পারমিতা পর্ব ৪৭

পারমিতা পর্ব ৪৭
Nabila Ahmed

–ফা*ক ইউ ফাহমিদা, ফা*ক ইউ।
রাগান্বিত আবরার নিজের রুমে প্রবেশ করতেই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।
র*ক্তাক্ত আবরারের চেহারা ভালো করে চেনাও যাচ্ছে না। এতো মার খাওয়ার পরও মুখ খুলেনি আবরার কিন্তু ফাহমিদার কথা উঠতেই যেন মাথা খারাপ হয়ে গেল। না চাইতেও সব বলে দিতে হয়েছে।
ফাহমিদা। মিতার বান্ধুবী। কী থেকে কী হয়ে গেল কিছুই মাথায় ঢুকছে না আবরারের। শুধু এইটুকু জানে, ফাহমিদার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে সেই চোখ তুলে নিবে আবরার।

ফ্ল্যাশব্যাক :
সবাইকে না বলে মিতা যেন কোথায় চলে গেছে আজ ১৫ দিন। বাড়ির সবাই বিশেষ করে অরিয়ন পাগলের মতো খুঁজেও মিতার কোনো খোঁজ পায়নি। হাবিব চৌধুরী তো দিন-রাত এক করে দিচ্ছে শুধুমাত্র মিতার সন্ধান পাওয়ার জন্য কিন্তু মনে হচ্ছে ভাগ্যও চায় না মিতাকে কেউ খুঁজে পাক, তাই তো সবার চেষ্টাই বৃথা যাচ্ছে।
আবরার নিজের কেবিনে বসে ফাইল চেক করতে ব্যস্ত। অরিয়ন মিতাকে খুঁজতে এতোটাই মরিয়া হয়ে পড়েছে যে,অফিসে টাইম দেওয়া অরিয়নের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই হাবিব চৌধুরী আবরারকে অফিসে বসিয়েছে।
যদিও আবরারের মন চাচ্ছে না এখানে থাকতে, ইচ্ছে করছে নিজের বাবা আর ভাইয়ের সাথে মিতাকে খুঁজতে কিন্তু হাবিব চৌধুরী আবরারের কোনো কথা শুনতেই চাইলেন না। বাধ্য হয়েই কাজ করছে আবরার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–ফাইলটা আমাকে গতকাল চেক করে দেওয়ার কথা ছিলো আর আপনারা, আপনারা আজকেও পারেননি চেক করে দিতে!
সামনে বসে থাকা দুজন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলে আবরার।
–সরি স্যার। এরকম আর হবেনা।
দুজনের মধ্যে একজন বলে উঠে।
–ভাইয়া আর বাবা না থাকার ভালোই সুযোগ নিচ্ছেন দেখছি। নেক্সট টাইম থেকে কাজে অবহেলা করলে চাকরি হারাতে হবে বলে দিলাম।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে কাচুমাচু করতে থাকে তারা। কিছুটা ভয় পেয়েছে বলেও মনে হলো।
–সরি স্যার। আর হবে না। সন্ধ্যার আগেই ফাইল দিয়ে যাবো।
সামনে বসা লোকটি বলে।
–হুম। এখন যেতে পারেন।

কথাটা বলেই নিজের ফাইলের দিকে মন দেয় আবরার।
লোক দুজন একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মোবাইলে রিং বাজার শব্দ শুনতেই ফাইল থেকে মাথা তুলে মোবাইল হাতে নেয় আবরার। স্ক্রিনে চোখ যেতেই দেখতে পায় আননোন নাম্বার। একবার ইচ্ছে করলো রিসিভ না করতে, এরপর কী ভেবে যেন কল রিসিভ করে আবরার।
–হ্যালো?
বলে আবরার।
–আসসালামু আলাইকুম।
অপর পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ বলে উঠে।
–ওয়ালাইকুম আসসালাম। Who is this?
কন্ঠ শুনে চিনতে না পেরে প্রশ্ন করে আবরার।
–আমি ফাহমিদা।
বলে মেয়েটি।
–কোন মিদা?
ভ্রু কুঁচকে বলে আবরার।
–ফাহমিদা।

আবারও শান্ত গলায় বলে মেয়েটি।
–এই নামের কাউকে আমি চিনিনা। রঙ নাম্বার।
বলেই কল কেটে দিতে নেয় আবরার।
–ওয়েট। প্লিজ কল কাটবেন না।
অনুরোধের সুরে বলে ফাহমিদা।
আবরার কিছু বললো না, কানের কাছে মোবাইল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো মেয়েটির কথা বলার।
–আপনি আরিয়ান ভাইয়া না?
প্রশ্ন করে মেয়েটি।
–হুম।
সায় দেয় আবরার।
–আমি পারমিতার বান্ধুবী।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে উঠে মেয়েটি। মেয়েটির কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে একটু একটু ভয় পাচ্ছে।
–ওহ, তো সেটা আগে বলবে না? এখন ই কে না কে ভেবে কেটে দিতাম কল।
একটু রিলাক্স হয়ে বলে আবরার। মিতার বান্ধুবী আর বয়সে ছোট হবে ভেবেই তুমি করে বলে আবরার।
–তো কী জন্য কল করেছে? আসলে মিতা কিছুদিনের জন্য বাইরে বেড়াতে গিয়েছে তাই তোমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। তোমার কথা আমি ওকে বলবো। টেনশন নিও না তুমি।
একটু নর্মাল ভাবেই বলার চেষ্টা করে আবরার। মিতার পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা কাউকে জানাতে না করেছে হাবিব চৌধুরী।

–আপনার থেকে একটু হেল্প লাগবে,ভাইয়া।
বলে ফাহমিদা।
ফাহমিদার কথা শুনে একটু ভ্রু কুঁচকায় আবরার। কিসের হেল্প লাগতে পাবে বুঝতে পারছে না।
–কী হেল্প? বিনা সংকোচে বলে ফেলতে পারো।
সুন্দরভাবেই বলে আবরার।
–মিতার ইন্টারমিডিয়েটের রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটা লাগবে আমার। যদি একটু ম্যানেজ করে দিতেন।
ধীরে ধীরে বলে ফাহমিদা।
–মিতার রেজিষ্ট্রেশন কার্ড তোমার কেন লাগবে?
প্রশ্ন করে আবরার।
–আসলে…আসলে…
কাঁচুমাচু করতে থাকলো ফাহমিদা।
–আসলে কী? আর কথা স্পষ্ট ভাবে বলো। এভাবে তোতলাচ্ছো কেন? তোতলা তুমি?
একটু বিরক্ত হয়ে বলে আবরার।
–আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন?
কন্ঠস্বর একটু উঁচু করে বলে ফাহমিদা। মনে হচ্ছে রেগে যাচ্ছে।

–কারণ আমার এসব আসলে…আসলে শোনার মতো টাইম নেই। যা বলার দ্রুত বলো আর না হয় রাখলাম।
ফাইলের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলে আবরার।
–না রাখবেন না। আসলে কার্ডটা লাগবে মিতার এডমিট কার্ড নেওয়ার জন্য।
এক নিঃশ্বাসে বলে ফাহমিদা।
–কিসের এডমিট কার্ড?
প্রশ্ন করে আবরার।
–এইচ.এসসি পরীক্ষার।
ফাহমিদার কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আবরার। সব কথা পানির মতো ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে আবরারের কাছে।
–তুমি জানো মিতা কোথায়, তাই না?
বলে উঠে আবরার।
ফাহমিদা কিছু বললো না। চুপ করেই থাকে। মাঝমধ্যে চুপ থাকা সে সম্মতির লক্ষণ তা ঠিকি বুঝতে পারছে আবরার।
–কোথায় আছে মিতা? আর তুমি কীভাবে জানলে?
–মিতা বলেছে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে। মিতাই নাম্বার দিয়েছে।
বলে ফাহমিদা।
ফোনে কথা বলার পর ঠিক করা হয় তারা দেখা করবে। দেখা করে কার্ড নিয়ে যাবে ফাহমিদা আর আবরারও তার প্রশ্নের উত্তর পাবে।

বর্তমান।
আবরার থেকে মিতার ঠিকানা জানতে পারেনি কেউ। বিগত ৬ মাস আবরারের সাথে যোগাযোগ রেখেছে মিতা। শুধু এতোটুকু জেনেছে যে, মিতা ঢাকাতে আছে। কার সাথে আছে? অরিয়ন জানেনা। ঢাকা কী জন্য আছে? তাও জানেনা। অবশেষে আবরারের গার্লফ্রেন্ড এর ভয় দেখিয়ে মিতার সাথে দেখা করার সময় ঠিক করা হয়েছে। মিতা জানে আগামীকাল ঢাকা যাবে আবরার, দেখা করবে মিতার সাথে। যেহেতু সব সময় মেসেজের মাধ্যমে কথা হয়েছে তাই মিতাও সন্দেহ করতে পারেনি কিছু।
মিতার সাথে আগামীকাল সকাল ১০ টায় পার্কে দেখা করার সময় ঠিক হয়েছে কিন্তু অরিয়ন আজ রাতের ফ্লাইটে ঢাকা চলে এসেছে। অন্য কোথাও না গিয়ে সরাসরি হোটেলে রুম বুক করেছে অরিয়ন। হোটেল রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে অরিয়ন। বাইরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে। আজ আকাশে চাঁদের কোনো চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না, মনে হচ্ছে অরিয়নের মনের মতো আকাশটাও আজ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।
মিতার খবর জানতে পেরে তো খুশি হওয়ার কথা ছিলো অরিয়নের কিন্তু খুশি হতে পারেনি। ৬ টা মাস কী পরিমান যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে অরিয়নকে আর মিতা? মিতা আবরারের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। কেন নিজের স্বামীকে ছেড়ে আবরারের সাথে যোগাযোগ রাখলো মিতা? কেনই বা পালিয়ে গেল মিতা? সব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবে না অরিয়ন।

রাত ১২ টা।
বিছানায় শুয়ে আছে অরিয়ন। যেই পোশাক পরে চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলো সেই পোশাক এখনো পরা। পায়ের জুতোটাও খোলার প্রয়োজন মনে করেনি। এক দৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন। আজকের রাতটা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম মনে হচ্ছে অরিয়নের কাছে। মাথার মধ্যে এতো এতো প্রশ্ন, এতো এতো চিন্তা দুচোখ এক করতে দিচ্ছে না অরিয়নকে।
–আমাকে দেখে কী খুশি হবি তুই? সব অভিমান ভুলে কী জড়িয়ে ধরবি?
নিজে নিজে বলে উঠে অরিয়ন।
–তোকে দেখলে কী করবো আমি জানিনা। শুধু জানি সব অশান্তির, অস্বস্তির অবশান ঘটবে। আমার পরী, আমার শান্তি আমার কাছে ফিরে আসবে।
আবারও বলে উঠে অরিয়ন।
–আমার অভিমান দেখে কিন্তু রাগ করিস না তুই। যাই বলি আমি যে, তোকে কখনো কষ্ট দিতে পারবো না। তোকে দেখতেই সব রাগ অভিমান ভুলে যাব আমি। তুই ও কী যাবি?
ক্ষণিকের জন্যও যেন সিলিং থেকে চোখ সরছে না অরিয়নের। যেন উপরের দিকেই মিতাকে দেখতে পারছে অরিয়ন।
–আমার পরী।
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে অরিয়ন।

গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারেনি অরিয়ন। একটু পর পর রুমের মধ্যে অস্থিরতা করতে করতে শুধু হাটাহাটি করেছে আর সময় দেখেছে। কখম ভোরের আলো ফুঁটবে সেই অপেক্ষা করেছে শুধু।
ভোরের আলো ফুঁটতেই ফ্রেশ হয়ে নেয় অরিয়ন। পরণের কাপড় চেঞ্জ করে টি শার্ট আর প্যান্ট পরে নেয়। একদিকে মিতাকে দেখলে কি করবে তা যেমন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, ঠিক তেমনি মিতার সামনে কীভাবে যাবে বুঝতে পারছে না। তাই নিজেকে পরিপাটি করে নিয়েছে অরিয়ন। চুল আচরিয়ে ৯ টা করে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ে।
গাড়ি দেখে যদি মিতার সন্দেহ হয় তাই অরিয়ন নিজের গাড়ি আনেনি। উবারে কার ঠিক করেছে। রাতে ভালো ভাবে বৃষ্টি হলেও এখন আবার সেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি পড়া শুরু করলেই বুকের মধ্যে চাপ দিয়ে উঠছে অরিয়নের। বৃষ্টি দেখে যদি মিতা না আসলো তাহলে? এই চিন্তা যেন মাথা থেকে যাচ্ছেই না অরিয়নের।

–প্লিজ বন্ধ হ।
বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিরবির করে বলে অরিয়ন।
বৃষ্টি যেন অরিয়নের কথা বুঝতে পারলো। নিজের গতি কমানোর জায়গায় উলটো বাড়িয়ে দিয়েছে। টিপটিপ বৃষ্টি এখন ঝুম বৃষ্টিতে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টির গতি দেখে অরিয়ন হতাশ হয়েই গাড়ির সাথে হেলান দেয়। চোখ বন্ধ করে রাখে। ড্রাইভাই এই ওয়েদার আরও মনোরম করার জন্য গাড়িতে গান চালু করে দিয়েছে।
Yeh Mausam KI Baarish
Yeh Baarish Ka Paani
Yeh Paani Ki Boondein
Tujhe Hi Toh Dhundein
Yeh Milne Ki Khwahish
Yeh Khwahish purani
Ho Puri Tujhi se Meri Yeh Kaahani

জ্যামে বসে গান শুনতে ব্যস্ত ড্রাইভার। ইচ্ছে না করলেও সব গানই শুনে যাচ্ছে অরিয়ন। বৃষ্টির দিনে ঢাকায় জ্যামের অবস্থা যে কী তা আর না বললেই হয়। পার্কের ঠিকানা অনুযায়ী ১০ টায় থাকার কথা অরিয়নের। এখন ১০ টা ০৫। গাড়ি যেন নিজের জায়গা থেকে এক মিনিয়ের জন্যও নড়ছে না।
–আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন।
বিরক্ত হয়ে বলে অরিয়ন।
–এখানেই নেমে যাবেন? সামনে নামাই দেই? বৃষ্টিতে তো একদম ভিজে যাবেন ভাই।
বলে ড্রাইভার।
–না এখানেই দেন। সামনের অপেক্ষা করলে দেরি হয়ে যাবে। ভাড়াটা রাখুন।
৫০০ টাকার নোট বের করে ড্রাইভারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন।
–সকাল সকাল এতো বড় নোট। ভাংতি নাই ভাই?
ড্রাইভারের মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল কথাটা বলতেই। তার কাছে ভাংতি নেই বুঝতে পারলো অরিয়ন।
–পুরোটাই রেখে দিন।
–কিন্তু ভা…

ড্রাইভারের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি থেকে নেমে যায় অরিয়ন। হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ম্যাপ দেখে নেয় একবার। এখান থেকে পার্কের দূরত্ব পায়ে হেটে ৩০ মিনিট দেখাচ্ছে। যদি ভালো ভাবে দৌড়ায় তাহলে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে অরিয়ন। আর অপেক্ষা না করে মোবাইল প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়েই দৌড়াতে শুরু করে অরিয়ন।
আশেপাশের পথচারী আর গাড়ির মধ্যে বসে থাকা লোকদের কাছে ব্যাপাটা মজার লাগছে। তারা আগ্রহ নিয়ে রাস্তায় দৌড়াতে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কোনো একটা প্রতিযোগিতায় জিতার জন্য দৌড়াচ্ছে আর রাস্তার সবাই দর্শক।
পার্কের সামনে আসতে আসতে অরিয়ন পুরো ভিজে গেছে। গেটের সামনে এসে দাঁড়াতেই হাটুতে হাত রেখে বড় বড় করে নিশ্বাস নিতে থাকে। দৌড়ানোর কারণে গলা শুকিয়ে গেছে অরিয়নের। মোবাইল বের করতেই দেখতে পায় ১০ টা ২১ বাজে।

–ফা*ক।
বলেই তাড়াতাড়ি করে পার্কে প্রবেশ করে অরিয়ন।
–চলে যাস না, চলে যাস না, চলে যাস না।
পার্কের এখানে সেখানে খুজতে খুজতে বিরবির করে একা একা বলতে থাকে অরিয়ন।
পার্কের কোথাও দেখা যাচ্ছে না মিতাকে। যতোই ভিতরে প্রবেশ করছে ততোই যেন মন ভেঙ্গে যাচ্ছে অরিয়নের। বৃষ্টির কারণ পার্কে দারোয়ান ছাড়া আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। মিতাকেও কোথাও দেখতে পারছে না অরিয়ন।
–নো নো নো নো, এতো কাছে এসেও তুই যেতে পারিস না।
ফ্রাসট্রেডেড অরিয়ন বলতে থাকে।
পার্কের শেষ দিকে যেতেই যেন আশার আলো জাগলো অরিয়নের মনে। দূর থেকে লাল রঙের একটা ছাতা দেখতে পায় অরিয়ন। বৃষ্টিতে ভিজার কারণে এমনিতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে অরিয়নের,এরমধ্যে কেউ এখনো আছে পার্কে ভাবতেই যেন হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছে অরিয়নের। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে ছাতা থাকা ব্যক্তিটির দিকে।

একটু কাছাকাছি যেতেই অরিয়ন লক্ষ্য করে, ছাতার জন্য ব্যক্তিটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে পোশাক দেখে বুঝা যাচ্ছে মেয়ে। এতে যেন অরিয়নের হার্টবিট আরও বেড়ে গেল। আবারও এগিয়ে যাওয়া শুরু করে অরিয়ন।
মেয়েটি নিজের দু হাত দিয়ে শক্ত করে ছাতা ধরে রেখেছে। সিমেন্টের সীটের উপর বসে আছে সে। নোংরা পানি দিয়ে অনবরত পা ভেজাচ্ছে। আশেপাশে যে কেউ এগিয়ে এসেছে সে দিকে খেয়াল নেই তাই। সামনের দিকে এগোতে থাকা অরিয়ন সব কিছুই লক্ষ্য করছে। মেয়েটির থেকে ৩/৪ হাত দূরে এসে দাঁড়িয়ে যায় অরিয়ন।
মেয়েটিও তার পা নাড়ানো বন্ধ করে দেয়। মনে হচ্ছে এতোক্ষণে খেয়াল হয়েছে কেউ এগিয়ে এসেছে।
–পরী?
উৎসুক অরিয়ন আলতো করে ডাক দেয়।

পারমিতা পর্ব ৪৬

পরী নিজের নাম শুনতেই লাফিয়ে উঠে বসা থেকে। ছাতা সরাতেই দেখতে পায় দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন।
ছাতা সরাতেই দেখতে পায় পরীকে। পরীকে দেখা মাত্রই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অরিয়ন। এই দীর্ঘশ্বাস দেখে মনে হচ্ছে নিজে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে রেখেছিলো এতোক্ষণ। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিতা যে স্বপ্ন নয় বাস্তব তা বিশ্বাসই করতে পারছে না অরিয়ন। মিতার ঠোঁটে থাকা আলতো হাসিটা অরিয়নকে দেখতেই যেন সরে গেল।
–রিয়ন!!!!!!
নিজের অজান্তেই মিতার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।

পারমিতা পর্ব ৪৮