তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৬
Raiha Zubair Ripti
দুই পরিবারের সম্মতে অবশেষে আরাধ্য আর আরুর বিয়ের ডেট ঠিক হলো। এই তো সামনের মাসের ৫ তারিখে বিয়ে। যা আজ থেকে ঠিক দুই সপ্তাহ পর। আরাধ্য হেব্বি খুশি কিন্তু বাড়ির সকলের সামনে এমন মুখ করে আছে যে দেখে মনে হবে মাসুম একটা ছেলেকে জোর করে বিয়ে দেবার চেষ্টা করছে তার পরিবার। আর অন্যদিকে আরু। সে চোখের পানি নাকের পানি এক করে দরজার পর্দা ধরে কেঁদে চলছে। নিজের চোখে দেখছে সে তার জীবন টা নষ্ট হওয়ার আয়োজন চলছে। অথচ সে নাকের জল চোখের জল দিয়েও সেই আয়োজন টা ভেস্তে দিতে পারছে না। নিজেকে পৃথিবীর অকৃতজ্ঞ মানুষ মনে হচ্ছে আরুর নিজেকে। কেননা সে চোখে দেখেও নিজেকে বাঁচাতে পারছে না। রাগে দুঃখে আরু বিছানায় ধরাম করে বসে আয়নায় তাকালো। পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মেয়েটিকে সে দেখতে পেলো আয়নায়। আহারে আরুর কষ্ট হলো এই অসহায় মেয়েটার জন্য। গালে হাত দিয়ে বলল-
-” আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি তোকে বাঁচাতে পারলাম না। প্লিজ ভুল বুঝিস না। আমি ভীষণ অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার কথা কেউ শুনবে না রে। নিজেকে তৈরি করে নে সামনে তোর দিনকাল এর চেয়েও অসহায় হতে চলছে ঐ আরাধ্যার জন্য।
-“ উঁহু আরাধ্য নয়। আমি তোর চেয়ে গুনে গুনে কয়েক মাসের বড়। সো ভাইয়া বল সাথে।
আরু ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালো। দরজার সামনে পকেটে দু হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আরাধ্য। আরুর চোখে মুখে রাগের আভা আরো চেপে বসলো। দাঁত চেপে বলল-
-“ লজ্জা করলো না ভাই হয়ে বোন কে বিয়ে করার জন্য লাফাতে?
আরাধ্য অবাক হওয়ার ভান করে বলল-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“ আমি তোকে বিয়ে করার জন্য লাফিয়েছি সিরিয়াসলি? তোর কি মনে হয় তোকে আমি বিয়ে করতে চাইবো? ছি আমার চয়েস এতোটাও বাজে না আরু। কোথায় আমি বসুন্ধরা আর কোথায় তুই…
-“ গুলিস্তান তাই তো? তো কেনো এই গুলিস্তান কে বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
-“ জানিস তো আমি আবার বাবা মায়ের সুশীল ভদ্র ছেলে। তারা যদি গুলিস্তান রেখে ফুটপাত ও এনে দেয় তবুও আমি চুপ চাপ বিয়ে করে নিব।
-“ আমি আপনার বোন হই।
-“ সেটা কি তুই মানিস? মানলে কি আর ভাইয়া না বলে আরাধ্য করে বলতি? আর তাছাড়া তুই তো আমার মায়ের পেটের বোন না। তোকে বিয়ে করা জায়েজ।
-“ আমি আপনাকে আমার আপন ভাই বানিয়ে নিলাম আজ থেকে।
আরাধ্য তেড়েফুঁড়ে এগিয়ে আসলো। হাত উঁচু করে বলল-
-“ চ’ড়িয়ে গালের সব গুলা দাঁত আমি ফালায় দিব তোর। আমার আপন বোন আছে। সে তোর চেয়ে অধিক ভদ্র। তোর মতো অভদ্র মেয়েকে বোন বানানোর কোনো ইচ্ছে বা দরকার কোনো টাই নেই।
-“ আমি চাই না আপনাকে বিয়ে করতে।
-“ কেনো সারাজীবন কুমারী থাকবি নাকি?
-“ হ্যাঁ।
-“ আমাদের বাড়ির মানসম্মান নষ্ট করার জন্য? তুই কুমারী থাকলে প্রতিবেশী রা আমাদের ছেড়ে কথা বলবে নাকি? আমি কিছুতেই আমার পরিবারের অসম্মান মেনে নিব না।
-“ আপনি জেদ করে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন। কোন জনমের শত্রুতা ছিলো আপনার সাথে আমার হু?
-“ কি জানি আগের জন্মে হয়তো আমার পাকা ধানে মহিষ চড়াইছিলি।
-” কি ভেবেছেন আপনি..
-“ অনেক কিছুই ভেবেছি।
-“ এভাবে জোর করে বিয়ে করে আমাকে জব্দ করতে পারবেন? কখনই না।
আরুর কথায় আরাধ্য গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল-
-“ বালাই শাট জব্দ করবো কেনো তোকে? আর কে তোকে জোর করে বিয়ে করতে চাইছে? আমি কি তোকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছি কাজি অফিসে? নাকি তোর হাত পা বেঁধে কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে বলছি বল কবুল?কোনটা করছি বল?
-“ আমি কি এটা বলেছি নাকি। আপনি আমাকে পরিবারের সামনে এভাবে ফাঁসালেন কেনো? আমি তো আপনাকে বিয়ে করতে চাই না
-” সেটা কি আমার সমস্যা নাকি? এই সমস্যা তোর। তাছাড়া তো সিম্পল ভাবে মেনে নে এটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। আর তাছাড়া আমিই তোর কপালে আছি। তাই ভাগ্য মেনে নে। ভেবে নে আমার জন্য আল্লাহ তোকেই বানিয়ে পাঠিয়েছে এই পৃথিবীতে।
-“এটা ভাগ্য? এমন ভাগ্যের দরকার নেই।এটা
তো দুর্ভাগ্য। আপনাকে আমি স্বামী হিসাবে মানবো কি করে?
-” ওভাবেই যেভাবে দুনিয়ার আর সব কাজিন রা বিয়ের পর একে ওপরে বউ স্বামী হিসেবে মেনে নেয়। আর তাছাড়া আমি কিন্তু বেশ রোমান্টিক আরু। তোর মেনে নেওয়া না নেওয়ায় কোনো কিছুই আটকে থাকবে না। আমি আমার মতন করে যাব। তুই জাস্ট রিলাক্স মুডে ভাববি কি করে কাজিন কে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া যায়। যা এনার্জি সব আমিই নষ্ট করবো ট্রাস্ট মি।
-“ শাট আপ। আপনি আমার ভাই।
-“ ইউ শাট আপ বেয়াদব মেয়ে। তোর হবু বর আমি৷ ভাই ভাই করে গলা ফাটাচ্ছিস। তোরে কি বলছি তুই আমার বোন হ? সেধে সেধে বেহায়ার মতন কেনো বোন হতে চাচ্ছিস? তুই কেবল আয়ুশেরই বোন হওয়ার যোগ্যতা রাখিস।
-“ আপনি আপনার বাসায় যান তো। আমার মাথা টা খাবেন না আর।
-“ তো ঐ গোবর মার্কা মাথায় কি এমন আছে যে আমি খেতে যাব হু? মাথার চুল ভর্তি উকুন আর ভেতরে ভর্তি গোবর। বিয়ের পর আমি অন্য কিছু খাব।
-“ এই উকুন আর গোবরই ব্লেন্ড করে খাওয়াবো আর একটা কথা যদি বলেন এখন। বের হন আমার রুম থেকে। বেয়াহা লোক লজ্জা শরম নেই একজন অবিবাহিত মেয়ের রুমে তার পারমিশন না নিয়ে এসেছেন।
-“ ছেলে মানুষের লজ্জা থাকে নাকি? কই আমি তো জানতাম না।
-“ মামনি বোধহয় লজ্জার নাড়ি আপনার মুখে ছুঁয়াতে ভুলে গিয়েছিল। সেজন্য তার ছেলে একটা বেলেহাজ তৈরি হয়েছে।
-“ আর তোরে বোধহয় ছুঁইয়ে ছিলো। আলকাতরা একটা। থাক বসে বসে নাকের জল চোখের জল এক করে বন্যা বানায় ফেল। তবুও লাভের লাভ কিচ্ছু করতে পারবি না।
-“ আমি আলকাতরা! এই আমার গায়ের রং কি আলকাতরা? আপনার থেকে ফর্সা আমি।
-“ ঐ তো নাইট ক্রিম ইউজ করে জানি তো।
-“ আপনিও ইউহ করুন গিয়ে। আপনার বাপের টাকা তো কম না।
-“ লোভ লাগাচ্ছিস আমার বাবার টাকায়? ছি লোভী মেয়ে। হানিমুনে থাইল্যান্ড নিয়ে যাব তবুও লোভে করিস না। ওসব টাকা পয়সা আমাদের বাচ্চা কাচ্চার।
আরুর আর সহ্য হলো না। পাশ থেকে ফুলদানির টব টা হাতে নিয়ে উঁচু করে বলল-
-“ এটা কিন্তু এবার আপনার মাথায় ভাঙবো আমি। রুম থেকে বের না হলো।
আচ্ছা বের হচ্ছি বলে আরাধ্য রুম থেকে বের হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ কোল্ড ওয়াটার পাঠিয়ে দিচ্ছি। হট মাথা কোল্ড কর ঢেলে বেয়াদব। বিয়ের কথা বললেই ছ্যাত করে উঠে।
বিকেলের দিকে আয়ুশ বিধ্বস্ত রূপে বাড়ি ফিরলো। কাঁধে থাকা ব্যাগ টা একটু পর পর কাঁধ থেকে খসে পড়ছিলো। আয়ুশ ব্যাগ টা সোফায় রেখে বসে পড়লো। ভাঙা গলায় বোন কে ডাকলো। আরু বসার ঘরে আয়ুশ কে দেখে বলল-
-“ কি হয়েছে ডাকতেছিস কেনো?
আয়ুশ ছোট্ট করে বলল-
-“ একটু পানি দিবি? ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে।
আরুর চোখ চলে গেলো আয়ুশের ঠিক সামনে থাকা টেবিলটা তেই পানির গ্লাস আর জগ। হাত বাড়ালেই পায়।
-“ তোর সামনে ওটা কি?
-“ কি সামনে?
-“ আমার দিকে না তাকিয়ে সামনে তাকা।
আয়ুশ সামনে তাকালো।
-“ কিছু দেখলি?
-“ হু।
-“ কি?
-“ পানির জগ আর মগ।
-“ সব সামনে থাকার পরও কেনো আমাকে ডাকলি তাহলে বেয়াদব।
-“ আসলে আই ডিড নট সি রে আপু।
-“ কেনো দেখলি না। তোর চোখ কোথায়?
-“ মাই আই ড্রপ ইন স্কুল।
-“ মানে?
-“ আজ আরশি নট কামিং স্কুল। আই ফাইন্ড আরশি এভ্রি ক্লাস। বাট শি ডিড নট এনি রুম।
-“ জানি আমি।
আয়ুশ তাকালো বোনের দিকে।
-“ তুমি কেমনে নোও?
-“ আরশি আজ আমাদের বাসায় এসেছিল ওর বাবা মায়ের সাথে।
আয়ুশ শব্দ করে বলল-
-“ কিহ! আরশি কামস টু মাই হোম? হোয়াই ইউ নট সেইড মি? তাহলে আই কান্ট নেভার গো টু বোরিং স্কুল।
-“ আশ্চর্য আমি জানতাম নাকি।
-“ হোয়াই আরশিরা কামস টু মাই হোম আপু?
-“ বিয়ের কথা বলতে।
আয়ুশের মনে লাড্ডু ফুটলো। বিয়ে! তার আর আরশির বিয়ের কথা হচ্ছে! ও মাই গড। আয়ুশ লাফিয়ে উঠলো। চিল্লিয়ে বলল-
-“ বিয়ে! আল্লাহ এতদিনে আমার কথা শুনেছে। আজ আমি মসজিদে ১০ টাকা দানবক্সে রেখে আসবো। ও মাই গড। সব টা কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। আরশি কে এবার আমি পুরোপুরি নিজের করে পাবো! এ আপু প্লিজ ইউ ধার টু মি ১০ টাকা। বিফর বিয়ের আই দিয়ে দিব।
আরু বেক্কল বনে চলে গেলো। আয়ুশ টা এত খুশি হচ্ছে কেনো তার বিয়ের কথা শুনে?
-“ আমি রাস্তার ফকির। পারলে তুই উল্টা ১০ টাকা ভিক্ষা দে।
-“ ধুর তুমি তো দেখি আমার চেয়েও বড় ভিখারি। সরো সামনে থেকে। এই তো আর কটা দিন। তারপর গোয়িং টু শ্বশুর বাড়ি।
-“ তখন পুরো বাড়ি টা তোর৷ পুরো বাড়িতে রাজত্ব করবি।
-“ অফকোর্স। এখন বলো বিয়ে কবে?
-“ ৫ তারিখে।
-“ রিয়েলি! মাই হ্যান্ডস নো টাইম। আই প্রিপার্ড মাই সেল্ফ ফর বিয়ে।
আয়ুশ রুমে চলে আসলো নিজের। এখন থেকে বোনের ক্রিম গুলো নিয়ে স্কিন কেয়ার করবে৷ আগে আরশির সাথে একটু কথা বলে নেওয়া যাক ভেবে আয়ুশ আরাধ্য কে ফোন করলো। আরাধ্য আরশির সাথে বসে টিভি দেখছে। হঠাৎ এ সময় আয়ুশের ফোন পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো। আরশির দিকে একবার তাকিয়ে ফোন টা রিসিভ করলো।
-“ হেই ব্রো। হাউ আর ইউ?
-“ অ্যাম ফাইন। তুই কেমন আছিস?
-“ ইউ টক ইংলিশ।
-“ হাউ আর তুই?
-“ আই অ্যাম অলসো ভালো। হোয়ার ইজ ইউর বোন?
-“ বিসাইড মি।
-“ প্লিজ লাউড স্পিকার ইউর ফোন। আই আস্ক সাম ইউর সিস্টার কে।
আরাধ্য স্পিকারে দিলো ফোনটা।
-“ দিয়েছো?
-“ হু?
-“ হেই আরশি। নও না সারাং হে?
আরশি ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালো। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো-
-“ ওটা কি বলেছে আয়ুশ ভাইয়া?
-“ আমিও তো জানি না ওটা কি ভুলভাল ইংলিশ বললো৷ এই তুই এটা কি বললি?
-” কেনো তোমার বোন কে জিজ্ঞেস করলাম।
-“ কি জিজ্ঞেস করলি?
-“ কেনো আমার প্রশ্ন বুঝে নি বিলিপয়েন্ট আরশি?
-” আমিই বুঝি নি সেখানে আরশি কি বুঝবে?
-” আমি কোরিয়ান ভাষায় জিজ্ঞেস করছি..ডু ইউ লাভ মি? তোমার বোন কে।
-“ কোরিয়ান ভাষা সিরিয়াসলি?
-” হু।
-“ খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোর? একে তো ইংরেজি ভাষার ধ’র্ষণ করে যাচ্ছিস প্রতি নিয়ত। এখন আবার কোরিয়ান ভাষাকে ধ’র্ষণ করতে চাইছিস!
-“ হোয়াই আই রেপ দ্যিস ল্যাঙ্গুয়েজ? আই লার্নিং কোরিয়ান ভাষা ফর ইউ সিস্টার।
-“ রেহাই দে এই ভাষাকে আয়ুশ। কোরিয়ান রা যদি জানে তুই ওদের ভাষা কে ধ’র্ষণ করতে যাচ্ছিস তাহলে ওদের দেশের মিসাইল. বোমা সব তোদের বাড়িতে এনে ফেলবে শালা। এইটুকু তার বয়স আবার প্রেম ভালোবাসার পিনিক কত৷ আমার বোনরে তোর মত আধ পাগলের সাথে প্রেম কখনই করতে দিব না।
-“ তুমি তাহলে আমার বোন কে বিয়ে করতে চাও কেনো হু? আমি তোমার বোন না পেলে। আমিও আমার বোন তোমায় দিব না।
-“ তুই না দিলেও তোর বাপ দিবে। আর আরশি শোন তুই বেশি বেশি হাসিং সিদ্দিক.. ধূর আমিও কি বলতেছি এই আয়ুশ টার মতো ভুলভাল ইংলিশ। তুই এখন থেকে বেশি করে মিশবি সিদ্দিকের সাথে। সিদ্দিকের সাথে গ্রুপ স্টাডি করবি।
ফোনের ওপাশ থেকো আয়ুশ চিৎকার করে বলে উঠল-
তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৫
-“ ঐ ব্রো না প্লিজ। আই ডোন্ট টলারেট ইউর সিস্টার উইথ সিদ্দিক। আই ভেরি জেলাশ। প্লিজ দ্যিস টাইপের কথা আর বলো না। আমার হার্ট থেমে যায়। প্লিজ ব্রো।
-“ তাইলে ঠিকঠাক মতো পড়াশোনা কর। শিক্ষিত হ আগে।
আয়ুশ পড়াশোনা নাম শুনে রেগে কেটে দিলো ফোন। কি এক পড়াশোনা। এত পড়াশোনা করে আয়ুশ কি করবে? পড়াশোনার ভেতর কি এমন আছে? সে কি কম শিক্ষিত নাকি। সে ইংরেজি তে পিএইচডি করেছে। ম্যাথে মাস্টার্স, আর বাংলায় অনার্স। আর কত অর্জন লাগবে পড়াশোনায় হু?