রং পর্ব ৫২

রং পর্ব ৫২
তন্নী তনু

অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের আধার কেটে গিয়ে ঝলমলে দিনের শুরু। মৃত‍্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে থাকা ছেলেটির অবস্থা আগে থেকে ভালো। দেয়া হয়েছে কেবিনে। নিস্তব্ধ, নিরব, নিস্তেজ হয়ে শুয়ে ছেলেটা সর্বক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকে, ভাষা হারিয়ে যেনো নির্বাক। সুভা একটুপর পর তরল খাবার দেয়। বুকের গহীনে জমে থাকা ব‍্যথা লুকিয়ে হাসি মুখে বসে থাকে কখনো ভাইয়ের মাথার কাছে কখনো পায়ের তলায়। একটু পর পর জিজ্ঞেস ধীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
–ঠিক আছো?
সুমন মেলে তাকিয়ে চোখ দুটো আবার নিরবে বুজে মাথা কাত করে। সুভা গভীর শ্বাস ফেলে। সে শ্বাসে বেরিয়ে যায় হৃদয়ের সকল অব‍্যক্ত কথা, অপ্রকাশিত যন্ত্রণা।পৃথিবীর সমস্ত কিছু এলোমেলো। তবুও একটা সুন্দর, সুস্থ, স্বাভাবিক দিনের অপেক্ষায়…….

পুলিশ হেডকোয়ার্টারস এর টেবিল ঘিরে বসে আছে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ অফিসারসহ রুস্থান কবীর। টেবিলের মাথায় একক চেয়ারটিতে শীরদাড়া টান করে বসে আছেন তিনি। তার বক্তব্যের অপেক্ষায় আছেন বাকিরা। টেবিলের উপর বাকানো স্পিকারে র সামনে মুখ রাখেন তিনি,
— অফিসারস! আমাদের রিসেন্ট কেসটার সকল রিপোর্ট এখনো হাইড রাখা আছে কেসের সুবিধার্থেই। তবে এই কেসের প্রতি মিডিয়া মুখিয়ে আছে। অন‍্য কোনো বিষয় হলে এক্সপোজের প্রয়োজন ছিলো না। তবে এটি এমন একটা ক্রাইম পুরো দেশবাসীর জানা উচিৎ।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন বলেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— স‍্যার! প্রভাত রঞ্জন সরকার এই অপ!রাধের সাথে জড়িত,এর পক্ষে বিপক্ষে সকল প্রুফ রেডি। ক্রি!কেট বোর্ডের বিসিবি প্রধানকে জিজ্ঞাসা বাদের একপর্যায়ে তিনি একটা ভিডিও আমাদের দিয়েছেন,যার মাধ‍্যেমে বিষয়টা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। তিনিই এসব এতোকাল ধরে ভালো মুখোশের আড়ালে এক অন্ধকার জগতের খেলা চালিয়ে এসেছেন। অন্ধকার জগতের রাজাকে আমরা খুব ইনোসেন্ট ভেবেই এসেছি। রিসেন্ট তার বেতন ভাতার বাইরে যে বিপুল অর্থ তার ব‍্যাংকে ট্রান্সফার হয়েছে তার কোনো লিগাল হিসাব তিনি দিতে পারেননি। এমনকি বিদেশেও তার ছেলের একাউন্টে বিপুল অর্থ জমা আছে। এমনকি তার ছেলের ওয়াইফ, নাতি-নাতনির একাউন্টে বিপুল অর্থ জমা আছে। যেগুলোর লিগ‍্যাল কোনো তথ‍্য পাওয়া যায়নি।
কিছুক্ষণ পজ দেন রুস্থান কবীর। অতঃপর স্পিকারে বাজে তার ঠান্ডা মস্তিষ্কের গলা,

— প্রায় তেইশ বছর আগের ঘটনা। সেখানের বিষয়টা ছিলো এই জু!য়াকে ঘিরেই। তখন এই বিষয়টা ছিলো শুধুই ভূমি ভিত্তিক।ঐসময়ে সর্বপ্রথম রমরমা ক‍্যা!সি!নো ব‍্যবসা করতেন সম্রাট শাহজাহান তার সাথে ছিলেন এই দেশের ক্ষমতাধারী মন্ত্রীসহ, ডিফেন্সের লোক। শাহজাহান ছিলেন উপর দিক থেকে মানওবতার ফেরিওয়ালার। তবে তার এই উজ্জল মুখের আড়ালের অন্ধকার, কালো অধ‍্যায় টেনে বের করেন কর্ণেল রিদুওয়ানুর রহমান।বিদেশে মিশন চলাকালীন তিনি এই বিষয়টা প্রথম আঁচ করেন। ওখান থেকে তদন্তের শুরু। একপর্যায়ে সকল তথ‍্য কালেক্ট করে সম্রাট শাহজাহান কে থানায় আনা হয়।সকল তথ‍্যের ভিত্তিতে তার জেল হয়। তিনি জেলে থাকেন দীর্ঘ বছর। (প্রায় তেরো বছর।)সম্রাট শাহজাহান প্রথমে কিছু করতে না পারলেও কয়েক বছর পর সেনাবাহিনীর সেনা প্রধানের মাধ‍্যমে মিথ‍্যা কেসে ফাঁসিয়ে দেয়া হয় কর্ণেল রিদুয়ানুর রহমানকে। ভালো খারাপ সবখানেই বিরাজমান।ঐসকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা ও নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছিনা। তবে তাঁরা ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের অন‍্যতম হাতিয়ার।

যখন চাকরিচ‍্যুত করা হয় কর্ণেল রিদুয়ানুর রহমানের এরপরে ধীরে ধীরে শুরু হয় নতুন করে খেলা। প্রথম দিকে কঠোরভাবে সম্রাট শাহজাহান দেখা হলে পরবর্তী সময়ে সে জেলে থাকলেও তার হয়ে কলকাঠি নাড়তে শুরু করেন অনেক ক্ষমতাধর ব‍্যক্তিগণ। ঐসময়ে কর্ণেল রিদুয়ানুর রহমানের হাতে ক্ষমতা নেই।ঐসময়ে ক্ষমতার দাপটে নতুন করে প্রুফ দিয়ে নিজের উপরের কালো দাগ মুছে দীর্ঘ বছর পরে ছাড়া পান সম্রাট শাহজাহান। তিনি জেলের বাইরে মানেই কালো উপাখ‍্যানের নতুন সূচনা। তিনি নতুন করে যে জাল পাতার উদ্যোগ নেন তা দেশ আর জাতীর জন‍্যে হুমকির স্বরপ হতো। সঠিক সময়ে প্রমাণের অভাবে তিনি বার বার আইনের হাতের নাগালের বাইরে থাকেন। ঐ সময়ে আইন বিভাগের কয়েকটি সংস্থার বিশ্বস্ত কিছু অফিসার মিলে গোপনে প্ল‍্যান তৈরী করেন। এবং সম্রাট শাহজাহানসহ তার সাথে ক্ষমতাধারী কয়েকজনকে গুপ্ত কোঠায় বন্ধি করা হয়।

প্ল‍্যান ছিলো যতোক্ষণ না সকল তথ‍্য সকল ডিটেলস দিবে ততোক্ষণ তারা বন্দি থাকবে। একান্তই তাদের সাথে না পেরে উঠলে তাদের আজীবন অন্ধকার কক্ষে বন্দি রাখা হবে। এছাড়া উপায় ও ছিলো না। তার হাতে লেখা অশুভ উপাখ‍্যান দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলো। যে কোনো ভাবে তাকে রুখতেই হতো। তাই সম্রাট শাহজাহানসহ তার সকল ডানহাত বাম হাতকে বন্দি করা হয়।কিন্তু সেখানেও ঘটে দুর্ঘটনা। ঐসময়ে দুজন বিশ্বস্ত প্রহরী বিশ্বাসঘাতকতা করেন। তাদের সাহায‍্যে পালিয়ে যায় সম্রাট শাহজাহান সহ তার দল। ঐসময়ে সব কিছু হাতের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিলো। সম্রাট শাহজাহান মুক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়ানো মানেই পুরো দেশের উন্নয়ন, দেশের তরুণ সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। যে মরণ খেলার ফাঁদ তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে খেলে গেছেন, এতোগুলো বছর জেলে থেকেও তার কোনো অনুতপ্ততা নেই। ডিফেন্সের কোনো তথ‍্য বাইরে জানানো হয় না। ঐসময়ে স্বেচ্ছায় রিজাইন দেয়া কর্ণেল রিদুয়ানুর রহমানের সাথে যে অবিচার হয় তা শুধু কিছু সংখ‍্যক আইনের লোক ই জানেন। একজন সৎ কর্ণেলকে ধূলোয় মিশিয়ে সম্রাট শাহজাহান অশুভ উপাখ‍্যানের নতুন যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিলেন।

যেদিন রাতে তারা পালিয়ে যান। ইরফাদ তখন ডিপার্টমেন্টে নতুন।
চেকপোস্টের চেকিং এর মাধ‍্যমে জানা যায় সম্রাট শাহজাহান সহ বাকিরা চট্টগ্রামের পার্বত‍্য অঞ্চলের রাস্তা ধরেছে। লাকিলি ঐদিন ইরফাদ চট্টগ্রামেই ছিলেন। ঐখানের সকল ফোর্স এলার্ট হয়ে যায়। ঐখানেও ক্ষমতার অপব‍্যবহারে -পার পেয়ে যান সম্রাট শাহজাহান সহ তার দলবল। অ‍্যট দ‍্যা মিড টাইম সম্রাট শাহজাহানের গাড়ি যখন পাহাড়ি রাস্তায়,ইরফাদ সম্রাট শাহজাহানের গাড়ির পিছু নেন। পুলিশ সদশ‍্যের বেশীরভাগ অংশ শাহজাহানের পক্ষে থাকায় ইরফাদ ফাঁদে পড়ে যায়। তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে সম্রাট শাহজাহান ইরফাদকে তারই জীপে তুলে নেয়। ইরফাদের মাথায় ঠেকানো রিভলভার দাপটে সম্রাট শাহজাহানের ডিরেকশন অনুযায়ী গাড়ি চালায় ইরফাদ।পেছনে সম্রাট শাহজাহান এর সহকর্মীদের গাড়িটাও সমান তালে চলে। ঐসময়ে তাদের প্ল‍্যান ছিলো রাতের আধারে মালবাহী জাহাজে করে দেশের বাইরে পারি জমাবেন।

এর পরেই গাড়িতে এক প্রকার যুদ্ধ লেগে যায় ইরফাদ আর সম্রাট শাহজাহান এর। একহাতে স্ট্রিয়ারিং অপর হাতে কৌশলে ছিনিয়ে নেয় রিভলভার। হাতাহাতির একপর্যায়ে গাড়ির বেগতিক টানে প্রাণ বাঁচাতে ইরফাদের হাতের রিভলবারের বুলেটে অশুভ উপাখ‍্যানের মূল মাথাটাকে চিরতরে বিদায় দেয়া হয়। সম্রাট শাহজাহানের নিথর দেহ পড়ে থাকে জীপের ছিটে। পেছনের গাড়িটা দ্রুত গতিতে ছোটে।বাকিদের ধরার জন‍্য পিছু নেয় ইরফাদ। তবে বুলেট বর্ষণে এগিয়ে যাওয়ার উপায় থাকে না। অশুভ কালো জগতের অস্তিত্বকে বিলিন করতে পেছন থেকে গাড়ির টায়ার বরাবর বুলেট ছোড়ে ইরফাদ। পাহাড়ি রাস্তায় এলোমেলো গতিতে ছুটে গাড়ি। ইরফাদের গাড়ির তীব্র ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে অশুভ আত্মাগুলো গাড়িসহ পড়ে যায় খাদে। এভাবেই নিঃচিহ্ন করে দেয়া হয় সে সময়ের অন্ধকার জগতের রাজাকে।

তবে সেই দিনও শেষ হয়নি কালো জগতের সকল অশুভ শয়তান। সে শয়তান আইনরক্ষাকারী সম্মানিত পদমর্যাদা সম্পন্ন ব‍্যক্তির মুখোশের আড়ালে এখনো বিদ‍্যমান, তিনি এভাবে ঠান্ডা মাথায় অন্ধকার জগতে খেলা চালিয়ে গেছেন তা বোঝার কোনো উপায় ই ছিলো না। হোয়াটএভার, এই মুখোশধারীর মুখোশ টেনে খুলতে পেরেছেন আপনারা। আপনারা সত‍্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে ইরফাদ– আই রিয়েলি প্লিজড ফর ইউ। তুমি যেভাবে একজন সাইল‍্যান্ট কিলারকে তার জালে তাকে ফাঁসিয়ে পুরো অন্ধকার জগৎ এর অন্দরমহলে ঢুকে গোড়া থেকে উপরে ফেলেছো। পাশাপাশি তোমার ডিরেকশনে সকাল সন্ধ‍্যা প্রভাত রঞ্জনের উপর নজর রাখা হয়েছে। তুমি তোমার কাজ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছো — You have succeeded.
অনেকটা সময় পর ইরফাদ ধীর শান্ত গলায় বলে,

–স‍্যার! আরেকটা কনফিউশন আছে। সম্রাট শাহজাহান এর একটা ছেলে আছে,রাফসান। তিনিও এই কেসের সাথে যুক্ত। তিনি বিদেশেই বড় হয়েছেন। এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন।তিনি একসময়ের খুব জনপ্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন। পারসোনালি তার আমার উপর ভিষণ রাগ। কোনো ভাবেই তিনি আমাকে টলারেট করতে পারেননা।তার ভাষ‍্যমতে বড় হওয়ার পর তার বাবার সাথে কখনোই কথা হয়নি। তবে তার কাছে একটা চিঠি আছে। সেই চিঠির ভিত্তিতে আমার উপর তার ভিষণ ক্ষোভ, এমনকি আমার ফ‍্যামিলির উপরেও। চিঠিটা তার বাবার হাতের লেখা। তিনি সিউর করেছেন।তাতে লেখা সম্রাট শাহজাহান কে কেউ বন্দি রেখেছেন। আমার বাবা সহ আমার দিকে আঙুল উঠানো আছে। এর পেছনে আমরা আছি।
— দেখো! আমি যতোটুকু বলতে পারি।জেল থেকে বের হওয়ার পর ছেলের সাথে সাক্ষাত করার সময় তিনি পাননি।তার মাথায় চিন্তাই ছিলো তিনি দেশ ছাড়বেন।

— তাহলে এই চিঠি?
— আমার ডাউট হচ্ছে! কেউ রাফসানকে গুটি হিসেবে ব‍্যবহার করেছে। আর তিনি সব জানেন।এই সকল অন্ধকার জগতের খেলা চালাতে বিশ্বস্ত মানুষ প্রয়োজন। কেউ একজন রাফসানকে হাতে ধরে ভুল পথে ম‍্যনুপুলেট করেছে এটা সিউর। বাবার প্রতি প্রতিটা সন্তানের দূর্বলতা থাকে। এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই রাফসানকে হাতে রেখেছেন কেউ। ইচ্ছে মতো খেলেছে তাকে দিয়ে।
— তাহলে প্রভাতরঞ্জন আমার চোখের আড়ালে আমার সাথেই খেলা খেলে গেছে। রাফসানকে ম‍্যানুপুলেট করে, মিথ‍্যা আশ্বাস তিনিই দিয়ে গেছেন। যাতে রাফসানকে ইচ্ছে মতো ইউজ করা যায়। সম্রাট শাহজাহান কে গুপ্ত কক্ষ থেকে পালাতে তিনিই হেল্প করেছেন। এতোদিন ধরে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে আছেন। আমি ভেবে এসেছি — তিনি ইনোসেন্ট,লয়াল, অনেস্ট।

— শেষে এসে আপনিই কিন্তু প্রথম সন্দেহ করেছেন ইরফাদ। আপনার সকল তথ‍্য অনুযায়ী প্ল‍্যান সাজানো হয়েছে। ইউ আর সাকসেসড।
— স‍্যার! আমি কি আরেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি?
–অফ কোর্স। তবে এইবার কোনো বুলেট ব‍্যবহার করবেননা। ওনার আগের ক্ষত এখনো ঠিক হয়নি।
— ক্ষত ঠিক হয়নি তবে তার অনুপস্থিতিতে আমার উপর ঠিকই এট‍্যাক হচ্ছে।
— অন্ধকার জগতের কিং বলে কথা। ছোটখাটো মাথা তিনি পালেননা নিশ্চয়ই। খাঁচায় বন্দি হওয়ার আভাস আগেই হালকা পেয়েছিলেন। ঐজন‍্য আগেই যতো পরিকল্পনা সাজিয়েই রেখেছেন।
— ইনভেস্টিগেশন করে কতোদূর ছুঁতে পেরেছেন?
–লিডারসহ মোটামুটি সবাই আটক।
— আমি দেখতে চাই। আর মাফিয়াদের লিডার সহ কয়েকজনকে আমার আন্ডারে দেয়া হোক। আমার কলিজায় হাত দিয়েছে। ওদের কলিজা এক এক করে আমি টেনে ছিড়ে নিবো।
— কুল কুল ইরফাদ। কুল…

অন্ধকারে ডুবে থাকা রুমে হলদেটে আলো জ্বেলে চেয়ার টেনে বসে ইরফাদ। সামনের চেয়ারে বসে আছে প্রভাতরঞ্জন সরকার। ইরফাদ পায়ের উপর পা তুলে শীরদাড়া টান টান করে বসে।
— মারতে চেয়েছিলি!! পারলিনা। ইসস আফসোস! আমাদের সবার প্ল‍্যানের বাইরে উপরওয়ালার একটা প্ল‍্যান আছে।তোর ডান হাত, বাম হাত সহ সবাইকে আটক করা হয়েছে। তোর খেলা শেষ।
হো হো করে হেসে ওঠেন প্রভাতরঞ্জন সরকার। পৈচাশিক হাসির ফাঁকে বলেন,
— শেষ থেকেই শুরু।
ইরফাদ তীক্ষ্ম গলায় বলে,
— নিজের ফ‍্যামিলিকে লাক্সারিয়াস লাইফস্টাইল এর ব‍্যবস্থা করে অন‍্যের পরিবার, অন‍্যের সন্তানের জীবন নষ্ট করতে বিবেকে বাঁধে না?

— বিবেক না বিসর্জন দিলে টাকা কামানো যায় না।কিছু লাক্সারিয়াস লাইফস্টাইলের জন‍্যে কিছু মানুষকে তো কষ্ট ভোগ করতেই হবে। তা না হলে কি দুনিয়া চলবে?
— লজ্জা করে না। কিছুদিন আগেও দু”টো পরিবারের দুটো সন্তানকে তুই বিষ প্রয়োগ করে মেরেছিস। শুধু মাত্র তোর জালে জড়িয়ে পরার পর নরমাল জীবন লিড করতে চেয়েছিলো। সেদিন রাতেও তুই তোর দলবল দিয়ে আমার উপর এট‍্যাক করেছিস। তুই কি মনে করিস! আমি কিছু বুঝিনা?
— এটাও জেনে গেলি। সব জেনে ফেলছিস। এইবার এটাক করার সময় সেই পরিচিত মুখ খুঁজে পেলি নাকি? আগের বার গাড়িতে কি ওরাই এট‍্যাক করেছিলো?? আহারে….
— এতো উড়িস না। পতন খুব নিকটে।
— কেবল তো শুরু। তার আগে তোকে একটু নামাই।

উড়ো খবরে শুনলাম সম্রাট শাহজাহানের একমাত্র কণ‍্যাকে তুই বিবাহ করেছিস। খুব উপকার করে ফেললাম। মেয়েটাকে তোর কাছে রাখতে রাখতে হৃদয়ের কাছেই পাঠিয়ে দিলাম। যাইহোক,একটা খুব কঠিন সংবাদ দেই। সব যখন জেনেই ফেলেছিস এটুকু জানাও দরকার। আর কতোকাল মায়ের মিথ‍্যা অপবাদ বয়ে বেড়াবি। সে সময়ে পুরো শহর তোলপাড় করা খবর। কর্ণেল রিদুয়ানুর রহমানের শেষ সময়ে মধ‍্যময়স্কা রুপবতী স্ত্রী কোনো এক নাগরের হাত ধরে পালিয়েছেন।

এহেম কথায় পুরোনো দিনের দৃশ‍্যপট স্মৃতিচারণ করে ক্ষণকালের জন‍্যে জমে যায় ইরফাদ। বাবার জব চলে যাওয়া। শহরের আনাচে কানাচে কানাঘুষা! এরপরেই হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায় তার মা। লিখে যান একটা চিঠি। যেখানে লেখা ছিলো– নিজের ইচ্ছেতে চলে যাচ্ছি। আমাকে কেউ খুঁজবে না। কোনো অযোগ‍্য লোকের সাথে একমূহুর্ত নয়। বিষয়টা খতিয়ে দেখতে গেলেই সকল জায়গায় রটে যায় কর্ণেলের বউ পালিয়ে গেছে। স্বামীর জবলেস, স্বামীর বিপদে মধ‍্য বয়স্কা স্ত্রী পালিয়ে গেছে। পুরো শহর ছি ছি রটে যায়। পুরো শহর তোলপাড় করে খুঁজে পাওয়া যায় না তাকে। অতঃপর ভদ্র সমাজের ভদ্র মানুষের আসল রূপ বেড়িয়ে আসে। আনাচকানাচে কানাঘুষা চলতেই থাকে বছরের পর বছর। পুরোনো দৃশ‍্যপট চোখে ভেসে উঠতেই শীতল হৃদয়বিদারক ব‍্যাথায় বুক ভার হয়ে আসে ইরফাদের। তবে বুকের এককোণে শুভ শক্তি গর্জন দিয়ে বলে,– তার মায়ের উপর দেয়া অপবাদ সম্পূর্ণ মিথ‍্যা। নিজেকে দমিয়ে গর্জে ওঠে ইরফাদের গলার স্বর,

— ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট। পৃথিবীর সকল ঘটনা সত‍্যিই ঘটেছে এমন নয়। আমার বাবা ঐদিন বাসায় ছিলেন না। হয়তো মা”কে কেউ গুম করে দিয়েছে।
–একজেক্টলি!! আমি জানি তুই তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন।
কিন্তু এতো তীক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন হয়েও তুই বুঝলিনা সম্রাট শাহজাহানের গাড়িতেই তোর মা ছিলো।
–হোয়াট!!
— সম্রাট জেল থেকে ছাড়া পেয়েই তোর বাপকে সাইজ করার জন‍্যে উদ‍্যত হয়। তার জন‍্য এতোগুলো বছর নষ্ট হলো কি না। লাকিলি ঐদিন তোর বাপ বাড়ি ছিলো না। কিন্তু তোর সুন্দরী মা তো ছিলো। তাকেই তুলে আনা হয়। এরপরেই পুলিশের গুপ্ত কক্ষে বন্দি হয় সম্রাট শাহজাহান। তোর মাকে রাখা হয় চট্টগ্রামে। সুযোগ পেলেই নৌপথে দেশের বাইরে নেওয়া হবে। কান টানলে মাথা আসে। তোর মায়ের টানে তোর বাপ যেতো, বাপের টানে তুই। পুরো বংশ ছাঁই করা যেতো।
আগুনের মতো গর্জে ওঠে ইরফাদ। গলায় ঝড়ছে বজ্রধ্বনি,

— আমার মা কই? কোথায় রেখেছিস?
পৈচাশিক হাসিতে ফেঁটে পড়ে প্রভাতরঞ্জন সরকার। অতঃপর ধীরে ধীরে বলে,
–তুই নিজ হাতে তোর মাকে মেরেছিস। যাস্ট ফিল ইট– তুই তোর মাকে নিজ হাতে মেরেছিস।
–স্কাউনড্রেল!!
–হাহাহা! সম্রাট শাহজাহানের গাড়িতে তোর মা ছিলো পেছনের সীটের নিচে। সবার পায়ের তলায়। ঘুমের ক ড়া ডোজে ঘুমে আচ্ছন্ন। সম্রাট শাহজাহান তোর সব কেড়ে নিলো। সব! আর তুই কতো বড় হৃদয়ের মানুষ তার মেয়েকেই বউ করে আনলি। হাহাহাহা।

রং পর্ব ৫১ (৩)

চোখের সামনে সবটা অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে ইরফাদের। তীব্র উত্তাপে কান লাল হয়ে ওঠে। হৃদয়ের তীব্র ব‍্যথায় কেঁপে ওঠে ইরফাদের হৃদযন্ত্র। শীরদাড়া বরাবর অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে যায়। প্রভাতরঞ্জন আবারো হাসে। তারপর বলে,
“যাস্ট ইমাজিন– পুরো শহর জানে তোর মা বুড়ো বয়সে পালিয়েছে। মানসম্মান শেষ!আবার সেই মা”কেও তুই নিজের হাতে মেরে দিয়েছিস। নিজের হাতে……..

রং পর্ব ৫৩