রং পর্ব ৫৭ (২)

রং পর্ব ৫৭ (২)
তন্নী তনু

চার তলার চারশত বাইশ নম্বর রুমের ওয়ার্ডে বেডের পাশে মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে আছে সুভা। একই সারিতে আরোও পাঁচটা বেড। সামনের সারিতে ছয়টা। কোনো একটা সিট ও শূন‍্য নেই। কক্ষে রোগীর সাথে একজন করে শুভাকাঙ্ক্ষি থাকলেও কক্ষ জুরে কথার ক‍্যাচক‍্যাচ, পা আর মেঝের ঘর্ষনের মৃদু শব্দ, রোগীর আহাজারি সাথে ঔষধ পত্রের সাথে বায়োডিনের তীব্র গন্ধে আজ মাথা ফেটে যেতে চাইছে সুভার। বেডের উপরে চারকোণা রডের সাথে কুচিকুচি ঘুচানো পর্দা ছড়িয়ে প্রাথমিক ভাবে কাজ করছেন ডক্টর। শরীরের চেয়ে মনের দূর্বলতায় আজ চেয়ারে শরীর ছেড়ে দিয়েছে সুভা। এই মূহুর্তে রোগীর সাথে একজন শুভাকাঙ্ক্ষী থাকার নিয়ম।

তাই সুমন আর তার মা ওয়ার্ডের দরজায় পায়চারী করছেন। লম্বা করিডোর মাঝখানে দুই পাল্লার ভারী কাচের দরজা। দরজা ঠেলে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসা ছেলেটা তাদের পরিচিত। শক্তপোক্ত তাজা পেটানো শরীরে ঢিলেঢালা নীল রঙের ক‍্যাজুয়াল টি-শার্ট, গ‍্যাভার্ডিন প‍্যান্ট, চুলগুলো হালকা ভেজা, মুখ জুড়ে স্নিগ্ধতার ছোঁয়া। দূর থেকে একপলক তাকিয়ে সুভার মা ক্ষণকালের জন‍্য কল্পনায় ভাসেন। তার গম্ভীর, মনভার করে থাকা মেয়েটা কতোই না খুশি হতো যদি এই মানুষটা তাকে ভালোবাসতো। এই আপাদমস্তক সুদর্শন, ভদ্র, ভালো মনের মানুষটার পাশে সরল সুভাকে খুব বেশীই মানাতো। যদি ছেলেটা মানতো আজ সুভা আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবন পেতো! কতোই না হাসতো মেয়েটা। হাসলে সুভা কে কতোই না সুন্দর লাগতো!! কতোদিন প্রাণখুলে কথা বলেনা মেয়েটা, হাসেও না। কল্পনার ইন্দ্রজালে আটকে পড়া সুভার মা মেয়ের হাসিমুখ খুঁজে বেড়ায়। তবে সবটা ধূ ধূ অন্ধকার আর শূন‍্যতায় ডুবাবো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আসসালামু আলাইকুম।
দিবা স্বপ্নের ইন্দ্রজাল ছিড়ে যায় সুভার মায়ের। অপ্রস্তুত ভাবে তাকায়। মিনি সেকেন্ডের জন‍্য ভুলে যায় কি উত্তর দিবেন। সেকেন্ড খানিক পড়ে সালামের উত্তর দেন তিনি। ভালো মন্দ কথা চলে সর্বোচ্চ এক মিনিট। এর পরেই রোগীর কক্ষে প্রবেশ করে ইরফাদ। তার মুখটা খুব বেশী পরিচিত না হলেও টিভির পর্দায় অনেকেই দেখেছেন তাকে। তাই তার উপস্থিতিতে কক্ষ জুড়ে নামে প্রগাঢ় নিরবতা। যেনো বাকিরা শ্বাস টাও খুব ধীরে টানছেন। লম্বা পায়ের দাপটে কয়েক পায়েই পৌঁছে যায় সুভার পাশেই। দূর্বল সুভার রক্তচক্ষু দুটো একপলক উপর পানে তোলে। এর পরেই চোখ ফিরিয়ে নেয়। নিস্তব্ধ নিরব চোখ দুটো নিরবে বলে যায়, আপাদমস্তক সুভা বড় ক্লান্ত! তবে মুখ ফুটে বের হয়না আধখানা শব্দও। দাঁড়িয়ে থাকা ইস্পাত কঠিন শরীরটা দিয়ে ঢেকে রাখা হৃদয়ের মানুষ চোখ দুটো পড়ে নেয় খুব সহজেই। তাই আর কথা বাড়ায় না। শুধু একটা আশ্বাসের সুর ভেসে আসে,

— সব ঠিক হয়ে যাবে!!
এইটুকু আশ্বাস, এইটুকু কথা বলার জন‍্যেও তার পাশে কেউ নেই,চারপাশটা শুধু হাহাকার আর শূন‍্যতায় নিমজ্জিত। চাপা শ্বাস ফেলে সুভা। চারপাশে কুচিকুচি পর্দাগুলো একটানে সরিয়ে দেয় ডক্টরের সহকর্মী। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ডক্টর ও সিনহা। পরিচিত মুখটা দেখেই মৃদু করে ওষ্ঠজোড়া ছড়ান ডক্টর। অকস্মাৎ ফুটে ওঠে তার স্বরে বিস্ময়,
— আপনি এখানে!!
ঠোঁট জোড়া সামান‍্য প্রসস্ত করে ইরফাদ,
— আমার ফ্রেন্ডের বাবা। কি অবস্থা!!
— বাইরে কথা বলি প্লিজ!
— শিওর।
ডক্টর এর পাশাপাশি কক্ষের বাইরে যায় ইরফাদ, সুভা। কক্ষের বাইরে গিয়ে অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা দেখান ডক্টর,
— স‍্যার!! প্লিজ কেবিনে চলুন।
ইরফাদ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বলে,

— থ‍্যাংস! এখানেই ঠিক আছি নো প্রবলেম!
— পেসেন্ট নিয়ে আসার পর পরেই বলা হয়েছে ওনার অবস্থা ভালো না। আইসিইউ এ রাখা প্রয়োজন! কিন্তু…
সামনে দাঁড়ানো সুভা চোখ নামিয়ে নেয়, অপ্রস্তুত আর জড়সড় হতে থাকে। আড় চোখে একপলক তাকায় ইরফাদ। এরপরে আবার ডক্টর এর দিকে নজর দেয়,
— আপনি ওনার সাথে কথা বলুন!কিছু ফরমালিটি আছে ঐগুলো ফিলআপ না হলে তো আমাদের হাতে কিছু নেই স‍্যার!
মাথা নাড়ায় ইরফাদ। হাতের ইশারায় সম্মান দিয়ে ডক্টর এর যাওয়ার পথ দেখায় ইরফাদ। যার অর্থ ” ওকে আমি কথা বলি,আপনি এখন আসতে পারেন।”
মৃদু হেসে ঠোঁটজোড়া প্রসস্ত করে ডক্টর। অতঃপর চলে যান নিজের কাজে। এরপরেই পিছু ফেরে ইরফাদ। খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে সুমন, আর তার মা। জড়তায় জড়বস্তুর মতো তারা দাঁড়িয়ে আছে। জড়বস্তুর মতো দাঁড়িয়ে আছে সুভা।
— কি বললো ডক্টর!!

জড়বস্তুর মতো জড়সড় হয়ে নিরব, নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সুভা। চোখ দুটো ছলছল হয়ে ওঠে, চোখের শিরাগুলোতে রক্ত পৌঁছে যায়। তার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই। উত্তর দেয়ার শক্তি নেই। আছে শুধু চোখের জল! সে চোখের ভাষার পরতে পরতে যন্ত্রণা। উত্তরের অপেক্ষায় থাকা ইরফাদ কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে।
— আইসিইউ তে নিতে হবে!! তুই না কেনো করেছিস?
কথা শেষ হয় না, রক্তচক্ষু ফেটে যন্ত্রণা, কষ্ট আর হাহাকার, উষ্ণ জল আকারে টুপ করে মেঝেতে পড়ে। তীব্র তিক্ততায় বুজে আসা গলা ছিড়ে বেড়িয়ে আসে দুটো শব্দ,
–টাকা নেই!!

এই দুটো শব্দ কতটুকু যন্ত্রণার ভার বহন করে, কতোটা প্রকাশ করে ধাউধাউ করে জ্বলা অগ্নিশিখার। জন্মদাতা পিতা শ্বাস টানতে পারছে না, চোখের সামনে ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে বাবা নামক প্রদীপশিখা। “টাকা নেই” এই কথাটুকু কতোটুকু হৃদয়ের ভাব প্রকাশ করতে পারে। তবে ভাব বহন করতে পারুক না পারুক। ইরফাদ উপলব্দি করতে জানে, এই কথার অর্থ,ব‍্যথা, যন্ত্রণা, হাহাকার।

দূরে দাঁড়ানো সুমনের চোখ দুটো বোনের মুখপানে নিবদ্ধ। দূর্বার ধুকধুক করে চলতে থাকা হৃদযন্ত্রটা হঠাৎ করেই থমকে যায়। সেকেন্ড সময় পরেই তীব্র ধাক্কায় তার বুক ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চায় অনুভূতিরা। রোদে পুড়ে যে বাবা তার ছায়াতলে সন্তানকে রাখেন, বাবা নামক সেই বটবৃক্ষ আজ নুইয়ে পড়ছে রোদ্রের তোড়ে, সন্তান হিসেবে সে না হতে পারলো বাবার মাথায় ছাতা আর না হতে তীব্র খড়ায় ফাঁটা চৌচির বাবার বুকে বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে। বাবা নামক অস্তিত্ব সময়ের সাথে হাতের ভাজ থেকে একটু একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে। হৃদয় ছিড়ে যাচ্ছে তবে হাত বাড়িয়ে আটকে রাখা যাচ্ছে না সেই হাত। মৃত‍্যুসয‍্যায় পড়ে থাকা বাবা নামক অস্তিত্ব, যার চিকিৎসার খরচ মেটাতে ব‍্যর্থ তার একমাত্র সন্তান! টাকার অভাবে চোখের সামনে ধুকে ধুকে পুড়ে মরছে বাবা। বাবা! বাবা! বাবা! এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে!! তাকে নিজের হালাল অর্জিত পয়সার বিনিময়ে একগ্লাস পানিও কখনো খাওয়ানো হয়নি। একটা মেডিসিন ও সে কিনতে পারেনি, কোনো একটা সুন্দর মূহুর্ত দেয়া হয়নি! তাহলে এতো অসম্পূর্ণতা, অপূর্ণতা নিয়ে কেনো ফেলে যাবে!! এই অপূর্ণতা, এই অসমপূর্ণতার শোক তো কখনো কাটবে না কখনো না।

তাহলে কেনো……..?
কেনো…….?
কেনো বাবা…….!!!
বিরবিরিয়ে বলা শব্দগুলো শরীরের সমস্ত শক্তি কেড়ে নেয়,হাঁটু ভেঙ্গে বসে সুমন। অকস্মাৎ ধপাস শব্দ হওয়ায় ফিরে তাকায় সুভা, চোখ ফেরায় ইরফাদ। মৃদু চিৎকার করে ওঠে সুভার মা,
— ঐ তোর কি হলো! সুমন!!
সুভা দৌড়ে আসে। সুমনের মুখের পাশে হাত রেখে মৃদু ঝাকুনি দেয়,
— শরীর খারাপ লাগছে? ঘামছিস কেনো!! ওঠ…. চেয়ারে বস।
পাথুরে শরীরে ঝেকে বসেছে রাজ‍্যের ভার। গলা ছিড়ে বেরিয়ে আসে শোক আর যন্ত্রণা,

— আব্বু!
— কি? আব্বু আছে তো। ঠিক হয়ে যাবে সব।
–আব্বু!!
— এটা হাসপাতাল সুমন! এরকম করলে হবে?
— আমি কিচ্ছু করতে পারিনি। কিচ্ছু করতে পারছি না আপু। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। সব হারিয়ে যাচ্ছে। আব্বুর যদি কিছু হয়ে যায়, এই যন্ত্রণা কিভাবে বয়ে বেড়াবো সারাজীবন!!
— কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ! এসব ভাবিস না!
— টাকার জন‍্য আমার বাবাকে চিকিৎসা দিতে পারিনি। আল্লাহ্!! আমার জান বের হয়ে যাচ্ছে। এ কেমন পরিস্থিতিতে ফেলছো? টাকার জন‍্য চিকিৎসা হচ্ছে না। কেনো কেনো কেনো!!! আমার জান বের করে নাও তুমি। তবুও এই সত‍্যিই মুখোমুখি আমি হতে চাই না।

— থাম সুমন!! সবাই তাকিয়ে আছে। এটা হসপিটাল!
পাথুরে ভারী শরীরটা সুভার উপর ছেড়ে দেয় সুমন। দুহাতে আকড়ে ধরে বড় বোন নামক অস্তিত্বকে,
— আপা!! টাকার অভাবে যদি আজ আব্বুর কিছু হয় আপা! আমি এই ভার বয়ে বেড়াতে পারবো না। এতো কঠিন শাস্তি আল্লাহ্ আমাকে যেনো না দেয়।
চোখ ফেটে উপচে পড়া জলে ভিজে যায় সুভার মুখ। ফুপিয়ে ওঠা গলা ছিড়ে ঠেলে বের হয় তবুও আশ্বাস,
–কিচ্ছু হবে না। কাঁদিস না।
— আপা! আমি পৃথিবীর একমাত্র অযোগ‍্য, অমানুষ, নরপিচাশ যে রকম সন্তান থাকলে বাবারা উপরওয়ালাকে বলেন,” এমন সন্তান না দিতা, নিঃসন্তান থাকতাম।” আমি ঠিক ওরকম কুলাঙ্গার!

— চুপ কর ভাই! চুপ কর!!
— ভুলের শাস্তি এভাবে পায় আপা!! আমাকে এমন শাস্তি দিচ্ছে আজীবন ভুগবো আপা। আমি একটা পয়সা ইনকাম করে বাবাকে খাওয়াই নি।
— তুই তো ছোট তাই না? স্টাডি কমপ্লিট হয়নি। পড়াশোনা কর। একদিন সব হবে?
–সেদিন যদি আব্বা না থাকে আপা! ঐটাই হবে আমার জীবনের বড় শাস্তি। কি হবে ঐ ইনকাম দিয়ে? ওটা তো আমাকে পোড়াবে আরোও বেশী। একদিন টাকা হবে ফলের দোকান কিনে নিয়ে আসতে পারবো সেদিন তো খাওয়ার জন‍্য আমার আব্বা থাকবে না আপা। বড় মাছ কিনলে মনে পড়বে, আব্বাকে মাছ কিনে কখনো খাওয়াতে পারিনি। এমন জীবন কেনো পেলাম! এতো আফসোস নিয়ে কি করে বাঁচবো।
আশেপাশের লোকজন জড় হয়ে গেছে।নিকটবর্তী নার্স কয়েকবার বলে গেছেন জোরে কথা না বলতে। ইরফাদ দাঁড়িয়ে আছে সামনেই। মৃদু গলা খাকারি দেয় ইরফাদ,

— ওকে সিটে বসা তো! আমি একটু আসছি।
সুমনকে ধরে চেয়ারে বসায় সুভা। চোখের তলায় জমেছে কালি, সেই চোখ বেয়ে পড়ছে জল টুপ টুপ টুপ। সুভা ভাইরের চোখের পানি মোছে। আদুরে গলায় বলে,
— এতো ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিস কেনো? সব ঠিক হয়ে যাবে। আব্বু তো অসুস্থ থাকেই সবসময়।
— আর যদি ঠিক না হয় আপা! তাইলে এই যন্ত্রণা আমি বয়ে বেড়াতে পারবো না সারাজীবন আপা! পারবো না আমি।
— এভাবে বলতে হয় না। প্রে কর বাবা যেনো সুস্থ হয়ে যায়।
— আব্বা টাকার জন‍্য ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে না। আমি কেমন সন্তান! আচ্ছা এইটা তো হসপিটাল তাই না! ডক্টরকে বল আমার কি!ড!নি টা বিক্রি করবো। তার বিনিময়ে আমার আব্বার ট্রিটমেন্ট হোক।
— সুমন! পাগল হয়ে গেছিস?
কিছুক্ষণ নিরব থাকে সুমন। অতঃপর শূন‍্য তাকিয়ে ভাবলেশহীন উম্মাদের মতো বলে,
— বাবা টাকার জন‍্যে বিনা চিকিৎসায় মরে যাচ্ছে! চলে যাচ্ছে! আর ফিরবে না। আমার আব্বা! এই কয়টা টাকার জন‍্য চিকিৎসা পেলো না। পেলো না!

করিডোর পেরিয়ে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ায় ইরফাদ। ফোনের স্ক্রিনে সিনথিয়ার নম্বরে ডায়েল করে ইরফাদ। রিং চলছে… অতঃপর..
— আসসালামু আলাইকুম।
সালামের উত্তর দেয় ইরফাদ। খানিকটা থেমে মৃদু শ্বাস নেয় ইরফাদ। তারপর ধীর গলায় বলে,
— কি করছো?
ওপাশে থাকা সিনথিয়া বিছানায় নিজের হাঁটু জড়িয়ে ছোট্ট করে শ্বাস ছাড়ে। তারপর ধীর ফিসফিসে গলায় বলে,
— “অপেক্ষা”।
এদিকের ইস্পাতকঠিন মানুষটার ঠোঁটের ভাজে মৃদু হাসি খেলে যায়।সেকেন্ড সময় চোখ বন্ধ করে অনুভব করে। তারপর কথায় কথায় ভাসিয়ে দেয়,

— যতোটা দূরত্ব কমালে দূরত্ব শূন‍্যতে আসবে ততোটা দূরত্ব কমাতে চাই। আসবো!!
এপাশের কোমলমতী নারী কন্ঠ চাপা পড়ে। হয়তো মিটমিটিয়ে হাসছে নয়তো লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে। পিনপতন নৈঃশব্দে তলিয়ে যায় ওয়ারলেস ডিভাইসে চলা দুটো স্বর। তবে দুটো হৃদয়ের ধিকিধিকি জ্বলা হৃদয়ের স্পন্দন ঠিকই সমান তালে চলে।
— বলো!
— কি বলবো।
— আবার বলবো? যতোটা দূরত্ব কমালে…
–থাকনা প্লিজ!
— কেনো শুড়শুড়ি লাগে!
— ধূররর! রেখে দিবো কিন্তু…
–আরে শোন মেয়ে কথা তো শোনো।
— বলুন!

— সুভার বাবা খুব বেশীই অসুস্থ। কিছুদিন আগে যতোটুকু পেরেছি আমি চেষ্টা করেছি দিতে। তবে এখন আমার হাত সত‍্যিই শূন‍্য।ব‍্যাংকে অল্প কিছু টাকা আছে। আমি কি ওটা দিতে পারি!!
— আপনার টাকা! আমার কাছে পারমিশন নিচ্ছেন কেনো?
— সিনথি! আমার আর্নিং এর কোনো অংশই ফুললি খরচ হয়নি। বাবার জব চলে যাওয়ার পর বাবা বিজনেস করেছেন ঐটাতেই সকল খরচ চলে। আমি টুকটাক ইভা, টুম্পার শখ পূরণের চেষ্টা করেছি। এতো বছরে যা পেয়েছি ওখান থেকে ছোট্ট একটা বাসা করেছি তোমার জন‍্য। আর অল্প কিছু ব‍্যাংকে। বিয়ে তো হয়েই গেছে। তবে ছোট করে একটু আনন্দ অনুষ্ঠানের জন‍্য এইটুকু এমাউন্ট রেখেছিলাম। তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয়নি।তোমার শখ গুলো তো অপূর্ণ রয়ে যাবে সিনথি!
— আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া পূরণ হয়ে গেছে সাহেব। আমি খুশি! অনেএএকক। আনন্দ,উৎসব, ঘুরতে যাওয়া একটু না হয় পরেই হলো। না হলে নাই হলো। তবুও যদি কারো পরিবার ভালো থাকে, একত্রে থাকে।

— দিয়ে দিবো!
— হুমম!
— মন খারাপ হবে না তোমার!
— একটুও না। আপনি খুশি হলেই আমি খুশি।
— রাখছি তাহলে….!
— কখন আসবেন?
— উত্তরটা আগে দাও…….!
–কোন উত্তর?
— ঐ যে?
— যতোটুকু দূরত্ব কমালে আপনি খুশি…….!
— আসবো তাহলে………..!
— রাখছি প্লিজ!
— একবার “আই লাভ ইউ” বলোনা।
— বাসায় আসুন বলবো।

রং পর্ব ৫৭

এর পরে ইস্পাতকঠিন মানুষটার গলাটা হীম শিতল, স্বরে মিশেছে কিঞ্চিৎ ফিশফিশ শব্দ,
— সি ইউ ভেরি সুন সোনা……..!
ফোন কাটার আগ মূহুর্তে ছোট্ট করে একটা শব্দ করে ইরফাদ। আনমনে ভাবে সিনথিয়া ধূসর এই পৃথিবীতে সমস্ত মিষ্টি কি সে শব্দেই ছিলো……! তাকে ভাসিয়ে নেওয়ার জন‍্য ঐটুকুই কি যতেষ্ট নয়…….!

রং পর্ব ৫৭ (৩)