মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৯
রায়েনা হায়াত
অবনী নিজের রুমে বসেছিলো। তাদের বিয়ের বয়স এখন দেড় মাস। অর্থাৎ মাঝে কেটেছে আরও এক মাস। অবনীর মনটা শুধু বাবা-মা’কে দেখতে চাইছে। মন খারাপ করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলো সে। নীলা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে নক করে। অবনী তাকাতেই বলে,
–‘আসবো, ভাবী?’
অবনী ব্যস্ত গলায় বলে,
–‘আসো। অনুমতি নিচ্ছো কেনো?’
নীলার মন খারাপ। মাথা নিচু করে সে এসে অবনীর সামনে বসে। অবনী তার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নীলার মুখ দেখেই সে বুঝতে পেরেছে তার মন খারাপ। নীলা মাথা নিচু রেখেই বলে,
–‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, ভাবী? কিছু মনে করবা না তো?’
–‘কি মনে করবো! বলো না কি বলবে!’
নীলা কতক্ষণ থম মে’রে বসে থাকে। এরপর চোখ তুলে বলে,
–‘তাইমুর আহসান কি সত্যিই কারো সাথে কমিটেড?’
তাইমুরের নাম শুনেই অবনী ‘থ’ খেয়ে যায়। ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। নীলাও উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। অবনী নীলার মুখ দেখেই বুঝে যায় গন্ডগোল এবার বাধবে। সে একটা ফাকা ঢোক গিলে বলে,
–‘এ কথা কেনো জিজ্ঞাসা করছো, নীলা? আর তোমাকে এটা কে বললো যে তাইমুর ভাই কমিটেড!’
–‘উনিই বলেছেন।’
এ পর্যায়ে অবনী ঝটকা-ই খেয়েছে। মুখ থেকে আপনাআপনি বের হয়ে যায়,
–‘কখন? কবে? কিভাবে?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নীলা আবার মাথা নিচু করে। গতকাল সে হসপিটালে গিয়েছিলো। যেখানে তাইমুর আছে সেখানেই। অনেক সাহস নিয়ে তারপর যেতে পেরেছিলো। মনের মধ্যে চলছিলো নানান ভয়। যদি তাইমুর রেগে যায়? যদি হৃদানকে তার নামে বিচার দেয়? তখন? তবুও সে সাহস করে গিয়েছে। রোগী বেশি ছিলো না। তাই তারও বেশিক্ষণ বসে থাকতে হয়নি। তাইমুরের রুমে ঢুকতেই তাইমুর তার দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করে,
–‘কি সমস্যা আপনার? বলুন।’
নীলা চুপ করে আছে। মিনিট দুয়েক চুপ থাকলে তাইমুর তার দিকে মাথা তুলে তাকায়। নীলাকে সে চিনতে পারেনি। হয়তো অন্তিদের বাসায় থাকাকালীন সেভাবে খেয়াল করেনি নয়তো এক মাস পর হওয়ায় সে মুখ ভুলে গেছে। তাইমুর আবার একই কথা বলে। নীলা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ঢোক গিলে। তাইমুর তার দিকে তাকিয়ে আছে। হাব ভাব ভালো না দেখে তাইমুর পানি এগিয়ে দেয়। এরপর সহজ গলায় বলে,
–‘পেশেন্ট নন আপনি, তাই তো?’
নীলা ঢকঢক করে পানি খেয়ে উপর-নীচ মাথা নাড়ায়। তাইমুর রাগ নিয়ন্ত্রণ করে শ্বাস ফেলে জোড়ে। তারপর বলে,
–‘তাহলে কেনো এসেছেন?’
নীলা আমতা আমতা করে বলে,
–‘আসলে..আমি..’
আর কিছু বলতে পারে না। এভাবে সরাসরি কেউ কিভাবে বলবে সে তাকে পছন করে? আর এটা না বললে বলবেও বা কি? তাইমুর তার থেমে যাওয়া দেখে বলে,
–‘কোনো সাহায্য লাগবে?’
নীলা দু’দিকে মাথা নাড়ায়। তাইমুর নীলার ঘাম দেখেই বুঝতে পারছে সে কেনো এসেছে! তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে প্রেসক্রিপশনে একটা ভিটামিনের ঔষধ লিখে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
–‘আমি কমিটেড। আসুন এখন।’
নীলা থ মে’রে যায়। হা করে তাইমুরের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ তাইমুর ঈশারায় আবার যেতে বলে। নীলা দাঁড়ায় না। লজ্জায় বের হয়ে যায়। কেবিন থেকে বের হয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে।
অবনী তাকে ডাকে। নীলার ধ্যান ভাঙে। অবনী আবারও জিজ্ঞাসা করলে কালকের ঘটনা খুলে বলে। অবনী নীলার চোখে স্পষ্ট দেখতে পায় তাইমুরের জন্য অনুভূতি। অবনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–‘তুমি পছন্দ করো তাইমুর ভাইকে?’
নীলা কতক্ষণ চুপ থেকে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ ‘হ্যাঁ’। অবনী আবার জিজ্ঞাসা করে,
–‘সেদিন আমাদের বাসায় দেখার পর থেকেই এসব?’
–‘না, ভাবী। আমি উনাকে আগেও দেখেছি। একদিন বিকালে ফুল কিনতে গিয়েছিলাম। উনিও এসেছিলেন। সেদিন প্রথম উনাকে দেখেছি, ফুলের প্রতি উনার যত্ন, উনার কথা বলার ধরণ, পাশে মেয়ে থাকা সত্বেও একবারও ফিরে না তাকানো দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এত লয়্যাল মানে নিশ্চয়ই সে ম্যারিড অথবা রিলেশনশিপে আছেই। কিন্তু তোমাদের বাড়িতে জেনেছিলাম উনি সিঙ্গেল।’
এরপর থেমে আবার বলে,
–‘ গত এক মাস আমি প্রায়-ই উনার হসপিটালের সামনে যেতাম। উনাকে..দেখতাম।’
অবনী কি বলবে নিজেও বোঝে না। নীলা না বুঝেই এমন একজনকে মন দিয়ে বসে আছে যে কিনা তার ৫ টা বছর অন্য এক রমনীকে দিয়ে বসে আছে আগেই। কিভাবে বলবে সে? কিভাবে বোঝাবে? তবুও সে মুখ খোলে। নীলার হাত দুটো ধরে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলে,
–‘নীলা, আমি কখনোই তোমার খারাপ চাইবো না। তুমিও আমার বোন-ই। কিন্তু..’
নীলা তাকিয়েছে তার দিকে। অবনীর অস্বস্তি হয়। তবুও কোনোমতে বলে,
–‘তাইমুর ভাই অন্তিকে পছন্দ করে। আজ থেকে নয়। ৫ বছর আগে থেকে।’
নীলার হাতটা আলগা হয়ে যায়। অবনীর চোখের দিকে চেয়ে থাকে থমকে। অবনী চোখ নামিয়ে নেয়। পুরোটা না বললেও অর্ধেকটা বলে। নীলা বোঝে অন্তি আর তাইমুরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তি হয়তো জানেও না তাইমুর তাকে পছন্দ করে। তার চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। অবনী তা ঠিকই বোঝে। নীলা আলগোছে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে যায়। অবনী হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। নীলা আদৌও বুঝবে? নাকি পাগলামি করবে? এই নতুন ঘটনা তাদের সম্পর্ক কোথায় নিয়ে যাবে! পাশ থেকে ফোন তুলে নিয়ে প্রথমে কল দেয় অন্তিকে। অন্তি কল ধরতেই অবনী বলে,
–‘ফ্রি আছিস?’
–‘হ্যাঁ, বল।’
অবনী চুপ আছে। তা দেখে অন্তি একবার কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখে নেয় অবনী কল কেটে দিয়েছে কি না! কলে আছে তবুও চুপ দেখে অন্তি নিজ থেকেই জিজ্ঞাসা করে,
–‘কোনো সমস্যা হইছে, আপু? চুপ করে আছিস কেনো?’
অবনী শ্বাস আটকে একদমে বলে দেয়,
–‘নীলা তাইমুর ভাইকে পছন্দ করে। ও আমাকে কেবল বলে গেলো।’
কথাটা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্তি চুপ থাকে। এরপর হেসে উঠে বলে,
–‘এ তো সুখবর রে! অবশেষে ত্যাড়া ভাইকে কেউ পছন্দ করেছে। বিয়ে কবে দিচ্ছিস তাই বল!’
অবনী অবাক হয়। অন্তির কন্ঠের চঞ্চলতা দেখে সে বোঝে না অন্তির মনের খবর। তাই আবার বলে,
–‘তুই খুশি হয়েছিস?’
–‘হ্যাঁ। এটা আবার কেউ জিজ্ঞাসা করে?’
অবনী কল কেটে দেয়। অন্তি ঠোঁট উল্টে সেদিকে তাকিয়ে বজর সরিয়ে সামনে তাকায়। বিষণ্ন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে অতীত। যেদিন তাইমুর হারিয়ে গেছিলো তার আগের দিন তাইমুর এসেছিলো তাদের বাড়িতে। সবাই মিলে একসাথে আড্ডায় বসেছিলো ছাদে। তাইমুর তাকে জ্বালাচ্ছিলো। এই নিয়েই সেও ক্ষে’পে আছে। তাইমুর ছাদ থেকেই একটা ফুল ছিঁড়ে এনে অন্তির দিকে দিয়ে বলে,
–‘রাগ করো না, অন্তিকা। নাও ফুল নাও!’
অন্তি ফুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘চু’রির ফুল?’
–‘আরে এটাকে চু’রি বলে না। গাছে ছিলো শুধু না বলে নিয়ে আসছি। নাও তো!’
অবনী আর সায়মন তাইমুরের কথা শুনে হাসতে শুরু করেছে। সায়মন তো তাইমুরের পিঠে একটা বসিয়েও দিয়েছে। এমন লজিক দেওয়ার জন্য। অন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে,
–‘চু’রি করেননি, না বলে নিয়েছেন শুধু! তাই তো?’
তাইমুর উপর-নীচ মাথা নাড়ায়। অন্তি দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
–‘অসম্ভব! এ কেমন পাগল লোক!’
–‘তোমার জন্যই তো পাগল।’
অন্তি টান দিয়ে হাত থেকে ফুল নিয়ে পাশে রেখে কটমট করে তাকায়। ফুলটা অবশ্য গোলাপ-ই ছিলো। সবাই যখন আড্ডায় ব্যস্ত অন্তি তখন আঁড়চোখে ফুলটা দেখে। তাইমুরের মতো মানুষকে অপছন্দ করার কোনো যুক্তিই নেই। বরং পছন্দ করার জন্য হাজারটা কারণ রয়েছে। অন্তি মুখে হাত চেপে মুচকি হাসে। তাইমুরের দিকে তাকিয়ে দেখে সে হাসি মুখে গল্পে মেতে আছে। অন্তি জানে না তাইমুর যা করে তা আসলে বাস্তব নাকি শুধুই ফ্লার্টিং শুধু জানে সে যা করে তা অন্তির ভালো লাগে। তাইমুরকে হাসতে দেখলে অন্তির অদ্ভুত আনন্দ হয়। অন্তির ভাবনার মাঝেই তাইমুর অন্তির দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘অন্তিকা, গান গাইবে?’
অন্তি দ্রুত দু’দিকে মাথা নাড়ায়। কিন্তু তারা শোনে না। জোড় করে গান গাইতে। অন্তি এক পলক তাইমুরের দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া শুরু করে,
–‘সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখেছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেনো ভোলে না মোরে
সুখে থেকো ভালো থেকো
মনে রেখ এ আমারে।’
পুরো গান গাওয়ার পর যখন সে থেমেছিলো তখন তাইমুর মনোমুগ্ধের মতো বলেছিলো,
–‘মনে রেখ এ আমারে।’
অন্তি চমকে তার দিকে তাকায়। তাইমুরের চোখে স্পষ্ট কিছু সে টের পেয়েছিলো। সেদিনই ছিলো তাদের শেষ দেখা, শেষ কথা। এরপর হঠাৎ করে কোথায় সে চলে গেছিলো অন্তি জানে না। সায়মনকে সে খোঁজার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু সায়মনকেও আর দেখেনি সে। অন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে গিয়ে ড্রয়ার থেকে ডায়েরী বের করে। ডায়েরীটা বেশ পুরোনো। তবুও অন্তি যত্ন করে রেখেছে। ডায়েরীর পৃষ্ঠা উল্টে সেখানকার শুকিয়ে যাওয়া ফুলটা দেখে। এটা সেই ফুল যা তাইমুর তাকে দিয়েছিলো। অন্তি হেসে বলে,
–‘আপনি অতীত, আর অতীতেই আটকে আছেন। বাস্তবতা আপনি জানেন না। আচ্ছা, আপনি কি আমাকে ঘৃণা করেন, তাইমুর ভাই?’
তাইমুরের জ্বর হয়েছে। কিভাবে যেনো ঠান্ডা লাগিয়েছে সে! হসপিটালে আজ ভীড় ছিলো বলেই সে হসপিটালে গিয়েছিলো। কিন্তু জ্বরের কারণে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি। বের হয়ে ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে বাসায় এসেছে। অন্তি তাইমুরকে বাসায় ঢুকতে দেখেছে। আজ তার টিউশনি ছিলো না তাই বাসায়-ই ছিলো সে। তাইমুরকে এভাবে ঢুলতে ঢুলতে বাসায় ঢুকতে দেখে ফোনটা হাতে নেয় সে। কিছু না ভেবেই কল দেয় তাইমুরের ফোনে। প্রথমবার কল রিসিভ হয় না। অন্তির একটু চিন্তা হয়। তবে সে আবার কল দেবার পূর্বেই তাইমুর কল দেয়। অন্তি কল তুলে বলে,
–‘কিছু খেয়ে এসেছেন নাকি? এভাবে ঢুলছিলেন কেনো?’
তাইমুরের কন্ঠে আগের তেজটা নেই। নিভু নিভু ভাবে সে বলে,
–‘আপনাকে কেনো বলবো?’
অন্তি বোঝে তাইমুরের কন্ঠের পরিবর্তন। সে একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার ফোন কানে নেয়। বলে,
–‘ঠিক আছেন? আপনি কি অসুস্থ?’
তাইমুর জবাব দেয় না। সময় নিয়ে বলে,
–‘না। কল কাটেন!’
অন্তি কাটে না। তাইমুর ফোন রেখে কাজের খালাকে ডাকে। জোড় গলায় বলে,
–‘খালা, একটু পানি দিয়েন প্লিজ!’
খালা পানি নিয়ে আসে। অন্তি তখনও কলে আছে। খালা তাইমুরের অবস্থা দেখে বলে,
–‘বাবা, আপনার তো অবস্থা ভালা দেখা যায় না। আমি কি আপনের আম্মারে ফোন দিমু?’
–‘লাগবে না, খালা। ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করবেন না।’
খালা তবুও চিন্তিত নজরে তাকিয়ে থাকলেন। ছেলেটা অন্যদের মতো না। তাকে বেশ সম্মান দিয়ে কথা বলে। এজন্যই ছেলেটাও তার বেশ প্রিয়। তাই তাকে অসুস্থ দেখে তার বেশ খারাপ লাগে। অন্তি কল কেটে দিয়ে ওড়না ভালো মতো মাথায় দিয়ে রুম থেকে বের হয়। রেহেনা বেগমকে জোড়ে ডেকে বলে,
–‘আম্মু, আমি একটু আসছি।’
রেহেনা বেগম চেচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
–‘কোথায় যাচ্ছিস?’
–‘আসছি।’
বলেই অন্তি চলে যায়। সোজা তাইমুরের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজায়। দরজা খোলে খালা। অন্তিকে সে চেনে। মাঝে মাঝেই দেখা হয় তার সাথে। অন্তিকে দেখে সে জিজ্ঞাসা করে,
–‘আরে মা, আপনে এইহানে?’
–‘তাইমুর ভাই কোথায়, খালা?’
–‘ভেতরে।’
অন্তি তাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে যায়। তবে তাইমুরের কাছে যাওয়ার আগে বলে যায়,
–‘আপনি চলে যাইয়েন না, খালা।’
খালা মাথা নাড়ায়। অন্তি তাইমুরের কাছে গিয়ে দেখে সে মাথা চেপে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। অন্তি গলা পরিষ্কার করে বলে,
–‘কি হয়েছে?’
তাইমুর অন্তির কন্ঠ শুনে চমকে ওঠে। হঠাৎ অন্তি কোথা থেকে আসবে ভেবে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়! জ্বরের ঘোরে সে কি হ্যালুসিনেট করছে? অন্তি আবার তাইমুরকে ডাকে। তাইমুর নিজের মতো চোখ বন্ধ করে বলে,
–‘চলে যান।’
অন্তি থতমত খায়। কোনো কথা নেই কিছু নেই সোজা বলে ‘চলে যান’! এটা আবার কি? অন্তি এগিয়ে তাইমুরের কপালে হাত রাখে। জ্বরের মাত্রা অনেক বেশিই। তাইমুর চোখ মেলে তার চোখের দিকে তাকায়। জ্বরের কারণে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে খালাকে ডাকে। খালা আসলে বলে,
–‘ঔষধ খেয়েছে, খালা?’
–‘মনে অয় খায়সে।’
–‘আচ্ছা একটু পানি এনে দিবেন ওয়াশরুম থেকে? মাথায় পানি দিলে জ্বরটা সেরে যাবে দ্রুত।’
তাইমুর কিছু বলতে চাচ্ছিলো। অন্তি চোখ গরম করে থামিয়ে দেয়। খালা ওয়াশরুমে গেলে সে নিচু স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
–‘কোনো কথা বলবেন না। এখানে আপনাকে দেখার কেউ নাই তাই চুপচাপ শুয়ে থাকেন।’
–‘আপনার কোনো সাহায্য লাগবে না।’
কথাটায় অন্তির একটু খারাপ লাগে। তবুও চুপ থাকে। খালা পানি আনলে তাইমুরকে ঘুরে শুতে বলে। তাইমুর নিভু নিভু চোখে দেখে অন্তির মুখটা মলিন। তর্ক করতে আর ইচ্ছে করে না। চুপচাপ ঘুরে যায়। অন্তি মাথায় পানি ঢালে বেশ অনেকক্ষণ। এরপর তোয়ালে এনে মাথা মুছিয়ে দেয়। খালা বাহিরে চলে গেছে। তাইমুর চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে,
মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৮
–‘এতো যত্ন কেনো করছেন, অন্তিকা?’
অন্তি জবাব দেয় না। মাথা মুছিয়ে দিয়ে চুপচাপ শুইয়ে দেয়। এরপর রুম থেকে বের হতে হতে বলে,
–‘মায়া ছিলো তাই!’
তাইমুর শুনেছে কি না জানা নেই। অন্তি ড্রইং রুমে বসে মায়ের ফোনে কল দেয়। মা’কে আসতে বলে সে সেখানেই বসে থাকে।