পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৮
সাদিয়া আক্তার
— পুনম তুমি এই দুই দিন ক্লাসে আসোনি কেনো??
উদ্বিগ্ন কন্ঠ মুহিবের। পুনম মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে নজর উঠিয়ে মুহিবের দিকে তাকিয়ে বলল — স্যার গ্রাম থেকে আমার আব্বু আম্মু এসেছে তাদের সাথে সময় কাটাতে গিয়ে আসতে পারিনি।
— লেইম এক্সকিউজ দিয়ে কখনও ক্লাস বন্ধ করবেন না মিস পুনম
তুমি থেকে আপনিতে গেলে ভরকে গেলো পুনম মুহিব স্যারের কন্ঠস্বর কেমন রূঢ় ঠেকল তার কাছে। তবুও পুনম কিছু বলল না মাথা নাড়াল।
ইশারায় বসতে বলে বোর্ডে লিখতে শুরু করে। বিরক্তিতে মার্কার চেপে ধরে মুহিব।। তার এই কাজল কালো চোখের অধিকারী শ্যামবর্না মায়াবী মেয়েটা যে তার অনেক্ষানি দখল করে ফেলেছে সেটা কি এই বোকা মেয়েটা জানে উহু জানে না।
মনে মনে মুহিব কিছু ঠিক করে ফেলল।
চন্দ্র ভ্রু কুচকে সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করছে। এই কোচিং সেন্টারের মালিক চন্দ্র এখানে আই এল টি এস সহ ভর্তি কোচিং ও করানো হয়। আই এল টি এস এর গ্রুপ ক্লাসের রিডিং ক্লাসটা চন্দ্র নিজে নেয় আজ স্কেজুউতে চন্দ্রের ক্লাস নেই তাই সে নিজের অফিস রুমে বসে বসে নতুন ভর্তি স্টুডেন্টদের ফ্রম দেখছিল তখনই তার পুনমের ক্লাসের সিসিটিভি ক্যামেরাতে নজর পড়ে সে তৎক্ষণাত উঠে দাড়ায়।
গটগট পায়ে পুনমের ক্লাসের সামনে দাড়ায়।
ক্লাস করাচ্ছিল মুহিব সাথে কোণাচোখে পুনমকেও দেখছিল মেয়েটার মাথা নিচু করে নিজের মতো লিখছে।
এর সুশ্রি চেহারায় তাকালে মুহিবের মনটা শীতল হয়। চন্দ্র মুহিবের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পায় তৃতীয় সাড়িতে শেষের দিকে বসেছে পুনম মাথা নিচু করে লিখছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— মি. মুহিব
চন্দ্র বেশ জোরেই ডাক দিল। ক্লাসের সবার নজর চন্দ্রের দিকে যায়। মুহিব হচকচিয়ে চন্দ্রের দিকে তাকায়।
— জজ্বী স্যার,,,
— কাম টু মাই কেবিন আফটার ক্লাস,,,
— হোয়াই স্যার??
মুহিবের কথায় চন্দ্র রাগী চোখে তাকাতেই মুহিব নজর ঝুকাতে বাধ্যা হয় পুনমের দিকে তাকিয়ে বলে — মিসেস পুনম আজ আমার দেরী হবে আমার জন্য ওয়েট করবেন আমার অফিস রুমে,,,
পুনম হতবাক হয়ে তাকিয়ে রয় চন্দ্রের দিকে। মুহিব বিস্ফোরিত চোখে পুনমের দিকে তাকায় এই মেয়ে বিবাহিত। কই বিবাহিতদের মতো কোনো লক্ষণ তো তার নজরে পরে না। মুহিব চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে চন্দ্র আবার গটগট পায়ে চলে যায়। রেখে যায় দুইজন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা মানুষকে।
প্রথমজন মুহিব যে ভাবছে এই মেয়েটা কি সত্যি বিবাহিত
অন্যজন পুনম যে ভাবছে সে বিবাহিত সে নিজেই জানে না।
ক্লাস শেষে মুহিব চন্দ্রের কক্ষে নক করে — আসব স্যার,,,
— আপনার ট্রান্সফার হয়েছে কাল থেকে আপনি উত্তরার ব্রাঞ্চে ক্লাস করাবেন।
— কিন্তু কেনো স্যার?? আমার অপরাধ
মুহিবের কথায় চন্দ্র চোখ তুলে তাকায়। আবার কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখে গম্ভীর স্বরে বলল — আপনার কাজে গাফিলতি হচ্ছে নজর অন্যদিকে সরে যাচ্ছে। যেটা আমার পছন্দ না আপনার দিকটা বিবেচনা করে আমি আপনাকে বরখাস্ত করিনি যাষ্ট ট্রান্মফার করেছি।। আই হোপ নেক্সট টাইমে নিজের কাজ মনোযোগ দিয়ে করবেন।
মুহিবকে আর কিছু বলতে না দিতে যাওয়ার ইশারা করে চন্দ্র। মুহিব চলে যেতেই চন্দ্র চেয়ারে হ্যালান দিয়ে বসে বিড়বিড় করে বলে — আপনার নজর পরেছে আমার জোহরার উপর তা আমি কি করে সহ্য করে শুধু ঐ চোখে খারাপ কিছু পাইনি বলে ছেড়ে দিয়েছি নাহলে ঐ চোখ তুলে নিতে দুই মিনিট ভাবতাম না।
দুপুরে দুইটা পুনম চন্দ্রের অফিস রুমে বসে আছে। চন্দ্র নেই সেখানে সে তার স্টুডিওতে আছে। পুনম তাকায় চারিদিকে সিলভার প্লে বাটন চারটা গোল্ডেন প্লে বাটন দুইটা আরো কিছু সার্টিফিকেট। ফ্রেম করে সাজানো হয়েছে। একপাশের দেয়া আয়াতুল কুরসি ক্যালিগ্রাফি ঝুলছে যেটা পুনমের নিজস্ব তৈরী দেখেই পুনম খুব সহজে চিনতে পেরেছে।
এই ক্যালিগ্রাফিটা তাকে দিয়ে মুক্তি তৈরী করিয়েছিল নিজের ঘরের জন্য তবে সেটা এখানে কেনো,???
পুনম নিজের প্রশ্নের উত্তরের জন্য চন্দ্রের খোঁজ করে পাশের রুমে উকি দিয়ে দেখে চন্দ্র বসে আছে সিঙ্গেল সোফায়।
পডকাষ্টের মতো করে সিঙ্গেল সোফায় বসে সামনে স্ট্যান্ডিং মাইক। গম্ভীর চেহারায় একের পর এক গ্র্যামার ইংলিশ এবং এডভান্স ইংলিশ বলে চলেছে চন্দ্র।
পুনম খুটিয়ে লোকটাকে দেখে নামের মতোই সুন্দর লোকটা এইযে মুখের গাম্ভীর্য মনে হয় চেহারায় মানানসই। এককথায় আগুন সুন্দর।। কিন্তু আগুন সুন্দরী তো মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হয় এই লোক এতো সুন্দর হবে কেনো আর হবিই যখন একটু কম সুন্দর হতি বেডা তাহলে তার ক্লাসের মেয়েরা তার মাথাটা একটু কম খেতো।
মেয়েরা যে কি পাইছে এই গাম্ভীর্য রসকসহীন লোকটার মধ্যে একদম তিতা করলা। মনে মনে ভেবেই ভেংচি কাটে পুনম।
প্রায় বিশ মিনিট পর চন্দ্রের কাজ শেষ হলো সে স্টুডিও রুম থেকে বের হয় দেখে পুনম টেবিলে মাথা রেখে আছে খাবার পাশেই ঢাকা দেয়া।
— খাসনি কেনো??
চন্দ্রের কথায় ধরফর করে উঠে পুনম। বড় বড় নিঃশ্বাস নেয় পুনম কলিজাটা মনে হয় বের হয়ে যাবে। চন্দ্র এগিয়ে আসে পুনমের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে — টেক অ্যা ব্রেথ ড্যামেইড,, পানিটা খা,,
পুনম পানি খেয়ে আরো কয়েকটি শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করে।।
— এমন করে কেউ ওঠে,,
— আআমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তাই ভয় পেয়েছি,,
চন্দ্র কিছু বলে না। কাউকে কলে করে গেটে নক হতেই একটুখানি দরজা খুলে টেবিলে রাখা খাবারের থালাটা দিয়ে বলল — গরম করে দাও আর আমার খাবারটাও পাঠিয়ে দাও,,,
কিছুক্ষণ পরে খাবার আসতেই চন্দ্র তা নিয়ে পুনমের সামনে রাখে। প্লেট রেখে আসার সময় পুনমের মাথার ঘোমটা নামায় পুনম ছটফট করে উঠতেই চন্দ্র তাকে বসিয়ে ভেজা চুলের খোপাটা খুলে দেয়।
ঝরঝরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে মেঘ কালো চুল।।
— চুল খুললেন কেনো চন্দ্র ভাই,,,,
— চুলটা ভেজা গর্ধপ একটু পরেই তো মাথা ব্যাথায় কাহিল হবি তাই খুলে দিয়েছি,,,,
পুনম চন্দ্রের সাথে কথা বাড়ায় না ওড়না নিয়ে মাথায় দেয়। চন্দ্র নিজের খাওয়া শুরু করতে করতে বলে — দ্রুত খা তোকে বাসায় দিয়ে আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে,,
— তাহলে আমি একাই যাই,, আমি রিক্সা করে চলে যেতে পারব।
— রাস্তাঘাট কতটুকু চিনোস তুই একা একা যাবি,, যাওয়া লাগবে না আমি দিয়ে আসব,,
— আমাকে তো একাই চলাফেরা করতে হবে,,
— সেটাও করিস যখন আমি থাকব না,,,
আমি থাকব না ” কথাটা শুনে বেশ খারাপ লাগল পুনমের। তবে কিছু বলল না চুপচাপ খাওয়া শুরু করল। চন্দ্র খেতে খেতে পুনমকে দেখল স্নিগ্ধ আদলখানি দেখলে চন্দ্রের উত্তপ্ত বুকখানা শান্ত হয় যেনো সেখানে একবালতি বরফ ঢালা হয়েছে।
পুনম বাসায় পৌঁছে দেখে তাদের ঢাকায় নিজেদের বাসায় যাওয়ার জন্য সবকিছু রেডি করছে কামরুল সাহেব। পুনমরা বেশী দূরে যাবে না চন্দ্রদের বাসার পিছনে যে ছয়তলা বিল্ডিংটা সেখানেই তারা উঠবে। কাল তারা সেখানেই উঠবে। কাল আবার রুপশাও আসবে পারভেজ সাহেব বলতে লিমন মানা করেনি।
তখনও রুপশা হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আজ যেনো তার একেরপর এক ঝটকা খাওয়ার দিন ছিলো।।
ট্রাক দিয়ে আসবাব পত্র আনিয়েছে কামরুল সাহেব তিনটা খাট আলমারি সোকেজ সোফা সহ যাবতীয় আসবাব পত্র। আজ লোক দিয়ে সেগুলো সেটআপ করিয়ে কাল তারা যাবে পুনম অবশ্য ভেবেছে কাল তো কোচিং নেই তাই সেই সব গোছগাছ করবে।
কিছু পেইন্টিং ও করেছে দেয়ালে সেট করার জন্য কাল রাত জেগে সেগুলো করেছে।
বিকাল পাচঁটা ক্যাম্পাসে বসে আছে চন্দ্র রিশান শিহাব তারা আলোচনা করছে আর কিছুদিন পরেই তাদের প্রথম সেমিস্টার তাই সেই বিষয়ে আলোচনা করছে।
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৭
— এই চন্দ্র পূর্ণ যদি মেডিক্যালে চান্স পাইতো কতই না ভালো হইতো,,
— কেনো
— আরে মেঝ মামির অহংকার পানিতে চুবানি খাইত।
— ওনার অহংকার সেদিনের পর এমনিতে পানিতে চুবানি খাইছে,, তার আদরের কন্যার ব্যবহার শুনে তার তাচ্ছিল্য শুনে।।
— তবে চন্দ্র দেখ নিশাটার একটু খোঁজ নেয়া দরকার,,
শিহাবের কথায় চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে বলল — খোঁজ খবর প্রতিদিনই রাখছি হোষ্টেল আমার শশুর আব্বাই লোক দিয়ে ঠিক করেছে। সে এখন নিজের জীবনে আনন্দেই আছে।।