে,
–‘আপনার সাথে আমার কিসের শত্রুতা বলেন তো!’
–‘বলতে গেলে রাত দিন পার হয়ে যাবে। আপাতত তন্ময় ভাইয়ের বিয়ের রোস্ট খেয়ে আসি তারপর সময় নিয়ে আপনাকে বলবো। ঠিক আছে? এখন যান।’

–‘আমি ওর বিয়েতে কেনো যাবো, তাইমুর ভাই?’
–‘কারণ সে আপনাকে বিট্রে করে, এমনকি ব্রেকআপ না করেই আরেকজনকে বিয়ে করতেছে। সে এতো শান্তিতে বিয়ে কিভাবে করতে পারে? আপনার উচিত না তাকে একটু সারপ্রাইজ দেওয়া? নাকি আপনাকে দিয়ে হবে না? ওহ সরি! আপনি তো আবার জান, প্রাণ, কলিজা, ফুসফুস সব দিয়েই তাকে ভালোবাসেন। থাক! তাহলে আর যেয়ে লাভ নাই। যান আপনি।’

অন্তি ফুঁসতে ফুঁসতে বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকে যায়। তাইমুর অন্তিকে ভালো মতোই চেনে। তাই গাড়িতে বসেই ফোন স্ক্রল করতে শুরু করে। অন্তি রুমে গিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে একটা শাড়ি বের করে পরে নেয়। শাড়ি পরাটা সে আর অবনী একসাথেই শিখেছিলো। তাই সমস্যা হয় না। গাঢ় খয়েরী একটা জর্জেট শাড়ি পরে পিনগুলো ভালোমতো লাগিয়ে নেয়। বেশি সময় নেই বলে চুলগুলো খোলা রেখে সিম্পল ভাবে ক্লিপ দিয়ে বেধে নেয়। এরপর ভারী মেকআপ না করে সিম্পল মেক আপ করে। যেটা শাড়ির সাথে মানায়। জুতো পরে হাতে ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে চিল্লিয়ে তার মা’কে ডাকে। রেহেনা বেগম রান্না করছিলেন। বের হয়ে এসে মেয়েকে এমন ভাবে সেজেগুজে বের হতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন,
–‘তুই কোথায় যাচ্ছিস? এতো দ্রুত রেডিও হয়ে গেলি?’
আনোয়ার সাহেব সোফাতেই বসে ছিলেন। মেয়েকে শুধালেন,
–‘কোথায় যাচ্ছো, মা?’
–‘আমার এক ফ্রেন্ডের ভাইয়ের বিয়ে আছে, আব্বু। না গেলে ও খুব রাগ করবে। তবে চিন্তা করো না। তাইমুর ভাই নিয়ে যাবে।’
–‘কিন্তু..’
অন্তি কিন্তু কিছু না শুনেই ছুটে বেড়িয়ে যায়। আনোয়ার সাহেব অন্তির রুমের ব্যালকনি থেকে দেখলেন সত্যিই তাইমুর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তেমন কিছু মনে করলেন না। তাইমুরকে বিশ্বাস করা যায়। এ তিনি জানেন এবং মানেনও। অন্তিকে ছুটে আসতে দেখে তাইমুর পলক না ফেলে তাকায়। অন্তি কাছে এসে দুম করে দরজা খুলে বসে বলে,

–‘চলেন!’
তাইমুর নিজেকে সামলে নেয়। খোঁচা মে’রে বলে,
–‘রেডি হতে বলেছিলাম ১০ মিনিটে, ৩০ মিনিট লাগিয়ে দিয়েছেন!’
–‘মেয়েদের রেডি হতে ২ ঘন্টার বেশি লাগে। সেখানে আমি ৩০ মিনিটে এসেছি৷ তাও আপনার ভাল্লাগতেছে না?’
–‘না। কারণ বিয়েটা আপনার এক্সের, আমার এক্সের না।’
–‘নিয়ে যেহেতু আপনিই যাচ্ছেন। তো আপনার এক্সই মনে করেন।’
তাইমুর চোখ মুখ কুঁচকে বলে,
–‘ছিহ্!’

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৬

অন্তি হেসে ওঠে। তাইমুর গাড়ি স্টার্ট দেয়। তার হাত সামান্য কাপছে। অন্তি বাহিরে তাকিয়ে আছে। তাইমুর আঁড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে। একসময় এই মেয়েটা তার হবে ভেবেছিলো সে। অথচ সময় মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায়!

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৮