প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১০

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১০
মারশিয়া জাহান মেঘ

সকালের সূর্য আকাশে দেখা দিয়েছে চমৎকারভাবে। আজকের সকালটা একদম ভিন্ন আধাঁরিনীর কাছে। চায়ের শহরের স্নিগ্ধ একটা সকালের শুরু। তখনি আঁধারীনির দরজায় কড়া নাড়া কেউ। আঁধারীনি দরজা খু’লে দেখে তাশরীফ। বেশ ব্যস্ত স্বরে বললো,
“শায়ান এসেছে?”
“নাতো, ধ্রুব ভাই। কেন? উনি রুমে নেই?”
“না, সেই কবে থেকে খুঁজছি। সব জায়গা খুঁজে ফেললাম। কোথাওইতো পাচ্ছি না। গেল কোথায় ওহ? এইখানের তেমন কিছুইতো চিনে না শায়ান। কোথায় গেল?”
আঁধারীনি বললো,
“চলুন, নিচে যাই।”
“তুই যা, আমি আসছি।”

আঁধারীনি যেতেই ধ্রুবের ফোনে কল আসলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
“বাগে পেয়ে ফেলেছি শিকারকে।”
ধ্রুব পেছনে তাকিয়ে ফিসফিস করে ফোনে বললো,
“সবকিছু সাবধানে করবে। ভুলেতেও যেন আমার নাম সামনে না আসে।”
“ঠিক আছে স্যার।”
ধ্রুব কল কে’টে দিলো। আঁধারীনির জন্য সে সব করতে পারে। একটা ভুল কথা দেওয়ার জন্য সারাজীবনের জন্য সে তার ভালোবাসাকে কিভাবে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারতো? তাই সে যা করছে ঠিক করছে। একদম ঠিক।
ধ্রুব নিচে গেল। গিয়ে দেখে আঁধারীনি তার জন্যই বসে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ধ্রুব ভাই, ম্যানেজারওতো শায়ান ভাইয়াকে বেরুতে দেখলো না। গেল কোথায় উনি?”
“অনেক চিন্তা হচ্ছে তোর আঁধার? মানে, আজকাল দেখছি শায়ান শায়ান একটু বেশিই করছিস।”
“তুমি যে কি বলো না ধ্রুব ভাই, উনি ফানি টাইপ ওই জন্য কথা বলতে একটু -আধটু ভালো লাগে।”
ধ্রুব হাত চে’পে ধরে আভার। বললো,
“আর আমার সাথে? আমার সাথে কথা বলতে বুঝি তোর ভালো লাগে না?”
আঁধারীনি বিস্ময় নিয়ে তাকালো ধ্রুবের দিকে। হঠাৎ কি হলো ধ্রুবের? এমন ভ’য়ং’ক’রভাবে তার হাত ধরলো কেন?
“লাগছে ধ্রুব ভাই… ছাড়ো হাত।”
“শায়ান যখন ধরেছিল, তখন? তখন লাগেনি?”

“সব কথাতে তুমি শায়ান ভাইয়াকে কেন টা’ন’ছ? তোমারইতো বন্ধু। না মিশলে কেমন দেখায়?”
“আমার বন্ধু, তাই রা’ত ওর সাথে কা’টা’তে হবে তাই না? তা আঁধার এইটা কি কোনো ফর্মালিটি নাকিরে?”
ধ্রুবের মুখে এমন কথা শুনে থমকে গেল আঁধারীনি। ধ্রুব কি বলছে ওকে এইসব! কথাগুলোর অর্থতো অনেক বা’জে।
“এইসব কি বলছেন ধ্রুব ভাই? আপনি কি বলছেন আপনি জানেন?”
“যা বলেছি, জেনেই বলেছি। গতরাতে আমি সবই দেখেছি।”
“মানে!”
“ভোরে শায়ান তোর রুম থেকে বের হয়েছে। এইটা কি মিথ্যে কথা আঁধার?”
“আমি ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। উনি বসে কথা বলতে শুরু করলেন৷ মজার মজার কথা বলছিলেন, আমি হাসছিলাম। এমন করতে করতে সময় পেরিয়ে গেছে। তার মানে! আপ্ আপনি অন্য কিছু ভেবেছিলেন?”
“এই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না আঁধার। রুমে যা, আমি দেখছি শায়ান কোথায়।”
“আপনাকে একা আমি কোথাও যেতে দিব না।”

“তুই আমার বিয়ে করা বউ?”
“না, কিন্তু আপনি আমার অনেক কিছু।”
“একবার বলেছিস, বলেছিস ভালো কথা, আর কখনো বলতে আসবি না। শায়ান হাত ধরলে পেইন হয় না, আমি ধরলেই যত দো’ষ। একবার ভেবে দেখ, এইখানে এসে নিজের চলাফেরার কতোটা বাজিয়েছিস। ফুপ্পি মায়ের কাছে খবরটা গেলে তোর কি হবে আশা করি আলাদা করে এইটা আমায় বুঝিয়ে দিতে হবে না?”

আঁধারীনি রুমে বসে আছে। ধ্রুব তাকে নিয়ে যায়নি সাথে। কান্না করছে সে। তার প্রতি ধ্রুবের এতোটা খারাপ ভাবনা ছিল! ভাবতেই শিউরে উঠে সে। বিষয়টা খারাপ ভাবনার না, বিষয়টা বিশ্বাসেরও। ধ্রুবতো জানে, আঁধারীনি কতোটা অন্যরকম। এত বছর একসাথে জেনেও তার উপর বিশ্বাস রাখতে পারলো না একটু? চোখের দেখাটাকেই সত্যি ভেবে বসে আছে? ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আঁধারীনির। ফোনের রিংটোন বাজতেই ফোন হাতে নিলো সে। তোহা কল দিয়েছে। তার মা। কল ধরবে না সে, কন্ঠ শুনে বুঝে যাবে আঁধারীনি কাঁদছে। এইটা মায়েদের অন্যরকম একটা গুণ। পর পর ৩ বার কল বাজতেই, রিসিভ করলো সে। ওপাশ থেকে দাম্ভিক কন্ঠে শুনতে পেলো,

“সিলেটে গেছ?”
“হ্যাঁ, মা।”
“ধ্রুব কোথায়?”
“একটু বাইরে গেছে।”
“সাবধানে থেকো। ঘুরতে গেছ ভালো কথা, এমন কিছু করো না, যাতে সমস্যা হয়।”
আঁধারীনি চমকালো। হঠাৎ মা তাকে এই কথা বললো কেন? তবে কি ধ্রুব কিছু বলেছে? ধ্রুবতো এত সহজে কিছু বলার মানুষ নয়।
“খেয়েছ?”
“হ্যাঁ, খেয়েছি।”
“ধ্রুব আসলে কল দিতে বলবে। ওকে আমি কলে পাচ্ছি না।”
“আচ্ছা।”
“আরেকটা কথা….”
“হুম?”
“ধ্রুবর মতো ভালো ছেলে কোথাও পাওয়া যাবে না। ওর মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করবে। তুমি ভুলে যেও না, তোমার বাবা কি বলেছিল।”

“ভাইয়ের ছেলের প্রশংসা যেহেতু করবেই, তাকে সামনে রেখেই বলতে মা। খামাখা আমাকে কেন এত কথা শুনাচ্ছ? বাবা যা বলেছে তা তোমরা চাইলেও, ধ্রুব ভাই কি চায়বে?”
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল।
“হাসলে কেন?”
“ইচ্ছে হয়েছে তাই। আপাতত রাখছি। ধ্রুব এলে কল দিব।”
“ঠিক আছে।”
কল রাখতেই আঁধারীনি মলিন হয়ে দাঁড়ায়। চোখের পানি মুছে নেয় সে। ধ্রুব যেহেতু তাকে বিশ্বাসই করে না, সেও সেই বিশ্বাস রাখতে চায় না। যাকে মন থেকে গোপনে এতদিন ভালোবাসছে সে, সেই-ই যদি বিশ্বাস না রাখে, সারাজীবন একসাথে থাকবে কেমন করে তারা?

ধ্রুবর সামনে বসে আছে শায়ান। সানগ্লাস ব্লেজারের থেকে নিয়ে, চোখে পরতে পরতে বললো,
“খেলাটা তুই বড্ডা কাঁচা খেলে ফেললি ধ্রুব। এমন কয়েকটা মশা পাঠিয়েছিস? আমাকে মা’রা’র জন্য।”
ধ্রুব রক্তিক চোখে তাকিয়ে থাকে শায়ানের দিকে। হাত শক্ত করে দাঁতে দাঁত চে’পে বললো,
“অতিরিক্ত আমার কিছুই পছন্দ নয় শায়ান। যেইটা পছন্দ নয়, ওইটাই তুই বেশি বেশি করছিস।”
“এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল না?”
“না, এতোটা হওয়ার কথা ছিল না। আমি বলেছিলাম, আঁধার রাজি হলে তবেই তুই ওর সাথে ক্লোজ হবি। তুইতো এর আগেই অতিরিক্ত করছিস।”
“এক হাতে তালি বাজে?”
ধ্রুব শায়ানের কলার চে’পে ধরে বললো,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৯

“আর একটাও বা’জে কথা বললে তোর অবস্থা আমি খারাপ করে ফেলব শায়ান।”
“কুল ডাউন ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী, কুললল। ছাড় আমাকে। তোর অতিরিক্ত রাগ আমাকে বুঝিয়ে দিলো, তুইও আঁধারকে ভালোবাসিস।আচ্ছা চল… তোর আর আমার মাঝে একটা চুক্তি করা যাক। যে জিতবে আঁধারীনি তার।”
“আর যে হারবে?”
“বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবে।”
” ওকে, ডান… চ্যালেন্জ এক্সসেপ্টেড।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১১