অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৯
ইয়াসমিন খন্দকার
জাঈদ রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। যা দেখে আরিশা ভয় পেয়ে যায়। সে বুঝতে পারছিল না এখন কি করবে। এমন সময় জাঈদ কোনরকমে উঠে দাঁড়ায়। আরিশা জাঈদকে দেখে বুঝতে পারে তার শরীর বেশ দূর্বল। তার এবার কিছুটা খারাপও লাগে। তাই সে জাঈদকে বলে,”আপনি একটু বসুন, আমি দেখছি কোন ব্যান্ডেজ পাওয়া যায় কিনা।”
“কোন দরকার নেই। আঘাত করে এখন নাটক করছ? আর নিজেকে কি ডাক্তার ভাবো?”
“আপনি চুপ করে বসুন। এটুকু করার জন্য ডাক্তার হতে হয় না।”
বলেই আরিশা জাঈদকে টেনে বসায়। অতঃপর ফাস্ট এইড বক্স এনে তার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। জাঈদ চুপচাপ ছিল৷ আরিশা জিজ্ঞেস করে,”খুব বেশিই আঘাত লেগেছে নাকি?”
জাঈদ বলে,”একটু লেগেছে।”
“আসলে আমার মাথাটা হঠাৎ করে অনেক গরম হয়ে গেছে আর তাই..যাইহোক, আমি তো আপনার মতো নির্দয় নেই। আমার চরম শত্রুকেও আমি বিপদের দিন সাহায্য করতে পারি। এটাই আমার মানবিকতা।”
বলেই জাঈদের মাথায় ব্যান্ডেজ করিয়ে দিয়ে আরিশা বলে,”এবার প্রয়োজনে গিয়ে কোন ডাক্তারকে দেখিয়ে আসুন। কোন ওষুধ লাগতে পারে।”
জাঈদ আরিশার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমার এত খেয়াল রাখতে কে বলেছে তোমায়?”
“কেউ বলে নি। আমি নিজের বিবেক বোধ থেকেই কথা গুলো বলছি।”
বলেই আরিশা ফাস্ট এইড বক্সটা সঠিক জায়গায় রেখে বলে,”এখন আপনি আসতে পারেন। আমার মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে। একটু বিশ্রাম নিতে হবে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“মাথায় আঘাত পেলাম আমি, আর ব্যথা লাগছে তোমার। ব্যাপারটা কেমন না?”
আরিশা বলে,”শারীরিক আঘাতটা বড় না। আমার মতো মানসিক অবস্থায় থাকলে আপনার কাছে তখন এমন হাজার হাজার শারীরিক আঘাতকে নগণ্য মনে হতো। যাইহোক, আমি বেশি কথা বলতে পারব না।”
“ঠিক আছে, থাকো। আমি যাচ্ছি।”
বলেই জাঈদ বেরিয়ে যায়৷ জাঈদ বেরিয়ে যেতেই আরিশা শুয়ে পড়ে। অতঃপর ঘুমানোর চেষ্টা করে।
আদৃতা নিজের বাসায় এসেই দেখতে পায় নিঝুম ও আবরাজ এসেছে। তাদের দেখে আদৃতা খুশি হয়ে যায়৷ আবরাজ আদৃতাকে দেখেই বলে,”এই তো, আমার প্রিন্সেস এসে গেছে। কোথায় ছিলে তুমি?”
“একটু কাজে গিয়েছিলাম।”
“বাহ, ভালো কথা। আমরা আজ এখানে এলাম। কিছু জরুরি কাজেই মূলত আসা। তোমার সাথে একটা ব্যাপারে কথা বলার ছিল।”
“কি ব্যাপারে?”
“তোমার মিস্টার সাজিদ চৌধুরীর কথা মনে আছে? আমার বন্ধু সাজিদ চৌধুরী। ওনার মেয়ে সন্ধ্যা তো মেবি তোমার কলেজেই পড়ে।”
“হুম। কিন্তু হঠাৎ ওনার কথা বলছ কেন?”
“মিস্টার সাজিদ আমায় বলছিলেন ওনার ছেলে সায়নের জন্য ভালো কোন মেয়ে খুঁজছেন বিয়ের জন্য। আমিও ভাবছিলাম, তোমারো তো বিয়ের বয়স হচ্ছে। আর সাজিদকে তো আমি চিনি। ছেলেটা বেশ ভালো, পরিশ্রমী। ওর ব্রাইট ফিউচার আছে, দেখতেও যথেষ্ট সুদর্শন। তাই আমি ভাবছিলাম, তোমার সাথে সাজিদের বিয়ে দিলে মন্দ হয় না। তাই আমি প্রাথমিক ভাবে ওনার সাথে কথা বলেছি৷ উনি অবশ্য বলেছেন, ছেলে-মেয়েদের মতামতের উপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে। তাই উনি সায়নের সাথে কথা বলবেন জানিয়েছেন। এদিকে আমিও ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলার দরকার। তো তুমি বলো, এই ব্যাপারে তোমার কি মত?”
আদৃতা যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে যায়। তার পছন্দের মানুষটার সাথে তার বিয়ের কথা! সন্ধ্যা কি এই ব্যাপারে জানত? তাই কি তখন ওভাবে বলছিল। এদিকে আদৃতাকে চুপ দেখে নিঝুম খান বলেন,”কি হলো? কিছু বলছ না কেন? তাহলে কি তোমার এই বিয়েতে কোন মত নেই? না থাকলে বলতে পারো,আমরা জোর করে তোমার উপর কিছু চাপিয়ে দেব না। আমরা শুধু তোমার অনুমতিই জানতে চেয়েছি। সায়ন ছেলেটা তো বেশ ভালোই। তবে তোমার অন্য কোন পছন্দ থাকলেও আমাদের বলতে পারো।”
আদৃতা বলে ওঠে,”না, মম৷ আমি সায়নকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তোমরা চাইলে বিয়ের কথাবার্তা আগাতে পারো।”
ছবি বেগম এতক্ষণ চুপচাপ সবকিছু শুনছিলেন। আদৃতার কথা শুনে তিনি খুশি হয়ে বলেন,”বাহ, তাহলে আমাদের আবার বাড়িতে একটা বিয়ে লাগল বলে। বেঁচে থাকতেই তাহলে আমি আমার সব নাতি-নাতনির বিয়ে দেখে যেতে পারবো। আমি যাই, ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসি। এই খুশিতে সবাই মিষ্টিমুখ করুক।”
এমন সময় নির্ঝর ও আফিফা সেখানে উপস্থিত হয়৷ নির্ঝর বলে ওঠে,”মিষ্টি কোন খুশিতে?”
ছবি বেগম খুশি মুখে বলেন,”তোমার বোনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে দাদুভাই।”
“কি? আদৃতার বিয়ে? ওর কি এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি? ও তো কোন কাজই পারে না৷ শ্বশুর বাড়িতে গেলে তো কিক মে**রে বের করে দেবে।”
বলেই মুখ টিপে হাসে। আদৃতা খানিক রেগে বলে,”ভাইয়া, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। তাছাড়া সায়নদের বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই।”
ছবি বেগমও বলেন,”একদম। আমার আদৃতা দিদিভাই তো রাজরানি হবে। তুমি এভাবে বলো না তো।”
এভাবেই পুরো পরিবার মজা করতে থাকে। কিন্তু আফিফা যেনো অন্য চিন্তায় মগ্ন। কিছুদিন থেকে চেষ্টা করেও সে আরিশার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছে না। সে বুঝতে পারছে না এখন কি করবে।
সন্ধ্যা বসে বসে জামিলা শেখের সাথে কথা বলছিল। জামিলা শেখ বলেন,”আচ্ছা, আপা,দুলাভাই তারপর সায়ন ওরা কবে দেশে আসবে? আমার যে আর অপেক্ষা করতে মন চাইছে না। তোমাদের দুজনের বিয়েটা দিলেই আমার শান্তি।”
“ওরা তো আজকালের মধ্যেই এসে পড়বে। তবে, আমার বিয়ের আগে মম-ড্যাড ভাইয়ার বিয়ে দিতে চায়। কারণ, ও আমার বড়।”
জামিলা শেখ কিছুটা বিরক্তির স্বরে বলেন,”কেন? তোমার ভাইয়ের জন্য আবার মেয়ে খুঁজতে তো সময় লাগবে। আগে তোমাদের বিয়েটা হলে হয় না?”
“নাহ, খালা। বেশি সময় লাগবে না। মেয়ে আমাদের পছন্দ করাই আছে। ভাইয়া আর মম ড্যাড দেশে আসলেই বাকি কথাবার্তা এগোবে।”
“তাহলে ঠিক আছে৷”
এমন সময় জাঈদ সেখানে চলে আসে। জাঈদের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে জামিলা শেখ উদ্বিগ্ন স্বরে বলেন,”তোমার মাথায় কি হয়েছে জাঈদ? আবার কি কোথাও গিয়ে মারামারি করেছ? ”
“না,একটা বাঘিনীর সাথে মারামারি করে আহত হয়েছি।”
বলেই জাঈদ ভাবলেশহীন ভাবে বেরিয়ে যায়। জামিলা শেখ বলতে থাকেন,”বাঘিনী..মারামারি এসব কি বলছে ও? আঘাত লেগে মাথাটা আবার খারাপ হয়ে গেলো না তো?”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৮
এমন সময় সন্ধ্যা আরিশাকে দেখতে পেয়ে উঠে গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”আরে আরিশা এসো। জানো, আজ আমি সবার জন্য কিছু ব্রিটিশ ডিশ রান্না করেছি। তুমি একটু খেয়ো দেখো তো কেমন লাগে।”
এদিকে জামিলা শেখ আরিশাকে নিয়ে সন্ধ্যার এত আহ্লাদ করতে দেখে বলেন,”উফ! সন্ধ্যা এই মেয়েটার সাথে এত ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ছে কেন? নাহ, এদের বেশি মিশতে দিলে চলবে না। যদি মিশতে মিশতে আরিশা ওকে সব সত্য বলে নেয়। এটা আমি কিছুতেই হতে দেব না। আপা আর দুলাভাই আসুক, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিয়েটা দিয়ে এই মেয়েকে আমায় তাড়াতে হবে। প্রয়োজনে ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেব, তবুও ওকে আমার পথে কাটা হতে দেব না।”