মনে রেখ এ আমারে পর্ব ১১
রায়েনা হায়াত
ডিনারের পর তাইমুর, তহুরা বেগম আর হায়দার সাহেব চলে গেলেন। রেহেনা বেগম সব তুলছিলেন। অবনী সাথে সাথে করে দিচ্ছে দেখে অন্তি বাবার রুমে যায়। আনোয়ার সাহেব তখন ইজি চেয়ারে বসে কিছু ভাবছেন। অন্তির মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বাবার সাথে কথা বললে বোধহয় শান্তি মিলবে। সে আশা নিয়েই সে বাবার পায়ের এক পাশে মেঝেতে বসে। আনোয়ার সাহেব ভড়কে বলেন,
–‘ওখানে বসছো কেনো, মা?’
অন্তি মাথাটা বাবার পায়ের ওপর রেখে বলে,
–‘আমার এভাবেই ভালো লাগে। একটু থাকি, আব্বু?’
আনোয়ার সাহেব মুখে কিছু না বলে মুচকি হাসেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। আদুরে গলায় বলেন,
–‘মন খারাপ, মা?’
অন্তি ‘উহু’ বলে। আনোয়ার সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই মলিন কন্ঠে বলে,
–‘ছোট থেকেই তোমাদেরকে অনেক যত্ন করে মানুষ করেছি। অথচ এখন এসে গোটা সংসারটার ভার তোমার ওপর পরেছে। তোমার অনেক কষ্ট হয়ে আমি জানি। বাবার ওপর অভিমান হয়, তাই না মা?’
অন্তি চোখ তুলে বাবার দিকে তাকায়। তারপর বলে,
–‘এসব কি কথা, আব্বু? তুমি এতগুলো বছর এ সংসারটা সামলে এসেছো। আমি সামান্য ক’টা দিন সামলাচ্ছি তাতে কি-ই বা এমন হবে? আর সামলাচ্ছিও বা কোথায়? সেই তো তোমার জমানো টাকা, পেনশন ভাঙাতেই হয়।’
আনোয়ার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। অন্তি আবার মাথা রাখে বাবার পায়ের ওপর। নিজেই আবার বলে,
–‘আর শোনো আব্বু! এতোদিন আমি তোমার মেয়ে ছিলাম তাই তুমি আমাকে সামলে এসেছো, এখন আমি তোমার মা তাই আমি তোমাকে সামলাবো। বুঝেছো? আর কখনো এমন কথা বললে খুব বকবো।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আনোয়ার সাহেব হেসে ওঠেন। অন্তিও ঠোঁট মিলিয়ে হাসে। আনোয়ার সাহেবের বুকে প্রশান্তির ছায়ায় ভরে যায়। মেয়েটা তার সত্যি মেয়ে না, বরং মেয়ে রূপে তার মা। তাদের কথোপকথনের মাঝেই অবনীও আসে। দরজা থেকে বাবা-মেয়ে’কে গল্প করতে দেখে নিজেও এগিয়ে আসে। বলে,
–‘আব্বু, আমাকে রেখে সব ভালোবাসা ছোট মেয়েকে দিয়ে দিচ্ছো! এটা একদমই ঠিক না।’
অন্তি ব্যঙ্গ করে বলে,
–‘ছোট থেকে তো আমার থেকে বেশি ভালোবাসা পেয়েছিস। তাও হিংসা লাগে! হিঃ’সুটে মহিলা।’
অবনী অন্তির মাথায় গাট্টা মে’রে নিজেও বাবার আরেক পায়ের পাশে বসে মাথা রেখে বলে,
–‘তোর জন্য ভালোবাসা পেয়েছি কোথায়? ২ বছর পরই তো এসে ভাগ বসিয়েছিস।’
অন্তি ভেঙায়। আনোয়ার সাহেব দু’মেয়েকেই থামান। বাবা এবং মেয়েরা মিলে অতীতের ছোট ছোট বিষয়গুলো স্মরণ করে এবং হাসে। অনেকদিন পর সবাই এমনভাবে বসতে পেরেছে ভেবেই ভালো লাগছে। বাবাদের সাথে সন্তানদের একটু দূরত্ব থাকে৷ তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে কিছু সময় এটা ভিন্ন হয়ে যায়। দরজায় দাঁড়িয়ে বাবা-মেয়ের এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে রেহেনা বেগম চোখ জুড়ান। আঁচলের কোণায় চোখ মুছে মুচকি হেসে সরে যান। সময়টুকু কেবল বাবা-মেয়েদের হোক। কথায় কথায় আনোয়ার সাহেব অন্তিকে জিজ্ঞাসা করে,
–‘আচ্ছা মা, আমি যদি তোমার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেই তাহলে তুমি কি মানবে? বিশ্বাস করো আব্বুকে? সে যে তোমার জন্য কখনো খারাপ সিদ্ধান্ত নিবে না তা তো জানো? তাই না, মা?’
অন্তি বোঝে আনোয়ার সাহেব হয়তো তাইমুরের ব্যাপারটা বলতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা তার জানা না থাকলে এক সেকেন্ডও সময় লাগতো না তার ‘হ্যাঁ’ বলতে। কিন্তু এখন এত দ্রুত কিভাবে ‘হ্যাঁ’ বলবে? তবুও নিজেকে সামলে হাসিমুখে বলে,
–‘নিজের থেকেও তোমার প্রতি বেশি বিশ্বাস আছে, আব্বু।’
আনোয়ার সাহেব আশ্বস্ত হলেন। মনটা শান্ত হয়ে গেলো তার। মেয়েদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তিনি মেয়ের ভবিষ্যৎটা যেনো দেখেই নিলেন। বাবার কন্ঠের খুশিটা অন্তি, অবনী দুজনেই টের পায়। একে অপরের দিকে তাকিয়ে তারাও হাসে৷ বাবা খুশি থাকলেই তাদের শান্তি লাগে।
রাতে দু’বোন বাবাকে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে এরপর নিজেরা ঘুমাতে যায়। রেহেনা বেগম তো বলেই বসলেন,
–‘যত ভালোবাসা সব বাবার জন্য? মা তো পর, তাই না?’
দু বোন হেসে তাকেও জড়িয়ে ধরে। সুখী পরিবার যাকে বলে এ মুহুর্তে তারা তা-ই। সুখের শ্বাস নিয়ে অন্তি রুমে যায় ঘুমাতে। আজ তার ঘুম ভালো হবে। তবে রুমে ঢুকতেই দেখে সেখানেই নীলা বসা। ফোন স্ক্রল করছে। অন্তি স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞাসা করে,
–‘তুমি এখানে? তোমরা তো পাশের রুমে ঘুমাবা!’
নীলা ফোনে চোখ রেখেই বলে,
–‘আমি আসলে এই রুমে ঘুমাতে চাচ্ছিলাম। ব্যালকনিও আছে। ঘুম না আসলে ওখানে গিয়ে বসে থাকতে পারবো। তাই!’
অন্তি বোঝে যে নীলা কেনো এখানে থাকতে চাচ্ছে। তবুও কিছু বলে না। শুধু বালিশ নিয়ে বলে,
–‘তাহলে তুমি আর আপু এই রুমে থাকো। আমি আসলে সবার সাথে শেয়ার করে থাকতে পারি না তো। আপুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
নীলা এমন ভাব নিয়ে বসেছিলো যেনো অন্তি না গেলেও তার সমস্যা নেই। তবে অন্তি যাওয়াতে সে খুশিই হয়েছে। অন্তি অবনীকে পাঠিয়ে দেয়। অবনীর রাগ হয় তবুও কিছু বলে না৷ শুধু ঠান্ডা গলায় বলে,
–‘যা করছো এর জন্য পরে তুমিই কষ্ট পাবে, নীলা। তাইমুর ভাইকে এখনো ১%-ও চিনোনি তাই ভাবছো অন্তি তার জীবনে থাক বা না থাক তুমি জায়গাটা নিতে পারবে। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছো! যে ছেলে গত ৫ বছরেও অন্তির জায়গা কাউকে দেয়নি সে এসে ৫ দিনে তোমাকে তার জায়গা দিয়ে দিবে?’
নীলা গায়ে মাখে না। মুখ কঠিন করে বলে,
–‘আমি আজ পর্যন্ত যা চেয়েছি তা-ই পেয়েছি। আর তাইমুরকেও পাবো।’
অবনী আর কিছুই বলে না। চুপচাপ শুয়ে পরে। সে ভাবে হৃদান যদি তার বোনকে সাপোর্ট করে তখন কি হবে!
সকালবেলা রেহেনা বেগম ঘুম থেকে উঠে দেখেন আনোয়ার সাহেব ঘুমিয়েই আছেন। ফজরের নামাজটা আজ কাজা হয়ে গেছে দুজনেরই। আনোয়ার সাহেব প্রতিদিন সময় মতোই ওঠে আজ দুজনেই উঠতে পারেনি ভেবে রেহেনা বেগম আফসোস করছিলেন। বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে আনোয়ার সাহেবকে ডাকেন,
–‘ওঠো, অনেক সকাল হয়ে গেছে। একটু হেঁটে আসো বাহির থেকে।’
রেহেনা বেগম ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম যান। এবং ফিরে এসেও আনোয়ার সাহেবকে ঘুমাতেই দেখে তিনি একটু অবাক হোন। একবার ডাকলেই যে উঠে যায় সে এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে! রেহেনা বেগম আনোয়ার সাহেবের বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন। এবং অনুভব করে আনোয়ার সাহেবের হার্ট বিট চলছে না। ভয়ে দু পা পিছিয়ে যান তিনি। অজানা আতঙ্কে তার বুকটা-ই ভারী হয়ে আসছে। তবুও শ্বাস নিয়ে সাহস করে আবার গিয়ে আনোয়ার সাহেবকে অনবরত ডাকতে থাকে। তার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আছে। অনেকবার ডাকার পরও উঠছে না বলে নাকের কাছে হাত রাখেন। নিঃশ্বাস পরছে না বুঝতে পেরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। তার চিৎকার আর কান্নার আওয়াজে অবনী, অন্তি, নীলা সবারই ঘুম ভেঙে যায়। ৩ জন-ই ছুটে যায় বাবা-মায়ের রুমের দিকে। দরজা তখনো আটকানোই ছিলো। অন্তি আর অবনী বাহির থেকেই অস্থির হয়ে ডাকতে থাকলে রেহেনা বেগম দরজা খুলে দিয়েই জোড়ে জোড়ে কাঁদতে থাকে। অন্তি মা’কে ধরে বলে,
–‘কি হয়েছে, আম্মু? কাঁদছো কেনো? কি হইছে?’
অবনীর চোখ পরে বাবার ওপর। অসার বাবাকে দেখে মন টের পেয়ে যায় কি ঘটেছে! বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে অন্তির হাত টেনে ধরে। রেহেনা বেগম কান্নার দরুণ কথা-ই বলতে পারছে না। অন্তি অবনীর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই বাবাকে দেখতে পায়। অবনীর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আনোয়ার সাহেবের কাছে যান। তার মন আঁতকে উঠছে তবুও স্বাভাবিক ভাবেই বাবাকে ডাকতে থাকে। বাবা উঠছে না বলে অন্তি বাবার বুকে মাথা রাখে। বুঝতে পারে তার বাবা আর নেই। রেহেনা বেগম বুক চাপড়ে কাঁদছেন। অবনীও মেঝেতে বসে কাঁদছে। নীলা দ্রুত নিজের ঘরে গিয়ে ফোনটা নিয়ে হৃদানকে কল দেয়। সব বলে সে এসে অবনী আর রেহেনা বেগমকে সামলানোর চেষ্টা করে। পারে না। দ্রুত ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে পাশের বাসায় নক করে।
ধীরে ধীরে মানুষ জমতে শুরু করে। অন্তি তখনো বিমূঢ় হয়ে বাবার বুকে পরে আছে। অবনী দু’বার সরাতে গেছিলো কোনো লাভ হয় না। এর মধ্যে তাইমুররাও এসে পরে। তাইমুর অস্থির ভাবে আনোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকে। গতকাল রাতেই মানুষটা সুস্থ ছিলো অথচ আজ কি হয়ে গেলো! অন্তিকে এভাবে আনোয়ার সাহেবের বুকে পরে থাকতে দেখে তার বুক কেঁপে ওঠে। সে সবাইকে ডিঙিয়ে আগে যায় অন্তির কাছে। অন্তিকে এক টানে বুক থেকে সরাতেই সে তাইমুরের দিকে অনুভূতিশূণ্যের মতো তাকায়। তার চোখের জলে আনোয়ার সাহেবের বুক ভেসে গেছে। অন্তি তাইমুরের হাত ছাড়িয়ে আবার বাবার বুকে মাথা রাখে। তাইমুর অন্তির অবস্থা বুঝতে পারে। এভাবে থাকলে কষ্ট বাড়বে বয় কমবে না। সে আবার অন্তির হাত ধরে টেনে তুলে বলে,
–‘এদিকে আসেন।’
–‘হাত ছাড়েন!’
অন্তির কন্ঠে যেনো প্রাণ নেই। তাইমুর ছাড়ে না। অন্তি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
–‘আমি আব্বুর কাছে থাকবো। আপনি যান এখান থেকে।’
তহুরা বেগম এসে বলেন,
–‘ভাই-সাহেবকে তো বাইরে নিতে হবে, অন্তি। উঠে আসো, মা।’
অন্তি পাগলামি শুরু করে। সে কিছুতেই বাবাকে ছাড়বে না। কোথাও কাউকে নিতে দিবে না। একসময় চেঁচিয়ে কাঁদতে শুরু করে। বার বার বাবাকে ডেকে উঠতে বলে। অবনীকে ডেকে বলে,
–‘আপু, দেখ! আব্বু উঠছে না। ওরা সবাই বাজে কথা বলে। কাল রাতেই আব্বু আমাদের সাথে কত কথা বললো না বল! আব্বু কিভাবে এভাবে যেতে পারে! আমি জানি আব্বু কোথাও যায়নি। আব্বু এখনই উঠে পরবে। আব্বু, ও আব্বু! উঠো না!’
অন্তি তার সবথেকে কাছের মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছে। অবনী এসে অন্তিকে সরিয়ে নিয়ে বুকে টেনে নেয়। বাড়ির পরিবেশে হাহাকার করছে। অন্তি কাঁদতে কাঁদতেই অবনীর বুকে ঢলে পরে। সেন্সলেস হয়ে গেছে। অবনী ভয় পেয়ে যায়। তাইমুর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। অন্তিকে ঢোলে পরতে দেখে সে দ্রুত এগিয়ে আসে। অবনী ব্যস্ত স্বরে অন্তিকে ডাকতে থাকে। তাইমুর অন্তিকে টেনে নিজের দিকে নেয়। অন্তির গালে চাপড়ে বারবার ডাকতে থাকে। কোনো রকম কোলে তুলে নিয়ে নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
–‘আম্মু, পানি আনো জলদি।’
তাইমুর অন্তিকে তার রুমে নিয়ে যায়। তহুরা বেগম পানি নিয়ে যায়। নীলা তার পিছু পিছু যায়। অন্তিকে শুইয়ে দিয়ে তাইমুর তার হাত দুটো গরম করার চেষ্টা করে। নীলাকে দেখে বলে,
–‘ওর পা একটু মালিশ করবেন, প্লিজ!’
অন্তির এই খারাপ সময়ে নীলা তার প্রতি রাগ রাখতে পারে না। পায়ের কাছে বসে পা দুটো মালিশ করতে থাকে। বাবার মৃ’ত্যুতে অন্তি একটা ট্রমা পেয়েছে। যার সাথে সে মানিয়ে নিতে পারেনি। ফলেই জ্ঞান হারিয়েছে। তাইমুর হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অন্তির মুখের দিকে। এর মধ্যে হৃদান আর হানিফা বেগমও এসে পরে। হৃদান এসে অবনীর অবস্থা দেখে তার কাছেই আগে যায়। কাছে টেনে নিয়ে সান্ত্বনা দেয়। থামানোর চেষ্টা করে। অবনী বাবার দিকে ঈশারা করে দেখিয়ে দিয়ে কাঁদতে থাকে। হানিফা বেগম রেহেনা বেগমকে সামলানোর চেষ্টা করেন। বাড়ির পরিস্থিতি ভারী হয়ে উঠেছে।
যোহরের পর জানাযা হয় আনোয়ার সাহেবের। অন্তি শেষ সময় পর্যন্ত বাবাকে ছাড়তে চাচ্ছিলো না। রেহেনা বেগমের, আনোয়ার সাহেবের যত আত্মীয় ছিলো সবাই এসেছে আনোয়ার সাহেবকে শেষবার দেখতে। আনোয়ার সাহেবকে কবরে রেখে আসার পর ধীরে ধীরে সবাই চলে যেতে থাকে। রেহেনা বেগম, অবনী, অন্তি সবাই বিধ্বস্ত হয়ে পরে আছে। অন্তির বুকে তাদের বাবা-মেয়ের ছবি জড়ানো। হৃদান এসে অবনীকে কাছে টেনে নিয়ে বসে। অন্তি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। তাইমুর তা দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়। তার পাশে বসে চুপ থাকে কতক্ষণ। অন্তির এসবে ধ্যান নেই। সে পরে আছে তার বাবার স্মৃতিতে। তাইমুর গলা পরিষ্কার করে বলে,
–‘এ সময় এ কথা বলা ঠিক না। কিন্তু আপনারা কেউই সকাল থেকে কিছু খাননি। এভাবে থাকলে আপনারাও অসুস্থ হয়ে পরবেন। একে অন্যের জন্য শক্ত না হলে বাঁচবেন কিভাবে?’
অন্তি চোখ মেলে তার দিকে তাকায়। অনুভূতিশূণ্য দৃষ্টিতে চেয়েই থাকে। তাইমুরের ইচ্ছে করে মেয়েটাকে তার বুকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু সে সাহস তার নেই। অন্তির চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজের মতো বলে,
–‘প্রত্যেকটা মানুষকে একদিন না একদিন যেতেই হবে। এটাই নিয়ম, অন্তি। কিন্তু তারা চলে গেছে বলে আমরা যদি তাদের জন্য দো’আ না করে সারাদিন কাঁদতেই থাকি তবে তাতে কোনো লাভ নেই। বরং নামাজ পড়ুন, দো’আ করুন যেনো আল্লাহ আঙ্কেলকে জান্নাত নসিব করেন। তবেই না আঙ্কেলের রূহ শান্তি পাবে! তার কি ভাল্লাগতো আপনাকে এভাবে দেখে? আপনাদের এভাবে দেখে?’
মনে রেখ এ আমারে পর্ব ১০
অন্তি কোনো কথা বলে না। শুধু উঠে নিজের রুমের দিকে যায়। সে এখনো গোসলও করেনি। বাবার ছবিটা বিছানার ওপর রেখে ওয়াশরুমে ঢোকে। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তাইমুর জানে অন্তি বুঝেছে। এটুকুই কাঁদবে। এরপর ক্লান্ত হয়ে থেমে গিয়ে নামাজেও বসবে। তাইমুর তবুও অন্তির রুমের দিকে নজর রাখে। অন্তি গোসল করে এসে দরজা ভিজিয়ে দিয়ে সত্যিই নামাজে বসে। তাইমুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অবনীও গেছে। রেহেনা বেগম অসার হয়ে পরে আছেন। তাইমুর তার কাছে গিয়ে বসে মাথাটা নিজের বুকে রাখে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রেহেনা বেগম তার জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছেন। তার কষ্টটা সবার চেয়ে বেশিই বটে।