তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৭
আমেনা আক্তার
নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। নূরের সামনেই বসে আছে আয়শা চৌধুরী ও সারা।আর নূরের আশেপাশে বসে আছে ওর বন্ধুরা। কিন্তু ওরা রেস্টুরেন্টের অন্য একটি টেবিল বুক করে বসেছে নূর ও আয়শা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর এতক্ষণ ওর বন্ধুদের সাথে বসে হৃদিতার বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গতে হবে সম্পর্কে আলোচনা করছিল। কিন্তু তখনি হঠাৎ আয়শা চৌধুরী ও সারা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,
নূর আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে ওরা সকলে। তখনি নূর জবাবে বলল।
হুম বলুন,
নূরের শান্ত স্বরে বলা কথাটিও যেনো সারার কাছে বিষাক্ত লাগলো তাই সারা তেড়ে যেতে নেয় নূরের দিকে। তখনি আয়শা চৌধুরী সারার হাত ধরে ওকে থামিয়ে দেয়। আয়শা চৌধুরী নূরকে খুবই শান্ত স্বরে বলল।
কথাটি খুব জরুরী
আয়শা চৌধুরীর কথার প্রতি উত্তরে নূর ভাব অলসহীন ভাবে বলল।
আমি কি বলেছি,আপনি আমার সাথে ফালতু কথা বলতে এসেছেন,যা বলার বলুন।
নূরের কথা শুনে আয়শা চৌধুরী ক্রোধে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো। এবং শক্ত কন্ঠে নূরকে বলল।
আমি তোমার সাথে কিছু পার্সোনাল কথা বলবো।
যা বলার আমার বন্ধুদের সামনে বলুন,
নূরের কথা শুনে আয়শা চৌধুরী চোখ মুখ শক্ত করে আবার বলল।
তোমার বন্ধুদের সামনে বলা যাবে না,
নূর আর কিছু বলবে তার আগেই হৃদিতা ওকে ইশারা করে থামতে বলল।হৃদিতা ও ওর সকল বন্ধুরা অন্য একটি টেবিলে বসে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আয়শা চৌধুরী ও সারা বসে নূরের বরাবর।ওরা বসতেই নূর বলল।
কি বলবেন বলুন,
আদিত্য আমার ছেলে, ওইদিন নিশ্চয়ই দেখেছ আদিত্য আমাকে মা বলে ডাকছিল।
তো আমি কি করতে পারি,
নূরের ভাব অলসহীন কথা শুনে আয়শা চৌধুরীর মাথা গরম হয়ে গেল। তবুও উনি নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।
কত টাকা লাগবে তোমার,
কথাটি বলেই আয়শা চৌধুরী ব্যাগ থেকে কিছু টাকার বান্ডিল বের করে নূরের সামনে রাখে। নূর শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় টাকার দিকে। আয়শা চৌধুরী টেবিলের উপর রাখতেই সারা বলে উঠলো।
আমার মনে হয় এই টাকা যথেষ্ট তোমার মতো ছোট লোকের জন্য।এই টাকার জন্যই তো আমার আদিত্য কে ফাসিয়েছ। আমার আদিত্য কে তো এই টাকার জন্যই আমার থেকে দূর করতে চাইছ।তাই তোমাকে টাকা দিয়ে তোমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে দিলাম। এবার তুমি আমার আদিত্যর জীবন থেকে একেবারের জন্য চলে যাবে। অবশ্য এই টাকা তোমার মতো ছোট লোকদের জন্য অনেক তবুও যদি তোমার আরো টাকার প্রয়োজন পরে তাহলে আমরা তাও দিবো। কিন্তু যদি তুমি আদিত্যর জীবন থেকে না সরে দাড়াও। তাহলে,
সারার কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে পাশের টেবিল থেকে রুদ্র দাঁড়িয়ে বলল।
তাহলে কি?
রুদ্র দাড়াতেই নূর চোখের ইশারায় ওকে বসতে বলল। হৃদিতা রুদ্র কে জোড় করে বসিয়ে দিলো। তখনি নূর আয়না চৌধুরী ও সারার উদ্দেশ্যে বলল।
প্রথমত,আমি আপনার ছেলের কে না আপনার ছেলে আমার পিছে ঘুরছে। এবং দ্বিতীয়ত আমি আপনাদের থেকে বিত্তবান কম হতে পারি কিন্তু আবার বাবা মা আমার জন্য কম রেখে যায়নি।তাই নিজের টাকা নিজের কাছে রাখুন।আর আমার সামনে এই সকল তিক্ত বলি না আওড়িয়ে যা বলার আপনার ছেলেকে বলুন।
নূরের কথা শুনে সারা রাগে টগবগ করে উঠলো। এবং ও মাত্রা অতিরিক্ত চিল্লিয়ে বলল।
ছোটলোক কথাকার তোর সাহস কি করে হয় আমাদের সাথে উঁচু গলায় কথা বলার। তোর মতো একশো টাকে কিনার যোগ্যতা আছে আমাদের।তোর মতো মেয়ের সাহস কি করে হলো আমার আদিত্যর পিছনে পরার।ওই দিন রেস্টুরেন্টে তুই আমার আদিত্যর সাথে কি করছিলি।বল কি করছিলি আমার আদিত্যর সাথে।
রোমান্স করছিল,ওই দিন নূর দুলাভাই এর সাথে রোমান্স করছিল।
কথাটি পিছন থেকে বলে উঠলো হৃদিতা, আয়শা চৌধুরী ও সারা হৃদিতার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই রেস্টুরেন্টের ভিতরে কিছু কালো পোশাকধারী বডিগার্ড প্রবেশ করল। বডিগার্ড গুলো পুরো রেস্টুরেন্ট ঘিরে ফেললো। বডিগার্ড গুলোকে দেখে সারা ও আয়শা চৌধুরী শুকনো একটি ঢোক গিলল।ওনারা ভালোভাবে জানেন এই বডিগার্ড গুলো কার। বডিগার্ড রেস্টুরেন্টের সকলকে বাইরে বের করে দিলো নূর ও ওর বন্ধুরা আর আয়শা চৌধুরী সারাকে বাদ দিয়ে। সকলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই সেখানে প্রবেশ করলো আদিত্য চৌধুরী।এই মুহূর্তে কেউ আদিত্য চৌধুরী কে আশা করে নি।
আদিত্য রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ওর মায়ের মুখোমুখি বসে পরলো। এবং খুব শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল।
তোমরা এখানে কার অনুমতিতে এসেছ,
আমার কোথাও যেতে হলে তোর অনুমতি নিয়ে যেতে হবে,
কথাটি রাগ মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো আয়শা চৌধুরী। আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে আদিত্য আবার শান্ত স্বরে বলল।
না লাগবে না,তবে সেটি যদি আমার সাথে সম্পর্কযুক্ত না হয়। আমার ব্যক্তিগত কিছুতে আমি কারও হস্তক্ষেপ পছন্দ করি না।আর তুমি সেখানে আমার বউকে কিনতে এসেছ।এত টাকা তোমার যে তুমি আদিত্য চৌধুরীর বউকে কিনতে চাও। আমিও দেখতে চায় কার টাকা বেশি তোমার না আমার।বলো তোমার কত টাকা আছে তোমার কাছে।
আদিত্যর কথা শুনে আয়শা চৌধুরীর মুখ অপমানে থমথমে হয়ে যায়। আয়শা চৌধুরী কিছু না বলে সারাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়।
আয়শা চৌধুরী বের হতেই আদিত্য সম্পূর্ণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় নূরের দিকে এবং নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
গুড আমি তোমার কাছ থেকে এটি আশা করেছিলাম।আমি খুব ভালোভাবে জানতাম তুমি আমার মায়ের দেওয়া প্রস্তাব কখনো মানবে না।
নূর আদিত্যর কথায় ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল।
আর যদি মেনে নিতাম তাহলে,
তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়তাম না, এবং মায়ের প্রস্তাব মানার জন্য তোমার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতাম রোমান্টিক শাস্তি,
আদিত্যর কথা শুনে নূর বিরবির করে বলল।
অসভ্য,
কেটে গেছে কিছু দিন,হৃদিতার কাবিন আজ। কিন্তু হৃদিতার মধ্যে সামান্য পরিমাণের ও সংশয় নেই।আর না হৃদিতা উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।হৃদিতার বাবা মেয়ের শান্ত মেজাজ দেখে ধরে নিয়েছে হৃদিতা বিয়ের জন্য রাজি ওনার হৃদিতা কে রাজি করাতে বিশেষ কিছু করতে হবে না। শিহাব এর মধ্যে অনেকবার হৃদিতা দের বাড়িতে এসে গেছে। এবং হৃদিতার সাথে আলাদা কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য। হৃদিতা শিহাবের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলেও ওর সাথে কোথাও যেতে রাজি হয়নি।মূলত হৃদিতা ওর বাবাকে পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছে।
শিহাবের সাথে যেখানে যাওয়ার বিয়ের পর যাবে শিহাব এখন ওর জন্য বেগানা পুরুষ তাই এখন ও শিহাবের সাথে কোথাও যেতে পারবে না।শিহাব এই কথা শুনে নিরাশ হলেও মনে মনে এই কথা ভেবে খুশি হয়েছে বিয়ের পর হৃদিতার সব দেমাগ বের করে ছাড়বে। কিন্তু শিহাব তো আর যানে না ওর সাথে কি হতে চলেছে সামনে।
হৃদিতাকে বধূ রুপে সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে।একটু পরেই ওর আর শিহাবের কাবিন পড়ানো হবে।কাবিনে শুধু হৃদিতা ও শিহাবের ঘনিষ্ঠ কিছু আত্নীয়রা আছে।আজ শুধু কাবিন হলেও শিহাব মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে আজ যেই কোনো ভাবে রাতে হৃদিতার সাথে থেকে হৃদিতাকে নিজের করে নিবে।
হৃদিতা ও শিহাব কে মুখোমুখি এনে বসানো হয়েছে।শিহাব শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে।আর হৃদিতা বসে আছে পুরো চিল মুডে।কাজি যখনি বিয়ে পড়ানো শুরু করবে তখনি দরজার সামনে থেকে আরশাদ বলে উঠলো।
আমাদের রেখে বিয়ে পড়ানো হচ্ছে,আমরা হৃদিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের ছাড়া এই বিয়ে পড়ানো সম্ভব না।
আরশাদ ও হৃদিতার বাকি বন্ধুদের দেখে হৃদিতার বা ও শিহাব কিছুটা বিচলিত হয়ে যায়।হৃদিতার বাবা হৃদিতার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল।
তোমাকে না আমি মানা করেছি তোমার বন্ধুদের কে এখানে আসতে না বলতে।
হৃদিতা তার বাবার কথায় ভাব অলসহীন ভাবে বসে থাকে। তখন রাজ বলে উঠলো।
আমরা না আসলে আপনার কখনো না হওয়া হবু জামাতার আসল চেহারা দেখবেন কিভাবে।
রাজের কথা শুনে শিহাব বুঝে ফেলে ওর বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই হৃদিতা কেনো প্রমাণ জোগাড় করেছে।এই জন্যই হৃদিতা ওদের বিয়ের বিষয়ে কেনো কিছু বলে নি। শিহাব হৃদিতার দিকে তাকিয়ে দেখে হৃদিতা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। শিহাব নিজেকে বাচাতে হৃদিতার বাবাকে বলল।
আন্কেল ওরা নিশ্চয়ই আমার ও হৃদিতার বিয়ে ভাঙ্গতে এসেছে।ওরা চাই না আমার ও হৃদিতার বিয়ে হোক আপনি ওদের গাড দিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিন।
হৃদিতার বাবা গাড কে ডাকার আগেই দরজার সামনে থেকে পুলিশ অফিসার বলে উঠল।
আপনি কি আমাদের ও বাড়ি থেকে বের করে দিবেন,
পুলিশ থেকে হৃদিতার বাবা অবাক হয়ে যায়।আর শিহাব অনেক ঘাবড়ে যায় পুলিশ দেখে।হৃদিতার বাবা মনে করে হৃদিতার বন্ধুরা হয়তো পুলিশ কে এটি বলে এনেছে যে হৃদিতার বিয়ে জোড় করে পরানো হচ্ছে।তাই তিনি আগে বেড়ে বললেন।
আপনাদের নিশ্চয়ই ওরা মিথ্যা কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছে।ওরা নিশ্চয়ই বলেছে আমার মেয়েকে আমি জোড় করে বিয়ে দিচ্ছি।
পুলিশ অফিসার হৃদিতার বাবার কথা শুনে বলল,
আপনি ভুল বুঝছেন ওরা এই বিষয়ে আমার কাছে যায়নি আপনি যেইটা ভাবছেন।
হৃদিতার বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
তাহলে কেনো গিয়েছে,
ওরা আপনার হবু জামাতার নামে রিপোর্ট লিখেছে। আপনার মেয়ের হবু জামাই অর্থাৎ মি.শিহাব চোরা কারবারের সাথে জড়িত এবং মি.শিহাবের একাধিক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে এর সকল তথ্য আমাদের কাছে আছে।আপনি চাইলে দেখতে পারেন।
পুলিশ অফিসারের কথা শুনে হৃদিতার বাবা গম্ভীর গলায় বলল।
হুম আমি দেখতে চাই,
পুলিশ অফিসার সকল প্রমাণ দেখায় হৃদিতার বাবাকে হৃদিতার বাবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এদিকে শিহাবের বাবা মা হৃদিতার বাবার কাছে এসে হাত জোড় করে বলছে ওনার ছেলে কিছুই করেনি। শিহাবকে বাঁচাতে বলছে হৃদিতার বাবাকে। কিন্তু কঠোর ব্যক্তির অধিকারী হৃদিতার বাবা তাদের কেনো কথা না শুনে শিহাব কে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। শিহাব ক্রোধ ভরা দৃষ্টিতে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে পুলিশের সাথে চলে গেল..
নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। নূরের সামনেই বসে আছে আয়শা চৌধুরী ও সারা।আর নূরের আশেপাশে বসে আছে ওর বন্ধুরা। কিন্তু ওরা রেস্টুরেন্টের অন্য একটি টেবিল বুক করে বসেছে নূর ও আয়শা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর এতক্ষণ ওর বন্ধুদের সাথে বসে হৃদিতার বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গতে হবে সম্পর্কে আলোচনা করছিল। কিন্তু তখনি হঠাৎ আয়শা চৌধুরী ও সারা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,
নূর আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে ওরা সকলে। তখনি নূর জবাবে বলল।
হুম বলুন,
নূরের শান্ত স্বরে বলা কথাটিও যেনো সারার কাছে বিষাক্ত লাগলো তাই সারা তেড়ে যেতে নেয় নূরের দিকে। তখনি আয়শা চৌধুরী সারার হাত ধরে ওকে থামিয়ে দেয়। আয়শা চৌধুরী নূরকে খুবই শান্ত স্বরে বলল।
কথাটি খুব জরুরী
আয়শা চৌধুরীর কথার প্রতি উত্তরে নূর ভাব অলসহীন ভাবে বলল।
আমি কি বলেছি,আপনি আমার সাথে ফালতু কথা বলতে এসেছেন,যা বলার বলুন।
নূরের কথা শুনে আয়শা চৌধুরী ক্রোধে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো। এবং শক্ত কন্ঠে নূরকে বলল।
আমি তোমার সাথে কিছু পার্সোনাল কথা বলবো।
যা বলার আমার বন্ধুদের সামনে বলুন,
নূরের কথা শুনে আয়শা চৌধুরী চোখ মুখ শক্ত করে আবার বলল।
তোমার বন্ধুদের সামনে বলা যাবে না,
নূর আর কিছু বলবে তার আগেই হৃদিতা ওকে ইশারা করে থামতে বলল।হৃদিতা ও ওর সকল বন্ধুরা অন্য একটি টেবিলে বসে।
আয়শা চৌধুরী ও সারা বসে নূরের বরাবর।ওরা বসতেই নূর বলল।
কি বলবেন বলুন,
আদিত্য আমার ছেলে, ওইদিন নিশ্চয়ই দেখেছ আদিত্য আমাকে মা বলে ডাকছিল।
তো আমি কি করতে পারি,
নূরের ভাব অলসহীন কথা শুনে আয়শা চৌধুরীর মাথা গরম হয়ে গেল। তবুও উনি নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।
কত টাকা লাগবে তোমার,
কথাটি বলেই আয়শা চৌধুরী ব্যাগ থেকে কিছু টাকার বান্ডিল বের করে নূরের সামনে রাখে। নূর শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় টাকার দিকে। আয়শা চৌধুরী টেবিলের উপর রাখতেই সারা বলে উঠলো।
আমার মনে হয় এই টাকা যথেষ্ট তোমার মতো ছোট লোকের জন্য।এই টাকার জন্যই তো আমার আদিত্য কে ফাসিয়েছ। আমার আদিত্য কে তো এই টাকার জন্যই আমার থেকে দূর করতে চাইছ।তাই তোমাকে টাকা দিয়ে তোমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে দিলাম। এবার তুমি আমার আদিত্যর জীবন থেকে একেবারের জন্য চলে যাবে। অবশ্য এই টাকা তোমার মতো ছোট লোকদের জন্য অনেক তবুও যদি তোমার আরো টাকার প্রয়োজন পরে তাহলে আমরা তাও দিবো। কিন্তু যদি তুমি আদিত্যর জীবন থেকে না সরে দাড়াও। তাহলে,
সারার কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে পাশের টেবিল থেকে রুদ্র দাঁড়িয়ে বলল।
তাহলে কি?
রুদ্র দাড়াতেই নূর চোখের ইশারায় ওকে বসতে বলল। হৃদিতা রুদ্র কে জোড় করে বসিয়ে দিলো। তখনি নূর আয়না চৌধুরী ও সারার উদ্দেশ্যে বলল।
প্রথমত,আমি আপনার ছেলের কে না আপনার ছেলে আমার পিছে ঘুরছে। এবং দ্বিতীয়ত আমি আপনাদের থেকে বিত্তবান কম হতে পারি কিন্তু আবার বাবা মা আমার জন্য কম রেখে যায়নি।তাই নিজের টাকা নিজের কাছে রাখুন।আর আমার সামনে এই সকল তিক্ত বলি না আওড়িয়ে যা বলার আপনার ছেলেকে বলুন।
নূরের কথা শুনে সারা রাগে টগবগ করে উঠলো। এবং ও মাত্রা অতিরিক্ত চিল্লিয়ে বলল।
ছোটলোক কথাকার তোর সাহস কি করে হয় আমাদের সাথে উঁচু গলায় কথা বলার। তোর মতো একশো টাকে কিনার যোগ্যতা আছে আমাদের।তোর মতো মেয়ের সাহস কি করে হলো আমার আদিত্যর পিছনে পরার।ওই দিন রেস্টুরেন্টে তুই আমার আদিত্যর সাথে কি করছিলি।বল কি করছিলি আমার আদিত্যর সাথে।
রোমান্স করছিল,ওই দিন নূর দুলাভাই এর সাথে রোমান্স করছিল।
কথাটি পিছন থেকে বলে উঠলো হৃদিতা, আয়শা চৌধুরী ও সারা হৃদিতার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই রেস্টুরেন্টের ভিতরে কিছু কালো পোশাকধারী বডিগার্ড প্রবেশ করল। বডিগার্ড গুলো পুরো রেস্টুরেন্ট ঘিরে ফেললো। বডিগার্ড গুলোকে দেখে সারা ও আয়শা চৌধুরী শুকনো একটি ঢোক গিলল।ওনারা ভালোভাবে জানেন এই বডিগার্ড গুলো কার। বডিগার্ড রেস্টুরেন্টের সকলকে বাইরে বের করে দিলো নূর ও ওর বন্ধুরা আর আয়শা চৌধুরী সারাকে বাদ দিয়ে। সকলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই সেখানে প্রবেশ করলো আদিত্য চৌধুরী।এই মুহূর্তে কেউ আদিত্য চৌধুরী কে আশা করে নি।
আদিত্য রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ওর মায়ের মুখোমুখি বসে পরলো। এবং খুব শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল।
তোমরা এখানে কার অনুমতিতে এসেছ,
আমার কোথাও যেতে হলে তোর অনুমতি নিয়ে যেতে হবে,
কথাটি রাগ মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো আয়শা চৌধুরী। আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে আদিত্য আবার শান্ত স্বরে বলল।
না লাগবে না,তবে সেটি যদি আমার সাথে সম্পর্কযুক্ত না হয়। আমার ব্যক্তিগত কিছুতে আমি কারও হস্তক্ষেপ পছন্দ করি না।আর তুমি সেখানে আমার বউকে কিনতে এসেছ।এত টাকা তোমার যে তুমি আদিত্য চৌধুরীর বউকে কিনতে চাও। আমিও দেখতে চায় কার টাকা বেশি তোমার না আমার।বলো তোমার কত টাকা আছে তোমার কাছে।
আদিত্যর কথা শুনে আয়শা চৌধুরীর মুখ অপমানে থমথমে হয়ে যায়। আয়শা চৌধুরী কিছু না বলে সারাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়।
আয়শা চৌধুরী বের হতেই আদিত্য সম্পূর্ণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় নূরের দিকে এবং নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
গুড আমি তোমার কাছ থেকে এটি আশা করেছিলাম।আমি খুব ভালোভাবে জানতাম তুমি আমার মায়ের দেওয়া প্রস্তাব কখনো মানবে না।
নূর আদিত্যর কথায় ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল।
আর যদি মেনে নিতাম তাহলে,
তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়তাম না, এবং মায়ের প্রস্তাব মানার জন্য তোমার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতাম রোমান্টিক শাস্তি,
আদিত্যর কথা শুনে নূর বিরবির করে বলল।
অসভ্য,
কেটে গেছে কিছু দিন,হৃদিতার কাবিন আজ। কিন্তু হৃদিতার মধ্যে সামান্য পরিমাণের ও সংশয় নেই।আর না হৃদিতা উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।হৃদিতার বাবা মেয়ের শান্ত মেজাজ দেখে ধরে নিয়েছে হৃদিতা বিয়ের জন্য রাজি ওনার হৃদিতা কে রাজি করাতে বিশেষ কিছু করতে হবে না। শিহাব এর মধ্যে অনেকবার হৃদিতা দের বাড়িতে এসে গেছে। এবং হৃদিতার সাথে আলাদা কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য। হৃদিতা শিহাবের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলেও ওর সাথে কোথাও যেতে রাজি হয়নি।মূলত হৃদিতা ওর বাবাকে পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছে।
শিহাবের সাথে যেখানে যাওয়ার বিয়ের পর যাবে শিহাব এখন ওর জন্য বেগানা পুরুষ তাই এখন ও শিহাবের সাথে কোথাও যেতে পারবে না।শিহাব এই কথা শুনে নিরাশ হলেও মনে মনে এই কথা ভেবে খুশি হয়েছে বিয়ের পর হৃদিতার সব দেমাগ বের করে ছাড়বে। কিন্তু শিহাব তো আর যানে না ওর সাথে কি হতে চলেছে সামনে।
হৃদিতাকে বধূ রুপে সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে।একটু পরেই ওর আর শিহাবের কাবিন পড়ানো হবে।কাবিনে শুধু হৃদিতা ও শিহাবের ঘনিষ্ঠ কিছু আত্নীয়রা আছে।আজ শুধু কাবিন হলেও শিহাব মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে আজ যেই কোনো ভাবে রাতে হৃদিতার সাথে থেকে হৃদিতাকে নিজের করে নিবে।
হৃদিতা ও শিহাব কে মুখোমুখি এনে বসানো হয়েছে।শিহাব শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে।আর হৃদিতা বসে আছে পুরো চিল মুডে।কাজি যখনি বিয়ে পড়ানো শুরু করবে তখনি দরজার সামনে থেকে আরশাদ বলে উঠলো।
আমাদের রেখে বিয়ে পড়ানো হচ্ছে,আমরা হৃদিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের ছাড়া এই বিয়ে পড়ানো সম্ভব না।
আরশাদ ও হৃদিতার বাকি বন্ধুদের দেখে হৃদিতার বা ও শিহাব কিছুটা বিচলিত হয়ে যায়।হৃদিতার বাবা হৃদিতার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল।
তোমাকে না আমি মানা করেছি তোমার বন্ধুদের কে এখানে আসতে না বলতে।
হৃদিতা তার বাবার কথায় ভাব অলসহীন ভাবে বসে থাকে। তখন রাজ বলে উঠলো।
আমরা না আসলে আপনার কখনো না হওয়া হবু জামাতার আসল চেহারা দেখবেন কিভাবে।
রাজের কথা শুনে শিহাব বুঝে ফেলে ওর বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই হৃদিতা কেনো প্রমাণ জোগাড় করেছে।এই জন্যই হৃদিতা ওদের বিয়ের বিষয়ে কেনো কিছু বলে নি। শিহাব হৃদিতার দিকে তাকিয়ে দেখে হৃদিতা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। শিহাব নিজেকে বাচাতে হৃদিতার বাবাকে বলল।
আন্কেল ওরা নিশ্চয়ই আমার ও হৃদিতার বিয়ে ভাঙ্গতে এসেছে।ওরা চাই না আমার ও হৃদিতার বিয়ে হোক আপনি ওদের গাড দিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিন।
হৃদিতার বাবা গাড কে ডাকার আগেই দরজার সামনে থেকে পুলিশ অফিসার বলে উঠল।
আপনি কি আমাদের ও বাড়ি থেকে বের করে দিবেন,
পুলিশ থেকে হৃদিতার বাবা অবাক হয়ে যায়।আর শিহাব অনেক ঘাবড়ে যায় পুলিশ দেখে।হৃদিতার বাবা মনে করে হৃদিতার বন্ধুরা হয়তো পুলিশ কে এটি বলে এনেছে যে হৃদিতার বিয়ে জোড় করে পরানো হচ্ছে।তাই তিনি আগে বেড়ে বললেন।
আপনাদের নিশ্চয়ই ওরা মিথ্যা কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছে।ওরা নিশ্চয়ই বলেছে আমার মেয়েকে আমি জোড় করে বিয়ে দিচ্ছি।
পুলিশ অফিসার হৃদিতার বাবার কথা শুনে বলল,
আপনি ভুল বুঝছেন ওরা এই বিষয়ে আমার কাছে যায়নি আপনি যেইটা ভাবছেন।
হৃদিতার বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
তাহলে কেনো গিয়েছে,
ওরা আপনার হবু জামাতার নামে রিপোর্ট লিখেছে। আপনার মেয়ের হবু জামাই অর্থাৎ মি.শিহাব চোরা কারবারের সাথে জড়িত এবং মি.শিহাবের একাধিক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে এর সকল তথ্য আমাদের কাছে আছে।আপনি চাইলে দেখতে পারেন।
পুলিশ অফিসারের কথা শুনে হৃদিতার বাবা গম্ভীর গলায় বলল।
হুম আমি দেখতে চাই,
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৬
পুলিশ অফিসার সকল প্রমাণ দেখায় হৃদিতার বাবাকে হৃদিতার বাবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এদিকে শিহাবের বাবা মা হৃদিতার বাবার কাছে এসে হাত জোড় করে বলছে ওনার ছেলে কিছুই করেনি। শিহাবকে বাঁচাতে বলছে হৃদিতার বাবাকে। কিন্তু কঠোর ব্যক্তির অধিকারী হৃদিতার বাবা তাদের কেনো কথা না শুনে শিহাব কে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। শিহাব ক্রোধ ভরা দৃষ্টিতে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে পুলিশের সাথে চলে গেল..