রং পর্ব ৫৩
তন্নী তনু
যাস্ট ইমাজিন– পুরো শহর জানে তোর মা বুড়ো বয়সে পালিয়েছে। মানসম্মান শেষ!আবার সেই মা”কেও তুই নিজের হাতে মেরে দিয়েছিস। নিজের হাতে……..
নিজের হাতে অজান্তেই তার হাতে তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটির মৃ!ত্যু!!সন্তানের হাতে একজন মা”য়ের মৃত্যু!! এই শোক হৃদয়ে বয়ে বেড়ানোর মতো ভারী কিছু পৃথিবীতে আছে? অসহনীয় উত্তাপে জ্বলতে থাকা ইরফাদ হঠাৎ জ্বলে ওঠে,
— কি প্রুফ আছে!!!
— আইনের লোক! প্রুফ খুঁজিস!কোথায় খুঁজিস নি তোর মাকে? কোথায়! পেয়েছিস? পুরো দুনিয়া তন্ন তন্ন করেছিস, কই তোর মা।
— যেকোনো এক্সিডেন্ট হতেই পারে।
— আমার পুরোনো ফোনের একটা এসডি কার্ড আছে। ঐটা নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর। ঐ কার্ডে সব রেকর্ড আছে। তোর মা ছিলো শাহজাহানের গাড়িতে আল্লাহ্’র কসম। কিন্তু তুই গাড়ি খাদে ফেলে দিয়েছিস। ওদের সাথে তোর মা মারা গেছে।
বুকের আগুনে ছাই চাপা দেয় ইরফাদ, বুক পুড়িয়ে ওঠা অসহনীয় ব্যাথাকে উপেক্ষা করে ক্রুব্ধ গলায় বলে,
— সম্রাট শাহজাহানের কল রেকর্ড রেখে দিয়েছিস!! আগের থেকেই ছয় নম্বরি করার প্ল্যান ছিলো নাকি??
— আরে আরে!! তোর নতুন বউ সরি তখন তো বউ ছিলো না। তোর মতো তীক্ষ্ণ, চতুর পুলিশ অফিসার অন ডিউটিতে থাকাকালীন সিনথিয়া ইবনাকে যদি সবার চোখের সামনে দিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে দিতে পারি। তাহলে সম্রাট শাহজাহান কে দিতে পারতাম না?
— ওখানেও ছয় নম্বরি!!!
–হাহাহা!!!কিন্তু বিশ্বাস কর। আমি সত্যিই চাইনি মিসেস রিদুয়ানুর রহমান মারা যাক। কিন্তু হাতে তো কিছু ছিলো না। ওরা যেকরে হোক গুপ্ত কোঠা থেকে বের করতে বলেছিলো। না হলে কিছু পেপার্স, ডকুমেন্টের এক্সেস আমাকে দিতো না। তাই ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। জিনিসপত্র বুঝে নিয়ে আবারও ধরার ব্যবস্থাও করেছি। তবে তুই যে আমার কাজ এতোটা এগিয়ে দিবি। ওদের পুরো উপরে পাঠিয়ে আমাকে অন্ধকার জগতের বস বানিয়ে দিবি। সত্যিই ভাবিনি। ইসসস!! সেই আগের মতো বলতে ইচ্ছে করছে,– আই প্লিজড ফর ইউ মাই বয়।
ইরফাদ বিড়বিড় করে বুলি আওড়ায়,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–ফ্রড, চি…টার, স্কাউন্ড্রেল…
— কিছু বললে মাই ডিয়ার!!
— তোর জানে ভয় লাগছে না।
— নাহ! একটুও না। আমার কষ্ট হচ্ছে– আমাকে এতো বড় উপকার করে দিলি। কিন্তু তোর জন্যে কিচ্ছু করতে পারলাম না রে।
কি একটা জীবন দিয়ে গেলাম। যখন সত্যিটা তুমি তোমার বাবাকে বলতে যাবে। তখন সবটা সামনে চলে আসবে। আর একদিন না একদিন তো জানতেই পারবে মিসেস সিনহা ( সিনথিয়া ইবনা) সম্রাট শাহজাহানের মেয়ে। আহারে!! খুব শিঘ্রই তোর জীবন আধারে ঢেকে যাবে। ঘন কালো আধার!!!! সারাজীবন আফসোস নিয়ে বেঁচে থেকো মাই সান!! জ্বলবে, পুড়বে কাউকে বলতে পারবে না। হাহাহা! এবারের বউটা রাখতে পারবে তো মাই সান!!!
গরম হয়ে ওঠা রক্তের দাপটে ক্রমেই আগুনের মতো উত্তপ্ত হয় ইরফাদের শরীর, রক্তবর্ণ ধারণকারী কান দুটো থেকে ধোঁয়া উঠছে অনবরত, বুকের মধ্যে অনবরত চলছে তান্ডব।
— মা”কে উপরে পাঠালে, বউটাকেও খেয়ে দিলে হবে!
দফায় দফায় বুকের মধ্যে ধেয়ে আসা অগ্নীস্রোতে ফুলে ফেঁপে ওঠা ইরফাদ, শক্ত ইস্তাতকঠিন পা দিয়ে লাথি দেয় প্রভাতরঞ্জনের ভাঁজ পড়া কপালে। শক্ত বুটের শক্তিশালী আঘাতে তৎক্ষণাৎ ফেটে যায় প্রভাতরঞ্জনের কপাল। তীর ছুটে রক্ত ছিটকে ছিটকে পড়ে । শান্ত, ভদ্র চেহারার আড়ালে লুকিয়ে রাখা দুনির্বার বিধ্বংসী, অগ্নী, হিংস্র রূপ থেকে ঝড়া আগুনে কেঁপে কেঁপে উঠছে ইরফাদ, হাতের মুষ্ঠির উপর ফুলে ওঠা রগে রক্তস্রোতের উত্তপ্ত প্রবাহে হিসহিসিয়ে উঠছে ইরফাদ। শক্ত মুষ্টিতে দফায় দফায় আঘাত হানে অগ্নীমূর্তি ধারণকারী ইরফাদ। শক্ত মুষ্টির আঘাতে কয়েক মিনিটের জন্য কানে প প শব্দ শুনতে পায় প্রভাতরঞ্জন সরকার। এলোপাথাড়ি পায়ের লাথি তে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রভাতরঞ্জন। পায়ের বুটের শক্ত লাথিয়ে কালষিটে পড়ে যায় মুখ,হাত ও গলায়। রাগের উত্তাপে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইস্পাত শক্ত পা প্রভাতরঞ্জনের গলায় চেপে ধরে ইরফাদ। অতঃপর ইরফাদের বেগতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে লোহার শেল এর দরজা খুলে দ্রুত গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে জাবির। নিয়ন্ত্রণহীন রাগে ফুসতে থাকা ইরফাদের ভারী, ইস্পাতশক্ত পা দু”হাতে ছাড়াতে হাসফাস করছে প্রভাতরঞ্জন। তবে প্রলয় এখন মহাপ্রলয়ে রূপ নিয়ে অবিচল পায়ে পিষছে প্রভাতরঞ্জনের গলা। সমস্ত শরীরের রাগ ঢেলে দিচ্ছে ক্রমেই। জাবির দ্রুত গতিতে সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠেলে সরাতে চায় ইরফাদকে। তবে হৃদয়ের পরতে পরতে চলতে থাকা যন্ত্রণার উত্তাপে মহাপ্রলয়ধারণকারী ইরফাদকে নড়ানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই। প্রভাতরঞ্জনের হাসফাস গলায় উঠে গেছে মৃত্যুর লিলাখেলা। জাবির অনুরোধ মিশ্রিত গলায় বলে,
— স্যার!! মরে যাবে। ছেড়ে দিন। স্যার!!!
নিজের কাজে নিশ্চল, অবিচল, দৃঢ় থাকা মানুষটি এখন জ্বলন্ত অগ্নী। তাকে রুখবার ক্ষমতা কারো নেই। জাবির একবার পা ধরে একবার পাজরে হাত রেখে বিনয়ের সাথে ইরফাদকে পেছন দিকে ঠেলে। ইরফাদের পায়ের তলায় চাপ বাড়ে, খুকখুক করে কেশে ওঠে প্রভাতরঞ্জন সরকার। জাবির নিজের সাথে তলিয়ে ভাবে। রাগকে কেবল দমানো যায়, ভালোবাসা দিয়ে, ইমোশন দিয়ে।
পা দুহাতে জড়িয়ে ধরে জাবির। অতঃপর,
— ছেড়ে দিন স্যার!! প্লিজ…
অনেক কিছু জানার আছে স্যার!! এই মানুষটাকে এভাবে শেষ করলে তো হবে না। এত সহজে মুক্তি দিবেন? এমন শাস্তি একে দেয়া হোক!একদিন বাঁচার জন্যে মৃত্যু চাইবে এই মানুষটা। ছেড়ে দিন স্যার।
এরপরেই উত্তপ্ত শরীরে প্রবাহিত রক্তস্রোতে মেশে একটুকরো বরফ। পায়ের চাপ ঢিল হয়ে আসে। তবে রাগে কাঁপতে থাকা বলিষ্ঠ শরীরের বিশালাকার মানুষটির কন্ঠে ঝড়ে জলন্ত অগ্নীশিখা। মেঘের গর্জেনের চেয়েও ভয়াল কন্ঠ তার,
— স্কাউনড্রেল! সব ধ্বংস করে ফেলেছে। কয়েকটা পরিবারকে শেষ করে ফেলেছে ও।
— আই নৌ স্যার। প্লিজ শান্ত হোন। প্লিজ…..
— আমাদের দেশে ভালো ক্রিকেট খেলে এমন অনেক প্লেয়ার আছে। যারা দেশের সুনাম ধরে রাখে। ওদের মতো মুখোশধারীর ব্ল্যাকমেইল অথবা ছলচাতুরিতে অনেকেই পা দেয়। এরপর ক্যারিয়ার শেষ। একটা ব্রাইট ক্যারিয়ারের ছিলো রাফসানের। তার নিজের দোষ তো আছেই তবে নিজ হাতে ধরে ছেলেটিকে নষ্ট করেছে এই স্কাউনড্রেল! সদ্য জীবন উপভোগ করতে থাকা তরুণদেন শুভ্র ফুলের মতো কতো জীবন নিজ স্বার্থে নষ্ট করেছে । অথচ দেখেন এর কি অবস্থা। নেই বিন্দু পরিমাণ অনুতপ্ততা। আমার মা’কে পর্যন্ত এরা ছাড়েনি।
— বিষয়টা খুবই প্যাথেটিক!! তবুও শান্ত হোন স্যার!!
কথাটুকু বলেই উঠে দাঁড়ায় জাবির। রাগে, ক্ষোভে যন্ত্রণায় মাথার নিউরনের টন টন ব্যাথায় ইরফাদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরপর কয়েকবার পায়ের আঘাত করে প্রভাতরঞ্জনের পেটে। শক্ত আলিঙ্গনে হাতের বাঁধনে আকড়ে ধরে জাবির ইরফাদের অগ্নিপ্রবাহ উত্তপ্ত শরীর। অতঃপর মাথা বুকে ঠেকিয়ে পিঁছিয়ে নিয়ে যায় পুরো অগ্নীশিখাকে। তারপর বসিয়ে দেয় লেদারের চেয়ারে। ফোস ফোস করে শ্বাস ফেলা মানুষটি চেয়ারে শরীর এলিয়ে শক্ত করে নিজের চুলগুলো খামছে ধরে। অদৃশ্য ধোঁয়া ওঠা কপাল চুইয়ে পড়ে উত্তপ্ত ঘাম। জাবির পানি এগিয়ে দেয়। তারপর বলে,
— কনট্রোল! কনট্রোল!
লোহাল অন্ধকার শেলে চেয়ারে মাথা নুইয়ে বসে আছে রাফসান। পরাক্রান্ত শরীরের দাপট, নুইয়ে গেছে অনুতপ্ততায়। ফেলে আসা সময়ে একটুকরো ভালোবাসা নামক আলোকে আধারে ডুবিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে সময় অতিবাহিত করে এখন যে উপলব্দি মনে উপচে পড়ছে সেই অদৃশ্য ব্যাথায় সে জর্জরিত।সহসাই খুলে যায় লোহার সেল।লোহার সেলের ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজে মাথা তুলে তাকায় রাফসান। চোখের সামনে তেজস্বী চেনা পরিচিত মানুষটিকে দেখে আগের মতো রাগ হচ্ছে না। বরং হৃদয় দুলে উঠছে। আলগোছে উঠে দাঁড়ায় রাফসান। লোহার সেলের ভেতরে চেয়ার দেয় একজন সহকর্মী। ইরফাদ চেয়ার টেনে বসে। নিশ্চল, নিরব রাফসান শক্ত খোলশ পাল্টে যেনো ঝুরঝুরে বালির মতো ঝড়ে পড়ছে। ইরফাদের উতপ্ত গলাটা এখন স্বাভাবিক,
— মিস্টার রাফসান!! আপনার সুন্দর স্বচ্ছ একটা ক্যারিয়ার ছিলো। লাইফটা ব্রাইট হতে পারতো। জীবনকে জটিল করে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। পুরোটা জীবন শুধু ছুটলেন অথচ নিজেই জানেন না কিসের পেছনে ছুটলেন। আমার উপর আপনার প্রচন্ড রাগ সেটাও একটা চিঠির উপর ভিত্তি করে। আমাকে কষ্ট দিতে যেয়ে আপনি নিজে নিজের মধ্যেই একটা ক্ষত সৃষ্টি করলেন। যা এখন বয়ে বেড়াতে সবে জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত। এক্সপ্লেনেশন দেয়া আমার সাথে যায় না। পারসোনাল ইস্যু টানা বেমানান। তবে কিছু কথা বলতেই হয়–আপনি যখন জানবেন আপনার বাবা তার কর্মফলেই বিনাশ হয়েছে। আর একজন সাইলেন্ট কিলার আপনাদের সকলের সাথে খেলে গেছে তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে।
যাইহোক, জানাতে এসেছিলাম সম্রাট শাহজাহানের জীবন মরণের সাথে পারসোনালি আমার কোনো যোগ নেই। কর্ণেল রিদুয়ানুর রহমানের সাথে সম্রাট শাহজাহানের একটা আইনি বোঝাপড়া ছিলো।দশ বছর আগেই তা সমাপ্তি হয়ে গেছে। ধারণা করা হয়েছে দশ বছর আগে চট্টগ্রামে খাদে পড়ে কয়েকজন মানুষ মারা যান। সেখানে সম্রাট শাহজাহানও হয়তো ছিলেন। আমার সাথে এবং রিদুয়ানুর রহমানের সাথে সম্রাট শাহজাহানের পারসোনাল কোনো শত্রুতা নেই। যা জেনেছেন তা শুধু আপনাকে হাতে রাখার চেষ্টা। আপনাকে কাজে লাগিয়ে কেউ আড়ালে দেশ শুষে খেতে চেয়েছিলো।আপনাকে হাতিয়ার করে কেউ একজন তার পাপের সাম্রাজ্যকে ফুলেফেপে তোলার জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তিনিই সম্রাট শাহজাহানের কাছের মানুষ ছিলেন। তিনিই আপনাকে চিঠি পাঠিয়ে আমার বিরুদ্ধে উস্কেছেন। পারসোনালি আপনার আর আমার মধ্যেও কোনো দন্দ নেই। মাঝখান থেকে দুটো জীবন নিয়ে আপনি হৃদয়বিদারক খেলা খেলেছেন। কতোটুকু শাস্তি আপনার বরাদ্দ তা আইন দেবে। তবে একটা ছোট্ট ফুলের জন্মদাতা আপনি।আপনার রিকুয়েস্টে নয়, বাচ্চার বাবা বেঁচে আছে সেই প্রেক্ষিতে আমি কোনো একদিন আপনার সাথে তাকে দেখা করাবো যখন আমার মনে হবে আপনার কাছে শুভ্র ফুলটা সেইফ।
নিস্তব্ধ, নিশ্চল শক্ত খোলশহীন দেহ টা দূর্বল চোখে তাকায় ইরফাদের তীক্ষ্ম চোখ দুটোর দিকে। চোখ হয়ে ওঠে রক্তলাল। নোলাজলে ছেপে আসা ঝাপসা চোখ দুটোতে আকুতি নিয়ে বলে,
— আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী হতে পারি তবে আমার মেয়ে আমার কাছে সবসময় নিরাপদ। একজন বাবার কাছে সন্তান সবসময় সেইফ স্যার।
আমার মেয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস! আমার অনুতপ্ততার প্রথম ছোঁয়া তো আমার মেয়েকে দেখেই শুরু। আইন কি শাস্তি দিবে?? আমার শাস্তি হয়ে গেছে তখনই যখন আমার সন্তানের মুখে বাবা ডাক শুনার ইচ্ছায় আমার হৃদয় পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। অপেক্ষা চেয়ে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে স্যার। আমার মেয়েকে একবার কাছে দিন! একটাবার স্পর্শ করতে দিন। একটু আদর করতে চাই।
— আই নিড টাইম!!
— এর চেয়ে বড় শাস্তি হবে না আমার জন্য। আমার অপেক্ষার পথ এতো দীর্ঘ করবেননা। আমি পৃথিবীর সমস্ত রিভেন্স, সমস্ত রাগ,সমস্ত পাওয়া না পাওয়ার হিসেব চুকিয়ে দিয়েছি। পৃথিবীতে কোনো সত্যি জানার ইচ্ছেই আর নেই। আমার বাচ্চাটাকে আমার বুকে দেন। একটা ছোট্ট বোনের প্রতিক্ষায় থাকতে থাকতে জীবনে যে প্রলয় ঘটে গেছে বোনটাকেও দীর্ঘ বছর চোখে দেখিনি। আবার বাচ্চাটাকেও পাবো না?
— যখন রাস্তায় ঠেলে দিয়েছিলেন বাচ্চা সহ আরেকজনের বোনকে?
— ভালোবাসা পাই নি তো কখনো। তাই ভালোবাসতে পারিনি।নিজের সন্তান থাকার যে অনুভূতি ঐটাও বুঝতে পারিনি। বাবা ডাকলে যে এমন লাগে তা তো জানতাম না স্যার!
— হোয়াটএভার, আই হ্যাভ টু গো।
— ট্রাস্ট মি! ও আমার কাছে সেইফ। আমি ওকে একবার জ ড়িয়ে ধরবো। ও একবার পাপা ডাকবে। ব্যাস! আর কিছু চাইনা।
নির্দয় লৌহশক্ত হৃদয়ের মানুষটি আবেগী সকল কথাকে উপেক্ষা করে উঠে দাঁড়ায়। আবেগ শুনে গলে যাওয়ার মতো মানুষ অন্তত ইরফাদ না। অপরপৃষ্ঠের তেজস্বী উত্তাপ বিলীন হয়ে যাওয়া রাফসানের চোখভর্তী জল। যে বলবান হাতে দাপটে শতশত মাফিয়া কাবু হয়ে যেতো, নিজের সেই অগ্নীরূপ,দাপট মাটিতে মিশিয়ে দুহাত জোর করে দাড়ায় আবারো। গলার স্বরে কেবল আকুলতা, অসহায়ত্ত্ব,
— এক অসহায় পিতার থেকে তার সন্তানকে দূরে রাখবেন না। তাহলে আমার বাচ্চাটাকে দেখার তৃষ্ণায় আমি মারা যাবো স্যার! আমি হাতজোড় করছি– আমার জেল, ফাঁসি যাই হোক আমার বাচ্চাটাকে আমার কোলে দেন, একটু আদর করতে দেন। বাচ্চাকে কাছে না পাওয়ার চেয়ে যন্ত্রণার চেয়ে ভয়ানক যন্ত্রণা মনে হয় দ্বিতীয়টা নেই।
— আই রিপিট- আই নিড টাইম!
–এই সময়ের আগে আমি যদি মরে যাই?
— আপনি কি অফিসিয়াল রুলস ব্রেক করতে বলছেন? রুলস অনুযায়ী সব এক্সপোজ হওয়ার পরেই আপনার সুভাকাঙ্ক্ষী আপনার সাথে দেখা করতে পারবে। সব এখন অবধি হাইড করা আছে। সব এক্সপোজ হবে দ্যান আমি ভেবে দেখবো! পারসোনাল কথা বলতে আমি এখানে আসিনি মিস্টার রাফসান!!
— পৃথিবীতে কতো কিছু তো রুলসের বাইরে হয়।
— স্টপ! ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।আপনি ভুলে যাচ্ছেন –হু আই এম! আপনি এটাও ভুলে যাচ্ছেন আপনি কে! আর আপনি কোথায় আছেন!
রং পর্ব ৫২
বলেই সব উপেক্ষা করে দ্রুত পা ফেলে ইরফাদ। ঠিক ঐ সময়ে পুরো দুনিয়ার নিয়ম নীতি মান অপমান ভুলে এক তেজস্বী সিংহ নিজের সমস্ত ক্ষমতা, দাপট নিংড়ে দিয়ে পা জড়িয়ে ধরে ইরফাদের,
–একটু কি নরম হওয়া যায় না স্যার!বাচ্চাটাকে দেখার তৃষ্ণায় আমার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে স্যার।