তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৭

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৭
Raiha Zubair Ripti

সেদিন থেকে ঠিক দু’দিন পরের কথা। হঠাৎ সন্ধ্যা বেলায় হুট করে ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া গেলো। রাত সেদিন আগেই বাসায় চলে আসলো। সামনে মেয়ের বিয়ে। খুব ঘটা করে হবে না। পরিবারের লোকজন আর বাড়ির আশেপাশের কিছু প্রতিবেশী রা আসবে৷ ইনভাইট করা শেষ। ঝড়ের পূর্বাভাস না পেলে আজই বিয়ের শপিং করতে বের হতো। বাহিরে বিদ্যুৎের ঝলকানি। রাত জানালা দিয়ে দেখছে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ টাকে। বয়স টা আজ কত হবে? ৪৭+। বয়স দিনকে দিন বেড়েই চলছে। পাশে এসে কনা দাঁড়ালো। রাত ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। মেয়েটার মাঝে বয়সের ছাপ পড়ে নি। কে বলবে এই মেয়েকে যে সে ২২ বছরের একটা মেয়ে আছে আর ১২ বছর+ একটা ছেলেও আছে। কনা কফির মগ টা বাড়িয়ে দিলো রাতের দিকে। রাত হঠাৎ মুচকি হেঁসে মগ টা নিলো। কনা ভ্রু কুঁচকালো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল-

-“ কিছু ভাবছেন নাকি মনে মনে?
রাত ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে বলল-
-“ হু ভাবছি।
-“ কি ভাবছেন?
-“ শুনবে?
কনা উৎসাহ নিয়ে বলল-
-“ হু।
-“ আমাদের আরেক টা বেবি নেওয়া উচিত।
কনার মুখ চুপসে গেলো। বিরস মুখে বলল-
-“ আজ বাদে কাল মেয়ের বিয়ে দিবেন। কদিন পর দেখবে নাতি নাতনির মুখ আর সে বলছে নিজে বাচ্চার মুখ দেখবে হু? বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে নাকি। লজ্জা রাখুন। লোকে জানলে ছি ছি দিবে।
-“ শিক্ষার যেমন বয়স হয় না। তেমন বিয়ে সন্তান নেওয়ারও তেমন বয়স হয় না। আর বাচ্চা পালবো তুমি আমি। খাওয়াবো আমি। লোকের কথায় আশে যায় কি? আমার যদি লজ্জা থাকতো তাহলে এই দুটো হতো কি করে বলো?
-“ চুপ করুন। আমার আশে যায়। দুটোকে মানুষ করতেই জান চলে যাচ্ছে। আর সে বলছে আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার কথা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ যাই বলো আমার কিন্তু এখনও এনার্জি আছে।
-“ এনার্জি আছে এখনও আপনার?
-“ কেনো নেই? তাহলে রাতে বলো কেনো সরে যেতে।
-“ উফ চুপ করুন তো। বয়সের দিকটাও খেয়াল করুন। ছেলে মেয়ে শুনলে কি ভাববে বলুন।
-“ চলো না একটা বাচ্চা নেই। আয়ুশের একটা ভাই বোন হবে।
আয়ুশ সবেই হেলতে দুলতে বাবা মায়ের রুমে আসতেছিলো। দরজায় এসে বাবার লাস্টের কথাটা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। তার ভাই বোন হবে! উৎফুল্ল হয়ে বিরবির করে বলল-
-“ মাদার ইউ আর প্রেগন্যান্ট! ও মাই গড আমার লিটল ভাই বোন হবে? আমি আদর করবো তাকে ভীষণ। আপু তো আমাকে আদর করে না। আমি ওদের আদর করবো। বাবা মিষ্টি ইটিং করাবে না? আমি স্কুলের সবাই কে দাওয়াত দিব। আমার ভাই বোন হবে হুররেএ। আপুকে জানিয়ে আসি আমি। ব্রো আরশি মামনি সবাইকে হ্যাপি খবর দিতে হবে।
আয়ুশ আরুর রুমে এসে বিছানা থেকে ফোন নিলো। আরু হঠাৎ আয়ুশ কে এত খুশি দেখে জিজ্ঞেস করলো-

-“ এত খুশি কেনো তুই?
-“ বিকজ হ্যাপি নিউজ আছে সেজন্য।
-“ সেটাই জানতে চাচ্ছি।
-“ আওয়ার মাদার প্রেগন্যান্ট। টু বেবি কামিং সুন।
আয়ুশ আরাধ্য কে ফোন করলো। ফোনটা ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই আয়ুশ বলল-
-“ হেই ব্রো..
-“ কি বলার জন্য ফোন দিছিস বল। আমি ভীষণ টায়ার্ড প্লিজ এখন বলিস না ফোন টা আরশি কে গিয়ে দিয়ে আসতে।
-“ আরে না আরশি কে দিতে হবে না। আই সাম সুখবর টক ইউ।
-” বলল।
-” তুমি জানো মাই মাদার ইজ প্রেগন্যান্ট। ভাবতে পারছো! আমাদের কংগ্রাচুলেশনস জানাবে না? কতগুলো সুখবর এক সাথে। আমার বিয়ের সাথে সাথে আমার মায়ের ও বেবি হবে।
আরু দৌড়ে দাঁড়ালো আয়ুশের সামনে। বিস্ময় হয়ে বলল-
-“ তোর মাথা ঠিক আছে? কিসব আজেবাজে কথা বলছিস।
-“ কোনটা তোর আজেবাজে কথা মনে হলো? সত্যি মা প্রেগন্যান্ট । বাবা তাই বলল। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করে আয়।

আরু দোটানায় পড়ে গেলো। এখন গিয়ে মুখের উপর জিজ্ঞেস ই বা কি করে করবে। তার নিজেরই তো লজ্জা করছে। বাবা মা এটা কি করে করতে পারলো। তাই বলে এই বয়সে বাচ্চা!
আরাধ্য শুকনো মুখে বিষম খেলো আয়ুশের কথা শুনে।
-“ তোর মা সত্যি প্রেগন্যান্ট?
-“ হ্যাঁ।
-“ তোর বোন কে ফোনটা দে।
আয়ুশ ফোনটা আরুর দিকে বাড়িয়ে দিলো। আরু ফোন টা কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আরাধ্য বলল-
-“ কিরে কি শুনতেছি এগুলো?
-“ যা শুনলেন আমিও তাই শুনলাম।
-“ কদিন পর তোর আর আমার বিয়ে। বাবা মা হবো তুই আর আমি। আর এখন সেখানে চাচা চাচি বাবা মা হতে চলছে! এই আজব ফ্যামিলিতে আর কি কি হওয়া বাকি আছে বল? শালা, শালি গুলো কি হবার আর টাইম পেলো না?

-“ তো এতে আমার কি করার থাকতে পারে?
-“ যা তোর মায়ের সেবা যত্ন কর। মুড টাই নষ্ট করে দিলো তোর ভাই।
আরাধ্য ফোন কেটে দিলো। কেমন অস্বস্তিকর সংবাদ। রুম থেকে বের হলো। মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো তার মা আরশি কে পড়াচ্ছে। আরাধ্য পাশে বসলো। সন্ধ্যা পাশে তাকিয়ে বলল-
-“ কিছু বলবি?
আরাধ্য ছোট্ট করে জবাব দিলো-
-“ হু।
-“ বল।
-“ চাচি প্রেগন্যান্ট জানো?
সন্ধ্যা চমকালো আরাধ্যর কথা শুনে।
-“ কনা প্রেগন্যান্ট!
-“ কেনো জানো না?
-“ কই না তো।

-“ আয়ুশ জানালো। যাই হোক চাচা চাচি বোধহয় বাচ্চা ভালোবাসে অনেক। সেজন্য নাতি নাতকুরের অপেক্ষা করতে পারলো না। তা বাবা আসবে কখন?
-“ ফিরতে দেরি হবে। তুই খেয়ে শুয়ে পড়। টেবিলে খাবার রাখা আছে।
আরাধ্য খাবার টেবিলে আসলো। কিন্তু খাবার আর খেতে ইচ্ছে করলো না। চিন্তায় অস্থিরে শরীর কাঁপছে। না খেয়েই রুমে চলে আসলো। সকালে ফুলের দোকান থেকে ফুলের তোরা কিনে আয়ুশ দের বাসায় আসলো। এখন পেটে এসেই গেছে বাচ্চা টা। বিষয় টায় মন খারাপ হলেও প্রকাশ তো আর করা যায় না। আয়ুশ দের বাসায় এসে দেখলো তার চাচা চাচি খাবার খাচ্ছে। আয়ুশ পাশে বসে সেদ্ধ ডিম খাচ্ছে। কনা আরাধ্য কে দেখে খুশি হলো। ব্রেকফাস্ট করার জন্য সাথে বসতে বললো। আরাধ্য না করলো। বলল খেয়ে এসেছে। হাতে থাকা ফুলের তোরা টা কনার হাতে দিয়ে বলল-

-“ কংগ্রাচুলেশনস চাচি।
কনা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কিসের জন্য আরাধ্য?
-“ সুখবর জানানোর জন্য।
-“ কিসের সুখবর?
-“ কেনো আপনি আর চাচা তৃতীয় বারের মতো বাবা মা হতে যাচ্ছেন সেজন্য।
রাতের মুখ ফস্কে জুশ বেরিয়ে আসলো। আয়ুশ পাশ থেকে পানি না দিয়ে দুধের গ্লাস এগিয়ে দিলো। রাত না দেখেই গ্লাস টা মুখে নিয়ে বুঝলো দুধ। দাঁত চিবিয়ে বলল-
-“ পানি দে বলদ।

আয়ুশ পানির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আমার হাতের নালাগে নেই তো।
আরাধ্য নিজেই এগিয়ে দিলো পানির গ্লাস। রাত পানিটা খেয়ে বলল-
-“ তোকে এই ফালতু কথা কে বলল?
-“ কোনটা ফালতু কথা চাচা?
-“ আমি আর কনা তৃতীয় বারের মতো বাবা মা হতে যাচ্ছি?
-“ গতকাল রাতে তো আয়ুশ ফোন দিয়ে জানালো। কি রে আরু তুই ও তো ছিলি তাই না বল?
আরু সবেই নিচে এসেছে। আর আরাধ্যর থেকে এমন কথা শুনে ভরকে গেলো। বাবা মায়ের দিকে তাকাতে অব্দি পারছে না লজ্জায়।
রাত আয়ুশের কান টেনে ধরলো।

-“ এই হতচ্ছাড়া কে বলেছে তোকে তোর মা আর আমি বাবা মা হতে যাচ্ছি?
আয়ুশ কান থেকে বাবার হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল-
-“ উফ লাগছে। তুমিই তো কাল বললে আম্মুকে। আমার একটা ভাই বোন হবে।
-“ কখন বলেছি আমি এটা হু?
-“ ভুলে গেলে? জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে যে বললে।
রাতের মনে পড়লো। সে তো এমনি মজা করে কনাকে বলছিলো। আর এই হতচ্ছাড়া সেটাকে অন্য মিনিং বের করে সবাই কে বলে বেড়াচ্ছে!
-“ কাকে কাকে আর বলছিস এটা?
-” আরাধ্য ব্রো কেই শুধু।
রাত হাফ ছাড়লো। যাক বাঁচা গেলো।
-“ আমি মা কে বলেছি চাচা। বিকেলে দেখা করতে আসবে। আর এটা তো সুখবর বলুন। আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসবে। হোক না আপনাদের ছেলেমেয়ে বড় তাতে কি। আপনি এখনও বেশ হ্যান্ডাসাম।
আরাধ্যর কথায় বিপি বেড়ে গেলো রাতের। সন্ধ্যা জেনেছে মানে আষাঢ় ও জেনে গেছে। ছি ছি মান সম্মান আর থাকলো না।

-“ তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে আরাধ্য। আসলে আমি..
-“ জানি চাচা হয়তো ভুলে হয়ে গেছে। ব্যপার না। তা চাচি ডক্টর দেখিয়েছেন?
কনা কি বলবে বুঝতে পারলো না। সে তো প্রেগন্যান্ট না। আয়ুশটাকে ইচ্ছে করছে চা’বিয়ে খেতে।
-“ আচ্ছা চাচা আসি ম্যাডিকেলে যেতে হবে। আয়ুশ চল যাবি তো স্কুলে?
-“ হ্যাঁ। তোমার বোন গেছে স্কুলে?
-“ হ্যাঁ।
-“ ঠিক আছে বাবা মা আই গো টু স্কুল। আর সিস্টার আরু প্লিজ টেক কেয়ার মাই মাদার৷ আই ইনভাইট মাই অল ফ্রেন্ড ইটিং মিষ্টি।
-“ কিসের মিষ্টি? জিগ্যেস করলো আরু।
-“ আই ব্রাদার হতে যাচ্ছি। সেই হ্যাপিতে। বাবা প্লিজ ইউ সম বায়িং মিষ্টি।
-“ মিষ্টি তোর পিঠের উপর দিব হা’রাম’জাদা।
আয়ুশ মুখ ভেঙালো। আরাধ্যর হাত ধরে বলল-

-“ চলো তো ব্রো। বাবা নট লাভ মি।
আরাধ্য কে নিয়ে চলে গেলো আয়ুশ। রাত বলতে গিয়েছিলো কনা প্রেগন্যান্ট না। অথচ আয়ুশ টেনে নিয়ে গেলো।
রিকশায় পাশাপাশি বসে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে আয়ুশ আর আরাধ্য। আরাধ্য হাতের কড়ি গুনছে। সেটা দেখে আরাধ্য বলল-
-“ তোর ভাই বোন কয়টা হবে সেটা গুনছিস নাকি?
-“ না।
-“ তাহলে?
-“ তোমার বোন আর আমার কয়টা বেবি হবে সেটা গুনছি।
আরাধ্য আয়ুশের মাথার চুল টেনে বলল-
-“ শা’লা তোর বয়স কত যে তুই বাচ্চা অব্দি চলে গেছিস। আমার বোন কে তোর সাথে বিয়ে দিব না।
-“ তাহলে কিন্তু আমি এখনই রিকশা থেকে লাফ দিবো।
-“ দে লাফ। জীবন থেকে ৮০% জঞ্জাল কমে যাবে।
-“ আমার মৃ’ত্যু তে তুমি খুশি ব্রো! একটুও ভালোবাসো না আমাকে। স্বার্থপর তুমি।
-“ তোরে ভালোবেসে আমার কি লাভ বল?
-“ তাহলে তোমার বোনকে ভালোবাসতে দাও আমায়।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৬

-“ চাচারে বলে তোরে হোস্টেলে পাঠাবো। এক তুই আমায় জ্বালিয়ে খাচ্ছিস। মাস কয়েক বাদে আরেক টা এসে আমার পিন্ডি চটকাবে। আমার নিজের আর বাবা হওয়া হবে না তোদের জ্বালায়। দেখবো তোর ভাই, বোন কে কোলে নিয়ে ঘুরছি। আর লোকে বলবে এটা তোমার বাচ্চা? তখন আমার বিরস মুখে বলতে হবে—
-“ না এটা আমার শা’লি/শালা।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৮