পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৬
সাদিয়া আক্তার
— নাম তার নিশু নিশু নাম তার নিশুউউ
সে বিছানায় করে হিশু হিশু বিছানায় করে হিশু,,
রাইয়্যানের গান শুনে চন্দ্র বাদে। শিহাব রিশান মুক্তি ঝিনুক রিমি উচ্চ স্বরে হেসে দিলো। বাদ বাকি সবাই ঠোট চেপে হাসছে রোজিনা বেগমও বাদ যায়নি। নিশা সবার দিকে তাকিয়ে রাগ করে উঠে যেতেই পারভেজ সাহেব যায় তার পিছু পিছু। কামরুল সাহেব মিরাজ সাহেব ও রমিজ সাহেব টেবিল ত্যাগ করেন।
রোজিনা বেগম নিশার কাছে যায়না। জায়েদের কাছে রান্নাঘরে চলে যায় যতোই হোক আজকে তার মেয়ের জামাই আসবে তদারকি করা প্রয়োজন।
ছোটরা সবাই টেবিলে বসে সকালের ব্রেকফাস্ট করছে। চন্দ্রের সামনে বসে আছে পুনম মুক্তির সাথে হাস্যজ্জল ভাবে কথা বলছে। চন্দ্র গভীর চোখে তাকায় এবং তাকিয়েই থাকে। মনে মনে ভাবে — কি আছে এই মেয়েটার আদলে যা তাকে এতো টানে??
— চন্দ্র নজর সামলে মেয়েটার বদ নজর লেগে যাবে,,
— এই চন্দ্রের নজরে ও অনেক আগেই পড়েছে। তাইতো এই চন্দ্রের গ্রহন লাগছে ওর জীবনে যেখানে চন্দ্র গ্রহন লাগে সেখানে বদ নজর টিকে না।
চন্দ্রের কথা শুনে রিশান হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।।
পুনম হঠাৎই চোখ তুলে তাকায়। তাকিয়ে দেখে চন্দ্র গভীর চোখে তাকিয়ে আছে চোখের ভাষা অদ্ভূত।
— তোর বয়স কত রে??
— কেনো?? আর আপনি কি আদম শুমারি কাজে নিয়োজিত হয়েছেন নাকি কাল নিশার বয়স জিজ্ঞাসা করলেন আজ আমার।
— বেশী কথা আমি পছন্দ করি না যা জিজ্ঞাসা করেছি উত্তর দে,,,
চন্দ্রের গম্ভীর স্বর শুনে কথা বাড়ায় না পুনম
— একমাস পর আঠারো হবে,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— পারফেক্ট একমাস নিজেকে রেডি কর। আর হ্যা ঐ মেডিক্যাল ঢাকা ইউনিভার্সিটি এগুলো চিন্তা বাদদে। একমাত্র জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করবি। এটাতেই চান্স পাওয়া চাই নাহলে,,,
কথা শেষ করে না চন্দ্র পুনম ভয় পায় তবে দমে যায় না থমথমে স্বরে বলে — আমার ইচ্ছা আমি,,,
— উহু কথাটা সেখানেই আটকে রাখ,, সম্পূর্ণ হলে তুই অসম্পূর্ণ হয়ে যাবি,,
মুক্তি পুনমের হাত ধরে ইশারা করে আর কিছু না বলতে পুনম গাল ফুলিয়ে। উঠে যায় মুক্তি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সবাই হঠাৎই চন্দ্রের কথায় বেশ অবাক হয়। শিহাব কৌতূহল না থামাতে পেরে জিজ্ঞাসা করে
— কি হয়েছে রে মুক্তি চন্দ্র হঠাৎই হাইপার হয়ে গেলো,,,
— আসলে শিহাব ভাই কাল রাতে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম পুনম কোন ভার্সিটিতে পড়তে চায় মানে ওর টার্গেট কি?? ও বলেছিল হয়তো মেডিক্যাল নয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেটাই মনে হয় ভাই শুনে ফেলেছে।
তখনই রিশানও ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বলল — তুমিও ভুলেও অন্য ভার্সিটিতে আবদেন করতে যেও না
— অ্যাহ মামা বাড়ির আবদার নাকি??
— হ্যা আমার মামার বাড়ির আবদার সো যা বলি সোজাসুজি তাই করবে।
গাল ফুলিয়ে চুপচাপ খাওয়া শেষ করে।। শিহাব বিরক্ত এই দুইজনের জন্য।। তার বোন দুইটাকে এরা শান্তিতে থাকতে দিল না।
জুম্মার দিনকে মুসলমানদের কাছে ছোট খাটো একটা ঈদ মানা হয়। পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা সুগন্ধি মাখা পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া এসবই বেশ যত্ন নিয়ে করে প্রত্যেকটা মুসল্লি।
বারোটার দিকে রুপশাকে নিয়ে হাজির লিমন তখন বাড়ির ছেলেরা কেউ কেউ রেডী হবে কেউ রেডী হয়ে গেছে।
লিমন রুপশা প্রবেশ করতেই তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তিন কর্তী।।
কয়েক মিনিটের মধ্যে বাহারি নাস্তা পরিবেশন করে ফেলে
— আম্মা চাচী আম্মারা আমি পালিয়ে যাচ্ছি না নামাজ পরেও এখানেই আসব এতো ব্যস্ত হবেন না আপনারা।
— তা কি করে হয় বাবা আপনি এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এসেছেন,,,
— উহু প্রথম এসেছি দেখেই বুঝি আমাকে আপ্যায়ন করছেন রেগুলার আসলে করবেন না তাইতো??
— না না বাবা আমি সেরকম কিছু বলিনি,,
চাদনী বেগমকে বলতে না দিয়ে হেসে উঠল লিমন। রুপশা লিমনের এই নতুন রুপের সাথে এই প্রথম পরিচিত হলো।
— তা আর সবাই কই?? আম্মু পুনম নিশা কই??
— নিশা পুনম ওদের ঘরে তুই যা মা জামাইকে নিয়ে ঘরে রেষ্ট কর। আমি নিশাকে ডাকছি,,, নিশা,,,
বলেই নিশাকে ডাক দিলো নিশা ঘরের থেকে বিরক্ত হয়ে বের হলেও লিমনকে দেখে সেটা টিকল না। সে দৌড়ে এসে লিমনকে ঝাপটে ধরে। লিমন হচকচিয়ে যায়। রুপশা হিংসাত্মক চোখে নিশার দিকে দেখে তাকে টান দিয়ে সরিয়ে দেয়।
লিমন এদিক সেদিক তাকায় ভাগ্যিস মুরুব্বি কেউ নেই। নির্লজ্জ নিশা দমে যায় না — কেমন আছেন দুলাভাই??
বেশ লাস্যময়ী ভঙিতে বলল নিশা। লিমন আড়চোখে রুপশার দিকে তাকাতেই দেখে রুপশা রাগে ফুসছে। লিমন বাকা হাসে সে চাইলে এর ফায়দা লূটতে পারে তবে সে তা করবে না। কিন্তু রুপশাকে একটু ঝাটকা দিবে। দেখবে পাখি কতটুকু পোষ মানিয়েছে,,,,
— আলহামদুলিল্লাহ্ ছোট আপু,,,,
লিমনের মুখে ছোট আপু ডাক শুনে নিশার মুখ চুপসে গেলেও রুপশার চেহারা উজ্জল হয়। এর মধ্যেই পুনম মুক্তি রিমি ঝিনুক সবাই বের হয় এরা চারজন লিমনকে সালাম দেয়।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম ছোট আপুরা কেমন আছো সবাই,,??
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভাইয়া আপনি?? রুপশার দিকে তাকিয়ে পুনম বলে — কেমন আছো আপা??
রুপশা পুনমের মাথায় হাত বুলায়। — ভালো আছিরে পুনম তুই কেমন আছিস ঢাকায় এসেছিস একসপ্তাহ একটাবার আপার সাথে দেখাও তো করতে গেলি না,,
— আমি তো কিছুই চিনি না আর মুক্তি আপুর পরীক্ষা চলাকালীন কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি।
— তাই বলে একটু বোনের বাড়িতে বেড়ানো উচিৎ আপু মনি,,
— যাব ভাইয়া ইনশাআল্লাহ,,,
এভাবেই তাদের আড্ডা চলে কিছুক্ষণ চন্দ্ররা রেডি হয়ে আসতে সবাই নামাজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। পাঁচ বোনের আড্ডা চলে সেখানে নিশার কোনো পাত্তা নেই। তাই নিশা রাগে ফূসতে ফুসতে সেখান থেকে চলে যায়।
— আম্মু তোমার মোবাইল কই??
ঘরের থেকে চিল্লিয়ে ডাকে নিশা। রোজিনা রান্নাঘর থেকেই উত্তর দেয়
— দেখ মনে হয় আমার সাইড ব্যাগে আছে মনে হয়।
নিশা রোজিনা বেগমের ব্যাগ হাতরে মোবাইল খুজতে যেয়ে কিছু কাগজ তার হাতে লাগে। সেগুলো বের করে দেখে ডাক্তারের রিপোর্ট বের করে ভালো করে পড়তেই শক হয় নিশা ধপ করে খাটে বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ অভাবেই বসে থেকে আবার পায়চারি করতে থাকে এটা কিভাবে সম্ভব তারা কি করবে। এটা আব্বু আম্মু কিভাবে করতে পারল তাদের সাথে। সবাই কি বলবে???
এসব ভেবেই নিশা এদিক ওদিক পায়চারি করতে থাকে।
দুপুর দুইটায় সবার নামাজ শেষ হলে আসে। ড্রয়িং রুমেই আসর বসে কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেব ও মিরাজ সাহেবের সাথে কথা বলছে লিমন।
— আব্বু ফুপা কই??
— হ্যারে পূর্ণ তোর ফুপাকে দেখছি না। ভাইজান শিহাবের আব্বু কই??
— এই যে আমি
দুই হাতে দধির হাড়ি নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল রমিজ রহমান। কামরুল সাহেব রাগ করেন সে রাগী স্বরেই বলে — এসব কি রমিজ আমি মানা করিনি,,,
— এগুলো কি আপনাদের জন্য এনেছি নাকি আমার মায়েদের জন্য এনেছি,,,
কেউ আর কিছু বলে না। সবাই আবার গল্পে মশগুল হয়। এরমধ্যেই খাওয়ার ডাক পরে সব ছেলেরা আগে বসবে তাই সব ছেলেরা খেতে বসে।
নিশা হতদত হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। চিল্লাচিল্লি করে রোজিনা বেগমকে ডাকে। গোসলে ছিলো রোজিনা বেগম মেয়ের ডাক শুনে দৌড়ে আসে।
— কি হয়েছে নিশু মা এমন চিল্লাচিল্লি করছ কেনো
নিশার মাথায় পারভেজ সাহেব হাত বুলিয়ে বলল। নিশা তার হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেলে। ততক্ষণে রোজিনা বেগমও উপস্থিত হয়।
নিশা কর্কশ স্বরে পারভেজ সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল — এটা কিভাবে করতে পারলে আব্বু একটা বারো কি আমাদের কথা চিন্তা করলা না,আমরা সমাজে মুখ দেখাব কি করে
— কি হয়েছে নিশা কি করেছি আমি যার জন্য তোমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না,,,,
— নিশা মুখ সামলে কথা বলল
— কেনো চন্দ্র ভাই তারা করতে পারবে আমি বলতে পারব না,,
— আবার বেয়াদবি
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৫
বলেই চন্দ্র ঠাডিয়ে একটা চড় মারে। নিশা একদিকে হেলে পড়ে তাকে রোজিনা বেগম ধরতেই তার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয় নিশা। রিপোর্টের পেপার গুলো রোজিনা বেগমের হাতে দিয়ে বলে — আম্মু এগুলো কি সত্যি?? তুমি কি সত্যিই প্রেগনেন্ট??
নিশার কথা বিস্ফোরণের মতো পড়ে সবার মাথায় কি বলছে নিশা সবচেয়ে অবাক হয় পারভেজ সাহেব।